#What_a_হাসবেন্ড
#Tamanna_Tabassum(লেখনীতে)
#পর্ব-৫
দেখতে দেখতে কে’টে গেলো তিন সপ্তাহ। এই কয়েকদিনে ওই মূলা আমার উপর কী যে অ’ত্যা’চা’র তা বলার বাহিরে। সব দোষ ওই হতচ্ছাড়া তেলাপোকার ওইটা না আমার কাছে আসতো আর না সে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করতে পারতো। আমাকে যদি কেউ এসে বলতো,”তোমার যাকে ইচ্ছা তাকে মা’রো” তাহলে আমি এই তেলাপোকার চোদ্দগুষ্টিকে ধ্বং’স করে দিতাম। রুমে এসে দেখলাম জানালার কাছে কী যেন করতেছে সে।
-‘ কী করেন?’
-‘ তোমাকে সায়েস্তা করার প্ল্যান’
-‘😒’
এর সাথে কথা বলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা আমার নাই। আমি শুয়ে পড়লাম। চাদর গায়ে ভালোমতো জড়িয়ে নিলাম, যেন কেউ চাদরে ভাগ বসাতে না পারে 😒। প্যাকেট হয়ে শুয়ে আছি,আর ফ্যানের দিকে তাকায় আছি। ভাবতেছি জীবনটা আমার কী হইয়া গেলো; এমন একটা নিরামিষ, গুরুগম্ভীর, ঝগড়াইট্টা জামাই পাইলাম। এর মধ্যে রস কষ, সিঙ্গারা, বুলবুলি, মস্তক কিছুই নাই। কিছুর থেকে কিছু হলেই তেলাপোকার হুম’কি দেয়। তবে হ্যাঁ, ইদানীং তার মধ্যে আমি অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করছি। কেমন কেমন যেন কেয়ার করে। আবার দেখি ওইদিন আমার জন্য শাড়ি কিনে নিয়ে আসছে। প্রথমে তো ভ’য় পেয়ে গেছিলাম যে ওই শাড়ি দেওয়ার পেছনে কী রহস্য লুকিয়ে আছে? ওনার মাথায় কী চলছে? অনেকক্ষণ ভাবার পরও কিছু বুঝলাম না। শেষে গুগলের সহায়তা নিলাম। সার্চ দিলাম,” নিরামিষ, ঝগড়া’ইট্টা, গম্ভীরমুখো জামাইরা হঠাৎ করে শাড়ি আনার পেছনে কী সত্য লুকিয়ে আছে?”
দেখলাম কতোগুলা আবল-তাবল কীসব যেন আইসা পড়ছে 😒। প্রথমে আসছে, ” আপনার প্রিয়তমাকে খুশি করার জন্য শাড়ি উপহার দিন, এতে তার রাগ ভেঙ্গে যাবে ” মনে তো চাইছে গুগলের মাথা ভেঙ্গে দিই। লিখলাম একটা আর দিলো আরেকটা। আবার অনলাইন থেকে শাড়ি কেমন অর্ডার দিতে হয় এইসব দেখি আইসা পড়ছে। মানে এরা নিজেদের মতো সবাইকে পা’গল মনে করে নাকি? আমি বললাম কী আর দেখাইলো কী! শেষে হতাশ হয়ে সার্চ দেওয়া বাদ দিলাম। এখন তার মনে কী চলতেছে সেটা জানতে হবে। সাহস করে জিজ্ঞেস করে ফেললাম, ” আপনি শাড়ি কেন এনেছেন? ”
-” আমি পরবো তাই”
-” আমার সাথে ত্যাড়া কথা না বললে কী আপনার পেটের ভাত হজম হয় না?”
সে কিছু বলল না। প্যাকেট থেকে শাড়ি বের করে বলল, ” নাও পরে আসো”
আমি বললাম পারি না। সে বলল পারবে। শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি যে কিছুতেই শাড়ি পরবো না। সে আমাকে ধাক্কাচ্ছে। আমিও তাকে ঠেলতেছি, সেও আমাকে ঠেলতেছে। আমাদের ঠেলাঠেলির মধ্যে হঠাৎ কোথা থেকে যেন আমার ননদ এসে হাজির হলো। রুমে এসে দেখলো। ও বড় বড় চোখ করে তাকায় আছে৷ আমি তখন ওনার চেহারায় হাত দিয়ে রাখছি উনি সরানোর চেষ্টা করছে,আর আরেক হাত দিয়ে আমার চুল ধরে টানতেছে। ও অবাক হয়ে বলল, ” ভাইয়া ভাবি তোমরা কী করতেছো? ”
-” দেখিস না আমার শার্ট খা’মচা’য় না’ন্দিবি’নাস করে ফেলছে ”
-” তুমিও তো ভাবির চুল ধরে টানতেছো,ছাড়ো ছিড়ে যাবে তো। ”
তখনই আমার শ্বাশুড়ির কণ্ঠ শোনা গেলো, উনি বোধহয় এইদিকেই আসছে। আমাদের এভাবে দেখে উনি একগাল হেঁসে বললেন, “কিরে তোদের একেকটার এই অবস্থা কেন? ”
আমি ল জ্জায় কিছু বলতে পারলাম না। হঠাৎ উনি বলে উঠলো, ” আম্মু মুন খিচুড়ি খেতে চাচ্ছে, আমি বললাম তুমি বানিয়ে দিবে কিন্তু ও বায়না করছে, বলছে আজ বৃষ্টি হয়েছে তাই ও নিজের হাতে সবার জন্য খিচুড়ি রাঁধবে, আমি এতো মানা করলাম ও শুনলোই না।”
বাট’পারি কাকে বলে? কতোবড় ব জ্জা ত, মিথ্যা’বাদী। আমার শ্বাশুড়ি অবাক হয়ে বলল, ” বউমা বায়না করেছে আর তুই ওকে মানা করছিস, আমাকে আগে বলবি না? মুন তুমি আসো আমি তোমাকে সাহায্য করবো। ” আমার শ্বাশুড়িকে থামিয়ে উনি বলল, ” আরেএ তুমি সাহায্য কেন করবে? ও তো বললই নিজে একা রান্না করবে আজ। শুধু লোক লজ্জায় বলতে পারে নি ”
আমার শ্বাশুড়ি মুখটা ছোট করে বলল, ” ল জ্জা কীসের? আচ্ছা, তাহলে আসো, আমি তো ভাবলাম আজ আলু দিয়ে মুরগী রান্না করবো, সেদিন তোমার মা বলে গিয়েছিল তুমি নাকি তরকারির আলু খুব পছন্দ করো, তাই ভেবেছিলাম মুরগী তরকারির সাথে আলির দম ও করবো। আচ্ছা থাক তাহলে তুমি বরং খিচুড়ি রান্না করো, আমি গরুর মাংস ভিজিয়ে রাখছি। ”
যেতে যেতে বলল,” এখনি রান্না বসিয়ে দাও ১১ টা বেজে গেছে তো ”
আমি কেবলই আহাম্মকের দাঁড়িয়ে রইলাম। ওনার দিকে তাকাতেই উনি বাঁকা হাসলো। আমার রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে। ওনার জন্য আমার আলু খাওয়া হবে না আজ। খিচুড়ি খাবি সরাসরি বললেই হতো৷ এতো রঙ ঢং করার কী আছে? আমি বানিয়ে দিতাম। কিন্তু তুই! তুই আমার আলু খাওয়া ক্যান্সেল করে দিলি। আজ তোর একদিন তো আমার একদিন। এমন খিচুড়ি খাওয়াবো যে আর জীবনে খিচুড়ির নাম মুখে আনবি না। খিচুড়ি রান্না শেষে টেবিলে সবাইকে খাবার বেড়ে দিলাম। উনি নিতে গেলেই থামিয়ে দিলাম। ওনার জন্য স্পেশাল আইটেম আছে বলে রান্না ঘরে আসলাম। আসার সময় দেখলাম আমার শ্বশুর, শ্বাশুড়ি, ননদ মিটিমিটি হাসছে। একটা প্লেটে আগে থেকেই আমি ওনার জন্য রেখে দিসিলাম, কেননা আমার আলুর প্রতিশোধ নিতে হবে৷ প্লেটের খিচুড়িগুলো একটা বাটিতে নিয়ে সেটাতে ইচ্ছামতো, লবন, মরিচ, মেথির গুড়া দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে নিলাম। প্লেট টা নিয়ে ওনার কাছে গেলাম। উনি আমার দিকে ভ্রুঁ কুঁচকে তাকিয়ে আছে। আমি হাসি মুখে প্লেটটা ওনার সামনে রেখে বললাম,” নিন এটা শুধু আপনার জন্য ”
উনি সন্দেহজনক দৃষ্টিতে আমাকে একবার খাবারটাকে একবার দেখলো। এরপর একচামচ মুখে নিলো। আমি ওনার দিকে তাকিয়ে আছি। উনি মুখটা মূলার মতো করে রেখেছে। আমি আমার বত্রিশপাটি দাঁত বের করে হাসলাম। হঠাৎ মুখো ভঙ্গি পালটে গেলো। আমি আশ্চর্য হয়ে ওনাকে দেখছি। উনি খেয়েই চলেছে। এক চামচ, দুই চামচ, তিন চামচ……
খেতে খেতে হঠাৎ বলল, ” আমার জন্য এতো সুন্দর করে রান্না করেছো আমি কী একা একা খেতে পারি? ”
ওনার কথা শুনে আমি আঁতকে উঠলাম। বোকা হেসে বললাম, “একা কোথায়? এইতো আমি একটুপরই খাবো”
-” একটু পর কেন? এখনি খাবে। আমরা খাচ্ছি আর তুমি দাঁড়িয়ে আছো ব্যাপার টা কেমন না? আসো আমার সাথে খাও”
-” না, আপনিই খান😬 ”
-” প্লিজ আসো ”
-” না 😬”
-” আরে আসো ” বলেই উনি চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালো। আমি একটু দূরে দাড়ালাম। উনি কাছে আসছেন। আমার পুরো শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগলো। পরিস্থিতি খুবই ভয়ং’কর রুপ নিলো, আমি দৌড় দিলাম। সেও আমার পেছন পেছন দৌড়ে আসছে আর বলছে, ” প্লিজ মুন খাও, তোমাকে ছাড়া আমি খাবো না। প্লিজ খেয়ে নাও ”
আমি দৌড়াচ্ছি আর বলছি, ” আমাকে ছেড়ে দেন। আমি খাবো না। আর জীবনেও এমন করবো না। ছেড়ে দেন আমাকে প্লিজজজজজজ”
ওদিকে আমার শ্বশুর লজ্জায় টেবিল ছেড়ে চলে গেছে, আমার শ্বাশুড়ি তারাহুরো করে খেয়ে উঠে গেছে, আমার ননদ হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আর আমি উনি এখনো দৌড়াদৌড়ি করছি। উনি বলছে খাও৷ আমি বলছি খাবো না।
প্রায় অনেকক্ষণ পর উনি থামলেন। আমি হাপাচ্ছি। উনিও হাপাচ্ছেন। চামচ রেখে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললেন, ” ঠিকাছে খেতে হবে না, কিন্তু এর বদলে আমার কেনা শাড়িটা পরতে হবে। রাজি?”
আমি মাথা নাড়ালাম যার অর্থ রাজি।
.
.
সন্ধ্যারবেলা,,
শাড়ি পরে আয়নার সামনে তিড়িংবিড়িং করতেছি তখনই উনি রুমে ঢুকলেন। আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো। এরপর আলমারি থেকে একটা ছোট প্যাকেট বের করে আনলেন। প্যাকেট খুলে একজোড়া কানের দুল বের করলেন। আমাকে সেগুলো পরিয়ে দিয়ে বললেন, ” শুনেছি সাগরকে দেখানোর জন্য প্রায়ই ভার্সিটিতে শাড়ি পরে যেতে, তাহলে আমাকে দেখানোর জন্য কী একটু পরবে না?”
আমি ওনার দিকে অবাক হয়ে তাকালাম। উনি আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চলে গেলেন।
_________________
রাতে সবাই বাড়িতে আসলো, কিন্তু উনি আসলো না। আমার শ্বাশুড়ি জিজ্ঞেস করলো, ” হৃদয়, কোথায় মুন?”
মুখ ছোট করে বলেছি শুধু জানি না।
এরপর অনেক রাত করে বাসায় ফিরলেন। শ্বাশুড়ির সাথে কথা বললেন কিন্তু আমার দিকে একটিবারের জন্য ফিরেও তাকালেন না, এরপর রুমে এসে লাইট বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়লেন।
চলবে
(ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কেমন হয়েছে জানাবেন। ধন্যবাদ)|