সীমাহীন পর্ব ২৩

সীমাহীন
#Meherika_Ayat ( আরাধ্যা)
পর্ব ২৩
আরাধ্যা রুমের সব গুছিয়ে নিল।
সব ঠিকঠাক করে রুমের থেকে বের হলো।
.
নিচে নেমে চুলটা বেধে কিচেনে গেল আরাধ্যা।
শাহিদাঃ আরে বউমণি আপনি রান্নাঘরে কেন আইছেন? কিছু লাগবো? আমারে ডাকতেন আমি নিয়া যাইতাম উপরে।
আরাধ্যাঃ না ঠিক আছে।
তোমরা যাও আজকে তোমাদের ছুটি।
শাহিদা, বুশরা তোমরা গিয়ে রেস্ট নাও।
আমি আজ রান্না করবো।
.
সবাই টেবিলে বসে আছে।
আরাধ্যাকে রান্নাঘর থেকে বের হতে দেখে,
ফাতেমা বেগম বললেন,
আরে আরু তুমি কিচেনে কেন গেলে?
ঘরে সবাই কি মরে গেছে?
ওই শাহিদা, বুশরা তোরা কই? (রেগে চিল্লিয়ে)
সারাদিন ধরে মেয়েটা কিছু খায়নি, এখন আবার কিচেনে। তোরা কেউ দেখিস না?
আরাধ্যাঃ না আম্মু ওদের কোনো দোষ নেই,
আমিই ওদের বের করে দিয়েছি কিচেন থেকে।
রিধিঃ তাই বুঝি? তা আপনি কিচেনে কেন গেলেন বউমণি? (দুষ্টুমি করে)
আরাধ্যাঃ কেন আমি কিচেনে যেতে পারি না বুঝি ননদিনী?
.
আরিয়ান অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আরাধ্যার দিকে। কি সুন্দর দেখাচ্ছে তাকে।
ছোট ছোট চুল গুলো গালের সামনে এসে পড়েছে। কপালে ও নাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে। পুরো গিন্নি গিন্নি লাগছে আরাধ্যাকে।
ইচ্ছে করছে সামনে চুল গুলো আলতো করে কানের পাশে গুজে দিতে, ঘাম গুলো মুছে দিতে। কিন্তু সেই অধিকার তো আর আরিয়ানকে দেয় নি আরাধ্যা।
কথা টা মনে পড়তেই আরিয়ান মুখ টা কালো হয়ে গেল।
.
কি রান্না হয়েছে দেখি বলেই রিধি বাটির ঢাকনা উল্টালো।
রিধিঃ ওয়ায়াওওও 😮😮😮😮😮
ভাইয়া তোর ফেভারিট ইলিশ পোলাও, ডিমের ভুনাকারী আর টমেটো চাটনি।
এরপর আবার লাচ্ছি? সব দেখি ভাইয়ার ফেভারিট খারার? কি ব্যাপার আরু?
(দুষ্টু হাসি দিয়ে)
আরাধ্যাঃ হুম,
কাল তোর ফেভারিট ডিশ করবো,
যা এবার চুপ করে খেতে বস।
.
খেয়ে তো সবাই আরাধ্যার প্রশংসা করেই চলেছে। সবাই নিজের রুমে ঘুমোতে চলে গেছে।
আরিয়ান ডয়িং রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করেছে। আজ দুদিনে আরাধ্যা একটুও আরিয়ানের সাথে কথা বলেনি।
আজও এসব করেছে হয়তো সবাইকে দেখানোর জন্য। এসব ভাবতে ভাবতে নিজের রুমের দিকে গেল আরিয়ান।
লাইট জ্বালিয়ে তো আরিয়ান পুরো থ হয়ে গেছে।
.
.
.
রাজঃ কি বলো আজকে আরাধ্যা আরিয়ানের সব ফেভারিট ডিশ করেছে?
রিধিঃ জ্বী হ্যাঁ।
রাজঃ তুমি তো কখনও আমার জন্য করোনি।
(মন খারাপ করে)
রিধিঃ হয়েছে, মন খারাপ করতে হবে না।
আর ১৫ দিন পর তো বিয়েই আমাদের।
এরপর দেখবে কি করি না করি।
রাজঃ আচ্ছা পাখি।
এখন একটু আদর পাবো তো?
রিধিঃ উম্মম্মম্মম্মমাহ। গুড নাইট।
ফোন রেখে রিধি ঘুমিয়ে গেল।
.
.
.
পুরো রুমে ক্যান্ডেল আর গোলাপের পাপড়ি ছিটানো। খাটে সব গোলাপ আর গোলাপের পাপড়ি।
আরাধ্যা লাল ব্লাউজের সাথে একটা কালো নেটের শাড়ি পরেছে। চুল গুলো ছাড়া এক পাশে এনে রেখেছে। লাল লিপ্পি, হাত ভরা লাল কাঁচের চুড়ি।
আরিয়ান তো পাগল হয়ে যাচ্ছে আরাধ্যাকে দেখে।
আরাধ্যাঃ কেমন লাগছে আমাকে?
(ঘুরে ঘুরে)
পিট কাটা ব্লাউজের পিছন দিয়ে সাদা পিট আর কোমর দেখা যাচ্ছে।
আরিয়ান তো আগের জায়গায় দাঁড়ানো।
আরাধ্যা আস্তে আস্তে আরিয়ানের কাছে চলে এসেছে। আরিয়ানের হাত দুটো নিয়ে নিজের কোমরে উপর রাখলো।
আরাধ্যাঃ ভিষণ ভালোবাসি তোমায়।
আজকের পর থেকে আমাদের মাঝে কোনো দুরত্ব থাকবে না। প্রিয়!
আরিয়ানের তো সব স্বপ্নের মতো লাগছে।
আরাধ্যা আরিয়ানের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিল।
আরাধ্যাকে কোলে নিয়ে খাটের উপর শুইয়ে দিল আরিয়ান। নিজের ভর টা আরাধ্যার উপর দিল।
.
সকালে আরাধ্যা গোসল সেরে বের হলো।
আরাধ্যাঃ স্যায়ায়ায়ায়ায়ার! (চিল্লিয়ে)
আপনাকে সেই কখন জাগিয়ে গেলাম,
আপনি এখনও পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছেন?
অফিসে যাবেন কখন?
.
আরিয়ান ঘুম ঘুম চোখে একটু তাকিয়ে বলল,
উফফফ শান্তিতে একটু ঘুমোতেও দিবে না দেখছি। আসো না বাবুউউউন!
দুজনে মিলে ঘুমাই।
আরাধ্যাঃ কিইইইইইহহহহ আমি শান্তিতে ঘুমোতে দেইনি? রাত থেকে হিসেব করলে পুরো ৮ ঘন্টা ঘুমানোর পরেও শান্তিতে ঘুমাতে চান?
আরিয়ানঃ রাতের কথা তো না বললেই পারো,
তুমি ঘুমাতে দিছো রাত্রে?
৪ টায় ঘুমাইছিলাম। আসো না আবার হয়ে যাক। (শয়তানি হাসি দিয়ে)
আরাধ্যাঃ এরোইইইই!
উঠবেন নাকি গায়ে পানি ঢেলে দিব?
(রাগি চোখে)
আরিয়ানঃ যাচ্ছি যাচ্ছি।
অমন করে তাকিও না বউ, একদম খাই ফেলবো কিন্তু।
.
আরিয়ান গোসল করে বেরিয়ে দেখে আরাধ্যা শাড়িতে কুচি দিয়ে পারছেনা।
ওর ভেজা চুল থেকে টুপ টুপ করে পানি পরছে। আরিয়ান আস্তে করে গিয়ে নিজের হাত দুটো আরাধ্যার কোমরে জড়িয়ে দিল।
আরাধ্যাঃ উফফফ শাড়ি পরতে পারছি না,
কোথায় হেল্প করবেন তা না করে কি করছেন?
আরিয়ান আরাধ্যার শাড়ির কুচি ঠিক করতে করতে বলল,
কাল রাতে কেমনে পরছিলা?
আরাধ্যাঃওটা তো রিধি পরিয়ে দিছিলো।
আরিয়ানঃ আচ্ছা।
এখন থেকে সব সময় শাড়ি পরবে,
আর সেটা আমি পরিয়ে দিব।
আরাধ্যাঃ ঠিক আছে।
.
.
.
বেশ ভালো যাচ্ছে দিন গুলো ওদের।
রিধি আর রাজেরও বিয়ে হয়ে গেছে।
প্রায় ১ বছর শেষ হয়ে গেছে আরাধ্যা আরিয়ানের বিয়ের।
আজ ওদের বিবাহ বার্ষিকি।
.
বেশ কয়েকদিন থেকেই আরিয়ান খেয়াল করছে, আরাধ্যা ওকে এড়িয়ে চলছে।
আজ আরিয়ান অফিস থেকে ফিরার সময় দেখলো আরাধ্যা বাসায় ঢুকছে একটা ছেলে ওকে বাসার সামনে ছেড়ে গেল।
.
আরাধ্যা বারান্দায় দাঁড়িয়ে কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছিল।
আরিয়ান রুমে ঢুকলো,
আরিয়ানঃ কার সাথে কথা বলছো?
আরাধ্যা তাড়াহুড়ো করে ফোন কেটে দিয়ে বলল,
প্রিয়াকে আসতে বলেছি আজকের পার্টিতে।
আরিয়ানঃ আচ্ছা, কোথায় গিয়েছিলে আজকে?
আরাধ্যা কিচ্ছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
আপনাকে কে বলেছে?
আরিয়ানঃ আমি আসার সময় দেখলাম তুমি বাসায় ঢুকছো।
আরাধ্যাঃ ক…কলেজে গেছিলাম একটু।
আরিয়ান দেখলো আরাধ্যা ওই ছেলে টার সম্পর্কে আরিয়ানকে কিছুই বলল না।
অথচ কিছু হলে আরাধ্যা সবার আগে আরিয়ানকে জানাতো।
আরিয়ান আর কিছু বলল না।
চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here