তোমায় ছোঁয়ার ইচ্ছে পর্ব -৩০+৩১

#তোমায়_ছোঁয়ার_ইচ্ছে
#পর্ব_৩০
#সুমাইয়া_মনি

ওষ্ঠদ্বয় হাত রেখে মিটমিটিয়ে হাসছে রাদ। কেবিনে আপাতত রম্যময় পরিবেশ তৈরির উপক্রম। মুরাদ রাদের হাসির মুখশ্রী দেখে রাগে ফোঁস ফোঁস করছে। শুধু কিছু বলতে পারছে না।
মূলত মুরাদের দ্বিতীয় বারের সুযোগও হাতছাড়া হয়েছে। বিয়ের রীতি অনুযায়ী পর’দিন নতুন বউ প্রথম নাইওরে বাবার বাড়ি যায় এবং সে-ই বাড়িতে বাসর ঘর সাজানো হয়। আর সেটা বিয়ের দ্বিতীয় বাসর বলে গন্য করা হয়। সে-ই রাতও মুরাদ তার বা’স’না পূরণ করতে পারেনি। সাত-আট দিনে পারবে কি-না সন্দেহ। কেননা সোহানার পি’রি’য়’ড হয়েছে। শ্বশুর বাড়ি থেকে ডিরেক্ট ফ্যাক্টরিতে হাজির সে। মুরাদের চেহারার রং সাদামাটা দেখে রাদ অনুমান করে কিছু একটা হয়েছে নিশ্চিত। জিজ্ঞেস করায় মুরাদ বিষয়টি উল্লেখ করে। তার করুন দশা দেখে রাদ হাসে। মুরাদ এবার ক্ষিপ্ত হয়ে বলল,
‘হাসি বন্ধ কর শা’লা।’
রাদ লাস্ট এক গাল হেসে হাত সরিয়ে স্বাভাবিক ভাবে বলল,
‘ওকে। বাট তুই নিজে আমাকে জ্ঞান দিয়েছিস। বিয়ে করার পর সানা একান্তই আমার। একদিন পর হলেও সে আমরাই হবে। এই-সেই কত কিছু…। তাহলে তুই এটা মেনে নিচ্ছিস না কেন?’
‘সবই ঠিক আছে। কিন্তু..’ বলতে বলতে মুরাদ হতাশ জড়িত নিশ্বাস নিলো।
‘এসব ভুলে চিল কর। শ্বশুর বাড়ি যাহ!’
‘হ্যাঁ! যাচ্ছি।’
‘হুম।’
‘তোদের মাঝে সব ঠিকঠাক হয়েছে?’
‘নাহ! তবে খুব শীঘ্রই ঠিক হবে আশা করা যায়।’
‘কথা বলে মুখে?’
‘উঁহু!’ চোয়াল উঁচু করে জবাব দিলো রাদ।
‘আমি গেলাম।’
‘আচ্ছা।’
মুরাদ চলে গেল। রাদ ফোন হাতে নিয়ে ইসানাকে টেক্সট দিলো।
‘আমি আসছি আপনি রেডি থাকবেন।’
অপর প্রান্ত থেকে ইসানার রিপ্লাই এলো,
‘যাব না।’
রাদ কিছুটা ক্ষোভ নিয়ে মামনিকে কল দিতে উদ্যত হতেই থেমে যায়। কাল বলেছিল তাদের ছোটখাটো বিষয়ে তাকে না টানতে। এটা ভেবে রাদ আরো ক্ষোভিত হয়।
.
তার পরদিন রাদ ও ইসানা মামাবাড়ি যায়। দুপুর ও রাতে খেয়েদেয়ে বাড়িতে ফিরে আসে। রেহানা আনসারী দুপুরের পর সিলেটে রওয়ানা হয়। বাড়িতে আপাতত তিনজন রয়েছে। রাদ, ইসানা ও টাইসন। বেশিরভাগ সময় টাইসন ইসানার সঙ্গেই থাকে। এতে অবশ্য রাদেরই সুবিধা হচ্ছে। ইসানার বলা বাক্যগুলো অনায়াসে শুনে নিচ্ছে।
রাতে রাদ বালিশ নিয়ে বিছানায় ঘুমাতে আসলে ইসানা রেগে তাকে টেক্সট করে,
‘সোফায় ঘুমাতে কী সমস্যা?’
ফোনের টোন শুনে বুঝতে পারে ইসানা টেক্সট পাঠিয়েছে। রাদ ফোনের বার্তা এড়িয়ে কাঠিন্য স্বরে বলল,
‘যা বলার মুখে বলুন। আমি টেক্সট দেখব না।’
ইসানা ক্ষিপ্র হয়ে পুনরায় টেক্সট পাঠায়। রাদ এড়িয়ে ফের বলল,
‘মুখে বলুন মুখে!’
ইসানা চোখ পাকিয়ে তাকায়। ফোন হাতে বাহিরের দিকে হাঁটা ধরলে রাদ পথরোধ করে দাঁড়িয়ে বলে,
‘আপনি এ রুমেই ঘুমাবেন। পাশের রুমে ঘুমাতে পারবেন না।’
ইসানা টেক্সট লিখে রাদের সামনে তুলে ধরে। রাদ সেটি পড়ে নেয়।
‘আপনার কথা মতো সব হবে না।’
‘হতেই হবে।’
ইসানা ফের লিখে ধরল।
‘আমি বাধ্য নই।’
‘ফোর্স করব।’
‘ওই যোগ্যতাই আছে আপনার।’
‘সব যোগ্যতা আছে। সুযোগ দিয়ে দেখতে পারেন।’ কথাটা বলে রাদ মৃদু হাসলো। ইসানা বিব্রতবোধ করল। বিরক্ত হয়ে বালিশ নিয়ে সোফায় শুয়ে পড়লো। রাদ ইসানার নিকট এগিয়ে বলল,
‘কোলে তুলে বিছানায় সোয়ানোর পূর্বে আগের স্থানে গিয়ে শুয়ে পড়ুন। আমিই সোফায় ঘুমাচ্ছি।’
ইসানা রাগী নিশ্বাস টেনে বিছানায় তড়াক করে শুয়ে যায়। রাদ নিরাশাজনক দৃষ্টিতে তাকিয়ে সোফায় বসল। কীভাবে যে ইসানার মুখ খোলাবে। জানা নেই তার। আপাতত সে ইসানাকে রাগাতে চাইছে না। তার কথামতো চলবে। দেখবে শেষ অব্ধি কি হয়।
সকালে সোহানা মুরাদের জন্য চা নিয়ে পাশে বসে ডাকছে।
‘উঠছো না কেন? চা নিয়ে এসেছি খাও।’
মুরাদ কিছুটা অভিমানী স্বরে জবাব দিলো,
‘আমার উপোষ চলছে।’
‘কিসের উপোষ?’ জানতে চাইলো সোহানা।
‘বুঝবে না তুমি।’ রাশভারী কণ্ঠে বলল।
‘ও, বুঝেছি।’
‘বুঝলে যাও এখান থেকে। আমাকে ডিস্টার্ব কোরো না। ঘুমাতে দেও।’
‘আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি ঘুমাও।’ মুখ টিপে হেসে প্রস্থান করল।
.
হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার উপক্রম ইসানার। মুরাদের করুণ দশার কথা শুনে নিজেকে আঁটকে রাখতে পারছে না। বলতে বলতে সোহানা নিজেও হেসে ফেলে।
রাদ বাহিরে বসে পেপার পড়ছিল। ইসানার কথপোকথন স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে। ভীষণ ক্ষোভ হয়। তার সঙ্গে বাদে সবার সঙ্গেই কথা বলছে। এটা কোনো কথা? আজ সে ফ্যাক্টরিতে যাবে না। ইসানার মুখ থেকে যেভাবেই হোক কথা শুনবেই।
কথপোকথন সেরে ইসানা রান্নার জন্য কিচেনে আসে। সার্ভেন্টরা তাকে সাহায্য করছে আর ইসানা রান্না করছে।
মিনিট কয়েক পর রাদ রান্নাঘরে প্রবেশ করে। ওঁকে দেখে সার্ভেন্ট’রা বের হয়ে যায়। ইসানা রাদের আগমন টের পেয়ে মুখশ্রী গম্ভীর করে ফেলে। তার কাছাকাছি এগিয়ে এসে আপেলে কামড় বসিয়ে বলল,
‘কী রান্না করছেন?’
ইসানা পাশ থেকে ফোন নিতে গেলেই রাদ সেটা আগেভাগে নিসে প্যান্টের পকেটে পুরে নেয়। ইসানা ক্ষোভিত নজর ফেলে দৃষ্টি সরিয়ে ফেলে। রাদ বাঁকা হেসে পাশের ফাঁকা স্থানে বসে। পুনরায় বলল,
‘বলবেন না সানা?’
ইসানা কড়াইটি তুলে রাদের সামনে ধরে। যাতে রাদ দেখতে পায় কি রান্না হচ্ছে। রাদ ভাবলেশহীন স্বরে বলল,
‘দেখেছি।’
ইসানা সরিয়ে নেয় কড়াই।
‘আর কী কী রান্না হবে?’
ইসানা জবাব দেয় না। রাদ বার বার একই প্রশ্ন করে বিরক্ত করছে তাকে। তবুও মুখ খুলছে না সে।
‘শাস্তির মেয়াদ কতোদিন থাকবে। এটা অন্তত বলুন?’
ইসানা রাদের সামনে হাত পেতে ফোন চায়। রাদ নজর সরিয়ে আপেলে বের কামড় বসিয়ে বলল,
‘দিবো না।’
ইসানা এবার রেগে যায়। পাশ থেকে ছুরি হাতে নিয়ে নিজের গলার বরাবর ধরে। রাদ আহাম্মক হয়ে তড়িঘড়ি বলল,
‘ওয়েট দিচ্ছি!’ বলতে বলতে ফোন এগিয়ে দেয়।
ছোঁ মেরে ফোনটি নিয়ে টাইপিং করে সব কথার জবাব একে একে দিতে আরম্ভ করে। রাদ ফোন ওপেন করে সব উত্তর গুলো পড়ে। ইসানা লাস্টে লিখে,
‘গেট আউট!’
রাদ চোয়াল কিছুটা শক্ত করে ইসানার চোখের পানে তাকায়। তার এই পরিকল্পনা জলে গেলো। সময় বিলম্ব না করে জায়গা ত্যাগ করে। ইসানা বিড়বিড় করে বলল,
‘আসছে আমাকে কথা বলাতে হুহ্!’

হঠাৎ ইসানা সহ বাড়িঘর কেঁপে উঠে। হাত থেকে খুন্তি পড়ে যেতে নিলে সামলে নেয় সে। চুলার আঁচ কমিয়ে বাহিরের এসে রাদের দরজার পানে তাকায়। ফুল ভলিউমে সাইন্ড বক্সে গান ছেড়েছে। একে তো ইংলিশ গান হচ্ছে, তার ওপর ভলিউম ফুল! বিকট আওয়াজে বাড়িঘর কাঁপছে মনে হচ্ছে।
ইসানা সার্ভেন্টকে রান্নাঘরে থাকতে বলে রুমের দিকে অগ্রসর হয়। গান ছেড়ে রাদ কানে ব্লুটুথ লাগিয়ে ল্যাপটপে কাজ করছে। সে রাগে বিড়বিড়িয়ে ‘বা’ট’পা’র’ উচ্চারণ করে এগিয়ে এসে ছোঁ মেরে ব্লুটুথ খুলে ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকায়। রাদ দাঁড়িয়ে মাথা হালকা কাত করে বলল,
‘হোয়াট?’
ইসানা ডানে – বাঁয়ে তাকিয়ে সুইচ খুঁজতে আরম্ভ করে। এক পর্যায়ে দেখতে পেয়ে ফ্লাক খুলে ফেলে। তারপর টাইপিং করে লিখে,
‘ফের যদি বক্স ছেড়েছেন আমি সত্যি সত্যি চলে যাব।’
রাদ টেক্সট পড়ে উদ্যত হয় বক্স ছাড়তে। পুনরায় সেই গানটি প্লে করে ইসানা কানে কানে বলে,
‘যান। আপনি তো বলেছেনই রুম থেকে চলে যাবেন।’
ইসানা রাগে চোখ জোড়া হালকা বন্ধ করে নেয়। মেলে চোয়াল শক্ত করে টাইপিং করে,
‘বাড়ি ছেড়ে চলে যাব বলেছি।’
‘কথা ঘোরানো কেউ আপনার কাছ থেকে শিখুক!’ সাউন্ডের কারণে চিল্লিয়ে বলল রাদ।
ইসানা রাগে নাকের পাটা ফুলিয়ে রাখে। রাদ আগ্রহ নিয়ে বলল,
‘বলুন বলুন কথা বলুন সানা।’
ইসানা নজর সরিয়ে রুম ত্যাগ করল। রাদ হেসে ফেলে।
সানার সঙ্গে করা দুষ্টুমিষ্টি খুনসুটি বেশ আনন্দ দিচ্ছে তাকে।
.
.
.
.
#চলবে?

কার্টেসী ছাড়া কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।#তোমায়_ছোঁয়ার_ইচ্ছে
#পর্ব_৩১
#সুমাইয়া_মনি

‘বৈরাগী হয়ে গেলি নাকি মুরাদ? কল দিচ্ছি ধরছিস না যে।’ রাদ হেসে জিজ্ঞেস করল ফোনের অপর প্রান্তে থাকা মুরাদকে।
‘হয় নি। হবো ভাবছি।’ শুঁখনো মুখে উত্তর দিলো।
‘হয়ে যাহ! আমি তোকে তিন তারা কিনে দিবো।’ ফিক করে হেসে দিলো কথাটি বলতে বলতে।
‘চুপ কর। গরম তেলে পানি ছিঁটাবি না।’ ঝাড়ি দিয়ে বলল।
‘এছাড়া আর করতেই বা কি পারি বল।’
‘ডুবে মা’রা যাহ।’
‘বিধবা করতে চাই না সানাকে। এখন কাজের কথায় আসি শোন। পরশু আমেরিকায় যেতে হবে আমাদের।’
‘তো যাহ!’
‘আমার সঙ্গে তুইও যাচ্ছিস।’ বলে মিটমিটিয়ে আসলো রাদ।
‘আর কোনো রাশিফারা আছে? সেটাও বলে দে। জীবনটা আমার ভা’ঙা ঢোল হয়ে গেল।’ করুণ কণ্ঠে বলল মুরাদ।
রাদ এক গাল হেসে বলল,
‘চলে আসবো তিনদিনের মধ্যেই। যাবি না?’
‘না করেছি নাকি।’
‘তাহলে যাচ্ছি আমরা।’
‘হয়।’ অতি কষ্টে ছোট করে জবাব দিলো।
‘রাখলাম।’ বলে ফোন রেখে দিলো রাদ।
বেলকনি থেকে রুমে এসে দেখে ইসানা ঘুমানোর জন্য বিছানা ঠিকঠাক করছে। পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
‘পরশু আমেরিকায় যাচ্ছি। এর আগে কি মুখে কথা বলবেন না আমার সঙ্গে সানা?’
ইসানা লিখলো,
‘নাহ!’
টেক্সট দেখে রাদ সরু নিশ্বাস ফেলল। বলল,
‘আপনার মর্জি। আমি আর ফোর্স করব না আপনাকে।’
‘থ্যাঙ্কিউ।’ টেক্সটটি পড়ে রাদ বাঁকিয়ে তাকায় ইসানার পানে।
এ জন্মেরশোধ ঠিকিই উসুল করে নিবে সে। সেটা বুঝতে অসুবিধা হলো না রাদের। সোফায় চিৎ হয়ে শুয়ে ইসানার পানে তাকায়। ইসানা টেবিল লাইট অফ করে গায়ে কম্বল জড়িয়ে নেয়। রুমটি পুরোপুরি অন্ধকার হয়নি। ডিমলাইটের আলোয় আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে চারদিক। রাদ কিছুক্ষণ ফোন ঘাটাঘাটি করে নিদ্রায় তলিয়ে যায়।
.
ব্রেকফাস্ট বানিয়ে টাইসনকে দিয়ে রাদের নিদ্রা ভঙ্গন করায়। তারপর একত্রে খেয়ে নেয়। আজও রাদ ফ্যাক্টরিতে যাবে না। আমেরিকায় যাবে বিধায় আজকের দিনটি ইসানার সঙ্গেই বাড়িতে কাঁটাবে বলে ভাবে। ইসানা এঁটো থালাগুলো নিয়ে চলে যাওয়া ধরলে রাদ থামিয়ে সার্ভেন্টদের হুকুম করে। টাইসনকে সঙ্গে নিয়ে ইসানা রুমে আসল। রাদও ইতিমধ্যে পৌঁছালো। ইসানার উদ্দেশ্যে বলল,
‘সানা শুনুন, আমার ব্যাগ গুছিয়ে রাখবেন।’
টেক্সট করল,
‘বলেন কী কী গুছাবো।’
‘আলমারিতে আছে সব। দু পিছ করে শার্ট-প্যান্ট, টি-শার্ট, আ’ন্ডা’র’ও’য়্যা’র…..’ বাকিটা বলার পুর্বে ইসানা হাত জাগিয়ে থামায়। লিখে বলল,
‘গুছিয়ে রাখব।’
রাদ স্মিত হাসলো। ইসানা টাইসনকে পাশে রেখে রাদকে ইগনোর করে শ্বাশুড়ির সঙ্গে কথা বলতে লাগলো। কিছুটা জ্বলন হতে শুরু করে তার হৃদয়ে। এড়িয়ে বাহিরে বের হয়।
__
ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে মুরাদ। সোহানা পিছন থেকে এসে বিছানায় বসে। ব্যঙ্গ করে বলল,
‘আজ-কাল দেখছি আমাকে কেউ একজন এভয়ড করে চলছে।’
মুরাদ গুরুগম্ভীর কণ্ঠে বলল,
‘কেউ একজন কেন। সরাসরিই বলো আমি তোমাকে এভয়ড করে চলছি।’
‘যাক, তাহলে বুঝতে পেরেছো। কাল নাকি আমেরিকায় যাচ্ছো? কাপড়চোপড় গুছিয়ে দিবো?’
‘লাগবে না। আমিই গুছিয়ে নিবো।’ কোমল স্বরে বলে রুম থেকে বের হতে চাইলে পিছন থেকে জ্যাকেট খামচে ধরে কাছে টেনে পিছন থেকেই মুরাদকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে।
হাসিমুখে নরম স্বরে বলে,
‘আমার মি. অভিমান করেছে। মিসের দায়িত্ব তার অভিমান ভাঙানো। তা বলুন আপনার অভিমান কী করলে ভাঙবে?’
মুরাদ মৃদু হাসে। স্বাভাবিক ভঙিতে ফিরে সোহানাকে কাছে টেনে বলে,
‘ভালোবাসা চাই তার।’
‘পাবেন। বাট..’
‘সবুরে মেওয়া ফুটে।’
‘বুঝেছেন তাহলে।’ বলে হেসে দেয়। মুরাদও হাসে।
‘বাহিরে যাচ্ছি। তোমার কিছু লাগবে?’
‘উহু!’
‘ওকে।’ বলতে বলতে কপালে চুমু দিয়ে বেরিয়ে এলো বাহিরে।
.
লিসা ইসানার সঙ্গে দেখা করার জন্য এসেছে। সঙ্গে কিছু চকলেট ও মিষ্টি নিয়ে। ওদের বিয়েতে লিসা ছিল না। পর’দিনই চলে গেছে বাড়িতে। আজ বাড়ি থেকে সরাসরি ইসানা ও রাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। দুর্ভাগ্য বশত রাদ ছিল না। ইসানা বাসায় একা ছিল। চা-নাস্তা খাওয়ার পর গল্পগুজব করছে তারা।
‘আমি আপনাকে আপু বলেই ডাকব। ভাবি বলতে পারব না। আপনি কি এতে রাগ করবেন?’
‘না। তুমি বলতে পারো আপু।’
কৃত্রিম হেসে লিসা বলল,
‘আমেরিকায় থাকতে আমি জানতে পারি রাদ আপনাকে ভালোবাসে। এটা মুরাদের কাছে জানার পর আমার ভীষণ রাগ হয়েছিল। আমি প্রচণ্ড রেগে আপনার কাছে যেতে চাইলাম। মুরাদ আমাকে আঁটকায়। আপনার সম্পর্কে সব বলে। প্রথমে আপনার অতীতের কথা জানতে পারি। তারপর জানতে পারি আন্টি নাকি আগে থেকে আপনার সঙ্গে রাদের বিয়ের কথা বলে রেখেছে। আমি আপনার অতীত জেনে নিজেকে আপনার স্থানে দাঁড় করিয়ে দেখলাম। কতোই না কষ্ট করেছেন আপনি। রাদের ভালোবাসার সুখটুকু কেঁড়ে নিতে চাইনি। তাই দূরে সরে গিয়েছি। ভাগ্যগুণে আপনি রাদকে পেয়েছেন আপু। ওঁকে তো আপনি চিনেনই। জানি বিয়েটা জেদের বশে করেছিল আগে। সেটা আপনাকে পাওয়ার জন্যই করেছে। মন থেকে রাদকে মাফ করে দিবেন আপু। তবে হয়তো রাদকে না পাওয়ার আফসোস কখনোই ঘুচবে না আমার।’ মলিন স্বরে কথাটা বলে চুপ হয়ে যায় লিসা। ইসানা লিসার মনস্তাপ বুঝতে পারে। নিরবে নিঃশব্দে সরু নিশ্বাস ছাড়ে। লিসা চটজলদি বলে,
‘এনিওয়ে, অনেক কথা বললাম। এখন উঠি। ভালো থাকবেন আপনারা। আর দেখা হবে না।’
‘কেন?’
‘আমি আমেরিকায় চলে যাচ্ছি। সেখানে আমার নতুন জব হয়েছে।’
‘হঠাৎ কেন?’
‘নিজেকে নতুন ভাবে গড়ে তুলতে। এখন যে-ই আফসোসটা হচ্ছে। সেটা হয়তো কয়েক বছর পর নাও থাকতে পারে। এই আশায়।’
‘তুমি জীবনে ভালো জীবন সঙ্গী পাবে, ইনশাআল্লাহ!’
‘দোয়া করবেন আপু।’
‘অবশ্যই!’
লিসা বিদায় নিলো। ইসানার মনে রাদকে নিয়ে ভাবনাচিন্তা উদয় হলো। পরিশেষে সেগুলো পাশে ফেলে রান্নার কাজে মনযোগ দিলো।

দুপুরে ফিরার সময় রাদ একটি গোলাপ ও চকলেট নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের ওপর রেখে একটা টেক্সট করে শাওয়ার নিতে গেল। ইসানা রুমে এসে ফোন চেক করে টেক্সট দেখে ড্রেসিং টেবিলের পানে তাকায়। গোলাপটি ভালো করে লক্ষ্য করে সুভাষ নিয়ে জায়গা মতো রেখে দেয়। এরকম সেইম মিল্ক চকলেট ইসানার কাছে ছিল। আলমারির ঢয়ার খুলে এটি সেখানে রেখে আগের চকলেটটি বের করে টাইসনকে খাওয়াতে থাকে। রাদ শাওয়ার শেষে বাথ রোব জড়িয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হয়। টাইসনকে চকলেট খাওয়াতে দেখে ভীষণ ক্ষোভ হয়। দু কদম এগিয়ে এসে তেজি কণ্ঠে বলল,
‘ওটা আপনার জন্য এনেছি।’
ভ্রূক্ষেপ নেই ইসানার। রাদের কথায় গুরুত্ব দেয় না দেখে টাওয়াল বিছানায় ছুড়ে শার্ট-প্যান্ট আলমারি থেকে বের করে অন্যরুমের দিকে এগোয়। ইসানার রাদের যাওয়ার পানে চেয়ে মুচকি হাসে। ওঁকে কিঞ্চিৎ রাগাতেই তার এই কর্মসূচি। বিড়বিড় করে বলে,
‘আমি এতটাও বোকা নই যে আপনার দেওয়া চকলেট টাইসনকে খাওয়াবো। কারো দেওয়া তিল পরিমাণ বস্তুও আমার কাছে মহামূল্যবান। আর আপনি তো আমার….।’ থেমে গিয়ে বড়ো নিশ্বাস নিলো। গোলাপটি কাঁচের গ্লাসে পানি দ্বারা ডুবিয়ে রাখলো। অর্ধ চকলেটটি টাইসনের মুখে পুরে ড্রইংরুমের দিকে এগোয়।
.
.
.
#চলবে?

কার্টেসী ছাড়া কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here