#আমারে_দিলোনা_ভুলিতে।
#পর্ব_১২।
#লেখা_আরজুমান_তাশা।
“নিবেদিতা নিজেকে ধাতস্থ করে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে চন্দ্রার কাছে যাচ্ছিলো। তখন পিছন থেকে কেউ নিবেদিতা’র নাম ধরে ডেকে উঠে৷নিবেদিতা পিছন ফিরে তাকায়। তার নাম ধরে ডাকা ব্যক্তির দিকে একনজরে তাকিয়ে থেকে নিবেদিতা চিন্তা করছে,
” আমি কী তাকে চিনি!
লোকটি ততক্ষণে নিবেদিতা কাছাকাছি চলে আসে। দেখতে গুড পারসোনালিটির ব্যক্তি মনে হচ্ছে। হাতে ড্রিংকসয়ের গ্লাস। নিবেদিতা’র কাছে এসে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে বলে,
“নিবেদিতা,রাইট?
নিবেদিতা অবাক চাহনি নিয়ে জবাব দেয়,
” জ্বী!
নিবেদিতার মাথায় খেলছেনা লোকটা তাকে চিনে কিভাবে?মুখটাও পরিচিত মনে হচ্ছে তার। নিবেদিতার এই চিন্তা হয়তো লোকটা বুঝতে পেরেছে তাই নিজে আগ বাড়িয়ে বলে,
“তুমি হয়তো আমাকে চিনতে পারোনি।আমি অমিত৷ গত বছর একটা ফাংশনে তোমার সাথে আমার দেখা হয়েছিলো। তুমি আমায় হেল্প করেছিলে অনেক। কিন্তু তোমায় আমি ধন্যবাদ অবধি বলতে পারিনি।”
নিবেদিতা কিছুক্ষণ চিন্তা করে।আর মনে পরে যায় একটা ভি. আই.পি. ফ্াংশনে অমিতের সাথে দেখা হয়েছিলো৷ একে অপরের কাজে অনেক সাহায্য করেছিলো অনেক। তাদের পরিচয়টা পনেরো দিনের ছিলো। কিন্তু একটা ভালো বন্ডিং তৈরি হয়েছিলো দুজনের মাঝে৷ পরবর্তীতে দুইজন দুজনের কর্মস্থলে ফিরে যায়৷ ব্যস্ততার তাগিদে ভুলেই গিয়েছিলো নিবেদিতা। নিবেদিতা’র মনে পরতে একগাল হেসে অমিতের দিকে হাত এগিয়ে বলে,
“হ্যালো। কেমন আছো?
অমিত হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করে নিয়ে হাসিমুখে জবাব দেয়,
” এইতো ভালো। তোমার কি অবস্থা?
“এইতো গুড।কিছু মনে করোনা অনেক দিন পর দেখেছি, তাও হুট করে। তাই চিনতে একটু অসুবিধা হয়ে গিয়েছে৷ প্লিজ কিছু মনে করোনা।
অমিত নিবেদিতা থামিয়ে দিয়ে বলে,
“ইট’স ওকে। এমনটা আমার সাথেও হয়। প্রথমে আমিও তোমাকে চিনিনি।পরে ভালো ভাবে লক্ষ্য করতে বুঝতে পারলাম তুমি আমার পূর্ব পরিচিত। ”
অমিতের কথায় নিবেদিতা হাসে। হেসে বলে,
“সো, কি অবস্থা তোমার?
অমিত গ্লাসে চুমুক দেওয়া শেষ করে গম্ভীর গলায় বলে,
“তুমি জানো আমি নেভি’তে। সো তুমি ভালো জানো ডিফেন্সে যারা কাজ করে তাদের অবস্থা৷”
অমিতের হেয়ালি কথায় নিবেদিতা আবারও হাসে। হাসি থামিয়ে বলে,
“তুমি জানো তুমি অনেক ফানি। অল্পতে মানুষকে হাসাতে পারো৷ ”
নিবেদিতার কথায় অমিত ভাব নিয়ে একমত পোষণ করে বলে,
“লোকে বলে এটা আমার ওনার। ”
অমিতের কথায় নিবেদিতা আবারও হাসে৷ উল্লাস ভিতরে এসে নিবেদিতাকে একটা ছেলের সাথে বসে হাসতে দেখে উল্লাস দাঁড়িয়ে পরে৷ উল্লাস চিন্তা করছে,কে এই ছেলে? নিবেদিতার সাথে এই ছেলের সম্পর্ক কি? দুইজনকে দেখে মনে হচ্ছেনা তারা অপরিচিত! উল্লাস আরো বেশি অবাক হয় এই চিন্তা করে,গত পাঁচ ছয়মাসের মধ্যে নিবেদিতাকে কখনো এভাবে সে হাসতে দেখেনি প্রাণ খুলে৷ কাঠ, কাঠ গলায় দুই তিনটের বেশি কথা বলেনি নিবেদিতা তার সাথে। কিন্তু এখন কথার ফুলঝুরি নিয়ে বসেছে যেন। এই দৃশ্য দেখে উল্লাসের মাথার রক্ত গরম হয়ে যাচ্ছে৷একটা ছেলের সাথে নিবেদিতা’র,এতো হেসে হেসে কি কথা? উল্লাস আর এই দৃশ্য সইতে পারছেনা৷ আর কিছুক্ষণ যদি এমন দৃশ্য দেখে তবে সে নির্ঘাৎ পাগল হয়ে কিছু একটা করে বসবে। উল্লাস দ্রুত প্রস্থান করতে গিয়ে উশানের সাথে ধাক্কা খেয়ে ফেলে৷ উশান উল্লাসের রাগী মুখ দেখে চিন্তিত গলায় বলে,
“কিরে তুই এতো রেগে আছিস কেন?
উল্লাস একদফা নিবেদিতা’র দিকে চেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে জবাব দেয়,
” কিছুনা।
কথাটা বলে উল্লাস সেখান থেকে চলে যায়৷ উল্লাস যাওয়ার দিকে উশান হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে থেকে সামনে তাকায়। নিবেদিতা’কে একটা ছেলের সাথে দেখে উশান ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে বলে,
“ওহ!তাইলে এই ব্যাপার?
কথাটা বলে উশান নিবেদিতা’র কাছে যায়৷ অমিতের পাশে দাঁড়িয়ে বিনয়ী স্বরে বলে,
” তোমায় অনেক অনেক ধন্যবাদ আমার এনগেজমেন্টে আসার জন্য৷আমি তো ভাবলাম তুমি আসবেই না।
উশানের কথায় অমিত একগাল হেসে বলে,
“ভাইয়ের এনগেজমেন্টে ভাই থাকবোনা। সেটা তো ইম্পসিবল। ”
জবাবে উশান হাসে। হেসে অমিত আর নিবেদিতাকে লক্ষ্য করে বলে,
” বাই দ্যা ওয়ে,তোমরা একে অপর কে চিনো নাকি?
জবাবে অমিত বলে,
“ওল্ড ফ্রেন্ড৷
” ওহ আচ্ছা।
উশান আর কথা না বারিয়ে বলে,
“তোমরা কথা বল,আমি যায়।
উশান চলে গেলে নিবেদিতা আগ্রহ নিয়ে বলে,
” উশান তোমার ভাই?
অমিত হেসে বলে,
“কাজিন ব্রাদার৷
” ওহ আচ্ছা।
উল্লাস’কে খুঁজতে খুঁজতে একসময় উশান পেয়ে যায়৷ একটা টেবিলে আসন পেতে বসে ড্রিংকস করছে।উল্লাস নিবেদিতার থেকে খানিকটা দূরে বসেছে। নিবেদিতার আর অমিতের দিকে ক্রুদ্ধ চোখে তাকিয়ে থেকে উল্লাস ড্রিংকস করছে। উশান কাছে গিয়ে উল্লাসের পাশে বসে শান্ত গলায় বলে,
” তুই এতো হাইপার হয়ে আছিস কেন?
গ্লাসের সর্বোচ্চ ড্রিংকস এক নিঃশ্বাসে শেষ করে উল্লাস গম্ভীর গলায় বলে,
“আমি হাইপার তোকে কে বলছে?
“তাহলে কি জেলাস?
উল্লাস উশানের দিকে রাগী চোখে চেয়ে বলে,
“আমি জেলাস কিসের জন্য হব?
উশান স্মিথ হাসে উল্লাসের কথায়।আর উল্লাসের দৃষ্টি অনুসরণ করে নিবেদিতার দিকে তাকায়। হা করে নিঃশ্বাস ফেলে উশান বলে,
” চোর পুলিশ খেলা আমার সাথে খেলিস না। আমি তোর রন্ধ্রে রন্ধ্রের খবর জানি। নিবেদিতা’কে অন্য কারোর সাথে ফ্রি ভাবে কথা বলতে দেখে তোর এই হাল। তুই আসলে কি চাস বলতো? তুই নিবেদিতাকে তোর মনে খবরও জানতে দিচ্ছিস না আবার নিবেদিতা’কে অন্য কারোর সাথে সহ্য করতেও পারছিস না! তুই আসলে চাস কি আমায় একটু বল?
উশানের কথায় উল্লাস কয়েক সেকেন্ডের জন্য থমকে যায়৷ নিজেকে সামলে উল্লাস চুপ করে আবার ড্রিংকস নিতে থাকে। উশান হাতের ভর টেবিলের উপর রেগে ফুস করে নিঃশ্বাস ফেলে গম্ভীর গলায় বলে,
“শোন,মানুষ শূন্যস্থান নিয়ে থাকতে পছন্দ করেনা৷ কোন না কোন ভাবে শূন্যস্থান পূরণ করে ফেলে। তাই বলছি সুযোগ থাকতে তা কাজে লাগা। যাতে পরবর্তীতে তোর আফসোস না হস৷তুই সিদ্ধান্ত নে তুই আসলে কোন কূলটা চাস। যদি তুই সীদ্ধান্ত নিতে না পারিস তবে তুই মাঝ সমুদ্রে ডুবে মরবি। আর নিবেদিতাও বা কিসের তাগিদে তোর জন্য বসে থাকবে। তার অধিকার আছে ভালো থাকার। নতুন করে জীবন সাজানোর।
নিবেদিতা আর অমিত তাদের কাজ নিয়ে কথা বলছিলো৷ তখন নিবেদিতা’র পিছনে দাঁড়ানো একটা মেয়ের কথায় নিবেদিতা চুপ হয়ে যায়।মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনছিলো। কোন ছেলের ব্যাপারে কথা বলছে। মেয়েটার নির্দেশনা মত দেখিয়ে দেওয়া ছেলের দিকে নিবেদিতাও তাকালো। ছেলেটার দিকে তাকাতে নিবেদিতার চক্ষু চড়কগাছ। মেয়েটা উল্লাসের ব্যাপারে কথা বলছে।উল্লাস এদিকে তাকিয়ে আছে। তবে সে কার দিকে তাকিয়ে আছে তা বুঝা মুশকিল। নিবেদিতা জলদি উল্লাসের দিক থেকে নজর সরিয়ে মেয়েটার দিকে তাকায়। মেয়েটার হাবভাব দেখে নিবেদিতার মনে হচ্ছে একদম সুবিধার না৷ নিবেদিতা মেয়েটার দিক থেকে নজর সরিয়ে অমিতের সাথে কথা বলাতে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু মেয়েটার কথার জন্য তা সে কোন ভাবে পারছেনা।মেয়েটা তার বান্ধবীকে বলে,
“আমার মনে হচ্ছে সেও আমায় পছন্দ করে।আমার দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে তাকিয়ে আছে দেখ৷ ”
তখন অন্য আরেকটা মেয়ে বলে,
“ছেলেটা অনেক জোশ।
কথাটা বলে মেয়ে দুইটা হেসে উঠে শব্দ করে৷ আর এদিকে মেয়ে দুইটার কথা শুনে নিবেদিতার রাগে গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে৷ চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করে মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে মেয়ে দু’টোর দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে নম্রতা সুরে বলে,
“এক্সকিউজ মি মিস।
নিবেদিতার কথায় মেয়ে দুটো নিবেদিতার দিকে তাকায়৷নিবেদিতা আলতো হেসে বলে,
“যাকে নিয়ে এতো কথা বলছেন সে কিন্তু বিবাহিত৷ তার একটা বাচ্চাও আছে৷ ”
নিবেদিতার কথায় মেয়ে দুটো একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। এরপর একজন সন্দেহ নিয়ে বলে,
“আপনি কিভাবে জানেন?
নিবেদিতা তখন খুব শান্ত মিষ্টি স্বরে বলে,
” কারণ সে আমার কলিগ৷ পরের বরের উপর নজর দেওয়া ছেড়ে নিজের কাজে মন দিন।”
নিবেদিতার মুখে মিষ্টি কথা আর চোখে স্পষ্ট রাগ দেখে মেয়ে দুটো নিবেদিতার পাশ থেকে চলে যায়। তারা চলে যেতে নিবেদিতা ফুস করে নিঃশ্বাস ফেলে উল্লাসের দিকে তাকায়। উল্লাস আগের মতো অবস্থান করছে৷ সেদিক থেকে নজর সরিয়ে অমিতের দিকে তাকালে অমিত আগ্রহ নিয়ে নিবেদিতার দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছে নিবেদিতাকে। নিবেদিতা অমিতের চাহনি দেখে ভড়কে চায় কিছুটা৷ তারপর বলে,
“তুমি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
অমিত শব্দ করে নিঃশ্বাস ফেলে আঙুল দিয়ে উল্লাসকে দেখিয়ে বলে,
” আমার জানা মতে ওই ব্যক্তি এখনো সিঙ্গেল। আর তুমি বলছো সে বিবাহিত আর তার একটা বাচ্চাও আছে! ঘটনা কি বল তো!
নিবেদিতা ধরা পরে গিয়ে আমতা আমতা করে৷নিবেদিতা অবস্থা বুঝতে পেরে অমিত বলে,
“এটা কি সে? যার কথা বলে ছিলে!
নিবেদিতা অমিতের কথায় উল্লাসের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ধীর গলায় বলে,
” হুম।”
উশান কথা গুলো বলে চলে যায়। আর উল্লাস ঝিম মেরে বসে থাকে৷ কিছুটা সময় পাড় হয়ে যাওয়ার পর উল্লাস দুই হাত দিয়ে তার মাথা চেপে ধরে মনে মনে বলে,
” আহ্ নিবেদিতা, তুমি আমায় আস্ত রাখলেনা৷
ড্রিংকস করা বাদ দিয়ে উল্লাস উঠে দাঁড়ায়। এখানে আর একমুহূর্ত থাকার মুড নাই উল্লাসের৷ চন্দ্রা আর উশানকে বিদায় জানিয়ে উল্লাস হলরুম থেকে বের হয়ে আসে৷ পার্কিং এরিয়াতে এসে উল্লাস আবার দাঁড়িয়ে যায় নিবেদিতা আর অমিত’কে দেখে। উল্লাস তার ঘাড় ডানে বামে নেড়ে শব্দ করে গাল দিয়ে নিঃশ্বাস ফেলে৷ নিবেদিতা আর অমিতের দিকে তাকিয়ে থাকে। অমিত গাড়িতে উঠে গেলে নিবেদিতা হাত নেড়ে বিদায় জানিয়ে পিছনে ফিরতে নিবেদিতা হকচকিয়ে যায়৷ উল্লাস তার থেকে কয়েক কদম দূরে দাঁড়িয়ে আছে৷ উল্লাসের অদ্ভুত চাহনি দেখে নিবেদিতার অস্বস্তি অনুভব হচ্ছে। উল্লাস নিবেদিতার আরেকটু কাছে এসে স্পষ্ট কাঠ কাঠ গলায় বলে,
“পাঁচ বছর আগে তুমি আমাকে বলেছিলে, তুমি আমায় ভালোবাসো৷ আর আমি সেটাকে সত্য ভেবে পাঁচটা বছর নিজের মাঝে ধারণ করে রেখেছিলাম। পাঁচটা বছর আমি শুধু একটা প্রার্থনা করেছি আমি যেনো তোমার কাছে ফিরতে পারি৷ আমার মনে হচ্ছিলো তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করে আছো? তাই আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করে গিয়েছিলাম। এবং আমি সফল হয়ে ফিরেও এসেছি তোমার কাছে৷ তুমি জানো আমি একবুক আশা নিয়ে এখানে এসেছিলাম৷আমি কতশত জল্পনা কল্পনা করে এসেছিলাম৷ আমি ভেবেছিলাম তুমি আমায় দেখতে পেয়ে অনেক খুশি হবে আনন্দিত হবে। অথচ হয়েছে তার উল্টো।দেখো আমি তোমার গলার কাঁটা হয়ে গিয়েছি। আমি ভুলে গিয়েছিলাম সময়ের সাথে সাথে মানুষের পরিবর্তন হয়ে যায়৷ আমি আমার লাইফে প্রথম বার কোন বড় বোকামি করে ফেলেছি মনে হচ্ছে। আর তা করে আমার খুব আফসোস হচ্ছে৷ আমি যদি ফিরে না আসতাম তুমি এতো কনফিউজড হতে না৷ আমার জন্য প্রতিনিয়ত বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরতে হতোনা। এতে আমার নিজেকে অনেক অপরাধী মনে হয়। তোমার লাইফে দ্বিতীয় বার আসা আমার উচিত হয়নি৷ আমার ক্ষমা চাওয়ারও মুখ নেই৷ আসলে আমার মনে হয়েছিলো ওই সময় তুমি ভালো নেয়। আমি ভুলে গিয়েছিলাম সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষ ভালো থাকতে শিখে যায়৷ পথচলা শিখে যায়। আমি তোমার জীবনে এসে তোমাকে অনেক অনেক বিব্রত করেছি৷ তার জন্য ক্ষমা চাইছি৷ প্লিজ পারলে ক্ষমা করে দিও। ”
উল্লাসের প্রতিটা কথা নিবেদিতার বুকে বুলেটের মত লাগছে৷ নিবেদিতা হতবাক চাহনিতে উল্লাসের মুখের দিকে চেয়ে থাকে। নিবেদিতা’র মনে হচ্ছে সে তার বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে৷ ঢুক গিলতে কষ্ট হচ্ছে খুব৷ উল্লাস নিবেদিতা’র পাশ কেটে কিছুটা দূরে চলে গিয়েছে। নিবেদিতা নিজেকে ধাতস্থ করে উল্লাসের উদ্দেশ্যে খুব কষ্ট করে বলে,
“দাঁড়ান।
উল্লাস নিবেদিতার কথায় দাঁড়িয়ে যায়৷ নিবেদিতা উল্লাসের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কঠোর চোখে উল্লাসের মুখের দিকে তাকায়। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেখে নিবেদিতা ধরা গলায় বলে,
“আপনি আমায়,এখনো বুঝতে পারলেন না৷ পাঁচটা বছর আমি আমার জীবনে একটা মানুষের অপেক্ষায় কাটিয়েছি৷ আর সেটা আপনি৷ প্রতিটা দিন আপনার আসার দিন গুনেছি৷ পাঁচটা বছর আমি অনুশোচনায় কাটিয়েছিলাম৷নিজেকে অপরাধী মনে হত এই ভেবে আপনি হয়তো আমার কারণে এখান থেকে চলে গিয়েছেন৷বারবার আমার মনে হচ্ছিলো ওই রাতে আমি আপনার সাথে খুব খারাপ আচরণ করেছিলাম। আপনাকে হারিয়ে ফেলার অপরাধে আমি পাঁচটা বছর ঠিক ভাবে ঘুমাতে পারিনি। দুঃস্বপ্নে কেটেছিলো প্রতিটা রাত। আপনি বলুন যে মানুষটা আপনার জন্য পাঁঁচবছর ধরে অপেক্ষা করে ছিলো সে মানুষটা কিভাবে আপনাকে দেখে অখুশি হবে? হ্যাঁ আমি আপনার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলেছি। কারণ আমার ভয় হত আমি আবার একই ভুল দ্বিতীয়বার করে না বসি৷ আপনাকে হারানোর ভয় আমাকে প্রতিনিয়ত খুঁড়ে খুঁড়ে শেষ করে দিত৷ আমি আপনার থেকে নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছি বারংবার৷আপনার প্রতি আমার যে অনুভূতি শুধু তা লুকানোর জন্য৷
নিবেদিতা নিজের ইমোশন টা আর নিজের আয়ত্বে রাখতে পারলোনা। ঢুগরে কেঁদে উঠে৷কাঁন্নারত গলায় বলে,
“আপনি আমাকে কিভাবে দোষারোপ করতে পারেন? আপনি তো আগ বারিয়ে একবার আপনার মনের কথা বলতে পারেননা৷ আমি আশায় ছিলাম আপনি হয়তো বলবেন আপনার মনের কথা। কিন্তু আপনি তো আমাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছেন৷ আপনি পাষাণ একটা মানুষ৷নিজের ষোল আনা বুঝেন৷ আপনি জানতেন আমার মনের কথা। কিন্তু তারপরও আপনি সব এড়িয়ে চলেছেন। কিন্তু আমি…………!
নিবেদিতা’কে আর কিছু বলতে দিলোনা উল্লাস৷নিবেদিতাকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে ধরা গলায় বলে,
” আই লাভ ইউ৷ ”
উল্লাসের মুখে ভালোবাসার কথা শুনে নিবেদিতা স্তব্ধ হয়ে যায়৷ একদম শান্ত স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কোন ভাবান্তর হলোনা কিছুটা সময়ের জন্য৷ উল্লাস গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে রেখে আবেগময় গলায় বলে,
“আই লাভ ইউ সো মাচ।
নিবেদিতার এবার হুশ হয়৷ জোরে নিঃশ্বাস টানে৷ চোখের পাপড়ি আর ঠোঁট কাঁপছে নিবেদিতার। কাঁপা কাঁপা হাত উল্লাসের পিঠের উওর রেখে নিবেদিতা ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। উল্লাসের ব্লেজার দু’হাতে খামছে ধরে নিবেদিতা কাঁদতে থাকে৷বাতাসও বোধহয় এতক্ষণ গোমট বেঁধে রেখেছিলো দুজনের পরিনতি কি হয় তা দেখার জন্য।যখন দেখলো তারা এক হলো সেও যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।সুন্দর শীতল বাতাস এসে দুজনকে ছুঁয়ে চলে গেলো৷ তারাও যেন আজ খুশি উল্লাস-নিবেদিতাকে দেখে। আজ দুজনের মনে প্রশান্তি নিজেদের প্রকাশ করতে পেরে৷ ভালোবাসার এই মুহূর্তটা সুন্দর। যখন একে অপরকে নিজের করে পায়। সুন্দর মিষ্টি অনুভূতি। যা প্রকাশ করার সাধ্য হয়তো কারো নেই।”
(#চলবে____)