রৌদ্র কুয়াশা পর্ব ৩৯

#রৌদ্র_কুয়াশা
Suvhan Årag(ছদ্মনাম)
পর্ব ৩৯

-নিবিড়।নিবিড়?কোথায় তুমি?

ইসমাত বেগম নিবিড়ের নাম ধরে ডাকতে ডাকতে ঘরে চলে এলেন।ইসমাত বেগমের কন্ঠ শুনে হাত থেকে শার্ট টা ফেলে দিল নিবিড়।বাকি যেই শার্ট গুলো সে বের করেছিল সবগুলো ফ্লোর থেকে তুলে দ্রুত খাটের নিচে লুকিয়ে ফেললো।

-আসছি আম্মাজান।

বিছানার চাদর ঠিকঠাক করে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুললো নিবিড়।বাইরে ইসমাত বেগম দাঁড়ানো।

-আসুন আম্মাজান।
-কি হয়েছে তোমার?শরীর খারাপ নাকি?এসে থেকে একবার ও দেখা করোনি আমার সাথে।
-না আম্মাজান কিছু না।আপনি নামাজ পড়ছিলেন দেখে আমি আর ডাকিনি।
-পরে তো যেতে পারতে?সেই কোন বেলায় ভাত খেয়েছো। এখনো পেটে কিছু পড়েনি।তোমার যে পেটের সমস্যা হয় এতক্ষণ না খেয়ে থাকলে। ভুলে যাও সেটা?
-আপনি আছেন তো।
-চলো।নিচে চলো।খাবার দিচ্ছি।
-এই তো যাচ্ছি।একটু অফিসের ফাইলগুলো ঠিকঠাক করে আসি।
-আচ্ছা।
-হুম।

নিবিড়ের মাথায় হাত বুলিয়ে ইসমাত বেগম নিচে যাওয়ার জন্য এগুতে গিয়েও থেমে গেলেন।

-নিবিড় শোনো।
-হ্যা আম্মাজান।
-কোমড়ের ব্যথাটা খুব বেড়েছে।এই সপ্তাহে তোমার ছুটি হবে?
-শুক্রবার তো হবেই।ঐ দিন তাহলে আপনাকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাব।
-আচ্ছা।
-আম্মাজান আপনার ক্যালসিয়াম ওষুধ টা কি শেষ হয়ে গেছে?
-না।আরো তিনদিন যাবে।
-আচ্ছা কাল এনে রাখব ।
-তাড়াতাড়ি কাজ সেরে খেতে এসো।

ইসমাত বেগম চলে গেলেন। নিবিড় আবার ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল।খাটের নিচে থেকে সব কাপড় বের করে আলমারিতে রাখতে গেল।

-অনু প্রিয়া।কাল তোমার অপেক্ষায় থাকব।কি ভেবেছো তোমাকে চিনবোনা?তোমার দুটো চোখ কি ভোলা এতই সহজ?যতোই নিকাবের আড়াল হও তোমাকে ঠিক চিনব আমি।স্বামী হই তোমার।কেন যে এটা ভুলে যাও?আফসোস!

১০৮

শীতের সকালে গরম চায়ের আমেজটাই অন্য রকম।কম্বলের নিচে বসে হাতে চায়ের কাপ নিয়ে থেমে থেমে কাপে ঠোট ছোয়ানো।রঙিন পানীয়ের উষ্ণতা দিয়ে শরীরকে উষ্ণ করার বৃথা চেষ্টা। কম্বলের ভেতর দুই পা ডুবিয়ে মাহির চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে ।মাঝে মাঝে একটু হালকা কাশি দিচ্ছে।উদ্দেশ্য ইলাকে জ্বালানো।ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে ইলা তোয়ালে দিয়ে ভেজা চুল মুছছে।মাহির ইলার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে ইলা তার বদলে অগ্নিদৃষ্টি ফেরত দিচ্ছে মাহির কে।

-পানিজল।কি গো?সকাল সকাল মুখটা পেচার মতো করে রেখেছো কেন?
-কি বললেন আপনি?

ইলা ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে তেড়ে আসলো মাহিরের দিকে।

– আমি পেচা!
-হুম।
-তাইলে আপনিও পেচার বর।
-হুম।
-কি হুম হুম করছেন হ্যাঁ?আজ আপনাকে লাস্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি।
-কিসের?
-আজ থেকে শুরু করে ঐ মার্চ মাস অবধি আপনি আমার ধারে কাছেও ঘেষবেন না।
-আজব!কেন?এটা কেমন কথা?
-হ্যাঁ এটাই কথা।ফাজিল লোক একটা।এই আপনার জন্য এই শীতের সকালে আমাকে পানি নামক বিপদের কাছে ধরা দিতে হচ্ছে।আপনি জানেন শীতকালে আমি আমার জীবনে সপ্তাহে দুদিনের বেশি গোসল করেছি কিনা সন্দেহ।আর আপনার জন্য,,,,,একদম আমার কাছে ঘেষবেন না।আজ থেকে আপনি আর আমি দুজনে আলাদা। ওকে?

ইলা চুলে তোয়ালে পেঁচিয়ে কোমড়ে দু হাত রেখে ঘাড় কাত করে ড্যাপ ড্যাপ করে তাকিয়ে আছে মাহিরের দিকে।মাহির কিছুক্ষণ ইলার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাত থেকে কাপটা রেখে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।মাহিরের হাসি দেখে ইলার আরো মেজাজ খারাপ হচ্ছে।

-ঐ মিয়া।সমস্যা কি আপনার?এভাবে হাসছেন কেন?
-ছি ইলা ছি।তোমাকে পানিজল ডাকতাম ভেবেই মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব জলাশয়ের কাছে গিয়ে আমার ক্ষমা চাওয়া উচিত।তাদের এত বড় অসম্মান করলাম আমি।
-মানে?
-তুমি শীতকালে দুদিন গোসল করো সেটা আবার মুখে বলছো!আচ্ছা ইলা সত্যি করে বলো তো এই যে তুমি যে এই কাজ করতে ক্লাসে তোমার কোনো বন্ধু বান্ধব তোমার পাশে বসতো?মানে বোঝাতে চাইছি তোমার গা দিয়ে গন্ধ বের হতো না?
-মাহির!

ইলা তেড়ে গিয়ে মাহিরের পায়ের ওপর থেকে একটানে কম্বল সরিয়ে নিল।

-আরে আরে কি করছো?শীত লাগে তো।
-লাগুক। নিজে বাবু সেজে কম্বলের নিচে বসে থাকবেন আর আমাকে খারাপ কথা বলছেন?যান অফিসে যান বলছি।আজ বাড়ি আসুন আপনার কপালে দুঃখ আছে।
-কেন?
-আমার পেছনে লাগা আজ আপনার খবর আছে।অফিসের সময় হয়ে গেছে বলে ছেড়ে দিলাম।হুহ।
-যাচ্ছি তো।চলো এগিয়ে দেবে।
-পারব না।
-ঠিকাছে যাব না।
-আরে।মহা মুশকিল।যান।নাহলে আমার আদর্শ মহামান্য শ্বশুর মশাই আপনাকে অফিস থেকে বের করে দেবে।তার পর আর কি নেই কাজ তো খই ভাজ।
-তুমি এগিয়ে না দিলে আমি গেছি কখনো?

মাহিরের কথাতে ইলা কোনো উওর দিল না।নিজের অজান্তেই তার মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠেছে।ইলা মাহিরের কাছে গিয়ে মাহিরের হাত ধরে খাট নামালো।

-চলুন।
-সোনা বউ।
-পচা বর।
-হা হা।আমিতো সব সময় ই পচা।

মাহির কে সদর দরজা অবধি এগিয়ে দিল ইলা।

-শোনো আর যেন হুটহাট করে কাউকে দরজা খুলে দিও না।
-আচ্ছা।
-নিজের খেয়াল রেখো।ফোনটা কাছে রেখো।ফোন দিলে তো জীবনে তোমার খোঁজ পাইনা আমি।আর পড়তে বসবে।একদম ফাঁকিবাজি করবে না।
-আচ্ছা।

ইলাকে কাছে টেনে ইলার কপালে নিজের ঠোট ছোয়ালো মাহির।আঁকড়ে ধরলো নিজের সাথে।

-ভালোবাসি।
-আমিও খুব।
-আজ না যেতে ইচ্ছে করছে না।
-সেটা তো কখনোই করেনা।
-সকাল থেকে মনটা কেমন করছে।তুমি আমার থেকে দূরে চলে যাবেনা তো ইলা?
-কেন এসব বলছেন আবার?
-তুমি দু কদম দূরে গেলে আমি তোমার থেকে এত কদম দূরে যাব তুমি তার পরিমাপ ও করতে পারবে না বলে দিলাম।
-মাহির!আবার শুরু করেছেন ?
-সরি।আল্লাহ হাফেজ ।
-আল্লাহ হাফেজ।

মাহির এগিয়ে গিয়ে গাড়িতে বসলো।গাড়ি গেট থেকে বেরোনোর সময় আরেকবার জানালা দিয়ে হাত নাড়িয়ে বিদায় জানালো মাহির।ইলা মুচকি হেসে নিজেও হাত নাড়িয়ে বিদায় জানিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল।

১০৯

দুপুর বেলা রোদের প্রখরতা অনেক বেশি।রাস্তায় দাড়িয়ে অনু পুরো ঘেমে গেছে।আজ কলেজে একটা পরীক্ষা ছিল তার।সেটাই দিতে এসেছিল সে।প্রতিদিন আরিয়ানের ভাড়া করা রিক্সা তাকে নিয়ে যায়।আজ এখনো রিক্সার কোনো খোঁজ নেই।দুপুর বেলা তেমন কোনো গাড়িও রাস্তায় নেই।রিক্সা যা যাচ্ছে অনু একটাও ঠিক করতে পারলো না।কেউ বা ঠিকানায় যেতে চায়না।কেউবা দ্বিগুণ ভাড়া চায়।আবার আজ ফোনটাও সে রেখে এসেছে।উপায় না পেয়ে রাস্তা ধরে হাঁটা শুরু করলো অনু।

কিছু পথ যাওয়ার পর অনুর বার বার মনে হচ্ছে কেউ তাকে অনুসরণ করছে।অনু নিজের ছায়ার পাশে আরেকটা ছায়া দেখতে পাচ্ছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে কোনো পুরুষের।কিন্তু কে তার পিছু নেবে?অনু ভাবতেই শিউরে উঠলো।দিনকাল যা পড়েছে কিসের দিন কিসের রাত মেয়েদের তো চলাফেরা করাটাই হয়েছে বিপজ্জনক।আর কলেজেও বখাটে ছেলেদের অভাব নেই।দুপুরের সময় টা চারপাশটাও কেমন শুনশান।অনুর ভয়টা আরো জেকে বসলো।অনু আরো দ্রুত পা চালাতে লাগলো।নিজের ছায়ার পাশে সেই ছায়াটাকেও দ্রুত এগিয়ে আসতে দেখছে সে।অনু আরো দ্রুত যেতে লাগলো। ছায়াটাও যেন অনুর সাথেই তাল মিলিয়ে আসছে।

দ্রুত চলতে গিয়ে নিজের পায়ের দিকে তাকাতেই ভুলেই গিয়েছিল সে।বোরখা তে জড়িয়ে রাস্তার ওপর মুখ থুবড়ে পড়লো অনু।কিন্ত মাটিতে পড়তে পাড়লো না।তার আগেই সেই ছায়াটাই তার হাত ধরে বসেছে তাকে পড়তে দেয়নি।পেছনের মানুষ টি অনুকে টেনে দাঁড় করালো। পেছনে ফিরে তাকাতে ই অনুর চোখ বড় বড় হয়ে গেল।

-আর কতো পালাবে?পারবে আমার সাথে?বেশ চালাক হয়ে গেছো তুমি।আমার সাথে লুকোচরি খেলছো?চলো তোমার সাথে সব খেলা খেলব আজ।

অনুর মুখ ফুসকে বেড়িয়ে গেল তার জীবনের বিপদ সমতুল্য ব্যক্তির নাম,

-নিবিড়!

১১০

এই নিয়ে দুবার কলিংবেলের আওয়াজ।মাহিরের কথা মতো আগে সিসি টিভি ফুটেজ চেক করতে ঘরে আসলো ইলা।মনটিরে ভেসে আসা মেয়েটিকে দেখে ইলা একটু অবাক হলো।

-আরে। এটা সেই মেয়েটা না?মাহির বলেছিল।কি যেন নাম?মাইশা মনে হয়।উনি এখানে কেন?মাহিরের সাথে দরকারে এসেছে নাকি?

ইলার ভাবনার মাঝেই স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছে মাইশা আরেকবার কলিংবেল বাজালো।

-এতোবার বেল বাজাচ্ছে।নিশ্চয়ই দরকারেই এসেছেন।যাই দেখি।

চলবে————-

4 COMMENTS

  1. আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া আপনি গল্পটা পুরোটা রেট দিচ্ছেন না কেন আর যে পর্ব গুলো দেন লিংক দেন না কেন বাকি পর্বগুলো একটু তাড়াতাড়ি দিবেন গল্পটা পড়ার জন্য মনটা ব্যকুল হয়ে থাকে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here