তবুও_তুমি💖 পর্ব ২

#তবুও_তুমি💖
#পর্ব_০২
#লামিয়া_রহমান_মেঘলা
আমার সামনে হাত মুখ এবং পা বাঁধা অবস্থায় পরে আছে বর্ষন।
ওকে ওভাবে দেখে আমার হৃৎস্পন্দন থেমে যাচ্ছে।
আমি রোদের হাত থেকে ছুটার চেষ্টা করি কিন্তু রোদ আমার পেছনের ঘাড় ধরে বসে,
–জান এমন লাফালাফি করছো কেন বর্ষনের কাছে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে বুঝি।
খুব ভালোবাসো না বর্ষন কে।
কেন ছোঁয়া আমাকে একটু ভালোবাসা যায় নি।
কেন বাসা যায় নি আমাকে একটু ভালো ওকে এতোটা ভালোবাসার অধিকার তোমায় কে দিয়েছে ছোঁয়া।
উনি আমার ঘাড় টাকে পেছন থেকে খুব বিশ্রী ভাবে চেপে ধরেছে । ব্যাথা করছে অনেক।
বুকে কিছুটা সাহস নিয়ে বললাম,
–ওকে ছেড়ে দিন প্লিজ আমি ওর জীবন আপনার কাছে ভিক্ষা চাচ্ছি।
আমার কথা শুনে উনি আমাকে পেছন থেকে আরও জোরে আমার ঘাড় টা চেপে ধরলো,
–এতো ভালোবাসা কবে থেকে জন্ম মিলো ছোঁয়া।
ওনার কন্ঠ কাঁপছিল।
বুঝতে পারছি তিনি হয় তো কাঁদছেন কিন্তু আমার সে সব দিকে খেয়াল দিলে চলবে না উনি হয় তো বর্ষন কে মেরেই ফেলবে।
বর্ষন মরলে আমার বেঁচে থাকার কোন কারনি থাকবে না।
–রোদ প্লিজ আমি হাত জোড় করে ক্ষমা চাইছি আপনি যা বলবেন আমি তাই করতে রাজি রোদ শুধু ওনাকে ছেড়ে দিন।
আমি কাঁদতে কাঁদতে কথা গুলো বললাম।
ভয়ে বুকের মধ্যে উতলা পাতাল শুরু হয়েছে।
উনি আমাকে জোরে ধাক্কা দিলেন ফলে আমি গিয়ে সোজা সামনে মাঠে গিয়ে পরলাম।
উনি সোজা হাঁটতে লাগলেন বর্ষনের দিকে।
আমি উঠতে যাবো কিন্তু এই ভারি শাড়ির জন্য বেঁধে গেলাম।
কাল থেকে এই একি শাড়ি পরে আছি।
আমি তাও কষ্ট করে উঠতে উঠতে দেখি রোদ বর্ষনের কাছে চলে গেছে।
আমার হার্টবিট দ্বিগুণ বেড়ে গেছে
আল্লাহ উনি কি করবে।
হুট করে উনি আমাকে অবাক করে দিয়ে বর্ষনের হাত পা মুখ খুলে দিলো।
বর্ষন অজ্ঞান অবস্থায় আছে।
তাই ওর কোন সোর শব্দ পাচ্ছিলাম না।
–রাফিত.
–জি স্যার।
–ওকে ওর বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসো।
–জি স্যার।
ওনার লোক গুলো এসে বর্ষন কে নিয়ে গেল।
আমি সেখানে ঠাই হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি।
সত্যি উনি বর্ষন কে ছেড়ে দিলো।
আল্লাহ ভাবতেই অবাক লাগছে।
বর্ষন কে ছেড়ে দিয়ে উনি আমার দিকে এগোতে লাগলো।
এবার আমার আরও ভয় হচ্ছে।
কি জানি কি করবে।
উনি এসে আমার হাত ধরে টানতে টানতে ঘরের ভেতরে নিয়ে যেতে লাগলো।
আমি ওনার সাথে ভেতরে গেলাম।
ঘরে এনে সোজা আমাকে বিছনার উপর ছুড়ে মারলো।
–তোমার বর্ষন কে ছেড়ে দিছি।
এখন আর কোন চিন্তা নেই আসা করি।। চিন্তা থাকলেও কিছু করার নেই।।
তবে ভুলে যেও না ওকে মাত্র আমি ছেড়ে দিয়েছি ওকে আবার তুলে আনতে আমার এক সেকেন্ড সময় ও লাগবে না।
সো আমার কথার অবাদ্ধ হবার চেষ্টা করবে না ছোঁয়া তাহলে সেটা বর্ষনের জন্য ভালো হবে না।
কথা গুলো বলে আলমারি থেকে একটা শাড়ি বের করে আমার দিকে ছুঁড়ে দিলো।
–শাড়ি পরে গোসল করে নেও।
আমি তোমায় ১০ মিনিটরে মধ্যে নিচে সবার সাথে দেখতে চাই।
কথাটা চলে তিনি হনহন করে চলে গেলেন।
আমি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
হাতে শাড়িটা নিয়ে কিছু সময় বসে রইলাম।
তার পর মনে পরলো সে আমাকে ১০ মিনিটের কথা বলেছে।
তাই ওয়াসরুমে গিয়ে গোসল সেরে নিলাম।
আমার মতো রোদের ও কেউ নেই।
ওর বাবা মা বলতে শুধু ওর দাদা আছেন।
আমি এ বাড়িতে আগেও এসেছি তখন দাদা আমাকে খুব আদোর দিতেন।
ওনার দাদা মানুষ টা খুবই ভালো।
ছোট থেকে রোদ কে মা বাবার অপূর্ণতা বুঝতে দেয় নি।
এতো বড়ো হয়ে এতো কিছু অর্জন এর পেছনে রোদের দাদার সব থেকে বড়ো অবদান।
নাতির কোন চাওয়া কখনো অপূর্ণ রাখে নি আজিজ চৌধুরী।
তারি ফল সরুপ আমার সাথে হওয়া অবিচার কেও তিনি কোন নাম দেয় নি।
আমাকে সব সময় বলে,
রোদ তোকে খুব ভালোবাসেরে মা।
ও সত্যি তোকে ভিশন ভালোবাসে ওর কাজে কষ্ট পাস না।। ও এতোটাই ভালোবাসে তোকে যে বার বার হারানোর ভয় পায়।
তাই না বুঝে কষ্ট দিয়ে ফেলে।
সব কিছু ভাবছিলাম আর চুল আঁচাচ্ছিলাম।
চুল থেকে চিরুনি টা সরিয়ে নিজেকে আয়নায় দেখে নিলম এক বার।
তার পর নিচে চলে এলাম।
নিচে রোদ আর দাদাভাই বসে আছেন ডাইনিং টেবিলে।
আমাকে দেখে রোদ হাসি মুখে আমার দিকে এগিয়ে এলেন।
–সুইটহার্ট এতো লেট কেন করলে এসো বসো তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
আমার হাত ধরে বলল।
কিন্তু উনি এতো ভালো ব্যাবহার করছেন কেন বুঝলাম না।
–দাদা জান যেন আমাদের ভেতরের কোন কথার সাথে সংযুক্ত না হয়।
উনি সংযুক্ত হলে তোমার বর্ষন সহ তোমায় পৃথিবীর সাথে সংযোগ বিচ্ছিন করে দিবো।
আমার কাছে এসে কানের কাছে মুখ নিয়ে কথা গুলো বলে হেসে দিলেন,
–কি হলো জান এসো।
আমি মলিন হেঁসে তার সাথে তার পাশের চেয়ারে বসলা,
–ছোঁয়া কেমন আছো?
–আলহামদুলিল্লাহ দাদা তুমি কেমন আছো?
–তোদের এভাবে খুশি দেখে আমি ভিশন খুশি।
শেষ বয়সে আমি না থাকা কালিন আমার নাতি টার খেয়াল রাখতে যে একটা বউ এলো এটাই অনেক।
–উফ দাদাজান তুমি আবার শুরু করলে।
এসব বললে কিন্তু আমি তোমার সাথে কথাই বলব না।।
অভিমানী শুরে কথাটা বললেন রোদ।
আমি তার দিকে চেয়ে আছি।।
–ছোঁয়া খাবার খাও।
দাদার কথায় ধ্যান আসলো।
সবাই মিলে খাবার শেষ করলাম।
আমি কিছুই খেতে পারছিলাম না৷। মনে হচ্ছিল গলায় বেধে যাচ্ছে।
বার বার বর্ষনের কথা মনে পড়ে বুকের মধ্যে কেমন কেঁপে উছিল।
ওকে কি সত্যি রেহায় দিয়েছে নাকি আমাকে শুধু শুধুয়ই বলল।
কিছুই বুঝতে পারছি না।
কি সত্যি কি মিথ্যা।
খাবার শেষ করে রুমে চলে এলাম।
বিছনায় বসে বসে ভাবছি সত্যি কি বর্ষন কে রেহায় দিয়েছে উনি৷।
হটাৎ কারোর পায়ের শব্দে ধ্যান ফিলো।
সামনে তাকিয়ে দেখি রোদ দাঁড়িয়ে।
আমি মাথা নিচু করে নিলাম,
উনি আমার সামনে বসলেন।
আমার মুখটা উচু করে ধরলেন,
–মায়াবী এই মেয়েটা শুধু আমার ছিল তাই না।
আমার সব স্বপ্ন আমার সব গোছালো সভাব সব তার জন্য ছিল।
সব গোছালো সভাব কে অগোছালো করে সব স্বপ্ন গুলোকে ভেঙে দিয়ে মায়াবতী আমার হৃদয় টাকে দু’টো টুকরে বিভক্ত করে দিলে।
কি করে পারলে তুমি এমনটা করলে ছোঁয়া।
খুবই ধির কন্ঠে সে কথা গুলে বললো।
তার বলা প্রতিটি কথা আমার ভেতরে উতলা দিয়ে দিচ্ছে।
আমাকে কিছু না বলতে দেখে হটাৎ আমার গলা চেপে ধরল খুব শক্ত করে।
হুট করে এমন হওয়াতে কিছুটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম৷
–কপন খেললি আমাকে নিয়ে ছোঁয়া কেন আমার জায়গা অন্য কাউকে দিলি।। তুই এই সাহস পেলি কোথায় ছোঁয়া।
আমাকে খুব শক্ত করে ধরেছে রোদ।
আমার দম বন্ধ হবার উপক্রম।
কিন্তু তার সে দিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নাই সে তার মতো করে আমাকে আরও শক্ত করে চেপে ধরতেছে।
চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here