#অনুভূতির_সুপ্ত_কোণে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৪
.
মেহের এবার পিছাতে পিছাতে একপ্রকার দেয়ালের সাথে ঠেকে গিয়েছে আর আদ্রাফ গম্ভীর দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে মেহেরের দিকে। শ্যামবর্ণের ছেলের এমন গম্ভীর দৃষ্টির জালে মেহেরের চোখ যেন আটকে গিয়েছে। তবুও সে আপ্রাণ চেষ্টায় মগ্ন এ দৃষ্টিকোণ থেকে আস্তে করে সরে আসার জন্য। একপাশ দিয়ে সরে আসতেই আদ্রাফ হাত দিয়ে ওকে আটকে দেয়।
মেহের এবার যায় কোথায়। ক্রমাগত শুকনো ঢোক গিলার ব্যর্থ প্রচেষ্টা মেহেরকে প্রয়োগ করতে দেখে একটা অদ্ভুদ হাসি হাসে আদ্রাফ।মেহেরের কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে…
.
—আজ আর কিছু বললাম না। next time তুমি যদি আমারে ভাই বলে ডাকো তার ফলাফল কিন্ত খুবই ভয়ঙ্কর হবে। so be careful মেহু !
.
আদ্রাফের গম্ভীরভাবে ফিসফিসানোর ধরন দেখে চোখ ছোট ছোট করে ফেলে মেহের। ঠোঁট উল্টে মিনমিনিয়ে বলে ওঠে….
.
—কসম আল্লাহর !আর জীবনে তোমারে ভাই বলবো না।এখন তো আমারে যেতে দাও জামাই?
.
—হুম।
.
আদ্রাফের কাছ থেকে ছাড়া পেতেই ঝড়ের গতিতে রুম থেকে বেরিয়ে পড়ে মেহের। এতক্ষণ কেউ যেন ওর বুকে পাথর চাপা দিয়ে রেখেছিলো।যদিও আদ্রাফকে ওর কখনোই পছন্দ ছিলো না। কেননা মেহের হলো চঞ্চল প্রকৃতির , যে নিজের চাঞ্চল্যতা দিয়ে সবাইকে মাতিয়ে রাখে । আর আদ্রাফ হলো ওর পুরোটাই উল্টো…..শান্তিশিষ্ট, চুপচাপ স্বভাবের। তাই মেহের এতকিছু করার পরেও সহজে রাগে না সে। কিন্ত যখন ওর উদ্ভট কান্ডের মাত্রা পেরিয়ে যায় তখনই সে মেহেরকে শায়েস্তা করে।
.
যা মেহেরের মোটেও পছন্দ না। কিন্ত আদ্রাফের প্রতিটা মুভমেন্ট ছোটবেলা থেকেই ওর কাছে চোখ ধাধানোর মতো মনে হতো। আগে নাদিয়ার সাথে দেখা করার জন্য প্রায়ই এবাড়িতে আদ্রাফের সাথে দেখা হয়েছে ওর। কিন্ত আদ্রাফ সবসময়ই নাদিয়ার সব ফ্রেন্ডসদেরই এড়িয়ে চলতো।যার কারনে আদ্রাফ সম্পর্কে তেমন ভালোভাবে অবগত হতে পারেনি সে।
কিন্ত এখন আবারও অদ্ভুদ কারনে আদ্রাফের মতো শান্তশিষ্ট মানুষের প্রতি মায়া নামক অপ্রত্যাশিত অনুভূতির জন্মেছে মেহেরের। ওকে নিজের কাছে অনুভব করলেই যেন সকল ভাবনাগুলো গোলমেলে হয়ে যায়। কেন?তার উত্তর মেহের কাছে এখন নেই।
.
.
.
সন্ধ্যার সময়ে রান্নাঘরে নিজের শ্বাশুড়ির সাথে চা বানানোর আমেজ নিয়ে গল্পের আসর জমিয়েছে মেহের।ছোটবেলা থেকেই এই মানুষটাকে নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড নাদিয়ার থেকেও বেশি ভালোলাগে মেহেরের। কারন তনুআন্টি খুবই বন্ধুসুলভ আর মিশুক স্বভাবের। মুখে সর্বদা একপ্রকার যেন মিষ্টি হাসি ঝুলেই থাকে। অন্যন্য টিপিক্যাল মা’দের তুলনায় উনি বেশ অন্যরকম বলেই তাকে মেহেরের বেশ পছন্দ।
.
—আন্টি , দেখোতো চা তে চিনি হয়েছে কি-না?
.
মেহেরের এই প্রশ্নে যেন ভীমড়ি খেয়ে পড়ে তনু বেগম। কটাক্ষ গলায় বলে ওঠে…..
—এই মেয়ে?দেবো এক থাপ্পড়। তোমায় আমি সবসময় বলেছি যে তুমি আমার মেয়ের মতো। তবুও তোমার মুখে কখনো আন্টি ছাড়া আর কিছু শুনলাম না। আর তুমি এখন আমার ঘরের বউ আর এখনও তুমি আমায় আন্টি বলেই ডাকবে?
.
কটাক্ষ গলায় কথাগুলো বললেই সেখানে অভিমানের সুর মেহের স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। আলতো হেসে সে প্রতিউত্তর দেয়..
.
—আচ্ছা সরি। আর কখনোই তোমায় আন্টি বলবো না। কত্ত কিউট তুমি? আমি বুঝলাম না তোমার ছেলেমেয়ে গুলা কেন এমন কচুপাতা টাইপ হলো? একেবারে রসকসহীন !
.
মেহেরের কথা শুনে হেসে দেয় তনু বেগম। রান্নাঘরের কাঠের তাক থেকে টোস্ট বিস্কুটের বক্স বের করতে করতে মেহেরের উদ্দেশ্য বলে…..
.
—ওরা দুজনেই অবশ্য ওর বাবার মতো হয়েছে। নাদিয়া তো তোমার সাথে মিশে একটু দুষ্টুমি মজলিশে মেতে ছিলো। কিন্ত আদ্রাফ কখনোই এমন ছিলো না। কিন্ত মন থেকে ও অনেক ভালো।
.
—হুহ ! ভালো না ছাই ! বেশশরমের হিডেন সফটওয়্যার ওর মধ্যে আগে থেকেই ইনস্টল করা ছিলো। (মেহের মনেমনে)
.
.
.
রাত গভীর হওয়ার সাথে সাথে মেহেরের চোখের ঘুম যেন ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে। আদ্রাফও একটু জরুরি কাজে বাইরের থেকে এসেই সেই যে ল্যাপটপ নিয়ে বসলো চারিদিকের আর কোনো হুশঁ জ্ঞানই নেই। একরাশ বিরক্তি নিয়ে একঘন্টার মধ্যে রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতা উপন্যাসটি পড়ে ফেললো। কিন্ত এখনও আদ্রাফকে সেই আগের জায়গাটিতে দেখে ভ্রু কুচকে ফেলে সে।
কারও সাথে এখন যদি মেহের কথা না বলে সত্যিই দমবন্ধ হয়ে মরে যাবে সে। শেষপর্যন্ত অধৈর্য হয়ে আদ্রাফের কাছ থেকে ল্যাপটপটি কেড়ে নেয় সে। আদ্রাফ হঠাৎ মেহেরের উদ্ভট কান্ডে খনিকটা হতভম্ব হয়ে যায় যার রেশটি ওর চশমার ভেতর দিয়ে স্পষ্ট দেখতে পারছে মেহের।
.
আদ্রাফের সবসময়ই কাজ করতে গেলে চশমার প্রয়োজন হয়।আর যখন ও চশমা পড়ে ওকে দেখতে মেহেরের কাছে চরম লাগে।তাই হঠাৎ আদ্রাফের চশমা ভেদ করে নজরকাড়া সেই দৃষ্টি দেখে মেহেরের বিরক্তিটা কেমন করে যেন পাল্টে যায়।
.
আদ্রাফ গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠে……
.
—কাজ করছিতো আমি? এভাবে ল্যাপটপটা নিলে কেন?
.
মেহের নিশ্চুপ। তার অনুভূতিটা যেন গুলিয়ে গিয়েছে । কোনোমতে আমতা আমতা করে বলে ওঠে….
.
—আমার ভালোলাগছে না।
.
—ভালোলাগছেনা মানে?
.
—কতক্ষণ ধরে এমন করে বসে আছি। আর তুমি তো সেই যে ল্যাপটপ নিয়ে বসেছো আমার দিকে চোখ তুলেও তাকাচ্ছোনা।
.
—তো আমি এখন কি করতে পারি।
.
আদ্রাফের তীক্ষ্ণ চাহিনী দেখে আবার চুপসে গিয়েছে মেহের। কিছুক্ষণ নীরবতা পার হওয়ার পর মেহেরের কোনো প্রতিউত্তর না পেয়ে আদ্রাফ বলে ওঠে…….
.
— আচ্ছা। আমি এখন আর কাজ করবো না। তোমার ভালোলাগছেনা তাইতো? আর আমার মাথাটা প্রচুর ব্যাথা করতেছে। তাই তুমি এখন আমার মাথা টিপে দাও।
.
—কি?
.
আদ্রাফ চট করে খাটে শুয়ে পড়ে।এমন ভাব করছে যে এই মুহূর্তে প্রচণ্ড ক্লান্ত সে। মিহি গলায় সে বলে ওঠে….
.
—দেখো মিহু….মাথাটা আমার এখন প্রচন্ড ব্যাথা। তাছাড়া তোমারও ভালোলাগছে না তাই এখন গুড গার্লের মতো আমার মাথা টিপে দাও। জলদি !
.
মেহেরকে এখন কোনো হতাশাগ্রস্থ থেকে কোনো কম কিছু মনে হচ্ছে না। মিনমিনিয়ে সে বলে ওঠে….
.
—আল্লাহই জানে কতক্ষণ আমারে দিয়ে এই ব্যাটায় মাথা টিপাবে?😒
.
.
.
~চলবে
.