অতল গভীরে পর্ব ৪

#অতল_গভীরে
#পর্ব৪
Eliyana Aara
—-কি হলো, তাহমিনা সুমি, আম্মুরা ভেতরে আসো! বাহিরে দারিয়ে আছো কেন?
—-হেরে তাহমিনা আমরা কি কিছু ভুল দেখছি?নাকি আমার চশমার প্রয়োজন? (মিলির আম্মু)
—-না ছোট মা ঠিকিতো আছে। আমরা সবাই ঠিকি দেখছি।(তাহমিনা)
—-ওহহো তোমরা সবাই আমাকে ঠিকি দেখছো।আরো খুটিয়ে খুটিয়ে দেখার হলে পরে দেইখো এখোন বাসায় ডুকো।

আমি সবাইকে রুমে নিয়ে গেলাম সবাই সোফায় চেয়ারে বসে পরলো।আর তানহা সবার জন্য ঠান্ডা সরবত এনে দিলো।সবাই খেয়ে বসে বসে গল্প করতে লাগলাম।জাহিদ আমাকে ধাক্কা দিয়ে বললো,

—-কিরে সালা, তানহাকে কি এমন জাদু করলি যে এই কয়েকদিনেই ঠিক হয়ে গেলো।
আমি মিন করে বলতে লাগলাম,
এই মেয়ে বদলানোর মানুষ, তোমরা জাওয়ার পর যে আমার কি হাল হবে সেটা আমি নিজেও জানি না।
ও আমাকে আবার ধাক্কা দিয়ে বলতে লাগলো,

—-কিরে কি মিন মিন করছিস?(জোর করে হাসার চেষ্টা করে বললাম)

—-হি হি কিছু না। আমি তোর সালা হই কি করে জদি গালি দিয়ে থাকিস সেটা ঠিক আছে। আর আমি কিছুই করিনি ও নিজেকে নিজে শুধরানোর চেষ্টা করছে।

—-ওওও আচ্ছা এই কথা।যাক আলহামদুলিল্লাহ ভালো তাহলে।

—-হুম।
আর এই দিকে তানহাকে সবাই ঘিরে বসে আছে।তানহা বলতে লাগলো,

—–বুঝলাম না তোমরা সবাই এমন ভুত দেখার মতো চমকে আছো কেন?

—–ভুত দেখার মতো না ভুত দেখেই চমকে আছি।(তাহমিনা)

—–মানে?

—–কোন মানে টানে নয়।তুমি এরকম শাড়ি পরে বউ বউ হয়ে আছো সেটা দেখেই আমরা অবাক হয়ে আছি।(মিলি)

——সেটা আবার বলতে।আমার নতুন ভাবিকে এভাবে দেখবো আশাই করিনি।তিন বছর এর মধ্যে আজকে তোকে খুব ভালো একটা মেয়ে মনে হচ্ছে। (তানজিল)

—–তাহলে এতদিন আমি খারাপ ছিলাম নাকি?

—-এই নাহ্, যা সব। আমাদের তানহা খারাপ হতেই পারে না।(মিলির আম্মু)

—–হুম। কতদিন পর আমার মেয়েটাকে এমন রুপে দেখে আমার যে কি শান্তি লাগছে বলে বোঝানোর মতো না।(তানহার আম্মু)

—-হইসে হইসে থাক তোমাদের আর ইমোশনাল হতে হবে না।আমি ঠিক হয়ে গেছি।এখোন আমি রান্না ঘরে যাই দুপুরের খাবার রান্না করতে হবেতো নাকি।

—-এই না দারা আমরাও তোকে সাহায্য করছি।(মিলির আম্মু)

—-না থাক তোমরা আমার এখানে এসেছো তোমাদের আমি কাজ করতে দেই কি করে।আরাম করো।

বলেই তানহা চলে গেলো রান্না ঘরে রান্না করতে।আমিও ওর পিছোন পিছোন চলে গেলাম আমাকে আগেই বলে রেখে ছিলো কাজ আছে রান্না ঘরে,

গিয়ে ওর পাশে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলাম,

—-বাহ্ ভালোই তো একটিং পারিশ তোকেতো এওয়ার্ড দেওয়া দরকার।

—-এটাকে আপনার নাটক মনে হলে নাটকই।আর আমার মনের কথা গুলো মনে হলে তাই।আমি আপনাকে বলে হাতে ধরে বুঝিয়ে দিতে পারবো না।এখোন চুপচাপ কিছু লিস্ট বানিয়েছি ওই সামনের ঝুরিটাতে আছে নিয়ে সোজা বাজারে চলে যান।যা যা লিখেছি একটাও জাতে না ছুটে। ঠিক আছে জামাই।

আমি কাশতে কাশতে বললাম,

—-হুম ঠিক আছে।
বলেই হেটে চলে যেতে নিয়ে আবার বেক করে ওর কাছে গিয়ে বললাম—তোর কাছে শরীর খারাপ লাগছে না?

—–কেন বলুনতো? শরীর খারাপ কেন করবে?

—–না ধর পেট বেথা,অস্থির লাগা,মাথা কাজ করছে না,প্রচন্ড রাগ লাগছে এরকম লাগছে না?

—-আপনার সামনেইতো আমি সুন্দর ভাবে দাঁড়িয়ে আছি।কোন বেথার জন্য কি মুচরা মুচরি করছি?

—–নাতো?

—–তাাহলে আর কি?আমি ঠিকি আছি।

—-হুম আচ্ছা থাক তাহলে আমি জাই বাজারে। বলেই লিস্টটা নিয়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে এসে পরলাম।আর ভাবছি, ওরতো এতোখন মদ বা বিয়ার না খাওয়ার কারোনে খারাপ লাগার কথা।এতো সুস্থ কেমন করে আছে?এতোদিন এক বা দুই ঘন্টার বেশি হয়ে গেলে এগুলা না খেয়ে থাকতে পারতো না। যাই হোক জানি না কিছু।

পরে জাহিদকে সাথে করে নিয়ে চলে গেলাম বাজারে। বাজার করে নিয়ে চলে এলাম বাসায়। ছোট চাচি আর বড় চাচি মিলে তানহাকে সাহায্য করছে মিলি সুমি তাহমিনা ঘুমাচ্ছে আর তানজিল সোফায় শুয়ে মোবাইল টিপছে।আমার আম্মু আর আব্বুরা কাকারা আসেনি।উনারা বাসায় আছে।আর আমার এখানে এরাই এসেছে সবাই।

দুপুরের খাবার তৈরি হয়ে গেলে সবাই হাত মুখ ধুয়ে খাবার খেতে বসে পরলাম।বাহ্ ভালোই লাগছে অনেকদিন পর তানহার হাতের রান্না খেলাম।সেই বিদেশ জাওয়ার আগে তানহা আমাকে সব কিছু রান্না করে খায়িয়েছিলো। আসার পর আর খাওয়া হয়নি।ভালোই হয় ওর হাতের রান্না আজকে সবাই ওর প্রশংসা করছে সবাইকে আজকে খুব খুশি দেখাচ্ছে। এদের মুখে হাসি দেখলে নিজের মনটা আপনা আপনি ভালো হয়ে যায়।

খাবার শেষে সবাই রেস্ট নিয়ে রুমে এসে পরলাম।এসেও দেখি ও চুপ চাপ শুয়ে শুয়ে মোবাইল দেখছে।আমার রুমে কোন সোফা না থাকায় খাটে গিয়ে বসে পরলাম।ভাবলাম হয়তো কিছু বলবে নাহ্ কই কিছু বললো না কেন।মনটাও দেখা যায় বেশ খুশি খুশি।

আমিও এক পাশে শুয়ে মোবাইল টিপতে লাগলাম।কিছু সময় পর ও আমাকে বলতে লাগলো,

—-আয়মান শুনুন না?

—–বলুন না।

—–চলেন না ঘুরতে জাই আজকে সবাই।আমার খুব ঘুরতে ইচ্ছে করছে সবার সাথে।

—-তোর এমন ইচ্ছে হয়?

—-কেন হবে না কেন?

—–তুইতো মদ সিগারেট ছারা কিছুই বুঝিস না।

—–খোটা দিচ্ছেন। ঠিক আছে লাগবে না আমাদের ঘুরাতে নেওয়া।

—–আমি কি একাবরো বলেছি নিবো না।

—–তাই তো মনে হলে।

—–নিবো যা সবাইকে বলে আয় বিকালে রেডি হয়ে থাকতে।

—–ওকে ওকে।

ও চলে গেলো সবাইকে বলতে আর আমি ওর জাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলাম।এই মেয়েটা সারাটাজীবন আমার সাথে এই ভাবে থাকতো তাহলে আমি ও সারাটা জীবন ওকে নিজের করে আগলে রাখতাম।দুজনে এক হয়ে যেতাম।কিন্তু এটা শুধু ওর এই দুই তিনদিন এর একটা নাটক।বলেই বড় একটা নিশ্বাস ছারলাম।

বিকেল বেলা সবাইকে ঘুরতে নিয়ে গেলাম খুব সুন্দর সুন্দর জায়গায় গিয়েছি ভালোই লেগেছে।রাতের ডিনারও বাহিরেই করে নিয়েছি।কিন্তু আসার সময় তানহার বিহেবিয়ারটা সকাল দুপুরে যেমন ছিলো ওরকম না একটু খিটখিটে হয়ে গেছে।বুঝতে পারলাম ওকে এগুলার রিয়াকশন করছে, ও অসুস্থ হয়ে যেতে পারে তাই সবাইকে তারাতাড়ি বাসায় নিয়ে এলাম।যেহেতু ঘুরে সবাই ক্লান্ত তাই সবাইকে বিছানা ঠিক করে দিলাম তানহার রুমটা সব মেয়েদের দিয়ে দিলাম জাহিদ আর তানজিলা ওদেরকে ডাইনিংয়ে বিছানা করে দিলাম সোফাও বড় আছে ইচ্ছে হলে ওরা সোফায় ও শুতে পারবে।আর আমার রুমে তানহা আর আমি এলাম।

ও বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। দেখলাম ও কেমন কেমন জানি করছে তাই ওয়ারড্রব থেকে একটা বিয়ারের কেন হাতে করে নিয়ে এগিয়ে দিলাম।ও নাক ডলে আমার হাতে বিয়ার এর কেন দেখে সেটা জলদি করে নিয়ে খেতে লাগলো।প্রায় অনেক্ষণ পরে ও আবার স্বাভাবিক হলো। তাই আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম।

—–তুইতো সেই সকাল থেকেই সব না খাওয়া তাহলে সকালে দুপুরে ঠিক ছিলিস এখোন কি হলো??

—-কে বললো আমি সকালে দুপুরে খাইনি।আমার কাছে ছোট একটা হুইস্কি ছিলো সেটাই সকালে দুপুরে একটু একটু করে খেয়েছিলাম কিন্তু বিকেল হতে হতে ওটা শেষ হয়ে গিয়েছিলো আমার কাছেও আর ছিলো না আপনার কাছে চাইলেও আর দিতেন না।

—–কে বলেছে দিতাম না।আমি খাইনা বলেকি জানিও না যারা এডিকটেড তাদের থেকে এইভাবে এসব ছারানো যায় না।তাদেরকু একটু একটু দেওয়াই লাগে। বর তুই আমার থেকে লুকিয়ে খেয়েছিস কেন?

—– ভালো করেছি লুকিয়ে খেয়েছি।দিন এখোন আমাকে আরেকটা খাবো।

—–একদম না বলেছি না। বাসায় ওনারা সবাই যতোখোন আছে তুই কিছু করতে পারবি না।

—-হুহ ঠিক আছে।

—–তুই থাক আমি গেলাম ঘুমাতে।

—–গেলাম মানে এখানে তো সোফাও নেই ঘুমাবেন কোথায়?

—–কোথায় আবার বিছানায়।

—–তো আমি কোথায় ঘুমাবো?

—–আমি কি জানি।

—–আপনি ফ্লোরে ঘুমান আমি বিছানয় ঘুমাবো।

—–আহারে । যাহ্ তুই ঘুমা ফ্লোরে পারবো না আমি।আমার আবার কারো জন্য এতো দরদ নেই।জার খারাপ লাগবে সে নিচে বা যেখানে ইচ্ছে সেখানেই ঘুমাতে পারে

—–হুহ।মাঝখানে যাতে কোলবালিশ থাকে বলে দিলাম।

আমিও মাঝখানে একটা কোল বালিশ রেখে শুয়ে পরলাম, কিছু সময় পর দেখি তানহাও এসে শুয়ে পরলো। সবাই ক্লান্ত আজকে। আমিও লাইট অফ করে দিলাম

সকাল বেলা নিজের উপর মনে হচ্ছে একশো কেজি ওজনের একটা বস্তা পরে আছে। শ্বাস একবার উপরে উঠছে আরেক বার নিচে নামছে। তাই চোখ খুলে ফেললাম খুলে দেখি আমার বুকের উপর তানহা শুয়ে আছে, হাত পা ফেলে।কেমন বিড়ালের মতো মিশে আছে।এই মেয়টাকে কেমন বাচ্চা বাচ্চা দেখতে লাগছে, ইচ্ছে করছে একটা শক্ত গুড মর্নিং কিস দিয়ে দেই।কিন্তু না আয়মান নিজেকে সংযত রাখ না হলে এই মেয়ে তোকে খালাস করে দিবে।

আগে দেখে নেই কোলবালিশ কার পাশে আমার পাশে হলে তো গেছি বলবে আমি ইচ্ছে করে শরিয়ে দিয়েছি।চোখটা আমার পাশ ফেরাতেই দেখি আমার পাশে। আল্লাহ তার মানে আমি সরিয়েছি বালিশ। এখোন তোর কি হবেরে আয়মান একে তোর উপর থেকে সরা। না হলে তুই শেষ আজকে।

আসতে আসতে তানহাকে নিজের উপর থেকে সরিয়েই দিলাম এক দৌড় ওয়াশরুমে।ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি ও উঠে বসে আছে।গুড মর্নিং বলেই বের হয়ে গেলাম রুম থেকে।

তানহা____
এরকম চোরের মতো গুড মর্নিং বলে গেলো কেন কিছু করেনিতো আমার সাথে?না ঠিক ঠাকিতো আছি আমি।দুর যাই ফ্রেশ হই গিয়ে কাজ করতে হবে আবার।

সকাল ৬টা বাজে। বসে বসে সোফায় অফিসের কাজ করছি।শুক্র শনি বন্ধ রবিবারে কাজ আছে।

আসতে আসতে সবাই উঠে গেলো তানহা এসে রান্না করতে লাগলো, দেখতে দেখতে তিনদিন হয়ে গেলো আজকে সবাই চলে জাবে খুব ভালো লেগেছে এই কয়েকদিন। আমাদের দুজনকেও দেখে মনে হয়েছে আমাদের মধ্য কোন ঝামেলাই ছিলো না।
আর জানি না ওরা জওয়ার পর তানহাকে আমার বুকের উপর পাবো কিনা ও আমার বুকের উপর শুয়ে থাকতো সকালে বেলা আমি তারাতাড়ি ওকে ঠিক করে দিয়েছি এই তিনদিন। না হলে সব দোষ আমার উপর দিয়ে দিতো।যাওয়ার সময় দুজনকে ভালো মতো সবাই সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে গেলো।যাতে ভালো মতো চলি।আমার শাশুড়ী আম্মুও আমাকে বড় একটা ধন্যবাদ দিয়ে গেলো নিজের মেয়েকে স্বাভাবিক দেখার জন্য।

সবাইকে নিয়ে আমি বাস স্টপ পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে বাসে উঠিয়ে দিয়ে এলাম।
এসে দেখি ও বাসার সব কিছু গুছিয়ে রাখছে তাই আমিও সব কাজে সাহায্য করে দিচ্ছি। আমাদের দুজনের কাজ করতে করতে রাত ১১টা বেজে গেলো।দুজনেই কাজ শেষে সোফায় এসে বসে পরলাম।তানহা আমাকে বলতে লাগলো,

—–আহ্ ভাইয়া আমার মাজাটা গেলো।

——মুভ লাগিয়ে নে চলে জাবে।

—–কোথায় মুভ?

—–আমার রুমে।ডেসিনটেবিলের ড্রয়ারে রাখা আছে।

ও গিয়ে মলমটা এনে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,

—–আয়মান লাগিয়ে দিন, আমার হাত ওই পর্যন্ত যাবে না।

——আমি লাগিয়ে দিবো???

—–এখানে কি আর অন্য কেউ বসে আছে।

—–না।

—–তো দিন।আমি একা লাগাতে পারবো না।

আমি ওর শাড়িটা ওচু করে মলম লাগিয়ে দিলাম, আমার হাত কেমন জানি কাপছে,মানে ওন্যরকম একটা ফিলিং হচ্ছে। মলম লাগাতে লাগাতে শাড়িটা একটু নিচে নামাতেই দেখতে পেলাম কেরকম জানি একটা কাটা দাগ অনেকটা গভির হয়ে আছে,দাগটা কালো হয়ে গেছো আবার অনেক খানি মিশেও গেছে।পুরানো ক্ষত।তাই ওকে জিজ্ঞেস করলাম।

—–কিরে তানহা তোর কোমড়ে এরকম কাটা দাগ কেন? কেমন কালো কালশিটে পরে গেছে।
ও কিছুটা ঘাবরিয়ে বলতে লাগলো,

—-ক কই কিসের দাগ?কোন দাগ নেই!

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here