#হবে_কি_আমার(২)
#writer_Ruhi_mondal
#পর্ব_29
লম্বা ঝিলের স্বচ্ছ কাঁচের মত জলে সাদা দুটি হাঁস ভেসে বেড়াচ্ছে,পাতা ঝরা কদম গাছের ডালে দুটি মাছরাঙা পাখি বসে আছে! দৃষ্টি তাদের জলের ভেসে থাকা মাছের দিকে নিবদ্ধ আর তাদের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ “তিশা’র।” সে কিয়ৎক্ষণ সেদিক পান চেয়ে থেকে আবার পিছনে গেইটের দিকে তাকালো, না অনুরাগ এখনো আসেনি পুনরায় সে ঘুরে বসে হাঁটুতে মুখ গুজলো। পাশ থেকে মধ্যবয়স্ক এক ভদ্রলোক তার সাইড কাটিয়ে ঝাড়ু দিয়ে চলে গেলেন কৌতুহল ভরা দৃষ্টি তার আর তা হবে নাই বা কেন এই সাত সকালে পার্কে কাউকে তিনি আসতে দেখেননি ঘড়িতে ক’টায় বা হবে,আটটা ছুঁইছুঁই, এখন এখানে তাকে দেখে তিনি প্রচুর অবাক! আর এ পার্কে প্রেম করতে সাধারনত এখানে এখন কেউ আসে না। তিনি সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতেই নিজের কাজে এগিয়ে গেলেন তিশার থেকে অনেকটা দূরে।
অনুরাগ হাঁফিয়ে হাঁফিয়ে মেইন গেট ক্রস করে ভিতরে এসে দেখল তিশা একটা গাছের গোড়ায় বসে আছে,সে তিশার দিকে দৌড়ে আসতে লাগল। আর্জেন্ট তাকে বারংবার ফোন করায় সে কাঁচা ঘুম ভেঙে এসেছে না হয় ছুটির দিনের বেলা বারোটার কমে ঘুম থেকে উঠে না। অনুরাগ ধপ করে তিশার পাশে হাটু গেড়ে বসে অতঃপর হাঁফিয়ে যাওয়া কন্ঠে বলল,
__”কি ব্যাপার এমন সাত সকালে ডাকলি কেন?তাড়াতাড়ি বল আর বাড়ি যা। আমি ঘুমাব!'”
এতগুলো কথা অনুরাগ একনাগাড়ে বলে গেল কিন্তু তিশা এখনও হাঁটু থেকে মুখ তোলেনি তা দেখে অনুরাগের ভ্রু কুঁচকে গেল। সে এগিয়ে গিয়ে তিশির মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
__”তুই আমাকে ডেকে নিজেই ঘুমিয়ে গেছি বাঁদরী!”
তিশা তবুও কিছু বলছে না দেখে অনুরাগ বলল,
__”এই হৃদ, কি হয়েছে তোর? আমার দিকে তাকা?”
অনুরাগ জোর করে দুই হাতে তিশার মুখ উঁচু করে দেখেই পিলে চমকে উঠে,তিশার চোখ মুখ ফুলে ঢোল হয়ে আছে চোখের আঁখি পল্লব জলে ভিজে এখনো। লাল দুটো চোখ দেখে অনুরাগ এর বুক কেঁপে উঠল সে ভীত গলায় বলল,
__”এই এই তোর কি হয়েছে, চোখ মুখ এমন হয়ে আছে কেন? কাঁদছিস কেনো তুই? বল?”
তিশা এবার শব্দ করে কেঁদে উঠে সে দুহাতে অনুরাগের গলা জড়িয়ে ধরে। অনুরাগ চমকে উঠে হতভম্ব হয়ে যায় সে। কিয়ৎক্ষণ পর সে বিচলিত কন্ঠে বলল,
__”কি হয়েছে তোর? বল আমায়!”
তিশা কাঁদতে কাঁদতে বলল,
__”আমি তোর থেকে দূরে গিয়ে কি করে থাকবো? আমার খুব কষ্ট হচ্ছে!”
অনুরাগ তিশার কথার কোন মানে খুজে পেলো না। সে হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞাসা করল,
__”আমার থেকে দূরে থাকবি মানে? আমি তো তোর…
__’বাবার টান্সফার হয়েছে, আমরা আজ এখান থেকে চলে যাচ্ছি!’
কথাটা শ্রবন করতেই অনুরাগের হাতের বাঁধন খুলে যায়, বুকের ভিতর কেমন হাড়ানোর ভয় জেকে বসে। সে তিশাকে নিজের থেকে সরিয়ে বলল,
__”কি বলছিস তুই চলে যাবি মানে? দেখ সকাল সকাল এমন মজা করবি না,এক থাপ্পরে গাল লাল করে দেবো!”
তিশা জল ভরা চোখে বলল,
__’মজা করছি না। আ’ম সিরিয়াস,কাল রাতেই বাবা জানিয়েছেন এখান থেকে দূরে ওনার ট্রান্সফার হচ্ছে আর সেখানে আমাদের নিয়ে একেবারে জন্য চলে যাবে! মা আগে থেকেই জানতো কিন্তু আমাকে কাল রাতেই জানিয়েছে। একটু পরেই আমরা গাড়িতে উঠবো!’
অনুরাগ তিশার দুবাহু চেপে ধরে,সে বোধশক্তি হারিয়েছে,এই মেয়ে তার থেকে দূরে গেলেই সে পাগল হয়ে যাবে, তাকে কে সামলাবে? মাঝরাতে ‘মা’ কে মনে পরলে সেই ব্যাথা কার কাছে গিয়ে কমাবে,কে তার রোগের উবশম হবে,এই মেয়ে ছাড়া তাকে কেউ সামলাতে পারবে না। কেউ না। অনুরাগ কন্ঠে কাঠিন্য ঢেলে বলল
__’গাড়িতে উঠবো মানেটা কি? কোথাও যাবি না তুই। আমি তোকে যেতে দেবো না!’
তিশা আরও ভেঙে পড়েছে,সে জানে অনুরাগ এমনটাই করবে,সে নিজেই তো কেঁদে কেটে একাকার করে দিয়েছে যাবে না বলে, কিন্তু ফ্যামিলি যেখানে থাকবে সেখানে ওকে ও থাকতে হবে। অনেক কষ্টে তার মা আধাঘন্টার জন্য তাকে ছেড়েছে তিশার মা একটু জানেন অনুরাগ তিশার ব্যাপারে তিনি এদের সম্পর্কে নিমরাজি, তিশা ভাঙা গলায় বলল,
__’কিছু আর করার নেই,বাবা অলরেডি এইখানে সমস্ত কিছু চুকিয়ে ফেলেছেন নতুন বাড়িতে ওঠার জন্য!’
অনুরাগ ছলছল চোখে তাকিয়ে কাতর কন্ঠে বলল,
__”আমার কি হবে তুই চলে গেলে, আমি তোকে ছাড়া কি করে থাকবো। আমি যেতে দেবো না তোকে। আঙ্কেল কে বল তুই যাবি না ব্যাস।”
তিশা অনুরাগের দুগালে হাত রেখে বলল,
__” কথা দিচ্ছি, এভরি মান্থ তোর সাথে দেখা করতে আসবো।”
অনুরাগের রাগ লাগলো প্রচুর, মাথা ঠিক নেই তার, সে এক ঝটকায় হাত সরিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
__” তোর প্রমিস তোর কাছে রাখ। আস্তে হবে না আমার কাছে তুই যা যেখানে যেতে চাস। আমি একা। একাই থাকবো!”
তিশা উঠে দাঁড়ালো,এই পাগল ছেলে আর ও পাগল হয়েছে,তিশা এগিয়ে গিয়ে অনুরাগ কে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সে যেমন ভাবে দৌড়ে এসেছিল তেমন ভাবেই চলে গেল। তিশা অশ্রুসিক্ত নয়নে সেদিক পানে চেয়ে রইল। সে যানে অনুরাগ গিয়ে রুমে লক করে দিয়ে বাচ্চাদের মতো কান্না করবে সারাদিন। কিন্তু পার্থক্য কান্না থামাতে তিশা আর যেতে পারবে না।
_______
ঘড়ির কাঁটায় ন’টা বাইশ অরিন্দম আড়মোড়া ভেঙ্গে পিটপিট করে তাকালো,মাথা তার প্রচন্ড ভারী লাগছে, অভ্যাসবশত সে পাশে হাত রেখে অনুর স্থান শূন্য পেলো, চোখমুখ কুঁচকে সে তাকিয়ে দেখলো অনু নেই। ক্ষনেই বুক ধক করে উঠল,অনু তো কখনো তার আগে উঠে না। অরিন্দম ডান পাশ হতেই আঁতকে উঠলো,ডান পাশে অনু বসে আছে। কিয়ৎক্ষণ সে অনুর বিদ্ধস্ত অবস্থা দেখতে লাগলো। অনুর চুল গুলো উস্কখুস্ক হয়ে আছে, নেত্র দুটো রক্ত লাল,আর সেই নেত্রে তার পানে অগ্নি নিক্ষেপ করছে থাকে ধ্বংস করে দেওয়ার মতো, অরিন্দম আর একটু ভালো করে দেখতে দেখল অনু তার শার্ট পরে আছে, কাল রাতে বিয়ে বাড়ি যাওয়ার আগে অরিন্দম চেঞ্জ করে শার্টটা খাটের কোনায় রেখে দিয়েছিল। কিন্তু অনু কেন তার শার্ট পড়েছে? সে কখনও অরিন্দমের পোশাক পড়ে না। অরিন্দম কিছু একটা ভেবে চমকে উঠে, নিজের দিকে তাকিয়ে আরও ভড়কে যায়, সে শার্ট লেস অবস্থায়,তাই দেখে মাথা চেপে কাল রাতের ঘটনা মনে করতে লাগলো কিন্তু তেমন কিছু মনে না করতে পেরে চেষ্টা ছেড়ে দিল অতঃপর সে ভীত গলায় অনুকে বলল,
__’বউ তোমার এ অবস্থা.. তার কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগে অনু তেরে এসে অরিন্দম কে ধাক্কা দিয়ে পুনরায় শুইয়ে দিল এবং তার দু কান ধরে ঝাঁকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
___”আমার এ অবস্থা কেন? নিজে এ অবস্থা করে, এখন বলছ আমার এ অবস্থা কেন?”
অরিন্দম পিলে চমকে গেল বুক ধড়ফড় করে উঠল,সে কি কাল রাতে অনুর সাথে.. ভেবেই অরিন্দম নিজের ওপর রাগ হলো,সে এমন ভাবে অনুর কাছে যাবে কখনো ভাবেনি। সে চায়নি এমন ভাবে সীমা ছাড়াতে। আর তাছাড়া অনুর পারমিশন ছাড়া সে এমন একটা কাজ কি করে করতে পারল? ভেবে নিজেকে কেমন নিচ লাগছে তার। সে তো এমন না।
অরিন্দমকে চুপ থাকতে দেখে অনু হায় হতাশা প্রকাশ করে বলল,
__”কাল রাতে বমি করে আমাকে পুরো তিন তিনবার ভিজিয়ে দিয়েছে! নিজে ভিজেছে আর তার থেকে বেশী আমাকে ভিজিয়ে দিয়েছে, একটা মানুষ কতবার চেঞ্জ করতে যাবে? তাই হাতের কাছে যা পেয়েছি সেটাই পড়ে নিয়েছি!
অরিন্দম তা শুনে বলল,
___”তারমানে বমি করেছি বলে তুমি আমার পাঞ্জাবী খুলে দিয়েছ আর আমার শার্ট নিজে পড়েছ। আমাদের মধ্যে তেমন কিছু হয় নি। তাইতো বউ? ওহ্ থ্যাঙ্কস গড!”
অনু যেন অরিন্দমের উক্ত কথায় আরও রেগে গেলো সে ক্রোধিত নয়নে অরিন্দমের দিকে তাকিয়ে থেকে তার ওপর চেপে বসে অতঃপর অরিন্দমের চুলের মুঠি ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
___” থ্যাংক গড। কিছু হয়নি মানে কি? হলে কি ক্ষতি হতো? তোমার সতিত্ব নষ্ট হতো? বউ এর কাছে আসলে কি হারাতো তোমার কুমারত্ব হারাতোও?”
অরিন্দম বিষ্ময় ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অনুর মুখপানে যেটা রণচন্ডী রূপ ধারণ করেছে। অনু তাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রাগে ডান হাতের তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে অরিন্দমের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দিল অরিন্দম আত্মনাদ করতে সে হাত সরিয়ে দিয়ে বলল,
__”কোথায় ভেবেছিলাম নেশা করে এসেছে আমার সাথে ঝগড়া করবে, আমাকে মারতে আসবে, আমি ও সমান ভাবে ঝগড়া করবো, আমি কিল ঘুষি দেবো দিয়ে নিজের শক্তি দেখাব, কিন্তু সেটা হলো না। তুমি এসে মিষ্টি মিষ্টি কথা বললে আমাকে কত চুমু দিলে কোলে তুলে নিলে, আমি লজ্জা পেলাম ভাবলাম রোমান্স করবে, যেমন টিভিতে হঠাৎ হিরো ড্রিঙ্ক করে হিরোইনের সাথে অজান্তেই রোমান্স করে ঠিক তেমন কিন্তু হলো উল্টো কোলে করে খাট পর্যন্ত আসতে আসতে আমার গায়ে বমি করে ভাসিয়ে দিলে,হায় আমার কি হলো, আমার নেশাখোর বর যেমন ভেবেছিলাম তার মধ্যে এক প্রকার ও হলো না। হায় আমার এ কি হলো?
#চলবে