#অনুভূতিটা_তোমায়_ঘিরে❤️🥀
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি🌺🥀
#পার্টঃ০৭💜🥀
–” মা আমি কতোবার বলেছি আমি ওই বাড়িতে যাবো নাহ।” আফ্রিদ খানিক বিরক্ত হয়ে বলে।
–” কেন আসবি নাহ?ওই মেয়েটা নিশ্চয়ই বারণ করেছে?” কায়া চৌধুরী রেগে বললেন।
–” মা তুমি ইয়াসিবা কেন দোষ দিচ্ছো?”
–” ওই মেয়েটারই সব দোষ ওই তোকে বলে যে আমার কাছে না আসতে।”
–” ওহ মা প্লিজ! আর ‘ওই মেয়ে,এই মেয়ে’ বলছো কেন? ওর একটা ভালো নাম আছে ইয়াসিবা।আর ভূলে যেও নাহ ইয়াসিবা এখন চৌধুরী বাড়ির বড় বউ।”
–” আমি ওকে কখনো পুত্রবধু রূপে মানি নাহ।তোকে কতোবার করে বললাম ওই মেয়েকে বিয়ে করিস নাহ! একবার ধোকা খেয়ে তোর শিক্ষা হয়নি?”
–” মা আ’ম ফেড-আপ! আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু লিসেন এনিথিং রাইট নাউ।ওকে বাই।টেক কেয়ার।” বলেই ফোন কেটে দিলো আফ্রিদ।রাগে ওর মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গিয়েছে।কেন যে মা বুজে নাহ?ইয়াসিবাকে সে ভালোবাসে। আর ভালোবাসার মানুষটির নামে এইসব শুনে কেইবা ঠিক থাকতে পারে?আর যেখানে মূল কথা ইয়াসিবা’র কোন দোষই নেই।নাহ! আর একমুহূর্ত এখানে না।ইয়াসিবাকে এখন ওকে দেখতে হবে।এই মেয়েটাকে এখন না দেখলে নির্ঘাত সে পাগল হয়ে যাবে। সাত-পাঁচ না ভেবে আফ্রিদ বেড়িয়ে গেলো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে আর অল্প সময়েই পৌছে গেলো।
———-
–” তোদের বিয়েটা হলো কিভাবে সেটা তো বলবি?” ইবাদ জিজ্ঞেস করলো।
–” এখন আর কিছু বলবো না ইবাদ।সময় হলে আমি নিজেই সব তোদের বুজিয়ে বলবো।” ইয়াসিবার কথায় ইবাদ মাথা ঝাকালো।সে বুজতে পারছে নিশ্চয়ই বড় কোন কারণ আছে নাহলে ইয়াসিবা তাদের বলে দিতো।
–” দোস্ত!!!!!!” হঠাৎ আবিয়ার চিৎকার ইয়াসিবা আর ইবাদ দুজনেই চমকে তার দিকে তাকালো।
ইয়াসিবা বললো,
–” কিচ্ছে?চিল্লাচ্ছিস কেন?”
–” এটাকে যে আমি কি করবো?” ইবাদ বিরক্তি নিয়ে বললো।
–” আরে আমার কথা শুন।পিছে তাকা ইয়াসিবা আমার ক্রাশ আসছে গো।কি হ্যান্ডসাম হায়য়য়!” আবিয়ার কথায় ইয়াসিবা পিছনে তাকালো দেখে আফ্রিদ এইদিকেই আসছে।মুখে হাসি ফুটে উঠলো ইয়াসিবা’র বিয়ের পরে এই প্রথম আফ্রিদ তার সাথে ভার্সিটিতে দেখা করতে আসছে।পরক্ষনে চারপাশে তাকাতেই দেখে সব মেয়েরা আফ্রিদকে পারলে চোখ দিয়েই গিলে খাচ্ছে।ইয়াসিবার রাগ উঠে গেলো এই মেয়েগুলো এতো লুচু কেন?মন তো চাচ্ছে এক একটার চুলগুলো টেনে ছিড়ে ফেলতে।ইয়াসিবা রাগে ফুসতে ফুসতে আফ্রিদের দিকে আগালো।ইয়াসিবাকে চলে যেতে দেখে আবিয়া বলে উঠে,
–” আরে ইয়ু আমাকে নিয়ে চল।ক্রাশ জিজুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিবি নাহ।” ইবাদ এইবার আর পারলো না রাগ ধরে রাখতে।আবিয়া উঠে যেতে নিতেই ইবাদ তার হাত শক্ত করে চেপে ধরলো।তা দেখে আবিয়া বলে,
–” কি হয়েছে?হাত ধরেছিস কেন?ছাড়! আমি আমার ক্রাশ জিজুর কাছে যাবো।”
–” তুই এখন আমার সাথে যাবি।” দাঁতে দাঁত চেপে বললো ইবাদ।
–” আরে কিন্তু….” আবিয়াকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ওকে টানতে টানতে ভার্সিটির পিছনের দিকটায় নিয়ে আসলো ইবাদ।এদিকে আবিয়া তাকে বকেই যাচ্ছে।ইবাদ তার মুখে আঙ্গুল দিয়ে বললো,
–” হুসস!!”
–” কেন আমি..” আবিয়াকে থামিয়ে দিলো আনার ইবাদ।বললো,
–” তুই কি বুজিস না আবিয়া?” করূন গলা ইবাদের।
–” আজীব! কি বুজবো আমি?” মুখ থেকে ইবাদের হাত সরিয়ে বললো আবিয়া।
–” তুই এমন কেন?”
–” আরে আমি এমন আবার কি?তুই সর তো আমি ক্রাশ জিজুর কাছে যাবো।তাকে জিজ্ঞেস করবো তার কোন ছোট ভাই আছে না-কি যদি থাকে তাহলে তার সাথে লাইন মারার ট্রাই করবো।”
আবিয়ার কথায় ইবাদ রেগে আবিয়ার বাহু চেপে ধরে চিল্লিয়ে বললো,
–” স্টোপ আবিয়া!! কেন বুজিস না তুই?তোর মুখে অন্য কারো নাম শুনলে আমার কষ্ট হয়।কেন তুই আমার চোখের ভাষা বুজিস না?আমি যে প্রতিদিন কষ্ট সয্য করে যাচ্চজি।কেন বুজিস না যে আমি তোকে ভালোবাসি।”
আবিয়াকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো ইবাদ।জোড়েজোড়ে নিশ্বাস নিতো লাগলো সে।প্রচন্ড রাগে তার সারা শরীর কাঁপছে।দু-হাতে মাথা চেপে ধরলো সে।হঠাৎ আবিয়া ঝড়ের গতিতে ইবাদকে জড়িয়ে ধরলো।শক্ত করে খুব শক্ত করে ধরলো।ইবাদ অবাক কি হলো এটা।আবিয়া ইবাদের বুকে আর একটু মিশে গিয়ে কান্নারত গলায় বললো,
–” এতোদিন লাগলো এটা বলতে?আমি যে এই শব্দগুলো শোনার জন্যে কতোটা পাগল ছিলাম তুই জানিস না?”
প্রচন্ডরকম শক পেয়েছে ইবাদ।সে তব্দা খেয়ে দাড়িয়ে আছে।আবিয়া নিজেই ইবাদের হাত দুটো নিয়ে নিজের কোমড়ে রাখলো।তারপর বলে,
–” কি আমাকে জড়িয়ে ধরবি না?”
ইবাদ তাকালো আবিয়ার দিকে মেয়েটা কতো সুন্দর করে মিশে আছে ওর বুকে।ইবাদ ব্যাপারটা বুজতে পেরেই ওর মুখে বিশ্বজয়ের হাসি ফুটে উঠলো তার মানে আবিয়াও তাকে ভালোবাসে।ইবাদ আবিয়াকে আগলে নিলো নিজের বাহুতে।
–” কেন বলিস নি আমাকে?কেন এই ভালোবাসার দহনে আমাকে পুড়ালি?”ইবাদের কথা আবিয়া অভীমান করে বললো,
–” মেয়েরা কি আগে বলে?মেয়েদের লজ্জা করে না ভালোবাসার কথা বলতে। তুই আগে বললি না কেন? আমি যে তোকে ভালোবাসি সেটা তুই বললেই তো আমি বলে দিতাম।এতোদিন তোকে জ্বালানোর জন্যেই তো প্রতিদিন ছেলেদের নিয়ে প্রসংশা করতাম যাতে তুই জ্বেলাস হয়ে নিজের মনের কথা বলে দিস।কিন্তু তুই একটা হারামি তুই কোন প্রতিক্রিয়াই দেখাতি নাহ।”
–” ওরে চালাক রে তাহলে এই ছিলো তোর মনে।”
–” হাহ্ এইগুলো না করলে তুই যে আঁতেল কোথাকার নাহলে জীবনেও নিজের মনের কথা বলতি নাহ।”
–” হয়েছে আর অপমান করিস নাহ।এইবার বলে দে নাহ।”
আবিয়া হেসে বললো,
–” আমি তোকে ভালোবাসি ইবাদ।”
আবিয়ার কথায় ইবাদ ভ্রু-কুচকে তাকালে আবিয়া বলে,
–” কি?”
–” ‘তুই’ বলে আর ডাকবি না;এখন থেকে ‘তুমি’ ঠিক আছে।”
–” আচ্ছা!”
–” পাগলি একটা।”
ইবাদ আবিয়া একে অপরকে আরো নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরলো।
———
ইয়াসিবা বিড়বিড় করে আশেপাশের মেয়েগুলোকে বকতে বকতে আফ্রিদের কাছে এসে দাড়াতেই আফ্রিদের চিন্তিত মুখ ওর নজরে পড়লো।ইয়াসিবা অবাক হলো কি হয়েছে তার আফ্রিদের তাকে এতো চিন্তিত লাগছে কেন বুজতে পারছে না সে? ইয়াসিবা অস্থির হয়ে বললো,
–” কি হয়েছে আফ্রিদ আপনার?”
আফ্রিদ কোন কথা বললো শুধু হুট করে মাঠ ভরা স্টুডেন্ট’সদের সামনে ইয়াসিবাকে জড়িয়ে ধরলো।
ইয়াসিবা এইবার আরো চিন্তাগ্রস্ত হয়ে উঠলো লোকটার কি হলো কে জানে?এরকম আচঁড়ন করছে কেন? ইয়াসিবার আশেপাশে চোখ যেতে দেখে সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে; আর মেয়েগুলোর তো চেহারা দেখার মতো হয়েছে।ইয়াসিবা মনে মনে খুশি হলো যাক লুচুনি গুলো বুজেছে যে আফ্রিদ শুধু তার।ইয়াসিবা এইবার আফ্রিদের পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে আস্তে করে বললো,
–” কি হয়েছে আপনার?কি নিয়ে এতো চিন্তিত আপনি?আমাকে বলুন।”
আফ্রিদ এতোক্ষন চোখ বুজে ছিলো ইয়াসিবার কথায় চোখ তুলে তাকালো।চোখ খুলতেই সে দেখে সবাই ওদের দেখছে তাই সে ইয়াসিবাকে ছেড়ে দিয়ে ওর হাত ধরে নিয়ে যেতে যেতে বললো,
–” চলো আমার সাথে।”
ইয়াসিবাও কোন কথা বললো না চুপ-চাপ আফ্রিদের সাথে চলতে লাগলো।আফ্রিদ তাকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।তারপর গাড়ি স্টার্ট দিলো গাড়ি চলছে আপন গতিতে।ইয়াসিবা কিছুই বলছে না শুধু তাকিয়ে আছে আফ্রিদের মুখপাণে কতোটা প্রেসারাইজ দেখাচ্ছে তাকে।
অনেক্ষনবাদে আফ্রিদ গাড়ি থামায়।ইয়াসিবা জানালা খুলে দিয়ে দেখে এটা একটা নদীর পাড়।প্রচন্ড সুন্দর আবহাওয়া! চারদিকে হিমেল বাতাস,নদীতে উত্তাল ঢেউ,পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ। ইয়াসিবা খুশি মনে আফ্রিদের দিকে তাকিয়ে বলে,
–” আমরা এখানে কেন?”
আফ্রিদ কিচ্ছুটি না বলে শুধু জানালার কাঁচগুলো বন্ধ করে দিলো।জানালা বন্ধ করে দেওয়াতে ইয়াসিবা অবাক হয়ে কিচ্ছু জিজ্ঞেস করতে নিবে তার আগেই আফ্রিদ তাকে হেচঁকা টানে নিজের কাছে এনে একটুও অপেক্ষা না করে ইয়াসিবার ওষ্ঠদ্বয় নিজের ওষ্ঠদ্বয় দ্বারা আকড়ে ধরলো।এদিকে ইয়াসিবা আকস্মিক ঘটনায় কিছুই বুজতে পারছে না কি হচ্ছে।সে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে।কিন্তু যখন আফ্রিদের চুমু খাওয়ার তীব্রতা বৃদ্ধি পেলো; ইয়াসিবা আবেশে চোখ বুজে ফেললো।নিজেও আরো আফ্রিদের বুকের মাজে সিটিয়ে গেলো,আফ্রিদকে নিজের সাথে আকড়ে ধরলো।আফ্রিদ তো নিজের প্রিয়তমার অধরজোড়ার সুধাপাণে ব্যস্ত।অনেক্ষন বাদে ইয়াসিবার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে ওর গলার ওরনাটা সরিয়ে দিয়ে সেখানে ছোট ছোট উষ্ম স্পর্শ দিতে লাগলো আফ্রিদ,এদিকে ইয়াসিবা আফ্রিদের এই তীব্র ভালোবাসাময় স্পর্শ সয্য করতে না পেরে প্রায় নেতিয়ে গিয়েছে।সে দু-হাতে আফ্রিদের গলা জড়িয়ে ধরলো।আফ্রিদ এইবার সরে আসলো ইয়াসিবার কাছ থেকে।কিন্তু মেয়েটা তাকে ছাড়ছেই না।বউটা যে তার প্রচন্ড লজ্জাবতী,দেখো এটুকুতেই লজ্জায় কেমন নেতিয়ে তার বুকের সাথে লেপ্টে আছে।আফ্রিদ ধীরগলায় ডাকলো,
–” ইয়াসিবা।”
ইয়াসিবার কোন জবাব নেই কিন্তু সে চেষ্টা করছে পারলে আফ্রিদের বুক চিড়ে সেখানে ডুকে যেতে।
–” লাজুকলতা।”
ইয়াসিবা এইবার একটা জোড়ে নিশ্বাস ছাড়লো।কম্পিত গলায় বললো,
–” এভাবে ডাকবেন। আপনার এই ডাকটায় ভয়ানক এক মাদকতা আছে যেখানে আমি সাড়া না দিয়ে পাড়ি নাহ।কিন্তু এই মুহূর্তে আমাকে তাকাতে বলবেন ন আপনার দিকে।তাহলে যে আপনার লাজুকলতা লজ্জায় শ্বাস আটকে নির্ঘাত মারা যাবে।”
আফ্রিদ নিশব্দে হাসলো।সময় থেমে যাক ভালোবাসার মানুষ দুটো একে অপড়ের মাজে বিলীন থাকুক চিরকাল।
#চলবে,,,,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবে।ভালো মন্তব্য আশা করছি।।#অনুভূতিটা_তোমায়_ঘিরে🌺🥀
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি❤️🥀
#পার্টঃ০৮💜🥀
আজ আফ্রিদের আসতে দেরি হবে।সেই নদীর পাড় থেকে আসার পর আফ্রিদ ইয়াসিবাকে বাসায় পৌছে দিয়ে আবারো হাস্পাতালে চলে যায় জরুরী কাজ পরে গেছে।আজ আফ্রিদের মনটা বড্ড অস্থির হয়ে আছে বুজতে পারছি কিন্তু কি কারনে ঠিক বুজতে পারছে না ইয়াসিবা।তবে ইয়াসিবা ভেবে রেখেছে আজ সে আফ্রিদকে নিজের মনের কথাগুলো আবারো বলবে।আজকের রাতটা তার আর আফ্রিদের জন্যে ভালোবাসাময় করে তুলবে।যেই ভাবা সেই কাজ ইয়াসিবা নিজের বিয়ের শাড়িটা আবারো পড়লো।ইয়াসিবা’র বিয়ের শাড়ী কিন্তু সবার মতো লাল বা খয়েড়ী নয়।সেদিন আফ্রিদ তাকে সাদা কাতান শাড়ী দিয়েছিলো এটা ওরা যখন একে-অপরকে ভালোবাসতো তখন থেকেই আফ্রিদ বলতো ‘ইয়াসিবা আমি তোমাকে বিয়ের দিন শুভ্রতার প্রতিক সাদা শাড়ীতে রাঙ্গাবো।আমাদের বাসর ঘর টাও হবে সাদাময়।’ বিয়ের রাতটা তো আর পাচঁটা বাসর রাতের মতো হয়নি।তবে আজকের রাতটা ও স্পেশাল করে তুলবে।সুন্দর করে সাজলো। ঘরটা পুরো সাদা দিয়ে রূপান্তর করে তুললো ইয়াসিবা।সাদা রং শুদ্ধতা ও সততার প্রতীক। একে অপরের প্রতি স্বচ্ছতা বোঝাতে কিংবা নতুন সূচনার সঙ্গে যুক্ত করা হয় এই রঙ্গ। আর ইয়াসিবা আর আফ্রিদ তো তাদের ভালোবাসার সংসারটার সূচনা করতে চাইছে আবারো।সাদা ফেইরীলাইট গুলো যেন ঘরের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি করে দিয়েছে।চারিদিকে একবার নজর বুলিয়ে নিলো ইয়াসিবা একদম পার্ফেক্ট! আফ্রিদ কতোটা খুশি হবে তার মনের মতো আজ সব কিছু সাজিয়েছে ইয়াসিবা।মাথায় একটা লাল উড়না দিয়ে ঘোমটা দিয়ে বসলো আফ্রিদের আসার সময় প্রাই হয়ে এসেছে।
—————–
কাজ শেষে জলদি ফিরে আসে বাড়িতে আফ্রিদ।কেন যেন তার ইয়াসিবাকে ছাড়া একমুহূর্তও থাকতে ইচ্ছে করে নাহ।কেন যেন মন চায় মেয়েটা একেবারে বুকের মাঝে ঝাপটে ধরে রাখতে যাতে কেউ তাকে ইয়াসিবা থেকে আলাদা করতে না পারে।বাড়িতে এসেই ডায়নিং এ ইয়াসিবা না দেখে ভ্রু-কুচকে ফেলে আফ্রিদ।কোথায় গেলো মেয়েটা?প্রতিদিন তো এখানেই অপেক্ষা করে তার জন্যে।ইয়াসিবাকে আশেপাশে না দেখতে পেয়ে একজন সার্ভেন্ট কে ডাক দেয় আফ্রিদ।সে এগিয়ে এসে বলে,
–” জ্বি বলুন ছোট স্যার।”
–” তোমাদের ম্যাম কোথায়?”
বিনিময়ে একটা চিরকুট এগিয়ে দেয় লোকটি আফ্রিদের দিকে।কিছুক্ষন চিরকুট টার দিকে তাকিয়ে থেকে আফ্রিদ সার্ভেন্টকে চলে যেতে বললো।তারপর চিরকুটটা খুলে দেখে সেখানে গোটাগোটা অক্ষরে বেশ সুন্দর করে লিখা;
‘ খাবারটা খেয়ে উপরে আসবেন তার আগে নয়;
নিচের গেস্টরুম থেকে হাত মুখ ধুয়ে তারপর খেয়ে দেয়ে আসেন।”
আফ্রিদ চিরকুটটা পড়ে কতোক্ষন আশেপাশে তাকালো।তার বউ করতে চাইছেটা কি? কে জানে?
আফ্রিদ ওতো না ভেবে গেস্টরুম থেকে হাত-মুখ ধুয়ে ডিনার করে নিলো।তারপর উপরে নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হলো।
তবে দরজায় আর একটা চিরকুট আটকানো।
আফ্রিদ সেটা দরজা থেকে খুলে নিয়ে পড়লো সেটা।লিখা আছে,
‘ আমার হৃদয়হরণকারী আমার স্বপ্নপুরুষ আজ যে এখন আমার স্বামি।সে-কি জানে তার প্রিয়তমা তার জন্যে অধীর আগ্রহে বসে আছে?সে-কি জানে আজ তার প্রেয়সী তার শতোদিনের ইচ্ছে পূরন করতে চলেছে, আজ যে সে নিজেকে শুভ্রতা ঘেরা মোড়াকে মুড়িয়েছে নিজেকে।সে অপেক্ষায় আছে তার স্বামির আদুড়ে আলিঙ্গেনের জন্যে।
ইতি,
আপনার লাজুকতা।’
আফ্রিদ চিরকুটটা পড়তেই তার ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি ফুটে উঠলো।তার মানে তার বউটা তার জন্যেই অপেক্ষা করছে।তার মনে আছে আফ্রিদ তাকে বলেছিলো,শুভ্রতার প্রতিক সাদা দিয়ে তাদের ভালোবাসার প্রাপ্তির সূচনা হবে।আচ্ছা তার প্রিয়তমা তো আজ তার জন্যে সেজেছে তাকে কেমন লাগছে দেখতে?নিশ্চয়ই আফ্রিদ তাকে দেখলে নিজের নিশ্বাস নিতে ভূলে যাবে।ঘোরলাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে তার লাজুকলতার মুখের দিকে।নাহ! আর তর সইছে না আফ্রিদ জলদি রুমের দরজাটা খুলে ভীতরে প্রবেশ করলো।অবাক হয়ে তাকালো সে যা ভেবেছিলো তার থেকেও অভাবনীয় লাগছে চারপাশ দেখতে,ব্যালকনির কাচ পুরোটা খোলা সেখানে সাদা পাতলা পর্দা যা বাতাসে উরছে,পুরো রুম জুড়ে ফেইরি লাইট আর সেগুলোর সাথে তাদের একেকমুহূর্তের ভালোবাসাময় স্মৃতি।আর্টিফিসিয়াল সাদা ফুল দিয়ে রুমটা সাজিয়েছে,ফুল আর ফেইরীলাইটে ভরা। বিছানার দিকে নজর যায় আফ্রিদের তার চারপাশ যেন স্থির হয়ে আছে,এ যে তার প্রিয়তমা সাদা শাড়ীতে নিজেকে সাজিয়েছে মাথায় লাল উড়না দিয়ে ঘোমটা দেওয়া বিধায় মুখ দেখা যাচ্ছে না,পায়ে রক্ত লাল আলতা দিয়ে রাঙ্গানো।সেখানেই থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকলো আফ্রিদ।
ইয়াসিব মুখ তুলে তাকালো উড়নার অপাশ থেকে দেখা যাচ্ছে আফ্রিদ এক জায়গায়ই থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে।মুচকি হাসলো ইয়াসিবা সে জানে আফ্রিদ অবাক হয়েই থম মেরে আছে।আস্তে করে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ায় ধীর পায়ে আফ্রিদের দিকে এগিয়ে আসলো। আলতো করে আফ্রিদের হাত ছুঁয়ে দিলো ইয়াসিবা।ধীরে বললো,
–” আমি সেজেছি আপনার মনের মতো!এইবার আপনিও গিয়ে নিজেকে আমার মনের মতো করে সাজিয়ে আনুন।”
আফ্রিদ আস্তে করে বলে উঠে,
–” আমার যে এখন আমার লাজুকতার মুখটা দেখার জন্যে আমার মনটা আনচান করছে।”
–” সেটা তো এখন হবে নাহ আগে আমার আবদার পূরন করতে হবে।” ইয়াসিবার কথায় আফ্রিদ হালকা হেসে বললো,
–” তবে মহারাণীর কথাই শীরধার্য হোক।”
ইয়াসিবা মিষ্টি একটা হাসি দিলো।
আফ্রিদ বিছানার উপর থেকে পোষাক নিয়ে ওয়াসরুমে গিয়ে পড়ে আসলো।ইয়াসিবা তাকিয়েই রইলো আফ্রিদের দিকে,কতোটা ভাগ্যবতী সে যে আফ্রিদকে নিজের স্বামি রূপে পেয়েছে।
এই মানুষটার জন্যে তো ইয়াসিবা হাসি হাসি মুখে নিজের জীবনটাও দিয়ে দিতে পারবে।
এই যে লোকটার মুখে কি সুন্দর চমৎকার হাসি, সাদা পাঞ্জবি,পাজামা পড়ায় কতোটা স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে এই যে এই রূপে তাকে দেখে ইয়াসিবার যে হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে, হাত-পা মৃদ্যু কাঁপছে, লোকটার চাহনী ভয়ানক যা ইয়াসিবা নিতে পারে নাহ,লজ্জায় পুরো শরীর তার নেতিয়ে আসে।
জোড়েজোড়ে শ্বাস নিয়ে ইয়াসিবা আফ্রিদকে পাস কাটিয়ে চলে গেলো।
বারান্দার রেলিং ধরে বুকে হাত দিয়ে চোখ বুজে রইলো সে।এইমুহূর্তে আফ্রিদের কাছে সে কিভাবে যাবে?লোকটার চোখের চাহনীতেই তো সে অর্ধেক শেষ,লোকটা ছুঁয়ে দিলে সে কিভাবে সইবে।নিশ্চয়ই সে শ্বাস আটকে মারা যাবে।
———
ইয়াসিবাকে বারান্দায় যেতে দেখে নিশব্দে হাসলো আফ্রিদ নিশ্চয়ই তার লাজুকতা লজ্জা নিরারণ করতেই ওখানে গিয়েছে।
আফ্রিদ ঠোঁটে বাকা হাসি ফুটিয়ে তুলে ইয়াসিবা পিছনে শব্দহীন পায়ে দাড়ালো।
আফ্রিদ জানে ইয়াসিবা বুজে গিয়েছে যে আফ্রিদ তার পিছনে এসে দাড়িয়েছে তাও সে তাকাবে নাহ কারন তার প্রেয়সীর যে বড্ড লজ্জা।আর সেই লজ্জারাঙ্গা মুখটা দেখার জন্যেই তো আফ্রিদ পাগলপ্রায়।
আফ্রিদ মোহময় গলায় বললো,
–” আমার কি সৌভাগ্য হবে না নিজের প্রিয়তমার লজ্জা লাল হয়ে যাওয়া মুখটা দেখার?”
আফ্রিদ তাকে পিছন থেকে নিজের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে ফেললো।
ইয়াসিবা কেঁপে উঠলো আফ্রিদের ছোঁয়ায়।
সে দ্রুত আফ্রিদের থেকে সরে এসে রুমে চলে যেতে চাইতেই আফ্রিদ তার হাত ধরে ফেললো।
বললো,
–” পালাও কেন লাজুকতা আর আমাকে কষ্ট দিও না নিজের মুখশ্রী একটু দেখাও।”
–” আপনার এই ঘোরলাগা কন্ঠে আমাকে এইসব বলবেন না প্লিজ!বুকের মাজে হৃদপিন্ডটা এতো জোড়ে কেঁপে উঠে যে বোধহয় সেটা বেড়িয়ে আসবে আমার বুকচিড়ে।”
আফ্রিদ হেচঁকা টানে ইয়াসিবা নিজের কাছে নিয়ে আসলো।
ইয়াসিবা নিচের দিক তাকিয়ে।
আফ্রিদের সেই মাদকতাময় চাহনী সে নিতে পারবে না।
–” এতো লজ্জা?”
ইয়াসিবা চুপ!
–” আচ্ছা বেশ! এখন আমি আমার লাজুকলতাকে দেখবো।”
বলেই আফ্রিদ আলতো হাতে ইয়াসিবা’র ঘোমটা ফেলে দিলো।
শ্বাস আটকে দাঁড়িয়ে রইলো সে।
অতি ভয়ানক! অত্যন্ত ভয়ানক!ইয়াসিবাকে এই রূপে দেখে আফ্রিদের সব যেন অচঁল হয়ে আসছে।
চুলগুলো খোপা করা যেখানে সাদা গোলাপ গেধে আছে,চেহারায় কোন মেক-আপ নেই শুধু চোখে কাজল আর ঠোঁটে হালকা লিপ্সটিক এতেই যেন তার লাজুকতার রূপ উপছে পড়ছে।
আফ্রিদের কোন সাড়া না পেয়ে ইয়াসিবা তাকায় তার দিকে।
লোকটা তার দিকে তাকিয়ে, চোখে মুখে তার মুগ্ধতা।
তবে কি সে তার মন মতো করে নিজেকে সাজাতে পেরেছে?
আফ্রিদ নিজের হাতটা দিয়ে ইয়াসিবা গাল ছুঁয়ে দিলো।
এই জাদুময় স্পর্শে ইয়াসিবার হৃদয় ভালোলাগায় ছেয়ে গেলো।
ইয়াসিবা দ্রুত আফ্রিদের বুকে ঝাপিয়ে পড়লো।
মুখ লুকালো আফ্রিদের বুকে।
আফ্রিদ ও ইয়াসিবাকে জড়িয়ে ধরে ওর কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো,
–” লাজুকলতা তুমি লজ্জা পেতে থাকো;
আজ আমি তোমাকে আদড়ে,সোহাগে
তোমার লজ্জা ভাঙ্গাবো।’
ইয়াসিবা পিঠ খামছে ধরলো আফ্রিদের লোকটার প্রতিটা কথা কাঁপন ধরিয়ে দেওয়ার মতো।
আফ্রিদ ইয়াসিবা কোলে তুলে নিলো।
ধীর পায়ে রুমে গিয়ে বিছানায় নিয়ে সুইয়ে দিলো।
ইয়াসিবা অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে চোখ বুজে রইলো।
আফ্রিদ আস্তে করে নিজের ভর ইয়াসিবার উপরে ছেড়ে দিলো।
ইয়াসিবার মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে তাকিয়ে রইলো অনেক্ষন।
এই কাপা কাপা ঠোঁট দুটো দেখে আর অপেক্ষা করলো না আফ্রিদ।
প্রিয়তমার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।
ইয়াসিবা বিছানার চাদর খামছে ধরলো।
আফ্রিদের হাত ব্যস্ত ইয়াসিবার পেতে বিচড়ণ করতে।
আজ আর কোন বাধা নেই।
দুজন মানুষের মাজে সকল বাধ্যবাধকতা দূর হয়ে যাবে আজ রাতে।
মনের মিল তো সেই কবেই হয়েছিলো।
আজ নাহয় দুটো দেহের মিলন ঘটলো।
ভালোবাসার এক অন্যে রাজ্যে পাড়ি দিলো।
#চলবে,,,,,,,,,,
ভূলত্রুটি ক্ষমা করবেন।মাথা ফাকা ফাকা লাগছে কি থেকে কি লিখেছি জানিনাহ।কন্সেপ্ট সাজাতে পারছি নাহ,😑