#পরিসংখ্যান
পর্ব-৩
#tani_tass_ritt
এতো সুন্দর কেউ কিভাবে হতে পারে জানা নেই শাফিনের।
অন্ধকারেও যেনো জ্বলজ্বল করছে।কোমর অব্দি কোকড়া চুল। ঠোঁটের কাছে ছোট্ট একটা তিল যেনো এই মেয়ের সৌন্দর্য হাজার গুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।
“সরি। ” আমি আসলে বুঝতে পারিনি।”মেয়েটা বললো।
শাফিন তখনো হা করে তাকিয়ে আছে।মাহিদের ডাকে হুশ আসলো তার।
“আরে বেটা কি ভাবছিস? ও আমার চাচাতো বোন রুপশা।”মাহিদ বললো।
” এই মেয়ে এমন রাতবিরাতে ঢ্যাং ঢ্যাং করে কোথায় যাচ্ছিস?”
“আরে ভাইয়া বাসায় কারেন্ট নেই তো তাই গরম লাগছিলো।”
“আচ্ছা এখন বাসায় চল। তার আগে তোদের পরিচয় করিয়ে দেই।ও শাফিন আমার ফ্রেন্ড।”
“হাই ভাইয়া।”
শাফিন এবার আরো অবাক হলো।এই মেয়ের মধ্যে গ্রামের ছিটেফোটাও নেই।শাফিন একটা হাসি দিলো।
শাফিন মাহিদ কে দেখে সবাই অনেক খুশি হলো।সব থেকে খুশি হলো মাহিদের দাদা।কেনোনা মাহিদ তার খুব আদরের নাতি।
শাফিনের চোখ যেনো রুপশাকেই খুঁজছে।মেয়েটা যে কই গেলো। ওরা ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। এতো পথ জার্নি করে আসার জন্য অনেক টায়ার্ড তারা।
এইদিকে রাহিয়া শাফিনকে কল করে করে অস্থির কিন্তু শাফিনের ফোন অফ। তার কিছু ভাল্লাগছে না। ফোনটা বিছানার উপর ঢিল দিয়ে ফেলে সে ছাদে চলে গেলো।
ছাদে গিয়ে দেখলো কেউ একজন সিগারেট টানছে।ভালো করে খেয়াল করে বুঝতে পারলো এটা রিমন।রাহিয়ার মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেলো। যেই না আবার ব্যাক করবে তখনি রিমনের ডাক শুনতে পেলো।
“কই যাচ্ছো? আমার থেকে আর কতদিন পালিয়ে বেড়াবে তুমি?”
রাহিয়া থেমে গেলো।আল্লাহ জানে এই ছেলে ওর উপস্থিতি কিভাবে টের পায়।যেখানের শাফিনের পাশে গিয়ে দাড়ালেও সে বুঝতে পারেনা।
রিমনের পাশে গিয়ে দাড়ালো সে।
“তুমি আবার সিগারেট খাচ্ছো?”
“কেউ তো খেতে না করেনা।”
“উফ তোমার এইসব কথাই আমার পছন্দ না।এতো রাতে এখানে কি করো?”
“এমনি ভালো লাগছিলোনা। তুই এতো রাতে ছাদে কেনো? শাফিনের সাথে কিছু হয়েছে?”
“নাহ ওর সাথে কি হবে আর।”
“তোর কি মনে হয় তুই শাফিনকে ভালোবাসিস?”
“এটা কেমন কথা।৪ বছর একটা মানুষের সাথে রিলেশন কি এমনি এমনি করেছি নাকি ভালোনা বাসলে!”
রিমন আর কিছু বললো না। দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে আবার সিগারেট খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।
“তুমি বিয়ে কেনো করছো না? ”
“যখন সময় হবে অবশ্যই করবো। তুই এখন এখান থেকে যা তো। ”
রাহিয়া বুঝতে পারলো রিমনের মেজাজ খারাপ।কিন্তু কেন খারাপ কে জানে।এইসব ভাবতে ভাবতে সে রুমে চলে এলো।লাইট অফ করে শুয়ে পরলো।ঘুমানোর চেষ্টা করছে।
এইদিকে রিমন এক ধ্যানে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
“তুই কি কোনোদিন আমার ভালোবাসা বুঝবিনারে।? আমি যে তোকে বড্ড ভালোবাসি।”
মনে মনে বললো রিমন।
……………………….
খুব ভোরে ঘুম ভেঙে গেলো শাফিনের।ঘড়িতে কেবল ৬ টা বাজে।মাহিদ তখনো বেঘোরে ঘুমোচ্ছে।
গ্রামে সকালের প্রকৃতি দেখার মাঝে আলাদা এক আনন্দ আছে।সে ফোনটা নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।পুকুর পারের দিকে চোখ পরতেই দেখতে পেলো একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে।চুলগুলো টাওয়াল দিয়ে পেচানো।হালকা কলাপাতা কালারের জামা পরা।ভালো করে খেয়াল করে দেখলো মেয়েটা রুপশা।
রুপশাকে দেখেই শাফিনের মনটা বেশ ভালো হয়ে গেলো।মেয়েটা মধ্যে যেনো কি এমন আছে যা শাফিনকে খুব টানে।কাল রাতের থেকে শাফিন শুধু রুপশার কথাই ভেবেছে।সে পুকুর পাড়ের দিকে পা বাড়ালো।
রুপশার পাশে যেয়ে দাড়িয়ে হালকা একটা কাশি দিলো।
“আরে শাফিন ভাইয়া যে। এতো সকালে উঠে গেছেন? ঘুম ভালো হয়নি?”
“কেন যেনো সকালে ঘুম ভেঙে গেলো।তুমিও তো দেখি খুব ভোরে উঠে একদম ফ্রেশ টেশ হয়ে রেডি।”
“গ্রামে আসলে সকালে উঠে গোসল করে টিপটপ হয়ে থাকতে আমার ভালো লাগে।”
“মানে? তুমি কোথায় থাকো?”
“আমি তো জাহাঙ্গীরনগর পড়ি।তো ঐখানের হস্টেলেই থাকি।”
এবার শাফিন বুঝতে পারছে ওকে দেখে কেন গ্রামের মেয়ে মনে হয়না।
“বাহ তুমি তো দেখছি বেশ ব্রিলিয়ান্ট।তো কোন ডিপার্টমেন্ট? ”
“ম্যাথমেটিকস। ”
“বাহবা ”
“চলুন আমরা নাস্তা করে নেই।”
শাফিনও তাতে সায় দিলো।ততক্ষনে মাহিদ ও উঠে গিয়েছে।সবাই একসাথে নাস্তা করলো।তারপর তারা ঘুরতে বেরুবে।বাট কোথায় যাওয়া যায় এটা নিয়ে সবাই একটু চিন্তিতো।
ঠিক হলো আজ গ্রামটাই ঘুরে ঘুরে দেখবে। কাল সকালে তারা বান্দরবানের উদ্দেশ্যে রওনা হবে।
সারাদিন মাহিদ আর রুপশার সাথে খুব ভালো কাটলো শাফিনের।
শাফিনে রাহিয়ার কথা ভুলেই গেলো।সে এখন রুপশাকে নিয়ে বিজি।রুপশার জন্য তার যেমন ফিল হচ্ছে তা কোনোদিন রাহিয়ার জন্য হয় নি।
রাতে তারা জলদি শুয়ে পরলো।কেননা পরেরদিন খুব ভোরে উঠতে হবে।রুপশা তাদের সাথে যাবে এটা ভেবেই শাফিনের খুব ভালো লাগছে।
পরেরদিন খুব ভোরে শাফিন, মাহিদ, রুপশা , পিয়াশ, রিমি বান্দরবানের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
পিয়াশ রুপশার বয়সি।রিমি পিয়াশের থেকে ৩ বছরের ছোট।ছোট চাচার ছেলে মেয়ে । তারা একটা গাড়ি ভাড়া করেছে।
আশ্চর্যের ব্যাপার রুপশা গিয়ে শাফিনের পাশে বসলো।শাফিনের ব্যাপরটা বেশ ভালো লাগলো।সারা রাস্তা তারা খুব গল্প গুজব করলো।একটা সময় রুপশা শাফিনের কাধে ঘুমিয়ে পড়লো।মাহিদ ব্যাপারটাকে খুব স্বাভাবিক ভাবেই নিলো।
কিন্তু শাফিনের মনে যে লাড্ডু ফুটছে এটা তো আর মাহিদ বুঝতে পারছে না।
এইদকে তরি বেচারি বৃষ্টিতে দাড়িয়ে আছে।আজকে ছাতা আনতেও ভুলে গিয়েছে।উত্তরা একটা কাজে এসে এখন ফেসে গিয়েছে।বাস ও পাচ্ছে না।
হঠাৎ তার সামনে এসে একটা গাড়ি থামলো।
গাড়ির গ্লাস টা খুলতেই তরি সাহের কে দেখতে পেলো।
“আরে তরি তুমি এখানে দাড়িয়ে আছো কেনো।? আমাকে চিনতে পেরেছো আমি সাহের। রাহিয়াদের.. ”
সাহের আর কিছু বলতে পারলো না।তার আগেই তরি বলে উঠলো,
“জি ভাইয়া আমি আপনাকে চিনতে পেরেছি।আসলে আমি বাসায় যাবো কিন্তু বাস কিছুই পাচ্ছিনা।”
“তোমার বাসা কোথায়?”
“মিরপুর।”
“আরে আমিও তো ঐদিকেই যাবো।আসো তোমাকে ড্রপ করে দেই।”
এটা শুনে তরি খুশিতে মনে মনে এক লাফ দিলো।এই সুযোগ কি হাত ছাড়া করা যায় নাকি।সে রাজি হয়ে গেলো এবং গাড়িতে উঠে পরলো
পুরো রাস্তা তাদের টুকটাক ভালোই কথা হলো।তরি বেচারি তো ক্রাশ খেয়ে কাইত।
এইদিকে তাহিয়া দরজা বন্ধ করে কেঁদে কেটে অস্থির।কেনোনা আজ রিমন চলে যাবে।রিমন চলে যাওয়ার সময় তাহিয়ার কান্না করা যেনো রুটিন হয়ে দাড়িয়েছে।
রিমন রাহিয়ার রুমের কাছে গিয়ে,
“আমি চলে যাচ্ছি।”
রাহিয়া তখন বই পড়ছিলো।সে রিমনের দিকে না তাকিয়েই
“আচ্ছা আবার এসো।”
রিমনের খুব কষ্ট লাগলো।সে আর কিছু না বলে বাসা থেকে বেড়িয়ে গেলো।
এইদিকে শাফিন আর ড্রাইভার বাদে গাড়ির সবাই ঘুম। রুপশার এলো চুলগুলো খালি রুপশার মুখে এসে পরছে।
শাফিন আলতো হাতে চুলগুলোকে কানের পিছনে গুঁজে দিলো।শাফিনও চোখ বন্ধ করে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো।
রিমন যাওয়ার কিছুক্ষন পর বৃষ্টি থেমে গেলো।তখন রাহিয়া রেডি হয়ে বাহিরে বেরুলো। উদ্দেশ্য তরির বাসা। কিছুদূর যাওয়ার পর সে রাস্তায় ভির দেখতে পেলো।লোকজন গোল হয়ে কি যেনো দেখছে।সেও সেখানে দেখতে গেলো।
দেখলো কেউ একজন পরে আছে।রাহিয়া তার কাছে গিয়ে চমকে গেলো।এ তো……
চলবে……
(