#গল্প-তুমিময়
#Aysha_khan
#লাস্ট পার্ট
মামীর পছন্দ করে নিয়ে আসা শপিংয়ে আমাকে সাজানো হলো লাল টুকটুকে বৌ দ্যা গ্রেট আদনানের বৌ। আয়নায় নিজেকে দেখছি আজ বাকরুদ্ধ আমি। নিজের সৌন্দর্যে নিজেই মুগ্ধ হচ্ছি। মনে হলো আদনান ভাইয়ের বৌ সেজেছি বলেই এত সুন্দর লাগছে আমাকে! আসলেই কি তাই না! আমার অবুঝ মনের ভাবনা এগুলো। হতে পারে প্রেমে পরলে মানুষ উল্টো পল্টাই ভাবে শুনেছি আমি। আমিও প্রেমের রোগী তাই উল্টো পালটাই ভাবছি আজ। ভেবে একা একাই হেসে উঠলাম! পিছন থেকে মাইশা পুচকে বল বসলো,
‘ দেখ দেখ নতুন বৌয়ের লজ্জা কম। কিভাবে হাসছে বাসর ঘরের কথা ভেবে! অথচ সকালেও আপু বিয়েতে রাজি ছিলো না! ‘
ছিঃ ছিঃ অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া এতটুকু মেয়ের কথা শুনে দুই মামীর সামনে লজ্জায় মাথা কাঁটা যাচ্ছে। আর বাকি গুলো দাঁত কেলিয়ে হেসে যাচ্ছে। আমার তাতে হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে! ঠোঁট কাঁটা কাজিনদের সামনে কেন হেসে দিলাম আমি! আমার অবস্থা দেখে ছোট মামী ঠোঁট টিপে হেসে পেছন থেকে মেয়ের কান মলে ধরে বললেন,
‘ অরে লজ্জা বসতী তোর খুব লজ্জা ছোট হয়ে বড় আপুর লেগ পুল করছিস তাও বাসর ঘর নিয়ে? ‘
এবার সবাই দ্বিগুণ জোরে হেসে উঠলো। মাইশা ছোট মামীকে দেখেনি উনি আচমকা রুমে ঢুকে মেয়ের কথা শুনে নিয়েছে। বেচারি মাইশা ফেসেছে কেলানি খাবে এবার। আমি শয়তানি হাসি দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে। এবার বুঝো মজা! মামী ধমক দিয়ে ওকে রুম থেকে বের করে দিলো। এবার একে একে সবাই বাহিরে চলে গেলো। আমার পাশে পিহু আপু বসে! আমি নিজেও বাহিরে উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে। সবাই তো এলো বাবা এলো না এখনও! কখন আসবে? চিন্তা হতে লাগলো রাত এখন ১১ টা। সারা দিন বিয়ের ছোট খাটো আয়োজন চলেছে আদনান ভাইকেও ঐ সকালের পর আর দেখিনি। মনটা নিশপিশ করছে বাবা না এলে আমি কিছুতেই বিয়ে করবোনা। এই পৃথিবীতে বাবা ছাড়া আর কে আছে আমার তাকে ছাড়া আমি কিছুতেই বিয়ে করতে পারিনা এভাবে। যদিও আদনান ভাই বলেছেন বাবা থাকবে বিয়েতে!
রাত ১২ টায় আমাকে আদনান ভাইকে একত্রে ড্রইং রুমের সাজানো গোছানো স্পেসে বসানো হলো পাশাপাশি। আমি হা করে দেখছিলাম তাকে। কালো পাঞ্জাবীতে পিন্সেস লাগছে কালো রাজ্যের রাজপুত্র যেন৷ আমি দ্রুত নজর ফিরিয়ে নিলাম কেও দেখেনিলে আবার লজ্জা। তবে আড়চোখে দেখেছি আদনান ভাই এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। এই লোকের লজ্জা কম সে সবি পারে ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। সবাই সেখানে উপস্থিত একজন কাজী সহ! শুধু নেই অভি ভাইয়া আর বাবা। সবাই এই সেই কাজে মসগুল! আমি বারবার দরজায় তাকাচ্ছি! সেটা লক্ষ্য করে আদনান ভাই আমার বাম হাত চেপে ধরলো। আমি চমকে তার দিকে তাকালাম মলিন মুখে। সে স্মিত হেসে বলল,
‘ বিউটিফুল বাবার আসতে আর ৫ মিনিট লাগবে! অভি তাকে নিতেই গেছে অভি জানিয়েছে আমাকে। চিন্তা করোনা! ‘
অনেকটা স্বস্তি ফিরে পেলাম। এবং অনেকটা অবাকও হলাম। মনে হলো আদনান ভাই আমার বাবাকে বাবা বলেই ডাকলেন। আমার হৃদয় জুড়ে শান্তির হাওয়া বয়ে গেলো। আমি হাল্কা হাসলাম। আদনান ভাই চোখ দিয়ে ইশারা করলেন সব ঠিক ঠাক হয়ে যাবে! কয়েক মূহুর্তে পর আদনান ভাই অনেকটা ফিসফিস করে বললেন,
‘ বিউটিফুল যদি জানতাম বৌ সাজে তোমাকে এত সুন্দর লাগবে আরও আগেই বিয়ে করে ফেলতাম! ইশ পুরো বাটার মিল্ক লাগছে তোমাকে ইচ্ছে করছে এখুনি খেয়ে ফেলি! আজ রাতে একদম শেষ করে দিবো তোমাকে…! ‘
আর বলতে দিলাম না তাকে। ধরফর করা বুক নিয়ে সব ভুলে উচ্চস্বরে বললাম,
‘ পিহু আপু আমি পানি খাবো গলা শুকিয়ে গেছে ! ‘
আমার কান গরম হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে ধোঁয়া বের হচ্ছে। গাল লাল হয়ে ঘাম ছুঁটে গেছে হাল্কা৷ মনে মনে ইয়া আল্লাহ ইয়া আল্লাহ করছি। বিয়ে করছি এক বেসরমকে! যদিও এই লোক এসব বলতে পারে আমার ধারণার বাহিরে ছিলো কখনও এমন করেনিত আগে। এদিকে আদনান ভাই দুষ্টু হাসি দিচ্ছেন। আমি উনার দিকে আর ভুলেও তাকালাম না। লজ্জায় একা একা পিষ্ঠ হচ্ছিলাম আর সে মজা নিচ্ছে। বাকি সময় তার পাশে দম ধরে বসে রইলাম। যেন শ্বাস ফেললেই লজ্জা! আদনান ভাই বাঁকা হাসলেন যখন পিহু আপু পানি নিয়ে এলেন আর আমি লজ্জায় সেটাও খেতে পারছিনা। গাঁ জ্বলে যাচ্ছে আজকের দিনেও একটু শান্তি পেলাম না বাদর একটা না একটা পিছনে পরেই আছে! ধূর আমার বিয়ে আমিই একটুও মজা করতে পারলাম না! আর সবাই দাঁত কেলিয়ে হেসে যাচ্ছে।
আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে ১০ মিনিট পর। অভি ভাইয়া আমার বাবা নানু বড় মা বড় বাবা সবাই বাসায় ঢুকলেন। ড্রইং রুমের সবাই দাঁড়িয়ে গেলো তো কেউ থমকে গেলো। আদনান ভাইকে একদম শান্ত এবং শীতল লাগছে যেন কিছুই হয়নি। মুখো ভাব দেখে বুঝার উপায় নেই কিছু। আমি দাঁড়াতে গেলে দিলেন না হাত ধরে রাখলেন শক্ত করে যেন ছেড়ে দিলে পালিয়ে যাবো! আমি নানু বাবাকে এক সাথে আমাদের সামনেই বসতে দেখে শক পেয়েছি পরমুহূর্তেই হু হু করে কেঁদে ভাসাতে লাগলাম। প্রান্ত, আশিক, অভি ভাইয়ারা তারা দিলেন। এবং সেই অবস্থায় বিয়ে পরানোর কাজ শুরু হলো। আমি বাবার দিকে তাকিয়ে অঝোরে কাঁদছি এক্টু পর যেন চোখ থেকে রক্ত বেরুবে। বাবা নিজেও কাঁদছে নানুর চোখ দেখে কোনও ভাব ভঙ্গিমা বুঝতে পারলাম না। দুঃখি না সুখী? তবে বাবা আমার কাঁন্না সহ্য করতে না পেরে আমার ডান পাশে বসলেন। আমি বাবার কাঁধে মাথা ফেলে কাঁদতে কাঁদতেই বিয়ে করলাম এক প্রকার।
বিয়ে পরানোর পর আমার অবস্থা কাহিল কেননা অনেক কেঁদেছি সারাদিনের ব্যাস্ততায় ক্লান্ত হয়ে শরীর ছেড়ে দিয়েছি। নিভু নিভু চোখে শুনতে পেলাম বাবা বলছে আমাকে নিরিবিলি রুমে শুইয়ে দিতে। কাজিনরা আমায় নিয়ে গেলো আদনান ভাইয়ের রুমে আমাকে বেডে শুওয়াতেই ঘুমিয়ে গেলাম আমি যেন কতদিন পর আজ শান্তির ঘুম এলো চোখ জুড়ে। তারপর কী হয়েছে কিছু মনে নেই।
সকালে ঘুম ভাঙতেই চোখ ডলতে ডলতে ঘুম থেকে উঠলাম। ধীরে ধীরে ঘুমের রেশ কাটতেই দেখলাম ঘর জুড়ে তাজা গোলাপ দিয়ে সাজানো আমি নিজেও গোলাপে ভর্তি বেডে শুইয়ে। সারা ঘর ময় গোলাপের গন্ধে মৌ মৌ করছে। এবার আস্তে-ধীরে মনে পরলো কাল আমার বিয়ে ছিলো৷ আর আমি ফাস্ট নাইট স্পোয়াল করে ঘুমিয়ে পরেছি। ‘থ’ মেরে কিছু ক্ষণ বসে থেকে হঠাৎ আমি হো হো করে হেসে উঠলাম। আদনান ভাইয়ের কথা ভেবে হাসি পাচ্ছে খুব। বাসর রাতে বৌ ঘুমিয়েছে আর বেচারা বর নিশ্চয়ই মশা মেরেছে বসে বসে?
আমার হাসির শব্দে আদনান ভাই বারান্দা থেকে রুমে এলেন এলোমেলো চুল ব্ল্যাক টিশার্ট গায়ে সাথে ব্ল্যাক ট্রাউজার। আমি তাকে দেখেও হাসি থামাতে পারলাম না। আদনান ভাই রেগে গেলেন মনে হয়? সে ধাক্কা দিয়ে আমাকে শুইয়ে দিলেন বেডে এবং আমার উপর উঠে ঝুঁকে পরলেন আমার দিকে ভয়ে আমার হাসি থেমে গেলো এবার! এবার উনার মুখে হাসি ফুটে উঠলো! ভ্রু নাচিয়ে বলল,
‘ হোয়াট? এখন, এখন কী করবা? সুন্দর একটি রাত মাটি করেছো সারাজীবন কী করে মাটি করবা? ‘
আমি কিছু বলতে পারলাম না ভেংচি কেটে মুখ ঘুরিয়ে নিতেই। আদনান ভাই শব্দ করে চুমু খেলেন আমার কপালে, গালে!কেঁপে উঠালাম আমি আদনান ভাইয়ের প্রথম স্পর্শ অন্যরকম অনুভূতি আমার জন্য চোখ বন্ধ হয়ে গেলো আমার। অতঃপর উনি বললেন,
‘ বিউটিফুল আমি তোমাকে কাল ছাড় দিয়েছি ছেড়ে দেইনি। আমি তো সারাজীবন পাবো আমার প্রেয়সীকে! কিন্তু তোমার সুস্থতা সবার আগে! ‘
আমি সন্তুষ্টির হাসি হেসে উনাকে জরিয়ে ধরলাম। আদনান ভাই আমাকে জানালেন নানু সকালে উনার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ফোন করে তার কাজের জন্য। এবং আমাদের মেনে নিয়েছেন। শেষ বসসে নাতির ভালোবাসা হারাতে চান না উনি। তাই আদনান ভাই আর উনাকে কিছু বলেননি। কেননা আমি সবাইকে নিয়েই বিয়ে করতে চেয়েছি তাই। তাই অভি ভাইয়া সব শুনে নানুকেও নিয়ে এসেছেন। সব শুনে আমি মুচকি হাসলাম। অবশ্যই যা হয় যেভাবে হয় সবি ভালোর জন্যেই!
৫ বছর পর…
হায়াদ আর আমি একটা এনজিও থেকে কাজ শেষে বাড়ি ফিরছি। আমি এখন একটা এনজিওর সাথে কাজ করছি। হায়াদ ও আমার সাথেই আছে তাছাড়া তাদের পারিবারিক বিজনেস তো আছেই ওর জন্য। তবে এনজিওর সাথে কাজ করে ও আমার মতোই শান্তি পায় তাই এটাকে বেশি প্রাধান্য দেয় বরাবরই। আজ আমার দ্রুত বের হচ্ছি আজ হায়াদ মেয়ে দেখতে যাবে। বেচারার বিয়ের বয়স হয়েছে। আমি গাড়িতে উঠে দুষ্টু কণ্ঠে বললাম,
‘ আমাদের পুরো কাজিন পরিবার প্রেমে পরে বিয়ে পরলো আর তুমি! ‘
বলেই হেসে দিলাম। তার পর হায়াদ যা বলল শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না,
‘ কে বলেছে আমি প্রেমে পরিনি? আমি তোমার প্রেমে পরেছিলাম! কিন্তু তুমি অন্যকারো প্রেমে….! কন্টাক্ট ম্যাচ হয়নি! ব্যাপার না আমরা বেষ্টফ্রেন্ড! এতেই আমি খুশি! প্লিজ আজকের এই কথার জন্য যেন আমাদের ফ্রেন্ডশিপটা নষ্ট না হয় অয়ত্রী! ‘
বোবা হয়ে রইলাম যেন। এতবছর হয়ে গেলো আমি কত বোকা আমি হায়াদের মন একদিন ও বুঝতে পারিনি নাকি বুঝতে দেওয়ায় হয়নি আমাকে? বাসার সামনে গাড়ি থামতেই বোবার মতো বাসায় ঢুকে গেলাম। হায়াদ ও যতারীতি চলে গেলো নিজ বাসায়। সে রোজা আমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে যায়। আমি আজ চুপচাপ রইলাম সারাদিন বিকেলে মেয়ে দেখতে যাওয়ার কথা থাকলেও আমি আর গেলাম না। তাই আদনান নিজেও গেলো না। পিহু আপু প্রান্ত ভাইয়ার বিয়ে হয়েছে আমার বিয়ের কিছু দিন পরেই তারাও যাবে আজ মেয়ে দেখতে। পুচকে মাইশা হলে থাকে তাই যেতে পারেনি। আহি তো ঐ বাড়িতেই আছে।
অভি ভাইয়া দেশের বাহিরে আছেন বিজনেস ট্রিপে। এই ব্যাক্তি এখনও বিয়ে করেননি তার ধারা প্রেম হয়ে উঠে না আর সে নাকি প্রেম ছাড়া বিয়ে করবেনা। আকাশ ভাইয়া এখনও প্রেম করছেন তার মতে এতো দ্রুত বিয়ে সে করবেনা অথচ সবাই বলে বিয়ের বয়স পেরিয়েছে তার! তবুও তার কথায় সে অটুট। সেও আজ মেয়ে দেখতে যাবে। সাথে দুবাড়ির বড়রা তো আছেই। এতলোক নিয়ে যাওয়ার একটাই কারণ পছন্দ হলে আজি বিয়ে করে মেয়ে তুলে নিয়ে আসা হবে। তবে সব ডিপেন্ড করে হায়াদের পছন্দের উপর। আর আজি এসব জেনে আমার মনে হলো আমার না যাওয়াটাই ব্যাটার।
ছাদে দাঁড়িয়ে আছি। আমি কিছুটা বিভ্রান্তিতে পরে গিয়েছি আসলে হুট করেই হায়াদের লুকোনো অনুভূতির কথা যেনে। এটাই চুপচাপ হয়ে যাওয়ার কারণ। আর কিছুই নয় খারাপ ও লাগছেনা কে কাকে ভালোবাসবে এটাতে তো আর আমরা কাউকে বলে দিতে পারিনা। এসবে মানুষ স্বাধীন৷ তবে এও বুঝতে বাকি নেই কেন হায়াদের সাথে আদনান ভাই আমাকে দেখতে পারতেন না। আদনান নিশ্চয়ই ব্যাপার টা বুঝতেন। তবে সেটা বিয়ের আগে কিন্তু বিয়ের পর আদনান ভাই যখন যানতেন আমি শুধুই আদনান ভাইকে ভালোবাসি। তার পর কোনদিন আদনান ভাই আমার সাথে এসব বিষয়ে কথা পর্যন্ত বলেননি। কেননা সে জানে আমি তার। অতীতেও ভালোবাসা হারিয়ে যেতে পারে ভয়েই হয়তো রেগে যেতেন কোনও ছেলেকে আমার পাশে দেখলে। আমি এখন তার সিচুয়েশনটা বুঝতে পারলাম অনেকটা।
তবে আমার জীবনের এই পাঁচটা বছর স্বপ্নের মতো কেঁটেছে হাসি মজা হইচইপূর্ণ দিন ছিলো এক একটা৷ আমাদের কাজিন, বন্ধু মহল। সবাই আছি বেশ দুঃখ সুখ মিলিয়ে! আদনান ভাই বিয়ের আগে আমাকে যতটা আগলে রাখতেন এবং বন্দী ছিলাম বিয়ের পর ততটাই স্বাধীনতা দিলেন! আজ নিজের মতো কাজ করছি পড়াশোনা শেষ করেছি। যখন যা খুশি করি সে বলতেই রাজি। যদিও অযাচিত আমি কিছু চাইনা যা আদনান ভাইয়ের পছন্দ না।
আদনান ভাই নিজেও একেরপর এক বিজনেসে উন্নতি করে যাচ্ছেন। কিন্তু এখনও সে তার দাদুর সাথে কথা বলেনা। কিন্তু নানু এখনও আগের মতোই আমার সাথে সুন্দর ব্যাবহার করেন। জানিনা এগুলা অভিনয় নাকি অন্যকিছু। আমি এতেই খুশি সবাই এক সাথে আছি যেমনটা আমি সর্বদা চেয়েছিলাম। এবং বাবাও এখন আমাদের সাথেই থাকেন ছোট চাচ্চু ভালোই আছেন সেও আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন বহুবার আমার অতীতের জন্য আমি করে দিয়েছি। সুন্দর জীবনে কোন ঘৃণা রাখতে চাইনা আমি। মামা মামীরা সর্বদাই মেয়ে ভেবেছেন আমাকে এখনও তাই আছে। এবং আমি কিছুই হয়নি এর মতো নানুর সাথেও আগে যেমন ছিলাম এখনও তেমনি আছি! আমার বিশ্বাস একদিন আদনান ভাইও সব ভুলে তার দাদুর সাথে আগের মতো হয়ে যাবেন। সেই দিনের অপেক্ষায়। আদৃতা আপু শুনেছি বিয়ে করেছেন উনি এখন লন্ডনে সেটেল্ড ভালোই আছে আমাদের সাথে যোগাযোগ হয় সে নিজেই করে তবে আদনান ভাইয়ের সাথে নয় আমার সাথে শুধু!
দক্ষিনা বাতাস আমার খোলা চুল থেকে থেকে উঁড়ছে। তখন আদনান ভাই পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলেন আমাকে। ৫ বছরে আদনান ভাইয়ের ভালোবাসা যেন দিন দিন বেড়ে গিয়েছে আমার প্রতি সত্যি নিজেকে ভাগ্যবতী ভাবি আজকাল আমি। এতো ভালোবাসা জীবনে পাবো কখনও স্বপ্নেও ভাবিনি। সব সম্ভব করেছে আদনান ভাই। আমি কিছু একটা ভেবে ঘুরে তার দিকে তাকিয়ে উচ্ছ্বাস ভরা কণ্ঠে বললাম,
‘ ঠোঁট কাটা হাসব্যান্ড আপনার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে! ‘
আদনান আমার কপালে চুমু খেয়ে বললেন,
‘ আমি বাবা হবো আগে কেন বললে না? ‘
যাহ কাকে আমি সারপ্রাইজ দিতে গেলাম? সে নিজেই আমাকে হতভম্ব করে দিলো। আমি কপট রাগ দেখিয়ে বললাম,
‘ আপনি কিভাবে জানলেন? আপনার জন্য সারপ্রাইজটাও দিতে পারলাম না হাসব্যান্ডকে! ‘
বলতে বলতে দেখলাম আদনান ভাই জ্বল জ্বল চোখে তাকিয়ে আমার দিকে। করুণ দৃষ্টি তার ! এবার আমি নরম হয়ে এলাম। আস্তে তাকে জড়িয়ে ধরলাম। আদনান ভাই অতিরিক্ত খুশিতে কেঁদে ফেলেছেন। আমি নিজেও তো কেঁদে ফেলেছিলাম যখন প্রথম যেনেছিলাম। ওয়ান অফ দ্যা বেস্ট নিউজ ছিলো এটা আমার জন্য আমি জানি আদনান ভাইয়ের জন্যেও তাই। আমাদের জীবনে নতুন এক অধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে। আমি আদনান মা-বাবা হওয়ার সুখ পেতে চলেছি…. এ এক অন্যরকম অনুভূতি যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না এটা অনন্য অসাধারণ ফিলিং!
আদনান ভাই খুশি কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে ফিসফিস করে বললেন,
‘ আমাদের একটা প্রিন্সেস হবে বিউটিফুল! ‘
তার কথা মেজাজ চটে গেলো। আমি ধাক্কা দিয়ে উনাকে সরিয়ে দিয়ে সরু চোখে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘ কে দিলো এই নিউজ আপনাকে? আমার ছেলে হবে এক দম আপনার মতো! হুহ! ‘
আদনান ভাইও রেগে বলল,
‘ মেয়ে হবে আমার মেয়ে চাই ঠিক তোমার মতো! ‘
সে এটা বলতেই। ব্যাস লেগে গেলো আমাদের ঝগড়া। একদম বিশাল ঝগড়া। এক সময় দুজনেই হাপিয়ে উঠলাম। ছেলে হবে মেয়ে হবে বলতে বলতে আদনান ভাই আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
‘ আই লাভ ইউ অয়ত্রী! আমার সবটা জুড়ে তুমি। তাই তুমিময় একটা মেয়েই আমার চাই! ‘
আদনান ভাইয়ের ভালোবাসা আদর মাখা কণ্ঠে গলে গেলাম আমি আস্তে বললাম,
‘ আমাদের মেয়েই আসবে! ‘
সঙ্গে সঙ্গে আদনান ভাই বাঁকা হেসে বললেন,
‘ আমার বোকারানী! আমি জিতে গেছি!’
আমি ঠোঁট উল্টিয়ে গাল ফুলালাম। অতঃপর এক সময় দুজনেই হেসে উঠলাম! এভাবে কেটে যাক প্রতিটা ভালোবাসাময় একেকটা দিন রাত মাস বছর…।
আকাশ পাতাল নড়ে উঠুক,
ভালোবাসারা ভালো থাকুক,
সমাপ্ত!