অন্যরকম ভালোবাসা, পর্ব:১৪

0
801

#অন্যরকম_ভালোবাসা

#আফসানানীতু

#পর্ব_১৪

চায়ের দোকানে ঢুকেই মেয়েটাকে দেখতে পেয়েছিল অন্তরা। অলি ভাই যে টেবিলে বসে চা খাচ্ছিলো মেয়েটি ঠিক তার পাশের টেবিলটায় জুবুথুবু হয়ে বসেছিল। মেয়েটির বয়স একেবারে কম, বড়জোর উনিশ কিংবা বিশ। বন্ধুদের সবাই মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকলেও কেউ মেয়েটির কথার জবাব দেয় না। অন্তরা তাই আগবাড়িয়ে নিজেই বলে,

– জ্বী বলুন?

– ইয়ে …. আমার খাগড়াছড়ি শহরে যাওয়া খুবই জরুরী , শুনলাম আপনারা যাচ্ছেন । যদি দয়া করে আমাকে সঙ্গে নিতেন …
ইতস্ততঃ ভঙ্গিতে বলে মেয়েটা ।

প্রীতিটা সবসময়ই একদম ছেলেমানুষ, আগুপিছু না ভেবেই কথা বলে ফেলে। তাই মেয়েটার কথা শেষ হবার আগেই সে ফটাফট উত্তর দেয়,
-সরি , এটা লোকাল বাস না।

অন্তরা প্রীতিকে কনুই দিয়ে খোঁচা মারে তারপর কানে কানে বলে,
-তুই কি জন্মেও মানুষ হবি না ? একজন প্রেগনেন্ট মহিলার সাথে কেউ এভাবে কথা বলে !!

প্রীতি অন্তরার কথা শুনে অবাক হয়ে যায় , তারপর ভালমতো খেয়াল করে দেখে মেয়েটাকে। তাইতো ! অত্যন্ত ভগ্ন স্বাস্থ্যের জন্য প্রথম দেখায় চট করে বোঝা যায়নি তবে এখন খেয়াল করে দেখায় বোঝা যাচ্ছে মেয়েটার তলপেট বেশ খানিকটা স্ফীত, সাত আট মাসের প্রেগনেন্ট নির্ঘাত! খুব সম্ভবত মেয়েটা এই প্রথম মা হতে চলেছে, কারণ সে অত্যন্ত আড়ষ্টভাবে তার স্ফীত পেটখানা শাড়ির আঁচল দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করছে বার বার।

– দেখুন আমরা আসলে শুধুই বন্ধু বন্ধুরা যাচ্ছি , এরমাঝে আসলে বাইরের কাউকে সঙ্গে নিতে চাইছি না।
জুবায়ের অত্যন্ত ভদ্র ভাষায় মেয়েটাকে পরিষ্কারভাবে না বলে দেয়।

– দেখুন… আমি খুব বিপদে পড়ে এসেছি আপনাদের কাছে!আমার এখানে কেউ থাকেনা। খাগড়াছড়ি শহরের কাছেই আমার আত্মীয়ের বাড়ী। রাত হয়ে যাচ্ছে, এদিকে এখন কোন বাসও পাওয়া যাবে না। একটু দয়া করুন, প্লিজ! আমি আপনাদের পথের মাঝেই মেইন রোডে নেমে যাবো, আমার জন্য আপনাদের ঘুরতে হবে না সত্যি !
মেয়েটার কণ্ঠে আকুতি ঝরে পড়ে।

– আহ্ ,আপনি একটু বোঝার চেষ্টা করুন! আমরা আপনাকে চিনিনা, তার উপর আমরা টুরিস্ট। এখানে আমাদের পরিচিত কেউ নেই। আমাদের সঙ্গে মেয়েরা আছে, তাই সম্পূর্ণ অপরিচিত কাউকে গাড়ীতে তুলতে চাইছি না, সরি!
জুবায়েরের কন্ঠে স্পষ্ট অসহিষ্ণুতার ছোঁয়া।

– এখনো রাত হতে বাকী আছে তো, আপনি প্লীজ অন্য কোন ট্রান্সপোর্ট দেখুন।
রুবী মেয়েটাকে নরম কন্ঠে বুদ্ধি দেয়।

– আসলে …. আসলে আমার কাছে কোনো টাকা পয়সা নেই। আপনাদের দেখে মনে হলো আপনারা হয়তো আমাকে বিনে পয়সায় নিতে রাজী হবেন তাই …
এতটুকু বলেই মেয়েটা লজ্জায় মাথা নিচু করে শাড়ির আঁচল টেনে নিজেকে আরো গুটিয়ে ফেলে যেন।

– বাবারা, বললে হয়তো রাগ করবা এরপরও কই। আমি মাইয়াডারে চিনি। ভালা বংশের মাইয়া, কপাল দোষে ঝামেলায় পইড়া গেছে। লগে নিয়া যাও বাবা! পোয়াতি মেয়েছেলে রাইত হইলে কই যাইবো, কও?
দোকানী খুব দরদ দিয়ে স্পন্দনকে কথাগুলো বলে।

স্পন্দন এতক্ষণ সব শুনছিল। মেয়েটার পরনের শাড়ি দেখে স্পন্দনের নিজেরও মনে হয়না মেয়েটা কোন অভাবী পরিবারের। তাছাড়া মেয়েটার কথা এবং ব্যবহারও বলে সে বেশ ভালো ঘরের শিক্ষিত মেয়ে। স্পন্দন অবশ্য মেয়েটাকে দেখে বুঝতে পারেনি সে সন্তানসম্ভবা। তবে দোকানীর মুখে সে কথা জানতে পেরে সে কারো মতামত না নিয়েই মেয়েটাকে বলে বসে,

-ঠিক আছে আপু, চলেন … কোন সমস্যা নাই।

– আপনে পাগল হইলেন ভাইজান! চিন পরিচয় ছাড়া একজনরে সাথে নিবার চান !!
অলি ভাই স্পন্দনের কথায় অনুচ্চ কন্ঠে প্রতিবাদ করে কোকিয়ে ওঠে।

-সত্যি বলতে, অন্য সময় হলে আমিও হয়তো রাজি হতাম না। তবে উনি প্রেগনেন্ট শুনে আমিও স্পন্দন ভাইয়ের পক্ষে ভোট দিচ্ছি।
ঈষিতা হাত তুলে বলে।

সবার মাঝে তুমুল বাকবিতন্ডা শুরু হয়ে যায়। জুবায়ের আর অলি ভাই এই প্রস্তাবে কিছুতেই রাজী হতে চায় না। তবে শেষমেষ প্রীতির জিদের কাছে জুবায়ের পরাস্ত হয়। বেচারা অলি ভাই অপরপক্ষে একা পড়ে যাওয়ায় আর কথা না বাড়িয়ে আপন মনে গজ গজ করতে করতে দোকান ছেড়ে গাড়িতে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে মুখ কালো করে বসে থাকে।

মেয়েটা এতক্ষণ একটা কথাও না বলে মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলো। মেয়েটির দিকে তাকিয়ে অন্তরা বুঝতে পারে বেচারী তাকে নিয়ে এই হই হুলুস্থুলে বেশ অস্বস্তি বোধ করছে। সে উঠে গিয়ে মেয়েটির কাঁধে হাত রেখে তাকে নরম কন্ঠে বলে,

– দেখুন, আমরা আপনাকে চিনিনা। শুধুই মনুষ্যত্বের খাতিরে আপনাকে সঙ্গে নিচ্ছি। আশা করি আমাদের বিশ্বাস ভঙ্গের মত কোন কাজ আপনি করবেন না।

– বিশ্বাস করুন, নিতান্ত বিপদে পড়েই আপনাদের কাছে এসেছি নয়তো ….
মেয়েটা বিড়বিড় করে আরো কি সব যেন বলে যার একটা বর্ণও কেউ বুঝতে পারে না।

– আপনার নামটা জানতে পারি?
রুবী অস্বস্তিকর পরিবেশটা হালকা করার জন্য জানতে চায়।

– জ্বী , সুরমা।

যাত্রার শুরু থেকেই প্রীতি জুবায়ের পিছনের সিটটা দখল করে বসে আছে। ওরা পেছনে বসে নিভৃতে প্রেম করতে চায় বুঝতে পেরে কেউ আর ওদের ঘাটায়নি। এখনো তার ব্যতিক্রম হল না, সবার আগে ওরা গাড়িতে উঠে পিছনের সিটে গিয়ে বসে পড়ে। এদিকে ওদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে সুরমা বেশ তাড়াহুড়ো করে বাকী সবার আগে গাড়িতে উঠে প্রীতির পাশে গিয়ে বসে পড়ে।

অন্তরা বিস্মিত কন্ঠে বলে,
– ওমা সেকি! আপনি পেছনে গিয়ে বসছেন কেন? পেছনে ঝাঁকুনিতে আপনার সমস্যা হবে, আপনি বরং সামনে চলে আসুন।

– না না, আমি এখানেই ঠিক আছি ।

সুরমা আরো গাঁট হয়ে বসে। জুবায়ের এমনিতেই সুরমাকে সাথে নেয়াতে মুখ কালো করে ছিল , এখন আবার মেয়েটাকে ওদের সঙ্গে পেছনে এসে বসতে দেখে আরো কালো করে ফেলে মুখখানা। তাই দেখে প্রীতির ভীষণ রাগ হয় জুবায়েরের উপর, সে খানিকটা জেদ করেই বলে,
– অসুবিধা নেই , আপনি আমাদের সাথেই বসুন আপু।
বলে সুরমার একটা হাত নিজের হাতে নিয়ে নেয়।

অগত্যা এই নিয়ে আর কেউ কোনো উচ্চবাচ্য না করে গাড়িতে উঠে বসে। টগবগে তরুণ বয়সের আবেগের কারণেই হোক কিংবা অভিজ্ঞতার অভাবেই হোক মেয়েটি এই ভর সন্ধ্যায় কী এমন বিপদে পড়ে তাদের সঙ্গে একলা রওনা দিয়েছে সেটা জানার তেমন কোন আগ্রহ তাদের মধ্যে দেখা যায় না। আসলে সারাদিনের যাত্রায় সবাই ক্লান্ত, তাই হুড়োহুড়ি করে গাড়িতে উঠে বসতে পারলেই যেন তারা বাঁচে। গাড়িতে ওঠার আগে স্পন্দন একবার সুরমার কাছে পুরো ব্যাপারটা জানতে চেয়েও এই ভেবে নিজেকে নিরস্ত করে যে গাড়িতে বসেই না হয় ধীরেসুস্থে সবটা জানা যাবে। তাছাড়া মেয়েটার ভাবভঙ্গিতে বোঝা যাচ্ছে সে পুরো ব্যাপারটা তাদেরকে জানাতে চাচ্ছেনা, স্পন্দন তাই এ বিষয়ে তেমন গা করেনা। অলি ভাই বেজার মুখে গাড়ি স্টার্ট দেয়। সারাদিনের জার্নিতে ক্লান্ত সবাই গাড়িতে উঠেই ঝিমাতে শুরু করে, তাই গাড়ীতে হালকা লয়ে কেনিজির মিউজিক বাজা ছাড়া মোটামুটি নিস্তব্ধতা নেমে আসে।

এভাবে কতক্ষণ কেটে গেছে কেউ বলতে পারবে না, বোধ হয় ঘণ্টাখানিক হবে…

এমনসময় পেছনে একটা গাড়ির অনবরত পাগল করা হর্নে গাড়ির ভেতরের নীরবতা ভঙ্গ হয়। অলি ভাই গাড়ির রিয়ার ভিউ মিররে তাকিয়ে দেখে একটা ঘন খয়েরী রঙ্গের প্রাইভেট কার পেছন থেকে তাদের গাড়িকে পাশ কাটিয়ে সামনে যাবার চেষ্টা করছে। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা সরু রাস্তায় সেটা সম্ভব হচ্ছে না বলেই অনবরত হর্ন বাজিয়ে চলেছে। নিস্তব্ধ রাতে হর্নের বিচ্ছিরি শব্দটা তীব্রভাবে সবার কানে গিয়ে বাড়ি খায় যেন। স্পন্দন বিরক্ত কন্ঠে অলি ভাইকে বলে,

– গাড়ি চাপিয়ে একটু সাইড দেন তো অলি ভাই, গর্ধভগুলারে আগে যেতে দেন!

স্পন্দনের কথা শেষ হবার আগেই সুরমা আর্তনাদ করে ওঠে,
– না প্লীজ! আল্লাহর দোহাই লাগে এদেরকে সাইড দিয়েন না। সামনে যেতে পারলে ওরা এই গাড়ী থামিয়ে আমাকে নামিয়ে নেবে।

এবার সবার চমকানোর পালা। সুরমার কথাগুলো যেন গাড়ির ভেতর বোমার মত বিস্ফোরিত হয়। সবার মুখ থেকে নানারকম বিস্ময় সূচক শব্দ বেরিয়ে আসে। অন্তরা বিস্মিত কন্ঠে জানতে চায়,
– নামিয়ে নেবে মানে কী ? আপনি চেনেন ওদের !!?

মেয়েটি অন্তরার প্রশ্নের কোন জবাব দেয় না, তাই দেখে ঈশিতা ধমকে ওঠে,
– ফর গড সেক, কথা বলুন! আপনি চেনেন ওদের?

মেয়েটি এবার ভীত কন্ঠে থেমে থেমে এলোমেলোভাবে জবাব দেয়,
– হ্যাঁ চিনি…ওরা আমার শ্বশুড়বাড়ির লোক। কিন্তু ওরা ভালো মানুষ না। ওরা খারাপ… ভীষণ খারাপ! ওরা… ওরা আমাকে আর আমার বাচ্চাটাকে মারতে চায়।

মেয়েটির উত্তর শুনে গাড়িতে যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত ঘটে। রুবী অবিশ্বাস ভরা কন্ঠে বড় বড় চোখ করে সুরমার দিকে তাকিয়ে বলে,
– এসব কি যা তা বলছেন আপনি! আগে কেন বলেননি এসব কথা!?

– আগেই কইসিলাম … চিন পরিচয় ছাড়া মেয়েছেলে গাড়িতে তুইলেন না! হইলো অহন ?
অলি ভাইয়ের কন্ঠে স্পষ্ট রাগের আভাস ।

স্পন্দন অলি ভাইয়ের সঙ্গে ফ্রন্ট সিটে বসেছিল, সে সুরমার দিকে ফিরে উদ্ভ্রান্ত কন্ঠে জানতে চায়,
– এই না বললেন উনারা আপনার শ্বশুরবাড়ির লোক, তবে তারা আপনাকে আর আপনার বাচ্চাকে মারতে চাইবে কেন ? আর আপনার স্বামীই বা কই?

– আমার স্বামী রতন দু’মাস আগে মারা গেছে।

– তাহলে তো আপনার বাচ্চা হবে জেনে ওদের আরো খুশী হবার কথা! মারতে চাইবে কেন ?
অন্তরার কাছে পুরো ব্যাপারটা কেমন গোলমেলে ঠেকে।

– কারণ আমি মুসলমান আর রতন হিন্দু ছিল। আমরা সবার অমতে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে খাগড়াছড়ি শহরে আলাদাভাবে সংসার করছিলাম। কিন্তু রতন দু’মাস আগে হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই মাত্র দু’দিনের জ্বরে হুট করে মারা যায়। আমি এতিম, কাছের আত্মীয় স্বজন বলতে তেমন কেউ নেই। বিয়ের আগেই চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছিলাম, তাই রতনের মৃত্যুর পর আর্থিক সমস্যায় আছি বলে আমার এক দূর সম্পর্কের আত্মীয় এতদিন আমাকে তাদের বাসায় রেখেছিল। এই এলাকায় রতনের পরিবার বেশ প্রভাবশালী। তারা কোথা থেকে যেন আমি মা হব ব্যাপারটা জানতে পেরে ক’দিন আগে গিয়ে আমাকে খাগড়াছড়ি থেকে এখানে নিয়ে আসে। এই অবস্থায় অনিশ্চয়তার মধ্যে অন্যের বাড়িতে আর কতদিন পড়ে থাকবো ভেবেচিন্তে আমিও আর না করিনি, তাদের সঙ্গে এখানে চলে আসি। কিন্তু ওরা চিকিৎসার নাম করে আমার আল্ট্রাসনোগ্রাম করায়, জানতে পারে আমার ছেলে হবে। ওরা ঠিক করে আমাকে আর আমার বাচ্চাটাকে মেরে ফেলবে , কারণ ওরা মুসলিম মেয়ের বাচ্চা রেখে বংশ কলুষিত করতে চায় না। এটা আমার সৌভাগ্য না দুর্ভাগ্য কিনা জানিনা, আমি আজ সকালে ওদের বাড়ির একজন চাকর মারফত ওদের এই ঘৃণ্য প্ল্যানটা জানতে পারি। চায়ের দোকানী চাচা রতনকে চিনতো তাই তার কাছে এসেছিলাম সাহায্য চাইতে, উনিই বুদ্ধি দিলেন আপনাদের সাথে চলে যেতে। ভেবেছিলাম ওরা জানতে পারবে না, কিন্তু কীভাবে যেনো টের পেয়ে চলে এসেছে!

– আপনাকে বিশ্বাস করেছিলাম আর আপনি কিনা আমাদের ব্যবহার করেছেন ?
রাগে অন্ধ হয়ে চড় তুলে সুরমাকে মারতে আসে জুবায়ের , কিন্তু প্রীতি সময়মত তাকে আটকায়।

এদিকে পাগলের মত হর্ণ বাজিয়েই চলেছে পিছনের গাড়িটা।একবার একটু পাশে আসতে পেরে গাড়ীর ভেতর থেকে কেউ একজন আঞ্চলিক ভাষায় চিৎকার করে দুর্বোধ্য কিছু বলে, যার একটা বর্ণও ওরা বুঝতে পারে না।

অলি ভাই চাকরির সুবাদে আগে এই এলাকায় ছিল, তাই স্পন্দন তাকে জিজ্ঞাসা করে,
– কী, বলছে কী ওরা?

– গাড়ি থামাইতে কয়, নইলে নাকি জানে মাইরা ফেলবো!ভাইজান অনুমতি দেন, নামায় দেই বদ মাইয়াটারে।
অলি ভাই রাগে গরগর করে দাঁত কিড়মিড় করে বলে।

কিন্তু অন্তরা প্রায় আর্তনাদ করে উঠে বলে,
– না প্লীজ, গাড়ী থামাবেন না!

– অন্তরা ঠিক বলসে! দেখেন অলি ভাই, উনি যত খারাপ মানুষই হোন না কেন উনাকে আমরা কিন্তু আমাদের নিজ দায়িত্বে গাড়িতে তুলছি। আর এখন উনাকে ধরতে পারলে তারা মেরে ফেলবে জানার পর তাদের হাতে উনাকে তুলে দেবার প্রশ্নই আসে না।

স্পন্দনের কথায় গাড়িতে বসা মেয়েরা সবাই কমবেশি সমর্থন জানায়। অলি ভাই অসহিষ্ণু কন্ঠে স্পন্দনকে বোঝাবার চেষ্টা করে,
– আপনে বুঝতেসেন না ভাইজান , উনারা স্থানীয় লোক। এনাদের সাথে আমরা পারমু না। উল্টা এই মাইয়ার লাইগ্যা সবাই মারা পড়ুম।

বলে অনুমতির জন্য স্পন্দনের দিকে উদগ্রীব চোখে তাকায়, কিন্তু স্পন্দনের সেদিকে কোন খেয়াল নেই সে তাকিয়ে আছে অলি ভাইয়ের পাশের জানালার দিকে , হঠাৎ চোখ বড় বড় করে সে চিৎকার করে ওঠে,
– সাবধান অলি ভাই ….!

অলি ভাই তাকিয়ে দেখার আগেই পাশের গাড়ীর জানালা থেকে বেশ বড় সাইজের একটা ঢিল ছুঁড়ে মারে ওরা ড্রাইভিং সিট লক্ষ্য করে। স্পন্দন ঢিল ছুড়তে দেখে অলি ভাইয়ের মাথা নীচের দিকে ঠেসে ধরে নিজেও চট করে মাথা নামিয়ে ফেলে যাতে ইটটা কারো মাথায় না লাগে। এতে ওদের মাথা তো বেঁচে যায় কিন্তু গাড়ীটা তাল হারিয়ে বেসামাল হয়ে পড়ে।

অলি ভাই মাথা তুলে স্টিয়ারিং চেপে গাড়ি নিয়ন্ত্রণে আনার আগেই গাড়ী রাস্তা ছেড়ে পাশের অন্ধকার খাদের দিকে রওনা দেয়। অলি ভাই তবু অভ্যস্ত হাতে ব্রেক কষে গাড়ি থামাবার চেষ্টা করে। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে, গাড়ী তীব্রগতিতে ঝোপ জঙ্গল ভেঙ্গে নীচের দিকে নামতে শুরু করেছে।

গড়িয়ে …. লাফিয়ে …ছেঁচড়ে ……

চলবে …..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here