ভালোবাসার ভেজা সন্ধ্যে পর্ব ১১

#ভালোবাসায়_ভেজা_সন্ধ্যে
#রোকসানা_রাহমান

পর্ব (১১)

রিপ্তি দ্রুত পা ফেলে সদর দরজার দিকে এগুচ্ছে। মিন্মি রিপ্তির পিছ ধরলে অনুভব রহস্যকন্ঠে বললো,,

“” আমার রাগিনীকে আমায় মানাতে দিন,ভাবী!””

মিন্মির কন্ঠে বিস্ময়,,,

“”আপনার রাগিনী?””

~~~

মিন্মিদের বাড়ী ছেড়ে মেঠো পথে হাঁটা ধরে রিপ্তি। কিছুদুর এগুতেই রিপ্তির পা থমকে যায়। ভেজা চোখের পানি মুছে নিয়ে সবুজ ঘাসে বিছিয়ে দিলো পা। তার সামনেই মৃদুমন্দ হাওয়ায় ভাসছে শূভ্র কাশবন। নীল আকাশের কালো মেঘ কাটিয়ে পুঞ্জ পুঞ্জ শূভ্র মেঘের মাঝে রোদের লুকোচুরি। কোমল,স্নিগ্ধ প্রকৃতিতে রিপ্তির মন খারাপ কেটে যাচ্ছে অনেকটায়। ইচ্ছে করছে আকাশ থেকে একটু সাদা মেঘ কুড়িয়ে নিতে। তাহলে হয় তো পুরো মন খারাপটাই কেটে যেত! রিপ্তি আকাশপানে তাকিয়ে ছোট্ট আফসোসের সুর ছেড়ে গালে হাত দিলো। কেন সে মেঘ হলো না? তাহলে রোদের সাথে লুকোচুরী খেলতে পারতো! কেন সে কাশফুল হলো না? তাহলে সে বাতাসের তালে নেচে বেড়াতে পারতো! আজ রিপ্তি হয়েছে বলেই তো অনুভব নামক খারাপ লোকটার সাথে তার মন খারাপ মন খারাপ খেলতে হচ্ছে!

অনুভব রিপ্তির পিছুপিছু এসেছে অনেক্ষণ। দুরত্ব বজায় রেখে কিছু সময় নিশ্চুপে রইলো। রিপ্তিকে অমন মনমরা দেখতে তার আর ভালো লাগছেনা। তাই খুবই সতর্কতার সাথে রিপ্তির পাশ ঘেষে বসলো। রিপ্তি কিছু টের পেলো কি?

রিপ্তির দিক থেকে কোনো প্রকার সাড়া পাচ্ছেনা অনুভব। তবে সে গালে রাখা হাত বদল করেছে। অনুভব আসার আগে বা হাত গালে রেখেছিলো। আসার পর ডান হাত। এ রকম থমকে থাকা রিপ্তিকে তার পছন্দ নয়,একদমই নয়,তার তো গরম বালিতে কথার খই ফুটানো রিপ্তিকে পছন্দ! অনুভব রিপ্তির দিকে ঘুরে বসলো। এক পা ভাজ করা,অন্য পা ঘাসে মেলা। অনুভব কি বলবে,কিভাবে বলবে গুছিয়ে নিচ্ছিলো তারমাঝেই রিপ্তি তড়িৎগতিতে ওর দিকে ঘুরলো,চোখদুটো বড় বড় করে হাত উচিয়ে বললো,,,

“” কিছু বলবেননা আপনি। একটা কথাও বলবেননা। অ,আ,ক,খ,এ্যা,বি,সি,ডি,এক,দু,তিন,চার এগুলোও না। বুঝেছেন? আপনার ঐ নোংরা মুখের নোংরা কথা শুনলে আমার কান পচে যাবে। আপনি বরং এক কাজ করুন,ভাবীদের বাসার পেছনে একটা পচা নর্দমা আছে ওখানে গিয়ে আপনার পচা কথাগুলো ফেলে আসুন!””

রিপ্তির কথায় অনুভব থম মেরে রইলো। চোখ তারও বড় হয়ে এসেছে। তবে সামান্য। রিপ্তি কি তাকে হুমকি দিচ্ছে নাকি অনুরোধ করছে? ওর মুখের অভিব্যক্তিতে তো মনে হচ্ছে হুমকি,কিন্তু কথারবাণীতে তো মনে হচ্ছে অনুরোধ। অনুভব কোনটা রাখবে ভাবতে গিয়েও ভাবলোনা। তার যে এখন এই অগ্নিরানীর সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে! অনুভব রিপ্তির কথার বরখেলাপ করে কিছু বলবে তার আগেই রিপ্তি ওর মুখ চেপে ধরলো। অনুভবের ভাজ করা এক পায়ের উরুর উপর রিপ্তি দু হাটুর ভর ছাড়লো। অনুভবের চোখে চোখ রেখে বললো,,

“” ফের যদি আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছেন তো…””

রিপ্তি তো তে আটকে আছে দেখে অনুভব ভ্রূ উচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,তো কি?

রিপ্তি আর কিছু বলতে পারলোনা। অনুভবকে ছেড়ে উঠে দাড়ালো। মেঘ আর রোদের লুকোচুরি খেলাতে হয়তো রোদ হেরে গিয়েছে। পুরো আকাশ এখন কালো মেঘের দখলে। রিপ্তির মুখটাও কি মেঘের দখলেই চলে গেলো? নাকি এবার সে কিছু কালো মেঘ কুড়োতে সক্ষম হয়েছে? নাহলে ওর মুখেও কেন দেখা যাচ্ছে কালো মেঘের ঘনছায়া!

~~~
সকালের নাস্তা সেরে বেয়াইবাড়ী থেকে বিদায় নেন কবির হক। ছেলে,ছেলের বউ,মেয়ে আর অনুভবকে নিয়ে রওনা হোন নিজবাড়ীর উদ্দশ্যে। বাবার পাশেই বসে ছিলো রিপ্তি। খোলা জানালায় উদাসদৃষ্টিতে প্রকৃতির ছোয়ায় চোখ লেগে আসে তার।

লাল দুপাট্টা উর গেয়া রে
তেরা হাওয়া কে ঝোকে ছে,
তুঝকো পিয়া নে দেখলিয়া
হায় রে ধোকে ছে,
মানাকে তুঝে দিল দেগা ওহ,
মাগার আপনি জান দেগা ওহ!!!(গান)

অনুভবের কন্ঠ পেয়ে ঘুম ভেঙ্গে যায় রিপ্তির। তার পাশে অনেকটা কাছ ঘেষেই বসে আছে অনুভব। হাতে ফোন,কানে ইয়ার ফোন। রিপ্তির চোখে চোখ পড়তেই হালকা করে চোখ মেরে দিলো। রিপ্তি ভ্রূ কুঁচকে,চোখ সরু করতেই অনুভব পুনরায় আগের গানটার সুর ধরলো। এতক্ষণে রিপ্তির হুশ এলো। চটজলদি গলার ওড়নাটা ঠিক করতে চাইলো। কিন্তু ওড়না তো গলাতে নেই,কোথায় গেলো?

রিপ্তি নিজের আশেপাশে খোঁজ করে নিচের দিকে চোখ পড়লে ওড়না নজরে এলো। অনুভবের মেলে রাখা পায়ের উপর পড়ে আছে। রিপ্তি কয়েক পলক ওড়নার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,,,

“” পড়ব না আমি ওড়না। আপনার কি? আপনার সমস্যা হলে আপনি পড়ে বসে থাকেন৷ যত্তসব!””

রিপ্তি ভারী বিরক্তিবোধ নিয়ে সিটে ভালো করে হেলান দিলো। সাথে সাথে আবার সোজা হয়ে বসলো,এমন একটা ভাব যেন হঠাৎ করে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু মনে পড়ে গিয়েছে। রিপ্তি পাশে তাকালো,তার পাশে অনুভব ছাড়া আর কেউ নেই। সামনেও ড্রাইভার ছাড়া কাউকে দেখতে পাচ্ছেনা। বাবা,ভাইয়া,ভাবী সব কোথায় গেলো?? রিপ্তি আতঙ্কদৃষ্টিতে অনুভবের দিকে তাকিয়ে রইলো,পরপর দুবার ঢোক গিলে বললো,,

“” গাড়ী থামান,আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? বাবা কোথায়? ভাবী? ভাইয়াও তো নাই। আপনি আমাকে কিডন্যাপ করেছেন? আপনার মনে তাহলে এগুলোই ছিলো? আমার তো প্রথমদিনই সন্দেহ ছিলো। রাত বিরাতে বাড়ীঘর ঘুরে বেড়ানো,বাড়ীর সবচেয়ে ছোট,আদরের মেয়ের উপর চব্বিশঘন্টা নজরে রাখা? কি ভেবেছেন? আমাকে কিডন্যাপ করে আমার বাবার সব সম্পত্তি হাতিয়ে নিবেন? এতো সহজ? আমি থাকতে আপনার প্ল্যান কিছুতেই ফুলফিল হতে দিবো না। দরকার হলে আমি আপনাকে খুন করবো, জেল খাটবো,তবুও বাবার এতো বড় ক্ষতির কারণ হবোনা।””

রিপ্তি কথার তালে তালে নিজের হাতদুটো অনুভবের গলার কাছে এগিয়ে নিচ্ছে। অনুভব হাত থেকে নিজের ফোনটা পাশে রাখলো,কান থেকে ইয়ারফোনটা খুললো।রিপ্তির হাতদুটো নিজেই নিজের গলাতে চেপে ধরে বললো,,,,

“” আমি তো সেই প্রথম রাতেই খুন হয়েছি,মায়াকন্যা! খুনের উপর যদি কিছু থাকে,তাহলে আজ তাই করে দাও!””

চলবে

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here