#তোর আসক্ত❤
#পর্ব – ১০
#writer_শিফা_আফরিন_মিম
🍁
রুপসা কিছুক্ষন বসে থেকে বালিশ টা নিয়ে শুয়ে পড়ে। এরকম মাথা ব্যাথা আর এতো শীতে ঘুম আসবে কি না সেও বুঝতে পারছে না।
সকালে…
মাথা টা ভার ভার লাগছে উঠতে চেষ্টা করলেও পারছে না। কিন্তু রুপসা অনুভব করতে পারছে সে নরম কিছু একটার উপর শুয়ে আছে!
রাতে তো ফ্লোরে শুয়েছিলো তাও আবার শুধু একটা চাদর বিছিয়ে। ভালো করে দেখার চেষ্টা করলো সে কোথায় শুয়ে আছে। মাথা ঘুরিয়ে পাশে তাকাতেই দেখে আয়ান!
রুপসা খাটে শুয়ে আছে আর আয়ান তার মাথার কাছে বসেই ঘুমিয়ে পড়েছে। আয়ান এভাবে কেনো বসে আছে? আর রুপসা রুমেই বা কি করে এলো? হাজারো প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তার। কোনো রকমে উঠে বসতেই আয়ান চোখ মেলে তাকায়।
রুপসা এক দৃষ্টিতে আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।
আয়ান – এখন কেমন আছো? (শান্ত গলায়)
রুপসা আয়ানের কথায় কিছু বুঝতে পারছে না। সব যেনো তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। কি হয়েছিলো তার!
রুপসা – আমার কি কিছু হয়েছিলো।
রুপসার এমন কথায় আয়ান চোখ বড়বড় করে তাকায়। এই মেয়ে তো দেখি সত্যিই একটা বাচ্চা! না হলে কেউ এই ভাবে জিগ্যেস করে? জ্বর এসেছে অথচ তার কোনো খবর নেই।
আয়ান – তোমার জ্বর এসেছিলো। কে বলেছিলো কাল ছাদে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে?
রুপসা – আচ্ছা আপনি কি বৃষ্টিতে ভেজা ও পছন্দ করেন না?
আয়ান – যদি বলি না…
রুপসা – তাহলে আমি আর কোনো দিন ভিজবো না (হালকা হেসে)
আয়ান – (সত্যিই ও অন্য রকম! কেমন আমার পছন্দ টাকে গুরুত্ব দেয়। অন্য কোনো মেয়ে হলে হয়তো এতোটা গুরুত্ব দিতো না। ওর কাছে আমার অনেক গুরুত্ব আছে বলেই হয়তো আমার সব রকম অত্যাচার সহ্য করছে…মনে মনে)
রুপসা – আমি তো বেলকনিতে শুয়েছিলাম তাহলে এখানে আসলাম কি করে?
আয়ান কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ভাবে….
(কাল রাতে আয়ান কিছু বলার আগেই রুপসা যখন বেলকনিতে চলে গিয়েছিলো তখন আয়ান বুঝতে পারে রুপসার হয়তো কিছু হয়েছে। না হলে প্রতিদিনের মতো তাকে জ্বালাতন করলো না কেনো?
আয়ান প্রথম ব্যাপার টা স্বাভাবিক ভাবে নিলেও রাতে ঘুম ভাঙে গেলে উঠে একবার রুপসাকে দেখে আসবে ভাবে। আয়ান ধীরে ধীরে বেলকনির দরজা টা খুলে দেখে রুপসা ঠান্ডায় কাঁপছে।
আয়ান – এখন তো এতোটাও শীত না। তাহলে ও এভাবে কাঁপছে কেনো? ঠিক আছে তো?
আয়ান ঝটপট করে রুপসার মাথার কাছে বসে রুপসার কপালে হাত দিয়েই চমকে উঠে।
এতো অনেক জ্বর। এতো জর নিয়েও ও এভাবে শুয়ে আছে!
আয়ান কিছু না ভেবে রুপসাকে কোলে তুলে রুমে নিয়ে আসে। তারপর বিছানায় আস্তে করে শুইয়ে দেয়।
এই মূহুর্তে কোনো ডাক্তার কে ডাকাও সম্ভব না। কাল সকাল অব্দি তো অপেক্ষা করতেই হবে। আয়ান ভাবে তার মাকে জানাবে?
মা হয়তো চিন্তা করবে তাই আর ডাকে নি। নিজেই কিছুক্ষণ রুপসার মাথার কাছে বসে জলপট্টি দেয়। তারপর রুপসার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ে আর বুঝতেই পারেনি।)
রুপসা – কী হলো? চুপ করে আছেন যে?
আয়ান – আ আমি নিয়ে এসেছিলাম।
আয়ানের কথা শুনে রুপসার মুখে হাসি ফুটে উঠে। চোখ দু’টো ভিজে আসছে। তাহলে কি সত্যিই আয়ানের মনে রুপসা জায়গা করে নিতে পেরেছে?
আয়ান – তুমি ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করো। আমি ডাক্তার কে ফোন করে বলে দিচ্ছি উনি এসে দেখে যাবে তোমাকে। বাই দ্যা ওয়ে তুমি উঠতে পারবে তো? মাথা ব্যাথা কমেছে?
রুপসা – হ্যা পারবো। (মুখে হাসি নিয়ে)
আয়ান – ঠিক আছে উঠে এসো।
রুপসা উঠার চেষ্টা করলেও অনেক কষ্ট হচ্ছে তার। জ্বর টা যে কমে নি। মাথা টাও ভার হয়ে আছে। কোনো রকমে খাটের কোণে ধরে উঠার চেষ্টা করছে।
আয়ান দেখেই বুঝতে পারছে এই মূহুর্তে রুপসার উঠে আসা সম্ভব হবে বলে মনে হইনা। আয়ান এগিয়ে এসে রুপসাকে ধরে দাড় করায়। আস্তে আস্তে ওয়াশরুমের কাছে নিয়ে যায়।
রুপসা – আমি যেতে পারবো আপনি যান। (মুচকি হেসে)
আয়ান – ওকে তুমি আসো। আমি রুমেই আছি।
রুপসা – ঠিক আছে।
রুপসা ওয়াশ রুমে চলে গেলে আয়ান খাটে বসে থাকে। কিছুক্ষণ পরই রুপসা বের হয়ে আসে।
আয়ান আবার রুপাকে ধরে ধরে নিয়ে খাটে বসায়।
আয়ান রুপসার পিঠের দিকে একটা বালিশ দিয়ে আধশোয়া করে বসিয়ে দেয়।
আয়ান – তুমি একটু বসো। আমি আসছি। একদম উঠবে না কেমন?
রুপসা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।
আয়ান দ্রুত নিচে আসে। আয়ানের মা টেবিলে খাবার সাজিয়ে রাখছে আর আমান বসে ফোন টিপছে।
আয়ানের মা – কিরে রুপসা কোথায়?ও উঠে নি?
আয়ান – হ্যা মা উঠেছে।
আয়ানের মা – তাহলে ও আজ নিচে আসলো না যে?
আয়ান ভাবে তার মাকে সবটা বলে দিলেই ভালো হয়।
আয়ান – আসলে মা ওর জ্বর এসেছে।
আয়ানের মা – কী বলছিস! কখন? তুই আমাকে আগে বলিস নি কেনো? এই জন্যই তো আজ মেয়েটাকে দেখছি না।
আয়ান – মা তুমি ব্যাস্ত হয়ো না। আমি রাতে ওর মাথায় জলপট্টি দিয়েছি।
আমান – শুধু জলপট্টি দিলেই তো সারবে না ভাইয়া। ডাক্তার কে ফোন করি দাঁড়াও।
আয়ান – আমি ফোন করেছি। উনি আসবেন কিছুক্ষণের মধ্যে।
আমান – আচ্ছা। তুমি ভাবির খেয়াল রেখো কিন্তু।
আয়ান – হ্যা। বলছি যে মা ওর ব্রেকফাস্ট টা রুমে নিয়ে যাই। আসলে ও ভালো করে উঠে দাড়াতেও পারছে না তাই…
আয়ানের মা আয়ানের কথা শুনে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। এই কি সেই আয়ান যে কিনা রুপসাকে সহ্যই করতে পারতো না!
আয়ানের মা তারাতারি করে রুপসার জন্য খাবার রেডি করে দেয়।
আয়ানের মা – এই নে যা বাবা মেয়েটা তো এখানে এসে খেতেও পারবে না তার চেয়ে ভালো তুই ওকে রুমেই খাইয়ে দিয়ে
আয়।
আয়ান – আচ্ছা মা। — আয়ান খাবার টা নিয়ে চলে যায়।
খুশিতে আয়ানের মার চোখে পানি চলে এসেছে।
আমান – মা আমার কি মনে হই জানো? ভাবির প্রতি ভাইয়ার মায়া জন্মেছে। তুমি দেখো ভাইয়া ঠিক ভাবিকে মেনে নিবে।
আয়ানের মা – হ্যা বাবা তাই যেনো হয়। মেয়েটাকে যেনো আর কষ্ট পেতে না হয়।
আয়ান রুমে এসে দেখে রুপসা ঠিক আগের মতোই বসে আছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে মেয়েটার বসে থাকতে বোধহয় কষ্ট হচ্ছে।
আয়ান খাবার টা নিয়ে রুপাসার পাশে বসে নিজের হাতে রুপসার মুখের সামনে খাবার টা ধরে।
আয়ান – নাও… খেয়ে নাও। ডাক্তার বোধহয় চলে আসছে।
রুপসা জেনো নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না। আয়ান তাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিচ্ছে!
রুপসা হাসিমুখে খাবার নিয়ে নেয়।
আয়ান রুপসাকে খাইয়ে দিয়ে পানি খাওয়ায় তারপর নিজের পকেট থেকে রুমাল বের করে রুপসার মুখ টা মুছে দেয়।
আয়ান – নাও এবার শুয়ে পড়ো। ডাক্তার আসুক।
রুপসা ও বাধ্য মেয়ের মতো আয়ানের কথায় শুয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পর রুপসার শশুর শাশুড়ি আসে সাথে আমান ও আসে।
তাদের দেখেই বুঝা যাচ্ছে অনেক টেনশন এ আছে।
আয়ানের মা – এখন কেমন আছিস মা?
রুপসা – ভালো মা।
আয়ানের বাবা – কোনো ঔষধ খাওনি। ঠিক মতো উঠে দাড়াতেও পারছো না কি করে বলছো ভালো আছো? তুমি মিথ্যে বললেই বুঝি আমরা মেনে নিবো?
রুপসা – না বাবা সত্যিই এখন একটু ভালো আছি। আপনারা শুধু শুধু চিন্তা করছেন।
আমান – ভাইয়া (আয়ান কে উদ্দেশ্য করে)
ডাক্তার আসছে তো।
আয়ান – হ্যা। আসলে অনেক সকালেই তো ফোন দিয়েছিলাম বোধহয় ঘুম থেকে উঠেন নি। এতোখনে চলে আসছে হয়তো।
আয়ানের মা রুপসার মাথার কাছে বসে…
আয়ানের মা – রুপসা তুমি এখন রেস্ট করো। আর হ্যা কিছু লাগলে আয়ান কে বলো কিন্তু কেমন?
রুপসা – ঠিক আছে মা।
কিছুক্ষণ পর ডাক্তার আসে রুপসাকে দেখে কিছু ঔষধ লিখে যায়। আয়ান আমান কে পাঠায় ঔষধ আনতে কারন সে রুপসাকে একা ছেড়ে যেতে চাচ্ছে না।
আয়ান একগ্লাস গরম দুধ আনে। দুধের গ্লাস টা বিছানার পাশের টেবিল টাতে রেখে রুপসাকে ডাকে…
আয়ান – রুপসা…. একটু উঠো।
রুপসা – কেনো?
আয়ান – দুধ টা খেয়ে নিবে উঠো।
রুপসা দুধের কথা শুনতেই কেমন বমি চলে আসে। বেচারির এই একটা মহা সমস্যা! দুধ খেতে পারে না। খাবে কী দেখলেই তো দৌড়ের উপর থাকে।
রুপসা – এ এখন তো ক্ষিদে ন নেই।
আয়ান – না থাকলেও খেতে হবে। চুপচাপ উঠে বসো ফাস্ট।
রুপসার এই মূহুর্তে কেঁদে দিতে ইচ্ছে করছে। এখন কী বলবে আয়ান কে? কি বলে ম্যানেজ করবে। সে তো কোনো ভাবেই দুধ মুখে দিবে না।
রুপসা – আমি দুধ খেতে পারি না। ব বমি আসে… (ভয়ে ভয়ে)
রুপসার কথা শুনে আয়ান রেগে রুপসার দিকে তাকায়৷
আয়ান – এই মেয়ে এমনিতেই এতো দূর্বল হয়ে গেছো উঠে দাঁড়াতে পর্যন্ত পারছো না আবার বলছো বমি আসে? (ধমক দিয়ে)
আয়ানের ধমকে রুপসা খনিকটা কেঁপে উঠে। ভয়ে কেঁদেই দিয়েছে। কিন্তু আয়ান নাছোড়বান্দা! না খাইয়ে যাবে না।
আয়ান এক প্রকার টেনে রুপসাকে শোয়া থেকে উঠায়। তারপর রুপসার মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেঁপে ধরে দুধের গ্লাস না রুপসার মুখের সামনে আনে।
রুপসা – বমি আসে। প্লিজ জোর করবেন না।
আয়ান – আর একটা কথা বললে থাপ্পড় মেরে গাল ফাটিয়ে দিবো। খাও বলছি।
রুপসা আয়ানের ধমকানিতে কিছুটা দুধ খেয়ে নেয়।
আয়ান – করেছো বমি? (দাঁতে দাঁত চেপে)
রুপসা অসহায় ভাবে মাথা নাড়িয়ে না করে।
আয়ান – বাকিটা শেষ করো। কুইক!
চলবে…