বুনোভাই,পর্ব:৬+৭

#বুনোভাই
#পর্ব_৬
#লেখনীতে_তিথি_মজুমদার


আবছা অন্ধকারে ঢেকে আছে ভোরের সকাল, আকাশে বিস্তৃত থাকা ঘন মেঘের জন্যে সদ্য উদিত সূর্যের সম্পূর্ণ আলো‌ পৃথিবীর বুকে পৌছতে পারছে না। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শব্দহীনভাবে পরে চলেছে সেই কখন‌ থেকে। বর্ষাকাল প্রায় শেষের পথে, এইমুহূর্তের বৃষ্টি এমনি হয় তীব্র গতীর চেয়ে ধীর গতিতেই পরতে বেশি পছন্দ করে। ব্যালকনির রেলিং এ ভর দিয়ে এক দৃষ্টিতে সেই বৃষ্টির দিকে‌ তাকিয়ে আছে মৃণাল। আজ এক সপ্তাহ হয়ে গেছে সে ঢাকায় এসেছে। বৃষ্টি দেখলেই পলির কথা মনে পরে যায় মৃণালের। গ্রামে থাকাকালীন যখনই ঝুম বৃষ্টি পড়তো তখনই তারা দুজন ছাতা মাথায় বেরিয়ে পড়তো।গন্তব্য থাকতো করিম চাচার চায়ের দোকান।সারা পথে তারা ছাতা মাথায় করিম চাচার টঙের দোকানে গিয়েই তারা ছাতা দোকানের এক পাশে রেখে বলতো,

-চাচা কড়া করে দুটো দুধ চা বানাও তো আমরা দুবোন চায়ের সাথে বৃষ্টি বিলাস করবো।

চাচাও খুশি মনে তিন কাপ চা বানাতো।তারপর মৃণাল আর পলিকে দুকাপ দিয়ে নিজেও এক কাপ চা খেতে থাকতো।আর এদিকে মৃণাল আর পলি চায়ের কাপ দুটো নিয়ে টিনের চাউনির নিচ থেকে সরে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়াতো।তারপর ধোঁয়া উঠা গরম চায়ে টুপটুপ করে পড়া বৃষ্টির ফোঁটা পড়তো আর দুবোন খিলখিল করে হাসতে হাসতে চায়ের কাপে চুমুক দিতো।এটাই ছিলো তাদের ঝুম বৃষ্টিতে চায়ের সাথে বৃষ্টি বিলাস।

এ বুদ্ধিটা অবশ্য মৃণালের। অনেক আগে একদিন স্কুল থেকে ফেরার সময় হঠাৎই রাস্তায় এমন ঝুম বৃষ্টি হচ্ছিল তখনই তার খুব চা খেতে ইচ্ছে করছিলো।তাই স্কুলের থেকে একটু দূরে একটা টঙ দোকানে সে চা খেতে যায়।বৃষ্টি থাকার কারণে সেদিন দোকানে অনেক ভীর ছিলো।তাই মৃণাল তার চায়ের কাপটা নিয়ে বাহিরে এক পাশে গিয়ে খাচ্ছিলো।তখনই সে অনুভব করলো গরম চায়ে হঠাৎ করে বৃষ্টির ফোটা পড়লে তা খেতে মন্দ লাগেনা।বরং তা আরও বেশি মজা লাগে।এরপর একদিন পলিকেও এভাবে চা খাওয়ায়।পলিও এতে খুব আনন্দ পায়। এরপর থেকে ঝুম বৃষ্টি হলেই দুবোন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতো চায়ের সাথে বৃষ্টি বিলাস করতে।(আপনারা এভাবে বৃষ্টি বিলাস করতে পারেন খুব একটা মন্দ লাগবে না☺)

ঢাকায় আসার পর থেকে মৃণাল যেনো এই চারদেয়ালে এক প্রকার বন্দী হয়ে গেছে।পরশু মামার সাথে গিয়ে কোচিং এ ভর্তি হয়ে এসেছে। এই শনিবার থেকেই ক্লাস শুরু হবে তার। এই ছ’দিনে মৃদুলের সাথে তার খুব একটা কথা হয়নি।মৃদুল ঢাকায় আসার পর থেকেই নিজের জগত নিয়েই ব্যস্ত হয়ে গেছে।মৃণাল বলে যে এবাড়িতে কেউ আছে তার যেনো কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই।মৃন্ময়ী অনুজের সাথে চারদিন আগে কক্সবাজারে হানিমুন করতে গিয়েছে,মামা সারাদিন অফিসের কাজেই ব্যাস্ত থাকে আর রুপা সে তো খাওয়ার সময়ও মাঝে মাঝে নিচে আসে না ঘরে বসেই খাবার খায় এমনকি রুমের দরজাও সারাদিন বন্ধ করে রাখে।বাসার বাহিরেও যায় না,এমনকি বাসার কারো সাথে ঠিকমতো কথাও বলে না সে।অন্যদিকে মামিতো সারাদিন বাংলা বস্তা পঁচা সিরিয়াল দেখে।

মৃণাল আসার পরের দিনই মোবাশ্বেরা আহমেদ তাকে বলছিলো,

-বুঝলি মৃণাল ঢাকায় একটা মানুষের থাকা, খাওয়ার কতো খরচ!

মৃণাল শুধু তার মামীর দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো।মামী থেমে কিছুক্ষণ পর আবার বললেন,

-তোর তো ভাগ্য খুব ভালো যে ঢাকায় থাকা নিয়ে তোর কোনো ঝামেলাই পোহাতে হলো না। তবে কি মা জানিস তোর মামার ব্যবসার অবস্থা খুব একটা ভালো না।তারউপর তুই,তোর কোচিং এ পড়ার খরচ সব মিলিয়ে মানুষ টার উপর অনেক চাপ পরে যায়।আর মৃদুল তো এখনো কোনো চাকরিবাকরি করে না। তাই বলছিলাম,,,
বলে তিনি একটা দম ছাড়েন।
তখন মৃণাল বলে,

-এখন আমি কি ভাবে কি করবো মামী।ডাক্তারি পড়া আমার স্বপ্ন। আর নানুও আমায় এখানে জোর করে পাঠিয়েছে তাই ফিরে যাওয়ার পথও নাই।এখন,,,
পুরো কথা শেষ করার আগেই মৃণাল কে থামিয়ে মোবাশ্বেরা বলে,

-আরে বোকা আমি তো তোকে ফিরে যেতে বলছিনা।

-তাহলে?

-না দেখ নিজেদের কাজ নিজেরা করাই তো ভালো বল।আর তুই তো এখন এই বাড়িরই লোক।তাই আমি ভাবছিলাম আমাদের ঝর্ণা খালাকে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দিবো।এইতে কটা মানুষ আমরা মামী ভাগ্নি মিলেই সব কাজ করে নিতে পারবো।

-আচ্ছা মামী। আমার কোনো সমস্যা নেই। বলেই মৃণাল উঠে যাচ্ছিলো তখন মোবাশ্বেরা আবার বলেন,

-আরেকটা কথা তোর আর আমার মাঝে হওয়া কথাগুলো যেনো কেউ না জানে।

-হুম।
বলেই দ্রুত গতিতে হেঁটে চলে যায় মৃণাল। সে বুঝতে পারছে তার মামী তার উপর খুব সুক্ষ ভাবে প্রতিশোধ নিচ্ছে। এজন্যই গ্রামে হঠাৎ করেই মামী তার সাথে এতো ভালো ব্যবহার করেছিলো।সবটাই এখন মৃণালের কাছে পরিস্কার। কিন্তুু তার কিছুই করার নেই কারণ তাকে যে ডাক্তার হতেই হবে।হবেনা

————————————————
“আজু কেনো এভাবে আমায় একা করে চলে গেলে।আমিতো সন্তান চাইনি আমাদের মাঝে। তুমি চেয়েছিলে,জোড় করেছো আমায়।কত করে নিষেধ করেছিলাম তোমায়। বেবি নেওয়ার জন্য তো তুমি ফিট ছিলে না।তবুও বারবার জোড় করেছো আমায় বাধ্য করেছো সন্তান নিতে।আমি তো তোমার কথা রেখেছিলাম তাহলে তুমি কেনে আমার কথা রাখলে না।কেনো আমায় ছেড়ে চলে গেলে।
বলতে বলতেই কাঁদছে মৈনাখ চৌধুরী।
তারপর আবার বলছে,

” তুমি জানো আজু যার জন্য আমি তোমায় হারিয়েছি আমি আজও তার মুখ দেখিনি।কখনো দেখতেও চাই না কারন ওই অপয়াটার জন্যই তো আমি তোমায় হারিয়েছি।”
দরজার আড়াল থেকে মৈনাখের এমন পাগলামো দেখছে নিপা।একটা মানুষ কতোটা তীব্র ভাবে আরেক টা মানুষকে ভালোবাসতে পারে তা সে মৈনাখকে না দেখলে জানতোই না।সেও তো ভালোবাসে কিন্তুু মৈনাখের মতন না।তা নাহলে স্ত্রীর মৃত্যুর আঠারোবছর পরও সে তার নিজের স্ত্রী কে হারানোর যন্ত্রণায় কি করে দগ্ধ হতে পারে। সতি আঞ্জুমান চৌধুরী অনেক ভাগ্য করে এমন একজন ভালোবাসার মানুষ পেয়েছিলেন।কিন্তুু তার কপালে সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি যদি হতো তাহলে হয়তো তার মতন এতো সুখী আর কেউ থাকতো না।চোখের কোণে চিকচিক করছে অশ্রু কণা।নিপা আর এক মুহূর্তও দাঁড়ায়নি সে চায়না নিজের দূর্বলতা প্রকাশ করতে।
———————————————-
আজ মৃণালের প্রথম ক্লাস। তাই সে ভোর বেলায় উঠেই বাড়ির সমস্ত কাজ সেরে গোসল করে একেবারে তৈরি হয়ে নিচে নামলো।নাস্তা খেয়ে বেরোনোর সময় মৃদুল তাকে ডেকে বলল,

-চল আজকে আমি তোকে নামিয়ে দিয়ে আসি।এখনো কি তুই বাইকে চাপতে ভয় পাস মিনু।

-নাহ্
ছোট্ট করে উওর দিলো মৃণাল। আসলে সে খুবই এক্সাইটেড। কারণ আজ এতোগুলা দিনে এই প্রথম মৃদুল নিজ থেকে তার সাথে কথা বলছে আবার তাকে সাথে করে মিয়েও যাবে বলছে যার ফলে তার মুখে এখন কোনো কথাই ফুটছে না।

-এইরে তুই মেয়ে।আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম।আমার কাছে তো মেয়েদের হেলমেট নাই।এখন কি হবে!
মৃদুলের এই কথায় মৃণালের সব খুশি নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো।সে মুখ পানসে করে মৃদুলকে বলল,

-থাক বুনোভাই অন্যকোনোদিন আপনার বাইকে করে যাবো।আজ নাহয় আমি বাসে করে একাই যাই।

-বাসে যাবি কেনো বাড়ির গাড়ি আছে তো।দাঁড়া আমি রতনকে বলছি সে তোকে দিয়ে আসবে।
মৃদুল রতনকে ডাকার আগেই মৃণাল বলল,

-লাগবে না বুনোভাই

বলেই সে দ্রুত গতিতে হেঁটে বেড়িয়ে গেলো বাড়ি থেকে।কারণ মামী তাকে আগেই বাড়ির গাড়ি ব্যবহার করতে নিষেধ করে দিয়েছে।আর তাছাড়া সে নিজেও এসবে অভস্ত্য নয়।আর এই মূহুর্তে সে তার চোখের কোণে জমা পানিটুকু মৃদুলকে দেখাতে চায় না।তাই সে এক প্রকার ছুটে পালিয়ে গেলো।এদিকে সে যদি একবার পিছন ফিরে তাকাতো তাহলে সে দেখতে পেতো তার বুনোভাইর সেই প্রিয় কুঁচকে যাওয়া ভ্রু-যুগল!

চলবে,,,,,

#বুনোভাই
#পর্ব_৭
#লেখনীতে_তিথি_মজুমদার


সেদিন পুরো রাস্তা কাঁদতে কাঁদতে গিয়েছিল মৃণাল।তার বুনোভাই কেনো তার সাথেই এমন করে সে তো নিজ থেকে তার বাইকে চড়ে আসতে চায় নি।বুনোভাই নিজেই আশার আলো দেখান আবার সেই আলো নিজেই ধপ্ করে মুছে দেন।এমন হাজারো অভিযোগ মনে নিয়ে সে পুরো ক্লাস শেষ করে। আর মনে মনে ভেবে নিয়েছিলো সে আর কোনোদিন বুনোভাইর সাথে যেচে কথা বলবেনা একদমই বলবেনা!


ক্লাস শেষ করে নিচে নেমে মৃণাল পুরোই অবাক।গেটের বাহিরে বুনোভাই তার বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর তার হাতে রয়েছে মেয়েদের একটা হেলমেট। সবচেয়ে বেশি যেটা মৃণালের ভালো লেগছিলো তা হলো বুনোভাইয়ের কুঁচকানো ভ্রু-যুগল।হয়তো রোদে অনেক্ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকায় সে বিরক্তিত অথবা কোন বিষয় নিয়ে চিন্তিত।কিন্তুু যাই হোক আজকে এই মৃণাল বুনোভাইয়ের ওই কুঁচকানো ভ্রু-যুগোলের মায়ায় পরবে না। তাই সে আপন গতিতে সিঁড়ি দিয়ে নেমে রাস্তায় হাটতে থাকে। এমন একটা ভাণ করে মৃণাল হেঁটে চলে গেলো যেনো সে সত্যি সত্যিই মৃদুলকে দেখতে পায়নি।
এদিকে অন্যমনষ্ক মৃদুলের হঠাৎই টনক নড়লো অন্যান্য ছাত্রছাত্রীদের নিচে নামতে দেখে।তখনই সে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে রইলো। একেরপর এক ছেলেমেয়ে নামছে এভাবেই পুরো কোচিংএর প্রায় সব ছেলেমেয়ে নামার পরও সে যখন মৃণালকে দেখলো না তখন দারোয়ানের কাছে গেলো।

-চাচা এই মেয়েটাকে দেখেছেন?আজই নতুন এসেছে এডমিশন টেস্ট এর কোচিং সেকশনে!
মোবাইল থেকে মৃণালের একটা ছবি দেখিয়ে মৃদূল দারোয়ান কে জিজ্ঞেস করলো।

-জ্বি দেখছিলাম তো।সে তো অনেক আগেই চইলা গেছে বাবা।কোন সমস্যা হইছে বাবা।

-না না চাচা আসলে ও আমার ফুফাতো বোন। ঢাকায় নতুন তো তাই ভাবলাম আজ আমিই ওকে নিয়ে যাই।আগে থেকে ওকে বলি নি তো তাই হয়তো ও চলে গেছে।
বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মৃদূল তড়তড় করে হেটে বাইকের সামনে গেলো।তার খুব রাগ হচ্ছে এখন। মৃণালকে সকালে বাইকে করে আনতে পারে নি বলে তার নিজেরই অনেক খারাপ লাগছিলো।বাচ্চা মেয়ে কত শখ করেছিলো তার বাইকে করে কোচিং এ আসবে অথচ সে কিনা একটদ এক্সট্রা হেলমেট এর জন্য তাকে আনতে পারেনি।তাইতো সে তপু কে ফোন করে ওর থেকে এক্সট্রা একটা হেলমেট সংগ্রহ করে এনেছিলো সকালে।এই হেলমেট আনার জন্য আজ তার একটা চাকরীর ইন্টারভিউ পর্যন্ত মিস দিয়েছে সে।আর এদিকে ওই পেত্নী একা একাই বাসায় চলে গেছে। হাতে থাকা হেলমেট টা সজোরে আছাড় মারলো মৃদূল যত রাগ ছিলো সব এই হেলমেট এর উপর উসুল করলো সে।যত নষ্টের গোড়া এই হেলমেট বলেই পা দিয়ে এটাকে লাথি দিতে থাকলো একেরপর এক।

——————————————————–
সময়ের গতি সময়ের বেগে এগিয়ে চলছে।দেখতে দেখতে ঢাকায় এসেছে প্রায় ২মাস হয়ে গেলো মৃণালের।সেদিনের পর থেকে মৃণাল তার বুনোভাইকে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলে।অদ্ভুত বিষয় হলো সেদিনের পর থেকে মৃদূল নিজেও ইচ্ছেকৃত বা অনিচ্ছাকৃত কোনোভাবেই মৃণালের মুখোমুখি হয়নি।এখন দিনের অধিকাংশ সময়ই মৃদুল বাসার বাহিরে কাটায়।রাতে যখন ফিরে তখন রীতিমত বাসার সবাই ঘুমিয়ে যায়।কিন্তুু মৃণাল ঘুমোয় না যে পর্যন্ত মৃদুল খেয়েদেয়ে না ঘুমায় সে পর্যন্ত সে নিজেও বিছানায় জায়না। মৃদূলের সামনাসামনি না হলেও দূর থেকে তার সম্পূর্ণ খেয়াল রাখে মৃণাল।মৃদূল দিনে যখন বাসায় না থাকে তখন ঘর গুছানোর বাহানায় একবার হলেও মৃণাল তার ঘরে যায়।মৃদূলের ঘরে গিয়ে তার ব্যবহিত প্রতিটি জিনিস পরম আবেশে হাত বুলিয়ে স্পর্শ করে মৃণাল।সে জানে কোনোদিন এই মানুষ টাকে হয়তো সে বাস্তবে ছুঁতে পারবে না তাইতো তার ছোঁয়া জিনিসগুলোতে তার গায়ের গন্ধ শুঁকে সে।এ যেনো এক অদ্ভুত টান যা কেবল মাএ একজন প্রেয়সীই বুঝতে পারে।

এ কয়েক মাসে সে ঢাকার প্রায় অনেক জায়গাই চিনে গিয়েছে ।এর কৃতিত্ব অবশ্য বিশানের।সেদিন একা একা রিকশা না পেয়ে যখন মৃণাল হেঁটে বাড়ি ফিরছিলো তখনই তার খুব কাছেই একটা গাড়ি থামে।এতে মৃণাল কিছুটা হকচকিয়ে যায়।তারপর সে আবার আপন গতিতে হাঁটা শুরু করে তাখনই কেউ একজন তাকে ‘মৃণালিনী’ বলে ডেকে উঠে। এই অচেনা অজানা শহরে নিজের নাম কারো মুখে শুনে অনেকটা চমকে যায় মৃণাল।সে পিছন ফিরলেই দেখতে পায় বিশানকে।মৃন্ময়ী বিয়েতে বিশানকে যেভাবে দেখেছিলো এখানের সেই বিশান যেনো একেবারেই অন্যরকম।তবুও বিশানকে চিনতে ভুল করে নি মৃণাল।অচেনা স্থানে অন্তত একটা পরিচিত মুখ দেখে মূহুর্তেই তার মুখে হাসি ফুটে উঠে।

-আরেহ বিশান ভাই যে।আপনি এখানে?
ফরমাল শার্ট তার সাথে কোর্ট টাই পরে চোখে একটা কালো সানগ্লাস লাগিয়ে হিরোর মতন দাঁড়িয়ে ছিলো বিশান।মুখে একটা কিউট হাসি কিন্তুু যখনই মৃণালের মুখে ভাইয়া ডাক শুনলো তখনই তার মুখের হাসিটা যেনো মূহুর্তের মাঝে উবে গেলো।আচ্ছা এই মেয়েটার সমস্যা কি যখনই আমাকে দেখে তখনই ভাইয়া ভাইয়া বলে ডাকে।আমি যেনো ওর কোন জন্মের শত্রু লাগি তাইতো আমার রোমান্টিক মোমেন্টে এই মেয়ে পানি ঢেলে দেয়।কেথায় এতো সুন্দর একটা ছেলে দেখে সে ফিল্মের হিরোইনদের মতো দৌড়ে আসবে আমার কাছে তা নয় যখনই আমায় দেখবে তখনই ভাইয়া ভাইয়া বলে ডাকা শুরু করে দেয়।

-ভাইয়া আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন! ভাইয়া
বিশানের চোখের সামনে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলছে মৃণাল। এদিকে আবার মৃণালের মুখে ভাইয়া ডাক শুনে বিশান রেগে গিয়ে বলে,

-আমি কি বয়রা নাকি যে শুনবো না।এতোবার ভাইয়া ভাইয়া বলে ডাকার কি আছে। আর আমি তোমার কোন জন্মের ভাই লাগি যে আমাকে দেখলেই ভাইয়া ভাইয়া করো।
বিশানের হঠাৎ এমন রাগে যাওয়ার কারণ বুঝলো না মৃণাল।কিন্তুু সে অনেক টা ভয় পেয়ে যায় বিশানের এমন আচরণে।তাই সে বিশানকে উদ্দেশ্য করে বলে,

-সরি ভাইয়া আমি বুঝতে পারি নাই।আপনি এমন রেগে যাবেন।
(😂😂যে ভাইয়া ডাকের জন্য বকা খাইছে আবার সেই ভাইয়াই ডাকলো)
বলেই মৃণাল পিছন ফিরে আবার হাঁটা শুরু করলো। আজকের দিনটাই খারাপ।সকালে বুনোভাই আর এখন তার বন্ধু সব মিলিয়ে আজকের মতন খারাপ দিন তার জীবনে আর একটাও ছিলো না।
এদিকে নিজের ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হয় বিশান।

-মৃণালের তো কোনো দোষ নেই সে তো আর আমার মনের কথা জানেনা।আর ভাইয়ের বন্ধুকে তো ভাইয়া বলেই ডাকবে এটাই তো স্বাভাবিক। মনে মনে বলে বিশান।তাই সে দৌড়ে গিয়ে মৃণালের সামনে দাঁড়ায়,

-মৃণালিনী আই এম সরি। আসলে আমি তোমার সাথে রুড বিহেভ করতে চাইনি।হঠাৎ কি হলো প্লিজ মৃণালিনী রাগ করো না।একটা মায়াবি চাহুনি দিয়ে কথা গুলো বলল বিশান।

-ইটস ওকে বিশান ভাই।আমি কিছু মনে করি নি।
এক বুক হতাশা নিয়ে বেচারা বিশান বলে,

-আমাকে কেউ ভাইয়া বললেই আমার মাথা গরম হয়ে যায়।বিপু ছাড়া আমি এ পৃথিবীর কোনো মেয়েকেই বোনের স্থান দিতে পারবো না।তাই এর পর থেকে তুমি আর আমাকে ভাইয়া বলে ডাকবেনা।
করুন চাহনি নিয়ে কথাগুলো বললো বিশান।
এদিকে বিশানের এমন অদ্ভুত কথা শুনে মৃণালের মুখ হা হয়ে যায়।তখন সে আপনাআপনিই বলে,

-তাহলে কি বলবো বিশান ভাই।
আবার ভাই ডাক শুনে বিশান কটমট চেহারা নিয়ে মৃণালের দিকে তাকায়।আর বিশানের চাহনি দেখে নিজের কথার ভুল বুঝে দাঁতে জিব কাটে মৃণাল।তারপর দু’জনে দুজনের দিকে তাকিয়ে উচ্চস্বরে হেসে উঠে।
এরপর থেকে মৃণালকে এই অচেনা শহরক চিনিয়েছে এক অচেনা মানুষ। তার যেসব আবদার গুলো সে বুনোভাইর কাছে সে অনায়াসে বলতে পারতো তা কখনই বিশানকে বলতে না পারলেও কি করে যেনো বিশান ঠিকই তার মনের খবর জেনে যেতো। এভাবেই মৃণাল আর বিশানের মাঝে এক অদ্ভুত বন্ধুত্বের সৃষ্টি হয় যা মৃণালের কাছে কেবল বন্ধুত্ব হলেও বিশানের কাছে অন্য কিছু।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here