#স্বামী(সিজন-২)❤️❤️
#পর্ব -২১
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা
_______________________
“- আরিফ রহমানের কথায় রিদয় বেশ মন খারাপ করেছে।
তিতিল ফোন তুলবে কেমন করে।ফোনটা তো আমার কাছে দিয়ে দিয়েছে।
আর বলেছে– বাবা আপনার ছেলের ফোন আপনার ছেলেকেই দিয়ে দিন.যে জিনিস ঘরে ঝগরা টেনে আনে এমন জিনিস আমার লাগবে না।
আর যে ফোন নিজের মত করে নয় অন্যের মন মত ব্যাবহার করতে হবে, এমন ফোন আমার চাইনা।
-আরিফ বেশ রিদয়কে শাষিয়েছে।কারন সে জানে রিদয় কিছু না বললে তিতিল এমনি এমনি এতটা অভিমান করেনি।বেশ অভিমানি মেয়ে।
— ফোন ফেরত দিলো বাবার ফোনে কথা বলবে না।তাহলে কি এই তিন মাস ওর সাথে কথাই হবে না!!
________
”
সায়ন এসেছে তিতিলের ঘরে তিন দিন পর সায়নের মুখ দেখতে পেয়েছে তিতিল।
সায়ন বুঝতে পেরেছে ওর একটা ছোট্ট মজা তিতিলকে বড্ড আঘাত করেছে।তাই তিতিলের সামনে আসেনা।
তবে আজ কে অবাক করা কান্ড ঘটেছে।
হঠাৎ করেই রিদয় সায়নে ফোন দিয়েছে।আর তিতিলের মন খারাপ তার মন টা ভালো করতে তিতিলের সাথে গল্প করতে রিদয়ই সায়নকে পাঠিয়েছে।আরো বলেছো সে আসা অবদি জেনো তিতিলের মন খারাপ করতে না দেয়।
সায়ন জানতো রিদয় তিতিলের কাছে ওর এত আড্ডায় মজে যাওয়া পছন্দ করছে না। তবে সায়ন বেহায়ার মত বার বার আসত।ভাবি নয় বন্ধু ভেবে। তিতিলের মনকে ভাবনা থেকে দূরে রাখতেই সায়নের আসা হত।
তবে আজ রিদয়ের অনুমতি পেয়ে ঝাকানাকা নাচঁ দিতে ইচ্ছা করছে।
” তিতিল ঘরের এক কোনে আনমনে বসে।কিছুই ভালো লাগছেনা।জন্ম নেয়াটা আজ বৃথা লাগছে।
মা মরার সময় আমায় সাথে নিলো না কেন?
সারা দিন ঘরের কাজ করে তাতে বিন্দু পরিমান আপত্তি তিতিলের নেই।তবে একটু সময় নিজের করে কাটাবে তা হয় না। তাও কিনা অন্যের মন মত হয়ে উঠা বসাও করতে হবে!!!
সায়ন কে দেখে তিতিল চোখের পানিটা মুছে সায়নের কাছে এসেছে।আরেহ আপনি এখানে এলেন কেন? কিছু লাগলে আমায় ডাকতেন।
“– না ভাবি, সরি আমার জন্যে ভাইয়ার বকনি খেলে।
– আপনার কি দুষ।যার নিজের স্ত্রীর প্রতি বিশ্বাস নেই তখন অন্যের উপর রাগের মানেই কি।
—-বাদ দাও তো ভাবি।তবে আজ কিন্তু জমিয়ে লুডু খেলা হবে।না করতে পারবে না।
” না আমার শরিল টা ভালো না, আরেক দিন।
–মানা করলে শুনছে কে!!
লুডু ঘর এনে সব সেট করে বসেছে সায়ন।মোবাইলে খেলবে না, এতে নাকি চুরি করে খেলতে পারে না.
বেশ হাস্যকর তাই না!!
★
★
——২মাস হল রিদয় ঘর হীনা। রিদয়তো শুধু দিন গুনছে কবে সে বাড়িতে যাবে।
গিয়ে সরাসরি তিতিলের সাথে কথা বলে ওর রাগ ভাংঙাবে।এবং নতুন করে শুরু করবে।
সেই আশায় তার দিন পার হচ্ছে।
“সেতু আজ কাল নেশা করা শুরু করছে। চাইছে তিতিল আর রিদয়কে শেষ করতে,তবে কথায় আছে
★ অন্যের পতন চাইলে নিজের পতন অনিবার্জ..★
তেমনটার ব্যাতিক্রম হয়নি সেতুর সাথে।অন্যকে শেষ করতে সে দিনে রাতে আগুনে জ্বলছে।এতে অন্যের তো তেমন কিছু ঘটলো না।
❤️❤️
“- তিতিল প্রেগনেন্ট…❤️
কি ভুল শুনলেন?? না সত্যি। তবে তিতিল সিউর। সে টেস্ট করে রেজাল্টটা পেয়েছে। শরিলের পরিবর্তনে তার সন্দেহ হয়েছে আর রেজাল্টও এমন পেলো।
“- সকাল থেকে তিতিলের আচরন অন্য রকম।রান্না ঘরে আজ সব উথাল পুথাল চলছে।
কোন কাজে মন নেই.থালা বাসন আজকে ফ্লোরে ডান্স করছে।
কারন ওরা হাত থেকে নিচেই বেশি লাফিয়ে পরছে।
আরিফ রহমান আজকে সাপ্তাহিক ছুটি উপভোগ করছে।দুই মেয়ের সাথে বসে তাদের সারা সপ্তাহের হাল চাল জানতে ব্যাস্ত।
তিতিলের কাছে এক কাপ চা চেয়েছে তাও ঘন্টা খানেক হবে হয়তো..
এখনও এক কাপ চা কপালে জুটেনি।
এই নিয়ে তিন বার পাতিলে চায়ের পানি শুকিয়েছে।কোন ধ্যানে তিতিল সে নিজেই বুঝতে পারছে না।
——
” রোকেয়া বেগম আজকে বাপের বাড়িতে যাচ্ছে উনার বড় ভাইয়ের অবস্থ্যা ভালো না। শরিফ রহমানকেও জেতে হচ্ছে।সায়নকে রেখে গেলো।বাড়িতে একজন পুরুষ না থাকলে কি করে হবে…আরিফ তো অফিসেই থাকবে সারা দিন।রিদয়টা ও বাড়ি নেই।
“-আমরা জলদি ফিরব, বাড়ির দিকে আর সবার দিকে নজর রেখো বৌ মা।
রোকেয়া বেগম সংসারের সব হাল তিতিলের ঘারে দিয়ে চলে গেছে।
এবার বাড়িটা আরো ফাকা।আগে যাই একটু রোকেয়া বেগমের সাথে সময় কাটতো এখন তা বন্ধ।
– তবে সব সাইডে রেখে চিন্তায় আছে সে কি করবে। রিদয়কে বলবে? উনার তো কিছু মনেই নেই।এখন এই বাচ্চার কথা কি ভাবে নেবে??
বাবা কি ভাববে।আমায় তো গলায় দরি দিতে হবে যদি উনি আমায় অবিশ্বাস করেন।
আচ্ছা একদিনের মিলনে বাচ্চা হয়!! এমন প্রশ্ন টা তিতিলের মনে চলছে।এ বিষয়ে বোকা তিতিলের ধারনা ০÷।
ওর ধারনা টা একটু অন্য রকমেরই.ওর বাড়ির পাশে এক ভাবি ছিলো উনার বিয়ের ৩ বছর পরে বাচ্চা হয়েছে তাও কত ডাক্তার কবিরাজ দেখিয়েছে আল্লাহই জানেন।
আর আমার একদিনে!!!
আল্লাহ কোন পরিক্ষায় ফেললে।আল্লাহ তুমিতো জানো আমি কোন পাপ করিনি।
— নাহ সিউর হতে হলে একটা গাইনি ডক্টরের কাছে যাওয়া প্রয়োজন। তখনই বলা যাবে। এই ৪৫ টাকার একটা টেস্ট কিট কে বিশ্বাস করা মুসকিল।
“- তরকারি পুরা ছাই মনে হচ্ছে।খাবার খেতে বসে আরিফ আর তার দুই মেয়ে বেশ অবাক।খাবার এতটা বাজে হয়েছে মুখে তুলার মত নয়।কোনোটা পুরা, তো কোনোটাতে লবনের জাহাজ ডুবানো হয়েছে।
এই অখাদ্য জন্মের পর ওরা খায়নি।তিতিল কোন জগতে থেকে রান্না করেছে সেই বলতে পারবে।
” খাবার দিয়েও সে আনমনে দাড়িয়ে রয়েছে।সবাই একটু আকটু মুখে তুলে চুপ চাপ হাতটা ধুয়ে নিলো।
— চেয়ারের শব্দে তিতিলের ধ্যান কাটলো।
একি সবাই না খেয়ে উঠে পরলেন যে!!কেউ তো কিছুই খেলেন না!!
“- আসলে তিতিল গ্যাস্টিকে বড্ড যন্ত্রনা করছে ঔষধ খেতে ভুলে গেছিলাম তো তাই।
সত্যিটা আরিফ রহমান চেপে গেলো।রুজই এত সুস্বাদু খাবার রান্না করে।আজ হয়তো কোন কারনে মন ভালোনা তাই এমন হয়েছে।বলে কষ্ট দিয়ে লাভ কি..হয়তো রিদয়ের জন্য ওর মন টা অস্থির।কতবার বললাম ওর সাথে কথা বল।দিনে দুবার রিদয় ফোন দিয়ে তিতিল কে খুজে। আর তিতিল তো কথাই বলতে চায় না।
—– জুই ফুল একেক জন একেক বাহানায় উঠে গেলো খাবার ছেরে।
” বড্ড খিদে পেয়েছে সব কাজ সেরে এবার নিজে একটু খাবার মুখে দিতেই সব বুঝে গেলো।
আসলে এমন পরিবার পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
———–
“বাবা!!
— কিরে কিছু বলবি?
” বাবা ঐ আমায় কিছু টাকা দিবেন.।
“কথাটা শুনে আরিফ বেশ কষ্ট পেলো।আসলে মেয়েটার হাতে কেউ আজ অবদি একটা টাকাও দিলো না।কিছু লাগলে কাউকে বলেই না।
নাহ এবার থেকে সব মাইনে টা তিতিলের হাতেই দিব তখন যা ইচ্ছা সে তাই করতে পারবে।
কিছু টাকার জন্য এমন করে হাত পাততে হবে না।
,টাকাটা চাইতে তিতিলের লজ্জাই করছিলো তবে উপায় না পেয়েই চেয়েছে ডাক্তারের কাছে জেতেই হবে।ওরা স্কুলে গেলে বাবা অফিসে গেলে।
—আরিফ রহমান নিজের ম্যানি ব্যাগটা বের করে তিতিলের হাতে দিয়ে বললো যা লাগে নিয়ে নে।
“- স্কুলে যাবার সময় ফুল তিতিলের হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দিলো ৫ হাজার তো বটে।
এত টাকা? কোথায় পেলে ফুল! আর আমায় দিলে যে?
“আসলে ভাবি ভাইয়া তোমাকে দিতে বলেছিলো।আর আমি ড্রয়ারে রেখেছিলাম পরে আর খেয়ালই হয়নি।আজ সকালে বাবার কাছে টাকা চাইছিলে তখন মনে পরল।
ভাইয়া তোমার হাত খরচের জন্য টাকাটা রেখে গেছে।
আর বলেছে তোমার কিছু প্রয়োজন হলে আনতে।আরো লাগলে জানাতে।
টাকা হাতে নিয়ে তিতিলের চোখে অজান্তে জল চলে এলো।এতটা ভাবে উনি আমার জন্যে!!
তাহলে এত অবিশ্বাস করে কেন?
জুই ফুল আরিফ সবাইকে বিদায় দিয়ে নিজে তৈরি হচ্ছে, অনুমতি নিয়েছে সে একটু ডাক্তারের কাছে যাবে জ্বর জ্বর ভাব নাকি।
আরিফ জেতে বললো কারন শরিল খারাপই হতে পারে।তাই তো এমন করে থাকে।
তবে অকর্মের ঢেকি সায়নটাকে সাথে নিতেও বলেছে।বাড়িতে বসে এটার কাজকি.
আর তিতিল একা কিভাবে কি করবে তাই সাথে একজন থাকা জরুরি।
-” সায়নকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে চলছে তিতিল। আর যাই হক বাচ্চার বিষয়টা জেনো মিথ্যা হয়।
বার বার শাড়ির আচলে ঘাম মুছে পথ চলছে…
সত্যি যদি হয় তখন কি করবে? বাচ্চাটা নষ্ট করবে নাকি রিদয়কে জানাবে।
(চলবে)