অনুভূতি
পর্ব ৪১
মিশু মনি
.
৬৪.
সায়ান হেডফোনে গান শুনছে আর জানালা দিয়ে বাইরে চেয়ে আছে। বাসের ভেতর রাতের নিরবতা নেমেছে,অন্ধকার বাসে কারো কোনো সাড়া শব্দ নেই। এলোমেলো হাওয়া আর এই রাতের জার্নির মাঝে কি যেন একটা আছে। খুব মন কেমন করছে ওর। দীর্ঘ সময় ধরে একা একা আছে, গার্ল ফ্রেন্ডটা সেই যে চলে গেলো এরপর আর কারো সাথে বন্ধুত্ব ও হলো না। এতদিন তো বেশ ভালোই কেটেছে,আজ কেন যেন ইচ্ছে করছে কাউকে একটু ভালোবাসি বলতে। একটু খুনসুটি হয়না কতদিন!
বুকটা মোচড় দিয়ে উঠছে, একাকীত্ব ভর করেছে এসে। ও একমনে গান শুনতে লাগলো। একটা গানও ভালো লাগছে না। একটার পর একটা গান বদলাচ্ছে। আরাফ ওর অস্থিরতা দেখে জিজ্ঞেস করলো, “কি রে তোর কি হইছে? এমন দেখাচ্ছে কেন?”
– “না কিছু হয়নি।”
– “গঞ্জিকা খাবি?”
– “ধুর ফাজলামি করিস না তো। ভাল্লাগছে না। বিড়ি ধরাতে পারলে ভালো হতো।”
– “প্রেম করতে মঞ্চাচ্ছে?”
সায়ান হেডফোন খুলে রেখে বললো, “বুঝলি ক্যামনে? আমার খুব একা একা লাগছে দোস্ত। কত্তদিন কেউ কেয়ার করেনা। এইযে জার্নি করছি,একজন যদি ফোন দিয়ে বলত একটু সাবধানে যেও। এই লাইনটাকে খুব মিস করছি।”
আরাফ হেসে বললো, “মিশুর মত কাউকে পেলে তোর জন্য চেষ্টা করে দেখতাম।”
– “বিদ্যা?”
আরাফ রেগে বললো, “ওই ন্যাকা মেয়েটা? প্রতি সেন্টেন্সে সেন্টেন্সে তোকে বেয়াদব বলবে। ওরকম মেয়ের দরকার নাই কোনো।”
সায়ান হাসলো। সেই যে সিলেটে বিদ্যার সাথে পরিচয় হলো। এরপর আর কখনো দেখা বা কথা হয়নি। ঢাকায় আসার পর ওকে ওর বাসায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। আসার পথেও মেয়েটা অজস্রবার বেয়াদব বলেছে ওকে। ভাবলেই হাসি পায়। জগতে অদ্ভুত প্রজাতির কিছু মেয়ে আছে!
আরাফ বললো, “এক কাজ করতে পারিস।”
– “কি কাজ?”
– “প্রেম কর একটা।”
– “আবার?”
-“ন্যাড়া একবার বেলতলায় যায় এটা সত্য,কিন্তু একবার বেল পড়েছে বলে আবারো পড়বে এমন কোনো কথা নাই বুঝলি?”
সায়ান হেসে বললো, “আমাকে তোর ন্যাড়া মনেহয়? বাই দা ওয়ে,প্রেমিকা পাবো কই? সব তো ভক্ষক।”
– “চোখ দুটো খুলে খোজ। বন্ধ করে খুঁজলে তো পাবিনা। সবসময় সার্চিং মুড অন রাখ। চিরুনি অভিযানে নেমে পড়।”
– “তুই তো দুই বছর যাবত সিংগেল, একেবারে রেকর্ড করে ফেললি। তুইও এবার একটা প্রেম কর।”
দুই বন্ধু হেসে উঠলো একসাথে। এই বিষয়টা নিয়ে দুজনে কথা বলতে লাগলো। ওদের পিছনের সিটে রোদ ও পূর্ব কিছু একটা নিয়ে হাসাহাসি করছে। পাশের সিটে সামনে নিখিল ও দুপুর আর তাদের পিছনের সিটে মিশু ও মেঘালয়। এরকম সুন্দর জুটির সাথে এই দুটো অভাগাকে নিতান্তই হাস্যকর দেখাচ্ছে। ওদের কষ্ট হবেনা কেন? মিশু হেসেই লুটোপুটি খাচ্ছে মেঘালয়ের বুকের উপর। ওর হাসির শব্দ এই সিট থেকেও শোনা যাচ্ছে। এদিকে নিখিল ও দুপুর ফিসফিস করে প্রেম করছে। না চাইলেও চোখ কান একটু হলেও শুনতে ও দেখতে পায়। মনটাকে কতক্ষণ ধরে রাখা যায়? হিংসে না হলেও হতাশা আর একাকীত্ব মুহুর্তের জন্য হলেও ভর করে। দুই বন্ধু মিলে এইসব নিয়েই কথা বলছে।
সায়ান মনের সার্চিং মুড অন করে দিয়েছে। মেয়ে খুঁজতে কতদিন লাগে কে জানে! তারপর আবার তার পিছনে ঘুরাঘুরি, প্রেম হওয়া উফফ কত্ত দেরি। এমন সময় বাসটা থেমে গেলো হঠাৎ। একটা কাউন্টার থেকে দুজন মেয়ে বাসে উঠলো। সায়ান ও আরাফ একে অপরের মুখের দিকে চাওয়াচাওয়ি করে ফিসফিস করে বললো, “চল দোস্ত এই দুটোর উপর দুজনে ক্রাশ খাই।”
আরাফ বললো, “ইয়ার্কি করে নাকি সিরিয়াসলি?”
– “ইয়ার্কি করে খাই। যদি স্বাদ ভালো হয়,আবার সিরিয়াসলি খাবো নে।”
বলেই দুজনে হেসে উঠলো। বাসের লাইট জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। মেয়ে দুটো নিজের সিটে গিয়ে বসলো। মিশু ও মেঘালয়ের পিছনের সিটে বসেছে ওরা। দুইবোন মনেহচ্ছে,চেহারায় মিল আছে।
আরাফ বললো, ” লাইফটা যদি তাহসানের নাটক হতো, তবে নির্ঘাত ওদের সাথে আমাদের প্রেম হতো।”
– “তুই কি ভাবছিস ওরা তোর জন্য আজো সিংগেল আছে?”
– “না থাকলেও হয়ে যেত। আমি তাহসানের নাটকের কথা বলেছি।”
– “মিশুকে বল একটা ব্যবস্থা করে দিবে।”
আরাফ একবার মেঘালয়ের দিকে তাকিয়ে ডাকলো, “এই মিশু।”
মিশু মাথা হেলিয়ে তাকালো আরাফের দিকে। সায়ানের মুখে দুষ্টুমি হাসি দেখে ও বুঝতে পেরেছে এরা কিছু একটা দুষ্টুমি বুদ্ধি আঁটছে। ও জিজ্ঞেস করলো, “কি ভাইয়া?”
আরাফ বললো, “চাঁদে যেতে মনচাচ্ছে রে। একটা উপায় বের করে দে না।”
মেঘালয় ভ্রু কুঁচকে তাকালো আরাফের দিকে। আরাফ এত সহজ হয়ে গেছে কবে থেকে? অবশ্য মিশুর সাথে রেগুলার ওর চ্যাটিং হয়, প্রায়ই কথা হয় হোয়াটস অ্যাপে। এটা কি মিশুর গুনেই সম্ভব হলো! ও অবাক হয়ে এতদিনের চির পরিচিত বন্ধুটির দিকে চেয়ে আছে।
আরাফ বললো, “বহুদিন জোৎস্না দেখিনা রে।”
– “বেদের মেয়ে জোৎস্না?”
– “না, চাঁদের মেয়ে জোৎস্না।”
মিশু হেসে উঠলো ওর জবাব শুনে। আরাফ মিশুদের পিছনের সিটে বাঁকা চোখে তাকালো। খেয়াল করলো মেয়েদুটো ওর দিকেই চেয়ে আছে। আরাফ একটু মুখ টিপে হেসে বললো, “আমাকে একটা জোৎস্না জোগাড় করে দে না ভাই।”
মিশু বললো, “জোৎস্নাই লাগবে? ছকিনা হলে হবেনা?”
আরাফ জবাব দিলো, “অমাবস্যা হলেও হবে বোন। ইমার্জেন্সি ভিত্তিতে লাগবে। পারলে নেটে সার্চ দে।”
কথাটা বলেই আরাফ আবারো তাকালো মেয়েদুটোর দিকে। ওরা এখনো চেয়ে আছে। আরাফ সোজা হয়ে বসলো। একটু হলেও কাজ হয়েছে। যদিও মেয়েদুটোর সাথে নিজে থেকে কথা বলা বা লাইন মারার বয়সটা আর নেই। আরাফ সায়ানের দিকে তাকিয়ে হাসলো। ফোনে ভাইব্রেট হচ্ছে দেখে চেক করে দেখলো মিশু মেসেজ দিয়েছে, “আমি খুঁজে দিচ্ছি। আমার আইডিতে একটা স্ট্যাটাস মারলেই তোমার জন্য একগাদা মেয়ে বেড়িয়ে আসবে।”
আরাফ রিপ্লাই দিলো, “একটু তাড়াতাড়ি দে না বোন।”
বাসের লাইট আবারো নিভিয়ে দেয়া হলো। দুই বন্ধু গল্পে মেতে উঠেছে। সায়ানের মনটা এখন ভালো। আগের মত একা একা লাগছে না মোটেও। মিশু টুকটাক মেসেজ দিচ্ছে আরাফকে। মেঘালয় মিশুকে বুকে টেনে নিয়ে বললো, “তোমাকে একটা গিফট দিতে হবে মনেহচ্ছে।”
মিশু দুহাতে মেঘালয়ের গলা জাপটে ধরে বললো, “কি জন্য?”
– “এইযে আমার বন্ধুটাকে স্বাভাবিক করে ফেলেছো একদম।”
– “তোমার বন্ধুরা আমাকেও যে অনেক কিছুই শিখিয়েছে।”
– “যেমন?”
– “কিভাবে কনসিভ করতে হয়?”
– “হোয়াট!”
মেঘালয় চেঁচিয়ে উঠলো। মিশু খিলখিল করে হেসে উঠলো। ওর কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বললো, “আহা রাগ করোনা। সায়ান ভাইয়া আমাদের বিয়ের দিনই আমাকে বলেছিলো কথাটা। ভালোর জন্যই বলেছে। তুমি রেগে যেওনা আবার।”
– “আমিতো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।”
মিশু হেসে উঠলো। মেঘালয় ওর পেটে হাত দিয়ে মৃদু চাপ দিয়ে বললো, “তুমি পুরোটাই শুধু আমার। কক্ষনো এর বিন্দুমাত্র ভাগ যেন কেউ না পায়।”
– “আজব! আমি আবার কার হতে যাবো? আচ্ছা মেঘ,তুমি কখনো কারো প্রেমে পড়োনি?”
মেঘালয় একটু কাশলো। এই প্রশ্ন কখনো করেনি মিশু। আগে তো নিতান্তই বাচ্চা স্বভাবের ছিলো। এতকিছু বুঝতো না। আজকাল অনেক কিছু বুঝতে শিখেছে,তাই সাংঘাতিক সব প্রশ্নও করতে শিখে গেছে। মিশু বললো, “বলোনা মেঘমনি,তোমার প্রেমের গল্প বলো।”
– “শুনতেই হবে? আজকের দিনে না শুনলে হয়না?”
– “ছ্যাঁকা খেয়েছিলে?”
মেঘালয় বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। ওর মুখটা খুবই করুণ দেখাচ্ছে। মিশু অন্ধকারেও আবছায়া করুণ মুখটা দেখে শিউড়ে উঠলো। মেঘালয়ের অতীত নিয়ে কোনো মাথাব্যথাই নেই ওর। তবুও কেন যে প্রশ্নটা করতে গেলো! যখনি কিছু বলতে যাবে এমন সময় মেঘালয় বললো, “আমার একটা গার্লফ্রেন্ড ছিলো।”
– “কি হয়েছে তার? চলে গেছে?”
– “যেতে বাধ্য হয়েছে।”
– “তুমি তাকে বাধ্য করেছো? নাকি ছেড়ে দিয়েছো?”
মেঘালয় মিশুর মাথাটা নিজের বুকে নিয়ে চেপে ধরলো। তারপর ধীরেধীরে বলতে শুরু করলো, “আমার সাথে ওর পরিচয় মাত্র কয়েকদিনের। আমরা একই ডিপার্টমেন্টে পড়তাম। পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব, তারপর রিলেশন। ও ছিলো খুব বেশি স্মার্ট। যদিও অতবেশি স্মার্ট মেয়েদেরকে আমার পছন্দ নয়। তবুও যেহেতু ভালো ফ্রেন্ডশিপ ছিলো, ও আমাকে প্রপোজ করায় আমি না করতে পারিনি। অবশ্য অনেক মেয়েই প্রপোজ করতো আমায়। কিন্তু ওর গুরুত্বটা একটু বেশি ছিলো। ওর জন্য অনেক ছেলে লাইন ধরে থাকতো, কিন্তু ও আমাকে ছাড়া আর কাউকে পাত্তা দিতো না। এজন্যই আমার ওকে বেশি ভালো লাগতো।তারপর প্রেম শুরু হয়..”
মিশু কৌতুহলী হয়ে উঠলো ক্রমশই। দারুণ একটা প্রেম ছিলো তো মেঘালয়ের। ও অন্ধকারেই মেঘালয়ের মুখটা দেখার চেষ্টা করে বললো, “তারপর?”
মেঘালয় বললো, “ও খুব ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়তো। আর অনেক সময় বাইরে বের হলেই দেখতাম ক্লিভেজ বের করে রেখেছে। আমি খেয়াল করলেই ঢেকে ফেলতো। আমার একদিন প্রচণ্ড রাগ হলো ওর উপর। রেগে বললাম, এটা কেমন স্মার্টনেস তোমার? এই নোংরামি আমি সহ্য করবো না। ও আমার কাছে মাফ চাইলো। বললো আর কখনো এরকম করে বাইরে বের হবেনা। আমি মাফ করে দিলাম। এরপর আবারো একদিন দেখলাম ওরকম করে বেড়িয়েছে। আমার রাগ চড়ে গেলো একদম। দিনদিন নোংরামির সীমা অতিক্রম করে ফেলছে। ওকে বলতেই ও বলল,তোমার জন্যই ওটা বের করে রাখি।”
মিশু চুপ করে আছে। কোনো কথা বলছে না। একটু পর মেঘালয় আবারো বললো, “এই একটা জিনিস নিয়েই প্রচণ্ড রকম ঝগড়া হতো ওর সাথে। ওর কাছে স্মার্টনেস মানেই ছিলো শরীর প্রদর্শন করা। আমার নিজের ভূলের জন্য আফসোস হচ্ছিলো। এরকম একটা মেয়ের সাথে রিলেশনে জড়ালাম কিভাবে সেটার জন্য নিজের উপর নিজেরই রাগ হতো। ওর বেয়াদবি আমার অসহ্য লাগতে শুরু করেছিলো। আমি আস্তে আস্তে কথা কমিয়ে দিতে লাগলাম।”
মিশু মাথা ঝাঁকিয়ে বললো, “তারপর?”
মেঘালয় বললো, “আমি যত সরে আসি,ও তত কাছে এগিয়ে আসে। দিনরাত ফোন দিতে থাকে। বারবার মাফ চায় আমার কাছে। আমি মাফ করে দিলাম আবারো। বললাম, তৃতীয়বার আর মাফ করবো না। ভালো জামাকাপড় কিনে দিলাম। বলে দিলাম এখন থেকে এসব পড়ে বের হবা। অত বেশি আপডেট হওয়ার দরকার নাই। ও সেটা করলো কয়েকদিন। কামিজ পড়ে ভার্সিটিতে আসতো, চুল বাঁধতো সুন্দর করে। এরপর আমার সাথে আবারো কথা ঠিকমত শুরু হলো। কিন্তু একদিন হঠাৎ একটা রেস্টুরেন্টের দোতলায় আমি আমার ফ্রেন্ডদের সাথে গিয়ে ওকে একটা ছেলের সাথে দেখতে পাই। আমি তখন ওকে কিছু বলিনি। বাসায় ফিরে ও নিজেই আমাকে ফোন দিয়ে বলল ছেলেটা ওর কাজিন ছিলো। আমি সেটাই মেনে নিলাম। এটা নিয়ে আমার অভিযোগ নেই, আমার অভিযোগ ছিলো ওর ড্রেস আপ নিয়ে। সেদিন ওকে আবারো জিন্স ও শার্টে দেখেছি। শার্ট পড়েছো ভালো কথা,কিন্তু আবারো ক্লিভেজ বের করে রাখছে। আমার রাগের মাত্রা সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিলো। আমি রাগে চোটে ওকে কি বলেছি নিজেও জানিনা। সে নিজে থেকেই সরে গেছে আমার লাইফ থেকে। আমাকে মুখ দেখানোর মত মুখ হয়ত ওর ছিলোনা।”
মেঘালয় একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। মিশু বললো, “সবই তো বুঝলাম কিন্তু এই ক্লিভেজটা কি সেটাই তো বুঝলাম না।”
মেঘালয়ের হাসি পেলো প্রশ্নটা শুনে। ও মিশুকে একটু সোজা করে বসিয়ে স্পর্শ করে দেখিয়ে দিলো ক্লিভেজ কাকে বলে। মিশু লজ্জায় মেঘালয়ের বুকে মুখ গুঁজে দিয়ে বললো, “অত বাজে মেয়েও আছে আমাদের দেশে?”
– “তুমি দেখছি কিছুই জানোনা। আজকালকার মেয়েরা কতটা নোংরামি করে ভাবতেও পারবা না। এদের কাছে স্মার্টনেস মানেই হচ্ছে শরীর প্রদর্শন করে বেরানো।”
– “আজকালকার ছেলেরা তো ওসবই পছন্দ করে। তুমি আবার করোনা কেন?”
মেঘালয় বললো, “আমার ফ্যামিলি আমাকে সেই শিক্ষা দেয়নি। কাউকে ঠকানোর মানসিকতা নেই বলে পরপর দুবার আমি ওকে মাফ করে দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম সে ভালো হয়ে যাবে। অবশ্য আগে যদি বুঝতাম ও ওরকম তবে রিলেশনশিপ হতোনা। প্রেম হওয়ার আগে সে দিব্যি ভালো মানুষ ছিলো।”
– “উম বুঝেছি এবার। ভালোই হয়েছে,নয়ত আমি তোমাকে পেতাম না।”
মেঘালয় বললো, “হুম। আমিও এই পুতুলটাকে পেতাম না। অবশ্য ব্রেকাপের পরই নিয়ত করেছিলাম, জীবনে কখনো এত অতি আধুনিক মেয়েকে বিয়ে করবো না। এদের ফ্যাশনেই সময় চলে যায়,ভালোবাসা আর কেয়ারনেসের সময় কই ওদের?”
মিশু বললো, “এজন্যই তো বলি,মেঘালয়ের পেছনে এত মেয়ে ঘোরে অথচ সে কেন আমাকে এত ভালোবাসে!”
মেঘালয় বললো, “তুমি আমার লক্ষী একটা বউ যে তাই। পিচ্চি মেয়েটাকে নিজে হাতে কলমে সবকিছু শিখিয়ে দিলাম,মানুষ করলাম, এতে কি কম আনন্দ?”
মিশুর বড্ড সুখ সুখ লাগছে। ও মেঘালয়ের বুকে মুখ গুঁজে দিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে লাগলো। ছেলেটা এত্ত ভালো কেন! আজীবন যেন এভাবেই থাকে। নয়ত মরেই যাবে ও।
৬৫.
খাগড়াছড়িতে ওরা বাস থেকে নামলো সকালবেলা।
সায়ান ও আরাফ ঘুমিয়ে পড়েছিলো। ঘুম ভাংলে মেয়েদুটোকে আর দেখতে পেলোনা। আগেই কোথাও নেমে পড়েছে হয়ত। ফাজলামি করে মিশুকে বললো, “ক্রাশ দুটো মরে গেলো?”
মিশু বললো, “ভেবো না তোমরা। আমি চিরুনি অভিযানে নেমেছি। দুজনের জন্য দুটো পুতুল জোগাড় করবো।”
সায়ান বললো, “আমার পুতুল দরকার নাই। মেয়ে দরকার। আমি কি বাচ্চা যে পুতুল খেলবো?”
একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো সবাই। চান্দের গাড়ি এসে হাজির। মেঘালয় মিশুর হাত ধরে নিয়ে গিয়ে ওকে গাড়িতে উঠতে বললো। মিশু মাথা বাড়িয়ে নিয়ে গাড়ির ভেতরটা দেখে নিলো। তারপর আনন্দে লাফাতে লাফাতে গাড়িতে উঠে বসতে গেলো। সায়ান ও আরাফ ছাদে উঠছে দেখে মিশু মুখটা ছোট্ট একটু করে বললো, “আমিও উঠতাম ছাদে।”
মেঘালয় একবার সবার মুখের দিকে তাকালো। বাকিরা ভেতরে বসে গেছে। মিশুর ছাদে ওঠার কথা শুনে ওরও ছাদে উঠতে ইচ্ছে করছে। পাহাড়ি রাস্তায় ছাদে যাওয়ার মজাই অন্যরকম। ডিফেন্সে কোনো ঝামেলা না করলেই হয়। ও মিশুকে ধরে ছাদে তুলে দিলো। মিশু ওঠার পর আরাফ ও সায়ান ভেতরে গিয়ে বসলো। ছাদে শুধুমাত্র ওরা দুজন। গাড়ি ছেড়ে দেয়ার পর মিশুকে শক্ত করে ধরে রইলো মেঘালয়। মেয়েটা ভয় পেতে পারে। মিশুও শক্ত করে ধরে আছে মেঘালয়কে। গাড়ি ছেড়ে দিলো সাজেকের উদ্দেশ্যে।
চলবে..
অনুভূতি
পর্ব ৪২
মিশু মনি
৬৬.
মিশুর চেঁচামেচিতে সায়ান ও আরাফও গাড়ির ছাদে উঠে বসলো। এখান থেকে দীঘিনালা অব্দি ছাদে করে যাওয়া যাবে। তারপর খুব সম্ভবত আর্মিরা আর ছাদে যেতে দেবেনা। এইটুকু সুযোগ মিস করবে কেন ওরা?
মিশু বসেছে সামনেই। মেঘালয় ওর পাশে বসে শক্ত করে হাত চেপে ধরেছে। গাড়ি ছুটছে দ্রুত গতিতে। চারিদিকের মনোরম সৌন্দর্য মুহুর্তেই গ্রাস করে ফেলতে চাইছে ওদেরকে। সায়ান ও আরাফ একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে আর প্রাণভরে নিশ্বাস নিচ্ছে। বাতাসে মিশুর নীল শাড়ির আঁচল উড়তে শুরু করেছে। মেঘালয় ওর শাড়ির আঁচল গায়ে জড়িয়ে নিয়ে আবার হাতের মুঠোয় করে মিশুর হাতে দিয়ে দিলো। মিশুর যে পরিমাণ আনন্দ হচ্ছে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। ও বারবার মেঘালয়কে জাপটে ধরছে খুশিতে।
বেশ কিছুদূর আসার পর ও আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়লো। চারিদিক এত বেশি সুন্দর! শুধু ঘন সবুজ আর সবুজ। অরণ্য’র মাঝখান দিয়ে গাড়ি ছুটে যাচ্ছে মনেহচ্ছে। মাথার উপর নীলাকাশ, গাড়ির ছাদে বাতাস এসে উড়ে নিয়ে যেতে চাইছে। মিশু বাকরুদ্ধ হয়ে চেয়ে চেয়ে দেখছে শুধু।
দীঘিনালা পৌছে গেলো তাড়াতাড়ি। মিশুকে হাত ধরে ছাদ থেকে নামানোর সময় ও উৎসুক চোখে আশেপাশে তাকালো। মেঘালয়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “এটাই সাজেক?”
মেঘালয় হেসে বললো, “না রে পাগলী। আরো ঘন্টা তিনেক লাগতে পারে সাজেক যেতে।”
– “সত্যি! আবারো ছাদে উঠতে পারবো? ইস খুব মজা হবে!”
– “ছাদে আর নাও ওঠা হতে পারে। দেখা যাক কথা বলে অনুমতি নিতে পারি কিনা।”
– “কার সাথে কথা বলবা? কে অনুমতি দিবে?”
চুল উড়ে এসে মিশুর মুখের উপর পড়েছে। মেঘালয় হাত দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বললো, “এখান থেকে আর্মির স্কটে যেতে হবে আমাদের পাগলীটা। এখানে কিছু কাজ সেরে তারপর যেতে হবে।”
মেঘালয় সায়ানের দিকে তাকিয়ে বললো, “হাতে আরো দেড় ঘন্টার মত সময় আছে। আমরা বরং হাজাছড়া ঝরনা থেকে ঘুরে আসি? কি বলিস?”
সায়ান উত্তর দেয়ার আগেই মিশু লাফিয়ে উঠলো, “তোমরা না গেলেও আমি যাবো। আমাকে নিয়ে চলোনা মেঘ। প্লিজ। আমরা ঝরনা স্নান করতে পারবো?”
মিশুকে লাফাতে দেখে মেঘালয় আর এক মুহুর্ত ও দেরি করলো না। আর্মিদের কাছ থেকে সমস্ত ফর্মালিটিজ শেষ করে এসে দ্রুত বেড়িয়ে গেলো হাজাছড়া ঝরণার দিকে। যেতে যেতে নানান বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিলো সবার মধ্যে। সায়ান বলল, “ম্যাশ ভাবি আমার গার্ল ফ্রেন্ড কই?”
মিশু হেসে জবাব দিলো, “সে তো পাবেই। সার্কুলার দিছি,দেখি কতজন এপ্লাই করে। তারপর ইন্টার্ভিউ।”
সায়ান হাসলো। মিশু গটগট করে এগিয়ে যাচ্ছে। মেঘালয় ওর হাত ধরে রেখেছে। দুজনে এগোচ্ছে আর মেঘালয় বিভিন্ন বিষয় শিখিয়ে দিচ্ছে মিশুকে। গাইড হিসেবে মেঘালয়কে ১০০ তে ৯৮ দেয়া যায়। খুবই যত্নের সাথে নিয়ে যাচ্ছে মিশুকে। আর সবকিছু দেখিয়ে দিচ্ছে নিজ দায়িত্বে।
ঝরনার কাছে পৌছতে খুব বেশি সময় লাগলো না। মিশু শাড়ি এক হাতে উপরে তুলে ছপছপ করে এগিয়ে গেলো ঝরনার দিকে। শাড়ি পড়েও মেয়েটা কিভাবে ট্রেকিং করছে ভাবাই যায়না। অদ্ভুত একটা মেয়ে বাবাহ! সবাই ওর স্টামিনা দেখে অবাক হয়ে যায়। যেখানে ট্রেকিং শেষে সবাই ক্লান্ত হয়ে পড়ে, সেখানে ও আনন্দে উল্লাস করে।
মিশু ঝরনায় গিয়ে দ্রুত পানি ছিটিয়ে খেলা করতে লাগলো। পানিতে বসে পা দুটো মেলে দিয়ে চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিতে লাগলো। পাহাড় থেকে শো শো শব্দ হচ্ছে। ঠিক শো শো শব্দও বলা যায়না। কেমন যেন ঝিরঝির একটা শব্দ। ঝরনার অন্যরকম একটা শব্দ আছে। মিশু চোখ বন্ধ করে ঝরনার জলে ভিজতে লাগলো। বুক ভরে শ্বাস নিচ্ছে আর পানিতে নেমে বসে আছে। বরফ শীতল জলে পা কেটে যাওয়ার মতন অবস্থা হয়ে যাচ্ছে। এত ঠাণ্ডা কেন এই জল! অবশ্য বেশ আরাম ও লাগছে। ঝরনার মাঝে কেমন একটা ভালোবাসা মিশে থাকে যেন।
মেঘালয়ের স্পর্শে চোখ খুললো মিশু। তাকিয়ে দেখলো আশেপাশে আর কেউ নেই,শুধু মেঘালয়। বাকিরা সবাই অন্যদিকে মুখ করে দাঁড়িয়েছে। মিশু অবাক হয়ে বললো, “হোয়াটস আপ?”
মেঘালয় ওকে টেনে তুলে এনে ঝরনার নিচে দাড় করিয়ে দিলো। একসাথে খুব জোরে পানির ঢল মাথার উপর পড়ছে যেন। মাথার তালু ফেটে যাওয়ার উপক্রম। কিন্তু বেশ ভালো লাগছে। মেঘালয় মিশুকে জড়িয়ে ধরে দুহাতে ওর মুখটা ধরলো। তারপর ঝরনার মাঝেই চোখ মেলে ওকে দেখার চেষ্টা করলো। মিশুর গালে লেগে থাকা পানির বিন্দুগুলো দেখে আজকে ওর হিংসে হচ্ছে। ইস! মেঘালয় যদি জল হতো ঠিক এভাবেই ছুঁয়ে থাকতো ওর গাল, ঠোঁট, প্রতিটা চুল।
মেঘালয় আস্তে আস্তে মিশুর মুখটা এগিয়ে এনে ঠোঁটে ঠোঁট রাখলো। মিশু হারিয়ে যেতে লাগলো সুখের অন্য এক রাজ্যে। মেঘালয় হেচকা টানে ওকে বুকে টেনে নিলো। ঝরনার নিচে ভিজতে ভিজতে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে রইলো।
অনেক্ষণ সময় নিয়ে ঝরনায় ভিজলো ওরা। গোসল শেষ করে পানিতে বসে অনেক্ষণ পানি ছিটিয়ে খেলা করলো মিশু। তারপর আবার ঝরনা থেকে ফিরে আসার জন্য বের হলো। প্রতিদিন সকাল ১১ টায় আর্মির স্কটে যেতে হয় সাজেকে। সকালে কোনোভাবে বহর মিস করলে সারাদিন অপেক্ষা করে তারপর আবার বিকেলে সাড়ে তিনটায় যেতে হয়। বিকেলে মিস করে ফেললে পরেরদিন সকাল অব্দি অপেক্ষা করতে হয় সাজেক যাওয়ার জন্য।একবার মিস হয়ে গেলে আসাটাই তো বৃথা। এজন্যই কোনোভাবে স্কট মিস করা যাবেনা। সবাই দ্রুত চলে আসলো।
সাড়ে দশটার পরপরই আবারো চান্দের গাড়ি ছেড়ে গেলো দীঘিনালা হতে। মেঘালয় আর্মির সাথে কথা বলে মিশুকে নিয়ে ছাদে ওঠার অনুমতি নিয়েছে। একদম ভেজা শরীর,তার উপর ভেজা শাড়ি। এ অবস্থায় ভেতরে বসে গেলে মিশুর জ্বর এসে যাবে। এমনিতেই মেয়েটা ঠাণ্ডা সহ্য করতে পারেনা। আজকে অনেক্ষণ ঝরনায় ভিজেছে। ছাদে গেলে রোদ ও বাতাসে শুকিয়ে যাবে শাড়ি। দুজনে ছাদে বসে একে অপরকে জড়াজড়ি হয়ে রইলো। গাড়ি খুব দ্রুত ছুটতে লাগলো।
মিশু ক্রমশই উৎফুল্ল হয়ে উঠছে। আঁকাবাঁকা সর্পিল রাস্তা। ঠিক যেন সাপের মত এঁকেবেঁকে চলেছে। কখনো উঁচু,কখনো নিঁচু। কখনো ঘন সবুজ অরণ্য আবার কখনো স্বচ্ছ নীলাকাশ চোখে পড়ে। খুব কাছ থেকে মেঘের ভেলা ভেসে যেতেও দেখা যায়। গাড়ি এগিয়ে চলেছে এঁকেবেঁকে। একদম রোলার কোস্টারের মত। মিশু আনন্দে কথাই বলতে পারছে না। বারবার কিছু একটা বলতে চাইছে কিন্তু কোনো শব্দ বেরোচ্ছে না মুখ দিয়ে। যত এগিয়ে যাচ্ছে,পাহাড়ি এলাকার মনোরম সৌন্দর্য ভেতরটাকে কেমন এলোমেলো করে দিচ্ছে। দুমড়ে মুচড়ে যেতে চাইছে। এত সুন্দর কেন সবকিছু! একদম ছবির মত সুন্দর! ইচ্ছে করছে মেঘগুলো হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দেখি। ইস! কখন যে মেঘ ছুতে পারবো!
মেঘালয়ের আঙুলের ফাঁকে আঙুল রেখে মিশু চোখ ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছে রাস্তার দিকে। প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছে ভেতর থেকে। আর কোনো কিছুই শুনতে চায়না ও। শুধু হৃদয় ভরে স্বাদ নিতে চায় এ প্রকৃতির সবটুকু সৌন্দর্যের। দুচোখ ভরে দেখতে চায় সমস্ত নীল, মেঘ, সবুজ, সব সবকিছু।
মিশুর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে এত সুন্দর দেখতে দেখতে। সাজেকের কাছাকাছি চলে আসার পর ও কেঁপে কেঁপে উঠতে লাগলো। মেঘালয় খেয়াল করে দেখলো মিশু কাঁদছে। ওর হাত শক্ত করে চেপে ধরে রেখে সমানে কেঁদে যাচ্ছে মেয়েটা। আর এত সুন্দর দেখলে কাঁদবে না ই বা কেন? সর্পিলাকার এই রোলার কোস্টারের মতন রাস্তাটার দুধার বেয়ে সুন্দর ঝাউ জংগল। দূরে দেখা যায় বিস্তৃত পাহাড়। কখনো আবার পাহাড়ের গা ঘেষে গাড়ি চলে যায়। ধীরেধীরে যত কাছে আসছে, প্রকৃতি তত বেশি মুগ্ধ করে দিচ্ছে। রুইলুই পাড়ার কাছাকাছি চলে এসেছে। দুপাশে সুন্দর লাল সবুজ রঙের বাড়ি। সবকিছু একদম ছবির মতন সাজানো গুছানো আর সুন্দর। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে মেঘ জমে আছে, মেঘ আটকে আটকে আছে সবখানে। কিছু মেঘ আবার ধীরেধীরে উড়ে চলে যাচ্ছে এক পাহাড়ের উপর দিয়ে আরেক পাহাড়ে। দূর থেকে এসব দেখেই প্রাণ জুড়িয়ে যেতে চায়। চোখে আপনা আপনি পানি চলে আসে!
সাজেকে পৌছে গেলো ওরা। আগে থেকেই কটেজ ঠিক করা ছিলো। ভেতরে এসে মিশুকে তাড়াতাড়ি শাড়ি বদলাতে বললো মেঘালয়। মিশু কিছুতেই ভেতরে আসতে চাইছিলো না। ওর ছুটে গিয়ে পাহাড় আর আকাশের বিশালতা অনুভব করতে ইচ্ছে করছিলো। মেঘ পাহাড়ের ভাজে ভাজে আটকে আছে,দেখতে কি যে সুখ লাগে! কখন চোখ ভরে দেখতে পারবে সমস্ত সৌন্দর্য? ও একদম অস্থির হয়ে উঠলো।
রুমে ঢুকেই মেঘালয় ভেজা কাপড় ছেড়ে তোয়ালে গায়ে পেঁচালো। মিশুর শাড়ি খুলে ফেলে দিয়ে ওর তোয়ালের ভেতরে টেনে নিলো মিশুকে। মিশুর ভালো লাগছে না মেঘালয়ের সাথে থাকতে। ছুটে বাইরে চলে যেতে ইচ্ছে করছে। মেঘালয় একটা তোয়ালের ভেতরে দুজনের শরীর ভালমতো পেঁচিয়ে নিলো। মিশু ওর উষ্ণ স্পর্শে আরো অস্থির হয়ে উঠলো। দুহাতে মেঘালয়ের গলা জাপটে ধরে বললো, “তাড়াতাড়ি চলোনা বাইরে যাই। প্লিজ?”
– “যাবো তো পাগলী টা। এখন বের হয়ে কোথায় যাবা? এতটা পথ জার্নি করে আসলাম। এখন ফ্রেশ হয়ে খেয়েদেয়ে একেবারে বের হবো।”
– “এখানে মেঘ কোথায় ছোঁয়া যাবে?”
– “পাহাড়ের উপর। আমি নিয়ে যাবো তো পাগলী, এত অস্থির হচ্ছো কেন?”
– “আমার যে আর তর সইছে না। সবকিছু এত সুন্দর কেন!”
– “তোমার মেঘ কি সুন্দর নয়?”
মিশু একবার তাকালো মেঘালয়ের শরীরের দিকে। গলা থেকে বুক অব্দি দারুণ ফর্সা, আর বুক থেকে শুরু করে নাভি পর্যন্ত লোমে আবৃত। মিশু আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, “তোমার মত সুন্দর জিনিস আমি আর একটাও দেখিনি লাইফে।”
– “হা হা, জিনিস বলছো কেন?”
– “তুমি সবকিছুর চেয়েও সুন্দর। তোমার চোখের মাঝে ডুব দিলেই মনেহয় স্বর্গ খুঁজে পাবো। তোমার ঠোঁটের ভেতরে রাজ্যের সমস্ত রূপকথা লুকিয়ে থাকে। তোমার শরীরের গন্ধে আমি উন্মাদ হয়ে যাই।”
– “আর?”
মেঘালয় মিশুর চোখে চোখ রেখেছে। একই তোয়ালের ভেতরে দুজনের উষ্ণ শরীর মিশে যাচ্ছে ধীরেধীরে। মিশু কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলছে আস্তে আস্তে। মেঘালয়ের চোখের তীব্রতার কাছে হার মেনে যাচ্ছে ওর মুগ্ধ চোখ। এভাবে তাকায় কেউ! খুন হয়ে যাবো তো! মিশু চোখ নামিয়ে নিয়েও থাকতে পারেনা। মেঘালয়ের কাঁপা কাঁপা ঠোঁট দুটো আলতো করে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে হয়। ছেলেটা এত্ত মিষ্টি কেন!
মেঘালয় বললো, “মেঘ ছোঁবেনা?”
– “ছুঁয়েই তো আছি।”
– “মেঘ তোমার গাল,মুখ, ঠোঁট সব ভিজিয়ে দেবেনা?”
মিশু শিউড়ে উঠে বললো, “এভাবে বলতে হয়না মেঘ। আমিতো পাগল হয়েই যাবো।”
– “আর আমিতো হয়েই আছি। কতবার কতরকম ভাবে কাছে পেয়েছি তোমায়। তবুও কেবলই মনেহয়, এই বুঝি প্রথম স্পর্শ করছি। এমন হয় কেন মিশু?”
মিশু মেঘালয়কে জরিয়ে ধরে বললো, “জানিনা। কিচ্ছু জানিনা। শুধু জানি, ভালোবাসি, খুব ভালোবাসি।”
চলবে..