#স্বামী(সিজন-২)
#পর্ব-৩
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা।
__________________________
“— তিতিল বেশ ভাবনায়। চোখ খুলে নিলে কি হবে? উনি যা মানুষ তিন দিনে বুঝলাম।হয়তো আমায় জাগনা দেখে কোল থেকে ফেলেই দিতে পারে।
তখন তো কোমড় ভেঙে পরে থাকতে হবে। না না কি বিস্রি ব্যাপার হবে তখন।
তবে ভালো লাগছে রিদয়ের ছোয়াটা অনুভব করতে হলে রুজ এভাবেই ঘুমের ভান করতে হবে।
-ছি ছি তিতিল তুই কত লুচু হয়ে গেছিস।এই বেটার জন্যে কত নাটক!!
চোখ বন্ধ করে এখনও নাটক জারি রেখেছে তিতিল।তবে মনে চলছে শত প্রশ্নের আনা গুনা।
—-তিতিল কে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে গায়ে চাদর জরিয়ে দিয়েছে রিদয়।
কিছুক্ষন ওর পাশে দাড়িয়ে থেকে একটা দির্ঘ শ্বাস নিলো। এই ভাবে শ্বাস নেয়ার মানেটা তিতিল বুঝলো না।বুঝবে কি করে।সে মন বিজ্ঞানি তো নয়।
-লাইট অফ করে খাটের এক কোনা ধরে রিদয় শুয়ে পরেছে।এমন করছে জেনো তিতিলের ছোয়া পেলে সে অসুদ্ধ হবে।
“-লাইট অফ এত ভাবনা আর পারা যায় না। ঘুমিয়ে পরাই ভালো। সকাল সকাল তো উঠতে হবে।
“–আজকে রিদয় কে বিছানায় থাকতে থাকতে উঠে গেছে তিতিল। ৪ টা ঘরিতে বাজছে।ওর এর্লামের দরকার পরেনি। ঘুম খুব কাঁচা তো। তাই একটু টুং টাং শব্দে ঘুম শেষ।
-কিছুটা সময় বসে রিদয়ের মুখ খানা দেখলো। দিনের আলো তো ফুটেনি তবে আবছা দেখা যাচ্ছে। আহা কি ঘুম।মায়া ভরা মুখটা।উনি জাদুকর না তো? একবার যে দেখবে মায়ায় পরে যাবে।
“-না এখানে সময় নষ্ট করা যাবে না।রান্না টা সেরে নাস্তাটা রুমে নিয়ে আসি।কালকের মত যদি আজও না খেয়ে চলে যায়.
-“-ভূতের মত এই সময় রান্না ঘরে কি করো??
-পিছন থেকে আচমকা কারো গলার শব্দে হাত থেকে চামচটা পরে গেলো তিতিলের।এমনিতে শেয়ালের ডাকে ভয় করছে তার উপরে পিছনে কে?
-পিছন ফিরে দেখে জেঠিমা এই রোকেয়া বেগম টা আমায় মেরেই দেবে একদিন।
“- ঐ রান্না বসিয়েছিলাম জেঠিমা।
–হুম বুঝলাম খিদে পেয়ে গেছে নাকি! যার জন্যে ভূতেদের মত ঐ ঘর ছেরে এই রান্না ঘরে।
“-তরকারিটা বসিয়ে দিয়ে তিতিল কাজে মন দিয়েছে।এখানে উনার উওর দিতে গেলে দুপুরের খাবার সময় হবে।
তবে উওর তো দিতে হবে।তাই কাজ করতে করতে দিলেই বেশ।
-” আসলে উনি সকালে নাস্তা না করে চলে যায় তো।তাই ভাবলাম রান্নাটা সেরে উনার নাস্তাটা ঘরে নিয়ে রাখি।যদি খেয়ে যায় আরকি।
—-ওর কাজই এমন কখন খাবে কখন খাবেনা তা আজ অবদি আমরাই জানতে পেলাম না।আর তুমিতো সবে এলে।
মাসের মধ্যে দুই চার দিন বাড়িতে খায়।আর বাকি দিন বাহিরে।
“-ভয় ডর রেখে এবার মনে আশা প্রশ্নটা তিতিল করে দিয়েছে।
—-জেঠিমা উনি কি এমন কাজ করে যার জন্যে খাবার সময় টা পায় না!!!
” তিতিলের প্রশ্নে রোকেয়া অবাক নয়নে তাকিয়ে ওর পানে।
তিতিল জবাব না পেয়ে উনার দিকে ফিরে তাকাতেই রোকেয়া হন হন করে চলে গেছে।
“- কি অদভূত মহিলা।কাজের কথা জানতে চেয়েছিলাম এমন ভাব করল জেনো উনার প্রান ভুমরায় হাত দিয়েছি।
—- সব বাদ দিয়ে রান্না টা সেরে ফেলা হল। সুন্দর করে খাবার টা বেরে নিজ রুমে রেখেছে।তবে অবাক হল বিছানায় যে এক জন মানব শুয়ে ছিলো সেই মানব আধিমানবের মত কোথায় চলে গেলো? বাথরুমে?? পানির শব্দ পেয়ে তা বুঝা গেলো।
– বিছানায় শার্ট প্যান্ট বেল্ট ঘরি সুন্দর করে রাখা।মনে হয় ফ্রেস হতে যাওয়ার আগে সব নিজেই গুছিয়ে নিয়েছে।গুছালো মানুষ!!
” শার্ট টা একবার ছুতে মন চাইছে ছুবে নাকি না।
না আর হল না বেরিয়ে এলো শার্টের মালিক।
তিতিলের দিকে একবার তাকালোও না। আর লজ্জা সম্ভবতো কম।তা দেখেই তিতিল বুঝেছে। নয়তো তোয়ালে পেঁচিয়ে এভাবে সামনে আসতে পারে। ছি ছি লজ্জা তো আমারই করছে।
তিতিল মুখকে নানান রকম করে একা একা বির বিরানিতে ব্যাস্ত। রিদয় যে সব দেখছে তা মহারানী দেখছে না।।
আর চোখে তিতিলকে দেখছে আর শার্ট টা পরছে।উল্টো দিক ঘুরে প্যান্টটাও পরে নিয়েছে।
সোজা হয়ে এবার তিতিলের দিকে ফিরেছে।তবে কপাল খারাপ তিতিল অন্যদিক ফিরে তাকিয়ে রয়েছে।
তিতিল নিজের চোখ কে রসোগুল্লার মত করে রেখেছে।আয়নায় তো দেখাই যাচ্ছে।
—রিদয়ের মাথায় ঘন্টা বাজলো।তিতিল থেকে অন্যদিক ফিরে কাপর পরেছিলাম।তবে তিতিলও উল্টোদিক ঘুরে ছিলো মানে এই আয়নার দিকে.আর আয়নায় আমায় তো পুরো দেখাযাচ্ছে আর তখনও দেখা যাচ্ছিলো…….
এক রকম পালিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে রিদয়।
“-আজকে সারাদিন তিতিলের মুখে হাসির কারনও ঐ সকালের কান্ড টা।
“-হাসি মুখে সারা দিন নিজের কাজ করে বেরাচ্ছে তবে এই হাসির কারনটা বলার মত না।
যে ওর স্বামী আস্ত একটা গাধা।
আহাম্মক কোথাকার।
– ভাবি তুমি এত খুশি কেন আজ? জুই ফুলের প্রশ্নের উওর তিতিল দিতে পারল না।শুধু হো হো করে হেসেই যাচ্ছে।
-রোকেয়া আজ তিতিলকে চোখে চোখে রাখছে। এই মেয়ে আজ এত খুশি কেন?ভূতের আসর আছে! হুজুর কে খবর দিব!! আসুক আরিফ বাড়িতে।
____
“-শশুরের জন্যে চা টা নিয়ে উনার রুমে তিতিল।আরিফ রহমান মাএ অফিস থেকে এসে চেয়ার টায় হেলান দিয়েছে।এত ক্লান্ত আজ কাপর পাল্টানো হল না।
— চা টা খেয়ে একটু ভালো লাগছে।
” বাবা!
“- কিছু বলবি মনে হয়।
” আসলে উনি… কি এমন কাজ করে যার কারনে বাড়ির হুস থাকে না।
— আরিফ চায়ের কাপ টা রেখে তিতিলের দিকে বাকা চেয়ে রইলো। তুই কি সত্যি কিছু জানিস না!!!
“না বাবা।
“–তা আমায় না জিজ্ঞাসা করে তর স্বামীকে জিজ্ঞাসা করলেই পারতি।
” মুখটা গুমরা করে ঘর থেকে বেরিয়ে জেতে জেতে বলে গেলো।
কাকে জিজ্ঞাসা করব বাবা দেখাই মেলে না কথা তো দূর।
—মন টা ভালো লাগছে আরিফ রহমানের।বড্ড লক্ষী মেয়ে আর সরল ও। তবে সব জানার পর কি হবে জানিনা।রিদয় সব সামলে নিলে হয়।
“-
—- দুই দিন আরো এভাবেই গেলো।তিতিল ঘুমের ভান ধরে রয়,আর রিদয় তাকে বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দেয়।তবে তিতিল ভেবেছে রিদয় হয়তো এমন টা করাতে বিরক্ত হবে।তবে না ওর মুখ দেখে মনে হয়। বাড়িই আসে তিতিলকে বিছানায় শুইয়ে দিতে।
—এভাবে কি স্বামীর ঘর হয়?
আর কত লোকচুরি! এমন টা নয় যে বেশ লাজুক। লাজুক নয়।তাহলে কি ভীতু??
”
“-আজ ১০ টায় জনাব হাজির।
তিতিল জেগে থাকলেও কাঁদো কাঁদো চোখ নিয়ে খাপটি মেরে বসে আছে।
রিদয়ের জন্যে খাবার টা আবার রেখেছে।স্বামীকে না খাইয়ে ঘুমেতে দিবে না।
“-তিতিলের দিকে একবার নজর জেতেই থমকে রয়েছে রিদয়।মেয়েটা এমন গুটি মেরে বসে কাদঁছে কেন?
কিছু একটা ভেবে আবার বেরিয়ে গেলো রিদয়।
তিতিল এতটা গুরুত্ব্য দিল না।এদিকে নিজের পেট ব্যাথায় কাতর।
—২০ মিনিটের ভিতরে আবার রিদয় হাজির।
হাতে একটা ব্যাগ শপিং ব্যাগ।
তিতিলের পাশে ব্যাগটা রেখে পকেটে হাত দিয়ে দাড়িয়েছে।
“-খেয়েছো??
—-আজ বিয়ের ৬দিন পর তিতিলের স্বামী ওর সাথে কথা বলছে।
প্রথম কথাটা ছিলো ওর খাওয়া হয়েছে কিনা।
” এত দিন তিতিল ভাবতো রিদয় ওর সাথে কথা বলে না কেন? তবে আজ বলছে এতেও লজ্জাবতী লতার লজ্জা করছে।
-মাথা উপর নিচে করে হ্যা সূচক জবাব তিতিলের।
“ব্যাগটা খুলো। কথাটা বলে ফ্রেস হতে তোয়ালেটা নিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকে গেছে।
–কি আনল বলদ টা দেখি।
ব্যাগ খুলে তিতিল বেশ লজ্জা পেলো।
উনি কি করে জানল আমার এটা চাই।আগে বিয়ে করে ট্রেনিং নিয়েছিলো নাকি।
সাথে দুটো ট্যাবলেট।
এটা কিসের!!
ওয়াসরুম থেকে রিদয় তিতিলকে ডেকে বললো। এত লজ্জায় লাল না হয়ে ঔষধ টা খেয়ে নাও।ব্যাথা চলে যাবে।
“- মনের খবর না বলতেই জেনে নেয়ার বেশ অভিজ্ঞতা রয়েছে নাকি। তবে এমন কাজ করবে রিদয় ভাবনার বাহিরে।
তবে স্বামীর দেয়া প্রথম গিফ্ট তাও এগুলো…..খুশি হবে নাকি লজ্জা পাবে?
—
“-
—–আজ রিদয় বাড়িতে কাজে যাবে কিনা জানা নেই।তবে এখনও অবদি ঘুম থেকে উঠেনি।
নিজের কাজে ব্যাস্ত তিতিল।ওর নাস্তা হলে শশুর ননদ স্বামী সবাই বের হবে।
বাড়িতে থাকবে সে একা।এটা ভাবলেই বড্ড খারাপ লাগে।জেঠিমা তো থেকেও নেই।আর না সে ঐ বাড়িতে যায়।
–রাতের সেই ব্যাপার টা মনে হতেই তিতিল বেশ লজ্জা পাচ্ছে। এখনও উঠেনি ডাক দেয়ার মত সাহস মনে জাগছে না। জুই বা ফুল তাদের দিয়ে ডাকালেই ভালো হয়।
“-বৌ মা আমি বেরুলাম।আর হ্যা রিদয় কে ডাকার দরকার নেই। ঘুমাক বেশ ক্লান্ত বুধহয়। তুমি খেয়ে নিউ।
-আরিফ রহমানের কথায় আর ডাকা টা তো হল না।
সবাই চলে যাচ্ছে যে যার মত।এখন আমি এখানে বসে কি করব।
তাই নিজের রুমে গিয়ে টিভি টা অন করে বসেছে।
– তবে টিভি নয় রিদয়ের দিকেই চোখটা তিতিলের।বেশ ইজ্জত কামাই করেছে কাল কে রিদয়।
এত টা গুছালো মানুষ।বেশ ভদ্র তা বজায় করে চলে।
“-আর মুরা ভেঙে রিদয় উল্টো দিকে মুখ ঘুরিয়ে ঘুমাতেই বালিশের নিচ থেকে কিছু বেরিয়ে এলো।
আর এমন জিনিস ছিলো যা তিতিলের ভয়ে প্রান যায় অবস্থ্যা
-পিস্তল!!!
“-রিদয়ের বালিশের নিচে পিস্তল?কেন?
উনি কে? ডাকাত!/সন্ত্রাসী বাবা এবার শেষ মেস।
তিতিল রিদয়ের মাথার কাছটায় গিয়ে দেখছে।হ্যা এটা মানুষ মারার যন্ত্রই তো।কেন উনি এটা পাশে রেখেছে??
নাহ আর চুপ করে থাকতে পারছিনা।সব জানার অধিকার আছে আমার।আর আজ তো জানতেই হবে।
কি এমন কর্ম উনার যার কারনে এই প্রান ঘাতি যন্ত্র ঘরে ঠাই পেয়েছে।
দির্ঘশ্বাস নিয়ে রিদয় কে ডাকার জন্য প্রস্তুত তিতিল।
——– এই যে শুনছেন!!
এবার উঠুন আপনার সাথে দরকারি কথা আছে।
“-চলবে…..★