বেলা_শেষে_ফেরা পর্ব ৯+১০

#বেলা_শেষে_ফেরা

#পর্ব_৯

#লেখনীতে_Suchona_Islam

হঠাৎ তূর্ণার খেমচে দেওয়ায় তন্ময় ঠিক হজম করতে পারলো না। কিন্তু কি কারণে এমন’টা করলো সে। ভাবাচ্ছে তন্ময়কে।
এদিকে তূর্ণা তন্ময়ের দিকে ঘুরে দাড়াতেই আকাশ মাথায় পরলো তাহার। হাতের বাজে অবস্থা করে ফেলেছে। কি করবে এবার তার মাথা’ই কাজ করছে না। তন্ময় তো হাত ধরে বাচ্চাদের মতো হাতড়াচ্ছে, কারণ খুবই জ্বালা করছে তার হাত। দুই হাত দিয়ে যে তূর্ণা তন্ময়কে খামচে দেয় তাই।

“আআআমি সসসরি। আআমি বুঝঝতে পারিনি। আসসলে তততখন ঘঘঘরোর মাঝে ছিলাম। আআআমি সসসরি প্লিজ।” তূর্ণা কান্না করে তন্ময়ের উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলছে। তন্ময় এবার তূর্ণার দিকে তাকালো। তার চেয়ে তো তূর্ণা বেশি ভয় পেয়ে আছে। তূর্ণার ভাবনা তন্ময় বোধহয় এখন তাকে বকবে, তাই সে চোখের পানি নাকের পানি এক করে কাঁদছে।

এই সুযোগ তো তন্ময় আর পাবে না। হাত জ্বালা করছে, তবু’ও তূর্ণাকে টাইট দেওয়া উচিত। তাই সে এবার একটু গম্ভীর মুখ করে নিয়ে তূর্ণাকে কর্কশ কন্ঠে জবাব দিলো, “তূর্ণা হ্যাভ ইউ লস্ট অফ ইউ’র মাইন্ড! মন কোথায় থাকে তোমার। এমন অদ্ভুত আচারন করার কারণ কি হতে পারে তোমার। উফঃ আমার হাত শেষ করে দিলে।”
“আআসলে আমি এটা ইচ্ছে কককরে করিনি। আমি আমি আমি!” কথা বলার সময় কেঁপে কেঁপে উঠছে তূর্ণা আর তা নিয়ে মজা’য় বেশ টইটুম্বুর তন্ময়।
“কি আমি আমি করছো। তোমার স্পর্ধা দেখে আমি সত্যিই হতবাক। এভাবে খামচে কেনো দিলে?”
“আমি আমি আমি আমি!”
“আবার সেই আমি আমি। এই তুমি সঠিকভাবে জবাব দাও ড্যাম ইট।” এবার হাতের জ্বালা’টা বেশ ঝংকার দিয়ে উঠায় রাগীভাবে’ই তূর্ণাকে বকলো তন্ময়।
“আআআমি ততততো মমিন্টুর কথা ভাব….।” সম্পূর্ণ কথা শেষ করতে না দিয়ে তন্ময়’ই তূর্ণাকে প্রশ্ন করলো, “মিন্টু! কে এই মিন্টু?” তন্ময় ভেবেছে এটা বোধহয় তূর্ণার বিএফ। তাই বুকভরা কষ্ট নিয়ে তূর্ণার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়লো তন্ময়।
“মিন্টু হলো আমাদের একালার বখাটে ছেলে। আজ তো আপনার জন্যে আমি মুনিয়াকে বাসায় চলে যেতে বলি। আমি একা যাবো আর ওই মিন্টু খারাপ আচারণ করতে পারে আমার সাথে এটাই ভাবছিলাম। এ সব কিছু’র দায়ী আপনি।” ভীতি ও রাগ দু’টোই কাজ করছে তূর্ণার এখন। তবে এবার কিছুটা শান্ত হয়ে স্পটভাবে কথাগুলো বললো তূর্ণা তন্ময়কে।
“আমি! আচ্ছা আমি দায়ী হলাম কেনো। আর আমি তো তোমার সাথে খারাপ আচারণ করিনি তাই না। তাহলে এভাবে আমাকে দোষী সাভ্যস্থ করার কোনো মানে’ই হয় না।” এ্যাটিটিউড ভাব নিয়ে তন্ময় তূর্ণাকে কথাগুলো বললো। কিন্তু তূর্ণার কোনো বিএফ নেই এতে বেশ খুশিই লাগছে।
“তো, দোষ তো আপনার’ই। কাল যে রাগ করলাম তার জন্যে আমার মনে অনুনয় কাজ করছিলো আপনার জন্যে। ভাবলাম সরি বলা’টা দরকার। তাই তো আপনার জন্য এখানে অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু আমার মিন্টুর কথা মনে হতে’ই মনে ভীতি কাজ করছিলো। আপনি যে আমার মাথায় এভাবে হাত দিবেন তা আমি জানতাম না। আর তাই আমি আপনার হাতে….!” এবার তূর্ণা তন্ময়ের হাত লক্ষ্য করলো। প্রায় অনেক রক্ত ঝড়ছে। তূর্ণার তাকানো দেখে তন্ময়’ও এবার তার হাতের দিকে লক্ষ্য করলো।
তূর্ণার চোখ এবার’ও ছলছল করছে। তা দেখে তন্ময়ের মনে খারাপ লাগা কাজ করছে। এভাবে বকা’টা বোধহয় ভালো হয় নি তার তূর্ণাকে।

………………………..

তূর্ণা তন্ময়’কে একটি ড্রাগস্টোরে (ঔষুধের দোকান) নিয়ে এসেছে। সেখানে তন্ময়ের ক্ষত জায়গার ড্রেসিং করিয়ে নেয় তারা। যেহেতু তূর্ণার ভুল, তাই তূর্ণা ভাবলো তূর্ণার এই ক্ষতিপূরণ’টা দেওয়া উচিত। ব্যাগ খুলতে’ই তার ভিতর থেকে কান্না বেড়িয়ে আসার উপক্রম। মাত্র ৫০ টাকা তূর্ণার কাছে মজুদ। কিন্তু বিল এসেছে ১৫০ টাকার মতো। তার কাছে ৫০ টাকা আছে তবে ১৫০ টাকা নেই। এবার সে কি করবে।

তন্ময়ের হাতে ‘পেভিসেপ সোলিউশন’ মিডিসিন দ্বারা ক্ষত স্থানে ড্রেসিং করানোর সময় খুবই জ্বালা করছিলো। অতি জ্বালা-পুড়ায় তূর্ণার হাত ফট করে ধরে ফেলে তন্ময়। কিন্তু তূর্ণা তো গভীর ভাবনায় তলিয়ে আছে। সে এই তন্ময়’টার সাহায্য করতে গেলে’ই তার সাহায্য করা হয় না। উল্টো বিপদ বাড়িয়ে নিয়ে আসে তন্ময়ের জন্যে। এবার সে কি করবে।

এদিকে তন্ময়ের হয়ে গেলো তূর্ণার দিকে তাকায় তন্ময়। তবে তূর্ণা তো ভাবনায় মশগুল। চোখ কেমন ছলছল করছে। কিছু তো একটা হয়েছে তূর্ণার। না হলে কিছুক্ষণ আগে’ও তো তার চোখ ছলছল করছিলো না। তূর্ণা ব্যাগের মধ্য হাত দিয়ে রেখেছে বিধায় তন্ময় সুযোগ বুঝে তূর্ণার ব্যাগ’টা দেখে নিলো আসলে তার ভিতরে কি আছে। যদি’ও কারো ব্যক্তিগত জিনিসে উঁকিঝুঁকি দেওয়া উচিত নয়, তবু’ও আজ তন্ময় তূর্ণার ব্যাগের রহস্যটা দেখতে চায়।

………………………

“এই আপনি বিল’টা পরিশোধ করলেন কেন?”
“যার কাছে ৫০ টাকা থাকে এবং শখ করে বিল বাঁধিয়ে নিয়েছে ১৫০ টাকা। তার থেকে আর কিইবা আসা করা যায় আমার।”
তূর্ণা এবার অল্প আওয়াজে কান্না করে দিলো। তন্ময় তা লক্ষ্য করে বলে সরি ভুল হয়েছে তার। তবু’ও তূর্ণা কান্না করতে করতেই তন্ময়’কে বললো, “আপনার সাথে যখন থেকে আমার পরিচয় হয়েছে, তখন থেকেই আমি আপনার অপকারই করি বেশি। উপকার কভু’ও করতে পারবো কিনা আমার জানা নেই। আর আমি তো মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে। আজ তো তা’ও ৫০ টাকা ছিলো। এমন’ও সময় গিয়েছে যখন আমি লোকে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতাম।” এ বলে আবারও কান্না জুড়ে দিলো। তন্ময়ের বেশ কষ্ট লাগছে এবার। তূর্ণার ব্যপারে সে তেমন কিছু’ই জানে না। কি অদ্ভুত প্রেমিক সে। তবে এবার থেকে আস্তে আস্তে সব জেনে নিবে সে। তূর্ণার কান্না তার সহ্য হচ্ছে না বলে সে প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে তুললো।

“আচ্ছা মিন্টু কেমন বখাটে?”
মিন্টুর কথা শুনে তূর্ণা অশ্রু মাখা চোখে তন্ময়ের দিকে তাকায়। তন্ময় তার দিকে মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে। এর তূর্ণা জানায় খুবই খারাপ ছেলে সে গলির। বান্ধুবী যেদিন সাথে না থাকবে সেদিন তারা বাড়ির সামনে পর্যন্ত যায়। তন্ময় ভাবলো একবার, তূর্ণাকে একা ছাড়া যাবে না। তার উপর সে ভয় পেয়ে তার হাত খামচে দেয়, ইচ্ছে করে না।

দমকা বাতাশ বইছে আর তূর্ণা ও তন্ময় হাটছে সেই লেকে’র পাড় দিয়ে। দু’জনের মাঝেই অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে। দোকান থেকে ওখানে’ই গিয়েছিলো ওরা। দু’জনের হাটার দুরুত্ব কিছুটা। তবে ভালোবাসাটা হয়তো গভীর।

“আচ্ছা একটা কথা তোমায় জিজ্ঞেস করবো?”
“হ্যা! বলুন কি বলবেন।”
“আগে তুমি আমায় তুমি বলে কথা বলো। নিজেকে সদ্য বুড়ো বুড়ো লাগছে।” তন্ময়ের কথা শুনে তূর্ণা হেসে দেয়।
“আচ্ছা তাই বুঝি!”
“হু তাই!”
“আচ্ছা বেশ বলবো।”
“থ্যাংকস! তবে এবার প্রশ্নটা করে’ই ফেলি নাকি?”
“হ্যা নিশ্চয়ই!”
“তোমাকে পরে যখন গোলাপ ফুলটা দিলাম তখন তুমি ওটার পাপড়ি ছিঁড়ে পানিতে কেনো ভাসালে!”
“আমার তো সব ফুল’ই প্রিয়। তবে গোলাপ’টা একটু কম। কারণ গোলাপে কাটা থাকে।”
“কি বলো কি! কিন্তু এটি’ই সবচেয়ে সুন্দর ফুলের একটি।” তূর্ণার উক্তি শুনে একটু অবাক হয়ে গিয়েছে তন্ময়।
“তা আমি জানি। কিন্তু আমি আমার জীবনকে গোলাপের সাথে তুলনা করি। এখন আমি কাঁটা। তবে একদিন আমি গোলাপ হবো। কিন্তু সেইদিন আসতে অনেক দেড়ি হবে। আর আমি এখনই এই গোলাপের মহোমায়া’য় নিজেকে জড়াতে চাই না। আমার জীবনসঙ্গী নিজ হাতে গোলাপের মতো আমায় ফুটিয়ে তুলবে।”
“ওহ আচ্ছা। তোমার মনে এতো ক্লাইম্যাক্স আছে, তা আমার জানা ছিলো না। তবে তোমার বর্তমানে কি ফুল বেশি ভালো লাগে!”
“শিউলি ফুল।”
“ওহ আচ্ছা। শিউলি ফুল। তা তোমাদের বাসায় কি গাছ আছে শিউলি ফুলের?”
“না। তবে মুনিয়াদের বাসায় ওদের ছাদে আছে। কি সুন্দর। আমার খুব ভালো লাগে। ঝড়া ফুল যখন আমি কুড়িয়ে নেই, একটা আনন্দ ঘিরে ধরে আমায়।”
“আচ্ছা। তাহলে আমিও নার্সারি থেকে শিউলি ফুল গাছের চারা নিয়ে ছাদে লাগিয়ে দিবো।”
“আপনাদের নিজস্ব ছাদ বুঝি।”
“হ্যা। তবে এখন তুমি আপনি বললা কেনো?”
“সরি! সরি! সরি!”
“ইট’স ওকে!”

তন্ময় তূর্ণাকে বাসার সামনে পৌঁছে দেয়। তবে তূর্ণা তন্ময়কে একটু আড়াল হয়ে নিয়ে যেতে বলে। গলির লোকেরা দেখলে খারাপ ভাববে তাই।

…………………………

“নে ধর! তোর আশিক তোকে দিয়েছে।”
“আচ্ছা আমায় তুই বল। বিগত ছ’মাস ধরে আমাকে কেউ শিউলি ফুলের সাথে একটি করে চিরকুট পাঠায়। কিন্তু আমি তো তাকে চোখের দেখা’ও দেখি নি। এভাবে’ও কি ভালোবাসা হয় নাকি?”
“তা আমি জানবো কি করে ‘দূর্বাঘাস’। তোর পিয়ারে মজনু’কে এবার তোরই বের করে তার থেকে জানতে হবে। সে তো আমাকে’ও নিজে এসে এসব দিয়ে যায় না। কাউকে দিয়ে পাঠায়। এই ছয় মাস আমিও অধৈর্য হয়ে পরলাম বোইন। এবার তুই তাকে খুঁজ আর আমাকে এই চাকরি থেকে বরখাস্ত কর প্লিজ।”
“ওই বিলাইয়ের বাচ্চা। তোকে কি আমি চাকরি দিয়েছি নাকি। আর আমাকে এসব না বলে তুই’ও তো পারতি তাকে খুঁজে আমার সামনে হাজির করতে। তা না আমাকে’ই কথা শোনানো হচ্ছে।” রাগীভাবে’ই কথাগুলো মুনিয়াকে শুনালো তূর্ণা।
“আচ্ছা মেরী বেহেন। আমার ভুল হয়ে গেছে। তবে চাকরিটা তোর জন্যেই আমার হয়েছে। বোইন হাঁপিয়ে পরছি। এই বা….!”
“এই চুপ। আবার বকা দিতে নিয়েছিস না। শয়তান্নী। এখন যা আসাদের কাছে, ওই তো ডাকছে তোকে।” পিছনে ফিরে দেখে সত্যিই আসাদ ডাকছে তাকে।
“আচ্ছা আসছি এখন, সোনা তুই থাক।”

বিগত ছয় মাস ধরে তূর্ণাকে কেউ শিউলি ফুলের সাথে একটি করে চিরকুট পাঠায়। প্রথমে একটু-আধটু ভাল লাগলে’ও পরবর্তীতে তার বিরক্ত লাগতে শুরু করে। চিরকুট’টা খুবই সুন্দর করে টাইপোগ্রাফি’র মতো করে লিখা। কিন্তু তূর্ণার এসব মোটে’ও ভালো লাগে না। আজকাল বাসায়’ও অনেক ঝামেলা হচ্ছে তাকে নিয়ে।
তবে কি নতুন কোনো ঝামেলা সৃষ্টি হবে তূর্ণার।

মুনিয়া আর আসাদ যাচ্ছে সেই ব্যক্তির কাছে, যে ব্যক্তি তূর্ণাকে রোজ চিরকুট ও শিউলি ফুল পাঠায়।
“এবার কি করা যায়। বল তো আসাদ!”
“আমি জানি না রে সোনা!”
“তূর্ণা যদি জানতে পারে এটা ভাইয়ার কাজ তাহলে খুব’ই খারাপ হয়ে যাবে, তাই না!” বেশ চিন্তিত স্বরে আসাদ’কে মুনিয়া কথাগুলো বললো। আসাদ আশস্ত করে মুনিয়াকে।
“আমার খুব’ই ভয় করছে। ভাইয়ার জন্যে আমাদের আজীবনের বন্ধুত্বের সম্পর্কে যদি ফাটল ধরে। আমি তো নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।” এবার মুনিয়ার চোখ ছলছল করছে। তূর্ণা কি তাকে ভুল বুঝবে নাকি আপন করে নিবে। মুনিয়ার মন খারাপে আসাদের’ও একটু মন খারাপ হলো।
“সব’ই তো বুঝলাম। কিন্তু তোর আমার প্রতি কোনো মায়া নেই তাই না?”
“কেনো! আমি আবার কি করলাম তোর।”
“তুই কি বিয়ের পরে’ও আমাকে তুই-তুকারী করবি নাকি। এই তুই-তুকারী আর নিতে পারছি না।”
“তো কি হইসে। বিয়ের পরে’ও তোকে আমি তুই করেই বলবো। আর আমাদের কিউটি বেবি হলে তাদের তোকে দেখিয়ে দিয়ে বলবো এটা তাদের মামা লাগে।” বলে’ই মুনিয়া হাসিতে মশগুল হয়ে পরলো।
“ধুর! জীবনটা’রে প্যারাসিটেমল করে দিলি। আমার উচিত ছিলো জুনিয়র কারো সাথে প্রেম করতে।” মুখে দুঃখী দুঃখী ভাব নিয়ে বললো আসাদ কথাগুলো।
“কি বললি তুই!” চোখ রাঙ্গিয়ে, আগুনের মতো ঝলসে উঠলো মুনিয়া।
“না সোনা, কিছু না। তুই বিয়ের পরে’ও আমাকে তুই-ই বলিস। আমি মাইন্ড করবো না।” একটু্ কান্নার অভিনয় করে বললো কথাটি আসাদ। তা দেখে মুনিয়া হেসে উঠে। সে জানে তারা একে-অপরকে কতোটা ভালোবাসে।

লাইব্রেরির কাছে যত’ই যাচ্ছে মুনিয়ার হৃদপিন্ড ততোটাই ধকপকানো শুরু করেছে। তার’ই জন্যে কি তূর্ণার এবং তার সম্পর্ক ভেঙ্গে যাবে।
কিন্তু তন্ময়ের মাঝে এই নতুন প্রেমিক কে যে তূর্ণাকে এভাবে ডিস্টার্ব করছে। কে এই আগুন্তুক?
#বেলা_শেষে_ফেরা

#পর্ব_১০

#লেখনীতে_Suchona_Islam

মুনিয়া ও আসাদ লাইব্রেরিতে গিয়ে পৌঁছায়। সেখানে গিয়ে দেখে আগুন্তুক বই পড়ছে। দু’জনে সেই লোকটির কাছে যায়। তবে লোকটি আর কেউ নয়, তন্ময় নিজেই। মুনিয়া তো কবে’ই জেনেছিলো তন্ময়ের এই সিক্রেট। তবে তন্ময়ের রিকুয়েস্টে মুনিয়া তূর্ণাকে এ ব্যপারে মিথ্যা বলেছে। কারণ কিছুটা হলেও যে তূর্ণা তন্ময়’কে পছন্দ করে মুনিয়া সেটা ঠিক’ই বুঝে গিয়েছিলো।

মুনিয়া এবার আস্তে আস্তে কথা বলতে শুরু করলো, “ভাইয়া এভাবে আর তূর্ণার সাথে ছিনিমিনি খেলা অন্তত আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি চাই না আপনার জন্যে আমার আর তূর্ণার সম্পর্ক’টা এভাবে নষ্ট হয়ে যাক!”
“আরে পাগলী, এত ভয় কেনো পাচ্ছো তুমি? কিচ্ছু হবেনা দেখো তুমি!” মুচকি হেসে মুনিয়াকে কথাটি বলল তন্ময়।
“তো লাগবে না! এমনিতে’ই আপনার জন্যে আমি ভয়ে ভয়ে থাকি। এবার আর লুকোচুরি না করে সরাসরি বলে দিলে’ই তো পারেন। আমি এবার চাকরি থেকে বরখাস্ত হতে চাই।” একটু অভিমানী ভাবে কথাগুলো বললো মুনিয়া। তার কথা শুনে তন্ময় একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে মুনিয়াকে আশস্ত করে।
“তবে মুনিয়া! আর মাত্র কয়েকটা দিন আমার এই চাকরিটা করো প্লিজ। না হলে তো প্রজেক্ট’টা চলে যাবে, প্লিজ!” একটু কাঁদো কাঁদো মুখ করে, দুষ্টুমি ভঙ্গিতে মুনিয়াকে কথা গুলে বললো তন্ময়। তারা তিনজনে’ই একটু জোরে হেসে দিলো। লাইব্রেরিয়ান তাদের ইশারায় চুপ হতে বললো। আসাদ এবার তন্ময়কে বললো, “তা ভাইয়া। ট্রিট দিবেন না?”
“তোমাকে কেনো ট্রিট দিবো? দিলে’ও আমি আমার শালিকা’কে দিবো। ওর হেল্প ছাড়া এতোদিনের প্রজেক্ট’টা ইন-কমপ্লিট হয়ে থাকতো তাই। কিছুদিনের মাঝে’ই তা পূর্ণতা পাবে। সব’ই মেরি শালি কি কামাল হ্যা ভাই। শালি তো আধি ঘারওয়ালী!” আসাদকে চোখটেপ দিয়ে বললে, আসাদ একটু অভিমানী ভাব নিয়ে তন্ময় ও মুনিয়ার দিকে তাকালে ওরা দু’জনে মিটিমিটি হেসে দেয়।
“হ্যা ভাইয়া! ট্রিট তো আমি’ই পাই। ও পাবে কোন দুঃখে শুনি?” মুনিয়া দুষ্টুভাবে আসাদকে শুনিয়ে দিলো কথাগুলো।
“তা আমি ভাগ নিবো না। তুই আমার হবু বউ। এই ভাগ তো আমি নিতে চাই’ই চাই!” অসহায় মুখ করে কথাগুলো বললো আসাদ।
তন্ময় ও মুনিয়া আসাদের কথা শুনে সজোরে হেসে দেওয়ায় লাইব্রেরিয়ান তো রেগে তাদের বাইরে চলে যেতে বলে। তিনজনে বাইরে বেড়িয়ে’ও হাসিতে মশগুল।

চিরকুট আদান-প্রদানের মাধ্যমে তন্ময় ও মুনিয়ার একটা ভাইবোনের সম্পর্ক গড়ে উঠে। দু’জনের ভাবভঙ্গি টা’ও কিছুটা আপন ভাই বোনের মতো।

…………………………….

“তাহলে তোমার এতো স্পর্ধা হলো কি করে আমাকে রোজ ফলো করার?”
“তূর্ণা তুমি ভুল বুঝছো। আগে আমাকে এক্সপ্লেনই করতে তো দিবা!”
“না! তোমার মতো মিথ্যুক’কে আমি বিশ্বাস করি না আর। ছিঃ তন্ময়! কতোটা ছোট করলে তুমি আমাকে এবং আমার পরিবার’কে। ছিঃ!”
“তূর্ণা একবার কথা’টা শুনো প্লিজ!”
“কি শুনবো হ্যা। কি ঘোড়ার ডিম বুঝাবা তুমি আমাকে। তোমার মতো মিথ্যুক আমি এই প্রথম দেখলাম, যে কিনা আমার দূর্বলতা’র সুযোগ নিয়ে আমাকে’ই চিরকুট পাঠায়।”
“কিন্ত তূর্ণা….।”
“চুপ ফাজিল, অসভ্য, বেয়াদব। আমার সামনে আর কখনোই আসবা না। তোমাকে আর আমার আশেপাশে’ও দেখতে চাই না।”
তূর্ণা ‘ফাজিল, অসভ্য, বেয়াদব’ বলায় তন্ময়ের বেশ রাগ হলো। রাস্তায় দাঁড়ানো সবার সামনে তূর্ণাকে একটা চড় বসিয়ে দেয় তন্ময়। সেখানে তূর্ণার বাবা-মা’ও উপস্থিত ছিলেন। সবাই হতবাক তন্ময়ের কাণ্ড দেখে।
কিছুক্ষণ আগে যখন তূর্ণা বাসায় ফিরছিলো তন্ময়’ও তার পিছু পিছু আসে। বিগত ছয় মাস এটা’ই হয়ে আসছে।

এলাকার বখাটে মিন্টু তূর্ণার বাবার কাছে খবর লাগায়। মেয়ের সাথে কারো চক্কর চলছে, আর তারা একটু মজা করলে’ই দোষ। তূর্ণার বাবা সেদিন খুব বকেছিলেন মিন্টুকে। মেয়ের নামে এসব নালিশ করার সে কে, তা’ও একটা বখাটে ছেলের থেকে নিজের মেয়ের সম্পর্কিত তথ্য আকিদ তালুকদার তেমন গুরুত্ব দেন নি। এক সপ্তাহ পরে সে বাজার থেকে যখন বাসায় ফিরছিলেন, সেদিন সে তন্ময়’কে লক্ষ্য করে। তবে সেদিন মুনিয়া আসাদের সাথে ঘুরতে যাওয়ায় তূর্ণাকে তন্ময় আর একা ছাড়েনি। রিক্সায় নিজের মেয়ে আর লাগোয়া ছেলের সাথে এভাবে দেখে আকিদ তালুকদারের লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে। শেষে কিনা তার মেয়ে এমন’টা হবে সে ভাবতে পারে নি। এ নিয়ে তূর্ণার বাসায় ঝামেলা হয়। বাবা’কে সে বোঝাতে পারে নি। তাই ব্যর্থ হয়ে চুপ থাকে। কিন্তু প্রতিদিন তূর্ণাকে ঝামেলার শিকার হতে হয়। গলি দিয়ে বের হলেই মিন্টু খারাপ ভাবে ইশারা করে। তার এসব আর ভালো লাগছিলো না। তাই তো আস্তে আস্তে তন্ময়ের থেকে সরে আসার ব্যর্থ চেষ্টা করছিলো। তবে তন্ময় তার কাছে ততো’ই ফিরে ফিরে আসে।

……………………….

আজ যখন তন্ময় তূর্ণার পিছু নিয়েছিলো তখন তূর্ণা তা স্পষ্ট খেয়াল করে। আজ এর একটা নিহিত ব্যবস্থা করেই ছাড়বে তূর্ণা। বাসার ঝামেলা সে আর মেনে নিতে পারছে না। তার কাছে তার পরিবার আগে, পরে পৃথিবী।

তূর্ণা বাসায় যখন প্রবেশ করলো তখন তন্ময় একবার চেয়ে তারপর পিছন ঘুরে হাটা ধরে। কিন্তু তূর্ণার ডাকে ফিরে দাড়ায়। তূর্ণা তন্ময়ের সামনে আসে এবং রাগে ছটফট হয়ে বলতে লাগে, “কেনো রোজ রোজ আমার পিছু নাও। ছয়’টা মাস কিন্তু কম না তন্ময়। তোমাকে বন্ধু ভেবেছিলাম, এই তার প্রতিদান। যাক সেসব, চিরকুট আর শিউলি যে তুমি’ই আমায় দিতে তা আজ জানতে পেরেছি। যখন আমি লাইব্রেরিতে যাই আর তোমাদের বলা কথাগুলো শুনে ফেলি।”
তন্ময় এসব শুনে থমকে যায়। তূর্ণা কি তাহলে তার ভালোবাসা বুঝতে পেরেছে নাকি দূরত্ব বাড়িয়ে তুলবে।

“তুমি আমায় রোজ ফলো করো বলে মিন্টু আমাকে কি পরিমান হেনস্তা করেছে জানো। সে আমাকে খারাপ ভাবে ইঙ্গিত করে!”
মিন্টুর ব্যপারে এতো কিছুর কথা শুনে তন্ময়ের প্রচুর রাগ লাগে। কিন্তু পরের কথা শুনে সে স্তব্ধ হয়ে যায়।
“আমার বাবার সাথেও রোজ আমার ঝামেলা হয়, অশান্তি হয়। এবার আমায় মুক্তি দাও তন্ময়। রোজ রোজ আর সহ্য হয় না। বাবা ভাবে আমি চরিত্রহীন। কিন্তু আমি এমন কিছুই তো তোমার সাথে করিনি। তুমি শুধুই আমার বন্ধু ছিলে, আর কিছু না তন্ময়!” অতি রেগে যাওয়ার ফলে চোখ দিয়ে পানি পরছে তূর্ণার। তূর্ণা চেঁচিয়ে কথা বলায় রাস্তায় মজুদ কিছু লোক তাদের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। সবাই মজা নেওয়ার জন্যে দাড়িয়ে ভীড় জমাচ্ছে। তন্ময় এমন পরিস্থিতি’তে আগে কখনোই পরে নি তাই তো সে বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হয়। মাথা নিচু করে তূর্ণা’কে তন্ময় বোঝাতে চেয়ে’ও ব্যর্থ হয়। কিন্তু তূর্ণা কিছুই বুঝতে চাইছে না।

নিচে অনেক মানুষের শব্দ হওয়ায় আকিদ এবং শ্রাবণী তালুকদার যায় বিষয়’টি বোঝার জন্যে। সেখানে গিয়ে তারা হতবাক। সমাজের মানুষ আজ থেকে তাদের আর’ও নিচু ভাবনায় দেখবে। এমনিতে’ই দরিদ্র বলে সমাজে তাদের গুরুত্ব কম, আর এখন এমন একটা কাণ্ডে লোকেরা হাসাহাসি তো করবেই। ভাবতেই আকিদ তালুকদার মাথা চক্কর খায়।

……………………….
সকলের সামনে তূর্ণাকে এভাবে চড় মারায় সকলেই স্তব্ধ। তূর্ণা এবং তার বাবা-মা তো কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা কিছু লোক তো আবার ভিডিও করছে। তাদের কাজ’ই সম্পূর্ণ ব্যপার’টার ব্যাখ্যা না জানতে চেয়ে আগেই ফোন হাতে নিয়ে ভিডিও করা। ফেসবুকে পোষ্ট করলে অনেক লাইক কমেন্ট আসতে পারে ভেবে ভিডিও করছে। কিন্তু কেউ বুঝতে চায় না যারা এই হাসি-তামাশা’র একবার শিকার হলে, তাদের পরবর্তী লোক-সমাজে মানুষ কেমন ভাবতে পারে।

তন্ময়ের হুশ আসায় বুঝতে পারে সে কত বড় ভুল করে ফেলেছে, তা’ও রাস্তার মাঝে। আকিদ তালুকদার এবার বেশ চটে যায়। যেখানে সে মেয়েকে তেমনভাবে শাসন’ও করেনি আর আজ কিনা একটা ছেলে তার মেয়ের গায়ে হাত তুললো। রাগের বশে আকিদ তালুকদার’ও তন্ময়ের গালো কষে একটা চড় মারে। সকলের সামনে এভাবে মার খাওয়া তন্ময়কে বিস্ময় করে তুলেছে। আকিদ তালুকদার এবার ঝাঁজালো কন্ঠে তন্ময়কে বলতে লাগলো, “এই ছেলে আমার মেয়েকে গায়ে হাত তুলার তুমি কে। আর তুমি ওকে ডিস্টার্ব কেনো করো সব সময়। ও তোমাকে পছন্দ করে না জানা সত্বে’ও ওকে বিরক্ত করো। আর আজ তো চড়’ই বসিয়ে দিলে বাহঃ!”

তন্ময় তূর্ণার বাবার কথার প্রতি উত্তুরে কিছুই বললো না। কারণ তূর্ণাকে চড় দেওয়ায় নিজেকে এখন অপরাধী মনে হচ্ছে তার। আকিদ তালুকদার মেয়েকে টেনে হিঁছড়ে ভীড় ঠেলে বাইরে নিয়ে এসে স্ত্রীর হাতে মেয়েকে তুলে দেয় বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্যে। তূর্ণা হতবম্বের মতো আছে, তার মাথা কাজ করছে না। সবার সামনে তন্ময় কিনা তাকে চড় বসালো। মনের ভিতরে যে ভালোলাগা’টা কাজ করতো, আজ তা শেষ হয়ে গেলো।

আকিদ তালুকদার সকলের উদ্দেশ্যে বললো, “ভাইয়েরা এই ছেলেটা একটা বখাটে হবে। চেহেরা সুন্দর হলেই যে বখাটে হবে না কেন জানতো। তবে সে আমার মেয়েকে প্রচুর বিরক্ত করতো সব সময়। আমি চাই আজ এখানে ওকে সবাই মিলে একটা গণধোলাই দেন। তাহলে হয়তো আমার মনে প্রশান্তি চলে আসবে।” রাগে শরীর গিজগিজ করছে আকিদ তালুকদারের। লোকেরা এমনই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলো। তাই অনেকেই ঝাঁপিয়ে পরে তন্ময়ের উপর। তন্ময় দিশেহারা হয়ে পরে কি করবে বুঝতে না পেরে। এতগুলো লোকের মাঝে থেকে নিজেকে বাচার উপায় খুঁজতে লাগলো। ততোক্ষণে দেরি হয়ে গিয়েছে। সবাই তন্ময়কে বেধরাম মারছে।

আকিদ তালুকদার ঘরে এসেই মেয়েকে কতগুলো চড় বসালেন। তূর্ণা অবাক চোখে তার বাবাকে দেখছে। এমন করে তার বাবা কখনোই তাকে চড় মারে নি। কখনো বকে পর্যন্ত নি আর আজ তন্ময়ের জন্যে তার এই দশা। খুব’ই কষ্ট লাগছে তার কিন্তু কিছু’ই করার নেই। আকিদ তালুকদার রাগে অনেক কথা শুনায় তূর্ণাকে। সে জানায় সমাজে তার আরো অবনতি হলো তূর্ণার জন্যে। জোরে জোরে কথা বলায় হাপিয়ে পরে আকিদ তালুকদার। সে জ্ঞান হারায়। পরে সবাই ধরে বেধে হাসপাতালে নিয়ে যায় আকিদ তালুকদার’কে।

এদিকে তন্ময়কে লোকেরা মারায় খুব’ই বাজে অবস্থা করেছে। রক্তে তার টি-শার্ট’টা ভিজে টইটুম্বুর। অথচ আশেপাশের লোকেরা তার মজা নিচ্ছে। ভিডিও করে ফেসবুকে পোষ্ট করেছে। সেখানে স্ট্যাটাস দেওয়া, “এক সুন্দর বখাটে ছেলে আজ গণধোলাইয়ের শিকার হলো। বেশ হয়েছেটা মার খেয়েছে, মেয়েদের ডিস্টার্ব করা’ই তার কাজ।”

মুনিয়া তন্ময়ের খবর পেয়ে আসাদকে ফোন করায় আসাদ চলে আসে। এরপর দু’জনে মিলে তন্ময়কে হাসপাতালে ভর্তি করায়। অবস্থা নাজে হাল তন্ময়ের। মুনিয়া ভাবতে’ও পারেনি তূর্ণা তন্ময়ের সাথে এমনটা করবে। আসলে মুনিয়া সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা এখনো জানে না। তবে তন্ময়ের থেকে জেনে নিবে তন্ময় সুস্থ হলে হয়তো। যে অবস্থা তাতে মুনিয়ার রিতিমতো হাত-পা কাঁপছে।

#ক্রমশ…

(গল্পটি কেমন হচ্ছে সবাই মতামত জানাবেন। সবাই আমার পাশে থেকে আমাকে উৎসাহ করুন।
স্ববিনয়ে পড়ুন এবং ধন্যবাদ সকলকে।)
#ক্রমশ…

(গল্পটি কেমন হলো জানাবেন। সকলেই পাশে থাকুন। ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করবেন।
স্ববিনয়ে পড়ুন এবং ধন্যবাদ সকলকে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here