#সে_জানে
#Part_8
#Writer_Tahsina_Islam_Orsha
দুষ্প্রাপ্যর কারনে ছন্দ পতনের মতো দুজনের মনে ভালোবাসার প্রতি যত ক্ষোভ ছিলো, যত অভিযোগ আর তিক্ত অভিজ্ঞতা ছিলো তার সবকিছুরও যেন পতন হয়ে গিয়েছে। গতানুগতিক সরু রাস্তা যেন সুবিশাল আকারে সেজেছে। মতানৈক্য থাকা সত্ত্বেও প্রানহীন নীরস মন যেন প্রানবন্ত হয়ে উঠছে। সর্বত্র থেকে তারই গুনজায়িশ করছে সময়।
দিবস বুঝতে পারছে নুপুর এখন অনেকটা হালকা হয়েছে সবটুকু বলতে পেরে। দিবস কুটকুট করে হেসে ইন্ডিয়া পাকিস্তানের বর্ডারে একটা ধাক্কা দিয়ে শুয়ে পড়ে, তাতে বর্ডার কেপে উঠলেও ভেঙে পড়েনি। আবার একটু হেসে চোখ বুজে পড়ে সেও।
শীতের কুয়াশাজড়ানো সকালের প্রকৃতি নতুন আমেজে সাজে প্রতিদিন। গাছের প্রতিটি পাতায় গহনা স্বরূপ শিশির জমে মুক্তর মতো ঝকঝক করে। সকালের অপরিপক্ক রোদের ঝাপটায় ঘুম ভাঙে নুপুরের৷ অলস চোখ যেন খুলতেই চায়না।
ঘুম ভাঙতেই দেখে নুপুর আজও দিবসের বুকে শুয়ে আছে। লজ্জায় মাথা কাটা যাবে আজ তার। দিবস হয়তো আজকে ভাববে নুপুর ইচ্ছে করেই এমনটা করে। ভাবতেই মাটির নিচে চলে যেতে ইচ্ছে করছে নুপুরের। কিন্তু রাতে যে বালিশ দিয়ে দেয়াল তৈরি করলো তার কি হলো! নুপুর কি ওই দেয়াল টপকিয়ে এই পাশে চলে এসেছে নাকি! নাকি দিবস বালিশ সরিয়ে দিয়েছিল?
নুপুর বাম হাত বের করে মাথাটা একটু তুলে দেখে বালিশের দেয়াল ঠিকঠাকই আছে। তবে সে এইপাশে কিভাবে আসলো! ঘুমের মাঝে আবার হাঁটেনা তো!? নুপুর আশাহত হয়ে মরার মতো পড়ে থাকে কিছুক্ষণ। হঠাৎই ভাবছে যদি দিবস জেগে যাওয়ার আগেই কেটে পড়া যায় তাহলে এই যাত্রায় হয়তো লজ্জার হাত থেকে বেঁচে যেতে পারবে।
কিন্তু সব আশায় পানি ঢেলে দেয় দিবস। সে শক্ত করেই জড়িয়ে ধরে আছে নুপুরকে। দিবস হয়তো জেগে গেছে নুপুরের আগেই কিন্তু বিটলামি করার জন্য তাকে ছাড়ছে না। নুপুর কি করবে বুঝতে পারছে না। এখন নিজে থেকে ছাড়ার কথা কিভাবে বলবে! আর যদি সজাগ থাকে তবে! তবে বললেও লজ্জায় পড়তে হবে। নুপুর কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। আবার ওঠার চেষ্টা করে দেখলো দিবস তাকে আটকে রেখেছে দু-হাত দিয়ে। আর কিছু না ভাবে নুপুর ছোট করে দিবসের বুকে কামড় বসিয়ে দেয়। কামড় দিতেই দিবস আগের দিনের মতো উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার দিয়ে
‘ সাপ, সাপ।
নুপুর বাকপটুর মতো
‘ তার মানে আপনি ইচ্ছে করে আমায় ধরে রেখেছিলেন?
দিবস চোখ কচলিয়ে
‘ আজকে অ্যানাকন্ডা কামড় দিয়েছে। না অ্যানাকন্ডা কামড় দেবে কিভাবে! অ্যানাকন্ডা তো খেয়ে ফেলে। আজকে অ্যানাকন্ডা আমায় খেয়ে ফেলতে চেয়েছিলো। আল্লাহ আমায় বাঁচাও।
নুপুর তীক্ষ্ণ চোখে তাকায় দিবসের দিকে। নুপুরের চাহনি দেখে দিবস বসে পড়ে, তারপর আবার শুয়ে গায়ে কম্বল দিতে দিতে
‘ কিন্তু তুমি এইপাশে কিভাবে আসলে? ঘুমের মাঝে হাঁটাহাটি করো নাকি?
বলেই নাকে মুখে কম্বল দিয়ে শুয়ে পড়ে দিবস। নুপুরের লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে। বুদ্ধি যেন লোপ পাচ্ছে দিন দিন তার। এমন সব কর্মকান্ড করে পরে তাকেই লজ্জায় পড়ে যেতে হয়। আজকে রাতে সে তার শরীর খাটের একপাশে বেঁধে রাখবে যাতে, ওই পাশে না যেতে পারে।
নিজের মাথায় নিজেই একটা চটকানা মেরে ফ্রেশ হতে চলে যায় সে। নুপুর নামাজ পড়ে নিচে গিয়ে দেখে রান্না ঘরে তার শাশুড়ি। খালেদা আক্তারকে দেখে নুপুর চুপচাপ তার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। জেল ফেরত আসামির মতো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে নুপুর। খালেদা আক্তার নাস্তার জন্য সবজি কাটছে। নুপুরের দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে,
‘ এই বাড়ির বউয়েরা সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার নিয়ম।
নুপুর মাথা নিচু করেই সরলতা নিয়ে
‘ দেরিতে ঘুমিয়েছিলাম তো তাই উঠতে পারিনি।
নুপুর কথাটা বলে দাঁত দিয়ে নিজেই নিজের জিভ কেটে ধরে। খালেদা আক্তার বুঝতে পেরে
‘ এইখানে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে না থেকে সবার জন্য চা করে দিয়ে আসো। আজকে নাকি তোমাদের বাড়ি যাবে তোমরা। নাস্তা করে বেড়িয়ে যেও।
নুপুর মুখে কিছু না বলে মাথায় হ্যাঁ হুঁ বুঝিয়ে পানি গরমে বসায় চায়ের জন্য৷ সবার জন্য চা বানিয়ে খালেদা আক্তারকে এক কাপ চা দিয়ে বাকি কাপগুলো নিয়ে বেড়িয়ে যাবে এমন সময় খালেদা আক্তার
‘ আমি তোমাকে মেনে নিতে পারিনি, এখন শুধুমাত্র আমার ছেলের জন্য মেনে নিয়েছি। ওর ভালোতেই আমার ভালো। ওর মনটা বেশ নরম আর স্বচ্ছ কাঁচের মতো। দিবস সবাইকে ঝট করেই আপন করে নেয়। আশা করি ওর মনে কখনো কষ্ট দেবেনা। ছায়া হয়ে ওর খেয়াল রাখবে।
নুপুরের চোখে পানি। নিজের শাশুড়িকে আশ্বস্ত করার মতোই সে পানি! নুপুর পারবে দিবসের খেয়াল রাখতে। এই দুটো দিনেই একটা মানুষের এতোটা কাছে আসা যায় নুপুর জানতো না। দিবস তাকে জানিয়েছে সে খবর। বুঝিয়েছে ভালোবাসা কিসের শব্দ। তবে একে অপরকে ভালোবাসতে পারবে কিনা তা দ্ব্যর্থক।
নুপুর নির্দ্বিধায় ভেজা চোখের পাপড়ি ফেলে
‘ রাখবো।
সবার নাস্তা করা শেষ। আজকে নুপুরের খালা শাশুড়ি আর চাচি শাশুড়ি তাদের বাসায় চলে যায়। যাওয়ার সময় নুপুরকে অনেক কিছু বুঝিয়ে গিয়েছে, কিভাবে চললে তার শাশুড়ির মন জয় করতে পারবে। নুপুর হাতের কাজগুলো করে রুমে চলে যায় ব্যাগ গুছাতে। রুমে প্রবেশ করতেই দেখে বিছানার ওপরে দিবসের কাপড়ের ছোটখাটো পাহাড়। দিবস পাশেই শুয়ে আছে। পায়ের ওপর পা তুলে নাচাচ্ছে আর ফোন টিপছে।
এতো কাপড় এইভাবে এখানে কেন রেখেছে প্রশ্ন করতে গিয়েও থেমে যায় নুপুর। হয়তো ধোয়ার জন্য রেখেছে।
নুপুর নিজের ব্যাগ বের করে নিজের কাপড় গুছানো শুরু করতেই দিবস উঠে বসে
‘ আমার কাপড়গুলোও গুছিয়ে ফেলো।
নুপুরের চোখ মাথায় উঠে যাবার উপক্রম। সে মারমুখো হয়ে
‘ আপনি এতো কাপড় নিয়ে আমাদের বাড়ি যাবেন? আপনার ব্যাগ কয়টা লাগবে জানেন? মানলাম আপনারা বড়লোক তিনবেলা পোশাক বদলান তাই বলে এতো কাপড়? বড়লোক হলেই কি এমন করতে হবে নাকি! কাপড় দিয়ে মানুষকে বিবেচনা করা ঠিক নয়। মানুষের ব্যাবহারই তার পরিচয়। আর এতো সাজুগুজু করার কি আছে? আপনার বিয়ে হয়ে গিয়েছে ভুলে গিয়েছেন নাকি? ( এক নিঃশ্বাসে)
দিবস ইয়ায়া লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে
‘ হয়েছে? এতো কথা একসাথে বলো কিভাবে? বাচ্চা মেয়ে। আমি সব নিয়ে যাব কে বললো? এখানে রেখেছি কোনটা সাথে নেবো তুমি পছন্দ করে দেবে তাই। আমি কাপড় পছন্দ করতে পারিনা একদম। এমনিতে মা পছন্দ করে দিতেন কি পড়বো, না পড়বো। এখন তো বিয়ে হয়ে গিয়েছে মাকে ডাকলে তোমারই ঝাড়ি পড়বে৷ আর বিষয়টা কেমন দেখাবে!!
নুপুর অপরপাশে ফিরে চোখ মুখ খিঁচে এক মিনিট নিজেকে বকে নিলো। সব কিছুতেই তার ভুল। কিভাবে মানিয়ে নিবে সে সবকিছুতে? দিবস নুপুরকে খালি কনফিউজড করে দিচ্ছে। নুপুরের বিহেভে দিবস আবার হো হো করে হেসে ওঠে
নুপুর রাগান্বিত হয়ে দিবসের দিকে তাকিয়ে
‘ এইভাবে হাসবেন না। আপনার হাসিতে ভেজাল আছে।
দিবস ভ্রু কুঁচকে
‘ কেন হাসলে কি হবে? প্রেমে পড়ে যাবে নাকি?
নুপুর মিনমিন করে
‘ পড়ে যেতেই পারি। যে কেউ পড়তে বাধ্য এই ভাবে হাসলে।
সবার থেকে বিদায় নিয়ে একঘন্টা আগে বেরিয়ে গিয়েছে নুপুর আর দিবস। ট্রাফিকে আটকে পড়ে বিরক্ত লাগছে নুপুরের। একটু সামনে যেতেই একটা ছেলেকে দেখে অবাক হয়ে যায় নুপুর। দিবসকে গাড়ি থামাতে বলে। দিবস না চাওয়া সত্ত্বেও গাড়ি থামাতেই নুপুর হুট করে নেমে যায় গাড়ি থেকে, দৌড়ে ছুটে চলে ওই ছেলের পিছনে…………
চলবে…….
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।