ছন্দহীন পদ্য
.
পর্ব_১৬
.
আফরার হতভম্ব ভাব কাটার পর তাড়াতাড়ি রুমে গিয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে নাঈমকে কল দেয়। দু’বার রিং হয়ে কেটে এলো। ধরছে না কেন কে জানে। আফরার কেমন ভয় করছে। অনিক হঠাৎ এমন অদ্ভুত আচরণ করবে কেন! কি হয়েছে ছেলেটার। খানিক ভেবে সে কল দিল শাশুড়ি সুফিয়া বেগমের কাছে। রিসিভ হতেই সালাম দিয়ে বললো, ‘আম্মা কেমন আছেন?’
– ‘ভালো, তোমরা কেমন আছো?’
– ‘ভালো আছি আম্মা, কিন্তু একটা কথা বলতে কল দিয়েছি। আসলে হয়েছে কি। নাঈম তো বাইরে, ইভাও বাইরে..।’
তিনি থামিয়ে দিয়ে বললেন,
– ‘এই মেয়ে, তোমার মা-বাপ কোনো আদব-কায়দা শিখায় নাই? স্বামীর নাম ধরো কেন! এইটা কেমন খাসলত?’
আফরা শুকনো ঢোক গিলে আমতা-আমতা করে বললো, ‘আচ্ছা আম্মা আগে শুনুন। অনিক কেমন যেন করছে। আর কেউ বাসাও নাই। খালি বাসা তাই কল দিছি আপনাকে..।
তিনি আবার থামিয়ে দিয়ে বললেন,
– ‘কি, কি বলতাছো? খালি বাসায় তোমারে কি করছে? এত মিনমিন না কইরা গলা ঝাইড়া বলো। হাপাইতাছো কেন?’
– ‘আম্মা, আমি বলতে চাইছি বাসায় আমি একা। অনিক বাইরে চলে গেছে। আমার সাথেও কেমন করে যেন কথা বলেছে। মনে হচ্ছে পাগল হয়ে গেছে।’
– ‘কি বলতাছো এইসব? পাগল হয়ে গেছে মানে?’
– ‘হ্যাঁ আম্মা, অফিসের জন্য রেডি হয়েছিল। হঠাৎ ওর বাথরুমে পানির শব্দ শুনে ছুটে গিয়ে দেখি ট্যাপের নিচে মাথা। বিছানায় সিগারেট চিবিয়ে খেয়ে ফেলেছে। এখন বাইরে গেছে৷ কোনো অসুবিধা হবে কি-না বুঝতে পারছি না আম্মা।’
তিনি আফরাকে লাইনে রেখে অস্থির হয়ে বললেন ‘এই অনিকের বাপ শুনছো, এইদিকে আসো, অনিক না-কি পাগল হইয়া গেছে, বউমা এগুলো কি বল..।’
আফরা শ্বশুরের কথা শুনতে পেল। ওপাশে তিনি ধমক দিয়ে বলছেন, ‘এত অস্থির হচ্ছ কেন? কি হয়েছে? দাও তো ফোন আমার কাছে দাও।’
তিনি ‘হ্যালো’ বলতেই আফরা সালাম দিল। মিরাজুল ইসলাম জবাব দিয়ে শান্ত গলায় বললেন, ‘বউমা কি হয়েছে বলো তো।’
– ‘আব্বা, অনিক হঠাৎ কেমন যেন করছে। মনে হচ্ছে পাগল হয়ে গেছে।’
– ‘কি করছে?’
– ‘ভোরে অফিসের কাপড় পরে নাশতা করলো৷ ওর ভাই অফিসে চলে গেছে। আমি ভাবছি সেও চলে গেছে। কিন্তু হঠাৎ ওর বাথরুমে মনে হলো পানির শব্দ। আমি গিয়ে দেখি ট্যাপের নিচে মাথা ধরে আছে। আমার সঙ্গেও কিরকম বাজে ব্যবহার করেছে। সিগারেটে চিবিয়ে বিছানায় ফেলেছে। মানে কি বলবো আব্বা। আমার ভয় লাগছে।’
তিনি আগের মতোই স্বাভাবিক গলায় বললেন,
– ‘ও আচ্ছা, খাবার টেবিলে কি নিয়ে আলোচনা হইছে?’
– ‘কিছুই না।’
– ‘আহা একেবারে কথা না বলে তো নাশতা করোনি।’
– ‘ওইতো নাঈম শুধু বলেছে আপনাদের ওখানে অনিকের কোন আপু না কার যে বিয়ে লাগছে সেটা। তারপর তো সে খেয়ে রুমে চলে গেল। আর কোনো কথা হয়নি। আমার মনে হয় আব্বা, ও পাগল হয়ে গেছে। এখন বাইরে গেছে। নাঈমও কল রিসিভ করেনি৷ ও এলে কি অনিককে গ্রামে পাঠিয়ে দেবো? এখানে রাস্তায় গিয়ে গাড়ি-টাড়ির নিচে পড়লে তো বিপদ।’
– ‘এত অস্থির হইয়ো না তো মা। পাগল হবে কেন? মানুষ কোনো কারণে রাগলে কি ভাংচুর করে না?’
– ‘ব্যাপারটা সেরকম না আব্বা। আমার সাথেও কিরকম রেগে কথা বলেছে৷ কিন্তু কেউ তো তার সাথে রাগারাগির মতো কিছু করেনি।’
– ‘এগুলো এত* ভেবো না। ধরো অফিস থেকে কোনো কল এসেছে। রাগারাগি করেছে৷ রাগে মানুষ দেয়ালে ঘু*সিও মারে। সিগারেট চিবিয়েছে সেরকম। তুমি পারলে দরজা লাগিয়ে রিকশা নিয়ে ওর সঙ্গে যাও। রাগারাগি না করে সঙ্গ দাও। বাসায় নিয়ে আসো। ঠিক হয়ে যাবে। আর ইভা মেয়েকে বলো বাইরে ঘুরতে নিয়ে যেতে। এত ভয় পেও না। পাগল হয়ে যায়নি।’
– ‘কিন্তু..।’
থামিয়ে দিলেন মিরাজুল ইসলাম৷ ‘কিন্তু কিন্তু কিছু না বউমা। যাও, ধরো রেগেছে কোনো কারণে৷ এখন সুন্দরভাবে শান্ত করে যেভাবে মানুষকে। সেভাবে করো। মানুষ অধিক দুঃখ কষ্টের সময় অথবা রেগে গেলেও অনেক সময় পা*গলের মতো আচরণ করে। বুঝতে পারছো? যাও গিয়ে দেখো কোথায় গেছে। ওকে একা ছেড়ো না।’
– ‘আব্বা ওর রাগ-দুঃখের কিছু কি ঘটছে? আমাকে বলা যাবে? মনে হচ্ছে আপনি কিছু জানেন?’
– ‘এত কথা বলো না তো বউমা। যাও তো। দেখো কোথায় গেছে। আর শোনো, গ্রামে পাঠানোর চিন্তা করো না৷ ওকে বাসায়ই রাখো। বুঝেছো?’
আফরা কিছুই বোঝেনি। তবুও বললো, ‘আচ্ছা আব্বা।’
তারপর মোবাইল হাতে নিয়ে অনিককে কল দিতে দিতে দরজা বন্ধ করে বাইরে এলো। অনিক কল রিসিভ করছে না। রাস্তায় এসে চারদিকে তাকাচ্ছে কোথাও দেখা যায় না। হঠাৎ দূরে ফুটপাতে সেলুনের দোকানের সামনে দেখে দু’জন লোক দাড়িয়ে আছে। রিকশা সামনে থাকায় নিচে কে বসা দেখা যাচ্ছে না। কেন যেন মনে হচ্ছিল অনিক মাথা ঘুরে পড়েছে হয়তো। সে রাস্তা পার হয়ে তাড়াতাড়ি ছুটে গেল সেদিকে। হ্যাঁ দুই হাতে হাঁটুতে ভর দিয়ে অনিকক বমি করছে। কাছে গিয়ে সে কাঁধে হাত রেখে বললো,
– ‘কি হয়েছে অনিক?’
রিকশাচালক আফরাকে দেখে বললো, ‘ম্যাডাম আপনে উনার কি হন?’
– ‘ভাবি।’
– ‘তাইলে দেখুন উনাকে। আমি যাই। রিকশায় উইটা হঠাৎ বললেন রাস্তার পাশে দাঁড় করাতে। আইনা রাখতেই বমি শুরু করছেন।’
– ‘ও আচ্ছা, তাহলে এক কাজ করুন। আমাদেরকে বাসার সামনে দিয়ে আসুন। অনিক উঠো।’
আফরা তাকে ধরে রিকাশায় তুলে। রিকশাওয়ালা গেইটের সামনে নামিয়ে দিল তাদের। আফরা অনিককে নিয়ে নেমে বললো, ‘ভাই আপনি দাঁড়ান আমি ভাড়া দিচ্ছি এনে।’
অনিক দুর্বল গলায় বললো, ‘আমি দিচ্ছি’ বলে পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে টাকা দিল। রিকশাওয়ালা চলে গেল। আফরা তার হাত ধরে বাসার ভেতরে নিয়ে এসে তোয়ালে বাড়িয়ে দিয়ে বললো, ‘বাথরুমে গিয়ে কাপড় ছাড়ো।’
– ‘আগে খাওয়ার পানি দাও ভাবি।’
অনিক বাথরুমে গিয়ে কুলি করে মুখ ধুয়ে বের হয়ে আসে৷ আফরা গ্লাসে পানি ঢেলে দিল। অনিক এক চুমুকে পানি খেয়ে গ্লাস বাড়িয়ে রাখলো টেবিলে। আফরা তাড়া দিয়ে বললো,
– ‘যাও ফ্রেশ হয়ে আসো। আমি বিছানা চেঞ্জ করে দিচ্ছি।’
অনিক তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে গিয়ে পরনের কাপড় পালটে এসে শর্ট প্যান্ট আর গেঞ্জি পরে চেয়ারে বসে একটা সিগারেট ধরালো। আফরা নতুন বিছানা চাদর বিছিয়ে দিয়ে আগেরটা বাথরুমে রেখে এসে বিছানায় বসে বললো, ‘এখন কি ঠিক আছো?’
অনিক ম্লানমুখে বললো, ‘হ্যাঁ ঠিক আছি।’
– ‘কোনো অসুবিধা না থাকলে ভাবিকে বলো তো কি হয়েছে। কাউকে কিছু না বললে কি সমাধান হবে?’
– ‘কিছু হয়নি।’
– ‘না হলে এরকম আচরণ করছো কেন? আমার সাথেও বা এরকম কথা বলার কারণ কি?’
– ‘ভাবি আবার বিরক্ত করতে শুরু করেছো।’
আফরা উঠে গিয়ে ওর মাথায় হাত রেখে বললো, ‘আরে বোকা রেগে যাচ্ছ কেন? বলো কি হয়েছে। এরকম করছো যেহেতু, কিছু একটা তো আছে। আমি দেখি সাহায্য করতে পারি কি-না। অফিসে কোনো ঝামেলা হয়েছে কি? না লেখালেখি রিলেটেড কোনো প্রব্লেম।’
অনিক সিগারেটে টান না দিয়ে খানিকক্ষণ আফরার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো, ‘এটা সমাধানের মতো বিষয় না।’
আফরা তার থুতনিতে ধরে মুখ তুলে বললো, ‘না থাকলেও ভাবিকে বলো। একা একা টেনশন না করে কাউকে বললে ভালো। তুমি তো বিবাহিত না যে বউকে বলবে। তোমার যেকোনো সমস্যা তো বন্ধু-বান্ধব বা ফ্যামিলির কারও সাথে শেয়ার করতে হবে, তাই না?’
অনিক সিগারেটে লম্বা একটা টান দিয়ে বললো, ‘একটা মেয়েকে ভালোবাসি, তার বিয়ে ঠিক হয়েছে।’
আফরা বিস্মিত হয়ে বললো, ‘হোয়াট! তুমি একটা মেয়েকে ভালোবাসো? কখনও বলোনি তো। কে সেই মেয়ে?’
– ‘তা জানার তো দরকার নাই।’
– ‘সকালে যে একটা মেয়ে কথা শুনলাম সে তো তোমার আপু বললো নাঈম। আর কার বিয়ে ঠিক হয়েছে? মানে বুঝতে পারছি না কিছু।’
– ‘বুঝে কি হবে? কোনো লাভ নাই।’
– ‘আচ্ছা বুঝলাম কোন মেয়ে জেনে কাজ নাই৷ কিন্তু তুমি এরকম পাগলামি না করে মেয়েটিকে বলো ভালোবাসার কথা।’
– ‘মেয়েটি ভালোবাসে না আমাকে। সেটা কয়েক বছর আগেই বলে দিয়েছে।’
– ‘তবুও তুমি এতই যেহেতু পাগল। মেয়েটিকে আবার বুঝিয়ে বলো। না হয় আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দাও। আমি বলি।’
– ‘বলে লাভ নেই। মেয়ে রাজি হবে না। হলেও ওর পরিবার বা তোমরা কেউই মানবে না।’
– ‘কেন মানবো না আমরা? মেয়ে অন্য ধর্মের না-কি?’
– ‘এত কথা জেনে কি হবে ভাবি?’
– ‘আরে পাগল, মেয়েটি তোমাকে ভালোবাসে কি-না আগে জিজ্ঞেস করো। শেষবার বুঝিয়ে বলো। মেয়ে ঠিক থাকলে। আমি তোমার ভাইকে রাজি করাবো। আমরা দু’জন বুঝিয়ে বলবো আব্বা-আম্মাকে। মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেলে আর কিছু তো করার থাকবে না।’
অনিক চুপচাপ বসে থেকে হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বললো, ‘তুমি ঠিকই বলেছো ভাবি। আমার শেষবার কথা বলে নেয়া দরকার।’ তারপর তাড়াতাড়ি তোয়ালে প্যাঁচিয়ে শর্ট প্যান্ট খুলে জিন্স পরে, সেটার পরর গেঞ্জি পরে নিল সে।
আফরা ‘হা’ করে তাকিয়ে থেকে বললো, ‘এখন কি তুমি ওই মেয়ের কাছে যাচ্ছ?’
– ‘হ্যাঁ ভাবি।’
– ‘কোথায় সে? আমাকে নিয়ে যাও না হয়। মেয়েটা আসলে কে?’
অনিক মানিব্যাগ মোবাইল নিয়ে বললো, ‘কে জেনে কি করবে তুমি?’
– ‘তুমি পাগলের মতো আচরণ না করে আমাকে সব বলো অনিক। আমি তো বলেছি সাহায্য করবো।
‘তোমার সাহায্যের কিছু নাই’ বলে চলে যাচ্ছিল। আফরা তার হাত ধরে আঁটকে বললো, ‘তুমি ওই মেয়ের সাথে ফোনে কথা বলতে তো পারো, বিয়ে ঠিক হয়েছে বলছো মেয়ের। তাকে বলার মতো সুযোগ পাবে কোথায়? আর তোমার তো আচরণ এখন পাগলের মতো লাগছে। কি থেকে কি করবে তারই তো ঠিক নাই।’
অনিক দাঁড়িয়ে থেকে খানিকক্ষণ ভেবে বললো, ‘ও হ্যাঁ, তোমার মোবাইল দিয়ে কল দেই।’
– ‘তোমার মোবাইল দিয়ে দিলে কি হবে?’
– ‘সবকিছুতে ব্লক দিয়ে রেখেছে।’
– ‘আশ্চর্য! কোন নবাবের মেয়ে সে বুঝলাম না তো অনিক।’
– ‘এত কথা না বলে মোবাইল দাও।’
আফরা ওর ফোন দিল অনিকের কাছে। সে পদ্যের নাম্বার তুলে বেলকনিতে এসে কল দিল। দুইবার রিং হতেই রিসিভ করে পদ্য সালাম দিয়ে বললো, ‘কে বলছেন?’
অনিক যেন থমকে গেল ওর সুরেলা মিষ্টি কণ্ঠ শুনে। সে দেয়ালে হেলান দিয়ে নিজেকে শান্ত রেখে বললো, ‘আমি অনিক বলছি, তুমি কি এখন ফ্রি আছো? কিছু কথা ছিল আমার।’
ওপাশ থেকে কোনো জবাব এলো না। নিঃশব্দে ক্ষীণ সময় কেটে গেল ক্ষীণ। অনিক আবার বললো,
– ‘পদ্য, হ্যালো শুনছো?’
কলটা কেটে গেল তখনই। অনিক অস্থির হয়ে আবার কল দিল। কেটে দিল পদ্য। তারপর আর কলই ঢুকলো না। অনিক বুঝতে পারছে এই নাম্বারও ব্লক করে দিয়েছে। সে রুমে ফিরে এসে চেয়ারে বসে। আফরা বিছানা থেকে উঠে এসে বললো, ‘কি হলো? কথা বলেছে?’
সে বসা থেকে উঠে ওর দিকে মোবাইল বাড়িয়ে দিয়ে বললো, ‘আচ্ছা আমি যাচ্ছি।’
সে পিছু যেতে যেতে বললো,
– ‘আরে কি হলো, মেয়েটির সাথে কি কথা হয়েছে?’
‘না, কল কেটে দিয়েছে’ বলেই অনিক দরজা খুলে বের হয়ে গেল।
.
__চলবে….
লেখা: জবরুল ইসলামছন্দহীন পদ্য
.
পর্ব_১৭
.
অনিক বাসের জানালার কাছে বসা। বুকে হাত বেঁধে বাইরে তাকিয়ে আছে সে। সবুজ মাঠ, রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি গাছ, বন্ধ দোকান, বাজার আর কোলাহলপূর্ণ একের পর এক স্টেশন পেছনে ফেলে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বাস। অনিকের উদাস চাহনি, সেসবের কিছুই দেখছে না সে। বারংবার মনে হচ্ছে এবার বুঝি সত্যিই সবকিছু শেষ হতে চলেছে! পদ্য নামের পদ্মফুলটি কি শেষপর্যন্ত অন্য কারও হয়েই যাবে? সেবার বুকভরা অভিমান নিয়ে গ্রাম থেকে চলে এসেছিল। মাঝে মাঝে মনে হতো পদ্য নিজে থেকেই হয়তো তাকে একদিন আনব্লক করে মেসেজ দেবে। আচমকা একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখবে পদ্যের মেসেজ, ‘অনিক, কি খবর তোমার? বাড়িতেই আসা ছেড়ে দিয়েছো দেখছি। এত রাগ করা কবে থেকে শিখেছো বলো তো অনিক! এবার মেলার আগে আসবে তো? মেলায় এত মানুষ হয়। এত কোলাহল। বয়স হওয়ায় আব্বা যেতে ভয় পান। আমি এখন কাকে নিয়ে যাই বলো তো? গেলবারও যেতে পারিনি। তুমিও মেয়েদের মতো অভিমান করে শহরে গিয়ে বসে আছো। এবার মেলার আগে এসো প্লিজ। দু’জন মিলে যাব। জানি আমরা আগের সেই ছোট্ট বাচ্চাটি নই। মেলায় গিয়ে পে-পে বাঁশি কিনে বাজাবো না আর। তবুও তো যেতে ইচ্ছা করে। অতীতে, শৈশবে ফেরার পথ বলতে তো এগুলোই। তাই না বলো?’
এসব তার কেবলই ভাবনায় থেকে গেল।
পদ্যের থেকে এমন কোনো মেসেজ কোনোদিন আসেনি। মাঝে মাঝে মনে হয় একজন নারী এত নির্দয় কিভাবে হয়! সে একটা ছেলেকে চূড়ান্ত অপমান করলো। ছেলেটা তার কারণেই অভিমান করে বাড়ি যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। সেই ছেলেটির জন্য একটা দিনও পদ্যের মন খারাপ হবে না? কখনও কি সে গান শুনে না? বিষণ্ণ কোনো এক দুপুরে কি তাদের বাড়ির আশেপাশে কাক ‘কা-কা’ করে উড়ে যায় না? এই বৈচিত্র্যময় পৃথিবীতে কি অন্যের জন্য একটুখানি মন খারাপ হওয়ার মতো কোনো উপাদান নেই? গ্রামগঞ্জে কি আজকাল কেউই বাঁশি বাজায় না? এগুলো তো মন খারাপ হওয়ার কোনো কারণ ছাড়াও মন খারাপ করে দেয় বলে সে জানতো। তার সকল জানা কেন এই নিষ্ঠুর নারীটির বেলায় ভুল প্রমাণিত হয়?
তবুও অনিক সবকিছু ভুলে একবার ঈদে গ্রামে গিয়েছিল। সেবারও নিষ্ঠুরতার চূড়ান্ত করেছিল পদ্য। হৃদয়হীন এই মেয়েটি একবারও তাদের দেখতে আসেনি। তার নতুন ভাবিকেও না৷ কি আশ্চর্য! গ্রামের এসব অঘোষিত নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা করেনি পদ্য। অথচ বয়সে ছোট ছেলের সঙ্গে প্রেম না করার সামাজিক নিয়ম সে হাড়েহাড়ে পালন করেছে। কেন! এই মেয়েটির কিছুই সে বুঝতে পারে না কেন? যা সে ভাবে তার ধারেকাছেও নেই কেন মেয়েটি? মানুষের মনস্তত্ত্ব বুঝতে পারা নিয়ে ভেতরে ভেতরে তার অনেক অহম আছে বটে, কিন্ত পদ্যের কথা ভাবলেই সেই অহম নিয়ে লজ্জিত হতে হয়।
সেবারও অনিক ভেবেছিল এতদিন পরে বাড়িতে যাচ্ছে। পদ্য এসে দেখা করবে৷ সে একটু ভারী-ভারী থাকার চেষ্টা করবে। অথচ মেয়েটি ঘর থেকেই বের হয়নি। একটিবার দেখার জন্য ভীষণ ইচ্ছা করছিল তার। তাও দেখতে পায়নি। না দেখেই ফিরে আসতে হয়েছিল। তবে সেবার একটা বিষয় মায়ের কাছে জানতে পারে। পদ্য না-কি বিয়ে করতে চায় না। বিয়ে করবে না। ব্যাপারটা অবিশ্বাস্য লেগেছিল তার কাছে। একটা মেয়ে বিয়ে না করে থাকতে পারবে? ছেলেদের জন্যই তো কঠিন। তবে শেষপর্যন্ত মনে হয়েছিল এই মেয়ে দ্বারা সবই সম্ভব। তাছাড়া ওর কোনো ভাই নেই। পরিবারে একমাত্র সেইই উপার্জন করে। সব মিলিয়ে পরিবারের প্রয়োজনে হলেও পদ্য বিয়ে না করে আরও বহু বছর থাকতে পারবে। পদ্য বিয়ে করতে চায় না শোনার পর কেমন যেন ভালো লেগেছিল তার। কেন বিয়ে করবে না? পরিবারের জন্য হয়তো।
মাঝে মাঝে মনে হতো তার জন্যই বোধহয় বিয়ে করবে না। ভাবতে ভীষণ ভালোই লাগতো। অনিক এই সুযোগটা নিতে চেয়েছিল। রাগ, অভিমান, অপমান ছাড়াও তার মনে হয়েছিল আরও দীর্ঘ কয়েক বছর গ্রামে যাবে না৷ পদ্যের সঙ্গে যোগাযোগ করবে না। তাতে পদ্যের ভেতরের অস্বস্তি কেটে যাবে। যখন দেখবে সেই ছোটবেলার অনিক শরীরে-মননে অন্যকেউ হয়ে উঠেছে। অনাবিষ্কৃত এক অচেনা পুরুষ। চিরচেনা সেই ‘আপু-আপু’ করে ডাকা বালক এ নয়। তখন পদ্যের মনে ভিন্ন অনুভূতি তৈরি হতে পারে৷ কিন্তু সারাক্ষণ লেগে থাকলে ওর দৃষ্টিতে সেই ছোট্ট অনিক থেকে যাবে সে। আশেপাশের মানুষও কিছুটা ভুলে যেতে পারে তার ‘আপু’ ডাক। অনিক জানে না তার এসব চিন্তা-ভাবনা কতটুকু যুক্তি-সঙ্গত ছিল কিংবা কতটা কার্যকরী। তবুও পদ্যের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে৷ বারবার প্রত্যাখ্যান হয়ে, অপমান অপদস্ত হয়ে। শেষপর্যন্ত বাড়ি না যাওয়ারই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সে।
অনার্স শেষ করে তার ইচ্ছা ছিল লেখালেখি করে কিছু একটা করবে। জব নেয়নি পুরোপুরি লেখায় সময় দেয়ার জন্য। নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করে আবার পদ্যের সামনে গিয়ে দাঁড়াবে। বিয়ে করতে চাইবে। সেই সিদ্ধান্ত থেকেও সরে এসেছিল লেখালেখির বাস্তবতা বুঝতে পেরে। তাই জব নিয়ে নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে ভেবেছিল আগামী বছরই বাড়িতে আসবে। পদ্যের সঙ্গে নতুনভাবে কথা বলবে। তাকে রাজি করে বাড়িতে বলবে৷ তাতেও যে একটা ঝড়ের ভেতর দিয়ে যেতে হবে অনিক জানে৷
কিন্তু এগুলোর বাইরে তার কাছে কোনো পথই ছিল না। পদ্য রাজি হলে হয়তো তাকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়া যায়৷ পরিচিত জগত ছেড়ে শহরে গিয়ে থাকা যায়। কিন্তু সে তো রাজিই হচ্ছে না। হলেও পরিবার ছেড়ে পালাবে কি-না তার জানা নেই।
তাই অন্ধকারেই পথ হাতড়ে এগিয়ে যাচ্ছিল। আজ হঠাৎ এটা সে কি শুনছে? পদ্য বিয়ে করে নিচ্ছে? সে কি জানে না আজও অনিক তার জন্য অপেক্ষায় আছে? বাস গন্তব্যে যখন এসেছে তখন জোহরের আজান হয়ে গেছে। অনিক সিএনজিতে উঠে রসুল পুর বাজারে এলো। সেখান থেকে নেমে হেঁটে হেঁটে খেয়াঘাটে আসতেই দু’টা বেজে গেছে। অনিক খেয়া পেরিয়ে এলো। বাড়িতে যাবে না সে। ফোনে কথা বলার সময় আশেপাশে বাচ্চাদের কথা-বার্তা শুনেই বুঝেছিল পদ্য স্কুলে আছে। সে খেয়াঘাটের বেঞ্চে বসে রইল। চেনা-জানা অনেক মানুষের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। কারও দিকেই তাকাচ্ছে না। দু’একটা ভালো-মন্দ জিজ্ঞাসার উত্তর দিচ্ছে কেবল। দীর্ঘ সময় বসে থাকার পর দেখে বাচ্চারা স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছে। মোবাইল বের করে দেখে স্কুল ছুটিরও সময় হয়ে গেছে। অনিক উঠে এগিয়ে গেল রাস্তায়। একটা ছেলেকে জিজ্ঞেস করলো, ‘তোমাদের পদ্য ম্যাডাম কোথায়?’
ছেলেটি আঙুল দিয়ে পেছনে দেখিয়ে বললো, ‘এদিকেই আসবেন।’
অনিক পকেটে হাত পুরে তাল গাছের নিচে দাঁড়িয়ে রইল। প্রচণ্ড পানির পিপাসা পেয়েছে। গলা এমন শুকিয়ে গেল কেন কে জানে! আশেপাশে দোকানও নেই। এক এক করে সকল ছাত্র-ছাত্রী চলে গেছে। পদ্য কোথায়? খানিক পর দেখতে পায় ছাতা হাতে বোরখা-নেকাব পরা একটি মেয়ে আসছে৷ তার দিকেই তাকিয়ে আছে। মেয়েটা কে? চোখ দেখে মনে হচ্ছে পদ্য। মেয়েটি কাছাকাছি এসে নিচের দিকে তাকিয়ে চলে যাচ্ছে৷ অনিক দ্বিধায় পড়ে গেল। পদ্য না-কি অন্যকেউ? পদ্যই তো মনে হচ্ছে৷ তাহলে তাকে দেখে এভাবে চলে যাচ্ছে কেন? অনিক খানিকটা দ্বিধা নিয়ে পিছু পিছু গিয়ে বললো, ‘তুমি কি পদ্য?’
মেয়েটি মনে হলো জবাব দেবে কি-না দ্বিধা-দ্বন্দে ভুগছে। ক্ষীণ সময় পর রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে নির্লিপ্ত গলায় বললো, ‘হ্যাঁ।’
অনিকের বুকটা দুমড়ে-মুচড়ে উঠে। কি আশ্চর্য! তাকে দেখেও তার পদ্য কথা না বলে চলে যাচ্ছিল? তারই পদ্য? প্রচণ্ড কষ্টে তার বুকটা ফেটে যাচ্ছিল। ছলছল ঝাপসা চোখে এগিয়ে গিয়ে বললো, ‘পদ্য তুমি আমাকে কি চিনতেই পারছো না? অচেনা মানুষের মতো ‘হ্যাঁ’ বলছো। আমি গ্রামে থাকি না। অথচ আজ হঠাৎ রাস্তায় দেখে কথা না বলে চলে যাচ্ছিলে। আমি কি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কোনো গাছ? দেখেও না দেখার মতো কোনো জড়বস্তু?’
– ‘কি জন্য দাঁড় করিয়েছো বলো। আর পদ্য পদ্য করছো কেন বুঝলাম না। আমি তোমার বড়ো। আগে আপু ডাকতে তুমি আমাকে।’
অনিক আহত নয়নে তাকিয়ে থেকে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, ‘পদ্য আমি অতীতের সেগুলো ভুলে গেছি। এখন আমি তো আর ছোট্ট নই। উলটো অপরিচিত যেকেউ দেখলে বলবে আমি তোমার বড়ো। পদ্য তোমার না-কি বিয়ে ঠিক হয়েছে৷ প্লিজ বিয়েটা করো না, ভেঙে দাও। বিয়ে করে ফেললে আর কিছুই করার..।’
পদ্য থামিয়ে দিল তাকে। তারপর নিষ্ঠুরভাবেই বললো, ‘বিয়ে ভেঙে দেবো মানে কি? তোমার সাথে কি আমার প্রেম চলছে? রাস্তায় দাঁড় করিয়ে এসব কথা বলার মানে কি?’
– ‘কলেই বলতে চেয়েছিলাম৷ তুমি কল কেটে দিয়েছো বলে আমি এতদূর এসেছি।’
– ‘তুমি কি বুঝতে পারছো তুমি কত বড়ো থার্ডক্লাস একটা ছেলে? একটা মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে সেটা শুনেই ডিস্টার্ব করতে শুরু করেছো। রাস্তায় দাঁড় করিয়ে বিয়ে ভেঙে দিতে বলছো।’
– ‘পদ্য এভাবে নিচ্ছ কেন ব্যাপারটা। আমি তো ভালোবাসি বলেই এগুলো বলছি।’
– ‘সেটা তুমি বাসো, আমি না৷ তুমি একটা নির্লজ্জ। যাকে আপু ডেকেছো সারাজীবন, তার সাথেই প্রেম করতে চাও।’
– ‘এখানে লজ্জার কি আছে পদ্য। তুমি শুধু আমাকে ভালোবাসো কি-না বলো। আমরা দু’জন রাজি থাকলে এই বিয়েতে কোনো অসুবিধা নেই।’
– ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি না, হয়েছে এবার? আশাকরি এখন আমার পিছে লেগে বিয়ে ভেঙে দেবে না৷ গ্রামে তো এসেছোই মনে হয় বিয়ে ভেঙে দেওয়ার ধান্ধায়। তোমাদের মতো ছেলেদের তো স্বভাবই এটা।’
অনিক বিস্মিত হয়ে গেল। পা থেকে যেন একটা গরম স্রোত উঠলো এসে মাথায়। সে এতই খারাপ ছেলে? আরেকজনের বিয়ে ভেঙে দিতে এসেছে? অনিক বিমর্ষ গলায় বললো, ‘এগুলো কি বলছো পদ্য? আমি তোমার বিয়ে ভেঙে দিতে গ্রামে এসেছি মানে! আমি তো আবার বুঝাতে এসেছি। আমি এখনও বিয়ে করিনি তোমার জন্য৷ ভালোবাসি তোমাকে।এগুলো বলতেই এসেছি। আমি তোমার বিয়ে ভাঙবো কিভাবে?’
– ‘বিয়ে ভাঙবে আমার ব*দনাম ছড়িয়ে দিয়ে৷ এইযে গ্রামে আসছো রাস্তায় বি*রক্ত করছো। লোকজন দেখছে। এভাবে ব*দনাম ছড়াবে আমার। এভাবে না পারলে আমাকে নিয়ে বর পক্ষকে বা*জে কথা বলবে৷ তোমাদের চেনা আছে। না হলে বিয়ের কথা শুনেই এখন তুমি গ্রামে আসবে কেন? তোমার সাথে তো আমার প্রেম নেই। আগেও স্পষ্ট বলেছি, এখনও বললাম।’
অনিক বিমূঢ়, নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তার মুখ থেকে আর কোনো কথাই যেন বের হচ্ছে না। পদ্য ধীরে ধীরে হাঁটতে শুরু করে। হাঁটতে পারছে না। পা যেন অবশ হয়ে যাচ্ছে। শরীর মৃদু কাঁপছে। কান্নায় ভেতর ফেটে যাচ্ছে। গলগল করে চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করেছে৷ শব্দ হলেই অনিক বুঝে যেতে পারে। কোনোভাবেই কান্না আঁটকে রাখতে না পেরে নেকাবের নিচ দিয়ে নিজের হাতটা কামড়ে ধরে দ্রুত হাঁটতে থাকে সে।
অনিক একটা সিগারেট ধরিয়ে ঘন ঘন টানতে লাগলো। চারদিকে মানুষ। খেয়াঘাট থেকে মাঝি ডেকে জিজ্ঞেস করলো যাবে কি-না সে। গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। হাত উঁচু করে জানান দিল যাবে৷ এখনই গ্রাম ছেড়ে চলে যাবে। কারও বিয়ে ভেঙে দেবার মতো ছেলে সে নয়। যে মেয়ে ভালোবাসে না রাস্তাঘাটে তাকে বিরক্ত করার মানসিকতা তার কোনোকালেই ছিল না। একের পর এক সিগারেট টানতে টানতে খেয়া পার হয়ে চলে এলো সে। টালমাটাল হয়ে নদীর চর দিয়ে একা একা হাঁটছে৷ উঠলো এসে একটা রাস্তায়। সবুজ ধানক্ষেতের মাঝখান দিয়ে মেঠো পথ। এই সবকিছুজুড়েই তো তাদের কত-শত স্মৃতি লেপটে আছে। রোজ স্কুলে যাওয়া-আসা হতো এদিক দিয়েই। কতকিছু ছবির মতো চোখে ভেসে উঠছে অনিকের। চোখটা ছলছল করছে। বুকে ভীষণ চাপা একটা কষ্ট। সিগারেটে টান দিতে গিয়ে ঠোঁট কাঁপে। আল ধরে অনেক দূর এসে পিছু ফিরে তাকায়। আহ ওইযে গ্রাম ফেলে এসেছে। নিজের গ্রাম। গাছগাছালি, ঝকঝকে নিল আকাশ, এই যে চোখের সামনে একটা বাছুর গাভীর দুধ খাচ্ছে। এই যে ‘হাম্বা’ বলে ডাকলো গরুটা। এই যে দূর-দূরান্ত থেকে পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে। থেকে থেকে আসছে চাষিদের মেশিনের ডাক৷ এগুলোর সঙ্গে পদ্যের যোগাযোগটা আসলে কি? সবকিছু তাকে এমন করে শুধু পদ্যের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে কেন? রাস্তার পাশের ওই তাল গাছটা দেখা যাচ্ছে। এই রাস্তা দিয়ে পদ্য এখন অবলীলায় হেঁটে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে।
অনিক তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে ধান ক্ষেতের মাঝখানে একটা ছোট্ট আলে বসে গেল। তাকে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড থেকে যেন আড়াল করে নিল সবুজ ধানক্ষেত। দুইহাতে মুখ ঢেকে কান্নায় কেঁপে কেঁপে উঠলো অনিক।
__চলবে….
লেখা: জবরুল ইসলাম