তুই আমার সুরঞ্জনা পর্ব ১৫

#তুই_আমার_সুরঞ্জনা
Part–15
#Arishan_Nur

প্রমিতির ঘুম ভাংলো। সে পিটপিট করে চোখ খুলে দেখে রাত হয়ে গেছে। সেই বিকেলের পরপর ঘুমিয়েছে। প্রমিতি চোখ ডোলতে ডোলতে উঠে বসে। সামনের দেয়াল ঘড়িটায় আবছা আলোয় সে দেখতে পেল, এখন সাড়ে বারোটা বাজে।

আচ্ছা এখন কি রাত না দিন? রাত ই তো হওয়ার কথা। কারন চারপাশ অন্ধকার। প্রমিতি ঘাড় ঘুরিয়ে আশপাশে দেখে নিল। রুমে সে বাদে দ্বিতীয় কোন প্রানী নেই। আচ্ছা নিরব কোথায়? সে কি বাসায় ফেরেনি?

প্রমিতি ধড়ফড় করে উঠে, রুমের বাইরে গেল। রুমের বাইরে গিয়ে কাউকে খুজে পেল না। না দাদি আর না মাকে খুজে পেল সে৷

প্রমিতি মনে মনে, কোথায় গেল সবাই?

প্রমিতি গুটিগুটি পায়ে ড্রয়িংরুমে আসতেই নিরবের বাসার সাহায্যকর্মী কে পেয়ে গেল।

সে বলল, আচ্ছা শুনেন?

তাকে দেখে সাহায্যেকর্মী বলে উঠে, জি, বলেন ভাবী?

প্রমিতি ভাবী ডাক শুনে একটু অস্বস্তিবোধ করল। সে বলে উঠে, বাসার সবাই কোথায়?

উনি বললেন, খালা আর দাদি রাতের ভাত খেয়ে শুয়ে পড়েছে। আর ভাইয়া এখনো ফিরে নি। খালা বলেছে আপনি সজাগ হলে আপনাকে রাতের ভাত দিতে। দিয়ে দিব এখন?

প্রমিতি মাথা নাড়িয়ে না বলল৷

–তাহলে কি ভাইয়া আসলে খাবেন?

প্রমিতি স্মিত হেসে বলে, হুম।

সে ড্রয়িং রুমে গেল। কিছুক্ষন ড্রয়িং রুমে বসে থেকে আবারো নিরবের রুমের দিকে গেল৷

প্রমিতির কেমন যেন অস্থির লাগছে। সেই যে সকালে বের হয়েছে নিরব। এখনো ফিরল না। রাত একটা ছুইছুই। এখন না ফিরলে কখন ফিরবে? নাকি আজকে ফিরবেই না?

প্রমিতির কান্না পাচ্ছে। নিরবের প্রতি এক প্রকার অভিমান জেগে উঠছে।

এমন সময় সাহায্যকর্মী এসে বলে, ভাবী জেগে আছেন?

প্রমিতি নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,হু।

–ভাইয়া আসা অব্দি কি আপনি জেগে থাকবেন?

–হ্যা।

–তাহলে আমি শুয়ে পড়ি। টেবিলে খাবার বেড়ে রেখেছি।

–আচ্ছা। ঠিক আছে৷ আপনি শুয়ে পড়েন। আমি জেগেই আছি সমস্যা নাই।

–যাই তাহলে।

উনি যাওয়ার পর প্রমিতি বারান্দায় গেল। নিরবরা এপার্মেন্ট এ থাকে। নিরবের বাসা তিনতলায়। বারান্দায় দাড়াতেই হুহু করে বাতাস আসতে লাগল। প্রমিতির মনটাও ভালো হয়ে গেল। সে চোখ বন্ধ করে বাতাসটা উপভোগ করতে লাগে।
এমন সময় গাড়ির হর্ণের শব্দ কানে ভেসে উঠল। প্রমিতি চোখ খুলে দেখে নিচে সেই কালো
গাড়িটা এসে থেমেছে।

প্রমিতির ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠল। সে দ্রুত পায়ে মেইন গেটের সামনে গিয়ে দাড়ালো। আর নিরবের অপেক্ষা করতে লাগে।

প্রায় দশ মিনিট পর বেল বেজে উঠল। বেল বাজার শব্দে প্রমিতি হালকা কেপে উঠে। তার হুট করে কেমন যেন লাগতে শুরু করল। মাথাটা ঝিম মেরে উঠে।

দরজার ওপারে নিরব দাঁড়িয়ে আছে এটা ভাবতেই মাটির সাথে মিশে যেতে মন চাচ্ছে প্রমিতির!

আরেকবার বেল বেজে উঠল। সেই সাথে দ্বিতীয়বারের মতো প্রমিতিও কেপে উঠে এবং হন্তদন্ত হয়ে গেট খুলে দেয়।

নিরব গেট খুলতে দেখে কিছু বলতে চাচ্ছিল কিন্তু প্রমিতিকে দেখা মাত্র চুপ বনে গেল।

নিরবকে চুপ হয়ে দেখে প্রমিতি মনে মনে আহত হয়।

নিরব ভেতরে ঢুকল এবং চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে নিজের রুমের দিকে হাটা দিল।।

তাকে অনুসরণ করে প্রমিতিও হাটা দিল। কিন্তু নিরব রুমের ভেতরে ঢুকে ই গেট আটকে দিল। যার জন্য প্রমিতির আর ভেতরে ঢোকা হলো না৷

সে বাইরেই দাঁড়িয়ে রইল। প্রমিতি একবার ভাবল গেট খুলে ভেতরে ঢুকে পড়বে। কিন্তু পরমূহুর্তে এই চিন্তা বাদ দিয়ে খাবার টেবিলের দিকে হাটা দিল। এবং খাবার প্লেটে সার্ভ করে চেয়ার টেনে বসে পড়ল। সে নিরবের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।

এদিকে নিরব রুমে ঢুকেই সোজা গোসল করতে চলে গেল। রাতে গোসল না করলে তার ঘুম আসেনা।

গোসল শেষ করে বাইরে বের হয়ে দেখল বিছানাটা এলোমেলা। কাথাটার ভাজ খুলে রাখা। বোঝাই যাচ্ছে কেউ এই বেডে শুয়ে ছিল। আজ পর্যন্ত কোন দিন ই সে অফিস থেকে এসে তার বেড এলোমেলো পায় নি৷ মা প্রতিদিন আগেভাগেই বিছানা গুছিয়ে রাখে। নিরব গোছানো বিছানা ছাড়া ঘুমাতে পারেনা।

নিরব রুমের প্রতিটা জিনিসের দিকে চোখ বুলালো। সব কিছু ই ঠিক আছে। শুরু সোফার উপরে দুইটা শাড়ি সুন্দর করে ভাজ করে রেখে দেওয়া আছে। শাড়ি দুই টি তার চেনা। প্রমিতির শাড়ি এগুলো।

আচ্ছা প্রমিতি কি পড়ে ছিল? খেয়াল করে নি সে? আর প্রমিতিই বা কোথায়? প্রমিতির তো তার সাথে তার রুমে থাকার কথা। কিন্তু রুমে তো নেই৷

নিরব কিছুটা চিন্তিত হয়ে রুমের বাইরে বের হলো। ডাইনিং রুমে গিয়ে দেখে প্রমিতি খাবার নিয়ে বসে আছে।

দুইটি প্লেটেই ভাত বেড়ে রেখেছে। নিরব ভ্রু কুচকে বলে, তুমি খাও নি?

হুট করে নিরবের কন্ঠ শুনে সামান্য কেপে উঠে প্রমিতি। তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে বলে, না৷

নিরব ঘড়ি দেখে নিল এবং গমগমে গলায় বলে, এখন রাত একটা বাজে। এই সময় কেউ রাতের ভাত খায় না। সাহরি খাইতে উঠে মানুষ আরেকটুপর।

প্রমিতি বলে উঠে, আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। উঠার পর আপনার জন্য অপেক্ষা করেছি।

একথা শুনে নিরব মনে মনে খুশি হলো। সে বেসিনে গিয়ে হাত ধুয়ে খেতে বসে গেল। বরকতের সাথে একবার ওলরেডি খেয়েছে। তারপর ও প্রমিতির তার জন্য অপেক্ষা করতে দেখে মন এতোটাই ভরে গেছে যে আরেকদফা খেতে বসল।

নিরব খেতে খেতে প্রমিতিকে দেখতে লাগল। মেয়েটা সালোয়ার কামিজ পড়েছে। নিরব এই প্রথম প্রমিতিকে সালোয়ার কামিজে দেখল। কামিজ পড়ায় মেয়েটার চেহারায় বাচ্চা-বাচ্চা ভাব ফুয়ে উঠেছে। অথচ শাড়ি যখন পড়েছিল তখন তার মাঝে একটা গুরুগম্ভীর ভাব চলে এসেছিল!

নিরব পরখ করে প্রমিতিকে দেখে যাচ্ছে। প্রমিতি মাথা নিচু করে খাচ্ছে।

নিরবের পেট ভরা থাকায় সে তেমন একটা খেল না। অল্প কিছু খেয়েই উঠে পড়ল।

তখনো প্রমিতির প্লেটে অর্ধেক ভাত আছে। নিরব খেয়াল করেছে প্রমিতি খুব স্লোলি ভাত খায়। তার আবার দ্রুত খেয়ে নেওয়ার স্বভাব আছে।

নিরব হাত ধুয়ে প্রমিতি কে একবার দেখে নিয়ে রুমে ঢুকে গেল।

প্রমিতি আরো পনের মিনিট ধরে খেয়ে থালা-বাসন ধুয়ে নিরবের রুমে গেল।

গিয়ে দেখে নিরব তার শাড়ি দুইটার উপর বসে ল্যাপটপ অন করে কি যেন করছে।

প্রমিতি কিছু টা চটে গিয়ে বলে উঠে, আমার শাড়ির উপর কেন বসেছেন?

নিরব ল্যাপটপে চালাতে চালাতে বলে, বিছানা টা ঝাড়ো। আমি অগোছালো বিছানায় ঘুমাতে পারিনা।

একথা শুনে দ্রুত প্রমিতি বিছানা ঝাড়তে চলে গেল।

নিরব আড়চোখে প্রমিতিকে দেখে নিল এবং ল্যাবটপটা বন্ধ করে দিয়ে প্রমিতির কাছে গিয়ে দাড়ালো।

প্রমিতি সেটা বুঝতে পারল বিধায় সে কাজ বাদ দিয়ে সটাং হয়ে দাড়ালো ।

নিরব পেছন থেকে বলে, কি হলো? বিছানা গুছাও। আমি ঘুমাব। কালকে সকালে আবার অফিস যেতে হবে। ভীষণ ক্লান্ত আমি।

প্রমিতি আবারো বিছানা গুছিয়ে দিল। নিরব চিটপাটাং হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল।

প্রমিতিকে কিছু ই বললনা। প্রমিতি চুপচাপ কিছুক্ষন দাড়িয়ে রইল। তারপর সে গিয়ে সোফায় বসে পড়ে।

প্রমিতি ঠিক করে যে সে সোফায় ঘুমাবে। নিরব তো তাকে বেডে শোয়ার পারমিশন দেয় নি।

★★★

বরকত শুয়ে পড়েছে। অনেক ক্লান্ত সে।কিন্তু ঘুম আসছে না। বরকতের একটা দোষ হলো, ক্লান্ত থাকলে তার আর ঘুম হয় না।

তাই বরকত অতীতে ডুব দিল। লিনার সাথে তার পরিচয় নিরবের অফিসে হয়। যেহুতু লিনা নিরবের বিসনেস পাটনার ছিল, তাই মাঝে মাঝেই নিরবের অফিসে সে আসত বিভিন্ন কাজে। সেদিন ও এসেছিল কোন এক কাজে। ফরচুনেটলি বরকত ও কি মনে করে নিরবের সাথে দেখা করতে অফিসে আসে।

অফিসে আসা মাত্র সে লিনাকে দেখতে পায়। সেদিম লিনা হালকা সবুজ রঙের একটা সালোয়ার কামিজ পড়ে এসেছিল।

বরকতের সবুজ রঙ এমনি খুব পছন্দ। তাই তো চোখ আটকে যায় লিনাতে। আর যখন সে লিনার মুখমণ্ডল দেখতে পেল। তার মধ্যে কি যেন হয়ে যায়। সে বুঝে ফেলে এক দেখাতেই লিনার প্রেমে পড়ে গেছে।

এরপর নিরবের সাহায্য দিয়ে লিনার সাথে পরিচয়। তারপর আস্তে আস্তে লিনা আর সে অনেক ক্লোস হয়। বরকত ভেবেছিল লিনাও তার প্রতি উইক। কিন্তু তার এই ধারনা ভুল প্রমানিত হয় যখন সে লিনার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়৷

লিনা রিজেক্ট করে দেয়। কারন সে বরকতকে জাস্ট ফ্রেন্ড ভাবত।

বরকত উঠে বসল। লিনা গভীর ঘুম। চোখে-মুখে পানি দিতে পারলে শান্তি লাগবে। তাই সে উঠে দাড়ালো।

তাদের রুমের বাথরুমের কল নষ্ট তাই বরকত গেস্ট রুমের বাথরুমে গেল। বাথরুম গিয়ে সে গেটে ছিটকিনি লাগালো। ছিটকিনি লাগাতে গিয়ে সে বুঝল, ছিটকিনি তে সমস্যা আছে।

বরকত বাথরুম থেকে ফ্রেস হয়ে যেই না ছিটকিনি খুলবে ওমনি ছিটকিনির হাতল টা ভেঙে নিচে পড়ে গেল৷

বরকত, ওহ শিট বলে উঠে।

এখন কি করবে? লিনা তো ঘুম। সাথে মোবাইল ও নেই৷ এখান থেকে ডাকলে লিনা কোন দিন শুনবে না। বরকত কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।

সে বাথরুমেই পায়চারি করতে লাগলো।

হুট করে অনেক বিকট আওয়াজ হলো। কোথাও যেন বিস্ফোরণ ঘটল।

বরকত জানলার সামনে গিয়ে দেখল, তাদের পাশের বিল্ডিং এ দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। তা দেখে ঘাবড়ে গেল বরকত।

চলবে।

[এই গল্পটা যদি আর না দিই তবে কে কে কষ্ট পাবেন বা মন খারাপ করবেন? ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here