#চুক্তিহীন_বাঁধনে_আবদ্ধ ০২+০৩
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কার্টিসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)
০২
কাউসার শুকনো ঠোঁট জিভ দিয়ে ভিজিয়ে বলল, শিমু ভোরে নামায পড়তে উঠেছিল?
রেশমা নত দৃষ্টিতে বলল,
–” আমি আজকে ভোর বেলায় উঠি নাই বলে দেখতে পায়নি।
রেশমার জবাবে কাউসারের মেজাজ আরো চড়া হলো। ভ্রুকুটিকুটিল। আর অপেক্ষা না করে দরজা ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত নেয়। যা শুনে নাহার বেগম আর্তনাদ করে বলে, এই মেয়ে যবে থেকে আমার সংসারে এসেছে তবে থেকে আমার সংসারের অশান্তি শুরু হইছে। এহন আবার ঘর দুয়ার ভাঙ্গা লাগতাছে!
কাউসার এসবে কান না দিয়ে দরজা ভেঙ্গে ফেলল! টিনের ঘর হওয়াতে সহজেই ভাঙ্গা গেল। ভেতরে ঢুকে দেখা গেল শিমু জ্ঞান হারিয়ে জায়নামাজে পড়ে আছে। শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। কাউসার শিমুকে তাড়াতাড়ি বিছানার শুয়ে দিতে রেশমা তারা দিয়ে বলল,
–” দ্রত গিয়ে বালতি ভরে পানি নিয়ে আসেন। এক্ষুনি মাথায় পানি দিতে হবে।
কাউসার দৌড়ে গেল পানি আনতে। রেশমা শিমুর পাশে বসে ভেজা চোখে বলল,
–” আপা তোমার শরীর খারাপ একটাবার বললে না কেন? আপা চোখ খুলে তাকাও না গো?
কাউসার বালতি দিয়ে পানি নিয়ে আসলে রেশমা মাথায় পানি দিতে শুরু করে। প্রায় আধা ঘন্টা পরেও যখন জ্ঞান ফিরে আসে না তখন কাউসার ডাক্তার আনতে বাজারে যায়।
ডাক্তার শিমুকে চেকআব করে বললেন, রোগীর অবস্থা ভালো নয়। জ্বর অনেক বেশি। বেশি বেশি মাথায় পানি দিতে হবে। এই অল্প পানিতে হবে না। তারপর একটা ইনজেকশন দিয়ে কিছু ঔষধ পত্র লিখে দিলেন। বললেন, জ্ঞান ফিরে আসলে ঔষধ গুলো যেন খাওয়ানো শুরু করা হয়।
_______
শিমুর যখন জ্ঞান ফিরে তখন অস্ফুট গলায় বলে, রেশম তুই কি করে পারলি বোন? বোন হয়ে বোনের এতো বড় সর্বনাশ করতে তোর বিবেকে বাধে নাই বোন? তুই তো এমন ছিলি না। আমার অন্তরটা ছিঁড়ে যাচ্ছেরে! খুব কষ্ট হচ্ছে। সইতে পারতেছি না রে।
শিমুর কষ্ট দেখে মুখে ওরনা চেপে কেঁদে ওঠে রেশমা। তারও যে বুক ফেটে যাচ্ছে! কাকে বুঝাবে এ কথা? সে তো মুখ ফুটে বলতে পারে না কাউকে। এ বোনটাই যে তার একমাত্র কাছের মানুষ ছিল। আজকে কর্ম দোষে তাকেও হারালো, সারা জীবনের জন্য হারালো।
ডাক্তারের কথা মতো কাউসার পাশের গ্রাম খুঁজে বেরিয়ে একটা মাটির কলসি জোগাড় করে নিয়ে এলো। গ্রামে কারো গুরুতর জ্বর আসলে মাটির কলসিতে পানি ভরে মাথার উপরে ঝুলিয়ে রাখা হয়। তারপর কলসির নিচে যেই ফুটো করা থাকে সেই ফুটো দিয়ে ঝির ঝির করে মাথায় পানি পড়ে। এতে করে হাত দিয়ে পানি দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। পানি নিজ থেকেই পড়তে থাকে দিনভর। শুধু কলসির পানি শেষ হলে আবার দিয়ে দিলেই হয়।
খালের পাড়ে সবুজ ঘাসের উপর বসে আছে কাউসার। এই নিরিবিলি জায়গা টা শিমুর ভীষণ প্রিয়। অবসর সময়ে প্রায়ই কাউসার শিমুকে নিয়ে এখানে এসে একাকী সময় অতিবাহিত করতো। আজ পাশে শিমু নেই বলে ভিতরটা পুড়াচ্ছে। কেমন শূন্য শূন্য লাগছে চারিদিক। আজকাল মাথাটা কেমন যেন লাগে কাউসারের। সব কথা ও যেন মনে থাকে না তার! কি যে হয়েছে আজকাল বুঝতে পারছে না সে।
রেশমা শিমুর পাশে থেকে সেবা, যত্ন করে চলেছে। মেয়েটার জ্বরটা কেমন ছেড়ে ছেড়ে আসে। মুখে কিচ্ছুটি তুলছে না।
রুমি রান্না করতে গিয়ে কিছু পেল না। নিজে নিজে বলতে লাগলো, আমার হয়েছে যত জ্বালা। আমি কেন হাত পুড়িয়ে রান্না করতাম? দু দুইটা বউ থাকতে। দুইটাই অকর্মা হইছে। আম্মারে কতবার কইরা কইলাম আমার ননদ টারে বউ কইরা আনো! শুনলোই না আমার কতা। আমিও যামুগা ওবাড়ি তহন দেখমু আম্মা কেমনে রান্না বান্না সামলায়!
বলতে বলতে কাউসারের কাছে এসে বলল,
–” ভাই শিগগির বাজারে যা বাজারে গিয়া বাজার সাদাই কইরা লইয়ায়। ঘরে কিচ্ছু নাই আমি রানদুম কি?
বোনের কথায় কাউসার শার্টের পকেটে হাত রাখল, পকেট থেকে টাকা বের করে গুনে দেখলো মাত্র আশি টাকা আছে। এই টাকায় কি আর বাজার সদাই করবে দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় সে। আজকে কিছুদিন যাবত কাজে না যাওয়ার ফলে এই দুরবস্থা তার। মনে মনে ভাবলো না আর বসে থাকা যাবে না এবার কাজে যেতে হবে। কিন্তু আজকের দিনটা তো ম্যানেজ করতে হবে তাই বাজারে গিয়ে নগদে আর কিছু বাকিতে শাকসবজি কিনে বাড়িতে এলো। রুমি বাজার দেখে নাক সিটকে বলল,
–” তুই জানস না আম্মা মুলা খায় না! তাও তুই মূলা আনলি? সাথে কি আনলি পটল ? পটল আমি খাই জীবনে দেখছস?
কাউসার মাথা নত করে বললো এগুলা একটু কমে পাইছে আপা আজকে এগুলা দিয়ে চালিয়ে নে।
_________
শিমু যখন ধীরে ধীরে কিছুটা সুস্থ হয় তখন রেশমাকে একদম সহ্য করতে পারে না। নিজের ঘর থেকে বের করে দেয়, কড়া ভাবে বলে দেয় তার ঘরে যেন আর কখনো পা না রাখে রেশমা। তাহলে সেই পা ভেঙে দিবে শিমু। রেশমা ভ’য়ে কাছে যায় না যদি শিমু রে’গে আবার কোন কিছু করে বসে তাই দূরে দূরেই থাকে রেশমা।
শিমুর সাথে কাউসারের বিয়ের কথা হলে প্রথম দেখাতেই পছন্দ করে কাউসার। তারপর দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে হয়। এর বছর খানেক পর শিমুর খালু ইন্তেকাল করেন। পরিবারটা পুরো অনাহারে ম’রার অবস্থা হয়। শিমুর খালা অন্যের বাড়ি কাজ করেও সংসার সংসার চালাতে হিমশিম খান। বড় মেয়ে রেশমা সবে কলেজের গণ্ডিতে পা রেখেছিল। মাঝপথে ই তার সকল স্বপ্ন, আশা-আকাঙ্ক্ষা ধূলিসাৎ হয়ে গেল। ছোট ছোট ভাই বোনদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য কাজ খুঁজে বেড়াচ্ছিল। তখন শিমুল তার স্বামীকে বলে একটা কিন্ডার গার্টেন স্কুলে চাকরির বন্দোবস্ত করে দেয়। স্কুলে চাকরি নেওয়ার সুবাদে অনেক ছেলে-মেয়ের গার্ডেন রেশমাকে টিউশনি করানোর জন্য অনুরোধ করে। স্কুলের বেতন ছিল দেড় হাজার সাথে যোগ হলো টিউশনের দেড় হাজার। এই তিন হাজার টাকা প্রত্যেক মাসে নিজের বাড়ি পাঠায় রেশমা। শিমুর ওসিলায় একটা পরিবারের রিজিকের ব্যবস্থা করে দেন মহান আল্লাহ তাআলা।
উটকো একজন মানুষকে বাড়িতে এনে রাখার জন্য শিমুকে, নাহার বেগম আড়ালে আবডালে কত শত কথা শুনিয়েছেন তার কোন ইয়ত্তা নেই। শুধু কাউসার শিমুর পাশে ঢাল হয়ে থেকেছে বলে উচ্চ স্বরে কিছু বলার সাহস পাননি নাহার বেগম।
আজকে উপকার করে এই তার প্রতিদান পেল শিমু। হয়তো এই জন্যই আল্লাহ তা’আলা দুলাভাই এর সাথে শ্যালিকাদের পর্দা ফরজ করেছেন।
আমাদের সমাজে একটা প্রচলিত প্রবাদ আছেঃ “ভাবী হলো মায়ের মতো”। ভাবী তাই দেবরের সামনে পর্দার কোনো প্রয়জনীয়তাই মনে করে না! দেশে বহুল প্রচলিত আরেকটি প্রবাদ হলোঃ “স্বামী আমার যেমন-তেমন/ দেবর আমার মনের মতন” (আস্তাগফিরুল্লাহ)। এসব আশ্লীল ও নোংরা কথা আমরা প্রায়ই শুনতে পাই।
দেবর-ভাবীর মতো আরেকটি খোলামেলা সম্পর্ক হলো দুলাভাই আর শালী (শ্যালিকা)। দেখা যায়, যত ইচ্ছা খুনসুটি আর শয়তানি চলতে থাকে দুলাভাই আর শালীর মধ্যে। সেইসাথে শালীর বড় বড় আবদার পূরণ করতে হয় দুলাভাইকে। শপিং-মলে শপিং থেকে শুরু করে প্রতি মাসে অন্তত একবার করে রেস্টুরেন্টে খাওয়ানোর দায়িত্ব দুলাভাইয়ের। অন্যদিকে বউয়ের অবর্তমানে ঘরের কাজগুলো করে দেওয়ার দায়িত্ব শালীর। এগুলো দেখে এমন প্রতীয়মান হয় যে, শালী যেনো দুলাভাইয়ের কাছে নিজের বউয়ের মতোই! আস্তাগফিরুল্লাহ!
.
অথচ দেবর এবং ভাবী, কিংবা দুলাভাই এবং শ্যালিকা – ইসলামী শারীয়াহ-তে এরা একে অপরের জন্য গায়ের-মাহরাম। অর্থাৎ আর পাঁচজন গায়ের-মাহরামের মতো এদের জন্যও একে অপরের সামনে পর্দা করা ফরজ।
শুধু তাই নয়, বরং অন্য গায়ের-মাহরামের তুলনায় এই সম্পর্কগুলোর ক্ষেত্রে আরো বেশী দূরত্ব এবং সাবধানতা বজায় রাখা উচিত। কেননা এই সম্পর্কগুলো অন্যগুলোর চেয়ে আরো বেশী বিপজ্জনক।
.
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ “তোমরা নারীদের নিকট প্রবেশ করা থেকে সাবধান থেকো।” একথা শুনে আনসার গোত্রের এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলো, কিন্তু দেবর সম্পর্কে আপনার মত কী? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “দেবর! দেবর তো মৃত্যুর সমতুল্য![১]
___________
শিমু উদাসীন হয়ে খালের পাড়ে সবুজ ঘাসের উপর বসে ছিল। তখন কিছুটা দূরত্বে থেকে দেখতে পেল তার শ্বাশুড়ি আম্মা কবর স্থানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে! যা দেখে শিমুর উদাসীনতা কেটে যায় ভালো করে খেয়াল করে, নাহার বেগম ঠিক কি করতে চলেছেন।
চেয়ে থেকে দেখল তিনি মাটি খুঁড়ে কিছু করছেন! তারপর দ্রুত পায়ে বাড়ির দিকে চলে গেলেন।
এরপর শিমু সেখানে গিয়ে মাটি সরিয়ে বড়সড় একটা তাবিজ পেল!…..
_______
রেফারেন্স:
[১](সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৫২৩২ ও সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ২১৭২)
_______
#চলবে….ইনশা আল্লাহ।
(আসসালামু আলাইকুম।
কিছু সমস্যার কারণে গল্পের চরিত্রের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। ভুল গুলো মার্জিত ভাষায় ধরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ। জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।)
#চুক্তিহীন_বাঁধনে_আবদ্ধ(০৩)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কার্টিসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)
এত বড় লোহার তাবিজ দেখতে পেয়ে গাঁ ছমছম করে উঠলো শিমুর। আশেপাশে হাজার হাজার মানুষের কবর। তাই ভ’য় টা বেশিই লাগছে। আর এক মুহূর্তও দেরি না করে বাড়ির পথে হাটা দিল সে। সে শ্বাশুড়ি আম্মাকে জিজ্ঞাসা করবে এটা কিসের তাবিজ তিনি মাটিতে পুঁতে রেখে দিয়ে আসছেন। তিনি কি জানেন না এসব করা ইসলামের বিরুদ্ধে।
ভাবতে ভাবতে বাড়িতে পৌঁছায় শিমু। ঘরের কাছে পৌঁছে দেখল নাহার বেগম কাউসার এর ঘরের চারদিকে পানি ছিটাচ্ছেন! যা দেখে শিউরে উঠে শিমু। বিচলিত হয়ে জিজ্ঞাসা করে আম্মা আপনি এগুলা কি করতাছেন? আপনি কি কুফরী করেছেন কাউকে? আপনার লক্ষন তো ভালো মনে হচ্ছে না কিছুতেই।
জাদু করা হারাম ও কবিরা গোনাহ। কারো প্রতি কোনো উদ্দেশ্য হাসিলে জাদু করাকে ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে। কেননা তা কুফরির শামিল। জাদু করা কুফরি বিষয়টি কুরআনুল কারিমে সুস্পষ্টভাবে ওঠে এসেছে। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘তারা ঐ শাস্ত্রের অনুসরণ করল, যা সুলায়মানের রাজত্ব কালে শয়তানরা আবৃত্তি করত। সুলায়মান কুফর করেনি; শয়তানরাই কুফর করেছিল। তারা মানুষকে জাদুবিদ্যা এবং বাবেল শহরে হারুত ও মারুত দুই ফেরেশতার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছিল, তা শিক্ষা দিত। তারা উভয়ই (হারুত-মারুত) একথা না বলে কাউকে (জাদু) শিক্ষা দিত না যে, আমরা পরীক্ষার জন্য; কাজেই তুমি কাফের হয়ো না। অতঃপর তারা তাদের কাছ থেকে এমন জাদু শিখত, যা দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। তারা আল্লাহর আদেশ ছাড়া তা দ্বারা কারও অনিষ্ট করতে পারত না। যা তাদের ক্ষতি করে এবং উপকার না করে, তারা তাই শিখে। তারা ভালরূপে জানে যে, যে কেউ জাদু অবলম্বন করে, তার জন্য পরকালে কোনো অংশ নেই। যার বিনিময়ে তারা নিজেদের বিক্রি করে দিয়েছে। তা খুবই মন্দ; যদি তারা জানত।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১০২)
এ আয়াতে দুটি বিষয় সুস্পষ্ট যে, জাদু করা কুফরি। আর যারা জাদু করে পরকালে তাদের জন্য কোনো অংশ থাকে না। শুধু তা-ই নয়, কুরআনের পরিভাষায় জাদু খুবই মন্দ কাজ।
হাদিসে পাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাতটি কাজকে ধ্বংসাত্মক বলেছেন। তন্মধ্যে একটি হচ্ছে জাদু করা। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক বিষয় থেকে বেঁচে থাকবে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন- হে আল্লাহর রাসুল! ঐ ধ্বংসাত্মাক বিষয় গুলি কী?
তিনি জবাবে বলেন-
– আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা।
– জাদু করা।
– অন্যায়ভাবে কাউকে হ’ত্যা করা। আল্লাহ তাআলা যা হারাম করেছেন।
– সুদ খাওয়া।
– ইয়াতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা।
– জেহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে যাওয়া।
– সতী-সাধ্বী মুমিনা নারীর প্রতি অপবাদ দেয়া।’
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, হারাম ও কবিরাহ গোনাহের মধ্যে অন্যতম জাদু-টোনা করা থেকে নিজেদের বিরত রাখা। আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকা।
(আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জাদুসহ এ রকম হারাম ও কবিরা গোনাহ থেকে নিজেদের মুক্ত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।)
আম্মা সত্যি করে বলেন আপনি কাকে তাবিজ করেছেন? আচ্ছা আপনি উনারে তাবিজ করে কিছু করেন নাই তো! আর সেই কারণেই কি তিনি রেশমা কে বিয়ে করতে রাজি হয়েছেন? আম্মা বলেন এগুলো কি সত্যি?
শিমুর কথায় রে’গে ফায়ার হয়ে গেলেন নাহার বেগম। চিৎকার চেঁচামেচি করে কাউসার কে ডেকে বললেন,
–” বাপ দেইখা যা তোর বউ আমারে কিসব কইতাছে! আমি বলে তোরে জাদু টোনা করছি। হায় আল্লাহ এসব হুননের আগে আমার মরন হয় না কেন!
নাহার বেগমের আর্তনাদ শুনে রুমি দৌড়ে এলো। এসে বলল,
–” আম্মা কি অইছে এমনে চেচাইতাছো ক্যান?
–” আমি কি আর সাধে চেচাই? আমারে হে’তি কয় আমি বলে তোর ভাইরে তাবিজ করছি!
মায়ের কথা শুনে খানিকটা দমে গেল রুমি।
কম্পিত গলায় বলল,
–” এই কতা ক্যারে মনে হইলো তেনার?
তারপর মায়ের কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
–” আম্মা তুমি কি দেখাইয়া কিছু করছো নাকি? নইলে কেমনে জানালো?
নাহার বেগম কাঁপা কন্ঠে বললেন, কই না তো কহন দেখবো? আমি তো সাবধানেই করলাম। আর এই পানি গুলান ছিডানোর সময় দেখছে নাকি কে জানে? এই মাইয়া তো চালাকের চহিদার! এই পানি দেইখাই মনে হয় এগুলান কইতাছে।
দু’জনের ফুসুর ফুসুর কথার মাঝে শিমু বলল,
–” কি আম্মা বলেন আপনি কাকে তাবিজ করেছেন? আমি কিন্তু আপনার ছেলেকে সব বলে দেব।
নাহার বেগমের ভিতরে ভয় থাকলেও বাহিরে প্রকাশ করলেন না। বাহিরে তেজ দেখিয়ে বললেন,
–” চুমি কইবা কি? আমি ই কইতাছি শুধু কাউসার রে আইতে দাও!
কাউসার আসলে কেঁদে কেটে বিচার দিলেন নাহার বেগম। বললেন তার উপর মিথ্যা অপবাদ দিতে চাইছে শিমু। কাউসার কে বিয়ে দেওয়াতে তার উপর প্রতিশোধ নিতে এসব মিথ্যে বানিয়ে বানিয়ে বলছে।
সবকিছু শুনে কাউসার শিমুকে জিজ্ঞাসা করলো এসব অপবাদ কেন দিছে সে? তখন শিমু হাতে মুঠো করা বড় তাবিজ টা দেখিয়ে বলল,
–” আপনি আম্মা কে জিজ্ঞাসা করেন আম্মা কেন এই তাবিজ কবর স্থানের মধ্যে পুঁতে দিয়ে এসেছেন!
শিমুর হাতে তাবিজ দেখে কলিজার পানি শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে নাহার বেগম আর রুমির।
কাউসার তাবিজ টা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখল। তারপর ভ্র কুঁচকে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
–” আম্মা এসব কি?
নাহার বেগম অস্বীকার করে বললেন, এসব কিছুই তিনি করেন নাই। শিমু বানিয়ে বলছে সব। কাউসার মায়ের কথা শুনে বলল,
–” তোমার কাছে কোন প্রমাণ আছে যে আম্মা ই এগুলো করেছে?
–” আমি নিজ চোখে দেখেছি বিশ্বাস করেন আপনি! আমি খাল পাড় বসে ছিলাম তখন দেখি আম্মা কবর স্থানে গিয়ে এই তাবিজ টা মাটিতে পুঁতে দিচ্ছে।
পাশের ঘরের কয়েক জন প্রতিবেশী ইতিমধ্যে হাজির হয়ে গেছেন। তার মধ্যে রহিমার মা ফিসফিস করে বললেন,
–” কাউসারের মার এসব করার অভ্যাস আছে আমি জানি। আগেও কতো দেখছি এসব জাদু টোনা নিয়া কত কবিরাজের কাছে দৌড়াইছে। শেষ বয়সে আইয়া ও এগুলান করা শেষ হয় না তার।
এদিকে নাহার বেগম পুরো দমে অস্বীকার করছেন যে তিনি এসব কিছু করেন নাই। শিমু সব বানিয়ে বানিয়ে বলছেন তার উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। কাউসার মায়ের কথা শুনে শিমুকে বলল,
–” আমার মাথা খারাপ লাগছে। এসব তাবিজ টাবিজ চিন্তা বাদ দাও। রোজ রোজ এসব ঝগড়া ভালো লাগে না। তোমার কাছে যেহেতু কোন প্রমাণ নেই সেহেতু আমি কিছু বলতে পারছি না। আমাকে একটু শান্তি দাও প্লিজ। না হয় তোমাদের শান্তিতে থাকতে দিয়ে আমি এক দিকে চলে যাই!
তারপর গটগট করে বাড়ির বাহিরে মোরের দিকে চলে যায় কাউসার।
রেশমা বাচ্চাদের পড়িয়ে এসে লোক জড়ো হওয়া দেখে বলল,
–” কি হয়েছে আপা? সবাই এখানে দাঁড়িয়ে কি করছে? উনাকেও দেখলাম ব্যস্ত পায়ে হেঁটে যেতে।
শিমু কথার জবাব দিল না। রেশমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল। যা দেখে নাহার বেগম ভ্রুকুটিকুটিল করে বললেন,
–” মুখপুরি ঐ মাইয়া তোর সাথে খারাপ আচরণ করে হেরপরেও সাইধ্যা সাইধ্যা কতা কইতে যাস ক্যান? আয় আমার সাথে?
তারপর রেশমা কে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে বললাম,
–” শোন আজকেই যা করার করবি। কাউসার কে হাত করার সুযোগ এসে গেছে। আর এই তাবিজ টা কাউসারের বিছানার তলে (নিচে) রেখে দিবি! রাতের বেলা কাউসার যখন ঘরো যাইবো তহন রুমি যাইয়া দরজা বাইরের তিকা বন্ধ কইরা দিব! তুই যা করার আইজই করবি!…..
#চলবে…ইনশা আল্লাহ।
(গল্পটা ভালো লাগলে রেসপন্স করবেন)