“অবশেষে_তুমি (পর্ব ২২)

#অবশেষে_তুমি (পর্ব ২২)
#Mohua_Afrin_Mim
·
·
·
অর্ণব চলে গিয়েছে অনেক্ষন হলো কিন্তু মিম এখনো ঠাঁই দাড়িয়ে আছে আগের মতো।। বৃষ্টির সাথে সাথে নিজেও চোখের জল বিসর্জন দিচ্ছে।। কি আর করবে এখানে তো আর তার কিছু করার নেই চাইলেও মিম অর্ণবকে নিজের করতে পারবেনা।। এখানে এসেই শুধু মিম থমকে যায় আর এগোতে পারেনা।। এই ক্ষেত্রে যে মিমের হাত পা বাধা।। চাইলেও সে এই বাঁধন থেকে ছুটতে পারবেনা।।

কি দোষ ছিলো আমার!! কেনো আমার সাথেই এমন হলো!! কেনো উনি আমাকে বুঝেন না!! কেনো বুঝেন না যে আমি উনাকে ভালোবাসি উনাকে আমি কতোটা চাই।। আর কি করলে উনি আমাকে বুঝবেন!! আমি আর পারছিনা।। আমি আর ধৈর্যের পরিক্ষা দিতে পারছিনা।। এই ধৈর্যের পরিক্ষা দিতে দিতে আজ আমি বড়োই ক্লান্ত।। আর পারছিনা এসব মেনে নিতে।। আচ্ছা একটা মানুষ আর কিভাবে এর চেয়ে বেশি সহ্য করতে পারে!! তা আমার জানা নেই।। উনাকে কে বলেছিলো আমার কাছে আসতে আর কে বলেছিলো আবার দূরে ঠেলে দিতে!! আমি তো বলিনি কখনো।। তবে কেনো উনি একবার আমাকে কাছে টেনে নেন আবার দূরে ঠেলে দেন।। আমি তো কখনো আমার অধিকার নিয়ে উনার সামনে দড়াইনি।। তবে কেনো উনি আমার কাছে আসেন আবার দূরে চলে যান।। কেনো!! কেনো!! উনি কি বুঝেন না এতে কতোটা কষ্ট হয় আমার!!না, আমি আর মেনে নিতে পারছিনা।
আমি আর পারছিনা…………….

.

.

.

তিন মাস কেটে গেলো।। এই তিম মাসে আমার আর অর্ণবের সম্পর্কটা বন্ধুত্বেই আটকে আছে……….. এর বাহিরে একটুও আগায়নি।। তবে বন্ধুত্বের সম্পর্কটা ভালোই চলছে।। এখন উনি আমার অনেক ভালো বন্ধু বলতে গেলে বেস্ট ফ্রেন্ড।। আর অবশ্যই বলতে হবে অর্ণবের মতো ফ্রেন্ড হয়না।। হয়তো কখনো পাবোও না।। কেননা উনার কাছে কিছু বলার আগেই উনি সেটা বুঝে নেয়ার চেষ্টা করেন আর কিছু চাওয়ার আগেই সেটা এনে দেয়ার চেষ্টা করেন।। উনার কাছে আমি এখন অনেক কাছের মানুষ কিন্তু সেই কাছের মানুষ হতে পারিনি যেটা হলে শুধু “মিমময় অর্ণব” হতো।। কিন্তু আমার কাছে এটাই বেশি।। এর চেয়ে বেশি আর আশা করা যায় না।। অন্তত আমি তো উনার কাছে আছি এটাই এখন আমার কাছে অনেক বেশি।। মাঝে মাঝে উনার কিছু কাজে মনে হয় উনি আমাকে মেনে নিয়েছেন উনি আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছেন কিন্তু পরক্ষণেই মনে হয় না এরকম কিছুই না।। উনার এসব কাজকর্মে আমি নিজেই অনেক বেশি কনফিউজড।। আমি জানি না উনি কি চান……….. আমি বুঝতে পারিনা উনার মনে কি চলছে।। তবে একটা জিনিসে আমি সিউর যে উনি আমার প্রতি দূর্বল।। এটা উনি মুখে স্বীকার না করলেও আমার বুঝতে অসুবিধা হয় না।।

রাত বারোটা। শীতে আমার শরীর কুকড়ে যাচ্ছে। অর্নব পাশে শুয়ে আছে।। উনি একবার ঘুমোলে উনার ঘুম সাধারণত সহজে ভাঙে না। কিন্তু আজ কিভাবে যেন উনি বুঝতে পেরেছে যে আমার কষ্ট হচ্ছে।। আমার কপালে হাত দিয়ে দেখে জ্বরে আমার গা পুড়ে যাচ্ছে।। উনি বললেন

অর্ণবঃ মীম,জ্বর কখন আসলো? আমাকে ডাক দাওনি কেনো?? থাক কথা বলতে হবে না। দাড়াও আমি পানি নিয়ে আসি।। জলপট্টি দিতে হবে।।

দু ঘন্টা ধরে জলপট্টি দেওয়ার পর ও যখন জ্বর কমলো না তখন অর্নব বালতিতে করে পানি এনে আমার মাথা ধুইয়ে দেয়।। তারপর ঔষধ খাইয়ে শুইয়ে দেয়।।

এটা সেই বৃষ্টি দিনের কথা।। এসব ভাবতে ভাবতে নিজের মনে হাসছি।। যদিও এগুলো অর্নবের কাছে বন্ধুত্বের খাতিরে করা কিন্তু আমার কাছে এটাই ভালোবাসা।।

এই তিন মাসে এরকম আরো অনেক কিছু হয়েছে।। একটা জরুরি কাজে বাবা-মা আমাকে বাড়িতে যেতে বলেছিল।। কথা ছিল এক সপ্তাহ থাকবো।। অর্নব ব্যবসার কাজে শহরের বাইরে গিয়েছিলো বলে উনাকে আর বলে যেতে পারিনি।। কিন্তু উনি দুদিন পরই আমাকে এসে নিয়ে গিয়েছিল।। আমাকে ছাড়া নাকি উনার ভালো লাগে না।।

আমার এমনই কপাল যে এরপরও আমার স্বপ্ন দেখা বারণ।। ভালোবাসার আশা করা বারণ।।

“”ভালোবাসার অধিকার সবার আছে কিন্তু ভলোবাসার অধিকার নিয়ে সামনে যাওয়ার অধিকার সবার নেই।।””

আমার ক্ষেত্রেও ঠিক তাই।
.

.

আজকে দুপুরের খাওয়া-দাওয়ার পরে ঘরে বসে অর্নব আর আমি কথা বলছি।। এমন সময় অর্ণব বললো

অর্ণবঃ মীম যাকে ভালোবাসো তাকে যদি কখনো না পাও তাহলে কি করবে?/

মিমঃ কি আর করবো।। এখন যা করি ভালোবেসে যাবো।
(অর্নবের এমন প্রশ্নে আমার অবাক হওয়ার কথা থাকলেও অবাক হলাম না।। কারণ অর্ণব এখন প্রায়ই এ ধরনের প্রশ্ন করে)

অর্ণবঃ তুমি আজো তার নামটা বললে না।।

মিমঃ কি করে বলবো বলুন।। আমার ভালোবাসা প্রকাশ করার অধিকার তো আমি পাই নি।

অর্ণবঃ তোমার মতো একটা মানুষকে অবহেলা করে কিভাবে!! তোমাকে পেলে যেকোনো মানুষের জীবন ধন্য হয়ে যাবে।।

মিমঃ সত্যিই কি তাই!!

অর্ণবঃ মানে!!

মিমঃ মানে যে কথাগুলো বললেন সেগুলো কি সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য??

অর্ণবঃ দেখো মিম,তোমাকে একটা কথা…..

বাবু আপনারে আম্মাজান ডাকতাছে।। কি জানি দরকারি কথা কইব।। এখনি যাইতে কইল।।

আচ্ছা তুমি যাও, আমি দেখছি।।

মা হঠাৎ করে আমাকে কেনো ডাকলো।। কিসের কথা বলতে চাচ্ছে কিছুই তো বললো না।। খালি যেতে বললো।। এসব ভাবতে ভাবতে মায়ের রুমে গেলাম।। গিয়ে দেখি মা বসে আছে।। আমি বললাম

অর্ণবঃ মা,ডেকেছিলে??

মাঃ বস এইখানে।

অর্ণবঃ কি হয়েছে মা? কোনো সমস্যা?

মাঃ সমস্যা আমার না।। সমস্যা তোর।।

অর্ণবঃ আমার আবার কি সমস্যা?

মাঃ আচ্ছা বল তো তুই মেয়েটাকে আর কতো কষ্ট দিবি।। ও কিন্তু তোর জন্য ওর বাবা মা কে ছেড়ে এখানে এসেছে।।

অর্ণনঃ কিন্তু ও তো…..

অর্ণবঃ তুই নতুন করে আর কোনো বাহানা বানাস না।। জানিস মেয়েটা লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদে।। কিন্তু সবার সামনে হাসি মুখে সবটা সামলে নেয়।। কখনো কোনো অভিযোগ করে না।।

অর্ণবঃ (নিশ্চুপ)

মাঃ তুই জানিস,মেয়েটার মুখের দিকে আমি তাকাতে পারি না।। মনে হয় ওর জীবনটা আমি হাতে ধরে নষ্ট করেছি।। যাই হোক তোর কোনো অধিকার নেই একটা মানুষের জীবন নষ্ট করার।। তুই ভেবে দেখ ওর সাথে মানিয়ে নিতে পারিস কিনা।। না পারলে ওকে ওর বাড়ীতে রেখে আসবি।। কতই বা বয়স মেয়েটার।। এই বয়সেই যদি…….

অর্ণবঃ……………

মাঃ একটা জিনিস কি খেয়াল করেছিস নিসা মারা যাওয়ার পর কিন্তু তুই একদম চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলি আগের মতো ছিলি না।। কারো সাথে ভালোভাবে কথা বলতি না মিশতি না একদম একা থাকতি।। আর এখন মিম আসার পর থেকে তুই আগের অর্ণব হয়ে গিয়েছিস।। আগের হাসি খুশি অর্ণবে পরিণত হয়েছিস।। মিমই কিন্তু তোকে ঠিক করেছে।। যে চলে গিয়েছে তাকে নিয়ে কেনো পড়ে আছিস!! যে চলে যাওয়ার সে তো চলে যাবেই তাকে কেউ আটকে রাখতে পারবে না।। যে চলে গিয়েছে সে তো আর কখনো ফিরে আসবে না।। কেনো শুধু শুধু অতীতকে নিয়ে ভাবছিস!! সামনে সুন্দর একটা ভবিষ্যৎ পড়ে আছে।। যদি কিছু নিয়ে ভাবিস তাহলে ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাব মিমকে নিয়ে ভাব অতীতকে নিয়ে না।। অতীত শুধু মানুষকে কষ্টই দেয় তছাড়া আর কিছু দেয় না।। আর আমি একটা জিনিস খেয়াল করেছি তুই মিমের প্রতি অনেক দূর্বল।। তুই ওকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারিস না।। তোর কি মনে হয় না তোর মনে মিমের জন্য জায়গা তৈরি হয়েছে।। তুই মিমকে ভালোবাসতে শুরু করেছিস।। ভেবে দেখ ভালো করে।। এখনও সময় আছে।।

মায়ের রুম থেকে বের হয়ে মায়ের কথাগুলো ভাবছি।। আসলেই মায়ের কথাগুলো ঠিক।। আমি কেনো ওকে শুধু শুধু কষ্ট দিচ্ছি!! ওর তো কোনো দোষ নেই।। তাহলে কেনো ওকে আমি দূরে সরিয়ে রাখছি!!

এসব ভাবতে ভাবতে রুমে গিয়ে দেখি মিম মোবাইল চালাচ্ছে।। আমাকে দেখেই মিম বললো

মিমঃ মা ডেকেছিলো কেনো?? সবকিছু ঠিক আছে তো।। মায়ের শরীর ঠিক আছে??

অর্ণবঃ আরে বাবা সব ঠিক আছে।। এতো চিন্তা করতে হবে না।।

এ কথা বলতেই মীম হেসে দিল।। সত্যিই মিমের হাসিটা কি মলিন কি স্নিগ্ধ।। কিন্তু আমি আগে কেনো খেয়াল করলাম না!!

অর্ণবঃ আচ্ছা মীম,তুমি……….
না থাক কিছু না।আমি একটু বাহিরে যাচ্ছি।।
এই বলে অর্নব চলে গেলো।।

.

.

আজকে রাতে ডিনার শেষে সবকিছু গুছিয়ে এগারোটার দিকে রুমে গেলাম।। রুমে গিয়ে দেখি অর্ণব নেই।। ওয়াশরুম আর বারান্দায় দেখলাম কিন্তু কোথাও নেই।। হঠাৎ করে চোখ পড়লো খাটের উপর।। তারপর যা দেখলাম তা দেখার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না………..
·
·
·
চলবে…………………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here