#অনুভূতির_সুপ্ত_কোণে🍂
#কায়ানাত_আফরিন (মাইশা)
পর্ব:১১
.
বিগত তিনদিন ধরে আদ্রাফের সাথে কোনো যোগাযোগ না থাকায় মেহেরের মাথার নিউরন যেন বিধ্ধস্ত হয়ে গিয়েছে। এই ছেলেটা যে এত পরিমাণ জেদি হয়তো এই তিনদিন তার জীবনে না আসলে এই ইহকালে সে জানতে পারতো না। আজ তাই তড়িঘড়ি করে তনু বেগমের সাথেই ফিরে এসেছে আদ্রাফদের বাড়িতে।
এখন আদ্রাফ বাসায় নেই। অফিসে গিয়েছে বলেই মেহেরের ধারনা। তাছাড়া এখন মাত্র সন্ধ্যা। আদ্রাফ আসবে প্রায় নয়টার দিকে। সোফায় বসে বসে ঠোঁট কামড়াচ্ছে আর ভাবছে যে আদ্রাফের রাগটা কি করে কমানো যায়। কিন্ত তার ছোট্ট মস্তিষ্ক এর কোনো সমাধান দিতে পারলো না। তনু বেগম মেহেরকে বারবার দেখছেন যে হচ্ছেটা কি। পরে সে বলে ওঠে………….
.
—-মেহের ? কি ভাবছো?
.
—-ভাবছি কিভাবে আপনার আদরের পুত্রটার মাথা ঠান্ডা করা যায়।
.
মেহের কথাটি বিড়বিড়িয়ে বললেও তা বুঝতে পেরেছিলেন তনু বেগম। আনমনে হেসে ওঠে মেহেরের কথা শুনে।
.
—–এভাবে বসে থাকলে কি আর হবে?এক কাজ করো। আদ্রাফের জন্য ওর পছন্দের খাবার বানিয়ে রাখো। পারবে তো?
.
কথায় বলে , খাবার নাকি শত্রুকে বন্ধু করতে পারে। আর আদ্রাফ তো ওই ধারের কাছেও না। তবে ওর রাগটা কি ঠান্ডা করা যাবে না। মেহের এটা ভেবেই দাঁত কেলিয়ে একটা প্রশস্ত হাসি দেয়। যেন পিরামিডের ভেতরে প্রবেশের মানচিত্র উদ্ধার করেছে সে। আবেগে আপ্লুত হয়ে সে তনু বেগমকে বলে ,
.
—মা , ফাটাফাটি একটা বুদ্ধি দিয়েছো। আচ্ছা বলতো কি রান্না করতে পারি?ওর পছন্দের খাবার কি? পোলাও-বিরিয়ানি-নাকি খিচুড়ি?
.
—-নারে মেহের? আদ্রাফ ঝাল তেমন একটা খেতে পারে না। ওর জন্য মিষ্টি আইটেম যেমন ফালুদা-গাজরের হালুয়া বা সুজির হালুয়া-পায়েস, ক্ষীর এগুলা বানাও। আর রাতে ভাত মাংস যা আছে ওগুলাই খাবে।
.
মুখটা মলিন করে ফেলে মেহের। পায়েস ছাড়া মেহের আর কিছুই বানাতে পারেনা। মুখ ফুলিয়ে বলে ওঠে………..
.
—-তোমার এক মেয়ে তো কম্পিটিশনে আমার সাথে ঝাল ফুচকা খেতো আর আরেক ছেলে দেখি ঝালই খেতে পারেনা। কি ভয়ঙ্কর !
.
মেহেরের কথা শুনে হেসে দেয় তনু বেগম। মেহেরের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে………..
.
—-আরে আমি আছি না ! তোমায় হালুয়া আর ফালুদা বানানো শিখিয়ে দেবো নে। ফালুদা বানানো সহজ।সেখানে ডেকোরেটিংটাই আসল বিষয়। আর হালুয়া বানানো একটু ঝামেলাদায়ক। বাসায় তো গাজর নেই তাই আজ সুজির হালুয়া বানিয়ো কেমন?
.
—হুম😒
.
.
.
.
একে একে পায়েস-ফালুদা আর সবশেষে সুজির হালুয়া বানিয়ে মেহেরের নিজেকে বিধ্ধস্তবেশী মনে হচ্ছে। হাতে-নাকে-মুখে সবজায়গাতেই সুজি দিয়ে মাখামাখি। নাকের ডগায় আর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম থাকার কারনে সুজিগুলো একেবারে মুখের সাথে লেপ্টে আছে। কোনো ময়দা সুন্দরী থেকে মেহেরকে এখন কম কিছু মনে হচ্ছ না। তনু বেগম মেহেরের এ দৃশ্য দেখে হাসি চেপে রেখেছে।
মেহের কাদো কাদো স্বরে বলে ওঠে………….
.
—-মা ! তুমি আমায় দেখে এভাবে হাসছো কেন? আমায় দেখতে কি পুরাই বেঁদের মেয়ে জোছনা লাগছে?
.
—-আয়নায় গিয়ে নিজের মুখ দেখো। রাধঁতে গিয়ে দেখো কি অবস্থা করেছো !
.
—-আমি এখনই গোসল করে আসছি। তাছাড়া আদ্রাফের আসতে এখন অনেক দেরি। আমি গেলাম।
এই বলে মেহের হুড়মুড়িয়ে রান্নাঘর থেকে চলে আসে।
.
.
.
আজ অফিস থেকে বেশ তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরে এসেছে আদ্রাফ। কাজ মোটামুটি তাড়াতাড়িই শেষ হয়ে গিয়েছিলো। সারাদিন এত প্রেশারে থাকার কারনে নিজেকে বেশ ভারসাম্যহীন লাগছে আদ্রাফের। তাই বাড়িতে এসেই তাড়াতাড়ি ফ্রেস হওয়ার জন্য রুমে চলে যায় সে। যদিও বাড়িতে ঢোকার সময় তনু বেগম কিছু বলতে চেয়েছিলেন কিন্ত আদ্রাফ তাকে সময় না দিয়ে বলে ওঠে…….
.
—-মা আমি ফ্রেস হয়ে এসে কথা বলছি।
.
নিজের রুমে প্রবেশ করতেই অদ্ভুত এক কারনে মেহেরের গায়ের ঘ্রাণ আদ্রাফের নাকে আসতেই আদ্রাফ একটু অবাক হয়। ঘরটা মোটামোটি আধাঁরে ছেয়ে আছে। লাইট জ্বালিয়ে কাউকে না পেয়েই নিশ্চিত হয় যে মেহের এখানে নেই।
মেহেরের চিন্তাটা সে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে চাচ্ছে । দরজাটি লাগিয়ে নিজের শার্টটি খুলে আলমারি থেকে নিজের গেন্জি আর ট্রাউজার বের করতেই ওয়াশরুম থেকে কারও দরজা খোলার শব্দ পায়।পেছনে ঘুরে আদ্রাফ যেন রীতিমতো শকড হয়ে গিয়েছে। কেননা তার সামনে স্বয়ং মেহের দাঁড়ানো।
.
গোসল শেষে দরজা খুলে হঠাৎ আদ্রাফের সামনে পড়তেই মেহের থমকে যায়। একবার নিজের দিকে তাকায় আর একবার আদ্রাফের দিকে তাকায়। জীবনে হয়তো এর থেকে জঘণ্য কোনো পরিস্থিতিতে আদৌ পড়েছে কি-না মেহেরের তা মনে হয় না। মেহেরের গায়ে কোনো ওড়না নেই। এটাই স্বাভাবিক। দুমিনিটের মাথায় যখন দুজনেই বুঝলো যে এখন তারা কোথায় আছে এটা বুঝতেই সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে ওঠে দুজনে।
.
লজ্জায় মেহেরের মরে যেতে ইচ্ছে করছে। আর আদ্রাফও প্রচন্ড পরিমাণে অস্বস্তিতে পড়েছে । যখন বুঝলো যে মেহেরের গলার সাউন্ডটা চক্রবৃদ্ধিহারে বেড়ে যাচ্ছে আদ্রাফ সাথে সাথেই মেহেরের মুখ চেপে ধরে।মিহি কন্ঠে বলে ওঠে………..
.
—আরে থামো তো ! আমি চিল্লানো থামালাম তুমি থামছো না কেন?
.
মেহেরের মন চাচ্ছে আদ্রাফের মাথাটা ফাটিয়ে দিতে। একে তো উইথআউট শার্ট ছেলেটা ওর সাথে চিপ্কে আছে আবার অন্যদিকে ওর মুখ চেপে প্রশ্ন করে যাচ্ছে।ইশারায় আদ্রাফকে মুখটা ছাড়তে বললেই ছেড়ে দেয় আদ্রাফ।
.
মেহেরের এবার লজ্জা লাগছে। প্রচন্ড পরিমাণে লজ্জা লাগছে। সে তো চেয়েছিলো আদ্রাফের রাগ ভাঙগাতে । কিন্ত এ পরিস্থিতে যে সে পড়ে যাবে মেহের তা আন্দাজ করতে পারেনি।
.
—-তুমি এখানে কি করছো?
.
আদ্রাফের প্রশ্ন শুনে মেহের ওর দিকে তাকায়। আদ্রাফ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে তার দিকে। মেহের কোনো উত্তর না দিলে আদ্রাফ মেহেরের কাছে এসে পড়ে। এমনিতেও আদ্রাফকে এমনভাবে দেখতে মেহের অভ্যস্ত না তাই কাঁপাকাপাঁ গলায় বলে ওঠে……….
.
—-একটু দূরে সরো প্লিজ ! এভাবে সামনে আসছো কেন?
.
মেহেরের কথায় আদ্রাফ ভ্রুক্ষেপ না করে মেহেরের দুপাশে দেয়ালে হাত দিয়ে নিজের কাছে আবদ্ধ করে নেয়। আদ্রাফের চোখে-মুখে লজ্জা , অস্বস্তি সবকিছু ছেড়ে এবার প্রখরতা ভর করেছে। আদ্রাফ মেহেরকে বলে ওঠে…………
.
—-আমি সরবো না। আগে বলো তুমি এখানে কেন? খুব তো বলেছিলে জীবনেও আমার কাছে আসবে না ; তাহলে?
.
—-আরে ওটাতো রাগের মাথায় বলে দিয়েছিলাম………(মুখ ছোট করে)
.
আদ্রাফ কিছু বলতে যাবে মেহেরকে এ অবস্থায় দেখে চোখ সরিয়ে ফেলে মেহেরের কাছ থেকে।পাশের থেকে টাওয়েল নিয়ে ওয়াশরুমে যেতে যেতে বলে ওঠে…………
.
—-তোমায় আমি পরে দেখছি।
আদ্রাফ সশব্দে ওয়াশরুমের দরজা লাগাতেই মেহের যেন এক স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে।
,
,
,
,
ডাইনিং টেবিলে এত খাবারের বাহার দেখে আদ্রাফের মুখে অবাকের রেশ দেখা যাচ্ছে। আদ্রাফের বাবা বলে ওঠে……….
.
—-বাবাহ ! আজ তো দেখি আদ্রাফের সব পছন্দের খাবার বানানো হয়েছে।
.
—–মেহের বানিয়েছে।
.
তনু বেগমের উত্তর শুনে আদ্রাফ মেহেরের দিকে তাকায় । মেহের বিনিময়ে একটা মেকি হাসি দিতেই আদ্রাফ চোখ ফিরিয়ে নেয়। মেহেরের এতে খুব অপমানবোধ হয়েছে। মনে মনে সে বলে যে…….
.
—-এমনে জীবনেও আদ্রাফরে মানানো যাবে না। আমাকে আমার স্টাইলে ওরে মানাতে হবে।
.
মেহের এবার আদ্রাফের পায়ে সুড়সুড়ি দিতেই আদ্রাফের হাত থেকে গ্লাস পড়ে যায়। আদ্রাফ মেহেরের দিকে তাকাতেই মেহের ফ্লাইং কিস দেয় ওকে। যার কারনে আদ্রাফের গলায় যেন খাবার আটকে গিয়েছে। আবদুল্লাহ সাহেব বলে ওঠে………
.
—-কি হয়েছে আদ্রাফ? তনু ! ওকে পানি দাও তো।
.
যতবারই মেহেরের সাথে চোখাচোখি হচ্ছে মেহের ততবারই হয়তো ফ্লাইং কিস দিচ্ছে নয়তো চোখ টিপ দিচ্ছে। বেচারা আদ্রাফ তো না পারছে থাকতে আর না পারছে সরে আসতে। মেহের যে কি কারনে এমন করছে আদ্রাফ এটা ভালোমতোই জানে। এই মেয়ে যে ভবিষ্যতে ওকে জ্বালিয়ে মারবে এ নিয়েও ওর কোনো সন্দেহ নেই। মনে মনে আদ্রাফ বলে ওঠে……
.
—-কি ভয়ঙ্কর মেয়েরে বাবা !😩
.
.#অনুভূতির_সুপ্ত_কোণে🍂
#কায়ানাত_আফরিন (মাইশা)
পর্ব:১২
.
রুমে এসে মেহেরকে বিছানায় দেখে ভ্রু কুচকে ফেলে আদ্রাফ। মেহের আনমনে মোবাইল স্ক্রলে ব্যস্ত হলেও সে দেখতে চাচঞছে যে আদ্রাফ কি করবে।
.
—-আমার বেডে শুয়ে আছো কেন তুমি?
.
আদ্রাফের তীক্ষ্ণ ঝাঁঝালো ধরনের কন্ঠ শুনে মেহের আদ্রাফের দিকে তাকায়। ওর চোখে মুখে স্পষ্ট বিরক্তিভাব ফুটে উঠেছে। মেহের তবুও আদ্রাফের সেই খুঁটিনাটি বিষয়গুলো পরোয়া না করে প্রতিউত্তরে বলে,
.
—-তোমার বেড মানে কি?এই রুমে আমিও আছি।
.
—-এই কথাটা তোমার আগে মনে করা উচিত ছিলো যখন আমি তোমায় আসতে বলেছিলাম।
.
আদ্রাফের প্রতিটা কথার ভাঁজে মেহের প্রচন্ড রাগ অনুভব করতে পারছে। তবুও মেহের এটা মানতে বাধ্য যে আদ্রাফকে রাগলেও বড্ড বেশি কিউট লাগে। কালো চোখগুলো কেমন যেন টগবগ করে ওঠে। আর ঠোঁটের কথা মেহের নাহয় আর নাই ভাবলো । কেননা এই ঠোঁটেযুগল দেখলেই মেহেরের মন চায় টুস করে কামড় দিয়ে ফেলতে। মেহের বিছানায় হেলান দিয়ে বলে ওঠে ,
.
—-তোমার রাগ তুমি পুটলির মধ্যে ঢুকিয়ে রাখো। আগে যা হয়েছে সব বাদ। কোন এক জ্ঞানি জানি কি বলেছে?………….হ্যাঁ……….
”অতীতকে ছেড়ে বর্তমানকে নিয়ে ভাবো”
.
আদ্রাফ এবার আর কোনো কিছু বলে না। কারন সে জানে এই জেদি মেয়েকে কোনো কিছু বলাই বেকার। আদ্রাফ তাই এবার কোলে তুলে নেয় মেহেরকে। সাথে সাথেই মেহের হকচকিয়ে যায়। অবাকস্বরে বলে ওঠে…..
.
—-হঠাৎ আমায় কোলে নিলে কেন?
.
আদ্রাফ এবার মেহেরকে বারান্দায় নামিয়ে ভেতরে যায়। মেহের আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছে না যে আদ্রাফ কি করছে। হঠাৎ আদ্রাফ একটা বালিশ আর কম্বল ওর দিকে ছুড়েঁ মারতেই মেহের ধরে নেয়।
.
—-গুড গার্ল এর মতো বারান্দায় শুয়ে পড়ো।
.
—-আমি বারান্দায় ঘুমাবো না।
.
আদ্রাফ রুমে যেতে নিয়েছিলো কিন্ত মেহেরের কথা শুনে পিছনে ঘুরে। একটা ব্যাঙ্গাত্নক হাসি দিয়ে মেহেরের কাছে এগিয়ে আসতে আসতে বলে……
.
—-বিয়ের রাতে তো খুবই বলেছিলে যে তুমি কচি খুকি না। তাই তুমি আমার ভয়ে ছাদে থাকতে চেয়েছিলে কিন্ত তবুও আমার রুমে থাকবে না। এখন ওই সাহস কই গেলো? আমার রুমে আসলে আমি যদি কিছু করে ফেলি তোমার সাথে?
.
শেষের কথাটি আদ্রাফ মেহেরের একেবারে কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে যার দরুন মেহেরের শ্বাস যেন ঘন হয়ে এসেছে। আদ্রাফের শরীর থেকে কেমন যেন একটা মাতালকরা ঘ্রাণ তাকে নাকে আসছে আর তাই অদ্ভুদ কিছু ভয়ঙ্কর ভাবনার সম্মুখীন হয়েছে সে। কাঁপাকাঁপা স্বরে মেহের বলে যে……..
.
—–আমি জানি তততুমি এএমন কিছুই কককরবে না।
.
একটা দুষ্টু হাসি দেয় আদ্রাফ। মেহেরকে নিজের সাথে মিশিয়ে বলে ওঠে…….
.
—-অন্য সবার সামনে ভদ্র হতে পারি ; কিন্ত বউয়ের সাথে কি ভদ্র হওয়া চলে মেহু? একটু তো অসভ্যতামি করতেই হয় !
.
আদ্রাফের স্পর্শে থরথর করে কাঁপছে মেহেরের শরীর। সে চাইছে বারবার নিজেকে শক্ত করে রাখতে। কিন্ত আদ্রাফের সামনে আসলে বরাবরই তার অনুভূতিগুলো যেন হামলে পড়ে। মেহেরের এ অবস্থা বুঝে আদ্রাফ সরে আসে মেহেরের কাছ থেকে। তার দুষ্টু হাসিতে এখন প্রখরতা ভর করেছে। নিজের ট্রাউজারের পকেটে হাত গুঁজে আদ্রাফ বলে ,
.
—–আমি একটু কাছে আসাতেই তোমার শরীরে ভূমিকম্প চলছে আর তুমি চাইছো আমার সাথে আমার রুমে ঘুমাতে? এসব অতিরিক্ত বাচ্চামি বন্ধ করো আর ওই ডিভানের ওপর শুয়ে পড়ো।
.
মেহেরকে কোনো সুযোগ না দিয়েই আদ্রাফ এবার চলে যায় ঘুমাতে। আদ্রাফের এমন কান্ডে মুখ ভার হয়ে আছে মেহেরের। মনে মনে ভাবছে কত্ত বড় ব্রিটিশ এই ছেলেটা। আদ্রাফ জানে যে সে কাছে আসলেই মেহের একটু অন্যরকম হয়ে যায়। আদ্রাফের স্পর্শে তার নিঃশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে আসে। আর সেই সুযোগটাই সে কাজে লাগিয়ে নিলো।
.
.
.
.
রাত পাল্লাক্রমে গভীর হচ্ছে। কিন্ত মেহেরের চোখে ঘুম নেই। বাইরের ল্যাম্পপোস্টের আলোটি সরাসরি ওর মুখে পড়াতে মেহের ঘুমুতে পারছে না একটু পরপরই সে আদ্রাফের খাটের দিকে তাকাচ্ছে। আদ্রাফ এখন গভীর ঘুমে মগ্ন। মেহের মনে মনে ভাবছে , আচ্ছা ওর সাথে শুয়ে পড়লে মেহেরের কি খুব বড় কোনো ভুল হয়ে যাবে?
আদ্রাফ তো ওর হাজবেন্ট। মেহেরের ভুলের কারনেই রাগ করে আছে সে মেহেরের ওপর।আর মেহেরও চাচ্ছে আদ্রাফের রাগ ভাঙ্গাতে। তাই ধীরপায়ে ডিভান থেকে উঠে আদ্রাফের দিকে এগোতে থাকে সে। বাতাসের মৃদু হাওয়াতে সারা ঘরে কেমন যেন ঠান্ডা বিরাজমান।
.
আর এই ঠান্ডা হাওয়ার সাথেই পাল্লা দিয়ে ধকধক করছে মেহেরের হৃদয়। তার কারন শুধুমাত্র এই আদ্রাফ। নিজের কম্বলটি নিয়ে মেহের আদ্রাফের পাশে শুয়ে পড়ে। এখনও তার চোখে ঘুম নেই। তার কারনও এই আদ্রাফ।
.
আদ্রাফের ঘুমন্ত মুখ তাকে ঘুমোতে দিচ্ছে না। বাইরে থেকে আসা ল্যাম্পপোস্টের আলো বারান্দায় সরাসরি এসে পড়লেও ঘরে তা এসেছে তীর্যকভাবে। তাই আদ্রাফের মুখেও তা মৃদুভাবে মিশে আছে। মেহের ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে আছে আদ্রাফের দিকে। ঘুমের মধ্যেও আদ্রাফের ঠোঁট তিরতির করে কাপছে। রতের আধঁরেও দাড়িগুলো কেমন যেন দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে যার কারনে চমৎকার লাগছে আদ্রাফকে। আদ্রাফের কপালের এক কোণে ছোট্ট একটি কাটা দাগ আছে যা সবসময়ই চুল দিয়ে ঢাকা থাকে। এই দাগটা এত নিবিড়ভাবে দেখা হয়নি ওর। তাই মেহের আলতো হাতে ওই দাগটিতে স্পর্শ করে আদ্রাফের ওপরে উঠে।
নিজের অর্ধেক ভরই সে ছেড়ে দিয়েছে আদ্রাফের শরীরের ওপর। আদ্রাফের প্রতিটা বিষয়ই মেহের কেমন যেন বেশ খুঁটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। আদ্রাফের প্রতিটা কাজই সবসময় ছিলো চোখ ধাঁধানোর মতো। কিন্ত কখনও ওর সৌন্দর্যকে এত নিবিড়ভাবে অনুভব করেনি মেহের।
.
কিন্ত আজ সে চাইছে আদ্রাফকে অনুভব করতে। খুব করে চাইছে। এতদিন একটি দায়বদ্ধতা থেকেই আদ্রাফের কাছাকাছি ছিলো সে। কিন্ত সে এখব অনুভব করতে পারছে যে ভালোবাসে সে আদ্রাফকে। আদ্রাফকে ভালো না বাসলে কখনোই আদ্রাফকে তার কাছে আসতে দিতো না।
.
আদ্রাফের বুকে নিজের মুখ ডুবিয়ে চোখ বন্ধ করে মেহের। তার কাছে মনে হচ্ছে এই জায়গাটিই বুঝি তার জন্য একটি শ্রেষ্ঠ জায়গা। আদ্রাফের শরীরের মাতালকরা ঘ্রাণের জন্য আরও মিশে যেতে মন চাচ্ছে আদ্রাফের সাথে।
মেহের মিনমিনিয়েবলে ওঠে……….
.
—–আদ্রাফ তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি আমি। এবার তুমি যতই রাগ করে বসে থাকো না কেন ; সবশেষে আমাকেই তোমায় ভালোবাসতে হবে।
.
.
.
আদ্রাফের প্রখর দৃষ্টির জালে পড়ে মেহেরের ঘুমঘুম ভাবটা নিমিষেই যেন উড়ে চলে গেলো।
.
—-রাতে আমার সাথে এসে শুয়েছিলে কেন?
.
বিরক্তির রেশ ফুটে ওঠে মেহেরের মুখে। আদ্রাফকে সে বলে যে ,
.
—–আমার জামাইয়ের সাথে ঘুমাবো না তবে কি পরের বাড়িতে গিয়ে ঘুমাবো। আজব প্রশ্ন?
.
এবার যেন ধাপে ধাপে অবাক হচ্ছে আদ্রাফ। তার জানামতে মেহের ওকে কখনোই হাজবেন্ট হিসেবে মানেনি।
.
—–তুমি……………আমায় হাজবেন্ট হিসেবে মানো নাকি ! তাছাড়া তোমার মতো পাগল বউয়ের পাল্লায় আমি জীবনেও পড়ছি না।
.
—-লে হালুয়া ! একমাসও হয়নি আমার বাবা আমায় থাপ্পড় দিয়ে তোমার মতো কুমড়োপটাশ (আদ্রাফ কড়া চোখে তাকাতেই) আই মিন এত কিউট একটা ধুন্দলের সাথে বিয়ে করিয়ে দিলো। আর তুমি বলো কি-না আমি তোমায় হাজবেন্ট হিসেবে মানি নাকি !
.
মেহেরের উদ্ভট কথা শুনে আদ্রাফের মাথার তাড় ছিড়ে যাচ্ছে। এই মেয়ের জন্য সত্যিই একদিন ওকে পাগলাগারদে যেতে হবে।মেহের এবার বলে ওঠে……..
.
—-আর শুনে রাখো একটা কথা। আজকে যদি তুমি আমায় তোমার সাথে ঘুমাতে না দাও একেবারে ধরেবেঁধে বাবার কাছে নিয়ে যাবো। তখন বুঝবে আসল মজা।
মেহের ভালোমতোই জানে একমাত্র বাবার নাম করলেই এই ছেলেরে লাইনে আনা যাবে। আদ্রাফ এবার বিরক্তি স্বরে বলে ওঠে……….
.
—–তোমার জ্বালায় জীবন আমার ত্যানা ত্যানা হয়ে যাবে। জাস্ট রিডিকিউলাস !
.
.
.
.
একটা নীল রঙের শাড়ি পড়ে আয়নার সামনে মেহের নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। আজ ভার্সিটিতে নবীনবরণের অনুষ্ঠান। তাই হালকা সাজগোজ করেছে সে। যদিও মেহের শাড়ি নামকে বিষয়ে তেমন অভ্যস্ত নয় কিন্ত ড্রেসকোডে শাড়ির কথা ছিলো বলেই শাড়ি পড়েছে সে।
.
আদ্রাফ অফিসের জন্য ফাইল রেডি করছে আর মেহেরকে আড়চোখে দেখছে বারবার। সবশেষে আদ্রাফ বলে ওঠে…………
.
—–বিয়ের রাতে বেনারসী শাড়ি পড়ে ছাদে যখন ঘুরঘুর করছিলো তখন তো পুরাই দেওভূত লাগছিলো । আর আজ তো শাড়ি পড়লে পুরাই শ্যাওড়া গাছের পেত্নী লাগবে !
.
.
.
.
.
~চলবে
আজ সকালেই একটি পর্ব দিয়ে দিলাম। চেষ্টা করবো রাতে আরও একটি পর্ব দিতে। কেমন হয়েছে জানাবেন।
,
,
,
~চলবে