#প্রাপ্তি____(০৭)
____🍂______________
সুস্বাদু খাবারের ঘ্রাণে পুরো কিচেন রুম ভরে গিয়েছে। হুমায়রা বেলকনিতে বসে আছে। মুখে ফ্রেশিয়াল মাস্ক। পুরো শীতমাস সে মুখে ভ্যাসলিন আর মেরিল লাগিয়ে মুখের যা তা অবস্থা করে রেখেছে। উজ্জ্বলতা হারিয়ে কেমন কালো কালো ভাব চলে এসেছে মুখে। মেয়ের মুখের এমন অবস্থায় সঙ্কিত হালিমা খাতুন। অতঃপর নিজে গিয়ে কয়েকটি বিউটি প্রাডাক্ট কিনে এনেছেন। মাঝেমধ্যে চেহারার একটা আধটু যত্ন-আত্নী করা প্রয়োজন। এতে ত্বক ভালো থাকে। পোলাও আর রোস্টের লোভনীয় ঘ্রাণ হুমায়রার ঘ্রাণন্দ্রিয়’তে এসে পৌছা মাত্রই তার নেত্রযুগল চকচক করে ওঠে। গুটিগুটি পায়ে রান্নাঘরে হাজির হয়। উকি দিয়ে দেখে পোলাও রান্না শেষ। রোস্টটাও হয়ে এসেছে। মা যত্নের সাথে বোলে ঢালছেন। পাছে পড়ে না যায়।
“কিছু বলবি?”
—–
“খাবি?”
“হুম।”
“মাস্ক খোলার সময় হয়েছে?”
“হয়েছে।”
“তবে যা মুখ ভালো করে ধুয়ে আই। আমি প্লেটে বাড়ছি।”
“আচ্ছা।”
যেভাবে এসেছিল সেভাবেই জায়গা প্রস্থান করল হুমায়রা। তার মধ্যে সে একটা মিথ্যে বলে ফেলেছে। মুখের ফ্রেশিয়াল মাস্ক সে কিছুক্ষণ আগেই লাগিয়েছে। খোলার সময় হয়নি। কিন্তু মাকে মিথ্যা বলল। যদিও তার এতে সামান্য অনুতাপের ছিটে ফোটাও নেই। তার মতে, পাত্রপক্ষের পছন্দ হলে এই তৈলাক্ত কালো চেহারাই পছন্দ হবে। না হলে না। শেষ!
হুমায়রা হুট করেই অনুভব করলো তার খুব খুশি খুশি লাগছে। পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে শুনে একটু অস্বস্তি, লজ্জা লাগলেও ভালোও লাগছে। হয়তো পছন্দের পাত্র দেখতে আসবে তাই এতো খুশি। খুশি হওয়ারই কথা। না হওয়ার কিছু নেই। এ বছরটা হয়তো অন্যতম পূর্ণতার বছর হবে হেমন্ত-হুমায়রা যুগলের ইনশাআল্লাহ।
____🍂________
বহুদিন পরে বাড়ির মেয়ে বাড়িতে ফিরে আসায় সকলে খুব খুশি। মায়ের চোখ যেন আজ শুকাচ্ছেই না। বারবার নেত্রযুগল জলপূর্ণ হয়ে উঠছে। হেমন্তের মুখেও খুশি খুশি ভাব। প্রথমত অনেকদিন বাদে একমাত্র আদরের বোনটি এসেছে। দ্বিতীয়ত তার পাখিকে বহুদিন বাদে দেখতে যাবে। ভিন্ন অনুভূতি ভিন্ন সাজে। ইনশাআল্লাহ। খুশি যেন ধরেই না যুবকের।
নাতাশা এসেছে আগামীকাল বিকালে। সকালের ব্রেকফাস্ট শেষে পরিবারের সবাই একত্রে কিছুক্ষণ আড্ডা দিচ্ছে। দুপুরের দিকে ও বাড়িতে যাবে। ভাইয়ের মুখের খুশি খুশি ভাব দেখে নাতাশারও ভালো লাগলো। পছন্দের মানুষের সাথে বিয়ে হলে বুঝি এমনই লাগে। সে তো এমন সুন্দর অনুভূতির সম্মুখীন হয়নি। তাই তো অজানা এমন সুখময় অধ্যায়ের। নেত্রপল্লব ভারী হয়ে আসলো। সন্তপর্ণে মুছে ফেলল কেউ দেখার পূর্বেই। তবুও হেমন্তের নজর এড়ালো না বোনের বিষাদমাখা মুখের। নিমিষেই তার মুখেও অন্ধকার নেমে আসলো যেন। নাতাশা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতেই বলে উঠলো, “তুই খুশিতো ভাই?”
“তুমি কাঁদছিলে কেন আপা?”
“এমনিতেই, কিছু হয়নি।”
“না, কিছু তো নিশ্চয়ই হয়েছে। না হলে এমনি এমনি তো চোখে পানি আসে না। বল কি হয়েছে?”
“কিছু না ভাই। পুরোনো দিনের কিছু স্মৃতি ভেসে আসলো মনে তাই একটু আবেগী হয়ে পড়েছিলাম। তেমন কিছু না। তুই চিন্তা করিস না। এখন বল আজ কি পড়ে যাবি?”
“কি পড়বো মানে?”
“পাঞ্জাবী না শার্ট?”
“আমার তো যাওয়ারই ইচ্ছে ছিল না। শুধুমাত্র মামনির রিকুয়েস্টে যেতে হচ্ছে। না হলে এখানে যাওয়ার কোন কারণ ছিল না। শার্ট ছাড়া আর কি পড়বো!”
“আচ্ছা।”
মিসেস সাহানা যত্ন নিয়ে উপহারগুলো গুছিয়ে রাখছেন। এগুলো নতুন আত্মীয় বাড়ি নিয়ে যাবেন। ছেলের জন্য মেয়ে দেখতে যাবেন তারজন্য আয়োজন কম কিছু করেননি। তাও তার মনঃপূত হয়নি। মনে হচ্ছে যেন কিছু একটা বাদ পড়েছে। পাশেই বাড়ির স্থায়ী কাছের বুয়া দাড়িয়ে। সে অবাক নেত্রে আয়োজনের সমাহার দেখছে। হয়তো ভাবছে, পাত্রি দেখতেই যদি এতো আয়োজন করেন তবে বিয়ে, অলিমাহয় না জানি কি করেন। বড়লোকদের কাজকর্মই অন্যরকম অদ্ভূত।
জোহরের আজান হয়ে গিয়েছে। হেমন্ত বাবার সাথে মসজিদে সালাত আদায় করতে গিয়েছে। মহিলারা বাড়িতেই পড়ে নেবে।
প্রায় পনেরো কেজির মত মিষ্টি( সন্দেশ, ছানা, রসগোল্লা, চমচম )। বিভিন্ন রকমের ফলমূল। আর আলাদা উপহারসামগ্রী তো আছেই। মন ভরে শপিং করেছেন মিসেস সাহানা। কেন যেন এ সম্বন্ধটা তার ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগার বিষয়ে মানুষের আগ্রহ থাকে বেশি। ওনারও তাই। মায়ের আগ্রহে হেমন্তেরও খুব ভালো লাগলো। দিনে দিনে মা নামক মানুষটার প্রতি হেমন্তের সম্মান, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা বেড়েই চলেছে। ভালোবাসা অটুট থাকুক মা ছেলের। ইনশাআল্লাহ।
____🍂________
হালিমা খাতুন দ্রুত হাতে সব কাজ সামলাচ্ছেন। কোথাও এক দন্ড দাড়ানোর সময় পাচ্ছেন না। কিছুপূর্বেই তার বড় ননদ ছেলের বউসহ হাজির হয়েছেন। ঢাকায় চেনাজানা নিকটবর্তী কোন আত্মীয় সজন না থাকাই বেশ বিপাকেই পড়েছেন। পাশের ফ্লাটের ভাড়াটিয়া গতমাসে চলে গিয়েছেন। আপাতত ফাঁকা ফ্লাট। দোতলায় চেনা আরেকটি পরিবার ছিল বিশেষ প্রয়োজনে তাদের গ্রামে ছুটতে হয়েছে। এজন্য সব কাজ একা হাতে সামলাতে হচ্ছে। হুমায়রার ফুফু এসেই ভাইয়ের বউয়ের কাজে সাহায্যে লেগে পড়েছেন। বউ গিয়েছে হুমায়রাকে সাজাতে।
“হুমায়রা, তবে তুমি শাড়ি পড়বে না?”
“না ভাবি। শাড়ি আমার ভালো লাগে না। দেখা যাবে শাড়ি পড়ে কারো সামনে যাওয়ার আগেই পায়ে বেধে পড়ে যাবো নতুবা খুলে যাবে। আগে তো শাড়ি পড়িনি। তাই রিস্ক নিতে চাইছি না।”
“বেশ, তবে পড়ো না। তাহলে কি পড়বে?”
“গত ঈদে আব্বু একটা সুন্দর সালোয়ার সেট কিনে দিয়েছে। ওটা থ্রি-পিস। হালকা গোলাপি। ওটা পড়া যাবে?”
“আগে দেখি। দেখাও।”
হুমায়রা চট করে আলমারি থেকে একসেট কাপড় বের করলো। বলল, “এটা, চলবে?”
একবার হুমায়রার দিকে তাকিয়ে বলল, “চলবে কি দৌড়াবে। এটা তো খুব সুন্দর। ম্যাচিং হিজাব আছে?”
“না নেই। তবে সোনালী রঙের একটা আছে।”
“তাহলে ওটাতেই হবে।”
“আচ্ছা।”
হুমায়রার ফুফাতো ভাই। গ্রামেই মৎস খামার দিয়ে সেখানেই আছেন। বি.এ পাশ করেছেন। কিন্তু কোন চাকরি-বাকরির চেষ্টাও করেননি। মূলত ছেলে পাগল মা ই করতে দেননি। একমাত্র ছেলে বলে কথা। এত সম্পত্তি রেখে শহরে যাবে কেন? বেছে বেছে গ্রামের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটাই ঘরের বউ করেই এনেছেন। তাকালেই মন ভরে যায়। কি মিষ্টি সুরত। হুমায়রার কাছেও বেশ লাগে।
“ভাবি আপনাকে আমার খুব ভালো লাগে জানেন?”
“তাই বুঝি? তা ভালো লাগার কারণ?”
“আপনি এতো মিষ্টি যে কেউ দেখলেই একথা বলবে। কতদিন বাদে দেখা। নামটাই ভুলে গিয়েছে আমি। কি যেন নাম?”
“রওশানারা! তোমার ভাই রসনী বলে ডাকে।”
“মা শা আল্লাহ্ নামটা তো আরও সুন্দর। এমন নাম কে রেখেছে?”
“আমার দাদা। খুব ভালোবাসতেন আমাকে। তুমিও কিন্তু ভাড়ি মিষ্টি।”
“ধুর কি যে বলেন। যাক সেখা কথা। তারপর বলুন? পড়ালেখা শেষ নাকি করছেন?”
“এই তো গতবার এসএসসি দিলাম। তোমার ভাই বলেছে গ্রামের কলেজে ভর্তি করে দিবেন।”
“ও আল্লাহ্ ভাবি কি বলেন? আপনি দেখি আমার জুনিয়র। ইশ!”
হুমায়রার হতভম্ব ভাব দেখে রসনী এক দফা হেসে ফেলে। তারপর ননদিনী কে সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
ইনশাআল্লাহ,,চলবে…
#সুমাইয়া_ইসলাম_জান্নাতি(লেখনীতে)🍂
🍂#প্রাপ্তি___(০৮)
_______🍂______________
শ্যামবর্ণের মানুষকে পোশাক নির্বাচনে রঙের দিকটা বেশি খেয়াল রাখতে হয়। কারণ ফর্সা সুন্দর গায়ের রঙের মানুষদের যে কোন রঙেই সুন্দর লাগে এবং ফুটে ওঠে। কিন্তু শ্যামলাদের ক্ষেত্রে সেটা হয় না। গায়ের রঙটা একটু চা’পা থাকে বিধায় টকটকে রঙা পোশাকে তাদের বেশি কা’লো লাগে। তবে হালকা রঙা পোশাকে তাদের সুন্দর লাগে বেশি। গায়ের রঙ কিছুটা ফুটে ওঠে। যদিও সবাই সব কিছু প্রাধান্য দিয়ে পোশাক নির্বাচন করে না। যার যেমনটা ভালো লাগে তেমনই পরিধান করতে পছন্দ করে।
হুমায়রা ফর্সা না আবার শ্যামলাও না। তবে গায়ের রঙটা অনেকটা বাদামি রঙা। তার পছন্দ হালকা রঙা পোশাকগুলো। যেমন, হালকা নীল বা আসমানী রঙ; হালকা গোলাপি; সাদা ; হালকা বেগুনি। ধূসর রঙা পোশাকগুলোও ভালো লাগে। এদিক থেকে তার গায়েও ফুটে বেশি এসবই। হালকা রঙা কামিজ সেটে হুমায়রাকে আরেকটু ফর্সা লাগছে। গায়ের রঙের সাথে মিলেছে ভালো। দেখতেও সুন্দর লাগছে।
মেহমানরা এসে পড়েছেন। বড়রা অথিতি আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। হুমায়রা তৈরি। মনে কত কি ভাবনারা ঠাঁই নিচ্ছে। চিন্তাও হচ্ছে ভিষন। হুমায়রার চিন্তিত মুখশ্রী দেখে রওশানারা মুচকি হাসে। এমন একটা দিন সেও পার করে এসেছে। সুন্দর কারুকার্য খ’চিত একটা ব্রুজ চোখে পড়ে তার। হুমায়রাকে পড়ানোর জন্য এগিয়ে যায়। নিকটে গিয়ে একপাশে লাগিয়ে দেয়। চমকে ওঠে হুমায়রা। এত কাছাকাছি দুজন মানুষ অথচ একজনের মন পড়ে রয়েছে কোন দুরত্বে।
“হুমায়রা তুমি কিন্তু বেশিই চিন্তা করছো। এতো চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। বুঝলে?”
“ভাবি আমার খুব চিন্তা হচ্ছে। কি করবো বলুন?”
“চিন্তা হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু তুমি যেমন করছো এতে অসুস্থ হয়ে পড়বে তো।”
“চিন্তা কমছে না তো!”
হুমায়রার অসহায় চাহনী রওশানারার খারাপ লাগে। তবুও অভয় দিয়ে বলে, “শোন ননদিনী, এতো নার্ভাস ফিল করিও না। ওখানে যখন ডাকা হবে সুন্দর মতো সব প্রশ্নের জবাব দিবে। তারপর চলে আসবে শেষ। বুঝেছো?”
“বুঝেছি।”
মুহুর্তেই আগমন হুমায়রার ফুফুর। ব্যস্ত কন্ঠে বললেন, “রসনী হুমায়রাকে নিয়ে এসো বউ। ওনারা ওকে দেখতে চাইছে।”
“আম্মা, কে কে এসেছেন?”
“তেমন কাউকে দেখলাম না। আমাদের গ্রামে যেমন মেয়ে দেখতে গেলেই গাড়ি ভর্তি লোক গিয়ে হাজির হয়। এখানে তেমন দেখলাম না। ছেলের মা-বাবা, বোন বোনের ছোট মেয়েটা, ছেলে। আর গাড়ির ড্রাইভার। ওনারা আনতে চাইছিল না কিন্তু তোমার মামা জোর দিয়ে বললেন তিনিও আসুক। বাইরে থাকবে কেন?” _____হুমায়রার বড় ফুফুর স্বভাবই হচ্ছে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কথা বলা। এবারও তাই করলেন। একসাথে এতগুলো কথা বলে বেচারা এখন হাঁফাচ্ছেন। শাশুড়ি মায়ের এমন কান্ড সম্পর্কে অবগত রসনী। তবুও মুখ চেপে হেসে ফেলে। সাথে হুমায়রাও। বলল, “থাক আম্মা! আর বলতে হবে না। বলছি ওকে নিয়ে যান। ও রেডি আছে।”
“ও কি বলছো বউ? তুমি যাবে না?”
“আমি? কিন্তু আমি গেলে ব্যাপারটা কেমন দেখাবে না?”
“ধুর তুমি কিছু মনে করিও না। তাছাড়া তুমি আমার পুতের বউ। আবিয়াত্তা আছো নাকি? ডর করতে হইবো না। ওরে নিয়ে আসো। হুমায়রা মা চিন্তা করিস না। ওখানে সবাই আছে তো।”
ড্রয়িং রুমের পুরো সোফাটাই মেহমানদের দখলে। তিনসেটের সোফাটাই বসেছে মা-বাবা আর বোন। পাশের সিঙ্গেল সোফাটাই বসেছে হেমন্ত। কোলে ভাগনি। ড্রাইভার বুদ্ধিমান মানুষ। বিব্রতকর অবস্থা হবে ভেবে, তাই পারিবারিক আলাপে থাকতে চাইলেন না। তিনি চলে গিয়েছেন। হেমন্ত হাত খরচ বাবদ পাঁচশ টাকা হাতে গুজে দিয়েছে।
গুটি গুটি পায়ে ভয়ে ভয়ে হাজির হলো ড্রয়িং রুমে। নজর মেঝেতে। যেন নজর এদিক সেদিক হলেই মহা বিপদ। সিঙ্গেল সোফার একটা হুমায়রার ফুফুর দখলে ছিল। তিনি উঠে গিয়ে ভাতিজিকে বসতে দিলেন। হুমায়রা আস্তে করে বসলো। বেহায়া নজর একবার উপরে উঠেছিল। কি সর্বনাশ! হেমন্ত বদ ছেলেটা তার দিকে তাকিয়েই মুচকি হাসছে। দুটো চোখে যেন হাজারো বিস্ময়, মুগ্ধতা। হেমন্তের এমন চাহনীতে হুমায়রার অস্বস্তি ফিল হচ্ছে। কেমন দম বন্ধ কর অনুভূতি। নব যুবতি যেন নতুন অনুভূতির মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলছে। হুমায়রা নেত্র পল্লব নিচু করে ফেলল। পণ করেছে ওদিক পানে আর তাকাবে না।
“কেমন আছো মামনি?”_____প্রথম প্রশ্নটা হেমন্তের মা মিসস সাহানা করলেন।
” আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো। কেমন আছেন?”
“আমিও আলহামদুলিল্লাহ্। তবে তোমাকে দেখার পর থেকে বেশি ভালো আছি।”____বলেই ভদ্রমহিলা মিষ্টি একটু হাসি উপহার দিলেন।
হুমায়রার বেশ ভালো লাগলো। কিছুটা ভয় কমলো যেন। বিনিময়ে সেও এক চিলতে হাসি ফিরিয়ে দিল। এদিকে তার এক চিলতে হাসি দেখে বিপরীতে বসা তার প্রেমিক পুরুষটা ঠোঁট প্রসারিত করে নিঃশব্দে হাসে। চোখে মুখে মুগ্ধতার মেলা বসেছে যেন তার।
একে একে প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে হুমায়রাকে নিয়ে রসনী রুমে ফিরে যায়। এখন বড়রা কথা বলবে। হুমায়রার কাজ শেষ।
“হুমায়রা? কেমন দেখলে?”
“কি ভাবি?”
“বুঝছো না বুঝি?”
“বুঝিয়ে বলেন?”
“নন্দাই’কে কেমন দেখলে?”
“যেমন দেখার তেমনই।”
“আমি তো দেখলাম সে তোমার দিকেই তাকিয়ে ছিল। কেমন..!”
“কেমন?”
“তার চাহনী আমার খারাপ লাগেনি। মুগ্ধতায় ঘেরা চাহনী। তোমাকে তার মনে ধরেছে বুঝলে?”
“ধুর, বাদ দাও ভাবি।”
“আচ্ছা দিলাম বাদ। লজ্জা পেতে হবে না। কিছু লজ্জা বাসর রাতের জন্য জমিয়ে রাখো।”
হুমায়রার লজ্জিত মুখশ্রী দেখতে ভালোই লাগছে রসনীর। এটা ওটা বলে লজ্জা দিচ্ছে। এদিকে হুমায়রা কখনও হেসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে। কখনও লজ্জায় মুখে রক্তিমাভা ছড়িয়ে পড়ছে। কখনও নিচু আওয়াজে ভাবিকে ধমকে দিচ্ছে।
___________________________________________
“ভাই সাহেব মেয়ে আমাদের খুবই পছন্দ হয়েছে। এখন আপনারা কি বলেন?”
“এমন প্রশ্ন করে আমাকে লজ্জা দিবেন না দয়াকরে। আমাদের কোন আপত্তি নেই।” _____হুমায়রার মায়ের দিকে ফিরে বললেন, “কি বলো হালিমা? কিছু বলবে?”
স্বামীর প্রশ্নে জবাব দিলেন না। ইশারায় বুঝিয়ে দিলেন তিনিও রাজী। এমন সোনার টুকরো ছেলে, পরিবার হাত ছাড়া করার প্রশ্নই উঠে না।
“তাহলে কি আমরা ধরে নিবো আপনারা মেয়ে দিতে রাজী?”
“ইনশাআল্লাহ্।”
“তাহলে তো হয়েই গেলো। বিয়ের দিন তারিখটা ঠিক করা হয়ে যাক আজ? আপনাদের আপত্তি আছে?”
“না, সেরকম কিছু নেই। আপনাদের যা ভালো মনে হয় করুন।”
“ক্ষমা নিবেন ভাইসাহেব। শুনেছি বিবাহ কার্যে বিলম্ব না করাই শ্রেয়। তাই আমরা চাইছি আগামী শুক্রবার হুমায়রা মাকে ঘরে তুলতে।”
ইনশাআল্লাহ,,চলবে….
#সুমাইয়া_ইসলাম_জান্নাতি(লেখনীতে) 🍂
🍂