#হঠাৎ_হাওয়া (১৩)
মায়াকে নিজের ঘরে দেখে হিমালয় সরু চোখে তাকালো,
—তুমি এখানে বৌভাতের দাওয়াত দিতে এসেছ?
মায়া হিমালয়ের সাথে ঘেষে বলল,
—নাহ নিজে বউ হয়ে আসার ফাদ পাততে এসেছি, বৌফাদ।
হিমালয় একটু দূরে বসতে বসতে বলল,
—এত ফাদ পাদ করে কোনো লাভ হবে না,আমি পিএইচডি করতে কানাডা তে যাচ্ছি, সো এত শীঘ্রই তোমার বউ হওয়া হচ্ছে না সবে ইউনিভার্সিটি গেছো বই পড়ো কাজে দেবে,
মায়া থমকে গেলো
—কি বললেন?
—শুনতেই তো পেলে,
মায়া হিমালয়ের কোলের উপর গিয়ে বসে দুহাতে হিমালয়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
—ভালোবাসি আমি আপনাকে, আপনাকে ছাড়া আমি একটুও থাকতে পারব না অল্প একটুও না, আর আপনি বলছেন আপনি বিদেশ যাচ্ছেন?
হিমালয় অবাক হয়ে গেলো এই মেয়েতো পুরো মাথা খারাপ!হিমালয় নিজেকে সংযত রাখার চেষ্টা করল,
—বিদেশ না কানাডা
মায়া মুখ ছোট করে ফেলল,হিমালয় অনুভব করল মায়ার হাত ঠান্ডা হয়ে এসেছে খুব মায়া হলো ওকে দেখে এর সাথে কঠিন গলায় কথা বলা যায় না একে শুধু ভালোইবাসতে হয় একটু নরম কন্ঠে বলল,
—শোনো মায়া তোমার নিজেরও এখনও অতটা ম্যাচুরিটি আসে নি আর আমার তো খুব বেশিদিনের কোর্স নয় মাত্র ১ বছর, ফিরে এসেই আমরা বিয়ে করব?ততদিন আমরাও নিজেদের সম্পর্ক কে সময় দিতে পারব।
মায়া উঠে দাড়ালো, ওর কিছুক্ষণ সময় লাগলো নিজেকে সামলাতে অনেক কষ্টে চোখের পানি আটকালো,তারপর হাওয়ার বেগে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো, হিমালয় ওর যাওয়ার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে রইলো মেয়েটা আসলেই পাগল!এ তো ভালোবাসা ছাড়া কিছুই বোঝে না।ঠোঁট বাকিয়ে হেসে ভাবলো রাতে ফোন করে মান ভাঙাবে।
রাতে হিমালয় মায়াকে অনেক বার ফোন করলেও রিসিভ করলো না,বাধ্য হয়ে ল্যান্ডলাইনে কল করলে মায়ার বাবা ফোন রিসিভ করে বলল,
—মায়া দরজা আটকে সেই যে রুমে ঢুকে ডোন্ট ডিস্টার্বের সাইন ঝুলিয়েছে আর খোলার নাম নেই, আমি নক করার সাহস পাচ্ছি না।
হিমালয় ছোট করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
—আমি কি একবার বাসায় আসতে পারি আঙ্কেল?
মায়ার বাবা হেসে বললেন,
—সে তো রোজই আসো জিজ্ঞেস করছ কেন!
হিমালয় একটু লজ্জাই পেয়ে গেলো।
মায়ার রুমের সামনে গিয়ে দেখলো একটা প্লাকার্ডে “ডোন্ট ডিস্টার্ব আই এম এংরি নাউ এন্ড রিডিং অলসো হু উইল নক আই উইল ডেফিনিটলি পানিশ হিম/হার।থ্যাংক ইউ।”লিখে টানিয়ে রেখেছে। মোটামুটি একটা থ্রেট আর কি!
হিমালয়ও যথেষ্ট আতঙ্ক নিয়ে দরজায় নক করতেই দাড়াম করে দরজায় কিছু আছড়ে পড়ার আওয়াজ হলো, ভেতর থেকে চিৎকার করে শব্দ এলো,
—বাবাই তুমি বলে দাও সে যে দেশের মহারাজই হোক এক্ষুনি যাতে বিদেয় হয়।আমি পড়ালেখা করছি কোনো ডিস্টার্ব হবে না, অদ্ভুত! মানুষ অশিক্ষিত নাকি!লেখাপড়া করতে পারে না?দরজায় লেখা পড়তে পারে না! নাকি?!
মায়ার বাবা অসহায় ভঙ্গিতে তাকালো,হিমালয় বুঝলো এ যে সেই রাগ নয়, আবার হালকা করে নক করে বলল,
—ম্যাডাম আই এম রিয়েলি সরি ক্যান আই হ্যাভ পানিশমেন্ট প্লিজ?
—গেট লস্ট
মায়ার বাবা এবার বললেন
—আম্মু ও মা একটু দরজা খোলো আম্মু,তুমি তো কিছুই খাও নি সারাদিন
হিমালয় চকিত হয়ে ভ্রু কুচকে বলল,
—কিচ্ছু খায় নি?
—তুমি তো চেনো না ওকে কিছু হলেই সেই রাগ খাওয়ার ওপর ঝাড়ে,
—আঙ্কেল এই দরজাটার কত দাম পড়েছিল?
—মানে!
—এটা আমি যদি ভেঙে ফেলি তাহলে কি আপনি খুব রাগ করবেন?
মায়ার বাবা হাসলো,
—এক্সট্রা চাবি দিলে হবে?ওর রুমের দরজায় আমি কোনো ছিটকিনি দেই নি,সব লক সিস্টেম।
হিমালয়ও হাসলো।মায়ার বাবা চাবি পকেটে নিয়েই ঘুরছিলেন হিমালয়ের হাতে দিয়ে চলে গেলেন সেখান থেকে।
হিমালয় দেখলো সারাঘর এলোমেলো জিনিসপত্র এদিকওদিক ছড়ানো ছিটানো, মায়া অন্যদিকে মুখ করে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে,হিমালয় আস্তে করে মায়ার কোমড় পেচিয়ে ওকে তুলে কোলের উপর বসিয়ে ঘাড়ের উপর থুতনি রেখে বলল,
—এরকম করলে আমি কি করে যাব?মায়া?তুমি কি ভাবো তোমার একারই কষ্ট হয়?আর কারো কষ্ট হয় না?হুম?
মায়া চুপ করে রইলো,
—খাও নি কেন?
—কাল মিষ্টির বৌভাত তো এজন্য পেট খালি রাখছি বেশি করে খাবো,
—আমিও পেট খালি রাখব?
—আপনার ইচ্ছা
—আঙ্কেলেরও পেট খালি
—তার ইচ্ছা
—এটা কি মায়া?মায়া কি এরকম কখনো বলে?
মায়া নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল,
—আপনি যান তো
—সত্যি?
মায়া এবার হিমালয়ের দিকে মুখ করে ওকে জড়িয়ে ধরে কেদে ফেললো, শব্দ করে কাদতে কদতে বলল,
—আমি তো বলেছিলাম আপনাকে বলি নি? একবার আমি আপনাতে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেলে পাগল হয়ে যাব, আপনি এখন আমার সাথে এমন করছেন কেন?হোয়াই?
হিমালয় মায়ার মাথায় হাত রেখে বলল,
—সরি
মায়া চেচিয়ে বলল,
—রাগ করি নি আমি কষ্ট পেয়েছি,রাগ করলে সরি বলতে হয়
হিমালয় হেসে ফেলল,
—ও আচ্ছা!আর কষ্ট পেলে কি করতে হয়?
মায়া চেচিয়ে চেচিয়ে বলল
—আদর করতে হয়, কষ্ট দিলে আদর দিতে হয়
হিমালয় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো এই মেয়ে তো মানসম্মান কিছুই রাখবে না বাইরে যে ওর বাবা থাকতে পারে সে খেয়াল কি ওর আছে!?
হিমালয় ব্যাস্ত ভঙ্গিতে বলল,
—আচ্ছা আচ্ছা,আর খিদে লাগলে?
মায়া ঝট করে উঠে দাড়ালো এদিক ওদিক তাকিয়ে হাতের কাছে কিচ্ছু পাচ্ছে না হিমালয় আতঙ্কিত গলায় বলল,
—মারবে নাকি মায়া!
—আপনি এক্ষুনি আমার বাসা থেকে বের হবেন কি? না?
—ডিনার করে যাবো তোমার আর আঙ্কেলের সাথে।
—ডিনার করে বিদেয় হবেন তো?
—হ্যা।
মায়া সবাইকে খাবার বেড়ে খাওয়ালো নিজেও খেল তবে হুলস্থূল কান্ড তরকারির ঝোল, ডাল ফেলে হিমালয় আর ওর বাবার পাঞ্জাবি মাখামাখি হয়ে একাকার দুজনেই হেসে খাবার পর্ব সারলেন। হাত ধোয়া হতে না হতেই মায়া বলল,
—এবার যান।
হিমালয় বলল,
—এগিয়ে দিবে না!
মায়া গটগট করে গেইট পর্যন্ত এসে বুকে হাত বেধে দাড়িয়ে রইলো,হিমালয় গাড়িতে ওঠার আগে মায়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
—বিয়েটা একবার হোক দেখি কত আদর তুমি নিতে পারো।
বলেই শা করে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো মায়া বেশ কিছুক্ষণ হিমালয় যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইলো ওর বুকের মধ্যে খালি খালি লাগছে কেন যে সবসময় হিমালয়ের সাথে থাকতে পারে না ও!
বাসায় গিয়ে সবার আগে হিমালয় যেটা করলো তা হলো ওর বাবা মাকে বলল,মায়ার সাথে বিয়ের কথা ওর বাবা মা তেমন কোনো আপত্তি করল না শুধু হিমালয়ের বাবা কে একটু চিন্তিত দেখালো,আর রেহেনা আহমেদ তো কেদেই ফেললেন খুশিতে মায়াকে তার খুব মনে ধরেছে,হিমালয় বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,
—বাবা তোমার কি কোনো আপত্তি আছে?ইউ আর নট লুকিং হ্যাপি
—আই এম হ্যাপি মাই সন ভেরি হ্যাপি ফর ইউ।মায়া খুবই সুন্দর একটা মেয়ে, চঞ্চল আর মিষ্টি আর সবচেয়ে বড় কথা তুমি ওকে পছন্দ করছ আর যেই সেই পছন্দ না আমার আপত্তি থাকলেও তুমি মানবে না এরকম পছন্দ এম আই রাইট?
হিমালয় হাসলো,
—আই লাভ হার, ওকে ছাড়া আমার থাকা অসম্ভব এরকম টাইপের ভালোবাসা আমার দেখা সবচেয়ে চমৎকার একটা মেয়ে, মায়া।
—অবশ্যই সে যথেষ্ট গুণবতী, যে তোমার মনে দাগ কাটতে পেরেছে।
—বাবা আমি যদি কালই আবিরের অনুষ্ঠানে এইংগেজমেন্ট টা করি?
—তুমি তো মে বি কানাডা যাওয়ার আগে বিয়েটা ই করতে চাইছো সিদ্ধান্ত কি নেওয়া হয় নি এখনো?
হিমালয় হেসে ফেললো
—তুমি সব বুঝে যাও বাবা
—এক্সাক্টলি আমি তোর বাপ মাথায় রাখিস।
এর মধ্যে হিমালয় আর মায়ার সাথে যোগাযোগ করলো না,মায়ার খুব অভিমান হলো,বৌভাতে মায়া এলো মিষ্টি আর সাদা কালারের শেডের একটা গাউন পরে আর সাথে মায়ার আব্বুও সাদা রঙের ম্যাচিং ব্লেজার,মায়া অবাক হয়ে দেখলো সেম ব্লেজার হিমালয় পড়ে আছে!ও একবার হিমালয় আর একবার ওর বাবার দিকে তাকালো,তারপর মুখ ভেংচি দিয়ে গিয়ে মিষ্টির কাছে গিয়ে দাড়ালো।
চলবে…..
সামিয়া খান মায়া
#হঠাৎ_হাওয়া (১৪)
মায়া মিষ্টির কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলল,
—দেখেছো আমার প্লান কেমন কাজে দিলো
মিষ্টিও হেসে বললো
—আমি কিন্তু খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম মায়া যদি হিতে বিপরীত হতো?
—হয় নি তো?
ধ্রুব ফিসফিস করে বলল,
—মায়া তুমি কিন্তু প্লিজ হিমালয় কে বলো না, আসলে ও আবিরের সাথে ইমোশনালি খুব এটাচড, আর এবার কিন্তু তুমি একটু রিস্কই নিয়ে ফেলেছো
মায়া মুখ শুকনো করে বললো
—উনি কি খুব রাগ করবে?
ধ্রুব আশ্বাস দিয়ে বলল
—তুমি শুধু ওকে কিছু জানিও না, ও আমাকেও রাগ করবে কেননা আমি তোমাকে কথাগুলো জানিয়েছি,
মিষ্টি মায়ার হাত দুটো নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলল,
—থ্যাংক ইউ মায়া,থ্যাংকইউ ফর এভ্রিথিং।
মায়া হাসলো,আবির এসে বলল,
—এই ধ্রুব তুই সবসময় মেয়েদের সাথে কি করিস বলতো,
—তুই বুঝবি না আমার মত হ্যান্ডসাম ছেলের কম্পানি সব মেয়েরাই চায়, ইভেন তোর বউ আর হিমালয়ের গার্লফ্রেন্ডও
নিরব হেসে বলল,
—দিনের মধ্যে কত ঢপ তুমি দাও ধ্রুব?
ধ্রুব বিরক্ত হয়ে বলল,
—তোদের জ্বালায় শালা একটু ভাবও নিতে পারি না,
ওরা সবাই একসাথে হেসে ফেললো।
হিমালয় মায়ার বাবার সাথে ওর বাবা মায়ের পরিচয় করিয়ে দিল,হিমালয়ের বাবা হ্যান্ডশেক করতে করতে বলল,
—হিমালয় চাইছে এইংগেজমেন্ট টা নাকি আজই করবে,ছেলে মেয়ে কখন কি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না,
—হাবিব সাহেব, আপনি তো একবারও মায়া সম্পর্কে খোজ নিলেন না!রাজি হয়ে গেলেন যে?
—সত্যি করে বলুন মায়াজ সাহেব আপনি কি হিমালয় সম্পর্কে কোনো খোজ নিয়েছেন?
—আমি একবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ভুল করেছি, আমি চাই এবার মায়াই ওর জীবনের সিদ্ধান্ত নিজেই নিবে,তবে কিছু কথা বাবা হিসেবে আমার আপনাদের জানানো দরকার কিন্তু এই পরিবেশে!এখনই এইংগেজমেন্ট আমি কিছুই বুঝতে পারছি না,
—আমি সব জানি মায়াজ সাহেব,সবচেয়ে বড় কথা আমার ছেলের মায়াকে পছন্দ হয়েছে এর বেশি আর কিচ্ছু আমার জানার নেই,আপনি চিন্তা করবেন না আপনার মেয়ে সর্বোচ্চ সুখী হবে,আমার ছেলে কিন্তু অতটা খারাপ নয়
—হিমালয় একটা আস্ত সিন্দুক হাবিব সাহেব,যে মায়াকে আগলে রাখবে, আমি জানি মায়ার জন্য ও বেস্ট।
হিমালয়ের হসপিটালের প্রায় ডাক্তারই মায়াকে সেদিন চিনে ফেলেছেন,আবিরের অনুষ্ঠানে সবাই ইনভাইটেড,মিষ্টির পাশাপাশি সবাই মায়ার সাথেও আলাপ করছে,কথা একটু অবাক হয়ে পুষ্পকে জিজ্ঞেস করল,
—কিরে ওরা মায়াকে চেনে নাকি?
কথার বাবার অসুস্থতার জন্য কদিন ও ছুটিতে ছিল বলে ও সেদিন মায়ার হসপিটালে যাওয়ার কথা কিছুই জানে না,পুষ্প একটু আমতা আমতা করে বলল,
—জানিসই তো ও মায়া সবার সাথেই খাতির করে নেয়,
কথার বাবা আর হিমালয়ের বাবা কলেজ থেকেই ফ্রেন্ড সে হিসেবে কথার আর হিমালয়ের ফ্যামিলি বন্ড ও অন্যরকম, কথা গিয়ে হিমালয়ের বাবা মায়ের সাথে কুশল বিনিময় করছিল মায়ার বাবার সাথেও পরিচিত হলো, হিমালয় বারবার মায়ার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে কোনো লাভ হচ্ছে না, বাধ্য হয়ে হিমালয় আবিরের কাছে গিয়ে বলল
—আমি একটা এনাউন্সমেন্ট করতে চাই এখানে তো বেশিরভাগ আমাদের হসপিটাল কলিগই করব?
—তুই দাড়া এনাউন্স টা আমি করি
—তুই কি করবি?
—সেটা দেখতেই পাবি
আবির স্টেজ থেকে নেমে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল
— অনলি লেডিস এটেনশন প্লিজ এন্ড এমোং দেম মিস মায়া প্লিজ কাম হেয়ার বিসাইড মি
মায়া বিস্মিত হয়ে আবিরের পাশে গিয়ে দাড়ালো ফিসফিস করে বলল,
—অনলি লেডিস কেন এটেনশন দেবে আবির ভাই?
—আরে বুঝিস না কেন লেডিস যেদিকে তাকায় জেন্টেলম্যান ও সেইদিকেই তাকায়
—ও আচ্ছা! আমি কি নাচব নাকি আবির ভাই
—না মায়া প্লিজ!
—তুমি এভাবে চমকে উঠলে কেন?
—তুই কি আমাকে কথা বলতে দিবি?
—আচ্ছা,
আবির আবারা সবার উদ্দেশ্যে বলল,
—আমি আশা করি এট লিস্ট আমাদের হসপিটালের মোটামুটি সবাই আমার পাশে দাঁড়ানো মেয়েটিকে চেনেন,এবং আপনারা ইতিমধ্যেই তার পাগলামিও দেখে ফেলেছেন, এবার দেখবেন তার পাগলামির প্রভাব, সো আর ইউ রেডি?
সবাইকেই খুব উৎফুল্ল দেখালো কথা এদিক ওদিক হিমালয় কে কোথাও খুজে পেলো না, মায়া দেখলো হিমালয় ওর দিকেই আসছে ও মুখ ভেংচি দিয়ে চলে যেতে গেলেই হিমালয় হাত ধরে আটকালো,সবার সামনে মায়া হচকচিয়ে গেলো,
—ডিয়ার বিউটিফুল লেডি আই এম সো সরি ফর ব্রেকিং ইওর হার্ট, ক্যান ইউ গিভ অনলি ফাইভ মিনিট ফর হিল ইট উইথ লাভ?প্লিইজ?
মায়া মুখ ঘুরিয়ে রইলো,হিমালয় সবার উদ্দেশ্যে বলল,
—আমি জানি এখানে সবাই মিষ্টির বৌভাতের জন্য ইনভাইটেড এন্ড আপনারা একটা গিফট নিয়েই এসেছেন, তবে এই একটা গিফটেই আপনারা আরো একটা ইভেন্ট এটেন্ড করবেন জেনে খুশি হন।আমি জানি আমার কলিগ রা সবাই খুব অবাক হচ্ছেন আমাকে দেখে, যেহেতু আমি এত কথা একবারে কোনোদিন বলি নি, তবে একটা কথা আছে আপনারা শুনে থাকবেন সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে আমার বর্তমান অবস্থাও তাই,এই যে আমার পাশে যেই রমনী দাঁড়িয়ে আছেন তার সঙ্গ দোষে ইদানীং আমি ভেসে গেছি, গত সাতাশ বছরে আমি যা কোনোদিন করি নি আজকাল তাই করতে ইচ্ছে করে সবসময় মস্তিষ্ক দিয়ে চিন্তা করা আমি আজকাল হৃদয় থেকে ভাবতে শুরু করেছি, প্রেম, ভালোবাসা, আবেগ অনুভূতি এগুলো কোনোদিন আমাকে স্পর্শ করত না আমি ভাবতাম ভালোবাসা একান্ত ব্যাক্তিগত জিনিস তা এত ঘটা করে সবাইকে না জানালেও চলবে আমি এই রমনীকে প্রেম নিবেদন করেছিলাম রাতের বেলায় চার দেয়ালের মধ্যে তিনি অভিযোগ করেননি,আমাকে চমকে দিয়ে তিনি সেখানে গিয়ে আমায় প্রেম নিবেদন করেছে যেখানে আমার পরিচিতি আছে তিনি সবাইকে জানিয়েছেন আমি একমাত্র তার যাতে অন্যকেউ আমার উপর অধিকার খাটাতে না পারে, এক্ষেত্রে তিনি খুব বুদ্ধিমতী বলতে হয় আর যথেষ্ট সাহসীও,যেই জায়গায় সবাই আমাকে দেখলে আতঙ্কে থাকত এখান সেখানে আমাকে দেখলে তারা মুখ টিপে হাসে তবে সত্যি বলতে আমার তখন খুবই ভালো লাগে মনে এক ধরণের শান্তির বাতাস বয়ে যায়। আমার মনে হয় এই রমণীরও সেই শান্তি পাওয়ার অধিকার আছে ঠিক যেরকম আমি তার সেও যে একান্তই আমার এটা সবাইকে জানতে হবে,আপনাদের সবাইকে সাক্ষী রেখে আমি এই প্রিটি লেডিকে কিছু বলতে চাই।
মায়া থরথর করে কাপছে মায়ার বাবার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে তার আজ খুব আনন্দের দিন,হিমালয় মায়ার বা হাতটা নিজের বুকের বা পাশে রেখে বলল,
—এখান থেকে বলছি ম্যাডাম ভালোবাসি আমি আপনাকে, যতটা ভালোবাসলে আর কিচ্ছু বোঝারা ক্ষমতা থাকে না ততটা আমার ইচ্ছে করে আপনার সামনে সমস্ত ব্যাক্তিত্ব ভেঙে দাঁড়িয়ে ছেলেমানুষি করতে, আপনার মতই আজগুবি সব কথা বলতে, ম্যাডাম রাগ যদি ভেঙে থাকে আপনি কি আমায় অনুমতি দেবেন,আপনার শূন্য অনামিকায় একটা ছোট্ট গিট বাধতে?কথা দিচ্ছি যা আপনি চাইবেন যেরকম আপনি চাইবেন সব সেরকম হবে প্লিজ আর রাগ করে থাকবেন না।
হিমালয় মাথা নিচু করে ফেললো,হিমালয়ের মা কেদেই চলেছে হিমালয় অনুভব করলো মায়ার হাত ঠান্ডা হয়ে এসেছে মায়ার দিকে মুখ করে তাকিয়ে আস্তে বলল,
—প্লিজ মায়া সেন্সলেস হইও না মোমেন্ট টা নষ্ট হয়ে যাবে, আর কাদছ যে তোমার মেকাপ নষ্ট হয়ে যাবে
—আমি মেকাপ করি নি।
—ওহ তাহলে কাদো আমি কি আংটি টা পড়িয়ে দেব?
—আমিই এখন আংটি কোথায় পাবো?
মায়ার বাবা এগিয়ে এসে তার আঙুল থেকে প্লাটিনামের আংটিটা খুলে মায়ার হাতে দিলো,
হিমালয় মায়ার আংটি বদল সেখানেই হয়ে গেলো।
সবাই জোরে হাতেতালি দিলো মায়া আর হিমালয় কে অভিনন্দন জানাতে লাগলো।কথা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো মুর্তির মত, ওর বাবা কাজেম দেওয়ান গিয়ে হিমালয়ের বাবাকে বলল,
—হাবিব এসব কি হচ্ছে?
—তোর কথা ঠিক বুঝলাম না,
—তুই কি ভুলে গেছিস আমরা ভেবেছিলাম কথা আর হিমালয়ের বিয়ে দেব ওরা বড় হলে!
—আমি কিছুই ভুলি নি কাজেম, আমরা কিন্তু বলেছিলাম যদি দুজনের সম্মতি থাকে তাহলেই ওদের বিয়ে দেব কখনোই আমাদের সিদ্ধান্ত ওদের ওপর চাপিয়ে দেব না। যদি বড় হয়ে ওরা দুজন মনে করে ওরা ওদের বন্ধুত্বকে বিয়ের বন্ধনে বাধবে তবেই।কিন্তু হিমালয় মায়াকে ভালোবাসে আমার ছেলেকে এর আগে আমি এরকম কখনো কোনো মেয়ের জন্য করতে দেখি নি,তাছাড়া হিমালয় কথাকে বন্ধু হিসেবেই দেখে।আমি আশা করব আমার ছেলের খুশিতে তুইও খুশি হবি।
কাজেম সাহেব আর কোনো কথা বললেন না,একটু দূরে দাড়িয়ে কথা সব শুনছিলো।
হিমালয় মায়ার কনিষ্ঠা আঙুল নিজের আঙুল দিয়ে ছুয়ে ফিসফিস করে বললো
—খুশি হয়েছো তুমি মায়া?
মায়া হিমালয়ের ব্লেজারের কলারে একহাত রেখে বললো
—খুউব আপনি জানেন খুশিতে আমার মারা যেতে ইচ্ছে করছে?
—সেখানে কিভাবে যেতে হয় চলো যাই।
মায়া আড়চোখে চেয়ে মুখ কুচকে বললো
—এত খারাপ কেন আপনি?
—শুধু তোমার জন্যে আর সবার জন্য কিন্তু আমি খুব শান্ত ভদ্র ইউ নো খুব আকাঙ্ক্ষিত
মায়া কটকট করে চাইতেই হিমালয় মুখ টিপে হাসলো,
—বাই দা ওয়ে একটা কথা বলো, আবির এই অঅনুষ্ঠানের জন্য রাজি হলো কি করে?
মায়া মাথা নিচু করে ফেললো হিমালয় ভ্রু কুচক্র তাকিয়ে বললো,
—কি হয়েছে মায়া?
মায়া ভয়ে ভয়ে বললো
—এবার আমি একটু খারাপ কাজ করেছি,
হিমালয় ডান ভ্রু বাকিয়ে বলল,
—কি রকম?
চলবে….
সামিয়া খান মায়া