শ্যামারঙা
লেখিকাঃ বৃষ্টি সরকার অধরা
পর্বঃ১১
কি করবো বুঝতে না পেরে মায়ের কাছে গেলাম….
আমার সমস্যার কথা শুনে মায়ের মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে। এখনি তিনি যাবার জন্য “না” করে দিবেন…..
কিন্তু আমার চিন্তাকে পুরো উল্টো করে দিয়ে মা বলিলেন..
— সমস্যা নেই অনেক দিন ওদের বাড়িতে যাওয়া হয় না
আজ না হয় তোকে এগিয়ে দিয়ে আসার বাহানায় ওদের সাথে আর কাকাবাবু র(নীলাদ্রি দার দাদু) সাথে দেখা করে আসবো…..
মায়ের কথা শুনে আমি আবারও অবাক….
নবুদের বাড়িতে এসে বসে আছি প্রায় দশ মিনিট হলো…. অনেক দিন পর এই বাড়িতে এসেছি….
আমাকে দেখে বড়বাবা, বড়মা….সবাই খুশি হয়েছে
আর এতদিন পরে আসায় তারা তাদের আবেগ জড়ানো কন্ঠে আমাকে বকেই যাচ্ছেন আর আমিও শুনে যাচ্ছি…..
আগে যেই বাড়িতে না আসলে আমার দিন কাটতো না। সেই বাড়িতে এখন আমি বছরে একবারও আসি না।
সত্যি মানুষ চাইলে কি না পারে…..
ওনাদের বকা শুনছি আর এই কথা গুলো ভাবছিলাম…
ভাবতে ভাবতেই নীলাদ্রি দা বাড়িতে ঢুকলেন আর ঢুকেই তার চিন্তিত চেহারা নিয়ে নবু কে জিজ্ঞেস করলেন…
” মেঘা কি এসেছে “””
নবু হ্যা বললো এবং আমাকে সোফ্যবসে থাকা আমাকে দেখালো…..
আমাকে দেখে নীলাদ্রি দা ধমক দিয়ে বললেন….
—- কি রে তোর ফোন কই…
সেই কখন থেকে তোর ফোনে ফোন দিচ্ছি…
তার ধমকানো শুনে বাড়ির সবাই এবং আমার মা অবাক হয়ে একবার তার দিকে তাকাচ্ছেন আর একবার আমার দিকে।।।।।
—- ফোনটা নবুর রুমে চার্জে রয়েছে…..
তিনি আমার কথা টা শুনলেন কি না জানি না। মা কে এখানে উপস্থিত দেখে তিনি বেশ লজ্জা পেলেন….
আর বললেন…
— আসলে আমাদের যেতে আরেকটু দেরি হবে তাই ফোন দিয়েছিলাম….
—- কেন.. কোন সমস্যা?? (মা)
—- না মানে…
প্রথমে লোক সংখ্যা কম ছিলো তাই মাইক্রো ভাড়া করে ছিলাম কিন্তু এখন লোক সংখ্যা প্রায় চার/ পাচজন বেড়েছে তাই একটি মিনিবাস ভাড়া করেছি আজ সকালে…..
তারা রাত নয়টাতে আসবে…..
—- ওও কিছু মাঘা তো আমাকে কিছু বলেনি….
—- আসলে কাকিমা আমার নিজেরই তো ওকে বলতে মনে নেই…..
ওনার এমন বেখেয়ালি কথা শুনে বড়মা,বড়বাবা একসাথে বকা শুরু করলেন….
ওনাকে বকতে দেখে আমি দাদুভাইয়ের রুমে গেলাম..
,
কতদিন আসা হয় না এই রুমে।যেখানে আগে না এসে আমি থাকতে পারতাম না….
দাদুভাইয়ের রুমে গিয়ে দেখি তিনি বসে বসে টিভি দেখছেন আর ঝিমুচ্ছেন….
আমাকে দেখে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললন…
—- এতদিন বলতে পারলে মনে হয় ভালো হতো….
কিন্তু এত বছর পর মনে পড়লো আমাকে??
—- মনে তো সব সময়ই পড়ে কিন্তু ব্যস্ততার কারণে আসা হয় না….
—– জানি তো….
কোন মুখেই বা এই বাড়িতে আসবি..
যেখান থেকে এত অপমান হয়েছিস….
— ওসব কথা বাদ দাওতো….
আগে বলো তোমার শরীর কেমন আছে….
—- আর শরীর…..
বুড়ো হলে যা হয় তেমনই আছে…..
কথা শেষ করে রুম থেকে বের হতেই দেখি।
পিসিমনি রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন…
তার চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে এত বছর পড়েও আমার প্রতি তার রাগ – ক্ষোভ একটুও কমেনি।।।।
যেন তা এত বছরে ক্রমে বেড়েছে…
আমি পিসিমনিকে দেখে কথা বলতে যাব কিন্তু তিনি আমাকে দেখে মুখ ফিরিয়ে চলে গেলেন…..
আমিও নিচে চলে এলাম..
এসেই শুনি বাস চলে এসেছে। সবাই মানে যারা যাবো তারা সবাই চলে এসেছে…..
আমিও এ বাড়ির সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মায়ের সাথে রাস্তার মোড়ে যেখানে বাস আছে সেখানে এসে দাড়ালাম বাসের সামনে…..
বাস দেখে মা আমার দিকে চিন্তামগ্ন ভাবে তাকালেন।
আর বললেন….
—- তুই কি বাসে এডজাস্ট করতে পারবি???
— হ্যা,,,
পারবো…
–এখনো সময় আছে সমস্যা মনে হলে বল
আমি নীলাদ্রি কে মানা করে দেব…
— না মা দরকার নেই….
বলেই আমি সামনের বেকারিতে গিয়ে চকলেট,চিপস, চাটনি /আচার সহ আমার বমি আর মাথা ব্যাথা ঠ্যাকাতে যা যা দরকার সেই প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো নিয়ে নিলাম…..
বাস ছাড়ার সময় হয়ে যাওয়ায় মাকে ” আসছি ”
বলে বাসে উবলাম….
কিন্তু বাসে উঠে আমি অবাক….
এত মানুষ যাবও…
আর এখানে যারা আছে তারা সবাই মোটামুটি নীলাদ্রি দার বন্ধুরা এবং তারা কেউ কেউ নব- বিবাহিত….
কি চালাক এরা..
নীলাদ্রি দার ট্রিটের সুযোগ নিয়ে এরা তাদের হানিমুন সেরে নিচ্ছে…..
চলবে…..
শ্যামারঙা
লেখিকাঃ বৃষ্টি সরকার অধরা
পর্বঃ১২
কিন্তু বাসে উঠে আমি অবাক….
এত মানুষ যাবও…
আর এখানে যারা আছে তারা সবাই মোটামুটি নীলাদ্রি দার বন্ধুরা এবং তারা কেউ কেউ নব- বিবাহিত….
কি চালাক এরা..
নীলাদ্রি দার ট্রিটের সুযোগ নিয়ে এরা তাদের হানিমুন সেরে নিচ্ছে…..
বাসের প্রায় সব সিট বুক হয়ে গেছে।
হাটতে হাটতে মাঝের দিকে গিয়ে দেখি দুইপাশে পাশাপাশি চারটি সিট খালি পড়ে আছে।
একপাশের দুটি সিটের একটিতে নবু বসে আছে তাও আবার জানালার পাশে আর অন্য পাশের দুটো সিটই খালি….
তাই সুযোগ পেয়ে জানালার পাশে বসে পড়লাম।
আর সাথে সাথে ফোনে গান ছেড়ে কানে হেডফোন দিয়ে সিটে মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছি…..
যে আমি বাসের কথা শুনলে বা বাস দেখলেই আমার গা গোলায়,বমি পায়,মাথা ঘোড়ায়,
সেই আমিই কি না আজ নিজের ইচ্ছেতেই বাসে উঠে বসে আছি তাও আবার এত বড় লং জার্নিতে…..
বাস ছেড়েছে মাত্রই হঠাৎ মনে হলো আমার মাথায় কেউ হাত দিলেন..
তাই কম্পিত হয়ে চোখ খুলে দেখি কনাদি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে…..
কনাদি কে দেখে আমি বেশ অবাক হলাম…
কারন আমার জানা মতে তিনি তো অয়ন জিজুর সাথে আজ প্রায় পাচ বছর ধরে আমেরিকাতেই আছেন….
আমাকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে কনাদি হেসে আমার পাশের সিটে বসলেন..
আর বললেন…
—- কেমন আছো মেঘা..
আমি কনা চিনতে পেরেছো তো….
—- হ্যা…কনাদি চিনতে পারছি…
আর আমি বিন্দাস আছি….
আপনি কেমন আছেন….
আর তুমি আমাকে তুমি করে কেন বলছো….
—হ্যা….ভালোই আছি…
এখনও কি রেগে আছো আমাদের সাথে….
—- না,রাগ করে নেই….
বাই দা রাস্তা তুমি কবে এলে দেশে আর জিজু কোথায়….
—– তোমার জিজু আসেন নি…
আমি গতকাল এসেছি একা…..
আর আমার মামাতো ভাই এতবড় একটি ট্রিপ দিচ্ছে আর আমি কি না এসে পারি….
—- ও…..
ভালো করেছো…..
বলেই আমি চুপচাপ বসে আছি।
কারণ আমার মাথা ব্যথা শুরু হয়ে গেছে….
তখন কনাদি বললেন…
—- আচ্ছা তুমি বসো আমি নবুর পাশে গিয়ে বসছি…
—- না,দিদি..
আপনি এখানেই বসতে পারেন আমার কোন সমস্যা নেই….
—- ঠিক আছে…
কোন দরকার হলে বলো আমি নবু র কাছেই বসছি…
ও একা বসে আছে…..
বলেই তিনি পাশের সিটে গিয়ে বসলেন….
আর আমি মুখে টুক করে একটি চকলেট নিয়ে আবারও আগের মতো বসে রইলাম…..
কিছু সময় পর মনে হলো আবার কেউ যেন আমার পাশে এসে বসেছে…
এবার আর আমি পাত্তা না দিয়ে চুপচাপ করে বসে রইলাম…
হঠাৎ ফোনের গান বন্ধ হয়ে গেল…
কি হয়েছে দেখতে বিরক্তি নিয়ে চোখ মেলে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি গান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে…
রাগ করে পাশের সিটে তাকাতেই দেখি একজোড়া রাগি লাল রক্তিম চোখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে….
আমার পাশে নীলাদ্রি দা কে বসা দেখে আমার একেই কাপাকাপি অবস্থা শুরু তারওপর আমার সে চোখ মুখ লাল করে রেগে আমার দিকে তাকিয়ে আছে…..
তার চাহনি দেখে আমি মাথা নিচু করে বসে আছি।
আমি বুঝতে পারছি না
তাত এতো রেগে যাওয়ার কারন কি আর আমার পাশেই বা বসার কি হয়েছে…..
যেখানে সেদিনের পর থেকে তার পরিবারের সবাই মনে করে আমি তাদের ওপর রাগ বা অভিমান করে আছি…..
সেখানে এই ব্যক্তি আর তার পিসিমনি আমার ওপরই রাগ দেখান…..
—-তোকে কত সময় ধরে ডাকছি শুনতে পাসনি…..
—- না ( মাথা নিচু করে)
— শুনবি কি করে কানে তো পাহাড় গুজে রেখেছিস….
চলবে…..