বুনোভাই,পর্ব:১০+১১

#বুনোভাই
#পর্ব_১০
#লেখনিতে_তিথি_মজুমদার

ঋতুবৈচিত্র্যের মাঝে বর্ষাকে আলাদা বৈশিষ্ট্যে চিহ্নিত করা যায়। যুগে যুগে কবিরা বর্ষাকে বিরহের ঋতু হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বর্ষা এলে স্বভাবতই মানুষের মনে বিরহ দানা বাধতে থাকে। প্রিয়জনের শূন্যতাকে বর্ষা আরো দ্বিগুণ করে তোলে। আর তাইতো বর্ষাকাল আলাদা এক উপাখ্যানের জন্ম দিয়েছে।
বর্ষাকে নিয়ে লেখা হয়েছে অনেক প্রেম ও বিরহের কবিতা। আর এসব কারণেই বর্ষাকে বিরহের কাল বলা হয়ে থাকে। প্রেমিকের জীবনে বর্ষা আসে বিরহ নিয়ে। কী জল কী বর্ষা? বাদলের ধারায় বেদনার্ত হয়ে ওঠে মন। ঝরে বেদনাশ্রু। প্রিয় কিছু হারানোর বেদনা বর্ষা এলেই খুব বেশি মনে পড়ে। অথই জলের মধ্যে হাবুডুবু খায় প্রেমিকপ্রবর। তাকে যেন বানের জলের মতো ভাসিয়ে নেয় অজানা গন্তব্যে। তাই তো কবির কাছে বর্ষা মানে ক্ষণে ক্ষণে বিরহের গান। বলা নেই-কওয়া নেই অমনি শুরু হয়ে গেল অশ্রুর বর্ষণ। কখনো কখনো মনে হয় চোখভরা অভিমান নিয়ে ধেয়ে আসা কিশোরীর পায়ের নূপুরের রিনিঝিনি আওয়াজ।
বর্ষা হাসাতে পারে, কাঁদাতে পারে। বর্ষা ভাবায়, বর্ষা ভালোবাসায়। বর্ষা মানেই গর্জে ওঠা নদী। দুই কূল ছাপিয়ে তলিয়ে দেয়া গ্রামের পর গ্রাম। সুখ-দুঃখে একাকার হয়ে ভেসে বেড়ানো পালতোলা নৌকার মতন আসে এই বর্ষা।
এলোমেলো ভাবে ছাঁদের কার্নিশ ঘেঁষে আপন মনে এই বর্ষার রুপের সাথে নিজের জীবনের হিসেব মিলাচ্ছে মৃণাল।ছোট থেকে আজ অবধি কখনোই মৃদূল তার সাথে এমন কঠিন আচরণ করে নি।বরং বরাবরই মৃদূল তাকে সব কিছু থেকে আগলে রেখেছে।সেই মৃদূল আজ কোনো কারণ ছাড়াই তাকে ওভাবে থাপ্পড় মারবে তা সে স্বপ্নেও ভাবেনি।এখনো ঠোঁটের কোনায় রক্ত জমাট বেধে শুকিয়ে আছে।না সে মুছবে এ রক্ত, না লাগাবে মলম
সে শুধুই ওই মেঘাচ্ছন্ন আকাশ পানে গভীর নয়নে তাকিয়ে আছে।যেনো ওই আকাশই তার মনের সব প্রশ্নের উত্তর দিবে।সে তো এমন কোন অন্যায় করেনি যার জন্য মৃদূল তার গায়ে হাত তুলতে পারে,সে তো নিজ থেকে বিশানের সাথে মিশতে চায়নি বরং বরাবরই সে বিশানকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছে।কিন্তুু বিশানই নাছোড়বান্দার মতন তার পিছু ছাড়েনি।একটা সময় বিশানেকে এতো অবহেলা করার পরও তার প্রতি ওর এতো আগ্রহ টাই মৃণালকে বাধ্য করেছে বিশানের সাথে বন্ধুত্ব। ব্যাস এটুকুই এর বেশি কিছু মৃণালের মনে নেই, না সে বিশানের সাথে এর চেয়ে অন্য কোনো সম্পর্কে জড়াতে চায়।বরং সে বরাবরই এসব কিছু থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চেয়েছে। তার জীবনে একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে ডাক্তার হওয়া।সে একজন বড় ডাক্তার হয়ে নিজের জন্মদাতা পিতার সামনে দাঁড়াতে চায়।কারণ তা যে তার বাবার কাছে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। যে প্রশ্ন গুলো কেবল মাএ ডাক্তার হতে পারলেই তার বাবাকে জিজ্ঞেস করতে পারবে এর আগে নয়।
এতোসব চিন্তার মাঝে হঠাৎই আকাশ কাঁপিয়ে শুরু হলো বর্ষার বর্ষন। যেনো প্রকৃতিও আজ মৃণালের দুঃখে দুঃখীত। তাইতো তার সাথে পাল্লা দিয়ে আকাশও আজ ঘন বর্ষনে বর্ষন করছে।
————————————————–
মঈনুল আহমেদ দের আজ কিছুতেই ছাড়ছে না অনুজের বাবা-মা।তারা কেবল বারবার অনুরোধ করছে আজ রাতটা অন্তত যেনো তারা এখানে থাকে।এদিকে মঈনুল আহমেদ চিন্তায় আছেন রুপাকে নিয়ে।হঠাৎ কি এমন হলো যে মেয়েটা অমন ভাবে এখান থেকে চলে গেলো।তার এতো পরিশ্রম সবই তবে বৃথা যাবে,তার মেয়েটা কি কোনো দিনই আর আগের মতন সুস্থ জীবনে ফিরে যেতে পারবে না!বারবার নিজেই নিজের মনকে এসব প্রশ্নে বিদ্ধ করছেন। তবুও মৃন্ময়ীর মুখের দিকে চেয়ে তিনি আজকের রাতটা এখানে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।এদিকে রুপার জন্য বারবার মনটা খচখচ করায় তিনি মৃণালকে ফোন দিয়েছিলেন রুপার খোঁজ নেওয়ার জন্য। কিন্তুু মৃণালের ফোন বন্ধ। আগামীকাল মেয়েটার কোচিং এ কোনো এক স্পেশ্যাল এক্সাম থাকায় আজ এবাড়িতে আসতে পারেনি।হয়তো পড়াশোনা নিয়ে ব্যাস্ত তাই ফোন অফ করে রেখেছে।এরপর তিনি মৃদুলকে বারকয়েক বার ফোন দিলেন তার ফোন বারবারই বেজে বেজে বন্ধ হয়ে গেলো।এবার মঈনুল আহমেদ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সরাসরি রুপাকে ফোন দিলেন।যদিও তিনি নিশ্চিত নয় যে রুপা আদৌও ফোন রিসিভড করবে কিনা।কারন রুপাকে একটা ফোন দেয়া হলেও সে ওটা ব্যাবহার করেনা।পরিত্যক্ত বস্তুুর মতন ওই ফোনটাও রুপার রুমের এক পাশে পড়ে থাকে।কিন্তুু মইনুল আহমেদ কে অবাক করে দিয়ে আজ রুপা ফোনটা একবার রিং হতেই রিসিভ করে,

-আসসালামু আলাইকুম আব্বু।
মেয়ের মুখের শব্দ শুনে মইনুল আহমেদ একটা প্রশান্তির হাসি দিলেন।

-আমার ছোট মা টা কি ঠিকঠাক করে বাসায় পৌঁছেছে?

-তোমার ছোট মা এখন অনেক বড় হয়ে গেছে বাবা।সে একাএকাও চলতে পারে।

-বাবা মায়ের কাছে ছেলেমেয়েরা সবসময় ছোটই থাকে আম্মু।

-হুম বুঝলাম।আমি ঠিকঠাক মতন বাসায় ফিরে এসেছি।নতুন পরিবেশে ভালো লাগছিলো না তাই ওভাবে চলে এসেছিলাম তখন।

-আচ্ছা ছোট মা শোন আজ আমি আর তোমার মা বাসায় ফিরবো না।মৃনাল আর তোমার ভাইয়া মিলে তোমরা রাতে ঠিকমত খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে যেও।আর মৃণাল কোথায় ওর ফোনটা অফ কেনো।

-ও ওর রুমে সম্ভবত। ফোনে হয়তো চার্য নেই তাই বন্ধ। আমি ওকে বলে দিবো তোমাদের না ফিরার কথা।

-আচ্ছা মা তাহলে রাখি।তোমারা সবাই খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে যাও।
বলে মইনুল আহমেদ ফোনটা রেখে দিলেন।আজ এতোদিন পরে মেয়ের সাথে কথা বলে তিনি একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন।যাক তাহলে তার মেয়ে আগের চেয়েও এখন অনেকটাই সুস্থ। তাই হয়েতো আজ এতোদিন পর মেয়েটা এমন মন খুলে কথা বলল।



এদিকে হিমেলের সাথে এতোবছর পর দেখা হওয়ার পর আজ রুপার মনে হচ্ছে সে নিজের এবল নিজের পরিবারের সাথে অন্যায় করেছে।একটা মানুষের জন্য সে এতোগুলা মানুষ কে কাঁদিয়েছে এমনকি নিজেকেও কষ্ট দিয়েছে বারবার।ওই একটা মানুষ ঘিরেই তার জীবন আজ এমন এক গন্ডিতে এসে দাঁড়িয়েছে।কিন্তুু সে মানুষ টা দিব্যি নিজের জীবনটাকে গুছিয়ে নি আজ বর সুখেই আছে।তাই সেও ঠিক করেছে আজকের পর থেকে সে আর নিজেকে এই চার দেয়ালের মাঝে গুটিয়ে রাখবেনা,নিজের জীবন টাকে সে এবার সাজাবে খুব ভালো করে সাজাবে,বাবা মাকেও এই মরক যন্ত্রণা থেকে সে মুক্তি দিবে।তাই সন্ধ্যার পর থেকে সে নিজের জীবনের আগামী দিন গুলো কিভাবে কাটাবে তার পরিকল্পনা করছিলো তখনই তার বাবা ফোন দিলো।মন খুলে এতোদিন পর বাবার সাথে কথা বলে আজ রুপার খুব ভালো লাগছে।

————————————————-
-তোর ওই ওষ্ঠোদয় দ্বারা আমার এই পোড়া ঠোঁটে একটা চুমু খাবি মিনু! গভীর চুমু!যে চুমুর স্বাদ আমি মনের ভুলেও যেনো কোনোদিন ভুলে না যাই।

কথাগুলো কেঁপে কেঁপে বলল মৃদূল।
সে এখন পুরোই মাতাল তাই এমন একটা কথা বলছে।কি করবে এখন মৃণাল সে ভাবছে।সে কি রাখবে তার বুনোভাইর এই আবদারটা,সে কি নিবে এই সুযোগটা?

তারপর সে হঠাৎ করেই মৃদূলের দু’পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে তার ঝাঁকরা চুল গুলো মুষ্টিবদ্ধ করে একটা চুমু খেলো, গভীর সেই চুমু যা তাদের স্বর্গীয় সুখ এনে দিলো।

চলবে,,,,,,,,,

#বুনোভাই
#পর্ব_১১
#লেখনীতে_তিথি_মজুমদার

১১,
সকালের মিষ্টি রোদের আলোয় ঘুম ভাঙ্গলো মৃণালের। ঘুম থেকে জেগে নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করলো সে।পাশ ফিরতেই চোখ পড়লো তার পাশে রুপা আধশোয়া হয়ে বসে আছে চোখ বুঝে।হয়তো ঘুমোচ্ছে তাই মৃণাল তাকে আর ডাক দিলো না।কিন্তুু কি এমন হলো যে রুপা আজ নিজ থেকেই তার রুমে তাও আবার তার পাশে আধশোয়া হয়ে ঘুমোচ্ছে! মৃণাল বুঝতে পারছেনা।,গত রাতে তো সে ছাঁদে ছিলো,মৃদুল তাকে চড় মারার পরই সে ছাঁদে যায় আর একটা সময় প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হয়,এরপর এরপর তো সেখানে মৃদূল এসেছিলো টলটলে পায়ে হেঁটে আর এসে বলেছিলো,,,,!এরপর মৃণালের আর কিছু মনে নেই।প্রচন্ড মাথা যন্ত্রণা করছে তার,যন্ত্রণায় দু-হাত দিয়ে নিজের চুলের মুঠি মুষ্টিবদ্ধ করে বসে আছে মৃণাল।
এদিকে মৃণালের নড়াচড়ায় ঘুম ভেঙে যায় রুপার। মৃণালের দিকে তাকিয়ে দেখে যে মাথায় হাত ধরে বসে আছে সে।উদ্বিগ্ন গলায় রুপা বলে,

-মিনু তুই ঠিক আছিস তো,মাথায় হাত দিয়ে বসে আছিস কেনো।কিরে কথা বল!

-আমার কি হয়েছিলো রুপাদি।আমি রুমে কি করে এলাম আর তুমিই বা এখানে কেনো?
রুপাকে একদমে সব গুলো প্রশ্ন করলো মৃণাল।

-আরে আস্তে আস্তে জিজ্ঞেস কর, আমি তো পালিয়ে যাচ্ছি না।
এখনো রুপার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মৃণাল।
মৃণালের চোখের ভাষা বুঝতে পেরে রুপা বলল,

-আব্বু রাতে তোকে অনেকবার ফোন দিয়েছিলো কিন্তুু তোকে পায় নি।পরে আমায় ফোন দিয়ে জানালো তারা মৃন্ময়ীপুর বাড়ি থেকে রাতে ফিরবেনা।আমরা সবাই যেনো রাতে খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে যাই।ফোন রেখে আমি তোর ঘরে গিয়ে দেখি তুই তোর ঘরে নাই।এদিকে ভাইয়াও ফিরেনি তখন। বাহিরে তখন ঝুম বৃষ্টি তবুও আমার কি যেনো মনে হলো আমি ছাঁদে গেলাম তোকে খুঁজতে। গিয়ে দেখি ওই ঝুম বৃষ্টিতে চোখ বন্ধ করে তুই বসে আছিস। যখনই তোর কাছে গিয়ে তোকে ছুঁলাম তখন তো আমি পুরাই অবাক।তোর গায়ের তাপমাত্রা অনেক বেড়ে গেছে।বারকয়েক তোকে ডাকার পরও যখন তুই রেসপন্স করলি না তখনিই বুঝলাম তুই জ্ঞান হারিয়েছিস।এরপর আর কি তোকে ঘরে এনে জামা পাল্টে সারারাত কপালে জলপট্টি দিয়েছি।শেষ রাতের দিকে তোর তাপমাত্রা কিছুটা কমে আসায় তুই ঘুমিয়ে গিয়েছিলি তাই আমারও একটু চোখ লেগে এসেছিলো।এই হলো তোর সব প্রশ্নের উত্তর। এখন বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে আয় নাস্তা খাবি।

রুপার সম্পূর্ণ কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো মৃণাল।এতোক্ষণে তার ভ্রম ভাঙলো।তাহলে কাল রাতে যা হয়েছিল সবই তার অলিক কল্পনা ছিলো মাত্র। তাহলে সত্যিই বুনোভাই আসেনি কাল রাতে সবই ছিলো তার ভ্রম!

-আচ্ছা তুই অতো রাতে অমন ঝুম বৃষ্টিতে ভিজছিলি কেনো মিনু,আর তোর ঠোঁটের বাম পাশে কিভাবে কেটেছে?
রুপার কথায় মৃণালের আবার মনে পড়ে যায় গতকাল দুপুরের সেই ঘটনা যা ভুলার জন্য সে এতো চেষ্টা করেছিলো,নিজেকে এটা বুঝ দিচ্ছিলো এসব কিছুই ভুল,কিন্তুু না বাস্তব সর্বদা বাস্তবই হয় তা আজ হাড়েহাড়ে বুঝছে মৃণাল।সে এই বাস্তবতা থেকে যত নিজেকে আড়াল করতে চাইবে এই বাস্তবতার নির্মমতা তাকে ততই আঁকড়ে ধরবে।এর থেকে বাচঁতে হলে নিজেকে বদলাতে হবে।এসবই চিন্তা করছিলো মৃণাল তখনই রুপা তাকে আবার ডাকে। রুপার ডাকে মৃণাল মৃদু হেসে উওর দেয়,

-ঝুম বৃষ্টি আমার খুব প্রিয় রুপাদি আর তার চেয়ে বেশি প্রিয় ওই ঝুম বৃষ্টিতে ধোঁয়া উঠা গরম চা পান করা।গ্রামে আমি আর পলি বৃষ্টি হলেই বেরিয়ে পড়তাম টঙের দোকানে চা খেতে।কাল ওর কথা খুব মনে পড়ছিলো তাই বৃষ্টিতে চা বিলাস না করে ওর সৃতিবিলাস করছিলাম।

-হুম বুঝলাম কিন্তুু তোর ঠোঁটের পাশে কাটলো কি করে!

-রুপাদি কয়টা বাজে বলোতো। আজ তো আমার একটা স্পেশাল এক্সাম আছে। দেরি হলে তো এক্সামটা মিস করবো।

-সাড়ে আটটা বাজে মাত্র!

-কি বলছো রুপাদি তাহলে তো আমার অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমি বরং ফ্রেশ হয়ে আসি।তাড়াতাড়ি বের হতে হবে।ফিরে এসে তোমার সাথে গল্প করবো।
বলেই এপ্রকার ছুটে ওয়াশরুমের দিকে চলে গেলো মৃণাল।
এদিকে খুবই দক্ষতার সাথে মৃণাল যে রুপাকে এড়িয়ে গেলো তা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে রুপা।কিন্তুু সে এর কেনো প্রতিত্তর করেনি বরং মৃণালকে পালিয়ে যেতে দিয়েছে।
———————————————————
পড়ন্ত দুপুরে পরীক্ষা শেষ করে কোচিং থেকে ক্লান্ত পায়ে হেঁটে বের হচ্ছে মৃণাল।সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেট পার করতেই একটা পরিচিত মুখ দেখতে পেলো সে।হঠাৎ তাকে এখানে দেখতে পাবে মৃনাল ভাবেনি।তার সাথে তেমন সখ্যতা না তাকলেও সৌজন্যেতার খাতিরে ধীর পায়ে হেঁটে সে সেই পরিচিত মানুষটির কাছে।

-কেমন আছো আপু?
মৃনালের গলা শুনে দাঁড়িয়ে পড়লো সিমি।সে অনেকক্ষণ ধরে এখানে মৃণালের জন্যই অপেক্ষা করছিলো।

-ভালো থাকতেই তো তোমার কাছে এলাম মৃণালিনী!
শান্ত কিন্তুু তেজি গলায় কথাটি বলল সিমি।মৃণাল সিমির কথার ধরন টা ঠিক বুঝতে পারলো না।তাই সে বলল,

-বুঝলাম না আপু, আমার সাথে আপনার ভালো থাকার সম্পর্ক কীভাবে জড়িত?

-এখানে দাঁড়িয়ে কথা না বলে আমরা কোনো কফিশপে গিয়ে বরং কথা বলি,যদি তোমার কোনো সমস্যা না হয় তো।

-আসলে আপু আমি তো বাসায় বলে এসেছি বিকেলের আগেই বাসায় ফিরবো কিন্তুু এখন কোথাও বসে কথা বললে তো দেরি হয়ে যাবে।তারচেয়ে বরং আপনি বাসায় চলুন।

-বাসায় গিয়ে কথা বলার হলে আমি নিশ্চয়ই এখানে আসতাম না মৃণালিনী। প্লিজ একটাবার আমার কথাগুলো তুমি শোনো।তেমন হলে তুমি বাসায় ফোন দিয়ে জানিয়ে দাও যে একটু দেরি হবে তোমার বাসায় ফিরতে।
অনুরোধের স্বরে কথাগুলো বলল সিমি।মৃণাল কিছুক্ষণ ভাবলো তারপর মুচকি হেসে বলল,

-আচ্ছা ঠিক আছে আপু চল তাহলে কোথাও বসেই বরং কথা বলা যাক।




-ওকে ভালেবাসিস ভাইয়া!
রুপার এমন প্রশ্নে চমকে যায় মৃদূল।তার মনের খবর রুপা কি করে জানলো ভ্রু কুঁচকে বারান্দার গ্রিল ধরে ভাবছে সে।

-কি ভাইয়া বল, তুই কি মিনুকে ভালোবাসিস।

-এসব কি যা তা বলছিস রুপা।আমি কেনো মৃণালকে ভালোবাসতে যাবো!

-তাহলে তুই বলতে চাচ্ছিস তুই ওকে ভালোবাসিস না?

-নাহ্
ছোট্ট করে উওর দিলো মৃদুল ।

-তাহলে ও যখন বৃষ্টিতে ভিজে সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিল তখন তুই ওকে কোলে করে ঘরে নিয়ে এলি, তারপর সারারাত ওর সেবা করলি আর সকালে কিনা আমাকে দিয়েই ওইসব মিথ্যে গুলো বলালি।কেন করলি এসব আগে এটার উওর দে।

-দেখ রুপা এসবের সাথে মৃণালকে ভালোবাসার কোনো সম্পর্ক নেই।আর আমি ওকে ছাঁদ থেকে এনে সারারাত সেবা করেছি এটা জানলে ও খুব অস্বস্তি বোধ করতো তাই তোকে দিয়ে ওইসব বলিয়েছি।

-তার মানে তুই আমাকে এখনো সত্যি টা বলবি না।

-কোন সত্যির কথা বলছিস তুই রুপা যে সত্যির কোনো ভিতই নেই সেই সত্যির।
মাথা নিচু করে কথা গুলো বলল মৃদূল।

-তাহলে আমার চোখের দিকে তাকাচ্ছিস না কেনো।

-আমাকে একটু একা থাকতে দিবি রুপা!!
রুপা বুঝে যায় মৃদূল তাকে কিছুই বলবে না।তাই সে আর কথা বাড়ায়নি ।

রুপা চলে যাওয়ার পর মৃদুল নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো
“সে কী সত্যি সত্যিই মৃণালকে ভালোবেসে ফেলল! তা না হলে সে কেনো মৃণালকে অন্য কোনো পুরুষের সাথে দেখতে পারেনা,কেনো বিশান এতো ভালো বন্ধু হওয়া সত্বেও সে মৃণালের সাথে ওর মিলামেশা পছন্দ করেনা।কেনো কেনো সে নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেনা।

——————————————————
চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here