গল্প: #রঙহীন_জীবনের_রঙ
পর্ব ৪
লেখনীতে: #স্বর্ণা_সাহা (রাত)
ও কিছু বলতে যাবে তার আগেই নির্ঝর বলতে শুরু করলো,,
—খুব শখ না ছেলেদের সাথে আড্ডা দেওয়ার, খুব ভালো লাগে ছেলেদের সাথে আড্ডা দিতে তোমার তাইনা?
নির্ঝর আরো জোরে হাত মুচড়ে ধরলো,দিশানী ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলো আর কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,
—নির্ঝর আমার লাগছে প্লিজ ছাড়ো,তুমি এমন করছো কেনো?
—তো কি করবো তোর সাথে,, তুই অন্য ছেলেদের সাথে আড্ডা মেরে বেড়াবি আমাদের পরিবারের মান-সম্মান ধুলোয় মেশাবি আর আমরা তোকে ফুল চন্দন দিয়ে পুজো করবো?
দিশানী তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো,,
—ফুল চন্দন দিয়ে পুজো তো তোমাদের কাছে আমি চাইনি একটু ভালোবাসা আর সম্মান চেয়েছিলাম কিন্তু আপসোস তোমরা আমাকে সেটুকুও দিতে পারলে না
—-খুব বেশি কথা বলছো দেখছি আজকে তুমি? আজকে মুখে এতো জোর কোথা থেকে পাচ্ছ,, ওই ডাক্তারটার সাথে কথা বলে এসে খুব সাহস বেড়ে গেছে বুঝি, তাই এতো কথা বলছো?
—-তুমি যা ইচ্ছা ভাবতে পারো,আমি শুতে গেলাম
—-আমার কথার উত্তর না দিয়ে শুতে যাচ্ছো যে?
—-নিরা তো সব বলেছেই আমি আর কি উত্তর দেবো, আর আমার হাত টা ছাড়ো প্লিজ
নির্ঝর দিশানীর হাত ছেড়ে দিলো। দিশানী ঘুমোতে গেলো।
——————–
নীলাদ্রি চেম্বার থেকে ফিরে ফ্ল্যাটের তালা খুললো, ফ্ল্যাটে ঢুকেই ফ্রেশ না হয়েই একটা রুমে গেলো। রুমটাতে গিয়ে সামনের দিকের একটা কিছুর দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে নীলাদ্রি, পুরোনো স্মৃতিগুলো আজ যেনো আরো বেশি করে তাজা হয়ে গেলো,, পুরোনো ঘা গুলো যেনো আরো দগদগে হয়ে গেছে আজকে, নীলাদ্রির সামনে দিশানীর একটা বড়ো করে বাঁধানো ছবি আছে, সেটার দিকেই একভাবে তাকিয়ে আছে ও।দিশানীর এই ছবিটা প্রথম দেখায় তুলেছিলো নীলাদ্রি। আজ সেই প্রথম দেখার সেই দিনটার কথা বড্ড বেশিই মনে পড়ছে নীলাদ্রির।
——————
তখন প্রথম প্রথম নীলাদ্রিরা দিশানীদের পাড়াতে থাকতে এসেছে, নীলাদ্রি তখন এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে, আর দিশানী ক্লাস নাইনে পড়ে, নীলাদ্রি দিশানীদের স্কুলের কলেজেই ভর্তি হয়। সেদিন নীলাদ্রিদের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীর নবীন বরণের প্রোগাম হবে,তাই স্কুলের সবাইকে তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়, নীলাদ্রি ক্যামেরা নিয়ে ছবি তুলছে, এদিক ওদিকের ছবি তুলতে তুলতেই একটা ফুলের ছবি তুলতে নিতেই একটা মেয়ের মেয়ে এসে ওই ফুলের সামনে দাঁড়ায় আর ফুলের বদলে মেয়েটার ছবি তুলে ফেলে নীলাদ্রি। নীলাদ্রি বিরক্ত হয়ে মেয়টাকে ডাক দেয়,,
—-এই মেয়ে শোনো, এইদিকে এসো।
মেয়েটা স্কুল ড্রেস পড়া, চুলগুলো দুপাশে দুটো বেণী করা, মায়াবী মুখটা গোমড়া করে রেখেছে, মুখে বিরক্তির ছাপ নিয়ে নীলাদ্রির কাছে এসে বললো,,
—বলুন ডাকলেন কেনো?
—তুমি ফুলটা তুললে কেনো?
—মন চেয়েছে তাই তুলেছি কোনো সমস্যা, আপনি এমন ভাব করছেন যেনো আপনি স্কুলের কর্তৃপক্ষ, বেশ করেছি ফুল তুলেছি, আরো তুলবো
—-ফুল তুলবে তোলো না কে মানা করেছে কিন্তু আমি যে ফুলটার ছবি তুলতে নিয়েছিলাম সেই ফুলটাই কি তুলতে হবে তোমার অন্য কোনো ফুল তোলা যেতো না?
—তাহলে আপনি অন্য কোনো ফুলের ছবি তুলতে পারতেন না?
—আরে ভারী ফাজিল মেয়ে তো তুমি,নিজে ছবিটা নষ্ট করে দিয়ে এখন উল্টো আমার সাথে তর্ক করছো?
দিশানী এই কথা শুনে নীলাদ্রি কে জিজ্ঞেস করলো,,
—এইখানে নতুন নাকি? কলজের স্টুডেন্ট??
—হ্যাঁ, তো কি হয়েছে ?
দিশানী নীলাদ্রির কথার কোনো উত্তর না দিয়ে ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষন নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,,
—ফালতু লোক একটা
তারপর নীলাদ্রিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো। আর নীলাদ্রি মেয়েটার যাওয়ার দিকে চেয়ে রইলো,, কত্ত বড়ো সাহস নীলাদ্রি কে ফালতু লোক বলে গেলো,,ভাবা যায়?
নীলাদ্রি ওর বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে বললো,,
—দেখলি তোরা কি পাজি মেয়ে, আমি ওর বড়ো হই আমার সাথে কোথায় সম্মান দিয়ে কথা বলবে তা না কিভাবে কথা বলে গেলো,বড্ড পাজি মেয়ে।
নীলাদ্রির এক ফ্রেন্ড ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো,,
—চুপ কর ভাই,, যা বলেছিস বলেছিস এখন এখানেই থেমে যা, নাহলে ও যদি একবার শোনে যে তুই ওকে পাজি বলেছিস তাহলেই সর্বনাশ
নীলাদ্রি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
—সর্বনাশ মানে,কে ওই মেয়ে যে আমার কথা শুনে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যাবে, মন্ত্রী মিনিস্টারের মেয়ে নাকি?
—না মন্ত্রী মিনিস্টারের মেয়ের থেকেও ভয়ঙ্কর,, ওকে মেয়ে বললে ভুল হবে,, ও একটা তুফান।সারা স্কুল কলেজ ওকে ভয় পায়,, খুব ডেঞ্জারাস মেয়ে, কাউকে ছেড়ে কথা বলেনা,, ওকে আমরা সবাই খুব ভয় পাই।
নীলাদ্রি অবাক হয়ে বললো,
—ওইটুকুনি তো একটা মেয়ে,তার এতো জোর যে সবাই ওকে ভয় পায়, ভাবা যায়, নাম কি রে ওর?
—দিশানী!
নীলাদ্রি মাথা নেড়ে বললো,,
—হুমম নামের সাথে কাজকর্মের মিল আছে।
ব্যাস এই ছিলো দুজনের প্রথম দেখা,হঠাৎ করে তোলা সেই ছবিটাই নীলাদ্রি বর্তমানে দেখছে, নীলাদ্রি ছবির দিকে তাকিয়ে থাকতেই চিৎকার করে উঠলো,,
—কেনো আবার ফিরে এলে,, কেনো দেখা দিলে আমায়,, তুমি তো এখন অন্য কারো তবুও কেনো আবার তোমার দেখা পেলাম আমি? কেনো???তোমার স্মৃতি নিয়েই তো সারাজীবন আঁকড়ে থাকতে পারতাম কিন্তু আজ তোমায় দেখে যে ভিতরের সব জীবন্ত অনুভূতিগুলো আরো বেশি করে তাজা হয়ে উঠলো। নীলাদ্রির ওই রুমটা দিশানীর ছবি দিয়ে ভর্তি,নিজের ক্যামেরা থাকার সুবাদে প্রায়ই দিশানী কে লুকিয়ে লুকিয়ে ক্যামেরাবন্দি করতো নীলাদ্রি,, আর সেই ছবিগুলোই এখন এই ঘরের দেয়ালে টাঙিয়ে রাখা হয়েছে। নীলাদ্রি রোজই এই ছবিগুলো দেখে আর কষ্ট পায় কিন্তু আজ আবার সেই চেনা প্রিয় মুখটাকে কাছ থেকে দেখে আরো বেশি করে কষ্ট পাচ্ছে নীলাদ্রি,,ওর কষ্টগুলো আজ আরো গভীর হয়ে উঠেছে।
এসব ভাবতে ভাবতেই নীলাদ্রির ফোনে কল একটা কল আসলো,,নীলাদ্রির এক বন্ধু ফোন করেছে,নীলাদ্রি ফোন ধরে বললো,,
—হ্যালো, হ্যাঁ বল
—কালকে তোকে আমাদের সাথে লাঞ্চ করতেই হবে কোনো কথা শুনবো না
—এইরে লাঞ্চ টা তো পারবোনা
—ডিনারে আসতে পারবি?
—হ্যাঁ পারবো, তাহলে আমি কালকে তোদের সাথে একসাথে ডিনার করবো ঠিকাছে?
—হুমম, তাহলে সময়মতো চলে আসিস কিন্তু
—আচ্ছা, চলে আসবো।
নীলাদ্রি এই ফোন রাখতে না রাখতেই আবার আরেকটা কল এলো,, এবারের কল একটা আননৌন নাম্বার থেকে এসেছে,, নীলাদ্রি ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে একটা মেয়েলি কণ্ঠ ভেসে আসলো। নীলাদ্রি জিজ্ঞেস করলো,,
—কে বলছেন?
—-সেকি এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন, এতো জলদি ভুললে তো চলবে না ডক্টর নীলাদ্রি,, আমি তো জানি ডাক্তারদের স্মৃতিশক্তি খুব প্রখর হয় তাহলে আপনার স্মৃতিশক্তির এই অবস্থা কেনো? কণ্ঠ শুনেও বুঝতে পারছেন না আমি কে?
—না পারছি না, এখন স্পষ্ট করে বলুন আপনি কে?
—আমি…………
চলবে
(ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)
হ্যাপি রিডিং
এটা কে হতে পারে বলুন তো?