১৯+২০+২১+২২
#তুমি~হলেই~চলবে 🍁
#writer~হাফসা~আলম 🍂
১৯.
.
.
বিছানায় উপুত হয়ে শুয়ে আছি। পশ্চিমের জানালা দিয়ে কড়া রোদ আসছে।এত রোদের মাঝেও শীতলা বিরাজমান। হুহু করে যে বাতাস বইছে তার কারনেই এই শীতলতা।কটা বাজে খবর নেই আমার। মাথাটা কাত করে দেখতেই ঘড়িতে ১টা ছুঁই ছুই অবস্থা। কিন্তু কেউ রুমে এলনা। না আম্মু না ভাইয়া।আব্বুর অবশ্য আমার ঘুম নিয়ে তেমন মাথা ব্যাথা নেই। কিন্তু আম্মু আর ভাইয়ার সব সময় আমার ঘুম নিয়ে মহা সমস্যা।যাদের এত এত সমস্যা তাদের দেখতে না পেয়ে অবাক হওয়াটাই স্বাভাবিক। ভাড়ি কিছু পিঠে পড়ায় আমার ভাবনার ছেদ ঘটল।আমি ত অবাক হয়ে ভাবছি এত ভাড়ি জিনিসটা কি হতে পারে।আমি নড়েচড়ে উঠতেই দম যেন বন্ধ হয়ে যায় যায়।আমি অনেক কষ্টে ওপাশ ফিড়ে নিজেকে এই মহান জিনিসের ভার থেকে রক্ষা করে জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছি।চোখ তুলে তাকাতেই দেখলাম দিল দাঁত কেলিয়ে পা গুটিয়ে বিছানায় বসে আছে।আমি চরম বিরক্তি সাথে অসহনীয় রাগ নিয়ে বলে উঠলাম….
—এই তোর সমস্যা কি??এভাবে গায়ের উপড় ধাড়াম করে পড়ার কোন মানে হয়?? কি ভারি তুই ইয়ার।আমার কোমড় গেল বলে।আহ্…
.
দিল এবার হাসি বন্ধ করে বলে উঠে….
—বিয়ের কনে যদি এমন হাতির মত ঘুমায় তাহলে তাদের জাগানোর স্টাইলটাও হাতির মত হওয়া চাই..ঠিক করেছি যা করেছি।হু..হ
—বিয়ের কনে মানে কি??আর কার বিয়ে?? কোথাকার বিয়ে?? কেমন বিয়ে?? পাগল নাকি??
.
দিল এবার অবাক হয়ে বলে উঠে…
—তোর অবস্থাটা কি জানোস??যার বিয়ে তার খবর নাই পাড়াপড়শির ঘুম নাই টাইপের।আমার তো মনে হয় বাসর ঘরে তুই আযমান ভাইয়ারে জিগ্যেস করবি কার বাসর??কিসের বাসর??কেমন বাসর??আবাল একটা।তোর জন্যে আমি কাল সারা রাত ঘুমাতে পারিনি তোর বিয়েতে কি পড়ব ভাবতে ভাবতে আর তুই কিনা আরামের ঘুম দিচ্ছিস। আজব মাইরি তুই।
.
দিলের এমন কথা শুনে আমি চট করে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। রুম ত্যাগ করে বাহিরে আসতেই আমি হতবম্ভ বিস্ময়ত সাথে আবার শিহরিত.. সারা বাড়ি সাজানো হয়ে গেছে।ভাইয়া কিছু ফুল আর পর্দা একটা স্টাফকে বুঝিয়ে দিচ্ছে। আমি প্রচণ্ড আগ্রহের সাথে ভাইয়ার সামনে গিয়ে বলে উঠি…..
—এত সাজ কেন ভাইয়া??
—আমার বিয়া তাই??
.
আমি বিরক্তি নিয়ে চোখ কুঁচকে বলে উঠি…
—মজা করবি না ভাইয়া??বল না এগুলো কেন হচ্ছে??
—আজ তোর গায়ে হলুদ কাল তোর বিয়ে তাই হচ্ছে। আর তুই এদিক ওদিক ঘুড়াঘুড়ি না করে যা রুমে যা।
.
এই প্রথম ভাইয়ার সাথে তর্ক না করে আমি আবার আমার রুমে হাটা দিলাম।সত্যি আমার বিয়ে কাল??কিন্তু কই তেমন কিছু ফেল হচ্ছে না কেন??শুনেছি বিয়ের আগে মেয়েদের অন্য রকম অনুভতি হয় কিন্তু আমার হচ্ছে না কেন??কে যানে।রুমে এসে পা ঝুলিয়ে দিলবারের পাশে বসতেই সে চেঁচিয়ে বলে উঠে…..
—যা তুই শাওয়ার নে??আর তাড়াতাড়ি কর এখন থেকেই রেডি হতে হবে।সব জিনিস পাঠিয়ে দিয়েছে আযমান ভাইয়া।
—এত তাড়া কিসের অনেক সময় আছে।বিরক্ত করিস নাত।
.
কে শুনে কার কথা এই মেয়ে শুনবে আমার কথা তাহলেত এই পৃথিবীর যে কি হবে।দিল ধাক্কা দিয়ে ওয়াসরুম ডুকিয়ে দিল…আমিও শাওয়ার অন করে নিচে দাড়িয়ে ভাবছি সত্যিই আমার আর উনার বিয়ে কাল??
.
শাওয়ার নিয়ে আয়নার সামনে চুল শুকানোর চেষ্টা করছি।হঠাৎ ফোনের শব্দে বিছানার দিকে তাকিয়ে অবাক হলাম।দিল হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে। মেয়েটা যে সত্যিই ঘুমায় নি তার প্রমান হল এটি।ফোন কানে দিতেই উনার কন্ঠ ভেসে এসেছে কানে….
—তোমাকে প্রথম হলুদ আমি লাগাবো।মনে থাকে যেন।আর তুমি কিন্তু আটা ময়দা মাখবেনা।মানে মেকাপ করবেনা। তোমাকে এমনেই সুন্দর লাগে।আর সব ফুলের গহনা হবে।ঠিক আছে।
—কেন??
—এত কেনর জবাব দিতে পারবো না।আমি এখন প্লানিং করছি কিভাবে তোমার কাছে আসা যায়।তাই এখন রাখি…
.
আমি হা করে আছি এই লোক যে কত আজগোবি তা আমার জানা হয়ে গেছে।কিন্তু আমাদের বাড়ি আসতে উনার এত কিসের প্লানিং করতে হচ্ছে কে যানে।ঠোঁট উল্টে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আবার চুল শুকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।
.
🍁
.
কাঁচা হলুদ শাড়ি পড়ানো হয়েছে আমাকে।গায়ে সাদা ফুলের গহনা।হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ির ঝমঝম শব্দে মোহনিয় হচ্ছি আমি।চুড়ির ভাঁজে সাদা ফুলের তৈরি মালা।আর সেই মালার সাথে জড়িয়ে আছে বিশাল ঝুমকা।একটু নড়তেই ঝুমুড়ঝুমড় শব্দ করছে।বাড়িময় আলোর ছড়াছড়ি। মেহমানরাও চলে এসেছে।বাড়িতে একটা হৈচৈ পরে গেছে।নানাজান আর নানুজানের সাথেও সবাই চলে এসেছে।ভাইয়ারা এসে আমার সাথে কথা বলে গেছে।এক কথায় সবাই হৈচৈ করে আনন্দ করছে।আমি এখন ড্রেসিন টেবিলের সামনে বসে আছি।সাজ তেমন দেওয়া হল না।আমিই দিতে নিষেধ করেছি উনে বলেছে বলে কথা।দিল অনেক আগে গেছে কি একটা কাজে কিন্তু তার এখনো আসার নাম নেই।আমি ভাবছি উনি কি আসবে?? মনে হয় না।অনেক রাত হয়েগেছে। এত সময়ে আসার হলে চলে আসত কিন্তু যেহেতু আসলনা তবে মনে হয় আর আসবেনা।আমি উঠে দরজার পাশ দিয়ে উঁকি দিলাম। সবাইকে ব্যস্ত দেখা যাচ্ছে। সবচাইতে ব্যস্ত ভাইয়া। সে তার সর্বচ্চ উজার করে কাজ করছে।বড় ভাইয়েরা বুঝি এমনই হয়।হঠাৎ কেউ মুখে হাত দিয়ে চেপে টেনে এনে একহাতে দরজা লাগিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।আমি গোলগোল চোখে তাকিয়ে দেখি উনি দাড়িয়ে আছে।ঠোঁটে তার মিষ্টি হাসি।গায়ে সাদা পাঞ্জাবী। আমি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছি।উনি হাত সরিয়ে ঠোঁট প্রশারিত করে বলে উঠে….
—কি বলে ছিলাম?? আমিই আগে হলুদ লাগাবো।তাই হলুদ লাগাতে এসেছি।
—কিভাবে??মানে কিভাবে এসেছেন??
—কেন?? দেয়াল টপকিয়ে বারান্দা দিয়ে এসেছি।
—এই আপনার লাগে নিত?? কোথাও কেটেঁ ফেলেন নিত??আর এত কষ্টে করার কি আছে বুঝলাম না।দরজা দিয়ে আসলেইত হত।আজব লোক তো আপনি??
—হত না। আমার এখানে আসা নিষেধ বুঝলে আয়ু জান।সব আমার আজাইরা শালিকার কাছ।যাই হোক। তোমাকে এখন নিতে আসবে আর আমাকেও যেতে হবে।
—ত হলুদ কথায়??
.
উনি কিছুদূর হেঁটে হাতের পিছনে কি যেন নিয়ে সামনে এসে দাঁড়ালেন।তারপর হাত বাড়িয়ে দুগালে দুপাশে হলুদ মাখা হাত দিয়ে হলুদ লাগিয়ে দিলেন।আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে উঠি….
—আপনার হলুদ হবে না??
—কে বলেছে হবে না??এখনই হবে।ওয়েট এন্ড সি…
.
বলেই মাথার পিছনে হাত গুঁজে আমাকে তার দিকে ঝুকিয়ে একবার ডান গালের সাথে নিজের বাম গাল ঘোঁষলেন আবার বাম গালের সাথে নিজের ডান গাল ঘোঁষলেন। আমি শক্ট হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।আমাকে দেখলে যে কেউ বলে উঠবে এস্টেচুর অপ লিভার্টি।উনি একবার আমার দিকে তাকিয়ে টপ করে কপালে একটা চুমু একে কানের কাছে এসে ফিসফিসে বলে উঠে……
—কাল থেকে তুমি আমার কাছে থাকবে।সারা জীবনের জন্যে নিয়ে যেতে আসবো।
.
কানের কাছে একটা চুমু খেয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বলে উঠে..
—আমার চাঁদে যাতে কারো নজর না লাগে।
.
বলেই হেঁটে বারান্দা দিয়ে লাফিয়ে কিভাবে কিভাবে নিচে নেমে গেল আমি এখন হা করে আছি।উনি নামার সময় মনে হচ্ছিল আমার প্রানটা যায় যায়।আমি একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে দরজা খুলতেই দিল সহ আরো কিছু মেয়ে ভিতরে ডুকে পরে।আর বলতে থাকে
—চল তোকে নিয়ে যাই।সবাই বলেছে তোকে নিয়ে যেতে।
বলেই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে দিল তো মহা অবাক সে প্রায় চেঁচিয়ে বলে উঠে…..
—.অনুষ্ঠান শুরুই হল না আর তোর হলুদ হয়ে গেল?.
.
আমি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি।কি বলব বুঝতে পারছিনা।ও আবার বলে উঠে….
—এই আয়ু তোর দুগাল ভর্তি হলুদ এল কোথা থেকে???এই সত্যি কথা বলত?? তুই হলুদ পেলি কথায়??আর এই হলুদের রং তো ভিন্ন এটা আমাদের হলুদ না।কে এসেছিল রুমে বলত??দরজা লাগিয়ে কি করছিলি??
—এই তুই বেশি প্রশ্ন করছিস??দেখ ভাইয়া চেঁচাচ্ছে যাওয়া উচিত। তুই ত আমাকে নিতে এসেছিস না??তাহলে দাড়িয়ে আছিস কেন চল।
.
হলুদ শেষ করে রুমে এসে সোজা ওয়াসরুমে ডুকে গেলাম।হলুদ দিয়ে সারা শরীর মাখা মাখা হয়ে আছে।এই হলুদ অনুষ্ঠানে সবচাইতে মহান প্রশ্ন হলুদের অনুষ্ঠানের আগে আমার মুখে হলুদ কোথা থেকে এসেছে??যদিওএই মহান প্রশ্নের কোন উত্তর আমার জানা নেই তবুও কত কিছু দিয়ে কথা ডাকার চেষ্টা করেছি।কিন্তু সর্বশেষ দিলবার ডোল পিটিয়ে বলে দিয়েছে আযমান ভাইয়া আয়ানার গাল হলুদে রাঙ্গিয়েছে।আব্বু আম্মু বাব মা সবার সামনে লজ্জাই আমার অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে।ওয়াসরুম থেকে লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে বারান্দা দাঁড়ালাম। আকাশ ভর্তি তারা।আর তাদের কোন ঘেঁষে একটা মাএ চাঁদের অবস্থান।মাঝে মাঝে মেঘেদের অনাগোনা। মনের মাঝেও এমন হাজার মেঘের অনাগোনা হচ্ছে। একদিকে যেমন প্রাপ্তি অন্যদিকে প্রিয় জনদের ছেড়ে যাওয়ার কষ্ট।বিয়ে মানে একটা মেয়ের নতুন পরিবেশের সাথেই শুধু আলাপ হওয়া না। পুরানো পরিবেশ থেকে নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়াও।মেয়েদের অবস্থাটা সত্যই খুব করুন।উনি তো আমার ছোট থেকেই পরিচিত কিন্তু যাদের সাথে একদম অপরিচিত ব্যক্তির বিয়ে হয় তাদের অবস্থা হয়ত আরো করুন।আম্মু আব্বু ভাইয়া সকলকে খুব মনে পড়ছে।তাদের ছাড়া একা কোথাও থাকা হয়নি।এখন কিভাবে থাকব ভাবছি।মাথায় কারো হাতের কোমল স্পর্শে পাশে তাকিয়ে দেখি আব্বু। আর অপর পাশে আম্মু আর ভাইয়া।আব্বু আদুরে গালায় বলে উঠে….
—কি হল আমার প্রন্সেসের?? এখনো জেগে আছ কেন??রাত অনেক হয়েছে। না গেলে ত কাল শরীর খারাপ করবে। ঘুমাও চল…
.
আমি আর কথা বলতে পারলাম না। ঝাঁপিয়ে পড়ে আব্বুকে জড়িয়ে ধরে গগন কাঁপানো কান্নায় ভেঙে পড়েছি।সাথে সাথে আম্মু আর ভাইয়াও জড়িয়ে নিয়েছে।সবাই কাঁদছে।কিন্তু নিঃশব্দে। যাতে আমি বুঝতে না পরি।ভাইয়া বলেই চলেছে..
—কাঁদিস না।এত কান্নার কি আছে বলত??তোকে বিয়ে দিচ্ছি বিক্রি করে দিচ্ছি না।তাই কান্না থামা। কথায় কথায় ভেবলাকান্তের মত ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদা ছাড়া তোর আর কোন কাজ নেই না।সব সময় কান্না।কাঁদুনি একটা।আব্বু দেখিও একদিনও ও বাড়িতে থাকবেন আবার কাঁদতে কাঁদতে চলে আসবে।দেখ বইন কান্নার জন্যে বিদায়ের টাইম ত আছে তবে এখন কেন কাঁদছিস।তখন আবার চোখে পানি থাকবেনা শুধু টিশু দিয়ে এক্টিন করতে হবে।যদিও তোর চোখে এক সাগর পানি আছে তবুও আমার মনে হচ্ছে সে টাইমে পানির অভাব পরতে পারে।
.
আমি কান্নাজড়িত চোখে একবার তার দিকে তাকালাম।যার নিজের চোখে পানির ছড়াছড়ি সে কিনা বলছে আমাকে চুপ করতে।আমি আবার একবার আব্বুকে চেঁচিয়ে বলে উঠলাম….
—-আব্বু কিছু বল তোমার ছেলেকে।
.
আব্বুও সাথে সাথে আজিম বলে চেঁচিয়ে উঠে।সাথে সাথে ভাইয়া আমাকে জড়িয়ে চিৎকার করে কেঁদে উঠে।আমি প্রচণ্ড রূপে অবাক হয়ে নিজের কান্না ভুলে তাকে জড়িয়ে রেখেছি।আমি কখনো ভাবতেও পারিনি ভাইয়ার মত শক্ত মনের ছেলে এভাবে কান্নাও করতে পারে।ভাইয়েদের ভালোবাসা আসলে এটাই।একটা মেয়ে মনে হয় নিজের আপন জনের ভালোবাসার গভীরতা তার বিয়ের সময় বুঝতে পারে।আমারও তাই মনে হচ্ছে……..
.
কান্না করে গলা ভেঙে গেছে।আমরা সবাই আজ এক ঘরে ঘুমাচ্ছি। আমি আম্মুর কোলে মাথা দিয়ে আর আব্বু, ভাইয়া দুজনের কোলে আমার দুহাত।মাথাটা প্রচণ্ড ব্যাথা হয়ে আছে।ভার ভার লাগছে।কাঁদলে আসলেই ঘুম আসে তাড়াতাড়ি। আমারো এখন প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছে।রাজ্যের ঘুম যাকে বলে আর কি।
.
.
#চলবে……….🍁
.কালে একটা পার্ট দিতে পারিনি তাই আর একটা পার্ট দিলাম।আর একজনে বলেছে শুধু লেখিকাদেরই মাথা ব্যাথা হয় কই পাঠকদের ত হয় না।এটা আমার মনে হয়না।মাথা যখন আছে ব্যাথাও থাকারই কথা।আর আসল কথা হল একটা পার্ট পড়তে কিছুসময় লাগলেও এটা লিখতে অনেক ভেবে লিখতে হয়।হুটকরেই লেখা যায় না।তাই মাথা ব্যাথা থাকলে ফোনের দিকে তাকাতে কষ্ট হয়।তাই লেখাও যায় না।আসা করি লেখদের সমস্যাটা আপনারা বুঝবেন।
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন।
.
#তুমি~হলেই~চলবে 🍁
#writer~হাফসা~আলম 🍂
২০.
.
.
ঘনা লাল লেহেঙ্গায় আমি মুড়িয়ে আছি।সাথে সবুজ ডাইমন্ডের জুয়েলারি। সবই উনার পছন্দের জিনিস।লাল দোঁপাট্টা মাথা জড়িয়ে মুখ ডেকে দেওয়া হয়েছে।চোখে কাজল আর হালকা মেকাপে সাজানো হয়েছে আমাকে।হাত ভর্তি চুড়ি।যাদের মাঝে বিশাল ঝুমকা ঝুঁলে আছে।ভারি লেহেঙ্গার ভারে আমি নুয়ে নুয়ে যাচ্ছি। আয়নার সামনে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে ভালোই লাগছে।আমি উঠে দাঁড়ালাম। নিজের রুমটা আরো একবার দেখে নিলাম।আজ এই রুম ত্যাগ করে নতুন রুমে প্রবেশ করতে হবে আমাকে।নতুন জীবন। সবই নতুন শুধু মানুষ গুলো পরিচিত।এত চিন্তার মাঝেও আমার ঘুম পাচ্ছে ভাবতেই আমার অবাক লাগে।বিয়ে সবার জন্য মজার হলেও বউদের যে বারোটা বাজে এটা হারে হারে বুঝতে পারছি আমি।
.
আমাকে উনার বিপরিত পাশে বসানো হয়েছে।মাঝে ফুলের লম্বা লাইন যার ফাঁকপকর দিয়ে তাকে একটু আকটু দেখা যাচ্ছে। কালো শেরওয়ানীতে দারুন মানিয়েছে।কালো শেরওয়ানীর সাথে লাল পাগড়ী। হাতের ভাঁজে বিশাল উড়না জড়িয়ে ডান সাইডে ফেলে রেখেছে।রজনীগন্ধার সুবাস চারদিকে।ফুলের পর্দাটা রজনীগন্ধা ফুলের।এক সুখ মিশ্রিত কষ্টে আঁকড়ে ধরে আছে আমাকে।দমটা কেমন যেন আটকে আছে।বিয়ের লাস্ট ধাপের আগের ধাপ কবুল বলা।এই ধাপটা পৃথিবীর সবচাইতে ভয়ঙ্কর ধাপ।যা পার করতেই বুকটা প্রচণ্ড ভার ভার লাগে।মনে হয় কেউ দম আটকে দিয়েছে।চারিদিক দিয়ে সবার একটাই কথা কবুল বল…কিন্তু এই শব্দটা তিনটে শব্দের হলেও এটা গলা পর্যন্ত আটকে আসছে।চোখের পানিগুলো ডানা ছাপটে গড়িয়ে পড়ছে।এই মুহূর্তে উঠে দৌড়ে পালাতে ইচ্ছে করছে।মনে হচ্ছে এই জনসমাগম থেকে উঠতে পারলেই আমি দম নিতে পারব।আম্মু এবার আমার পাশে গুটি মেরে বসে বলে উঠে….
—কি হল।বলেদে কবুল।প্রকৃতির নিয়ম এটা মা। সব মেয়েকেই বিয়ে করে স্বামীর সংসার করতে হয় তোকেও হবে মা। কবুল বলেদে।
.
আম্মুকে জড়িয়ে বলে দিলাম কবুল।সাথে সাথে একটা হৈচৈ পড়ে গেল।চারপাশে।আমি আম্মুকে আর ছাড়লাম না তাকে জড়িয়েই বসে রইলাম।কাঁদতে কাঁদতে আমার হিচঁকি উঠে গেছে।আমাকে আর উনাকে একুই আয়নায় মুখ দেখতে দেওয়া হল।উনি আমার দোঁপাট্টার মাঝে নিজের মাথা গুঁজে দিলেন।ডান হাত দিয়ে আমার চোখের পানি মুছে দিতে দিতে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলেন….
—বোকা মেয়ের মত কাঁদছ কেন আয়ু জান??আমি তোমাকে তোমার বাড়িতে আর আসতে দিবনা নাকি??তুমি না হয় দিনের বেলায় যখন আমি অফিসে থাকব তখন এখানে এসে থাকবে আর আমি এসে নিয়ে যাবো।তাও কেঁদনা প্লিজজ। তুমি কাঁদলে আমারও কষ্ট হয়।আর আমি তো আছি নাকি।আমি থাকতে তোমার এত কিসের কষ্ট জান।আর কান্না না।প্লিজজজ।
.
বিয়ে মানেই মহান ঝামেলা। আমার এখন তাই মনে হচ্ছে।এদিক থেকে ছবি তুলতে বলে ওইদিক থেকে তুলতে বলে।একদম ভালো লাগছেনা।মাথাটা কেমন যেন করছে।আমি এদিক ওদিন দেখছি নিজের প্রিয় বাড়ি ছেড়ে যেতে আমার মোটেও ইচ্ছে করছেনা।এই বাড়িতেইত আমি বড় হয়েছি।আম্মুর বকা আব্বুর ভালোবাসা আর ভাইয়ার সাথে খুনসুটি করে দিনগুলো কত আনন্দের সাথে পার করে দিলাম।কত কত ভালোবাসায় গড়া এই সম্পর্ক গুলো।আর এত ভালোবাসার মানুষদের ছেড়ে এক নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে।কিন্তু কেন এমন হয়??এমনটা নাহলে হয় না??না হয়না।এই নিষ্ঠুর পৃথিবীর শেষ উত্তর এটাই।যা যতই অপ্রিয় হোক না কেন এটা আমাদের শুনতেই হবে।পৃথিবীতে নারীদের সবচাইতে অপ্রিয় সময় হল বিদায় বেলা।কান্নাজুড়ে দিয়েও মেয়েরা এই বেলায় জিততে পারেনা।আমার বেলাও তাই হয়েছে।উনি এক হাতে আমার হাত ধরে রেখেছে।আমি হাঁটতে পারছিনা মাথাটা কেমন ঘুড়ছে।চোখ ফুলে গেছে তাই সব ঝাপসা লাগছে।আব্বু আর ভাইয়াও প্রচুর কেঁদেছে।আমি গাড়িতে বসে আছি।মাথাটা উনি বুকে চেপে রেখেছে।চোখের পানি উনার শেরওয়ানী ভিজেঁ একাকার।উনি বার বার থামতে বলছে কিন্তু কান্নারা আমার সঙ্গ ত্যাগ করতে চায় না।এ বেলায় কান্নারাই সঙ্গী।উনি আমার হাতগুলো নিজের বুকের সাথে চেপে নরম গলায় বলে উঠে……
—এভাবে কাদেঁ না আয়ু।আমি কি তোমাকে বিক্রি করে দিচ্ছি নাকি??শুধুত নিজের গাছের ফুল নিজের কাছে রাখতে চাচ্ছি। এত কান্না কোথায় পাচ্ছ বলত??এভাবে বাচ্চাদের মত কাঁদবেনা?? কষ্ট হয় তো।ভীষণ ভাবে।তোমার চোখের প্রতিটি ফোটা পানি আমার কলিজায় তীরের মত লাগে।বুঝনা তুমি??এভাবে কাদেঁ না।আমার মিসিং পাঁজর তুমি তোমার কিছু হলে এই খানে তিব্র ব্যাথা লাগে।একদম বাঁ পাশে।
.
উনি যত্নের সাথে আমার চোখ মুছে দিলেন।হাতের আঙ্গুল গুলোর ভাঁজে নিজের আঙ্গুল গুলো নিয়ে আমাকে জড়িয়ে নানা কথা বলে আমাকে হাসাতে চাচ্ছে।গাড়ি উনাদের বিশাল গেট ত্যাগ করে বাড়ির সামনে প্রবেশ করেছে।সবাই আগে থেকেই অপেক্ষায় ছিল।মা বরন করে আমাকে।আমি উনাদের বাড়ির চোকাটে দাঁড়িয়ে আছি।এবাড়ির নিয়ম অনুযায়ী উনি আমাকে কোলে নিয়ে ঘরে ডুকবে।উনি আমার ভারী লেহেঙ্গা সহ আমাকে কোলে নিতেই সবাই একবেলা হেঁসে চেঁচিয়ে উঠল।বড়দের সামনে বেশ লজ্জা লাগছে।আমি মাথা কাত করে উনার শেরওয়ানী খামছে আছি।উনি আমাকে সোফায় বসিয়ে দিয়েছে।মালিহা আপুকে আমি এত ভিড়ের মাঝে এখনই দেখছি।উনি আমার পাশে এসে বসে পরে।আমি অবাক হোই।উনি যে আমাকে মোটেও পছন্দ করেনা এটা আমার জানা আছে।উনি আমার হাতগুলো নিজের হাতে নিতেই যেন আমি আকাশ থেকে পড়েছি এমন অবস্থা হল।উনি যেমন ব্যক্তিত্ব বহন করে তাতে এটা অস্বাভাবিক কাজ।উনি বলে উঠে…..
—শেষ মেষ তুমিই আযমানের বউ হলে।ভালো। ওর বউ হওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।যাই হোক আসল কথা তোমার সাথে আমি মাঝে মাঝেই খারাপ ব্যবহার করতাম তাই স্যরি।
.
বলেই উঠেগেলেন আমি তো শিহরিত তার কথা শুনে এই মেয়ের মাঝে এত পরিবর্ত কিভাবে??মালিহা আপু উঠে আমার হাত ধরে আমাকে উপড়ে নিয়ে যাচ্ছে। আশ্চর্য ব্যাপার। মালিহা আপুকে নিয়ে আমার ভাবনার ইতি টেনে উনার রুমে যাওয়া নিয়ে চিন্তায় এখন আমার মাথা ঘুড়ছে।ভয়, লজ্জা মিশিয়ে এক অদ্ভুত অনুভুতি হচ্ছে।বুকটা ক্রমশ ধাকধাক ধুকপুক করছে। উনার রুমে আমাকে রেখে মালিহা আপু একটা মলিন হাসি দিয়ে চলে গেলেন।আমি ঘুড়ে ঘুড়ে দেখছি।রুম জুড়ে ফুলের ঘ্রাণের ছড়াছড়ি।একেই বলে ফুলসজ্জা। সাদা পর্দার ভাঁজে ভাঁজে ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।সাথে ক্যান্ডেল দিয়ে সাজানো হয়েছে ফ্লোরের চার কোণা।আমি ঘুড়ে ঘুড়ে সব দেখছি।হঠাৎ দরজার শব্দে পিছনে ঘুড়ে তাকিয়ে উনাকে দরজার সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমি চোখ নামিয়ে নিলাম।সাদা একটা পাঞ্জাবী গায়ে।ঠোঁটে তার মিষ্টি হাসি।উনি এক পা একপা করে আমার সামনে এসে দাড়াঁতে আমি উনাকে সালাম করলাম।পা ছুঁয়ে সালাম করতে যাব উনি আমার দু’বাহু চেপে দাঁড় করিয়ে বলে উঠে…..
—-ওই জায়গাটা তো তোমার নয় আয়ুজান। তোমার জায়গা তো আমার এই বুকের বা পাশে।তোমাকে আমি ঠিক আমার হৃদপিন্ডের মত যত্নে রাখতে চাই বুঝলে।
.
বলে উনি আমাকে কোলে তুলে নিলেন।তারপর হেঁটে ব্যালকুনিতে নিয়ে দাঁড় করিয়ে দিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে বলে উঠে…..
—দেখো তোমার জন্যে এই সাদা গোলাপের গাছ লাগিয়েছি।গাছগুলো ব্যালকুনি বেয়ে উঠে গেছে।কত ফুলফুটেছে দেখছ।এগুলো সব তোমার।সবাই তো প্রিয়তমাকে ফুল দেয় আমি না হয় গাছ দিলাম।আমার ভালোবাসাটা না হয় অন্যরকম। ফুল তো শুকিয়ে যায় সাথে সাথে নিজের রূপ রং সৌন্দর্য সব হারায়।কিন্তু গাছ যত দিন থাকবে তত দিন তোমাকে ফুলদিবে।আমি তোমাকে একগুচ্ছ গোলাপ না একগুচ্ছ গাছ দিলাম।এদের মাঝে তুমি তোমার নিজের আবেগ অনুভুতি আর ভালোবাসা ডেলে দিয়ে যত্ন করবে।আর সে যত্নের ফল হিসেবে তুমি একগুচ্ছ গোলাপ পাবে।দোকানের গোলাপ কখনো এই গোলাপের মত ভালোবাসায় মিক্সিত হয় না।যেহেতু এগুলো যত্ন করে আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে ফুটিয়েছি সেহেতু এগুলো আমি তোমাকে দিলাম।আমার একগুচ্ছো ভালোবাসা শুধু তোমার জন্য আয়ুজান।এখনও কাঁদবে নাকি??তুমি কাঁদলে কলিজায় কেউ ছুড়ির আঘাত করে এমন লাগে। বুঝলে আয়ুজান।
.
বলেই ঘাড়ে ঠোঁট বুলাতে শুরু করে।আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ফুলগুলোর দিকে।কি সুন্দর ফুল।ব্যালকুনিটাকে নিজেদের সৌন্দর্যে আরো সুন্দর করে তুলেছে।আমি পিছনে ঘুড়ে তাকে দু হাতে জড়িয়ে নিলাম।উনিও আমার কোমড় জরিয়ে মায়াবী কন্ঠে বলে উঠে….
—ভালোবাসি আয়ুজান।
.
আমি তার দিকে ফিড়তেই উনি নিজের পকেট থেকে কি যেন বের করলেন।ভালোভাবে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম একটা বক্স।উনি বক্স থেকে একটা লকেট সহ চেইন বের করে আমাকে আবার ঘুড়িয়ে গলায় পড়িয়ে দিলেন সাথে ঘাড়ে একটা চুমু খেলেন।আমার সারা শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেল।মুহূর্তে আমি চোখ বুজে নিলাম।উনি এবার আমার পায়ের কাছে বসে পড়লেন।আমি অবাক হয়ে দু’কদম পিছনে চলে গেলাম। উনি আবার সামনে এসে।লেহেঙ্গার নিচ থেকে আমার একটা পা নিয়ে নিজের হাটুভাঁজে রাখলেন।আর খুব যত্নে এক এক করে আমার দু’পায়েএকজোড়া নুপুর পরিয়ে দিলেন। আমার দিকে একবার চোখতুলে তাকিয়ে আমার পায়ের পাতায় চুমু খেলেন।সাথে সাথে আমার সারা শরীর কেঁপে উঠল। তারপর দাড়িয়ে আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে বলে উঠে…..
—আমার প্রতিটি সকাল হবে তোমার নুপুরের রিমিঝিমি শব্দে। আমার চোখ খুলবে তোমার ভিজাঁ চুলের ছাপ্টানিতে।আমার ঠোঁটে হাসি ফুটবে তোমার এই মায়াবী মুখের খিলখিল হাঁসিতে। আমার দুপুর হবে তোমার মিষ্টি সুরের আপনি ডাকে।আমার বিকেল হবে তোমার হাসি মুখে নিজেকে হারিয়ে। আমার সন্ধ্যা হবে তোমার সাথে সন্ধ্যা তারা দেখে। আমার রাত হবে তোমার সাথে চাদঁ দেখে আর মধ্যরাতে তোমাতে বিলিন হয়ে।আমি চাই তোমার মুখ দেখে প্রতিটি সকাল উপভোগ করতে।তোমার অস্তিত্বে নিজেকে হারাতে।চাই পড়ন্ত বিকেলে তোমার হাত ধরে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে হাঁটতে। চাই বহু পথ তোমার হাতে হাত রেখে চলতে।চাই শিশির ভেজা সবুজ ঘাসের বুকে তোমার পায়ে পা মিলিয়ে চলতে। চাই গোধূলি বেলায় তোমার মুখে রোদের লাল কিরণের মিক্সরনে দেখতে।তোমার ভালোবাসাময় মায়াবী আঁচলে নিজেকে লুকাতে।আমি শিউলিতে ডাকা সাদা মাঠে তোমার কোল ঘেঁষে ঘুমাতে চাই।চাই প্রতিটি রাতে তোমার চুলের সাথে খেলে চাঁদের আলোয় আমাদের রাঙ্গাতে।চাই তোমাতে মিশে নদীর পাড়ের বালির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে।তোমার ঘামে ভেজাঁ আঁচলে আমি আমার কপালের ঘাম মুছতে চাই। আমার এমন হাজারও চাওয়ার মাঝে আমি শুধু তোমাকে চাই।আমার সব জুড়ে শুধু তুমি হলেই~চলবে। শুধু তুমি।
.
কথাগুলো বলে উনি আমার ঘাড়ে মুখ গুঁজেছে।দুই একটা টুপ টাপ চুমু খেয়ে আবার মাথা তুলে বলে….
—আমি তোমার সাথে ওই চাঁদের সৌন্দর্য ভাগ করে দেখতে চাই।কি সুন্দর আলো না??ঠিক তোমার মত।আমি তোমাকে চাই।শুনতে পাচ্ছ তুমি। শুধু তোমাকে।
.
কথাটা বলেই উনি কোলে তুলে নিলেন।আমি লজ্জায় তার গলা জড়িয়ে বুকে মুখ গুঁজলাম। শুরু হল নতুন পথ চলা।এক ভালোবাসায় ভরা জীবন।যার শুরু উনার কোমল ঠোঁটের সুপ্ত অনুভুতির ছোঁয়ায়।
.
.
#চলবে…………🍁
.
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন……….🍁
#তুমি~হলই~চলবে🍁
#writer~হাফসা~আলম🍂
২১.
.
.
কেঁটে গেছে তিনটি বছর।এই তিনটি বছরে আমি আযমানের ভালোবাসায় ভেসেছি।তবে এই তিনটে বছরে সবচাইতে যদি কার জীবনে বেশি পরিবর্ত আসে সে হল দিল।দিলের মনে হয় সত্যিই জমজের কারখানা হবে।তার দুটি কিউট জমজ বাচ্চা আছে।দুজনেই ছেলে।বলে ছিলাম একটা বেবি দিয়ে দিতে বলে কিনা আমার মেয়েকে সে তার ঘরের বউ করবে।এটা আধো সম্ভব কিনা কাল পর্যন্ত আমি জানতাম না কিন্তু একটা রিপোর্ট আজ সব পরিবর্তন করে দিয়েছে।আযমান আমাকে এতটাই ভালোবেসেছে এতটাই যত্ন দিয়েছে, কিন্তু বিনিময়ে আমি তাকে কিছুই দিতে পাড়লাম না।কিন্তু তিন বছর তিন তিনটে বছর পরে তাকে কিছু দেওয়ার মত সৌভাগ্য হয়েছে।অনেক লোক এই তিনটে বছর অনেক কথা শুনিয়েছে সব কিছুকে উপেক্ষা করে সে আমার হাত আঁকড়ে ধরেছে।কিছু মুহূর্তের জন্যেও ছাড়েনি।সবার এত এত প্রশ্নের জবার সে নিজে দিয়েছে।সব আঙ্গুলগুলো নিজের দিকে ফিড়িয়ে নিয়েছে।আমার সাথে ডাল হয়ে ছিল।আসলেই হাজ্যাবেন্ড মানেইত এটা।আমি তো তারই অর্ধাঙ্গিনী। এটা সে হারে হারে এই তিন বছরে বুঝিয়েছে।
.
আমি অপেক্ষায় আছি উনি কখন বাসায় আসবে।আর দিন আগেই আসে তবে আজ কেন এত দেড়ি করছে কে জানে।সোফায় বসে পা দুলাচ্ছি।দুলাতে দুলাতেই কখন যে ঘুমিয়ে গেছি বুঝতেই পাড়লাম না। হঠাৎ কারো হালকা ছোঁয়ায় আমার ঘুম ভেঙে গেল।আমি টিপটিপ করে চোখ খুলে দেখলাম উনি আমার মাথায় হাত দিয়ে টেম্পারেচার চেক করছে।আমি একটু নড়ে উঠতেই উনি বলে উঠে…..
—তোমার কি হয়েছে??এখানে কেন ঘুমালে??এত সুন্দর বেড কি আমি তুলে রাখার জন্যে কিনেছি নাকি।তুমি ওখানে না ঘুমালে ওটা আমার আর দরকার নেই।ফেলে দিব কাল।
.
আমি তাকে দেখেই লাফিয়ে উঠেছি।উনি আমার পাশে বসে ল্যাপটপ নিয়ে কি যেন করছে।তবে সে দিকে আমার আগ্রহ নেই বললেই চলে।আমার সব আগ্রহ হচ্ছে তাকে কথাটা বলার মাঝে।আমি উনার দিকে ঘুড়ে বসলাম।হাঁসি হাঁসি মুখে তার দিকে তাকালাম।উনি আমাকে এভাবে তাকাতে দেখে ভ্রু কুঁচকাল।ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠে….
—এভাবে দাঁত কেলানোর মানে কি???নতুন কোন ফালতু কথা বলার হলে আগেই চুপ করে যাও।মাথা ব্যাথা করছে।তোমার ওই সব বকবক শুনতে আমি ইচ্ছুক নই আয়ুজান।
.
আমি হাঁসি বন্ধ করলাম না।আরো হাঁসির গতি বাড়িয়ে দিলাম।উনি হয়ত ভেবেছে আমি তাকে প্রতি দিনের মত আবার বিয়ের কথা বলব।দু’বছর উনার কান আমি খেয়ে ফেলেছি বিয়ে করেন বিয়ে করেন বলে।যবে থেকে বুঝতে পাড়লাম মা হওয়ার সৌভাগ্য হবে না তবে থেকে তাকে বাবা হওয়ার প্রাপ্তি দিতে চেয়েছি তাই বিয়ে করতে বলেছি।কথাটা বলতে আমার যে কষ্ট হয়নি তা কিন্তু নয় তবে কাউকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চাই নি।ডাক্তার বলেছে আমার প্রবলেম উনার না তাই তাকে বিয়ে করতে বলা।এটা শুনে বলে আমি সবার আগে মার বকা খাই তারপর উনার আর বাবার।তবুও মাঝে মাঝেই তাকে বুঝাতে চাইতাম যাতে নিজের ভালোর কথা ভেবে বিয়েটা করে।প্রতিবারই তার জবাব তুমি হলেই~চলবে। তাই আজও ভাবছে আমি তেমন কিছু বলব।আমি উনার গা ঘেঁষে বসলাম।উনি অবাক হওয়ার মত তাকিয়ে আছে।তাকিয়ে থেকে বলে উঠে….
—তোমার মাথায় আবার কোন ভূত উঠেছে??দেখ ভূত গুলো তাড়িয়ে দেও।তা না হলে কিন্তু মাথা আগে থেকেই গরম আরো গরম হয়ে যাবে বলে দিলাম।আমার মাথা প্রচণ্ড ব্যাথা আয়ুজান বুঝার চেষ্টা কর।প্লিজজজ
.
আমি উনার এই সব কথায় তোয়াক্কাই করলাম না। একটা ভাব দিয়ে উনার কোল থেকে ল্যাপটপ সরিয়ে ধাম করে তার কোলে বসে পড়লাম। উনি এবার আকাশ থেকে পরেছে এমন ভাব করে তাকিয়ে আছে।আমি তার চাপা দাঁড়ি গুলোতে হাত বুলাচ্ছি। উনার চোখ যেন কোটার থেকে বেড়িয়ে আসবে এমন একটা ভাব করে উনি বলে উঠে…..
—লিসেন আই নো তোমার মাথায় বড় কোন ধান্ধা ঘুড়ছে।আমাকে এই সব লতুরপুতুর দিয়ে একদম ভুলাতে আসবেনা।তুমি যানো তুমি আমার উইক পয়েন্ট তাই সব সময় ব্লাকমেইল করার ধান্ধা রাখ।প্রতিপক্ষকে কখন উইক পয়েন্ট দেখাতে নেই কথাটা সত্য।কিন্তু তুমি আমার প্রতিপক্ষ না হয়েও এই জিনিসটা বেশ ভালোভাবে করছ আমি বুঝতে পারছি।সো বি ক্যায়ার ফুল আয়ুজান।এবার যদি একটাও আজেবাজে কথা শুনি তবে কিন্তু ভাল হবে না।
.
আমি এবার রেগে গেলাম। রেগে মেগে বলে উঠলাম….
—এই আপনার কি মনে হয় আমি সব সময় ধান্ধা নিয়ে আপনার কাছে আসি নাকি??এমনে আসিনা??এভাবে বলতে পাড়লেন??পারবেনইত বউত পুরানো হয়ে গেছে তাই আর ভালো লাগছেনা।আমি সব বুঝি বুঝলেন??কত ইম্পরট্যান্ট কথা বলতে এলাম আর উনি আমাকে মতলববাজ মনে করে। আগে যানলে আপনার কাছেই আসতাম না।
.
বলেই উঠে যাচ্ছিলাম। উনি কোমড় চেপে বসিয়ে রাখে কোলে।ঘাড়ে মুখগুঁজে বলে উঠে…..
—ওকে সরি।আমি কি করবো বল?? তুমি নিজেইত এমন। যখনই ফাউল কথা বলার হয় এভাবে সোহাগ দেখিয়ে বল।কিন্তু কখনো ভালোবেসে তো কাছে আসনা।আমার নিজেকেই টেনে টেনে কাছে আনতে হয়।তাই এমনটা বললাম।কিন্তু তুমি ভুল বললে আমি কিন্তু একবারও তোমাকে মতলববাজ বলিনি।এভাবে কথায় কথায় এমন কথা বলা ছেড়ে দেও আর কি বলতে এত ভালোবাসা উপচিয়ে উপচিয়ে পড়ছে বল..শুনি??
.
আমি এবার উনার দিকে মুখ করলাম।ঠোঁট প্রশারিত করে বলে উঠলাম………
—দলির বাচ্চাগুলো কি কিউট না??
.
উনি আমার কথায় যেন হা হয়ে গেলেন। আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলে উঠলেন…..
—এই সামান্য কথা বলবে বলে এত মেল ড্রামা???
.
আমি মাথা ঝাঁকিয়ে বলে উঠলাম…
—আরে না ত।ওর বাচ্চাগুলোর হাত পা কি কিউট।ছোট ছোট আঙ্গুল লাল ঠোঁট ভাসা ভাসা চোখ সব কিউট সব সব সব।আপনার কাছে কিউট লাগেনা।
—লাগে। কিন্তু হঠাৎ এই কথা কেন??(একটু গম্ভীর হয়ে বলে উঠে)
—না আসলে আমাদের যদি একটা এমন কিউট মেয়ে হয় কেমন হবে???
.
আমি চকচক চোখে তাকিয়ে আছি।উনি এবার নড়েচড়ে উঠলেন মুখে একরাশ করুনতা নিয়ে বলে উঠলেন….
—তুমি কি বেবি এডপ্ট করতে চাও??ওকে ব্যাপার না আমরা কালই যাবো।আমার আয়ুজানের জন্য কিউট একটা মামনি নিয়ে আসব। তুমি খেয়েছ কিনা জিগ্যেস করতেই ভুলে গেলাম।এই ফার্স্ট এমন হয়েছে তাও তোমার এই সব কথার কারনে।খেয়েছ তুমি???
—আরে আমি বাচ্চা দত্তক নিতে চাইনা।আমি চাই আমাদের বেবী হবে বুঝতে পারলেন??
—দেখ তুমি কিন্তু আবার শুরু করলে। উল্টাপাল্টা কথায় চলে যাবে এখন এটা আমার মোটেও পছন্দ না।শুরু কর ভালো কথা দিয়ে আর চলে যাও আজেবাজে কথায়। ফালতু…
.
আমি রাগ হলাম। তিন বছরে আজই উনি আমাকে এভাবে কথা শোনালেন। আমি এবার রাগ করে উনাকে ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়ালাম। উনি আবার বিরক্তি কাটিয়ে আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে বলে উঠে…..
—সরি সরি এগেন।আমি বুঝতে পারছিনা এভাবে রাগ কেন উঠছে।অফিসে একটা ভেজাল চলছে জান তাই আমি প্রচন্ড টেনশনে আছি।তার উপড় তুমি এমন এমন কথা বল কি আর বলব।তুমি তো জানো আমার সকল ক্লান্তির অবসান তোমাতেই তাহলে কেন এমন করছ বলত??বাবা মা হওয়া পৃথিবীর সবচাইতে সৌভাগ্যের ব্যাপার।আল্লাহ চাইলে আমরাও হব। কিন্তু এখন যেহেতু তোমার বেবি চাই তাইলে আমরা এডপ্ট করেনি।তাহলেই হবে তবুও তোমাকে ছাড়া এমন কোন কথা আমি শুনতে চাই না।কত বার বলব আমার তুমি হলেই চলবে।
.
আমি শান্ত দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।আয়নায় উনার আর আমার প্রতিবিম্ব দেখা যাচ্ছে। উনার চোখে মুখে এক অদ্ভুত হতাশা আছে।তা বুঝতে পারছি।ছোটবেলায় শুনেছি সকল ছেলেদের মাঝেই এক বাবা লুকিয়ে থাকে যা আমি উনার মাঝেও দেখেছি যখন উনি দিলের বাচ্চাদের নিজের কোলে খেলায়।আদরের আদরের ভরিয়ে দেয় তাদের নরম গাল।তখনই বুঝেছি উনি বাবা হতে চায়। হয়ত আমাকে বেশি ভালোবাসে বলেই ছাড়তে চায় না।আমি ঘুড়ে তাকে জড়িয়ে নিলাম। উনি আমার কোমড় জড়িয়ে নিজের মাঝে ডুবিয়ে নিল।কিছুক্ষণ পরে তাকে ছাড়িয়ে বেড সাইড টেবিল থেকে একটা পেপারের পেকেট দিলাম তার হাতে।উনি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।আমি ইশারায় খুলতে বললাম।উনার মাঝে কেমন যানি ভয় কাজ করছে হয়ত ভাবছে আমি তার কাছ থেকে দূরে যেতে হয় এমন কিছু দিচ্ছি।উনি কাঁপা হাতে পেকেট খুলে কাগজটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ মনোযোগ দিয়ে দেখলেন।তার পরমুহূর্তেই উনার চোখে আমি পানি দেখতে পেলাম। সে কাঁদছে। এই কান্না খুশির।উনি হুট করেই আমাকে কোলে তুলে নিলেন।চিৎকার করে বলে উঠলেন…..
—এটা সত্যি…
—হুম(উনার বুকে মুখ লুকিয়ে।লজ্জিত ভঙ্গিতে বলে উঠলাম)
—আরো আগে কেন বলনি??আয়ুজান আয়ুজান এটা পৃথিবীর সবচাইতে বেস্ট উপহার যা তুমি আজ দিলে।আমি বিশ্বাসই করতে পারছিনা আমাকেও কেউ সারফারাজের মত বাবা বলে ডাকবে।আই কান্ট বিলিভ দিস। সবাইকে বলেছ??
—আগেই বলেছি আর আপনাকে তখন থেকে বলতে চাচ্ছি আপনি শুনতেই চাইছেন না।তাই রিপোর্ট ধরিয়ে দিলাম।এবার নিচে নামান।
—-না তোমাকে নিচে নামানো যাবেনা। তুমি আমার কোলে কোলেই থাকবে।এখন বল কি খেয়েছ??তোমার খাবারের ছিরি আমার জানা আছে।আচ্ছা তুমি বরং খাটে বস আমি নিয়ে আসছি।
—এই না না মা এত এত খাইয়েছে কি বলব। এখন ঘুম পাচ্ছে আপনার জন্যে ওয়েট করতে করতে আমার ঘুম শেষ।এবার নামান আমি ঘুমাব।
.
উনি যত্নের সাথে আমাকে বিছানায় রাখে। উনার চোখে মুখে এক সুখ মিক্সিত ভাব ফুটে উঠেছে। থেকে থেকে আবার পানিও পরছে।মাঝে মাঝে আবার ঠোঁট কামড়ে হাসছে।উনি নিজের কাজ ফেলে আমার পাশে শুয়ে আমাকে তার বুকের সাথে লেপ্টে নিলেন।আমি গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছি।তার এই সুখের জন্য আমি সব করতে পারি দরকার হলে জীবনটাও বাজি রাখতে পারি।ভালোবাসা মানেই ভালো থাকা আর ভালোবাসার মানুষকে ভালো রাখতে পারলেই ভালো থাকা যায়।তাই আপনাকে ভালো রাখাও আমার কাজ।
.
আজ ঘরে ছোট একটা পার্টি রাখা হয়েছে।সব পরিবারের লোকরা আসবে।রান্নায় আমি পাক্কা কাঁচা। আসলে পারিনা তা নয় আযমান আমাকে রান্না ঘরে ডুকতে স্পেশাল ভাবে নিষেধ করেছে।মাও রান্না করতে দেয়না।ইন্টেরেস্টিং ব্যাপার এই তিন বছরে আমি একবারও রান্না করার মহা সুযোগটা পেলাম না।এখন এটা আরো মশকিল।আমি রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে আছি।তবে রান্না সব মা করছে।আমি শুধু দেখছি।কোথা থেকে হুট করে আযমান এসে হাজির। দাঁতে দাঁত চেপে কড়া গলায় বলে উঠে……
—আয়ুজান এখানে কি?? তোমাকে নিচে কে নামালো??
—কেন আপনি কি আমার দুটো পা দেখেন না??এই যে দেখে নিন(শাড়ির নিচ দিয়ে পা দেখিয়ে)
—দেখ আমি মজা করছিনা।ফাইজলামি করবে না।আর রান্নাঘরে কত তাপ। তুমি ঘেমে গেছ।চল উপড়ে??
—না এখন যাব না। আপনি জান।
.
মা এবার ছেলের সাথে তালে তাল মিলিয়ে বলে উঠে….
—-ওকে নিয়ে যাত রেডি করে দে।কিছুক্ষণ পরে মেহমান সব চলে আসবে।আর ও এখনো রেডি হল না।
—চল
—চল চল বললে ও শুনবে বলে তোর মনে হয়??? তোর এই বডি কেন বানালি??হুম??কোলে তুলে নে।
.
আমি এবং উনি দুজনেই হা করে তাকিয়ে আছি মার মুখের দিকে।বলে কি উনি???ছেলেকে বলছে বউকে কোলে নিয়ে যেতে। আজব।তবে মা এমন অনেক আজব কাজই করেছে এই তিন বছরে।যেমন সবার সামনে উনাকে বলে উঠে….
—বিয়ে করেছে কেন তোকে আয়ু???নিজের হাতে খেতে নাকি??নিজের হাতে খাওয়ার হলে তোকে তো লাগবে না।তুই আউট।
.
উনি তখন মায়ের দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বলে…
—মাম্মাম এগুলো কেমন কথা??আর তুমি সব সময় আয়ুর হয়ে কথা বল।ইটস্ নট ফের।কই কখনো বললেনা তো যে আমাকে খাইয়ে দিতে??সব সময় আমাকে বল।
.
মা উনাকে রাগী চোখে বলে উঠে….
—তুই ওকে আজীবন খাইয়ে দিবি বুঝলি।
.
বেশ মজা লাগে তখন।উনি রাগি রাগি ভাবে আমাকে খাইয়ে দেয় আর আমি ছোট ছোট কামড়দি…হিহি..আমাদেরকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মা আবার বলে উঠে….
—তাকিয়ে থাকতে বলিনি।ওর কষ্ট হচ্ছে কোলে তুলে নে…
—আরে মা বাইরে অনেক মহিলা আছে। তারা দেখলে কি বলবে।আমি নিজেই যাই।
.
পা বারাতেই মা বলে উঠে….
—আযমান তুই নিবি কি না??
—অবশ্যই। মায়ের আদেশ শিরোধার্য।
.
বলেই উনার সামনে আমাকে কোলে তুলে নিলেন।আমি তাকিয়ে আছি মা ছেলের দিকে।এদের এই বন্ডিংই এত ভালো লাগে আমার।
.
—দেখেন এবার আমার কিন্তু বিরক্ত লাগছে।আর একটা ফল যদি দেন আমি বমি করে আপনার গা ভাসাব।(রাগি গলায় বলে উঠি)
—তাই নাকি??ভাসাও। এমনেতেই দিনে অনেক জামা কাপড় ভিজাতে হয় তোমার জন্য।না হয় আর একটা ভিজাব।তবুও খেতেই হবে।
.
আমি কাঁদো কাঁদো মুখে।এবার বলে উঠলাম….
—প্লিজজজ আর না।রেডি হই চলেন।
—না এগুলো আগে কম্পিলিট কর।তারপর আমি তোমাকে রেডি করে দিব।
—আপনি করবেন রেডি??আর রেডি হতে হবে না। আমি বরং একটু ঘুমাই।
.
উনি নিচ থেকে আনার পর ফলের থালা নিয়ে বসেছে।আর আমার মুখে একটার পর একটা দিয়েই চলেছে।পৃথিবীর ভয়ঙ্কর একটা শাস্তি হল খাবার খাওয়া আর তা যদি হয় ফল ইয়াকক্।ফল খাওয়া আর ঘাস খাওয়া আমার কাছে এক জিনিস লাগে।আর এই লাগার মধ্যেই বিগত মাস খানেক এত এত খেতে হয়েছে কি বলব।আমি শহিদ হয়ে যাব খেতে খেতে।কি যে মোটা হয়ে গেছি কি বলব।একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এল।
.
উনি আমাকে শাড়ি পড়াচ্ছে। কালো জামদানি শাড়ি।এর মাঝে লাল সুতার কাজ।আর উনি পড়েছে কালো পাঞ্জাবী যার বাম সাইডে লাল সুতার কাজ করা।হাত ভাজঁ করে আমার কুচি ঠিক করছে।উনার এই কাজটা আমার অনেক কিউট লাগে।মনোযোগ দিয়ে এই কাজটা করে উনি।তখন উনাকে দেখে মনে হয় এটা পৃথিবীর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।ভ্রুকুঁচকে প্রতিটি কুচি সে মনোযোগ দিয়ে এক সাথে করছে।কুচি ঠিক করে আমার আঁচল ঠিক করে দিলেন।পিছন থেকে জড়িয়ে বলে উঠে…
—আজ তোমাকে কাজল লাগিয়ে দিব।
—না না লাগবে না।
—লাগবে না মানে কি??? অবশ্যই লাগবে। আমি লাগাব মানে লাগাব।
.
আমি এবার কেঁদে দিব টাইপের অবস্থা। উনার এই কাজল লাগানোর ব্যাপারটা আমার মোটেও পছন্দ না।উনি যখনই আমার চোখে কাজল লাগাতে চায় তখনই উনার চোখ দিয়ে যমুনা নদী প্রবাহিত হয়।চোখের কাছে কাজল নিয়ে একবার দিতে যায় তো আবার সরিয়ে নেয়।চোখের কাছে লাগাতেই উনার নিজের চোখ দিয়ে পানি পড়ে।আজব লোক।কাজল লাগাবে আমাকে আর চোখের পানিতে বুক ভাসাবে উনি।উনি আমাকে ড্রেসিন টেবিলের সামনে বসিয়ে দিলেন।আমিও বসে পড়লাম।কাজলটা হাতে নিতেই উনার কাঁপাকাঁপি শুরু।এবার পাক্কা দুই তিন ঘন্টা এই কাঁপাকাঁপি অব্বাহত থাকবে।আমি মহা বিরক্ত তার এই কাজে।জাস্ট অসজ্জকর একটা কাজ।উনি কাঁপা হতে আমার চোখের নিচে লাগাতেই ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে শুরু।যদিও উনি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদেনা। ছেলেদের কান্না নিঃশব্দে। উনার টাও তাই।আমি একটু বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলাম……
—আপনি সামান্য কাজল লাগাতে এভাবে কাঁদছেন। আমি মারা গেলে কি করবেন।
.
উনি চকিতেই অশ্রুসিক্ত চোখে তাকালেন।তার চোখে ভয়ের প্রকাশ দেখা যাচ্ছে। উনি হুট করে কাজল রেখে আমাকে জড়িয়ে নিলেন।তার এমন কাজে আমি মোটেও বিচলিত হইনি।এটা উনি সব সময় করে আর এখন উনি কি বলবে তাও আমার যানা।উনি বলে উঠে…..
—তোমার কিছু হলে তো আমিও শেষ।মরে যাব।আয়ুজান।
.
কথাটা শুনে সবসময় একই রিয়েকশন থাকলেও আজ আমি বলে উঠলাম….
—আরে আমার কিছু হলে আপনার বাঁচার জন্য একটা মানে রেখে যাব।আমাদের প্রিন্সেস।
—আমার তুমি ছাড়া থাকতেই দম বন্ধ হয়ে আশে।প্রিন্সেসও তখন কাজে লাগবে না।তুমি নেই তো আমিও নেই।এখন এসব কথা শুনতে ভাল লাগছে না।কাজল লাগই।
.
উনি এবার গম্ভীর হয়ে গেলেন।আমার বুক ছিঁড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এল।আমার কিছু হলেও যাতে উনি ঠিক থাকে মহান আল্লাহর কাছে এটাই দোয়া করি।এই তিনবছরে একটা রাত উনি আমাকে ছাড়া থাকে নি।আমাকে একদিনও আমাদের বাসায় থাকতে দেয় নি।এই লোক আমাকে ছাড়া থাকবে কিভাবে কে যানে।
.
পাক্কা একঘণ্টা পরে উনি কাজল লাগাতে সক্ষম হলেন।আমাকে কোলে তুলে সিঁড়ি দিয়ে নামছে।সবার চোখ আমাদের দিকেই।মনে হচ্ছে সেই বিয়ের দিন যেমন কোলে নিয়ে এই বাড়িতে ডুকেছিল এখনও তাই।উনি নিচে নামিয়ে সোফায় বসিয়ে দিল।রেদোয়ান ভাইয়ারও একটা ছেলে হয়েছে।আযমান আমার পাশে বসে বাচ্চাগুলো নিয়ে খেলছে।কত কত ভঙ্গিতে কথা বলছে।তাকে দেখেই মনে হচ্ছে উনিও একটা বাচ্চা।আমি শুধু তাকিয়ে দেখছি আর দিলের হাজারো কথা শুনছি।তবে সব কথা কানে ডুকলেও আমার চোখে শুধু উনি ভাসছে।
.
.
#চলবে……….🍁
.
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন………🍂আমি অসুস্থ তাই দেড়িতে দিচ্ছি। সরি।
#তুমি~হলেই~চলবে 🍁
#writer~হাফসা~আলম 🍂
২২.
.
.
সময় প্রবাহ মান। সময় যেমন নিজ গতিতে চলে মানুষও তা মেনে চলে।আজ চার মাসে পা দিয়েছি।এই মাসগুলোতে যদি কাউকে জ্বালিয়ে শেষ করেছি তবে সে হল আযমান। নানা সময় নানা বায়না। কখনো বমি করে গাঁ ভাসানো কখনো রাত জেগে গল্পের বই পড়ে শুনানো সব উনি কত হেঁসে হেঁসে অনায়াসে করে ফেলছে তার মাঝে নূন্যতম বিরক্তি নেই।সকালে কোলে করে নিচে নামানো।আবার নিয়ে আসা।সবই সে করে।উনি এখন অফিস করে হাফ টাইম।বেশিরভাগ সময় বাসায় থাকে।উনাকে বিরক্ত করতে চাই খুব করে কিন্তু উনি বিরক্তই হয়না।আজব লোক।রাত কটা বাজে জানা নেই আমি ঘুমঘুম চোখে উঠে বসলাম।আমার সামান্য নড়াতেই উনার ঘুম ভেঙে যায়।আজও তাই হয়েছে।উনি ঘুম চোখে বলে উঠে…….
—তোমার কি কিছু লাগবে???
.
আমি মাথা দুলিয়ে বলে উঠলাম
—হুমম.
.
উনি উত্তেজিত হয়ে বলে উঠে…..
—কি লাগবে??আমাকে বল?? ক্ষুধা লেগেছে?? নাকি ওয়াসরুমে যাবে??
—না আমি এখন আইসক্রিম খাব।
.
উনি করুন চোখে তাকিয়ে বলে উঠে…..
—যদি তোমার ঠান্ডা লাগে???
—লাগবে না।চলেন??
—তোমাকে যেতে হবে না আমি নিয়ে আসি।ফ্রিজ থেকে। তুমি শুয়ে থাক।
—আরে আমি ফ্রিজের টা খাব না।
—তবে??
—আইসক্রিম পার্লারে যাব।এখন মাএ ১২টা বাজে।চলেন।
—এত রাতে???।তুমি বুঝতে পারছনা আয়ুজান এত রাতে যাওয়া ভালো হবে না। তোমার জন্য তো একদম না।প্লিজজজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড।
—না না কোন আন্ডারস্ট্যান্ড টান্ডারস্ট্যান্ড হবে না।যাব মানে যাব।
.
উনি করুন চোখে তাকালেন।অসহায়ের মত আমাকে কোলে তুলে নিলেন।আমি চট করে বলে উঠলাম…….
—এই এই নামান আমি হেঁটেই যাব।
—না আমি তোমার কথা শুনছি তার বিনিময়ে তোমাকেও আমার কথা শুনতে হবে।
—ওকে তবে আমরা রিক্সায় দিয়ে ঘুড়ব।ঢাকা শহরে রাতে রিক্সায় করে ঘুড়তে সেই মজা।প্লিজজ প্লিজজ
—নো নেভার।আমরা গাড়িতে যাব।আর গাড়িতেই ব্যাক করব। তোমাকে নিয়ে মাঝ রাস্তায় একগাদা রিক্স নিয়ে চলাফেরা করতে পারব না।
.
উনার এমন ধমকানো টাইপের কথা শুনে আমি চুপ মেরে গেলাম।উনি সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে আমাকে নামিয়ে দিলেন।দরজাটা আস্তে খুলে আবার কোলে তুলে নিলেন।আমাকে গাড়িতে বসিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলেন।আমি আশেপাশের পরিবেশ দেখছি।নিরিবিলি পরিবেশ। মানুষ জনের আনাগোনা কম।হালকা বাতাস বইছে।উনি হুট করে গাড়ির গ্লাস উঠিয়ে দিলেন।আমি বিরক্তি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম…..
—এই গ্লাস কেন বন্ধ করলেন??? আমি বাতাস খাচ্ছি দেখতে পাচ্ছেন না???
—এদানিং তুমি বড্ড বাচ্চাদের মত বিহেভ করছ আয়ুজান। নিজে বাচ্চার মা হবে কিছুদিন পরে আর এখনো বাচ্চাই রয়েগেলে।এগুলো কেমন কথা বাতাস খাব???বাতাস খাওয়া যায় নাকি??আর বেশি হওয়া লাগলে তোমার সমস্যা হবে। তুমি অনেক দিন পরে এভাবে বের হয়েছ তাই হুট করে এমন আবহাওয়া গায়ে মাখতে নেই।চুপ করে বসে থাক।
—আপনি কেমন খিটখিটে হয়ে যাচ্ছেন।বুঝতে পারছি এখন আর পুরাতন বউ ভালো লাগেনা।তাই না??
.
উনি হু হা করে হেঁসে উঠে।আমি মুখ ফুলিয়ে বসে আছি।উনি সামনে তাকিয়ে আমার এক হাত টেনে তার কিছুটা কাছে নিয়ে আসে।সামনে থেকে চোখ সরিয়ে আমার ঠোঁটে আলত করে ঠোঁট ছুঁয়ে আবার সামনে তাকিয়ে বলে উঠে….
—-আমার বউ তো ১৭ বছরেও নতুন ছিল তিন বছরে কিভাবে পুরাতন হবে।তাই এই কথাগুলো বলা বাদ দেও। অনেক বলা হয়েছে।এবার এই টেকনিক চেঞ্জ করো আয়ুজান।
.
.
আমি গাড়ির ডিকিতে বসে আছি।উনি আইসক্রিম পার্লার থেকে আইসক্রিম আনতে গেছে।রাতের আকাশটা যেমন সুন্দর পরিবেশটাও তেমন সুন্দর। গাছ পালা দাঁড়িয়ে আছে নিরিবিলি। মানুষের আনাগোনা নেই।দেখে কেউ বলবে?? এই রাস্তাটাই সকাল হতে না হতে মানুষের আগমনে সতেজ হয়ে উঠবে।মানুষ ছাড়া সবই কেমন ছমছমে।আমি পা ঝুঁলাচ্ছি।বাতাসে শাড়ির আঁচল দুলছে।উনি এখনো কেন যে আসছে না কে যানে।এত সময় লাগে নাকি। রাগ লাগছে।সাথে ভয়ও। এতবার বলেছি নিয়ে যেতে না সে বলে আমাকে গাড়িতে বসে থাকতে।গাড়িতে বসে থাকতে কেমন যানি দম বন্ধ দম বন্ধ লাগে তাই বাইরে এসে ডিকিতে বসে গেছি।আমি এবার পা গুটিয়ে নিলাম।সামনে তাকিয়ে গলা শুকিয়ে আসছে।কিছু ছেলে ডুলে ডালে এদিকে আসছে।আমি একটু অবাক হলাম।সাথে ভয়ও পাচ্ছি।দেখেই লাফাঙ্গা মনে হচ্ছে। ছেলেগুলো এদিকেই আসছে।আমি এবার ধীর পায়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম।পিছনে বসেছিলাম উনাকে ভয় দেখাব বলে।এখন তো আমি নিজেই ভয় পেয়ে সামনে চলে আসতে হল।আমি গাড়ির সামনে দাড়িয়ে দরজা খুলতে যাব তার আগেই ছেলেগুলো আমার অনেকটা কাছে চলে এসেছে।আমি একটু ভীতূ নজরে ঘুড়ে তাকিয়ে দেখি লাল লাল চোখ করে মাতাল ছেলেগুলো আমাকে চোখ মেলে মেলে দেখতে চাচ্ছে। আমি ভয়ে আবার দরজা খোলায় মন দিতে যাব তার আগেই ছেলেগুলোর মাঝে একজন বলে উঠে…..
—-কি হইল মেডাম সাহায্য লাগব নাকি???
.
আমি জাবাব দিলাম না দরজা খুলে ভিতরে বসতেই একটা ছেলে দরজা আঁকড়ে ধরে।ভয়ে আমার হাত পা কাঁপাকাঁপি করছে।ঘাম দিচ্ছে খুব করে।প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর থেকে আমি প্রচণ্ড দূর্বল হয়ে পরেছি।এটা হওয়ারই ছিল।এ নিয়ে উনার কত কত টেনশন। ডাক্তার লিজার অবস্থাই খারাপ করে দিয়েছে। এটা ওটা জিগেস করতে করতে।উনাদের হসপিটালে কাজ করে বলেই এত প্রশ্নে আর এত কিছু সজ্জ করেছে তা না হলে আরো আগে উনি পালাতো।এখন কেন যেন আরো ভয় লাগছে।ভয় লাগাটা এই টাইমে মোটেও উঁচিত না।আমি নিজেকে যথা সম্ভব উত্তেজিত করতে চাচ্ছি না। কিন্তু ভয়ে বার বার বুক কাঁপছে।মনে মনে আল্লাহকে বলছি উনাকে তাড়াতাড়ি এখানে পাঠিয়ে দিতে।ছেলেগুলো বিশ্রী হেঁসে দাতঁ বের করে একজন আর একজনকে বলছে……..
—-ভাই মাইয়া তো নয় যেন আগুনের গোলা।এরে দিয়ে আজকা কাম হইব না।এরে তো সারা জীবন নিজের কাছে রাখলেই কাম হইব।কি কস তোরা…??
—হোরে।তা এই ফুলডারে তো নাম দেওয়া লাগে।কি নাম দিবি ক??
—-এইডা একে বারে গোলাপের লাহান।তাই লাল গোলাপ দিমু নাম।কি কস তোরা????
—হো।এই লাল গোলাপ নিজে নিজেই চইল্লা আয়।যানি আইবা না।তোমাগোরে ভালা কথা কইলে হয় না। বুইঝলা।ওই হাত ধর লাল গোলাপের।
.
আমি এবার ভয়ে ফুঁফিয়ে উঠলাম।কেঁদেই দিলাম।আমার বুক ধুকধুক করছে।মনে মনে শুধু আল্লাহ বাঁচাও বলে চলেছি।আর চারদিকে চোখ বুলিয়ে উনাকে খুজছি। কোথাই আপনি???আমি হাত পা গুটিয়ে সিটে বসে পড়লাম। একটা ছেলে আমার হাত ধরতে আসায় এক লাথি দিয়ে বেড়িয়ে এলাম।আমি কিছুদূর যেতেই আবার ঘিড়ে নিয়েছে আমাকে।আমি ভয়ে এবার চুপসে গেছি।ছেলেগুলো বলাবলি করছে…
—ওই লাল গোলাপরে যতটা সহজ ভাবলি ওতটাও না বুঝলি।হাত ধরে কাধে উঠাই নে।
.
বলেই এক হাত বাড়িয়ে দিল আমি ভয়ে চোখ বুঝে নিলাম।হঠাৎ কানে কারো আহহহহহ্ চিৎকার ভেসে আসায় চোখ খুলে তাকালাম।সামনে তাকিয়ে দেখি উনি এক হাতে আইসক্রিমের বক্স আর ঝালমুড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আর এক হাতে ছেলেটার হাত মুড়ে দিয়েছে।উনাকে দেখেই আমার জান ফিড়ে এসেছে।এক লাফে ঝাঁপিয়ে তার বুকে পড়লাম।উনি মনে হয় ছেলেটার হাতটা আবার মোচড় দিয়েছে সাথে সাথে চিৎকার ভেসে এসেছে কানে।আমি অশ্রুসিক্ত চোখে তার দিকে তাকালাম। উনার চোখ লাল হয়ে আছে।কপালের রগ গুলো ফুলে উঠেছে।চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে।ছেলেটার সাথের বাকি ছেলে গুলো মাতাল হওয়ায় এদিক ওদিক তাকিয়ে ডুলছে।ছেলেটাকে ছুড়ে দিয়ে হাতের জিনিস গুলো আমার হাতে দিয়ে ছেলেটাকে আবার তুলে দাঁড় করালেন।চিৎকার করে বলে উঠে…..
—গোলাপে হাত দিতে হলে ত আগে কাটাঁ খেতে হয়।তাই না??তা তোকে কোন স্টেপে কাটাঁর সাথে পরিচয় করাব বল???
—দেখ আমরা তোর লগে লাগতে আসিনাই।মাইয়াটারে দে আর যা এখান থেকে।(পাশের ছেলেগুলো এগিয়ে এসে বলে উঠে)
—-তাই নাকি??তা আমার জানে হাত দিবি আর আমি শুধু দেখব??আবার বললি তোদের দিয়ে দিতাম??শালা আমি যার পায়ে ব্যথা হবে বলে কোলে নিয়ে ঘুড়ি, বালিশকে সেফ মনে হয়না বলে বুকে ঘুমপাড়ায়,পড়ে যাবে দেখে জড়িয়ে রাখি তাকে তোকে দিয়ে দিমু..শালা হাসালি…
.
বলেই উড়াধুনা শুরু।এক একটাকে ধরে এমন এমন কেলানি দিয়েছে যে আমার অশ্রুসিক্ত চোখেও হাসি পেয়ে গেল।হাতের জিনিস গুলো গাড়ির উপড় রেখে তালিও দিলাম।উনি একবার ভ্রুকুঁচকে তাকিয়ে আবার মারা শুরু করে।আমি তো অবাক হয়ে দেখছি।উনি যে এত মাইর পারে আমার জানা ছিলনা।একদম বক্সিং খেলছে মনে হচ্ছে। ছেলেগুলো দৌড়ে পালাল।উনি রাগী চোখে আমার সামনে এসে দাড়িয়ে পড়ল।ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠল………
—ডাকতে পাড়লে না?? আমি কি বেশি দূরে ছিলাম নাকি??একটু চিৎকার দিয়ে ডাকলেইত আর এভাবে কাদঁতে হত না।কি অবস্থা করেছে কেঁদে কেটেঁ।(চোখমুখ মুছে দিতে দিতে)
—বা রে চিৎকার করলে যদি আমার জানের কিছু হয়।এই সময় চিৎকার করা মোটেও উঁচিত না যানেন না???(পেটে হাত দিয়ে ডুলে ডুলে)
.
উনি আমাকে কোলে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে নিজেও বসে পরে।আর আইসক্রিম এগিয়ে দিতে দিতে বলে উঠে…..
—আমাকে তো এক বারও জান বলে ডাকো না।সব ভালোবাস শুধু তোর বুঝলি মাই প্রিন্সেস। তোর মা আমার বেলায়ই যত কিপটামি করে।সবার বেলায় ডালা ডালা ভালোবাসা।
.
পেটে একটা চুমু খেয়ে।আবার বলে উঠে….
—কি পরিস্থিতিতে ফেললে দেখছ???নিজের প্রন্সেসকেও আমার হিংসে হচ্ছে। ভাবা যায়???আল্লাহ বাঁচাও??
.
আমি হেঁসে দিলাম।আইসক্রিম খাচ্ছি আর উনাকে দেখছি।উনি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আমি চোখ নাচিয়ে বলে উঠলাম……..
—-এভাবে কি দেখছেন??আপনার খেতে ইচ্ছে করলে খান।
.
উনি এবার আমার দিকে ঝুঁকে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলেন।আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি।হাতের আইসক্রিম চুয়ে চুয়ে পড়ছে উনার টিশার্টে।সেদিকে তার তেমন খেয়াল নেই।সে আপন কাজ আপন গতিতে করছে।কিছুক্ষণ পরে ছেড়ে দিয়ে বলে উঠে……
—এখন চেঁচাবেনা।আমি কিন্তু আগেই অনুমতি নিয়ে নিয়েছি।তাই চিৎকার চেঁচামেচি নট এলাউ।আইসক্রিমে মননিবেশ কর আয়ুজান।
.
উনার বাঁকা হাসি দেখে আমি বিরক্ত হলাম।আবার আইসক্রিম খাওয়ায় মনযোগ দিলাম।খাওয়ার এক পর্যায়ে আমার মাথা ঘুড়ে উঠল।গড়গড় করে বমি করে তার গা ভাসিয়ে দিলাম।উনি আমার মাথা চেপে আছে।আর চিন্তিত স্বরে বলে উঠে…..
—-কি হল আবার???শান্ত হও।
.
আমি বমি করে তার টিশার্ট ভড়িয়ে দিয়েছি।সিটের সাথে হেলান দিতে যাব উনি বলে উঠে…..
—এক মিনিট
.
বলেই নিজের টিশার্ট খুলে বাইরে ছুড়ে দিলেন।আমার সাইডে এসে আমাকে কোলে নিয়ে আবার তার পাশে বসে পড়ে।উনার উমুক্ত বুকে আমার মাথাটা চেপে ধরে।আমার ক্রমশ নিস্তেজ লাগছে নিজেকে।আমি উনার মুখের দিকে একবার তাকালাম। আমার চাইতেও তাকে বেশি অসুস্থ লাগছে।করুন সুরে বলে উঠে……
—-জাস্ট টেইন মিনিট আয়ুজান।আমরা বাসায় চলে যাব এখনই। আগেই বলেছি আবহাওয়া ভালো না তুমি অদ্ভুত অদ্ভুত বয়না কেন ধর কে যানে।বাই দ্যা ওয়ে আমাদের আগে হসপিটালে যাওয়া উঁচিত…….
.
তার শেষ কথাটা শুনেই আমার মাথা ঘুড়ে উঠেছে।হঠাৎ চোখ ঝাপসা হয়ে এল। ধীরে ধীরে উনার কাধে থাকা আমার হাতগুলো আলগা হয়ে এল।আমি নিস্তেজ হয়ে তার বুকে ডুলে পড়লাম।
.
.
#চলবে…………🍁