একটুখানি বিশ্বাস পর্ব ১৭+১৮

একটুখানি বিশ্বাস
পর্ব-১৭
রোকসানা আক্তার

চারদিকে বিয়ের একটা ধুম পড়ে যায়।নিমন্ত্রিত অতিথিরা ম্যারেজ সেন্টারে একে একে আসতে থাকে আর রুমকির দু’মামা সেই অতিথিদের সাদরে গ্রহণের উৎফুল্লতায় দাড়িয়ে।রুমকি বধূ সেঁজে ড্রেসিংটেবিলের সামনে মুখ পেতে বসে আছে।মিনিট ত্রিশেক আগে দুটো বিউটিশিয়ান মেয়ে জড়োয়া গহনা,লাল লেহেঙ্গা,কপালে লাল টিপ,চোখে ভরা কাজল,ঠোঁট গোলােপের পাপড়ির মতো সাজিয়ে দিয়েছে।ইমতিয়াজই বলল কষ্ট করে পার্লারে না গিয়ে বাসায়ই বিউটিশিয়ান এনে সাজালে ভালো হয়।এতে বাড়তি ঝামেলাটা মিটে।রুমকিও তাই মেনে নেয়। তবে মনটা তার একদম ভালো নেই।অশ্রু কালরাত গায়ে হলুদে একটুখানি থেকেই বাসায় চলে গিয়েছে।এখন বেলা গড়িয়ে যাচ্ছে আসার কোনো নামগন্ধ দেখা যাচ্ছে না।ফোন করা হয়েছে তাতেও নাম্বারটা বন্ধ বাতাচ্ছে।প্রবলেম কী এই মেয়েটার?কি প্রবলেম!বিয়ের আগেই বারণ করে দিল পারত যে রুমকি তোর বিয়েতে আমি আসতে পারবো না।এরকম কেলেংকারী আরশে কী জায়গা পায়!!রুমকি যত ভাবছে মনটা ততই খারাপ হচ্ছে। একটা মাত্র বেস্টু যাকে নিয়ে সমগ্র অকেশনের নাচ,গান,প্রণোচ্ছ্বল,উচ্চাকাঙ্খার আশা আর সে-ই আসলো না!বেস্ট বান্ধবীরা আসলেই কি স্বার্থপর?খুব কী বেশি?সত্যিইতো এই যেমন অশ্রু।আরেহ নাহ নাহ অশ্রু এরকমটা মোটেও নয়।নিশ্চয়ই ও কোনো প্রবলেমে আছে তাই আসতে দেরী হচ্ছে।ভাবতে ভাবতে রুমকি পাশে থাকা কাজিনদের দিকে তাকিয়ে গলার হাঁক ছাড়ে। পাশে তার কয়েকটা কাজিন বসে বসেই আড্ডা দিচ্ছিল।
“এই নূরী?”
নূরী সবার সাথে কথা বলার মাঝেই রুমকির শব্দে থেমে যায়।তাকিয়ে ছলাৎ মুখে বলে,
“হ্যাঁ আপু, বলো।”
“তোর ফোনটা আমায় একটু দে।তোর ফোন দিয়ে একবার ট্রাই করে দেখি।”
“অশ্রু আপুকে কল দিবা?
“হু।”
নূরী তড়িঘড়ি বিছানা থেকে রুমকিকে মোবাইলটা দিয়ে আসে।পুনশ্চ ফিরে সবার সাথে আবার মাতানো আড্ডায় জমে যায়।।।
রুমকি বারংবার এই নাম্বার থেকে কল পরার পরও অফ পাচ্ছে।কিছুক্ষণ অব্দি মোবাইলটাকে নিয়ে গুতাগুতি করার পর বিরক্তি হয়ে মোবাইলটা সামনে ছুঁড়ে ফেলে।এত সোরগোলের মাঝে রুমকির খৈ খৈ কানে এসে বাজে বরপক্ষরা আসছে।তারমানে ইমতিয়াজ চলে এসছে।ইমতিয়াজ শব্দটি মনের মাঝে আনতেই রুমকির পুরো মুখ রক্তিমায় ভেসে যায়।নিজের ব্যাকুলতা মনটাকে খুব সযত্নে চেপে রাখার চেষ্টা করে রুমকি।

অরুন এবং অরুনের বন্ধুরা সহ ইমতিয়াজকে স্টেজ চেয়ারে বসায়।উপস্থিত অতিথিরা প্রাণোচ্ছল মুখে ইমতিয়াজকে দেখামাত্রই চোখ-নাক কুঁচকাতে থাকে ।অনেকে কপালের ভ্রু দু’টোয় অবাক ইঙ্গিত এঁটে খ্যাঁক খ্যাঁক গলায় উপহাস ভাষা ভাসিয়ে দিচ্ছে— পোদ্দার হইছে জন্মেরর গাধা নাহলে এরকম নর্মাল ফ্যামিলির মেয়ে কেউ বিয়ে করায়?
আরেকজন আবার পাশ থেকে বলে উঠে,
আহ্ ভাই,এধরনের ধনী ছেলেদের বিয়ে হলো লুতুপুতু।খাওন শেষ,পথে ছুঁড়ে ফেলতে বেশ বেশ।
লোকটির কথায় পাশে অন্য লোকগুলো খিলখিল হাসিতে ফেটে পড়ে যেন এখনই বোমা ফেটে ব্লাস হবে!
অরুন একসাইডে দাঁড়িয়ে তার বন্ধুদের সাথে কথা বলছে।আজ অরুন ব্রান্ড কটনের একটা লাল কালার একটা পান্জাবী এবং ব্লাক জিন্স পড়ে আসে।দূর থেকে দৃষ্টিপাত করলে তাকে অনেকটা ভদ্র ভদ্র দেখায়।রুমকির মামারা অরুনকে দেখামাএই কাছে এসে কুশল বিনিময় করে।তারপর কিছুক্ষণ যাবৎ কথাবার্তা বলে আবার অন্য মন্ডুপে যায়।বিয়ের সময় গার্ডিয়ানরা সম্মান রক্ষার্থে সবাইকে সময় দেওয়ার যথেষ্ট মরিয়া হয়ে উঠে।অতিথি মানুষ। সবসময়তো আর আসে না।তাই তাদের সাথে কথা বললে,কিছুটা সময় দিলে সবার হালকা বোধ হয়।পরে ব্যবহারে সংকোচ বোধে বিয়ের মন্ডুপ থেকে বেরিয়েই ঢোল পিটিয়ে বলবে”কি এক্কান বিয়েতে গেলাম!না পেলাম খাবারে যথেষ্ট মশলা আর না তাদের ব্যবহার।”তাই এসব দুর্ঘটনা থেকে এড়াতেই কণেপক্ষরা দাওয়াতী মেহমানদের সাদরবসান দেন।
ঘড়ির টিকটিক শব্দ আসছে।রুমকি সেদিকে একনামগ্নে দৃষ্টি এঁটে রাখছে।আর কিছুক্ষণ পরই হয়তো কাজী সাহেব বিয়ে পড়াতে আসবে।রুমকির বুকের হৃদগতি দ্রুত উঠানামা আরম্ভ হয়।আর কিছুক্ষণ পর গলা ছেড়ে কাজিনদের ডেকে তুলে জিজ্ঞেস করে অশ্রু কী আসছে।উওর যদি না-বোধক আসে মুখটা আবার বিমূঢ়ে রূপ নেয়।এরকম অনেকবার জিজ্ঞেস করায় কাজিনরাও বিরক্তির পর্যায়ে।কি আর করবে বেচারা! রুমকি ছোট বাচ্চাদের মতো অশ্রু বলে যেভাবে শোরগোল তুলছে আল্লাহ মালুম অল্পের জন্যেই হয়তো ফোঁপাতে পারেনি নাহলে কেদে বুক ভাসাতো।তাই বাধ্য হয়েই রুমকির কথা রাখে।
হুট করে নূরী উল্লাসিত কন্ঠে বলে উঠে,
“আপু,অশ্রু আপু আসছে!!!”
“কী!”
বলেই রুমকি তড়িঘড়ি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ায়।দরজার সামনে এগিয়ে মাথাটা হালকা উঁচিয়ে নিচে তাকায়।মুহূর্তে চোখেমুখে রুমকির হাসি ফুঁটে উঠে।
অশ্রু হ্যাঁপাতে হাঁপাতে ভীড়ের মাঝে রুমকির মাকে জোরে আঁকড়ে ধরে।আকুতি গলায় জোরে বলে উঠে,
“আন্টি,আই’ম স্যরি।আসলে আমার মামীর আজ অপারেশন ছিলতো সেই কারণে আসতে আমার দেরী হয়ে গেছে।”
অশ্রুর বলা কথাগুলো খুবই জোর এবং স্ট্রং ছিল।তাই সহজেই উপস্থিত অতিথিদের দৃষ্টি কাড়ে।
সবাই চমকে অশ্রুর দিকে তাকায় আর অশ্রুর হ্যাঁপানো এই গৎবাধা বুলিগুলো অরুনেরও কানে যে বিঁধে নি তা নয়।খুব খুব ক্ষীণ স্বরে শুনতে পায় সে “আন্টি, আই’ম স্যরি।”
অরুন আওয়াজস্ত এই ধবনিটাকে অনুসরণ করে পেছনে লুক দেয়।খুব স্মার্ট বেশে ব্লু কালারের লেহেঙ্গা পরিহিত একটি মেয়ে।লেহেঙ্গার ওড়নাটি গাগরি এঙ্গেল।কালো কেশগুলো কোমর অব্দি আর মুখের সাজ সিম্প্লি।তবে এতটা সিম্প্লিতেও রূপসী।
অরুন সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে তাচ্ছিল্যে ঘাড় ঝাঁকায়।পাশ থেকে অরুনের বন্ধুরা বলে উঠে,
“দেখছিস দোস,কি জোশ একটি মেয়ে।বেশ মনে ধরেছে।লাইন মারতে ইচ্ছে হয়।”
আরেকজন বলে উঠে,
“অরুন একটু খবর নিয়ে দেখ এই মেয়েটা তোর ভাবীর কি হতে পারে।যদি বেয়াইন হয়ে যায় তাহলেতো আমার রাস্তা ক্লিয়ার। প্রেম করা একদম ইজি।
সবাই আওয়াজ করে হাসে শুধু অরুন ছাড়া।অরুন গাল বেঁকে বলে উঠে,
“এরকম রাস্তাপাস্তার মেয়েরা হাজারো পড়ে আছে।মাছি ভনভনায় তবে মিষ্টি পায়না।”
“আহা, দোস্ত মেয়েটিকে মোটেও সেরকম লাগছে না।সিম্প্লির উপর কেমন জানি গরজিয়াছ একটা ভাব আছে।”
“রাখ তো তোদের বকবকানি।”
বলেই অরুন ওদের পাশ কেটে অন্যদিক চলে যায়।

উপর থেকে নূরী তূরী বাজিয়ে জোরে ডেকে উঠে।
“এই অশ্রু আপু,রুমকি আপু তোমায় ডাকছে। উপরে আসো তাড়াতাড়ি।”
অশ্রু সম্মতি দিয়ে তড়িঘড়ি সিড়ি বেয়ে উপরে আসে।দরজার কার্নিশে পা ঘেঁষতেই রুমকি মুখটা অন্যদিক করে ফেলে।অশ্রু বুঝতে পারে রুমকি যে অভিমান করে আছে।তাই অভিমান ভাঙ্গাতে টিপে টিপে পা ফেলে রুমকিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“আই’ম স্যরি জানু।আসলে প্রবলেম……”
থামিয়ে রুমকি বলে দেয়,
“থাক লাগবে না তোর প্রবলেম বলা।এরকম হাতুড়ি ভাঙ্গা প্রবলেম বহু দেখিয়েছিস।
বলেই পেছন ঘুরে।ছলছল চোখ করে বলে,
“জানিস কতটা কষ্ট পেয়েছি?তোর আসার অপেক্ষায় বিষণ্ন বুকটা ঝাঁজরা হয়ে গেছে।”
অশ্রু কিছুটি না বলে টুপ করে তার মাথাটা রুমকির একদম মুখ বরাবর এনে দাঁতছড়িয়ে হাসির ঘের টানে।রুমকি সেদিকে ধনুক দৃষ্টি দিয়ে ভ্রু কুঁচকে আরেকটা অভিমানের বাক্য ছুঁড়ে দেয়।
“লাগবে না আমার অভিমান ভাঙ্গা।”
“য়ু-হু,বেবী এরকম করে না।লোক পঁচা বলবে।আজ-না তোমার বিয়ে?এরকম করলে কেউ বিয়ে করবে?”
এবার রুমকি না হেসে আর থাকতে পারে নি।কুটি হেসেই অশ্রু নাকের ঢগার সাথে তার নাকের ঢগা ঢলে নেয়।।
একটুখানি বিশ্বাস
পর্ব-১৮
রোকসানা আক্তার

দরজা বন্ধ করে বসে আছে অশ্রু।বাইর থেকে বাচ্চাকাচ্চাদের ক্যাচরম্যাচর ভেসে আসছে,সাথে মহিলাদের হৈ-হুল্লোড় আওয়াজও।এই মুহূর্তে তার বাইরে মুখ দিতে একদমই ইচ্ছে হচ্ছে না।এখানেও যেমন দম-মুখ খিঁচে আসছে তেমনি বাইরেও।শান্তির জায়গার দেখাই মিলছে না !এই পুরো বাড়িটাই যেন একটা জাহান্নাম খানা।
প্রায় ত্রিশেক মিনিট হলো অশ্রু রুমকির সাথে তার শ্বশুর বাড়ি এসছে।এ বাড়িতে আসার পর থেকেই তার সংকোচ বোধ হচ্ছে।সবার সাথে সখ্য করতে গেলেই অরুনের বন্ধু মহলের কবলে শিকার হতে হয়।খানিক টুকু দেখার সঙ্গে সঙ্গেই একযোগে সবগুলা বেয়াইন বেয়াইন বলে শব্দ তুলে।তাদের উচ্চত্বরিত আওয়াজে পুরো বাড়িটাই তুলা অবস্থা।আর ওই অরুন সে’তো আরো বেশি।নিজে সামনাসামনি কিছু না বললেও অন্তঃ গোপনে বন্ধুদের উস্কে দেয়।

ভেবেই অশ্রু দাঁতগুলো কটমটিয়ে বিছানার উপর ধপসে বসে।ওড়নার কোণা ধরে গোল গোল বানিয়ে
মনের যত আচ্ছামতন গালি আছে সবগুলো দিয়ে বেচারাদের ধুয়েমুছে উৎসারক করছে।
মনটাকে কিছুতেই মানাতে পারছে না সে।এই রুমকিটার প্রতিও তার ভীষণ রাগ হচ্ছে।কারণ,রুমকির মলীন মুখের দিকে তাকিয়ে নাঁখোশ করার সাহস মেলে নি।বেস্ট বান্ধবী।এখন না বলুক পরেতো একবার খোঁটা দিয়ে বসবে তোর সব প্রয়োজনে আমিই সবসময় পাশে ছিলাম অথচ তোকে আমার প্রয়োজনে পাইনা।একে তো তোর কারণে অরুনের কাছে ফেঁসে গিয়েছি,তার উপর সে বাড়ির আমি বউ। বিপদে নিজে পড়ে আমায়ও বিপদে ফেললি।
।পরমুহূর্তে দরজায় করাঘাতের শব্দে অশ্রুর ভাবনার গোচর কাটে। অশ্রু সেদিকে ভ্রুকুটি না করে উদাস মন নিয়ে অন্যদিক মাথা মুভ করে নেয়। দরজা সে কিছুতেই খুলবে না,কিছুতেই না!খুললেই ওই বদ এবং বদের বন্ধু গুলোর চোখের সামনে প্রতুত্ততকর।
এপাশের মানুষটির কোনোরকম ভ্রুক্ষেপ না পেয়ে ওপাশের মানুষটি আওয়াজ তুলে।।
“আরেহ,ভেতরে কে আছো দরজা তো খুলবে!”
অশ্রু কন্ঠটি শুনেই তড়বড়িয়ে উঠে।ভয়েসটি নরম ।কোনো বয়স্ক মহিলা হবে বৈ-কি।অশ্রু ভেবে পাচ্ছে না দরজা কি আসলেই খুলে দেওয়া উচিত?আর না খুললে তো অভদ্র,একগুঁয়ে নানান কথার শবক শুনতে হবে।নতুন অতিথি হয়ে এসব কথার ধারেকাছে সামিল হওয়ার মোটেও প্রস্তুত নয়।অপরিচিত বাড়ি বদনাম রটানো মানেই বদহজম!
তারপর অশ্রু ধীরপায়ে এগিয়ে দরজাটা খুলে দেয়।দরজার সামনে একজন প্রৌঢ়া দাড়িয়ে।প্রৌঢ়ার চুলগুলো আঁধাপাক ধরেছে সবে।বয়স পঞ্চাশের এপাড়ে-ওপাড়ে।অশ্রু মাথাটা নুইয়ে এনে অপরাধ ভঙ্গিতে বলে,
“আ-সলে আমি ওয়াশরুমে ছিলাম।এজন্যে বুঝতে পারি নি।”
প্রৌঢ়া মিটি হেসে কাঁধ চেপে বলে,
“সমস্যা না মা।আমি বুঝতে পেরেছি।”
বলেই প্রৌঢ়া ভেতরে ঢুকে।প্রৌঢ়া চলে যাওয়ার পর অশ্রু বাম দিকে হালকা ঘুরে চোখের কোণা ফাঁক করে।পিটপিট চোখে তাকায়। বাসায় লোক ভর্তি মানুষের আনাগোনা এখনো কমেনি। বউকে দেখতে আসেনি যেন প্রতিযোগিতা নেমেছে এরা।কালকে মেলা দিন সময় থাকা সত্ত্বেও রাতেই এরা গোচ বেঁধে নেমে গেছে বউ দেখার।আজব পাবলিক!.
সেদিকে তাকিয়ে নিজমনে বিড়বিড় করে পা ফেলতেই সামনের কোনো বস্তুর সাথে হোটচ খায় অশ্রু।সামনে তাকিয়ে একটি দেয়াল।দেয়ালটির সাথে খুব জোরে না ঠেকলেও পায়ের জুতা ঘেঁষা পড়েছে।জুতার ফিতা ছুঁড়ে যায়।অশ্রু তড়িঘড়ি নুইয়ে জুতার ফিতা ঠিক করতে যায়।আর তক্ষুনি অরুনের এক বন্ধু অশ্রুকে এমতাবস্থায় দেখতে পায়।সার্বিকভাবে অশ্রুকে দেখলে বললে ভুল হবে।অশ্রু নুইয়ে যাওয়ার কারণে লেহেঙ্গার ব্লাউজ উপরে উঠে আসে। তাতেই তার কোমরের খানিক টুকু অংশ উন্মুক্ত হয়।সেদিকে অরুনের এক বন্ধুর দৃষ্টি এঁটে।সে উচ্ছাসিত গলায় পাশে থাকা অন্যদেরও অংশটুকুর দিকে ইঙ্গিত করে।সবাই ইঙ্গিত অনুসরণ করে ফ্যালফ্যালা চোখে তাকায়।তা দেখে তাদের সবার চোখে-মুখে লোলুপতার ভাব আসে জিহ্বায় পানি টলমল খায় যেন এক্ষুনি অশ্রুকে ছিঁড়েখুঁড়ে খেয়ে ফেলবে।
একটা বন্ধুতো একেবারে মুখে শিষ টানে।অরুন তখন পাশের সাইডে বয়স্কাদের সাথে কি একটা বিষয় নিয়ে কথা বলছিল।দূরত্ব বেশি না তার বন্ধুদের থেকে ৬ ফুট দূরে।শিষের ধ্বনি অরুনের পাথেয় মগজে ঢোকে।পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে তারা অশ্রুর দিকে কু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

অশ্রু বারংবার ফিতাটা ঠিক করতে যায়,ততবারই ছুঁড়ে আসে।অশ্রু বিরক্ত প্রায়ই।অশ্রুর পেছনে কেউ এসে হুট করে বলে উঠে,
“লেহেঙ্গার ব্লাউজটা ঠিক করলে ভালো হবে বোধহয়।”
শোনামাত্রই অশ্রু কোমরের দিকে খেয়াল করে।সত্যিইতো ব্লাউজটা খানিক টুকু উপরে চলে আসছে।আর উন্মুক্ত সেই অংশ টুকু বদ ছেলেগুলো লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।অশ্রু অসংযত বোধে দাড়িয়ে পড়ে।এলার্ট করা ব্যক্তিকে দেখতে পেছনে ঘাড় ঘুরায়।পেছনে কাউকেই দেখতে পায়নি।তাহলে কে হতে পারে?ভাবতে ভাবতে ইমতিয়াজের ডাক পড়ে।
“এ অশ্রু?ওখানে দাড়িয়ে কি করছো?এখানে আসো।”
অশ্রু খুঁড়ে পায়ে আস্তে আস্তে হেটে রুমকির কাছে যায়।রুমকি চোখ দিয়ে ইশারা করে তার পাশে বসার জন্যে।অশ্রু বসে।কায়মনোবাক্যে বলে,
“দেয়ালের সাথে ঠেকে জুতার ফিতাটাই টসকে গেল!কি পায়ে হাঁটবো বুঝতে পারছি না।”
তা শুনে রুমকি কিছু বলতে যাবে এর আগেই একদল মহিলা রুমকিকে উঠিয়ে উপরে নিয়ে চলে।ইমতিয়াজেরও অন্যদিকে ডাক পড়ে।ইমতিয়াজ তড়িৎ বেগে সেদিকে ছুটে যায়।নিঃস্ব অশ্রু এখন আবার একা হয়ে গেল।অরুনের বন্ধুরা অশ্রুকে একা পেয়ে বলে,
“বেয়াইন আসুন আড্ডা দিই।”অশ্রু সেদিকে ভ্রুকুটি করেনা নিজমগ্নতার খেয়ালে।সামনে থাকা অন্যান্য লোকজন অশ্রুকে নিয়ে কানাকুশো করে।তার একে-অপরকে জিজ্ঞাসূচকে বলে এ মেয়েটি বউয়ের কি হয় ইত্যাদি ইত্যাদি।
তা অশ্রুর স্নায়ুতে একটু হলেও টান লাগে।অশ্রু চেষ্টা করে এখান থেকে উঠার জন্য তবে পারছে না।জিম্মি জুতোটা আটপৌরের মতো বিহেভ করছে।মান-সম্মানে তালা লাগিয়ে এখন মানুষের গ্যাঁজর শুনাচ্ছে।ছোট একটি মেয়ে অশ্ররু কাছে দৌড়ে আসে,
“তুমি আমার সাথে আসো।”
বলেই অশ্রুর হাত ধরে।অশ্রু সংকুলান বিপদকে এড়াতে মেয়েটিকে সম্মতি দেয়।জুতোর প্রবলেমের জন্যে এতগুলা মানুষের সামনে নিজেকে লজ্জায় ফেলার মানে হয়না।এখান থেকে ছেলে গেলে যা ইচ্ছে বলুক।তা শুনার জন্যে সে আর এখানে বসে থাকবে না।
অশ্রু মেয়েটির হাতের জয়েন্ট চেপে উঠে দাড়ায়।খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আবার হাঁটা ধরে।হাঁটার মাঝেই খিলখিল হাসির আওয়াজ কানে বাঁজে।পেছন থেকে অরুনের বন্ধু জোরে বলে উঠে,
“আহ,বেয়াইনের জুতো ছিঁড়ে গেছে!এখানে কোনো মুচি-পুচি আছে বেয়াইনের জুতোটা সেলাই করতে?হা হ হা হ হা।”
অশ্রুর ভীষণ রাগ হয়।মন চায় পিছনে বেঁকে এক্ষুনি একগাল লাল করে দিতে।বিবেকের তাড়নায় ব্যর্থ হয়ে চলে যায়।।
মেয়েটি অশ্রুকে একটি রুমে নিয়ে আসে।আর মিষ্টি গলায় বলে,
“তুমি এখানে বসো।আমি আসছি।”
বলেই চলে যায়।অশ্রু সেদিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে মেয়েটি এ বাড়ির কি হয় বা ইমতিয়াজেরও কি হতে পারে?কি মিষ্টি একটি মেয়ে।আদর করতে ইচ্ছে হয়।
পরমুহূর্তে মেয়েটি আবারো এসে হাজির।অশ্রু মিটি হেঁসে দেয়। মেয়েটি একজোড়া জুতো এগিয়ে বলে,
“এই জুতোটা পড়।”
অশ্রু ভ্রু বেঁকে জুতোর দিকে তাকায়।অশ্রু কিছু বলার আগেই মেয়েটি বলে উঠে,
“তোমার জুতো ত ছিঁড়ে গেছে সেজন্যে আরকি।”
এবার অশ্রু মুখ খুলে,
“কে দিয়েছে জুতোটা?”
মেয়েটি কিছুক্ষণ চুপ থেকে টানা চোখে বলে,
“য়ু-ম আ-আমার মা!”
“আচ্ছা তুমি ইমতিয়াজ ভাইয়ার কি হও?”
“ইমতিয়াজ ভাইয়া এবং অরুন ভাইয়া আমার ভাইয়া।দু’ভাইয়া আমার মাকে ফুঁপি ডাকে।”
অশ্রু এবার বুঝতে পারে এ মেয়েটি অরুনের ফুঁপাতো বোন।
“তোমার নাম কি?”
“রিংকু।”
“কিসে পড় তুমি?”
“ক্লাস ফোরে।”
“গুড।রোল?”
“টু।”
“ওয়াও।দ্যাটস ভেরী নাইস।”
অশ্রু রিংকুর মিষ্টি কথাগুলো শোনে গালে একটা পাপ্পা লাগায়।

“রিংকু,রিংকু?বাইরে আয় একটু”দরজার ওপাশ থেকে অরুন রিংকুকে ডেকে উঠে।
” আপু,অরুন ভাইয়া ডাকছে পরে আবার আসবো।আর এইযে জুতো রেখে গেলাম।”
বলেই রিংকু এক দৌড়ে দরজা খুলে চলে যায়।

চলবে….
চলবে।।।
(আই’ম স্যরি কালকের পর্ব দিতে পারিনি।চেষ্টা করবো বোনাস পর্ব দিতে। ১ টার দিকে পেয়ে যেতে পারেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here