#অদ্ভুত_নেশা
#পর্ব_০৩
#অধির_রায়
রাতে বেলা ছোঁয়া,সিদ্ধার্থ, রিয়া, তপেস রাস্তা দিয়ে হেঁটে হেঁটে আইসক্রিম খেতে খেতে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ছোঁয়ার সাথে যা ঘটে তা দেখার জন্য তারা কেউ প্রস্তুত ছিল না৷
হঠাৎ মাঝ রাস্তায় ছোঁয়া শূন্যে ভাসতে থাকে। সিদ্ধার্থ, রিয়া,তপেস নিজেদের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না৷
— বাঁচাও বাঁচাও!(ছোঁয়া) প্লিজ দাদা আমাকে বাঁচাও
— ছোঁয়া তোর কিছু হতে দিব না। (সিদ্ধার্থ)
— তাদের সবাইকে এখান থেকে চলে যেত বল সুইটহার্ট ( অদ্ভুত লোকটি)
— না চলে যেতে বলবো না। (ছোঁয়া)
— তুমি তোমার দাদার মৃত্যু দেখতে চাও?(অদ্ভুত লোকটি)
— না!
— আমি যা বলছি তাই করো? (অদ্ভুত লোকটি)
–
–
–
–দাদা,রিয়া, তপেস তোমরা এখান থেকে চলে যাও৷ আমার কোন ক্ষতি হবে না।(ছোঁয়া)
— আমি তোকে এখানে এভাবে রেখে কিছুতেই যাবো না (সিদ্ধার্থ)
— আমার দিব্যি রইলো। তুই এখান থেকে চলে না গেলে আমার মৃত দেহ দেখতে পাবি। (ছোঁয়া)
ছোঁয়ার দিব্যির কথা ভেবে সকলে বাড়িতে ফিরে যায়। যাওয়ার পথে সিদ্ধার্থ বার বার পিছনে ফিরে তাকায়৷ এটাই মনে হয় ভাই বোনের ভালোবাসার বন্ধন৷ দাদার মন কি মানতে চায় তার আদরের বোনকে এভাবে রেখে যেতে। মনটা শক্ত করে চোখের জল মুছে বাড়িতে ফিরে যায়৷
— সুইটহার্ট
— আপনি কেন আমার সাথে এমন করছেন?
— সুইটহার্ট তুমি আমার আমানত নষ্ট করেছ?
— কিসের আমানত?
— তোমার সাহস হলো কিভাবে তপেসকে কিস করার?
— তপেসের সাথে আমার বিয়ে ঠিক৷ ২ দিন পর যা সাথে আমার বিয়ে হবে তাকে একটা কিস করেছি সমস্যা কি আপনার?
–তুমি তপেসকে বিয়ে করতে পারবে না।
— কেন? আপনি কে? কেন আমি আপনার কথা শুনবো?
— আমি তোমার স্বামী।
— মানি না আমি আপনাকে স্বামী।
— তুমি মান বা না মান আমার কোন দায়ী নেই। আমি মানি এটাই আমার কাছে বড়।
–যাকে কখনও দু’আঁখিতে দেখিনি৷ মন ভরে আদর করেনি তাকে কিভাবে আমি স্বামী হিসেবে মেনে নিব৷
— আমি তোমার সামনে ঠিক সময় আসবো৷
— এখন আমাকে মাটিতে নামান৷ এভাবে কতক্ষণ ধরে রাখবেন৷
— যতক্ষণ মন চাইবে।
–আমার কষ্ট হচ্ছে!
— তোমার থেকে বেশি কষ্ট আমার হয়েছে। যখন তুমি তপেসকে কিস করেছ!
— আমি ইচ্ছা করে তপেসকে কিস করিনি৷ একটা এক্সিডেনে এমন হয়েছে।
— তাহলে কথা দাও তপেসের সাথে তুমি কথা বলবে না৷
— আমি ১০০ বার বলবো।
১০০ বার কথাটা বলার সাথে সাথে অদ্ভুত লোকটি ছোঁয়াকে ছেড়ে দেয়৷ ছোঁয়া আঁখি বন্ধ করে জোরে চিৎকার করে। কিন্তু ছোঁয়া আঁখি মেলে অন্য জায়গায় নিজেকে আবিষ্কার করে৷
— আমি এখানে কেন? আর আমি পড়ে যাচ্ছিলাম। এখানে আসলাম কিভাবে? সালা ইতর আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে। তোকে আমি ছাড়বো না৷
ছোঁয়া কানের কাছে মধুর কন্ঠ শুনতে পাই ছাড়তে কে বলেছে সারা জীবন আমাকে জড়িয়ে ধরে রেখো।
৭.
ছোঁয়া পিছনে ফিরে কালো কাপড়ে ঢাকা একটা লোক দেখতে পায়। ভয়ে ছোঁয়া চিৎকার করে নিলেই। অদ্ভুত লোকটি ছোঁয়াকে কাছে টেনে নেয়।
— ভয়ের কিছু নেই৷
— কে আপনি?
— তুমি আমাকে দেখতে চেয়েছো তোমাকে দেখা দিলাম।
— আপনি আমার থেকে দূরে থাকেন?
— সুইটহার্ট এভাবে স্বামীকে দূরে রাখা যাবে না৷
— আপনি এখন সশরীরে আছেন৷ আপনি মনে হয় ভুলে গেছেন আমি আপনার এখন কি হাল করতে পারি৷
— কি করবে সুইটহার্ট।
ছোঁয়া ক্ষেপে অদ্ভুত লোকটিকে একের পর এক লাথি চর ঘুমি মেরে যাচ্ছে। কিন্তু কিছুই হচ্ছে না৷ বরং ছোঁয়া ক্লান্ত হয়ে ছেড়ে দেয়৷ ছোঁয়ার মনে হচ্ছিল এতক্ষণ সে তুলোর সাথে ফাইট করলো।
–আমার তো কিছুই করতে পারলে না৷
ছোঁয়া কান্না করতে করতে অদ্ভুত লোকটির পা ধরে বসে ফেলে৷ কিন্তু অদ্ভুত লোকটি অদৃশ্য হয়ে ছোঁয়াকে জড়িয়ে ধরে আবার প্রকট হয়৷
— আপনি কেন আমাকে সাথে এমন করছেন? আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি?
— তুমি আমার কোন ক্ষতি করনি?
— তাহলে কেন আমাকে এই নদীর তীরে নিয়ে আসলেন।আপনিই তো বলেছেন এখানে আমার বিপদ আছে৷
— এখানে তোমার বিপদ শুধু দিনের বেলায় রাতের বেলাতে নয়৷
–কেন?
— কোন প্রশ্ন না করে ওই ঘরে তোমার জন্য নীল শাড়ি রাখা আছে পড়ে নাও৷
নীলা ঘরের দিকে তাকিয়ে অভাগ৷ছোট একটা ঘর নদীর পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে। বাহারী রকমের ফুলে ঘরটা সাজানো৷ ঘরের সামনের দিক প্রাচীন কারুকাজ। শ্বেত পাথের ঘর যেন এই পাশ থেকে ওই পাশ দেখা যায়৷
— কি হলো যাও। এসব পোশাক চেঞ্জ করে আসো।
— আমি
— কোন কথা নয়৷ যা বলছি তাই কর?
ছোঁয়া ভয়ে ভয়ে ঘরে প্রবেশ করে। ভয় কম ইচ্ছাটা বেশি৷ ছোঁয়ার ঘরটা দেখার খুব ইচ্ছা। মন চাইছে ছুটে চলে যেতে। কিন্তু এই শয়তান ভুতটাকে বুঝতে দেওয়া যাবে না।
ছোঁয়া ঘরে প্রবেশ করে অভাগ৷ রুপোর খাট।খাটের এক পাশে রাখা আছে বাহারী রকমের ফুল। ফুলের সৌরভ চারিদিকে মৌ মৌ করছে। অন্য পাশে রাখা আছে ট্রি টেবিল।
ট্রি টেবিলের উপর রাখা নীল শাড়ি, নীল চুড়ি, নীল জুমকো, মেক আপের সামগ্রী। ছোঁয়া এসব কিছু দেখে নিজের লোভ সামলাতে পারলো না৷ সে অতি দ্রুত পড়ে নিল। সে ভুলেই গেছি এখানে অদ্ভুত লোকটি তাকে ধরে এনেছে৷
— আমার নীল পরীকে খুব সুন্দর লাগছে।সুইটহার্ট আমি তোমার প্রেমে তো পাগল হয়ে যাবো।
নাম না নিতেই সালা হুনুমান এসে হাজির৷ আচ্ছা এই সালা আমাকে তার চেহেরা দেখাচ্ছে না কেন? ইভেন তার হাত এবং পা কিছুই দেখতে পাচ্ছি না কেন?আজ আমি তোর সব কিছু জেনে নিবো।
— আমাকে গালি দিয়ে লাভ নেই। তুমি যা মনে মনে বলছো সব শুনতে পাই আমি৷
–আমাকে নিয়ে নদীতে ঘুরতে যাবেন কি?
— হুম,
ছোঁয়া নদীর জলের উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। ছোঁয়া মনে মনে খুব খুশি। নিজেকে খুব গর্বিত মনে হচ্ছে। সে জলের উপর দিয়ে হাঁটতে পারছে৷ কিন্তু পা টা যদি একটু জলের মাঝে থাকতো৷
ঠিক তখনি ছোঁয়ার পা জলের এক ইঞ্চি নিচে চলে যায়। ছোঁয়া পায়ের নিচে জল পেয়ে ছোট বাচ্চাদের মতো লাফিয়ে চলছে৷ কিন্তু তার এই আনন্দ সহ্য হলো না অদ্ভুত লোকটির৷
কিছু সময় পরই নিজেকে কারুকাজ যুক্ত খাটে আবিষ্কার করে৷ তার সামনে রাখা হয়েছে তার ফেবারিট খাবার বিরিয়ানি।
★
অদ্ভুত লোকটির কথা মতো ছোঁয়া বিরিয়ানি খেয়ে নিল। বিরিয়ানির টেস্ট সব থেকে ভিন্ন ছিল। যা বলে ব্যাখ্যা করতে পারব না। জলটাও খুব ভিন্ন ছিল৷ শীতল জল খেয়ে ছোঁয়া খুব তৃপ্তি পেল।
🖤
বিরিয়ানি খাওয়ার পর কিছুতেই ছোঁয়া চোখ মেলে রাখতে পারছে না৷ ঘুমে আঁখি নিজ থেকে বন্ধ হয়ে আসছে৷ ছোঁয়া কথা হলো যেভাবেই হোক এই ভুতটার নাম জেনেই ছাড়বে।
ছোঁয়া ঘুমানোর ২ মিনিট আগে অদ্ভুত লোকটা ছোঁয়াকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে। ছোঁয়া কথা হলো আজ তার সাথে সহবাস করতে চাইলেও সে বাঁধা দিবে না৷ তাও সে নাম জেনেই ছাড়বে।
–
ঘুম ঘুম আঁখি মেলে আপনার নাম কি?
–
বুকে জড়িয়ে নিয়ে তোমার এখন খুব ঘুম পাচ্ছে তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।
–
বুকের উপর আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে প্লিজ আপনার নামটা বলেন না৷
–
আমার নাম বললে তুমি মনে রাখতে পারবে না। কপোলে আলতু করে কিস করে।
–
আপনি একটা পঁচা। আপনার সাথে কোন কথা নেই। কোন কথা নেই
☆
কোন কথা নেই কোন কথা নেই বলতে বলতে ছোঁয়া অদ্ভুত লোকটির বুকে ঘুমিয়ে পড়ে।
★
সকালে পাখির কিচিরমিচির শব্দে ছোঁয়ার ঘুম ভাঙে। ঘুম থেকে উঠে ছোঁয়া চোখ আকাশ পানে।
আমি এখানে কিভাবে আসলাম। আমি নদীর তীরে সালা লুচ্চা ভুতের সাথে ছিলাম। এখানে আসলাম কিভাবে?হাজারো চিন্তা তার মাথায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।
ঘুম ঘুম চোখে হাত টানা দিয়ে গায়ের উপর থেকে কম্বল সরিয়ে আরও এক দফা টাস্কি খায়। আজ সে কোন বাঁধা দেয়নি। কিন্তু সালার ভুত তার সাথে সহবাস করেনি। এটা কিভাবে সম্ভব। যে ভুতটা জোর করে সহবাস করে আজ সে সুযোগ পেয়েও সহবাস করলো না৷ ব্যাপার কি?
নিচ থেকে কন্নার আওয়াজে ছোঁয়া নিচে নামে।
ছোঁয়াকে দেখতে পেয়ে ছোঁয়ার মা দৌড়ে ছোঁয়াকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে। তখন তার মনে পড়ে গেল রাতের ঘটনা৷ আরও অভাগ হয় সে রাতে শাড়ি পড়ে ঘুমিয়েছিল কিন্তু তার দেহে শাড়ি নেই৷ তার পরনে যে পোশাক ছিল সেই পোশাকই আছে।
ছোঁয়া কোন কিছু বিশ্বাস করতে পারছে না৷ তার মনে হচ্ছে ভুত তার উপর জাদু করেছে। যার কারণে ছোঁয়া সব ভুল বাল দেখছে।
— মা তুই ঠিক আছিস তো? তোকে কোথায় নিয়ে গিয়েছিল ওই ভাবে উড়িয়ে? (ছোঁয়ার মা)
— কই না তো আমি তো সারারাত রুমেই ছিলাম।
— তুই রুমে ছিলি মানে কি? আমাদের সাথে আইসক্রিম খেতে যাস নি৷(সিদ্ধার্থ)
–হ্যাঁ,,,(কিছু বলতে নিবেই তার কানে অদ্ভুত লোকটি ফিসফিস করে বলে উঠে আমার মাথা ব্যাথার জন্য কাল রাতে আমি রুম থেকে বের হয়নি তোদের সাথে আইসক্রিম খেতে কখন গেলাম)
–তাহলে তোর কি রাতের ঘটনা মনে নেই।(সিদ্ধার্থ)
— হ্যাঁ মনে নাই মানে কি? তুই আমার জন্য আইসক্রিম কিনে আনিস নি কেন?(ছোয়া)
— আবোল তাবোল কি বলছিস ছোঁয়া? (রিয়া)
— আমি আবোল তাবোল কি বলিলাম। কাল রাতে প্রচুর মাথা ব্যথার কারণে আমি রুম থেকে বের হয়নি৷ ভেবেছিলাম দাদা আমার জন্য আইসক্রিম কিনে নিয়ে আসবে সেটাই খাবো। কিন্তু রাতে আমার কিছু খাওয়া হলো না৷ আমার প্রচুর ক্ষুধা লাগছে। আমাকে খেতে দাও আগে৷
— তাহলে রাতে আমাদের সাথে কে ছিল?(রিয়া)
— তোদের সাথে আমার আত্মা ছিল। আমি ক্ষুধার জন্য কিছু নিতে পারছি না৷।
☆
সরি আমাকে ক্ষমা করে দিও তোমরা। তোমাদের ভালোর জন্যই আমি মিথ্যা কথা বললাম।।জানি মিথ্যা বলা মহাপাপ। কিন্তু জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে মিথ্যা বললে পাপ হয় না৷
,
,
,
,
ছোঁয়া আজ হেঁটে হেঁটে ভার্সিটিতে আসছে। ভার্সিটির গেইট দিয়ে প্রবেশ করতেই ,,
চলবে,,#অদ্ভুত_নেশা
#পর্ব_০৪
#অধির_রায়
৮
ছোঁয়া আজ হেঁটে হেঁটে ভার্সিটিতে আসছে। ভার্সিটির গেইট দিয়ে প্রবেশ করতেই ছোঁয়ার উপর অনবরত বৃষ্টির মতো গোলাপ ফুলের পাপড়ি পড়তে শুরু করল। ছোঁয়া নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না৷ তার জন্য এসব কাজ কে করেছে।
ছোঁয়া গোলাপের পাপড়ির সাথে দু হাত দু’দিকে বাড়িয়ে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছে৷ এই মুহুর্তটা ছোঁয়া চির স্মরণীয় করে রাখতে চায়৷
হুট করেই ছোঁয়া শূন্যে বাসতে থাকে৷ সে আজও ভাবছে অদ্ভুত লোকটি তার জন্য এসব করেছে। কিন্তু চোখ মেলার সাথে সাথে চোখ রসে গোল্লায় পরিণত হয়৷
— এভাবে তাকিয়ে থাকবে?(তপেস)
— আমতা আমতা করে আপনি এসব করেছেন!
— কেন অন্য কাউকে আশা করেছিলে?
— অন্য কেউ আমার কাছে আসার চেষ্টাও করতে পারবে না৷ সেটা আপনি ভালো করেই জানেন৷
— হুম জানি কলিজা।
— আমাকে নামান। এভাবে সবার সামনে তুলে রেখেন কেন? আপনার লজ্জা বলতে কিছুই নেই৷
— লজ্জায় যদি থাকে তাহলে বাবা হবো কিভাবে? (ব্রু নাচিতে কথাটি বলে)
— আপনার মুখে কিছুই আটকাতে চায় না। এখন আমাকে নামান না হলে আমি 😞
— কি করবে তুমি? কেঁদে দিবে তুমি!
— আমার কিন্তু ভালো লাগছে না৷ প্লিজ আমাকে নামিয়ে দেন৷
–নামাতে পারি এক শর্তে?
–কিসের শর্ত?
— তোমার আঁখি বন্ধ কর?
— না আমি আঁখি বন্ধ করবো না৷
— তাহলে আমিও নামাবো না৷
— ওকে বন্ধ করছি।
ছোঁয়ার কথা হলো সে পুরোপুরি আঁখি বন্ধ রাখবে না৷ তপেস তার সাথে কি করতে চায় তা দেখেই ছাড়বে? কিন্তু তার আশাতে জল ঠেলে দিল।
ছোঁয়া চোখ বন্ধ করতেই অন্য একজন এসে ছোঁয়ার চোখ কোমল রেশমি কাপড় দিয়ে ছোঁয়ার চোখ বেঁধে দেয়৷
— ক্ষেপে বলে উঠে আমার চোখ বাঁধার সাহস দেখায় কে?
— ছোঁয়া তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে?(তপেস)
— কিসের সারপ্রাইজ?
— সারপ্রাইজের কথা কেউ বলে দেয়৷ এটা কোন মহাভারতে লেখা নেই৷
— এখন আমাকে নামিয়ে দেন৷
— না নামাবো না৷ বেশি কথা বললে তোমাকে ফেলে দিব৷ তাতে আমারই ভালো হবে।
— কি📣?
তপেস তার হাতের বাঁধান কিছুটা হালকা করতেই ছোঁয়া তপেসের গলা জড়িয়ে ধরে।
— প্লিজ আমাকে ফেলে দিবেন না৷ফেলে দিলে আমার কোমরের ১২ টা বেজে যাবে৷ আমায় কেউ বিয়ে করবে না😭।
— আমি আছি তো তোমার কলিজা।
— আমার খুব ভয় লাগছে। অন্ধকার আমার ভালো না৷
তপেস ছোঁয়াকে নিয়ে হেঁটে হেঁটে ভার্সিটির হল রুমের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
— আমাকে কোথায় নিয়ে যান?
— কথা না বলে কোথায় নিয়ে যাচ্ছি সেটা নিয়ে ভাবো। যা একটা ধাঁধা।
— আই অ্যাম মূর্খ মানুষ। আমি ধাঁধার সমাধান কোনদিন বের করতে পারব না৷
— তাহলে কথার মায়াজালে ফাঁসাতে হবে না আমায়৷
ছোঁয়া পিচ্চি বাচ্চাদের মতো মুখ ফুলিয়ে রয়েসে। তপেস ছোঁয়ার এমন ফ্রেস দেখে হাসতেও পারছে না৷ আবার হাসি আটকিয়েও রাখতে পারছে না।ছোঁয়ার সামনে হাসা মানে ফাঁসা। তপেস মুখ টিপে টিপে হেঁসে যাচ্ছে।
[সালা তপেসের বাচ্চা তুই আমাকে এক বার মুক্ত দে৷ দেখ তোর কি হাল করি৷ আমি যদি তোর ১২ টা না বাজিয়েছি আমার নাম দোয়া নয় সরি ছোঁয়া নয়]মনে মনে ছোঁয়া তপেসেকে হাজার গালি দিয়ে যাচ্ছে।
৯.
তপেস ছোঁয়াকে হল রুমে নিয়ে এসে নামিয়ে দেয়৷ ছোঁয়ার আঁখি খুলতেই ছোঁয়া আঁখি কলকাতার রসে গোল্লায় পরিণত হয়৷ ছোঁয়া ভেবেছিল যে তার আঁখির বাঁধান খুলতে আসবে তাকে জোরে কয়েকটা চর বসিয়ে দিবে। ছোঁয়ার আঁখি বাঁধার স্পর্ধা দেখানোর জন্য।
— কি হলো এভাবে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন? পছন্দ হয় নি?
— এসব কিছু আমার জন্য?
— হুম এসব কিছু তোমার জন্য? মনে কর দেখো আজ কত তারিখ।
— আজ তো ২০ শে ফেব্রুয়ারি।
— এই দিনে আমি তোমাকে প্রপোজ করেছিলাম৷ আজ আমাদের ভালোবাসা এক বছর পূর্ণ হলো।
— সরি আমি সত্যিই সব কিছু ভুলে গেছি৷ আমার কিছু মনে ছিল না৷ এজন্যই আমি একটা গাধা।
— আমি আছি তুমি যখনই আমাকে ভুলে যাবে তখনই আমি তোমাকে স্মরণ করিয়ে দিব।
— এজন্য তোমাকে আমার খুব ভালো লাগে।
— চল কেক কাটবে। আজ মহাদেবকে সাক্ষী রেখে বলছি তোমার হাত কোনদিন ছেড়ে যাবো না।
— আমিও তোমার হাত সারা জীবন ধরে রাখবো।
— আমাদের ভালোবাসা স্মৃতি করে রাখার জন্য আজ আমরা সারাদিন ঘুরে বেড়াবো।
— ওকে,,, কিন্তু আজ অন্য জায়গায়৷
— কোথায় যাবে তুমি?
— আপনার প্রিয় পাহাড়ে ঘুরে বেড়াবো৷
পাহাড়ের কথা শুনে তপেস অনেক খুশি হয়ে যায়৷ তপেস ছোঁয়াকে হাঁটু গেরে সবার সামনে প্রপোজ করে৷ ছোঁয়া তপেসের প্রপোজ এক্সেপ্ট করে৷
তপেস ছোঁয়াকে নিয়ে দার্জিলিং পাহাড়ে এসেছে৷ শীতে দার্জিলিং এর পাহাড় সবার কাছে অনেক প্রাণপ্রিয় একটা জায়গা৷ তবে অন্যান্য মৌসুমে তেমন কদর না থাকলেও শীত মৌসুমের মতোই জনবহুল পূর্ন হয়ে থাকে।
ছোঁয়া তপেসের হাত ধরে দার্জিলিং এর পাহাড় দেখতে খুবই ব্যস্ত৷ ছোঁয়া আজ প্রথম প্রকৃতিকে এমন ভাবে কাছ থেকে দেখছে। ছোঁয়া সময় পেলে শুধু নদীর তীরে এসেছে৷ কোনদিন ছোঁয়া পাহাড়ে আসে নি৷ ছোঁয়ার ধারণা পাহাড় দেখতে ভালো না৷
— আজও বলবে পাহাড় ভালো লাগে না৷
–হ্যাঁ বলবোই তো।
— তাহলে এভাবে উপভোগ করছো কেন চলে যাচ্ছি না কেন?
— ওই মিয়া ছোঁয়া এক কথার মানুষ।
১০ বছর আগে বলেছি আমার পাহাড় ভালো লাগে না। এখনও বলব ভালো লাগে না৷ ১০ বছর পরেও বলব পাহাড় আমার ভালো লাগে না৷
— ছোঁয়া তোমার কথা আমার মাথায় উপর দিয়ে যাচ্ছে।কিছুই বুঝতে পারছি না৷
— আপনি একটু মাথা উঁচু করার চেষ্টা করেন৷
— কেন?
— আরে আপনিই তো বললেন আমার কথা মাথায় উপর দিয়ে যাচ্ছে। একটু মাথা উঁচু করলে আমার কথা আপনার মাথায় আটকে যাবে।
ছোঁয়া এসব বাচ্চা সূলভ কথা শুনে পাশে থাকা কিছু লোক হেঁসে উঠে।
— জানেন তপেস?
— কি জানবো?
— বর্তমানে কিছু লোক দাঁত ব্রাশ করে না। এজন্য হাসার সময় পঁচা দাঁতগুলো বেয়িয়ে যায়। যেমন আমাদের চারিপাশে কিছু লোকজন।
ছোঁয়ার এমন অপমান জনিত কথার প্রতিবাদ করতে চেয়েছিল অনেকে।কিন্তু তার সাথে কথা বললে যদি দাঁত বের হয়। আমাদের খাবার যদি দাঁতে আটকে থাকে তাহলে আমরা বরং অপমান হবো। এসব কিছু ভেবেই পাশে থাকা লোকজন তাদের থেকে দূরে চলে যায়।
— এভাবে কাউকে অপমান করা ঠিক না ছোঁয়া?
— আরে রাখেন আপনার জ্ঞানের কথা। আমি ভাবছি আমি যেখানে যাবো দেখানে যেন কেউ ডিস্টার্ব করতে না পারে৷ সে জন্য এসব নাটক করলাম। কারণ আই অ্যাম বুদ্ধিমান।
— তোমার যা বুদ্ধি তা তোমার কথাতে বুঝা যায়।
— আমাকে কি গাধারাম বা হাঁদারাম মনে হয় আপনার৷
— না তুমি ভুল ভালো বুদ্ধিমতী কিশোরী।
— ধন্যবাদ আমাকে ফলো করে যান। কারণ আমি আপনার উঠ বি৷ ১০.
আপনি বাড়িতে যাবেন না৷(ছোঁয়া)
— যাবো
— তাহলে আমার পিছু পিছু আমাদের বাড়িতে আসছেন কেন? আমাকে বকা শুনাতে চান৷ যদি বকা শুনান ব্রেক আপ।
— এই নিয়ে ৪৬ বার ব্রেক আপ করলে। কিন্তু সত্যি সত্যি কোনদিন ব্রেক আপ করো না৷ তাহলে সেদিন আমার শেষ দিন হবে৷
— আপনি মিশে আছেন আমার হৃদয় জোড়ে। আপনাকে ভুলে আমিও কোনদিন থাকতে পারবো না আপনাকে আমিও খুব ভালোবাসি
— আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি।
–
পিছন থেকে বলে উঠে এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করা বন্ধ করে দেওয়ার পালা এভার৷
–
ছোঁয়া পিছনে ফিরে অভাগ হয়ে আঙ্কেল আপনি(তপেসের বাবা)
–
তপেসের মা ছোয়ার মাথায় হাত রেখে বলে উঠে এখন আর আঙ্কেল আন্টি বললে চলবে না।
–
ছোঁয়া চোখ ছোট করে তাহলে কি বলে ডাকবো৷
–
তপেসের মা মুচকি হেঁসে এখন থেকে আমাদের মা বাবা বলে ডাকবে।
–
আমাদের করিডরে কি দাড় করিয়ে রাখবে নাকি ভিতরে যেতে বলবে(তপেসের বাবা)
–
ভিতরে আসেন(ছোঁয়া)
☆
ছোঁয়া তপেসের মা বাবাকে নিয়ে ডায়িং রুমে বসতে বলে৷ ছোঁয়ার বাবা এসে তপেসের বাবার সাথে কৌশল বিনিময়ে করে।
ছোঁয়া ফ্রেশ হবার জন্য সিড়ি বেয়ে নিজের রুমে যাচ্ছে।
— কি মনে করে কিছু না বলে এখানে আসা(ছোঁয়ার বাবা)
— আমি আর দেরি করতে চায় না৷ (তপেসের বাবা)
— কি দেরি করতে চান না। আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না আপনার কথা। (ছোঁয়ার বাবা)
— আমি চায় এই সপ্তাহে তাদের চার হাত এক করে দিতে৷
বিয়ের কথা শুনে ছোঁয়া দাঁড়িয়ে পড়ে তাদের বাবার উত্তর জানার জন্য৷
–আমিও খুব খুশি৷ আমি এটাই বলতে চেয়েছিলাম আপনাদের।
ছোঁয়া তার বাবার উত্তর শুনে এক প্রকার দৌড়ে রুমে চলে যায়। শাওয়ার অন করে ছোঁয়া মনে শুধু অদ্ভুত লোকটির কথা মনে পড়ছে। যার সাথে ছোঁয়ার সহবাস হয়েছে তাকে ফেলে কিভাবে ছোঁয়া তপেসকে বিয়ে করবে। তার মাথায় কিছুই ডুকছে না৷
–
–
–
ছোঁয়া কান্না করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পড়ে জানা নেই৷ মাঝ রাতে ছোঁয়া বুঝতে পারে তার পাশে বসে কেউ হাউমাউ করে কান্না করে যাচ্ছে। কিন্তু আঁখি মেলে যা দেখে তার জন্য ছোঁয়া প্রস্তুত ছিল না।
চলবে,,,,
বানান ভুল হলে নিজ দায়িত্বে ক্ষমা করে দিবেন৷ আজ চেয়েছিলাম বড় করে দিব কিন্তু রিচেক দেওয়ার সময় রিমুভ হয়ে যায়। সে জন্য পুনরায় আবার লেখতে হয়৷
অনেকে বলেছেন নায়ককে। এখানে অদ্ভুত লোকটির সাথে যেহেতু ছোঁয়ার সহবাস হয়েছে সেহেতু অদ্ভুত লোকটির সাথে ছোঁয়ার বিয়ে হবে। তপেসকে ছোঁয়া আগে থেকে ভালোবাসে৷ তপেসের সাথে ছোঁয়ার একটা সমস্যা দেখিয়ে তপেসকে ছোঁয়ার জীবন থেকে আউট করে দিব৷
অদ্ভুত লোকটির নাম কি দিব?,,, প্রান্তিক নাকি প্রতিক।
আমি নতুন লেখক। আমার কোন জায়গায় ভুল হলে তা ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন৷ যেন সেদিকে খেয়াল রেখে এগিয়ে যেতে পারি। বানান ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।