পবিত্রতার_ছোঁয়া পর্ব ১১

#গল্প :#পবিএতার_ছোঁয়া
#পর্ব :# 11
#লেখিকা:#জাবিন_মাছুরা [ছদ্মনাম]

মিহুর মা: বিয়েটা যে মিহুর ওপর এমন ভাবে এফেক্ট পড়বে তা আমি ভাবতে পারি নি। আমার মেয়েটা যে তাহসিনকে এতো অল্প সময়ে ভালোবাসে ফেলবে তাও ভাবতেও পারি নি।এটা কি ভালোবাসা নাকি আবেগ,,,, [মিহুর দিকে তাকিয়ে]। রাফি যে সেই ছোট্ট থেকে মিহুকে কোনদিনই বোনের নজরে দেখেনি। রাফি কী মানতে পারবে তাহসিন আর মিহুর বিয়ের বিষয়টা। আমারা কী অন্যায় করে ফেললাম,,,,

মিহুর মা কথাগুলো বলতে বলতে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন,,,

||

সকালে বেলা জানালার পর্দা ভেদ করে মিষ্টি রোদ এসে আমার মুখে পড়তেই, আমার ঘুম ভেঙে গেল। ঘুমের ভাব কাটতেই ঘড়ির দিকে তাকালাম। আটটা বেজে গিয়েছে। মাথার মধ্যে কেমন যেন করছে। আমি বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। প্রায় পনেরো মিনিট পর শাওয়ার নিয়ে বের হলাম।
এখন অনেকটা ভালো লাগছে। কিছুখন পর মা খাবার নিয়ে ঘরে চলে এলো। মা আমাকে দেখে হালকা হেঁসে বলল,,,

আম্মু : এখন কেমন লাগছে? গোসল করলি কখন,,,

আমি :ভালো। এই মাএই,,

আম্মু : গোসল করে ভালোই করেছিস। নে এবার তারাতারি খেয়ে নে,,,

আমি : আচ্ছা। আম্মু ভাইয়া ঘুম থেকে উঠেছে?

আম্মু : না। রাফির তো নয়টা না বাজলে ঘুম ভেঙে না,,,

আমি:ওহহ, খাইয়ে দাও,,,

আম্মু : ঠিক আছে,,

আম্মু আমাকে সুন্দর করে নিজের হাতে খাইয়ে দিল। তখনই রাফি ভাইয়া আমার রুমে এলেন,,,

রাফি : কিরে মিহু আজকে ঘুরতে যাবি না?

আমি : না যাব না। ভালো লাগছে না,,,

রাফি : না তুই যাবি।দেখবি ঘুরতে গেলে মন শরীর দুটোই ভালো হয়ে যাবে,,,

আম্মু :হ্যাঁ মিহু রাফি ঠিক বলছে।

আমি :কিন্তু,,

আম্মু : খেয়ে তমাকে ফোন দে,,,

আমি: ঠিক আছে,,,

রাফি : ফুপি ওর স্যারকে কেন আমাদের মাঝখানে ঢুকালে?

আম্মু : দরকার আছে তাই,,,

রাফি : কেন?,,,

আম্মু : তোকে জানতে হবে না।

আম্মু বেশি কথা না বাড়িয়ে ঘর থেকে চলে গেল।

রাফি : এই তোদের কী হয়েছে রে,,,

আমি: কিছু হয়নি,,,

রাফি : আমার কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছে,, [মনে মনে]

রাফি : মিহু রানী তুই কি খেতে পছন্দ করিস?

আমি : কিছু না,,,

রাফি : এর জন্যই তো শরীরে এই অবস্থা,,, কয়েকদিন পর তো বাতাসের সাথে উড়ে যাবি,,,

আমি : চুপ,,,

রাফি : তুই আমার সাথে কথা বলছিস না কেন?

আমি : বলছি তো,,,

রাফি : তাহসিন এর কাছে কবে থেকে পড়ছিস?

আমি :প্রায় এক মাস,, তাছাড়া স্যারকে আমি আগে থেকেই চিনি,,,

রাফি : ওহহ

আমি :ভাইয়া আমি পড়তে বসবো। তুমি যাও তো,,,

রাফি : তুই আমাকে ইগনোর করছিস কেন?

আমি : তুমি ভুল বুঝেছ,,

রাফি :আমি কিন্তু সব বুঝতে পারি,,,

আমি আর কোন কথা না বলে পড়তে বসে পড়লাম।

রাফি : আমাকে এই তাহসিন একটা ব্যবস্থা করতে হবে। নাহলে যেকোনো সময় মিহু রানীকে হারিয়ে ফেলতে হতে পারে,, [মনে মনে]

ভাইয়া কিছু ভাবতে ভাবতে ঘর থেকে চলে গেল।
ভাইয়া যাওয়ার পর আমি তমাকে ফোন দিলাম,,,

আমি: হ্যোলো,,, তমা?

কিন্তু তমার জায়গায় আন্টি ফোন ধরলেন। আন্টি সাথে কিছুখন কথা বললাম। তারপরে আন্টি তমাকে ফোন দিলেন।

তমা: কেমন আছিস মিহু?

আমি : ভালো। তুই?

তমা : ভালো।কী করিস?

আমি : কিছু না। তোকে যে কথা বলাতে ফোন দিয়েছি শোন, এখন আমাদের বাসায় চলে আয়।

তমা: কেন?

আমি :বিকেলে ঘুরতে যাব.,,,

তমা: সত্যি,, [খুশি হয়ে]

আমি : হ্যাঁ।

তমা: ঠিক আছে আসছি। রেডি হব রাখি।

আমি: বাই,,

||

দুপুরে তমা চলে এলো। তমাকে বললাম রাফি ভাইয়ার কথা।

আমি : ভাইয়া আমাদের নিয়ে যাবে।

তমা : সমস্যা নেই।রেডি হস নি কেন?

আমি : আরে গাধী এখন তো যাব না। বিকেলে যাব।

তমা:ওহহ,,

আমি আর তমা অনেক কথা বললাম। কখন যে বিকেল হয়ে গেলো বুঝতে পারলাম না।হঠাৎ করে রুমের ভেতর রাফি ভাইয়া চলে এলো,,

রাফি : কিরে মিহু রানী, এখনো রেডি হস নি?

আমি : হচ্ছি ভাইয়া।দশ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে আসছি.,,

ভাইয়া তমার দিকে এক পলক তাকিয়ে তাড়াতাড়ি কর ‘বলে বেড়িয়ে গেল।

আমি হলুদের মধ্যে কালো একটা লং ফ্রগ পড়লাম। সাথে কালো প্যান্ট আর আলো হিজাব পড়লাম। তমা সাদা একটা ড্রেস পরেছে আর চুলগুলো খোলা রেখেছে।

তমা: তোকে না অনেক সুন্দর লাগছে। আজকে দেখবি সবাই তোর দিকে চেয়ে থাকবে। একদম হলুদ পরীর মতো লাগছে,,,

আমি: মিথ্যা বলছিস কেন? তোকে আমার থেকে বেশি সুন্দর লাগছে।

তমা: সত্যি বলছি। আমি তো ক্রাস খেলাম তোর ওপর.,,

আমি : চল দেরি হয়ে গেল।

তমা: চল।

আমি আর তমা বের হলাম। তমা আমার আগেই বাইরে চলে গেল। ভাইয়া আগে থেকে বাইরে আছে। আমি স্যার আসছে কি না মনে মনে ভাবতে ভাবতে বের হয়ে এলাম। কিন্তু বাইরে এসে দেখলাম তমা শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আমি : কিরে দাড়িয়ে আছিস কেন? চল।

তমা : সামনে তাকা।

আমি তমার কথা মতো সামনের দিকে তাকালাম। দেখলাম তাহসিন স্যার গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পরনে সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট। তার কালো সিলকি চুলগুলো বাতাসে দোল খাচ্ছে। কিন্তু সে কোন দিকে না তাকিয়ে ফোন স্কল করছে। আমি এই প্রথম তার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলাম।কিন্তু আমার কালকের স্বপ্নের কথা মনে পড়তে মনে এক অজানা ভয় হলো। স্যারের যদি কিছু হয়ে যায়,,,

তমা : আমি যাব না।

আমি : কী। কেন? [তমার কথায় আমার ধ্যান ভাঙল]

তমা: তুই আমাকে আগে বলবি না যে স্যার ও আমাদের সাথে যাবে,,

আমি : বললে তো তুই আসতি না। তাই বলিনি। এখন চল।

আমি আর তমা গাড়িতে ওঠলাম। আমরা পিছনে বসলাম। ভাইয়া আর স্যার সামনে বসলেন। স্যার ড্রাইভিং করছেন। ভাইয়া বসার পড়েই বললেন,,,

রাফি : মিহু রানী তোকে না অনেক সুন্দর লাগছে। একদম পরীর মতো।

আমি : ধন্যবাদ।

আমি আর তমা গাড়ির ভেতরে কোন কথা বলাম না। কিন্তু ভাইয়া সারা রাস্তা স্যারের কাছে আমার কথা বলতে লাগল। স্যার যে রেগে যাচ্ছে তা আমি ঠিকই বুঝতে পারছি। ফর্সা মুখ কেমন যেন লাল হয়ে গিয়েছে।

||
গাড়ির থেকে নেমে ভাইয়া আমাদের ফুচকা খাওয়ালেন। কিন্তু স্যার অন্য দিকে ঘুরছেন। আমাদের দিকে তাকালেন না।

তমা : ভালো হয়েছে স্যার আমাদের সামনে নেই। থাকলে গলা দিয়ে খাবার নামতো না।

আমি : হুম।

আমার মনটা অনেক খারাপ লাগছে। কারন স্যার আমার দিকে ভালোভাবে তাকান নি। তার খুবই অহংকার। খারাপ লোক একটা।

ভাইয়া : আরো কিছু খাবি?

তমা : হ্যাঁ ।আইসক্রিম খাব।

রাফি : ঠিক আছে ।আমি তোদের জন্যে আইসক্রিম নিয়ে আসছি।

কিছুখন পরই ভাইয়া আইসক্রিম নিয়ে এলো। আমি আর তমা হেসে হেসে কথা বলে আইসক্রিম খেলাম।
খাওয়া শেষ করতেই ভাইয়া একটা চুরির দোকান এর সামনে নিয়ে এলো।

রাফি : মিহু দেখ তো তর কোনটা ভালো লাগে,,,

আমি : না ভাইয়া আমার চুরি লাগবে না।

ভাইয়া আমার হাত নিয়ে এক মুঠো কালো চুরি পরিয়ে দিল। তমাকেও কিনে দিল।

||

দূর থেকে তাহসিন সব দেখল। তাহসিন আর রাগ কন্ট্রোল করে থাকতে পারল না। কেন রাফি মিহুর হাত ধরবে, কেন? তাহসিন আর না থাকতে পেরে মিহুর কাছে এসে মিহুর হাত শক্ত করে ধরলো।

আমি : আহহ।ব্যথা পাচ্ছি, ছাড়েন।

সাথে সাথে রাফি মিহুর হাত ছেড়ে দিল।

রাফি আর তমা শুধু তাহসিন আর মিহুর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তাহসিন এতো জরে মিহুকে টান দিল যে রাফি কিছু বলার সুযোগ পেলো না।

তাহসিন মিহুকে টানতে টানতে গাড়ির ভেতরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল,,,
(# চলবে)

[ব্যস্ততার জন্য গুছিয়ে লিখতে পারিনি]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here