পরানের দুলাভাই পর্ব -০৮

#পরানের দুলাভাই”🕵
#সেলিনা আক্তার শাহারা”
পর্ব-৮
———–*——-
২ মাসে নিতুর দুলাভাই ডাকার অভ্যাস টাও পালটে গেছে,
সে এখন আর দুলাভাই বলে ডাক দেয় না,
এই যে শুনছেন, শুনুন না, বাস এভাবেই ডাকে,
কিন্তু মুগ্ধ বহু চেষ্টা করেও নিতুর মুখ থেকে তুমি বলাতে পারেনি,

নিতুর পরিক্ষা কাল থেকে,
তাই মুগ্ধ একটু কম জ্বালাতন করে নিতুকে, নয়তো পরিক্ষা খারাপ হতে পারে,রোজ অফিস থেকে এসে নিতুকে পড়াতে বসিয়ে পাশে বসে থাকে মুগ্ধ স্বামী কিংবা প্রেমিক হয়ে নয়,
এক জন কড়া মিজাজি মাস্টার হয়ে, নিতু পড়তে বসে মুগ্ধকে হাজার টার ও বেসি বকা দেয় মনে মনে, খাটাস ইতর লুচু লোক পড়ায় এখানে চোখ অন্য খানে, জেনো আমি কিছু বুঝিনা,
এসব বলেই মনে মনে বির বির করে,
মুগ্ধ ও তার মনের ভাষা পরতে পারে,

নিতু গালাগালি না করে পড়ায় মন দাও, পরিক্ষা খারাপ হলে কিন্তু তোমার কি হাল করবো ভাবতেও পারবেনা গট ইট( মুগ্ধ)

নিতু জিব্বায় কামর দিয়ে আবার পড়ায় মন দেয়, রাত ১১ টা বেজে গেছে নিতুর ঘুম পাচ্ছে খুব, ব্যাটা বজ্জাত নিজেও ঘুমায় না আমাকেও ঘুমাতে দেয় না(, মনে মনে নিতু)

মুগ্ধ হুট করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো, নিতু অবাক এত রাত কই গেল??
কিছুক্ষন পর মুগ্ধ ২ কাপ কফি নিয়ে রুমে ঢুকে, নিতু এবার বুঝতে পারছে মুগ্ধ কোথায় গিয়েছিলো।
চুপচাপ দুজন কফিটা খেয়ে কিছুক্ষন পড়ে,
তার পর ঘুমুতে জায়,
আজ কাল মুগ্ধের একটা অভ্যাস হয়ে গেছে, পাগল এর মত নিতু জরিয়ে তার বুকে মাথা না রাখলে ঘুম হয় না, রোজ এটাই করে সে নিতুর বুকে মাথা রেখে জরিয়ে ধরে ঘুমায় মুগ্ধ,
নিতুও আপন মনে তার মাথায় বিলি কেটে দেয়,

এইতো কয় দিন আগে নিতু তার বাপের বাড়ি গিয়েছিলো তার বান্ধবির কাছ থেকে কিছু নোট আনতে, কিন্তু সন্ধায় তার মায়ের অনুরুধ রাতটা জেনো সে এখানে থাকে কত দিন পর মেয়েকে পেলো তাই।
নিতুও তার মায়ের মন রাখতে মুগ্ধকে কল করে বলে,
মুগ্ধ বেচারা কি করবে শাশুরির কাছে তো আর বলতে পারেনা “” না আমার নিতুকে ছারা চলবেনা ওকে আসতে দিন”””

তাই শুধু হুম বলে ফোন রেখে দেয়,
একটু রাত হয় মুগ্ধের অফিস থেকে সেদিন ফিরতে, ইচ্ছা করেই লেট করেছে কারন ঘরে তার নিতু নেই কি হবে তারাতারি গিয়ে,

না খেয়েই শুয়ে পরে মুগ্ধ, তার মা আর অনিকা অনেক ডেকেছে খেতে, সে খাবেনা বলেই দরজা লক করে দিয়েছে,

রাত প্রায় একটা মুগ্ধের ঘুম নেই বারান্দা দারিয়ে আছে, ভাবছে নিতুকি ঘুমিয়ে গেলো কল করে দেখব নাকি।

নিতুর ও ওদিকে ঘুম নেই রাতে খায়নি ভালো করে,
নিতুর মা সব বুঝতে পেরেছে তাই শুধু মুচকি হাসি দিয়ে বললো যা ঘুমা,

২ টার দিকে কলিং বেল এ শব্দ সবাই উঠেছে এত রাতে কে বাড়িতে ডাকাত পরল নাতো,
সবার মুখে চিন্তার ভাজ,
এবার দরজা খুলতে দেরি হওয়ার দরজায় এবার ধাক্কা ও দিচ্ছে,
নিতুর বাবা সাহস নিয়ে দরজা খুলে দেয়,
দরজার বাহিরের লোক টাকে দেখে সবাই অবাক,

মুগ্ধ দারিয়ে আছে বাহিরে,
সে রাত এ থ্রিকোয়াটার পেন্ট ও গেন্জি পরে ঘুমায়, এটা পরেই সে শশুর বাড়িতে হাজির,
নিতুর মা কোন রকম হাসি চেপে বললো আরে বাবাজি জে এসো এসো,
মুগ্ধ কে নিয়ে নিতু তার রুম চলে আসে,
সাথে সাথেই নিতুর মা খাবার নিয়ে এসে বলে বাবা মনে হয় রাত খাওনি মুখটা শুকনো লাগছে,
নাও খেয়ে ঘুমিয়ে পরো,
বলেই নিতুর মা চলে যায়,নিতুর মা আজ খুব খুশি এমন মেয়ের জামাই যে মেয়েকে ছারা থাকতেই পারেনা,

মিতুটা কেমন করে এমন ছেলেকে কষ্ট দিয়েছে ভেবেই দুফুটা চোখ এর জল ফেলে তার রুম এ চলে গেলো।

নিতু খাবার এনে মুগ্ধের সামনে সাজিয়ে দিলো,
মুগ্ধ মুখ বাকা করে অন্য দিক ফিরে আছে,
সে খুব রাগ কেমন করে একা ফেলে চলে এলো, আমার কথা ভাবলোনা, তাই সে রাগ,
নিতু এবার মুচকি হাসি দিয়ে মুগ্ধকে খাইয়ে দিতে গেলো, মুগ্ধও বাচ্চাদের মত চুপ করে খেয়ে নিলো।
নিতুকেও দুবাইট খাইয়ে দিলো।

খাওয়া শেষে মুগ্ধ বলে উঠলো এই তোমার বাপের বাড়ি আসা শেষ আজ কে , তুমি আর আসবেনা আমি একা থাকতে পারব না এক মুহুর্তও থাকতে পারবোনা তোমায় ছারা জদি আসতে হয় আমিও সাথে আসব বুঝছো ( হালকা রেগে মুগ্ধ)

ওকে মাই ডিয়ার আর এমন ভুল হবেনা, তোমায় রেখে কোথায়ও জাবোনা প্রমিস। ( নিতু)
বলেই দুজন এ একটু গল্প করে ঘুমিয়ে পরে,
মুগ্ধ আর নিতু একে অপরকে পাগল এর মত জরিয়ে ধরে রেখেছে দেখে মনে হবে ছারা পলেই হয়তো এক জন পালিয়ে জাবে।

সেদিন পর পর থেকে মুগ্ধ কে রেখে বাপের বাড়ি জাওয়ার কথা চিন্তাও করেনা।

বর্তমানে,

সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে সবার কাছ থেকে দোয়া নিয়ে নেয় নিতু,
কল করে মা বাবার কাছথেকেও দোয়া নিলো।
মুগ্ধ আর নিতু বেরিয়ে গেলো অফিস জাওয়ার পথে নিতুকে নামিয়ে দিলো, আর পরিক্ষার পর এসে নিয়ে জাবে বলেই অফিস এর পথে পা বাড়ালো।

নিতুর পরিক্ষা শেষ মুগ্ধের অপেক্ষায় দারিয়ে ছিলো, মুগ্ধ একটা মিটিং এ আটকে গেছে আসতে লেট করে ফেলেছে,
নিতু সেই কখন থেকে ওয়েট করছে,
এবার একটা বাইক এসে নিতুর সামনে থামে নিতু মাথা উঠিয়ে দেখে জাইন এসেছে,
আরে জাইন ভাইয়া তুমি, ( নিতু)
হুম দারিয়ে আছিস কেন বাসায় জাবিনা( জাইন)
হ্যা ওনার জন্য ওয়েট করছি ( নিতু)
ওহ কল দিয়ে দেখ কতটুক এলে নয়তো আমি ড্রপ করে দেই আয়( জাইন)

না না ভাইয়া তোমার কষ্ট করতে হবেনা উনি এক্ষনি চলে আসবে হয়তো একটু কাজে আটকা পরেছে, এটা বলতে বলতেই মুগ্ধের আগমন,
দুজন কে এক সাথে দেখে মুগ্ধ একটু রেগে গেলো তবু প্রকাশ করলোনা জাইন কে না দেখার ভান করে নিতুকে বললো গাড়িতে উঠো,
নিতুও আচ্ছা ভাইয়া আসি বলে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে যায়,

জাইন দারিয়ে দারিয়ে হাসছে আর বলছে,
আর বেসি দেরি নেই নিতু তোমায় আমার কাছে আসতেই হবে আর তা তুমি নিজে থেকেই আসবে।
কারন তোমায় মুগ্ধ কে আর তুমি পাচ্ছো না বলে বাকা হাসি দিয়ে চলে গেলো।

নিতু আর মুগ্ধ ও বাড়ি এসেছে
মুগ্ধের মন টা ভালোনা
নিতু মন খারাপ এর কারন টা খুজেও পাচ্ছেনা,
তাই মুগ্ধকে জরিয়ে ধরে বলে তুমি কি কোন কারনে আমার উপরে রাগ করেছে???

কই না তো ( অন্যদিক ফিরে মুগ্ধ)

নিতু বেস বুঝতে পারছে মুগ্ধের মন ভালো না,
তাই তার রাগ ভাংগাতে তার ২ মিনিট ও লাগবেনা।

মুগ্ধ কে জরিয়ে ধরে চুমু দিতে থাকে,
কপালে মুখে বুকে পিঠে অজস্র চুমু দিতেই থাকে,
মুগ্ধ ও এবার নিতুকে জরিয়ে ধরে চুমু দিতে থাকে, এমন বৌ এর উপর কি রাগ করে থাকা জায়,

মুগ্ধ এবার পাগল করা চুমু দিচ্ছে নিতুকে, কত দিন নিতুকে আপন করে পায় না শুধু পরিক্ষার জন্য দুরে রাখে, কিন্তু আজ আর মন কে মানাতে পারছেনা,

নিতুকে এবার মুগ্ধ বলে আজ কোন ছার নেই নিতু তুমি আজ শেষ, বহু দিন পর পেয়েছি বলেই ওকে
কোলে তুলে নিয়ে খাটে শুইয়ে দিয়ে তারা এক অন্য রকম জগতে হারিয়ে গেলো, নিতু ও কোন কথা বলে নি কারন তার মুগ্ধকে তার চাই, তাই মুগ্ধকে সেও আকরে ধরেছে।

/
/

এখন থেকে নিতুকে কলেজ এ পৌছে দিয়ে
কলেজ ছুটি হওয়ার আধা ঘন্টা আগেই চলে আসে,

এভাবেই সব কয়েকটা পরিক্ষা হল, একটা শুধু বাকি,
শেষ পরিক্ষার দিন নিতুকে একটা চুমু দিয়ে কলেজ এ নামিয়ে দিয়ে অফিস এ চলে গেলো।

পরিক্ষা শেষে নিতু দারিয়ে আছে বিকেল হয়ে আসছে মুগ্ধ আসার নাম গন্ধ নেই, ফোনটা অফ,
নিতুর এবার চিন্তা হচ্ছে তাই একটা রিক্সা করে বাসায় চলে এলো,
কলিং বেল চাপ দিতেই কনিকা দরজা খুলে দিলো,
কনিকাকে দেখে বুঝা জাচ্ছে সে কান্না করেছে বাড়ির ভিতরে ঢুকে দেখে সবাই ড্রইং রুম এ বসা সবার মুখে কোন কথা নেই অনিকা ও কনিকার স্বামিও এখানে বসা,
মুগ্ধর মা কান্না করছে,
নিতু কিছুই বুজে উঠতে পারছে না কি হয়েছে,

এবার নিতুর মনে ভয় আরো বেড়ে গেলো সে ধিরে পায়ে তার রুম এ গেলো,
গিয়ে যা দেখলো তাতে নিতুর পুরো দুনিয়া পালটে গেছে, মুগ্ধ কে কোন একটা মেয়ে জরিয়ে ধরে রেখেছে, মুখটা দেখা যাচ্ছেনা,

নিতুর চোখ বেয়ে পানি পরছে, তার হাত থেকে ব্যাগটা পরে গেলো,
আর সেই আওয়াজ এ মুগ্ধ ও সেই মেয়েটা ফিরে তাকলো নিতুর দিকে,
মুগ্ধের চোখ নিতুর দিকে জেতেই সে পিছপা হয়ে গেলো,
আর মেয়েটা কে তো সে চিনে খুব ভালো করেই চিনে,
এবার নিতু দারানো থেকে ধপ করে ফ্লোরে বসে পরে,

এটাতো নিতুর বড় আপু মিতু।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here