হবে কি আমার পর্ব -৩২

#হবে_কি_আমার (২)
#writer_Ruhi_mondal
#পর্ব _32

ঝিরিঝিরি বৃষ্টি নেমেছে হঠাৎ করে সন্ধ্যা বেলায়, শুকনো কাঠফাটা রাস্তা ভিজে চুবচুবে হয়ে পরছে,গাড়ি চলছে সাইসাই করে, ঠান্ডা শীতল বাতাস বয়ে চলেছে প্রকৃতিতে,এই সুন্দর প্রহরে বক্ষবন্ধনী অনু বিরক্ত নিয়ে অরিন্দমের দিকে তাকিয়ে আছে,আর অরিন্দম ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে একমনে ড্রাইভ করে চলেছে,তারা দুজনে এখন মৃন্ময় দের বাড়ি যাচ্ছে, সেখানে পায়েল দ্বীপ ও আছে, অনেক গুলো দিন অনু তার দি’র সাথে দেখা না হওয়ার ফলে মন মেজাজ ভালো নেই,সবেমাত্র পরীক্ষা শেষ হয়েছে তাই এখন ফ্রি হয়েই যে বায়না ধরেছে তাকে তার দিদির কাছে নিয়ে যেতে হবে। অরিন্দম ও এখন আর না করতে পারলো না। মেয়েটা অনেক কষ্ট করেছে পরীক্ষা কদিন, তাকে নিয়ে অনেক দিন বাহিরে ঘুরতে আসা হয়নি, তাই সে রাজি হয়ে গেল তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু এইমুহুর্তে অনু প্রচুর রেগে আছে, কারণ হলো সে গাড়ির জানালার বাহিরে হাত দিয়ে বৃষ্টির জল ছুঁয়ে দেখবে কিন্তু অরিন্দম তাকে টেনে বুকের সাথে চেপে রেখেছে,অনু রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,

__’তুমি একটা বজ্জাত লোক, আমাকে খুব জ্বালাতন করো! আমার মন মতো কিছু করতে দাও না! আমার একটা ও কথা শোনা না!’

অরিন্দম শব্দ করে হেসে বলল,
__”আর কি কি বলতে চাও বলো, আমি মন দিয়ে শুনছি, কিন্তু একটা প্রশ্ন ছিল বউ, আমি তোমার কোন কথাটা শুনি না? দেখো তুমি আজ বললে দি’র সাথে দেখা করবে আমি কিছু না বলেই নিয়ে যাচ্ছি,তা না হলে আমি আজ তোমাকে নিয়ে রেস্টুরেন্ট ডিনার করতে যেতাম, কিন্তু নিজের ইচ্ছার আগে তোমার কথা রাখলাম, তবুও বলছ তোমার কোনো কথা রাখি না,দিস ইজ ভেরি ব্যাড, বউ। আমি তোমার সব কথাই রাখি।

অরিন্দম গাড়ি থামাল, তনুশ্রী দের বাড়ীর সামনে এসে গিয়েছে তারা।

অনু মুখ ফুলিয়ে বলল,
__’আমাকে জানালার বাইরে হাত দিতে দাওনি!’
_’ওটা পারবো না! অন্য কিছু বলো?’
__’আমাকে হানিমুনে নিয়ে যাওনি!’
__”নিয়ে যাব!”
কথাটা শুনেই অনু এক্সাইটেড হয়ে বলল,
__’কবে বল? এক্সাম ও শেষ। এবার চল যাই!’

অরিন্দম দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল,
__”গিয়ে কি হবে?”

অনু নিজের সিটে বসে উচ্ছসিত হাসি দিয়ে বলল,
___”অনেক অনেক ঘোরা হবে, অনেক সেল্ফি তোলা হবে, অনেক শপিং করা হবে..”

অরিন্দম হা করে তাকিয়ে থাকল অনুর কথা শুনে,এই মেয়ে অন্য সময় রোমান্স রোমান্স করে চেঁচায়,আর এখন বলছে হানিমুনে গিয়ে শপিং ফটো তুলবে,আজব।

অরিন্দমকে তাকিয়ে থাকতে দেখে অনু বলল,
___” বরবাবু কি হলো তাকিয়ে আছ কেন, কবে যাবে বল?”
অরিন্দম অনুকে হ্যাঁচকা টান দিয়ে নিজের মুখের সামনে আনে,অনু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। অরিন্দম তার মুখ দেখে হেসে দিল। অনু পিটপিট করে অরিন্দমের মুখপানে তাকিয়ে থাকে, অরিন্দম তার কানে কাছে গিয়ে ফিসফিস করে কিছু একটা বলল, আর তা শ্রবন করতেই অনু লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে। সে সরে আসতে নিলে অরিন্দম তার ললাটে অধর ছুঁয়ে বলল,
__’ তা বলো কবে যাবে? ‘
অনু সরে এসে গেইট খুলে বাহিরে যেতে যেতে বলল,
__”যাব না অসভ্য..”

অরিন্দম শব্দ করে হেসে নিজেও বেরিয়ে যায়, ততক্ষণে বৃষ্টি কমে গিয়েছে।
_______

অনুরাগ মুখ কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছে আর তিশা তার পানে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে,আজ তারা শপিং এ এসেছে! আসলে অনুরাগ জোর করে এনেছে তাকে নিয়ে! একমাস পর তাদের এঙ্গেজমেন্ট তাই এখন থেকেই শপিং শুরু, অনুরাগ তিশার থেকে বেশি শপিং করতে ভালো বাসে, তাই দুদিন ছাড়াই চলে আসে, তাদের সম্পর্ক দু-বাড়ীর সবাই মেনে নিয়েছে! অনুরাগের বাবা নিজে গিয়ে তিশার বাবাকে বলেছেন!

তিনি খুশি। খুব খুশি এত বছর পর ছেলে নিজের কাছে আসায় নিজেকে পরিপূর্ণ রাখছে উনার, আর যখন শুনেছে অনুরাগ তিশার সাথে বিয়ে দিলে ছেলে এখানেই থাকবে তিনি আর এক মুহূর্তও দেরি না করে তিশাদের বাড়ী গিয়েছিলেন। তিশার বাবা প্রথমে রাজি হননি আর এই মুহূর্তে মেয়ের বিয়ের কথা ও উনি ভাবছেন না। উনাকে অনুরাগের বাবা জোর দিয়ে বলেছেন, এখন শুধু এনগেজমেন্ট করে রাখতে। তাদের বিয়ে পরে দেবে, অনুরাগ প্রতিষ্ঠিত হলে আর তাছাড়া অনুরাগ তাদের বিজনেস সামলাবে অনুরাগ, তিশার কোনো অসুবিধা হবে না। তিশার মা তিশার বাবাকে ভালো করে বুঝিয়ে বলতে তিনি রাজি হন অতঃপর দুজনার এঙ্গেজমেন্ট ঠিক করা হয়।

তিশাকে রাগী চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে অনুরাগ বলল,
__”দেখ তুই এমন ভাবে তাকিয়ে আছিস কেন বল? আমি কি জানতাম বৃষ্টি হবে।”
__”আমি তোকে বলেছিলাম আজ নয়, কাল চল কিন্তু তবুও তুই শুনলি’না!”
__”আচ্ছা বাবা সরি আর তোর কথার অবাধ্য হবো না! আই প্রমিজ। আচ্ছা শোন না তুই আমাকে তুমি করে বলবি, আমার নিজেকে কেমন তোর বর বর লাগবে!”

তিশা অনুরাগের কথায় শুনে হেসে দিল,তারা একসাথে পাঁচ বছরে বেশী আছে অনুরাগ তাকে প্রোপোজ করেছিল ক্লাস ইলেভেনে, তিশা তাকে অনেক দিন আগে থেকেই পছন্দ করত, অদ্ভুতভাবে অনুরাগ শুধু তিশার কথাই শুনত। না হয় অনুর সাথে সেও সারাক্ষণ মানুষকে বিরক্ত করতো, তিশা বরাবরই শান্ত’ স্বভাবের মেয়ে সে অনু আর অনুরাগ কে একা হাতেই সামলে এসেছে,এতো বছরের অভ্যাস অনুরাগ কে তুই করে বলার, এখন তুমি করে বলতে বেশ অসুবিধা হবে তার, তবুও সে চেষ্টা করবে।

তিশা অনুরাগের দিকে তাকালো,তারা একটা ছোট্ট চায়ের টং এর ঝাউনি তে দাঁড়িয়ে আছে, রাস্তা শুনশান, ছোট্ট ল্যাম্প জ্বলছে তার লালচে আলোয় অনুরাগের মুখে চঞ্চলতা প্রকাশ পাচ্ছে। সে এক হাতে ঝাংরা চুলে আঙ্গুল চালিয়ে আশেপাশে দেখছে, তিশা কি মনে করে এগিয়ে গিয়ে অনুরাগের চুল অগোছালো করে হাসলো, অনুরাগ ভ্রু কুঁচকে তাকালো,সে তিশা কে হাসতে দেখে নিজেও হেসে দিল। অতঃপর তিশার হাত টেনে ফাঁকা ঘাস যুক্ত মাঠে দৌড় দিল, তিশা হতভম্ব হলো। ক্ষিন প্রহর অতিক্রম হতে তারা মাঠের মাঝখানে পৌঁছাল ,তিশা হেসে বাম হাত বাড়িয়ে ছুঁইয়ে দিল বৃষ্টির ফোঁটা, অনুরাগ সে হাসি দেখে গাইতে লাগলো,

রিমঝিম এ ধারাতে চায় মন হারাতে,
রিমঝিম এ ধারাতে চায় মন হারাতে,

এই ভালোবাসাতে আমাকে ভাসাতে,

এলো মেঘ যে এলো ঘিরে,
বৃষ্টি সুরে সুরে সোনায় রাগিনী,

মনে স্বপ্ন এলোমেলো এই কি শুরু হলো,
প্রেমের কাহিনী।

_____

মাঝরাস্তার অরিন্দমের হঠাৎ গাড়ি টায়ার পাংচার হয়ে গিয়েছে। সে অনুকে বসতে বলে নিজে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে, সুনশান রাস্তা দুশারিতে গাছ। এখানে ম্যাকানিক পাবে না, তাই নিজেকেই এখন টায়ার চেঞ্জ করতে হবে।

কিন্তু অনু কি আর বসে থাকার মেয়ে সে সুযোগ বুঝেই গাড়ি থেকে নেমে পড়েছে। অনেকক্ষণ থেকে সুযোগ খুঁজছিল বৃষ্টিতে ভিজবে বলে। মৃন্ময় দের বাড়ি থেকে তারা এক ঘন্টা আগেই বেরিয়ে গিয়েছে। বৃষ্টির এখন প্রায় মুষুলধারে হচ্ছে, এত বেশি বৃষ্টি দেখে সে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারেনি চুপিসারে গাড়ির গেইট খুলে বাহিরে রাস্তায় নেমে পরে, পিছনে উঁকি দিয়ে দেখল অরিন্দম ব্যাস্ত,তাই দেখে নিশব্দে কিছুটা দূরে গিয়ে দুহাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে বিস্তর হাসল সে। অতঃপর নেত্র পল্লব একত্র করে অনুভব করতে লাগলো বৃষ্টির শীতল স্পর্শ, পরনে মেরুন রঙের শাড়ি ভিজে গায়ে লেপ্টে গিয়েছে,সে মন প্রাণ ভরে বৃষ্টির প্রতিটি ফোটা অনুভব করছে।

অরিন্দম পিছনে টায়ার লাগিয়ে সামনে এসে জানালা দিয়ে অনুর সিটের দিকে তাকালো, কিন্তু অনুকে বসে থাকতে না দেখে চমকে উঠল সে, তড়িঘড়ি করে সামনের দিকে এসে দেখল অনু কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ভিজে একাকার হয়ে গিয়েছে, অরিন্দম তাকে ভিজতে দেখে হকচকিয়ে এগিয়ে তার কাছে যেতে লাগল হঠাৎ কি মনে হলো সে থেমে যায়। ক্ষনে তার নেত্র কেমন যেন ঘোরে মধ্যে চলে গেল এই বৃষ্টি কন্যা কে দেখে। বুকে দ্রীম দ্রীম শব্দ সে নিজের কানে শুনতে পেল, ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে অনুর নিকট সে দাঁড়াল, অতঃপর অনুর ভেজা মুখ মন্ডল দুহাতে আকড়ে ধরলো সে।

অনু স্পর্শে চোখ খুলে তাকালো, অরিন্দম কে এত কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পিটপিট করে তাকিয়ে থাকল কিয়ৎক্ষণ, অরিন্দম কেমন ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তার মুখপানে চেয়ে আছে তা দেখে অনুর মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি এলো, সে দু’হাতে সামান্য জল জমিয়ে অরিন্দমের মুখে ছুরে মারলো, অরিন্দম ঝাপটা লেগে ঘোর কাটলো,সে নেত্র বুজে অনুর কাজে হেসে উঠলো। অনু হেসে দু’পা পিছিয়ে আবার দৌড়ে গিয়ে অরিন্দমের গলা জড়িয়ে ধরে দ্রুততার সঙ্গে অরিন্দমের ভেজা দুগালে চুমু দিয়ে হেসে বলল,
__”ইস্ দুষ্টু! এমন ভাবে কেউ তাকিয়ে থাকে!”

অরিন্দম তার কোমর জড়িয়ে ধরে বলল,
__”ইস্ বৃষ্টি কন্যা। এমন ভাবে কেউ ভিজে আবেদনময়ী হয়ে থাকে!”

অনু কথাটা শুনে নিজের দিকে তাকিয়ে নিজের অবস্থা দেখে পিলে চমকে গেল, বৃষ্টিতে ভেজার চোটে ভুলেই গিয়েছিল নিজের অবস্থা। সে ইতস্তত হয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে গেলে অরিন্দম তাকে টেনে ধরে অতঃপর তার ভেজা অধর অনুর ভেজা দুগালে ছুঁয়ে তাকে উঁচু করে তুলে ধরে বলল,

“আমিই তো,এতো লজ্জা কিসের?”

অনু লাজুক হাসে, দুহাতে অরিন্দমের কাঁধে ভর দিয়ে আর ও হেসে ওঠে। অরিন্দম তাকে নিয়ে ঘুরপাক দিতে লাগল,অনু তার কাজে খিলখিল করে হেসে উঠলো, অরিন্দম ও হাসলো! প্রানখুলে হাসলো। অতঃপর গলা ছেড়ে গেয়ে উঠলো,

‘আগে কত বৃষ্টি যে দেখেছি শ্রাবণে,
জাগেনি তো এত আশা,
ভালোবাসা এ মনে

সে বৃষ্টি ভেজা পায়ে সামনে এলে হায় ফোটে কামিনী,
আজ ভিজতে ভালো লাগে শূন্য মনে জাগে প্রেমের কাহিনী..!

#চলবে

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here