#ডার্ক ডায়মন্ড
#আফরিন ইভা
#পর্ব-২৭
_____________________
– নেকড়ে সর্দার হঠাৎ তাঁর রূপ পাল্টানো।এক এক করে নিজেকে খোলস থেকে বের করলো।
।
।
।
– মীরা যেনো নিজের চোখ কেও বিশ্বাস করতে পারছে না, সে ফিরে এসেছে।
যাঁর জন্য মীরা মনে মনে প্রতিক্ষা করছিলো সে সত্যি এভাবে ফিরে আসবে মিরা যেনো কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না।
মীরার মুখে হঠাৎ হাসির রেখা ফুটে উঠলো। মীরা লম্বা একটা ধম নিলো।
– মেথিস মীরা কে হাত ধরে উঠালো এবং কানে কানে ফিসফিসিয়ে বললো প্রিন্সেস আমি ফিরে এসেছি তোমার টানে তোমার কাছে তোমার বুকে।
।
– মীরা আর নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে মেথিসের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে মেথিস কে আঁকড়ে ধরে থেকে বললো, আমি জানতাম প্রিন্স আপনি ঠিক ফিরে আসবেন।
আমি যে আপনার জন্য মনে মনে প্রহর গুনে যাচ্ছি, ভেবেছি এই বুঝি আমার জীবনের বলিদান হতে চললো।হয়তো আপনাকে হারাবো চিরদিন চিরকালের জন্য।
– মেথিস মীরা গালে দুহাত আলতো করে সামনে এনে বললো কে বলেছে আমার প্রিন্সেস আমাকে একা রেখে এ বদ নেকড়ের হবে, তা তো কখনোই নয়। মেথিস মীরার দু-হাত নিজের দু’হাতে রেখে শক্ত করে বললো চিন্তা করো না প্রিন্সেস আমি আছি সবসময় কাছে, দূরে সারাক্ষণ, সারাজীবন ভর।
মেথিস ক্রজের দিকে তাকিয়ে বললো তোদের নেকড়ে সরদার কে আমি কেটেছিলে বাহিরে ফেলে রেখেছি বিশ্বাস না হলে দেখ গিয়ে।
.
.
.
হঠাৎ কেউ এসে মেথিস কে পেছন থেকে আঘাত করলো।
– মেথিস তাল সামলাতে না পেরে দূরে ছিটকে পরলো।
মেথিস ক্ষুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে দেখলো ক্রুজ চোখ মুখ লাল করে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে।
– ক্রুজ রাগান্বিত চোখে মেথিসের দিকে তাকিয়ে, মীরার হাত ধরে রেখে বললো তোর সাহস তো কম নয় তুই আমার প্রিন্সেস কে ছুঁয়েছিস?
দরকার হলে তুই প্রিন্সেসের যেখানে যেখানে স্পর্শ করেছিস ঐ জায়গাগুলোর মাংস আমি ছিলে ফেলবো।
।
– মীরা অবাক হচ্ছে ক্রুজের কথা শুনে, এটা ভেবে ক্রুজ এমন একজন হিংসাত্মক মানুষ যে, সামান্য একজন কে পাওয়ার জন্য সে প্রতিযোগিতায় নেমেছে।কিন্তু এখানে না আছে ভালো লাগার চিহ্ন না আছে ভালোবাসা, কিন্তু তাকে যে এই প্রতিযোগিতায় জিততেই হবে।
।
– মেথিস ক্রুজের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো।
দু’জন প্রাণপনে নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ লেগে গেছে। দু’জন সমান তালে যুদ্ধ করে যাচ্ছে।
কেউ কাউকে হারাতে পারছেনা।
একসময় একজন ভ্যাম্পায়ার আর একজন নেকড়ের রূপ ধারণ করলো।
এবার শুরু হয়ে গেলো আরো ভীষণ মহাযুদ্ধ।
।
– এদিকে মীরা একটা আতংকের মধ্যে আছে। কি করবে না করবে কিছুই যেনো ভেবে পাচ্ছে না।
ক্রুজ সমানে মেথিস কে আঘাত করে যাচ্ছে। মেথিস যেনো কিছুতেই কিছু পেরে উঠছে না। মেথিস মানুষ রূপে ফিরে আসলো।মেথিসের গালে জায়গায় জায়গায় আঁচড় বসানো, মেথিস কে বড্ড বেশি ক্লান্ত মনে হচ্ছে মীরার কাছে ।
হঠাৎ মীরার মনে হলো মীরার যে মুক্তি দিতে হবে তিনটে আত্মা।
যে আত্মাগুলো আজও প্রতীক্ষা করে আছে কখন মীরা আসবে আর তাদের মুক্তি মিলবে। মীরার মনে পরলো ক্রজের বলা কথাগুলো।
মীরা মেথিস কে থামতে বললো কিন্তু মেসিস তবুও থামছে না দেখে মীরা চিৎকার দিয়ে বললো মেথিস প্লিজ স্টপ প্লিজ স্টপ।
– মেথিস মীরার চিৎকার শুনতে পেয়ে থেমে গেলো।
এই সুযোগে ক্রুজ মেথিস কে বেদম মারতে লাগলো।
ক্রুজ আমি রাজি। প্লিজ স্টপ দিস।
মেথিস আমার তোমার ভালোবাসার জন্য আমি চাই না তিনটা আত্মা কষ্ট পাক।
ওরা মুক্তি চায় মেসিস ওরা মুক্তি চায়।
আর আমি যদি পূর্ণ নেকড়ে হয়ে যা-ই তাহলেই ওদের রুহ মুক্তি মিলবে বলে কাঁদতে কাঁদতে মীরা ফ্লোরে ধপ করে বসে পরলো।
-মীরা কি বলছে না বলছে মেথিস যেনো কিছুই বুঝতে পারছেনা।
হঠাৎ মায়াবিনী লিজসহ আরো কিছু নেকড়ের দল মেথিস কে আঁটকে ফেললো।
।
ক্রুজ মীরার কথা শুনে অট্টহাসি তে ফেটে পড়লো, আর মীরা কে বললো প্রিন্সেস তুমি কিন্তু সেই আগেরকার মতোই বোকা রয়ে গেছো।
আসলে কি বলবো আমি যা বলেছি তা সম্পূর্ণ বানোয়াট মিথ্যা ছিলো।
আমি তো তোমাকে পাওয়ার জন্যই কথাগুলো বানিয়ে বলেছি।
– মেথিস মীরার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে।
– মীরা এখনো কিছু বুঝে উঠতে পারছে না।
– মেথিস মীরা কে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো, প্রিন্সেস তোমাকে ও মিথ্যা বলে বোকা বানিয়ে ঠকিয়েছে। ও তোমার অনুভূতি নিয়ে খেলেছে ওর কোনো কথায় তুমি কর্ণপাত করোনা।আমি আছি তোমার সঙ্গে।
তুমি নেকড়ে দের সাথে তোমার শক্তি দিয়ে পেরে উঠবে না কখনো।
ওদের সাথে লড়তে হলে বুদ্ধি দিয়ে লড়তে হবে।
আর ক্রুজ কে ধ্বংস করতে পারবে একমাত্র মুনস্টোন দিয়েই তাহলেই তোমার মম,ড্যড আর লিজের মুক্তি মিলবে।
।
– মীরা মেথিসের বলা কথাগুলো মাথায় একদম ঢুকিয়ে নিয়ে বুঝতে চেষ্টা করলো।
তাঁর মানে ক্রুজের বলা প্রতিটা কথাই মিথ্যা ছিলো।
হঠাৎ পুরো রুম আলোকিত হয়ে গেলো।এতোটাই আলো যে সবার চোখে এসে লাগলো। মীরার কাছে হঠাৎ সব যেন স্বপ্নময় মনে হচ্ছে।
বিশাল এক বই পুরো রুম আলোকিত করে নিজে নিজে বইয়ের পাতা এক এক উল্টাচ্ছে হাওয়ার বেগে।
মীরা দেখতে পেলো এগুলো কোনো বিশেষ মন্ত্র, যা নেকড়ে দের ধ্বংস করতে সাহায্য করছে।
– মেথিস কে নেকড়ে রা ধরে রেখেছে।
মেথিস চিৎকার করে বলতে লাগলো, প্রিন্সেস মন্ত্রগুলো মনে রাখো, এই বই তোমার জন্য ফিরে এসেছে তোমাকে সব বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য। এগুলো পড়লে মুনস্টোন তোমার হাতে চলে আসবে আর তুমি ক্রুজ কে বিনাশ করতে পারবে।
– হঠাৎ বইটা অদৃশ্য হয়ে গেলো।
মীরা জিহবা দিয়ে ঠোঁট দু’টো দিয়ে ভিজিয়ে নিলো। মীরা ক্রুজের দিকে তাকিয়ে মন্ত্র পাঠ করে ফুঁ দিলো।
সাথে সাথে ক্রুজ সহ সব নেকড়ে দূরে ছিটকে পরলো।
মেথিসও ছাড়া পেলো।
মীরা নেকড়ে দের ধ্বংসের জন্য শেষ মন্ত্র টা পাঠ করবার সাথে সাথে মীরা চোখ বন্ধ করে ফেললো।
হঠাৎ মীরা চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলো মুনস্টোন মীরার হাতে চলে এসেছে।
– ক্রুজ দূর থেকে মীরার কাছে হাতজোড় করে মিনতি করছে যেনো ক্রুজ কে মীরা এবারের মতো মাফ করে দেয়।
মীরারও কেনো জানি ওদের ধ্বংস করতে হাত কাঁপছে।
-হঠাৎ কফিন থেকে লিজ বের হয়ে আসলো।
মীরা লিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো চোখ শুরু করে দেহের প্রতিটা জায়গায় আঘাতের চিহ্ন।
মীরার বুক টা কেমন যেনো কেঁদে উঠলো।
মীরার দু-চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পরছে।
লিজ দূর থেকে মীরা কে বললো, প্রিন্সেস আপনি ঐ নেকড়ে টার কথা শুনবেন না ও একটা বদ নেকড়ে।
তাছাড়া আমাকে দেখুন কতোটা নির্যাতন করে আমাকে দিনে দিনে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিয়েছে। যাঁর কারণে বেঁচে থাকতেও শান্তি আমি পাইনি আর মরে গিয়েও নয়।
আপনি এই ক্রুজকে এক নিঃশ্বাসে শেষ করুন তাহলেই আমাদের আত্মার মুক্তি মিলবে।
– মীরার খুব কষ্ট হচ্ছে, মীরা কান্নায় ভেঙে পড়েছে।
– লিজ মীরার কে নিজের গলায় থাকা একটা চেইন দিলো এবং বললো, প্রিন্স আপনি আমার মম কে আমার মৃত্যু সংবাদ জানিয়ে দিবেন।
আর এই চেইন টা আমার তরফ থেকে আপনার জন্য যা আপনাকে সব কিছুর থেকে রক্ষা করবে।
– মীরা কাঁপা-কাঁপা হাতে লিজের থেকে চেইন টা নিয়ে গলায় পরিধান করলো।
হঠাৎ মীরার মনে আকস্মিক এক ক্ষোভ এসে ভিড়ে গেলো।
মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ক্রুজের দিকে এগিয়ে গেলো।
এক নিঃশ্বাসে ক্রুজ কে মুনস্টোন দিয়ে প্রাণ কেড়ে নিলেন।
এদিকে মেথিসেরও সব নেকড়েদের মারা শেষ।
– তিনটা আত্মা কফিন থেকে বের হয়ে মীরা কে আশীর্বাদ করে হাসিমুখে বিদায় জানালো এবং বললো আজ আমরা চিরনিদ্রায় শায়িত হবো, বিধাতা তোমার মঙ্গল করুক এই বলে বিদায় নিচ্ছি আমরা।
হঠাৎ তিনজন অদৃশ্য হয়ে কালো ধোঁয়ার মতো উড়ে গেলো।
– মীরা কান্নায় ভেঙে পরলো।
হঠাৎ ঘাড়ে কারো শীতল স্পর্শ পেয়ে মীরা তাকিয়ে দেখলো মেথিস।
মীরার তপ্ত মন আরো যেনো হু হু করে কেঁদে উঠলো।
মীরা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি, মেথিস কে জড়িয়ে ধরে বললো, আজ আমি পেরেছি প্রিন্সেস, আজ আমি ওদের মুক্তি দিতে পেরেছি, ওদের আত্মা আজ আমার কাছ থেকে বিদায় নিয়েছে।
আজ ওরা আমায় ছেড়ে চিরনিদ্রায় শায়িত।
– মেসিস মীরা কে নিয়ে গ্র্যান্ডপার কাছে এসেছে।
– গ্র্যান্ডপা মীরা কে ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের সকল দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে চাইলে মীরা গ্র্যান্ডপার পায়ে হাত দিয়ে আশীর্বাদ নিয়ে বললো, আজ থেকে ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের সকল দায়িত্ব আপনার গ্র্যান্ডপা। আপনি থাকতে আমি কেনো?
– গ্র্যান্ডপা মীরা কে আজ প্রাণভরে আশীর্বাদ করলো এবং বললো তুমি সত্যি ভ্যাম্পায়ার প্যালেসের যোগ্য প্রিন্সেস।
আমার মেথিস তোমাকে ঠিকই চিনতে পেরেছে। আসলে আমি-ই তোমাকে চিনতে পারি নি।
।
– মেথিস মীরাকে ডার্ক ডায়মন্ড প্যালেসে নিয়ে এসেছে।
মীরার একটু রিফ্রেশমেন্ট দরকার।
মীরার হৃদয় আজ বড্ড বেশি ক্লান্ত।
মেথিস মীরার চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে আছে।
আজ দু’টি চোখ যেনো একে অপরকে কিছু কথা ইশারায় বুঝিয়ে দিচ্ছে। মেথিস মীরার গালে আলতো করে হাত রাখলো মীরা ডাকলো,
– প্রিন্সেস?
– হু..
” ভালোবাসি সত্যি ভালোবাসি, হাজার বছর ধরে তোমাকে পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম আমি, কখনো বুঝতে পারিনি তোমার দেখা আবার আমি পাবো, তোমাকে কাছ থেকে এতোটা ভালোবাসবো।
– মীরারও আজ ইচ্ছে করছে মেথিস কে আজ গভীরভাবে কাছে পেতে, হাজার বছরের তৃষ্ণাগুলো আজ মিটিয়ে নিতে।
মীরা নিজেকে আর দূরে রাখতে পারেনি, মেথিসের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো, বড়ো বড়ো নিঃশ্বাস ছাড়লো।
এই নিঃশ্বাস আজ শত বছরের পাওয়া না পাওয়ার গভীর নিঃশ্বাস।
মেথিসের গরম নিঃশ্বাস মীরার বুকে এসে লাগছে, এ যেনো এক তোলপাড় করা অদ্ভুত সৃষ্টি। মীরা মেথিসের শার্ট খামচে ধরলো।
,- মেসিস মীরার কানের চুল আলতো হাতে গুঁজে দিয়ে বললো,
“প্রিন্সেস ডু ইউ নো ইউ আর মা’ই ডার্ক ডায়মন্ড।”
মেথিসের বলা কথাটা শুনে মীরার ভালোবাসার অনুভূতি গুলো আজ যেনো বাঁধন হারা হতে চাইছে।
– হঠাৎ মীরার ঘোর ভাংলো মোবাইল বাজার শব্দে।
মীরার লজ্জা হচ্ছে মেথিসের দিকে তাকাতে। লজ্জায় মীরা লাল হয়ে গেলো।
মেথিস মীরার কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে বললো, প্রিন্সেস ফোন উঠাও জরুরি হতে পারে।
মীরা লাজুক হেসে ফোনটা রিসিভ করে হ্যালো বললো, মিনিট দুয়েকের মধ্যে মীরার হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেলো।মীরা ফ্লোরে ধুপ করে বসে পরলো।
– মেথিস একদম হতভম্ব হয়ে মীরার পানে তাকিয়ে রইলো।
প্রিন্সেস কাঁদছো কেনো কি হয়েছে কোনো খারাপ কিছু?
– মীরা বহু কষ্টে এটুকু ব’লেই থেমে গেল আগামীকাল দেশে ফিরতে হবে।
– হোয়াট?
# চলবে—–
#বিদ্রঃ রিফ্রেশমেন্ট দরকার, ২৪ তারিখ গল্প আসবে, সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন, গল্পে রহস্য এখনো শেষ হয়নি।