#What_a_হাসবেন্ড
#Tamanna_Tabassum(লেখনীতে)
#পর্ব-২৩
হৃদয়ের কথা শুনে মুন হাসলো। একটু বেশিই ভালো লেগেছে ওর হৃদয়ের কথাটা। ভালোবাসি বলার সময় ‘ গুলুগুলু আলু বউ ‘ এই কথাটায় অপমা’ন অপমা’ন ভাব আসে না। তাহলে অন্য সময় কেন অপমা’নবোধ হয়?
মুন কিছুক্ষণ ভাবলো। হৃদয় মুনকে ডাকলো।
-‘ মুন’
-‘ হুম ‘
-‘ চুপ কেন?’
-‘ এমনিই ‘
-‘ আলু বললে বেশি মন খা’রাপ হয়?’
-‘ নাহ, এখন আর হয় না। আমি আপনার আলুবউ হয়ে থাকতে চাই ‘
-‘ হুম হুম, আর আমিও আমার বউকে আলু খাইয়ে আলুবউ বানাতে চাই ‘
-‘ এই আমি আর মোটা হতে চাই না 😐 ‘
-‘ আচ্ছা মোটা হতে হবে না। আলু হলেই হবে। আলু আপনার অপছন্দ তাই না?’
-‘ আগে ছিলো ‘
-‘ আর এখন? ‘
-‘ আমার বউই তো আলু! এখন আলু অপছন্দ করি কী করে?’
-‘ ওও এই ব্যাপার 😒, আমি তো ভাবছিলাম আমি পছন্দ করি দেখে আপনিও করেন। এখন দেখছি অন্য ব্যাপার। আপনি আমাকে আশাহত করলেন।’
-‘ কী করলাম এখন? ‘
-‘ আপনার বলা উচিৎ ছিলো তোমার আলু পছন্দ তাই আমারও আলু পছন্দ, তোমার পছন্দ তাই আমি আলুর ছিলকাও খাই ‘
-‘ আলুর ছিলকা আমি একদমই খাই না ‘
-‘ সে তো আমিও খাই না। বউয়ের সাথে প্রেম করার সময় একটু একটু এইগুলো বলতে হয়। ‘
-‘ তাই বলে ছিলকা?’
-‘ হ্যাঁ! দরকার হলে ছিলকাও খাবেন।’
-‘ আচ্ছা খাবো, এখন এখান থেকে চলো। ‘
-‘ চলুন ‘
_________
বিকেলের দিকে হৃদয়ের বাবা তার স্ত্রীকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলেন। শরীরটা ওনার হঠাৎ করেই খা’রাপ হয়ে গেয়েছে। হৃদির সামনে পরিক্ষা! তাই দরজা লাগিয়ে ধুমসে পড়তেছে। হৃদয় আর মুন ওদের রুমে বো’বার মতো বসে আছে। সারাদিন ওদের সবকিছু ঠিকঠাকই ছিলো, পরিবেশ শান্ত হওয়ার সাথে সাথে ওরাও শান্ত হয়ে গেছে। হৃদয় সোফায় বসে চা খাচ্ছে। চা টা মুন বানিয়ে দিয়েছে। বাবা মা চলে যাওয়ার পর হৃদয় বলেছিলো চা বানাতে। এখন সেই চা-ই খাচ্ছে। খুব মনোযোগ দিয়ে খাচ্ছে। আর মুন খাটের এক কোণে বালিশে হেলান দিয়ে বসে আছে। আনমনে বসে কী যেন ভাবছে। মেয়েটা ইদানীং একটু বেশিই ভাবে। তার সব ভাবনা হয়তো এই হৃদয়কে নিয়েই। মুন হঠাৎই খাটের কিণারে বসলো। হৃদয়ের দিকে তাকালো। হৃদয় তখনও চা খাচ্ছে। হৃদয়ের কাছে গিয়ে বলল,
-‘ খালি কাপ নিয়ে আর কতক্ষণ বসে থাকবেন?’
মুনের কথা শুনে হৃদয় কাপের দিকে তাকালো। সত্যিই তো সে খালি কাপে চুমুক দিয়ে যাচ্ছে। মুন আবার বলল,
-‘ কাপ এবার রাখবেন? নাকি হামানদিস্তা দিয়ে গুড়ো করে সেটা দিয়ে চা বানিয়ে দিবো? ‘
-‘ না নিয়ে যাও ‘
মুন মুখ ভেঙচি দিয়ে কাপ নিয়ে চলে গেলো। দরজা পর্যন্ত গিয়ে আবারও ফিরে আসলো।
-‘ আরেক কাপ বানিয়ে দিবো? না মানে চা টা কী একটু বেশিই মজা হয়েছে? ‘
-‘ হ্যাঁ? ও দাও ‘
-‘ এতো কী ভাবেন?’
-‘ কই কিছু ভাবি নি তো ‘
-‘ আচ্ছা বানিয়ে আনছি। ‘
কথাটা বলে মুন রান্নাঘরে চলে গেলো৷ চুলায় পানি বসিয়ে চা-পাতি খুজতে লাগলো। পুরো রান্নাঘর খুঁজেও পেলো না। শেষমেশ হৃদয়কে ডাক দিলো। হৃদয় এসেও খুজলো, কিন্তু পেলো না।
-‘ একটু আগেই তো চা বানালে, চা-পাতির বয়াম টা কোথায় রেখেছো? ‘
-‘ মনে নেই! ‘
হৃদয় হতাশ দৃষ্টিতে মুনের দিকে তাকালো। মাথা নিচু করে চুলার নিচে খুজলো। হৃদয়কে চুলার নিচে খুজতে দেখে মুন বলল, ‘ চা-পাতি খুজতে বলেছি নুসনি খুজতে বলিনি ‘
-‘ আমি নুসনি খুজি না চা-পাতিই খুজতেছি। তোমার উপর বিশ্বাস নাই চুলার নিচেও রাখতে পারো। ‘
-‘ হ্যাঁ হ্যাঁ আমাকে কেন বিশ্বাস করবেন? পৃথিবীর বুক থেকে তো বিশ্বাস উঠে গেসে। ‘
-‘ ঢঙের কথা না বলে বয়াম খুজো। ‘
-‘ এইখানেই তো রেখেছিলাম, হঠাৎ করে চা-পাতির ডিব্বা টা কোথায় গেলো? ‘
-‘ এইতো হলুদ মরিচের সাথে ( চা-পাতির বয়ামটা হাতে নিয়ে)
-‘ কই কই, আমাকে দেন। পানি শুকায় যাচ্ছে। ‘
হৃদয় মুনের হাতে বয়ামটা দিয়ে রান্নাঘর থেকে এসে পড়লো। ও আসতেই হঠাৎ কারেন্ট চলে গেলো। মুন রান্নাঘর থেকে ‘ হাসব্যান্ড ‘ বলে চিৎকার দিলো। হৃদি ওর থেকেও ‘ ভাইয়া’ বলে চিৎকার দিলো। ওদিকে হৃদয় ডাইনিং রুমে অন্ধকারে একা একা দাঁড়িয়ে ভাবছে কার কাছে আগে যাবে। একদিকে বোন আরেকদিকে বউ, দুইটাই তো ভীতু। হৃদয় তাড়াতাড়ি রুম থেকে দুইটা মোমবাতি জ্বালালো। হৃদি চিল্লাতে চিল্লাতে ডাইনিং রুমে এসে পড়েছি। কিন্তু মুন এখনো রান্নাঘরেই আছে। ওখানে থেকে ‘ জামাই ‘ ‘ জামাই’ করছে। হৃদয় হৃদির হাতে মোমবাতি দিয়ে দৌড়ে মুনের কাছে আসলো। মুন দুইহাত দিয়ে মুখ ঢেকে খা’ম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছে। হৃদয় এসে বলল, ‘ এইতো এসে গেছি। রুমে চলো চা বানানো লাগবে না ‘
-‘ না, আপনি মোম হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন আমি চা বানাই এইতো হয়ে গেছে। ‘
-‘ খা’ম্বার মতো দাঁড়িয়ে না থেকে হেঁটে হেঁটে ডাইনিং রুমে যেতে পারতে। ‘
-‘ না, পারতাম না। আমি ভ’য় পাই। ‘
-‘ হৃদি তোমার ছোট, ডাইনিং রুম থেকে ওর রুমটা যথেষ্ট দূরে ও এসে পড়লো আর তুমি কাছে থেকেও আসতে পারলে না। ‘
-‘ ওর সাহ’স আছে তাই এসেছে ‘
-‘ ও হ্যাঁ! তুমি তো ভীতু ‘
-‘ জ্বী না, আমি ভীতু না। রাগ উঠলে আমার সাহস এসে পড়ে, কিন্তু স্বাভাবিক থাকলে সাহস থাকে না। ‘
-‘ অদ্ভুত! ‘
মুন চুলা বন্ধ করে কাপে চা ঢাললো। চিনি দিয়ে ভালো করে নেড়ে এক চামচ মুখে দিয়ে দেখলো চিনি ঠিকঠাক মতো হয়েছে কীনা। এরপর কাপ হাতে নিয়ে হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেলো। হৃদয় জিজ্ঞেস করলো কী হয়েছে? মুন বলল,
-‘ আমারও চা খেতে মন চাচ্ছে ‘
-‘ আচ্ছা, তাহলে আরেক কাপ বানাও ‘
-‘ না, বানাতে মন চাচ্ছে না। ‘
-‘ তাহলে আমার কাপ থেকে খেয়ো ‘
-‘ হ্যাঁ, খেতাম। কিন্তু এটা করা যাবে না ‘
-‘ কেন? ‘ (অবাক হয়ে)
-‘ আপনি যদি বেশি খেয়ে ফেলেন ‘
-‘ কীহহ’
-‘ আমি যদি বেশি খেয়ে ফেলি, তাহলে তো আপনি কম খাবেন ‘
-‘ কী বলছো এসব? ‘
-‘ একটা কথা সবসময় মনে রাখবেন কিছু কিছু ক্ষেত্রে রি’স্ক নেওয়া যায় না ‘
-‘ মানে?’
-‘ যেমন আমি খাবার নিয়ে খুবই সিরিয়াস। এখানে কোনোরকম রি’স্ক নেওয়া যাবে না। তাই মেপে মেপে খুবই সাবধানে সতর্কতার সাথে নিতে হবে। ‘
বলেই আরেকটা কাপ নিলো। কাপের চা গুলো পাতিলে ঢেলে এরপর এক চামচ এক চামচ করে দুই কাপে চা দিতে লাগলো। চা দেওয়া শেষে একটা কাপ থেকে এক চামচ নিয়ে অন্য একটা কাপে দিয়ে দিলো। কাপ দুটো হাতে নিয়ে বলল,
-‘ শেষে এক চামচ বেশি দিলাম কেন জানেন? কেননা আমি প্রথমে চিনি দেখতে গিয়ে এক চামচ খেয়েছিলাম। আপনার সাথে আমি বা’টপারি জীবনেও করবো না। আর খাওয়ার ক্ষেত্রে তো কোনোদিনই না। ‘
হৃদয় মুনের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মুন সেদিকে পাত্তা না দিয়ে ‘ ফলোও মি ‘ বলে রুমে চলে আসলো। দুজন পাশাপাশি বসে চা খাচ্ছে। কারো মুখে কোনো কথা নেই। সবসময়ের মতো মুন হৃদয়কে অবাক করে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘ আপনি তখন বলছিলেন হৃদি রুম থেকে বের হয়ে এসে মোম নিয়েছে। ‘
-‘ হুম তো? ‘
-‘ তো কী? আপনি আমাকে একটা ছোট মেয়ের সাথে তুলনা করলেন। ‘
-‘ তো করবো না? ওর থেকে তোমার শেখা উচিৎ! ‘
-‘ ওও এখন বোন অনেক বেশি হয়ে গেছে। বউকে বলছেন এইসব ‘
-‘ ফাল’তু কথা কম বলো। চুপচাপ চা খাও ‘
-‘ হ্যাঁ হ্যাঁ আমি তো ফাল’তু কথাই বলি। জানি তো সব। ‘
হৃদয়ের চা খাওয়া শেষ। মুনের কথা শুনে সোফা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো। বলল,’ কথা কম বলো মেয়ে। তুমি একটু বেশিই ঢং করো। ৫ বছর বয়স থেকে বোনকে দেখছি বোন আমার কাছে অবশ্যই বেশি প্রিয়। আর একটা বউয়ের অভাবে ২৬ বছর সিঙ্গেল থেকেছি তাই বউও আমার অনেক প্রিয়। সমস্যা হচ্ছে বুঝো কম চিল্লাও বেশি ‘
কথাগুলো বলেই হৃদয় রান্নাঘরে চলে গেলো কাপ রাখতে। ওদিকে মুন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে লজ্জা পেতে পেতে বলল, ‘ আহা গো জামাই আমি তো জানিই , আমি তোমার প্রিয় খালি একটু শুনতে ইচ্ছে হলো তাই বললাম। ডোন্ট মাইন্ড 😉’
চলবে
( রি-চেক দেই নি। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কেমন হয়েছে জানাবেন। এখানে প্রায় ১২০০+ শব্দ আছে, 😐)