তুমি আসবে বলে পর্ব -০১

ছোট ভাইয়া প্লিজ “ও” কে কিছু করো না। তোমার দু’টো পায়ে ধরি। ওদের কে প্লিজ বলো “ও” কে যেনো না মারে। প্লিজ ছোট ভাইয়া…[বলে কান্না করতে করতে মেয়েটি তার ছোট ভাইয়ার হাত থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগল]

মেয়েটির আকুতি মিনতি ভরা ডাকে সাড়া দিলো না তার ছোট ভাইয়া। মেয়েটির ভাইয়া স্বাভাবিক ভাবে সামনে দিকে তাকিয়ে আছে।

তাদের থেকে কিছু দূরে কয়েকটি ছেলে মিলে একটা ছেলেকে মারতে মারতে মাটিতে ফেলে দেয়। ছেলেটির কপাল,ঠোঁট,নাক কেটে রক্ত বের হচ্ছে। সেই দিকে খেয়াল না করে ছেলেটি মাটি থেকে উঠে ছেলে গুলোকে তার নিজের কাছ থেকে সড়িয়ে দিয়ে মেয়েটির ছোট ভাইয়কে বলে….

ছেলেটিঃ আয়ান মির্জা আজ এই মূহুুর্তে আমাকে মেরে ফেলো। যদি আজ আমি কোনো ভাবে বেঁচে যায় তাহলে আমি তোমাদের কাওকে শান্তিতে বাঁচতে দেবো না।

ছেলেটির কথা শুনে আয়ানের রাগ যেনো বেড়ে গেলো। আয়ান তার কোমর থেকে রিভলবার বের করে ছেলেটির দিকে তাক করে। মেয়েটি বন্দুক দেখে ভয়ে পেয়ে যায়। সে আকুতি ভরা কন্ঠে আয়ানকে বলে….

মেয়েটিঃ ছোট ভাইয়া প্লিজ তুমি অর্ণব কে কিছু করো না। আমি অর্ণব কে ভালোবাসি। প্লিজ ছোট ভাইয়া।

আয়ানঃ অন্তু তোকে স্বাধীনতা দিয়েছি বলে এটা ভাবিস না যা ইচ্ছা তাই করবি। এই অনাথ আর মিডিল ক্লাস ছেলের জন্য তুই বড় আব্বুর সম্মান নষ্ট করবি তা আমি কিছুতেই হতে দেবো না। তার থেকেও বড় কথা তোর বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। এই বিয়ে না হলে বড় আব্বুর রাজনৈতিক কেরিয়ার ক্ষতি হবে আর আমাদের পরিবারের সস্মান নষ্ট হবে তা আমি হতে দেবো না।

অন্তু তার ছোট ভাইয়ার কথা শুনে কান্না করতে লাগলো। আয়ানকে রিভলবারের টিগার চাপতে দেখে অন্তু ভয় পেয়ে যায়। সে কিছু না ভেবে আয়ানের হাতে কামর দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। হঠাৎ ধাক্কা লাগায় আয়ান একটু দূরে গিয়ে পরে। একদিকে অন্তু দৌড়ে অর্ণবের কাছে গিয়ে তাকে জরিয়ে ধরে। অর্ণব অন্তুকে তার থাকে ছাড়িয়ে অন্তুর গালে তার হাত দিয়ে বলতে লাগলো….

অর্ণবঃ অন্তু আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আমি প্রমিজ করছি তোমাদের কে আমি নিতে আসবো খুব শিগগিরই। তুমি আমাকে প্রমিজ করো যে কোনো পরিস্থিতিতে তুমি নিজের ক্ষতি করবে না আর তার খেয়াল রাখবে। আমি আসবো তোমাদের কাছে এসে তোমাদের কে এই নরক থেকে নিয়ে যাবো। আমি না আসা পযর্ন্ত আমার জন্য অপেক্ষা করো আমি তোমাদের কাছে আসবো প্রমিজ। কথা দাও আমাকে ছুঁয়ে অন্তু……

অন্তু তার হাত বাড়িয়ে অর্ণবকে ছুঁয়ে বলতে লাগলো…..আমি কথা দিচ্ছি আমি তোমার ফিরে আসার শেষ প্রহর অব্দি অপেক্ষা করবো।

অর্ণব অন্তুর কথা শুনে তার ঠোঁটের কোণেয় তৃপ্তি হাসি হাসলো। অর্ণব অন্তুকে হালকা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলে ঠিক তখনি একটা গুলি এসে তার বুকে লাগে সে ছিটকে পাহাড় থেকে নিচে নদীতে পড়ে যায়। আকস্মিক ধাক্কা লাগায় অন্তু হকচকিয়ে যায় নিজেকে সামলে যখন দাঁড়ায় তখন দেখে একটা গুলি এসে অর্ণবের বুকে লেগে এবং সে নিচে পড়ে যায়। তা দেখে অন্তু স্তব্ধ হয়ে যায় নিজের সামলাতে না পেরে মাটিতে হাটু গেরে বসে পরে। অন্তুর চোখ থেকে অঝোরে জল পড়তে থাকে অন্তুর সাথে আজ আকাশ ও পালা দিয়ে কাঁদছে। আজ এক জোরা ভালোবাসার মানুষ শুধু ধনী-দরিদ্র বৈষম্য টানা পরনে শেষ হয়ে গেলো……
___________________________🍁🌿🍁

“অর্ণবববববব” বলে চিতকার করে ঘুম থেকে উঠে পেরে অন্তু। তার শরীর ঘেমে জবজব করছে হালকা শরীর কাপতে থাকে। তার মস্তিষ্ক শুধু একটা কথাই বলছে তাকে অর্ণবের কাছে যেতে হবে। অন্তু বেড থেকে নেমে দরজা খুলতে লাগলে সে বুঝতে পারে দরজা বাইরে থেকে বন্ধ। অন্তু দরজা ধাক্কাতে লাগলো আর বলতে লাগলো… দরজা খলো আমি অর্ণবের কাছে যাবো…দরজা খলো..

দরজা খুলতে না দেখে অন্তু পাগলের মতো করতে লাগলো। সে তার রুমের সব কিছু ভাঙতে লাগলো যার ফলে তার হাত কেটে যায়।

অন্তুর চিতকার শুনে মির্জা বাড়ির সবাই অন্তুর রুমের কাছে আসতে লাগলো। আয়ান তাড়াতাড়ি করে অন্তুর রুমের দরজা খুলে ভেতরে গিয়ে যা দেখে সে স্তব্ধ হয়ে যায়া। দেখে অন্তু পাগলামি করছে। আয়ান তাড়াতাড়ি করে অন্তুর কাছে গিয়ে তাকে থামাতে লাগলো। কিন্তু অন্তু শুধু বিড়বিড় করে বলতে লাগলো…. আমাকে যেতে দাও অর্ণব এসেছে আমাকে নিতে ছাড়ও। [বলে আয়ানকে নিজের কাছ থেকে সরাতে লাগলো।

অন্তুকে পাগলামি করতে দেখে আয়েশা মির্জা (অন্তুর দিদুন) কান্না করতে করতে বলতে লাগলো…

দিদুনঃ অন্তু দিদিভাই এমন পাগলামি করে না শোনো আমার কথা তোমার আঘাত লাগবে তো।

দিদুন কে কান্না করতে দেখে অরনি মির্জা(অন্তুর চাচাত বোন) এসে তার দিদুবকে সাইড থেকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো….

অরনিঃ দিদুন কান্না করো না প্লিজ। [তারপর অন্তুকে বললো] দিদিয়া শান্ত হ প্লিজ কিছু হয় নাই। এমন পাগলামি করিস না।

আজাদ মির্জা(অন্তুর বাবা) অন্তুকে পাগলামি করতে দেখে চোখে জল চলে আসে। সে কিছু বলতে যাবে তার আগে নিহিতা মির্জা( অন্তুর চাচী) বলতে লাগলো…

নিহিতা মির্জাঃ আমি আগেই বলেছিলাম এই মেয়েকে পাগলা গারদে রেখে আসো। না তোমরা আমার কথা শুনলে না দেখো আজ ৪ বছর ধরে এমন পাগলামি করে আসছে। রাতে ঘুমাতে দেয় না। উফফ [বলে মুখ বাঁকালো]

ওখানে উপস্থিতি সবাই নিহিতার মির্জা কথা শুনে রেগে যায়। অরনি রেগে তার মাকে কিছু বলতে যাবে তার আগে আয়ান উঁচু গলায় বলতে লাগলো…

আয়ানঃ মা অন্তু পাগল না কতবার বলেছি তোমাকে। ওর প্যানিক এ্যাটাক হয়েছে আর তাই এমন করছে। অন্তু এখনে ঠিক হয়ে যাবে। তাই চুপ করো তুমি

নিহিতা আয়ানের কথা শুনে রেগে গেলেও কিছু বলো না। হঠাৎ অন্তু ফুলদানি দিয়ে আয়ানের মাথায় লাগে আর কপাল কেটে যায়। এতে আয়ান অহহ বলে ওঠে। ছেলের কপাল থেকে রক্ত বের হতে দেখে নিহিতা মির্জা চিতকার করে বলতে লাগলো….

নিহিতা মির্জাঃ এই দেখো পাগল মেয়ে কি করলো আমার ছেলেটাকে মেরে ফেলো গো। এই মেয়ে ছাড় আমার ছেলেকে। কতটা কেটে গেছে রক্ত বের হচ্ছে। [নেকা কান্না করতে লাগলো]

আকাশ মির্জা তার বউ এর এমন কাজে মাথা নিচু করে থাকলে ও এখন জোরে বলে উঠলো…নিহিতা আর একটা কথাও না যাও এই রুম থেকে। যাও বলছি।

নিহিতা আকাশের কথা শুনে রেগে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলো তার পিছু পিছু আকাশ ও চলে গেলো। অরনি ও আয়ান তার মার আচারনে রাগ ও লজ্জা লাগলো। আজাদ মির্জা আয়ান কে বলতে লাগলো…

আজাদ মির্জাঃ আয়ান অন্তুকে ইনজেকশন টা দাও না হলে ও পাগলানি করতে থাকবে।

কিন্তু আয়ান তার কথার না শুনে অন্তুকে থামাতে লাগলো কিন্তু কিছু করতে পাচ্ছে না। আয়ানকে তার কথা মানতে না দেখে সে নিজে ইনজেকশন নিয়ে এসে অন্তুকে দিয়ে দেয়। তারপর তিনি রুম থেকে চলে যায়। এদিকে অন্তু আস্তে আস্তে পাগলামি করা বন্ধ করে দেয়। দিদুন অন্তুকে পাগলামি করতে না দেখে আয়ানকে বলতে লাগলো…আয়ান দাদুভাই অন্তু দিদিভাই কে ওর বিছানাই শুয়ে দাও বলে তিনি চলে গেলেন।

আয়ান অন্তকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে তার মুখের ওপর থেকে চুল সরিয়ে দিয়ে দেখে কোথায় কোথায় লেগেছে। দেখো হাতে আর গলায় লেগেছে। আয়ান ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে এসে হাতে আর গলায় লাগাতে লাগলো৷ আয়ানের চোখের কোণায় জল চলে আসে। আয়ান কে ঔষুধ লাগতে দেখে অরনি বলতে লাগলো…

অরনিঃ যাকে এত আঘাত দিয়েছিস আর এখন ঔষধ লাগালে সেই কষ্ট আর আঘাত কমবে না তাই ছেড়ে দে আমি করে দেবো। দিদিয়াকে একটু শান্তি দে আজ ৪ বছর ধরে অনেক কষ্ট, আঘাত পেয়েছে শুধু তোর জন্য তাই ওকে ওর হালে ছেড়ে দে৷ দিদিয়ার জীবন নষ্ট করে এখন ঔষধ লাগালে সেই জীবন ঠিক হবে না। রুম থেকে চলে যা।

এদিকে অরনির সব কথা আয়ানের কষ্ট আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। বুকের ভেতর জ্বলে যাচ্ছে তার জন্য তার এক বোনের জীবন নষ্ট হয়েছে আর আরেক বোন তার সাথে ভালো করে কথা বলে না। আয়ান ঔষুধ লাগিয়ে উঠে অরনিকে কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলে তার রুমের দিকে।

এদিকে, আয়ান চলে গেলে অরনি অন্তুর কাছে এসে বসে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বলো…দিদিয়া তোর কষ্ট আমি সয্য করতে পারছি না। আর কিছু দিন তারপর সব ঠিক করে দেবো। তুই আবার আগের মতো হাসি খুশি থাকবি আই প্রমিজ।[ বলে নিজের চোখের জল মুছতে লাগলো]

অন্তু বিড়বিড় করে বলতে লাগলো…সরি অর্ণব আমি তাকে ধরে রাখতে পারি নাই বলে তুমি রাগ করে আমার কাছে আসছো না। প্লিজ রাগ করো না আমি অনেক কষ্টে আছি আমাকে নিয়ে যাও প্লিজ।

বলে ঘুমে তলিয়ে গেলো আর তার মুখের সামনে হাসি মুখে অর্ণব বলতে লাগলো…আই লাভ ইউ অন্তু

এদিকে, অরনি অন্তুর কথা শুনে ফুপিয়ে কেঁদে দেয়। কান্না করতে করতে বলতে লাগলো…দিদিয়া সব ঠিক হয়ে যাবে। তোমার ভালোবাসা তোমার কাছে চলে আসবে দেখেনিস। তুই একটু ধৈর্য ধর প্লিজ দেখিস সে আসবে।

বলে অন্তুর কপালে চুমু দিয়ে উঠে দাড়ায় তখন অরনির ফোনে ফোন আসে। সে ফোনের স্ক্রনে ওপরে নাম দেখে ভয় পেয়ে যায়। অরনি একবার ফোনের দিকে আবার একবার অন্তুর দিকে তাকিয়ে ফোনে রিসিভ করে ওপস থেকে যাব বলে তাতে অরনি ভয় পেয়ে যায়…

🍁🌿🍁

#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-১
🍁🌿🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here