অন্তরালে ভালবাসা পর্ব ১৫+১৬

#অন্তরালে_ভালবাসা

১৫
#প্রজ্ঞা_জামান_দৃঢ়তা_হঠাৎ_বৃষ্টি

অহিন আরিশাকে নিজের থেকে আলগা করে বেডের উপর বসালো, নিজে ফ্লোরে বসলো আরিশার কোলের উপর অহিন নিজের হাতের মুঠোয় আরিশার হাত দুটো নিয়ে নিলো।অহিন বলে,দেখ আরু তুই রাফিনকে ফিরে পাবি।তোর কান্নার দিন শেষ, তুই এবার খুব খুব সুখে থাকবি।তাহলে এই কান্না কেনো?
আরিশা ভাবে সত্যি তো এই কান্না কিসের!রাফিন ফিরে আসছে শুনে তার তো অনেক খুশী হওয়ার কথা ছিলো তবে আজ কেনো সে খুশী হতে পারছে না।কেনো মন থেকে সেরকম কোন সায় পাচ্ছে না।তবে কি রাফিনের চলে যাওয়ায় আরিশার নিজের জীবনে বদল এসে গেছে!আরিশা কি ভুলতে শুরু করেছে রাফিনকে!কিন্তু এটা কি করে হতে পারে! আরিশা রাফিনকেই ভালবাসে, এতোগুলো দিন শুধু রাফিনের জন্যই অপেক্ষা করেছে তবে আজ কি এমন বিশেষ কিছু হলো, যার জন্য আরিশার অনুভূতির বদল ঘটে গেলো! আরিশা কি কোন এক কারণে রাফিন থেকে দূরে সরে গেছে!আর হলেও বা সেটা কি?

এসব নানা চিন্তায় আরিশার মন ব্যাকুল হয়ে উঠে। আজ আরিশার অনুভূতি তার নিজের কাছেই স্পষ্ট নয়!সে কি চায়, কি তার মনে শান্তি দেয় কিছুই সে ঠিক করে উপলব্ধি করতে পারছে না!এসব চিন্তায় আরিশার মনে হচ্ছে তার মাথার সব চুল নিজে নিজে ছিড়ে ফেলতে।কি এক অসহ্য অনুভূতি হচ্ছে তার।এমন একটা কষ্ট সে কোনদিন বুঝেনি।
আরিশা কান্নার গতি আরও বাড়িয়ে দিলো, আরিশার কান্না দেখে অহিনের বুকে চিনচিন ব্যাথা শুরু হলো। এই ব্যাথায় খুব ভুগছে অহিন।অহিন আরিশার পাশে গিয়ে বসে বলে আরু আমি জানিনা তুই কেনো কাঁদছিস, শুধু জানি তুই কাঁদলে আমার সহ্য হয় নারে আরু,খুব কষ্ট হয়।আমি জানিনা তোর মনে কি চলছে,তবে এটা জানি তোর মনে যদি কোন ঝড় উঠে তবে তা আমার মনকে ও নাড়া দিয়ে যায়,শুধু তুই সুখে থাক এটাই আমি চাই।

আরিশার কান্না দেখে অহিন নিজেকে সামলাতে পারছে না।একে তো আরিশাকে হারিয়ে ফেলার ভয়,তার উপর আরিশার এমন কান্না অহিনের মনের ঘা তে লবণ ছিটিয়ে দেয়ার মত অবস্থা।

অহিন আরিশাকে শুইয়ে দেয় বেডে নিজে এক কাত হয়ে শুয়ে পড়ে আরিশার পাশে, আজ কেনো যেনো অহিনের খুব ইচ্ছে করছে আরিশার পাশে ঘুমাতে,তার অবচেতন মন বলছে আজ হয়তো আরিশার সাথে কাটানো শেষ রাত হবে তার জীবনে।

আরও একটা অন্যায় ইচ্ছে করছে আজ অহিনের আরিশাকে বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে,মনে হচ্ছে আজকের পর আর কোনদিন সে আরিশাকে পাবে না।রাত পোহালেই বুঝি আরিশা অন্যের হয়ে যাবে।

আজ অহিন একটা অসম্ভব রকম ব্যাপার খেয়াল করলো, আরিশা অহিনকে জড়িয়ে ধরে আছে,অহিনের বুকের সাথে একেবারে মিশে গেছে,মনে হচ্ছে কোন এক পোষা বিড়াল তার মনিবের বুকে ঠাই নিয়েছে।জীবনে এমন এক শান্তি অহিন কখনও পায় নি।আজ অহিন তার মনের সমস্ত নীতিবোধকে দূরে ঠেলে দিয়ে আরিশাকে নিজের সাথে আস্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিয়েছে।আরিশার গরম নিঃশ্বাস অহিনের বুকে পড়ছে,আর অহিনের নিঃশ্বাস আরিশার ঘাড়ে।এমন একটা মুহুর্ত অহিনের জন্য স্বর্গ তুল্য।তবে তা অহিনের মনকে আরও বেশী পাগল করে তুলে।আরিশার চুলের ঘ্রাণে অহিনের বুকের ভেতর ধুকপুকানি শব্দটা আরও বাড়িয়ে দিলো হাজার গুনে।অহিনের মনে হলো আরিশাকে কেনো সে পেলো না।কেনো আরিশার প্রতিটি অস্থিত্বের সাথে সে মিশে যেতে পারলো না।এমন একটা মুহুর্তে অহিন গভীরভাবে অনুভব করলো সে পৃথিবীর দুর্বল পুরুষগুলোর মধ্যে একজন। যে নিজের মনের কোন কথাই কোনদিন বন্ধু হোক,বা প্রেমিকা, অথবা স্ত্রী কারো কাছে প্রকাশ করতে পারলো না।

পরক্ষনেই অহিনের মনে হলো তার মত শক্ত মনের অধিকারী কে আছে!যে নিজের ভালবাসার মানুষকে স্ত্রী রূপে পেয়েও সবসময় তাকে সম্মান করে গেছে।মন আরিশাকে পাওয়ার প্রবল ইচ্ছে থাকলেও স্বামীর অধিকারে স্ত্রীকে অসম্মান করেনি।কখনও জোর খাটায়নি।দিনশেষে সেও একজন মানুষ কোন সাধু সন্ন্যাসী নয়, তার ভেতরে ও এক পুরুষ স্বত্তা কাজ করে,কিন্তু কই সেতো সবসময় নিজের উপর থেকে সেই কন্ট্রোল হারায়নি।রাতের পর রাত আরিশাকে এক ঘরে পেয়েছে চাইলে সে অনেক কিছুই করতে পারতো কিন্তু তার মন কখনও তাকে এসব কাজে উৎসাহী করে তুলে নি। তবে সে কি করে দুর্বল হয়!

অহিন আরিশার চুলে হাত বুলাতে থাকে একসময় আরিশার ঘুম চলে আসে,অহিনের আজ খুব ইচ্ছে করছে আরিশার মায়াবী মুখটার কপালে একটা চুমু খেতে।অহিন সেটাই করলো। এক গভীর চুমু খেয়ে নেয় আরিশার কপালে।আরিশার মায়াবী মুখটার দিকে তাকিয়ে নির্ঘুম রাত কাটিয়ে দেয় অহিন।সে শুধু জানে তার বুকে কতটা ক্ষত হয়ে আছে।কতটা যন্ত্রনায় সে আছে।গলা কাটা মুরগীর মত একটি অসম্ভব, অসহ্য,কষ্টের রাত অতিবাহিত করে অহিন।শুধু সে জানে কতটা ভয়ংকর ছিলো সে রাত!

আরিশার ঘুম ভাঙে সকাল ৮টায়, ঘুম ভেঙে দেখে অহিন তার দিকে তাকিয়ে আছে,আরিশার মনে অহিনের এই তাকানোটা কেমন একটা ঝড় তুলে,আরিশার মনে হচ্ছে তার নিঃশ্বাস ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে,আরিশা বলে,ঘুমাস নি অহিন?
অহিন তার ভুবন ভোলানো সেই হাসি দিয়ে বলে,ঘুমাবো আগে তোকে তোর ভালবাসার কাছে ফিরিয়ে দেই তারপর। আরিশাকে এই কথাটি কেমন যেনো অপ্রস্তুত করে তুললো আরিশা চুপ করে থাকে কিছুক্ষণ, অহিন তার ঘন পল্লব যুক্ত আঁখি দুটো পিটপিট করে চেয়ে আছে আরিশার দিকে।আরিশা বলে,
কাল নুপুর গুলো কার জন্য নিলি?
———-অহিন বলে,তোকে কেনো বলবো? নিয়েছি কোন একজনের জন্য।

আরিশা অহিনের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো এক ঝাপটায়।বলে হইছে তোরে আর বলা লাগবেনা। আমার এতো শখ নাই তোর এসব জানার বলেই মুখ ভেংচি কাটে আরিশা।
অহিন অদ্ভুতভাবে আজ টের পেলো আরিশা অন্য মেয়ের কথা শুনে রেগে গেলো। এটা কি অহিনের প্রতি আরিশার ভালবাসা?নাকি এতোদিন বউ সেজে থাকার জন্য একটা অধিকার থেকে!
অহিন ভাবে বলেই দিবে সে, এই নুপুর গুলো সে আরিশার জন্য এনেছে।যেই ভাবা সেই কাজ, অহিন আরিশাকে বলে,আরু এই নুপুরে গুলো,,,,, এতোটুকু বলার পর অহিন আর কিছু বলতে পারলো না।অহিনের ফোন বেজে ওঠে, অহিন ফোন হাতে নিয়ে দেখে সিহাব কল দিয়েছে।অহিনের বুকের ভেতরটায় হঠাৎ কোন এক অজানা আশংকায় কেঁপে ওঠে।

সিহাব ভয়ে ভয়ে কল রিসিভ করে,সিহাব যা বলে তারপর অহিনের হাত থেকে ফোন পড়ে যায়।আরিশা অহিনের কাছে এসে বলে কিরে কি হয়েছে কিছু বল?কার ফোন ছিলো? সবাই ঠিক আছে তো?

অহিন যথা সম্ভব নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে,মুখে হাসি টানার চেষ্টা করে বলে,রাফিনকে পাওয়া গেছে।রাফিন আমাদের বাড়িতে আছে।
তুই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নেয়।আমরা এখনই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেবো। আরিশার মন কেনো যেনো থমকে আছে।তার তো এখন খুশীতে ফেটে পড়া উচিত তবে কেনো সে ততটা খুশী হতে পারছে না!
কিঞ্চিৎ কষ্ট অনুভব করছে সেটা কিসের জন্য?
সেটা কি কোন বৈধ সম্পর্কের জন্য?

অহিনের খুব কান্না পাচ্ছে,তার বন্ধুকে ফিরে পাওয়ার খুশী একদিকে,অন্যদিকে ভালবাসার মানুষকে চিরতরে হারানোর ভয়!এই দুয়ের মিশ্রণে অহিনের মন বেদনার সুখে ভরে উঠছিলো।মনে মনে সে আল্লাহর কাছে একটি কথাই বললো, আল্লাহ যেনো আরিশাকে রাফিনের হাতে তুলে দেয়া অব্দি তার চোখের জল আটকে রাখে।আরিশার সামনে যেনো কোনভাবেই সে দুর্বল হয়ে না পড়ে।মনের ভেতর এই বয়ে যাওয়া ঝড়টা যেনো কেউ দেখতে না পায়।
আরিশাকে রাফিনের হাতে তুলে দিয়ে সে চলে যাবে এদেশ ছেড়ে থাকবে না, এই পোড়া দেশে।কি দিয়েছে এই দেশ তাকে।বুক ভরা যন্ত্রনা ছাড়া। এক বুক অভিমান হলো অহিনের।
সেই অভিমান কি চিরতরে অহিনের কাছ আরিশাকে দূরে করে দেবে?
আরিশা কি কোনদিন নিজের মনের চাওয়া, আর অহিনের মনের কষ্ট কিছুই বুঝতে পারবে না?
এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা!
#অন্তরালে_ভালবাসা
১৬

#প্রজ্ঞা_জামান_দৃঢ়তা_হঠাৎ_বৃষ্টি

অহিন আরিশা বসে আছে লঞ্চে তারা এখন বাড়ি ফিরিছে।চাঁদের আলোয় সাগরের চারপাশে কি এক অদ্ভুত সৌন্দর্য সৃষ্টি করছে।দেখলেই বুক কেঁপে উঠে। বড় বড় ঢেউ খেলে যাচ্ছে,আর ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে লঞ্চের ডেক্স।ঝিরঝিরে মিষ্টি বাতাস বইছে,সে বাতাস মন প্রাণ শীতল করে দিয়ে যাওয়ার মতো। সাগরের জোয়ার আসছে একটু পর আবার ভাটা,ঠিক মানুষের জীবনের মত।কয়েকটা দিন আগে যখন অহিন আরিশাকে নিয়ে এভাবেই লঞ্চ ভ্রমণ করেছিলো তখনকার মুহুর্ত গুলো ছিলো ভয়ংকর রকম সুন্দর। রাত ছিলো রোমাঞ্চকর! মনের এক কোনে ছিলো অদ্ভুত কিছু ভালো লাগা।কিন্তু আজ কেনো যেনো সব কিছু ঝাপসা, আর অচেনা লাগছে।সেইদিনের মত সমুদ্র আছে,চাঁদনীরাত আছে,আরিশা ও আছে, শুধু মনের সেই ছোট্ট কোনে ভালো লাগাটুকু নেই।নেই মনে কোন আশা,আকাংখা। শুধু আছে হারিয়ে ফেলার ভয় আর না পাওয়ার যন্ত্রনা।
আরিশা চুপচাপ বসে আছে রুমের বাইরে লঞ্চে পাশ ঘেষে, অহিন ও আছে তার একটু দূরে দাড়িয়ে। অহিনের দৃষ্টি আকাশের থালার মত পূর্ন চাঁদের দিকে।
আরিশার দৃষ্টি জোয়ার ভাটায়।আরিশা বলে,’ তুই চুপ করে আছিস কেনো অহিন?
অহিন হালকা হাসার চেষ্টা করে এমনি, আকাশের চাঁদ দেখছি,কতটা সুন্দর চাঁদ তাই না আরু?

হুম,জবাব দেয় আরিশা।
অহিন বলে,আকাশের দিকে তাকালে মনে হয় চাঁদ কত কাছে আমাদের কিন্তু ধরতে গেলেই বুঝা যায় কতটা দূরে আকাশের ঐ কিচাঁদের অবস্থান।
অহিন এহেন কথা আরিশার মনকে কিছুটা বিচলিত করে তুলে,আরিশা বলে, আজকাল তোর কথা বুঝতে পারি না আমি।কেমন যেনো রহস্য রহস্য মনে হয়।
অহিন ঠোঁটে বাঁকা হাসি দিয়ে বলে,কখনও যেহেতু বুঝিসনি আজও বুঝার চেষ্টা করিস না।এখন বুঝে কোন লাভ হবে নারে আরু।

অহিনের এমন কথা আরিশার মনে কেনো যেনো হালকা ব্যাথা অনুভব করে।কিন্তু কেনো সে উত্তর এখনো আরিশার কাছে অজানা।
আরিশা উঠে অহিনের কাছে যায়।অহিনের কাঁধে হাত দিয়ে বলে,দোস্ত আমার না কেমন যেনো লাগছে।আমি আমাকে চিনতে পারছিনা।রাফিন এসেছে এতে আমার খুশীর সীমা থাকা উচিত না অথচ আমি মন থেকে তেমন কোন কিছুই ফিল করছি না।বরং কেমন যেনো একটা খারাপ লাগা কাজ করছে মনে।কিন্তু কেনো তা আমি জানিনা।
অহিন আরিশার দিকে এক ফলকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ, অহিনের কাছে আজ আরিশার চাহনি কেমন অদ্ভুত ঠেকছে। আরিশার চোখে মুখে কেমন একটা বিষন্নতা ভর করেছে।তবে কি আরিশার
আমার প্রতি মায়া জন্মানো শুরু করছে।যদি এমন কিছু হয়,আরিশা তার অনুভূতি পুরোপুরি বুঝার আগেই রাফিনের সাথে এক করে দিতে হবে।অহিন আরিশার দিকে তাকিয়ে এসব ভাবছিলো।আরিশার কথায় তার হুস ফিরে কিরে কিছু বল?
অহিন এক গাল হেসে বলে, আরে দোস্ত রাফিন এতোদিন দূরে ছিলো তাই তোর এমন মনে হচ্ছে।আর তোকে বিয়ের আসরে রেখে চলে গেছে তাই একটু অভিমান হয়েছে তোর মনে।রাফিনকে কাছে পেলে দেখবি সব রাগ কেমন ব্যানিস হয়ে গেছে। তখন তোর একটুও নিজের অনুভুতি নিয়ে দ্বিধা থাকবে না।রাফিনের ভালবাসার জন্য তুই এতোগুলো দিন অপেক্ষা করেছিস,সেই ভালবাসা পেলে তুই সব ভুলে যাবি আরু।
কথাগুলো বলতে অহিনের বুক ফেটে যাচ্ছে, ইচ্ছে করছে সব কিছু ভেঙে ফেলতে কিন্তু ওই যে অহিন বড়ই বাধ্য ছেলে তাই তা সে আর করতে পারলো না।
তবে ওয়াশরুমে যাবে বলে আরিশা থেকে একটু দূরে চলে গেলো। অহিন ওয়াশরুমে গিয়ে দরজা আটকে দিয়ে সেই দরজার হেলান দিয়ে বসে অনেক্ষণ পাগলের মত কান্না করে।আরিশাকে সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলবে ভাবতেই কেমন এক অসহ্য কষ্ট হচ্ছে অহিনের।তারপর ও যথাসম্ভব নিজেকে বুঝানোর চেষ্টা করে মুখে পানি দিয়ে স্বাভাবিকভাবে বের হয়ে আসে আরিশার কাছে। আরিশা তখনও একমনে তাকিয়ে আছে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের দিকে।
অহিন আরিশার পাশে এসে বসতেই আরিশা বলে খুব শীত করছে অহিন।এই বাতাসটা এতো শীতল যে শরীরের পশম দাড় করিয়ে দেয়।অহিন বলে,হুম ঠিক বলেছিস,দাড়া আমি তোর জন্য একটা চাদর নিয়ে আসি।অহিন চাদর নিয়ে এসে আরিশার গায়ে দেয়,অহিনকে অবাক করে দিয়ে আরিশা সেই একই চাদরের এক পাশ নিজের গায়ে দিয়ে অন্যপাশ অহিনের গায়ে দেয়।
আরিশার অহিনের কাছ ঘেষে বসে,আরিশার শরীরের উষ্ণতা পেয়ে অহিনের শিরদাঁড়া বেয়ে এম শীতল স্রোত প্রবাহিত হয়।সারা শরীরে ঝাকুনি দিয়ে উঠে। নিজেকে সরিয়ে নিতে গেলে আরিশার কাছ থেকে, আরিশা বলে,আরে কি করছিস অহিন,তুই কোন পাপ করছিস না, তুই তোর বিয়ে করা বউয়ের পাশ ঘেষে বসেছিস।এতে তোর কোন পাপ হবে না।আরিশার এই কথাগুলো অহিনের বুকে আরও বেশী উত্তাল শুরু করে দেয়।অহিন ভাবে এই যাবার সময় কেনো তুই এসব কথা বলছিস।এখন আমি চাইলে ও তোকে ধরে রাখতে পারবো না।
আরিশাকে কিছুই বলতে পারেনা অহিন। আরিশা অহিনের কাধেঁ মাথা রেখে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে।
সারারাত অহিনের কি যে যন্ত্রনায় কাটে।আরিশাকে কোলে রেখে বসে থাকে পুরো রাত সেখানে।নানারকম ভাবনায় পৌঁছে যায় গন্তব্যে।

———————————————————————————-
অহিন আরিশাকে নিয়ে বাসায় ঢুকে অহিনের বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যাচ্ছে,কোন এক অদৃশ্য দেয়াল তার মনকে বাধা দিচ্ছে বলছে আরিশা তোর অহিন আরিশা তোর,কিন্তু সব বাধা কাটিয়ে দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে অহিন, আরিশা।সাজেদা বেগম ছেলেকে দেখে জড়িয়ে ধরে।আরিশাকে ও জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।অহিন মাকে শান্ত হতে বলে।রাফিন উপর তলা থেকে সব দেখছে,সবার আগে দেখছে তার আরিশাকে শাড়ি পরায় আরিশাকে কেমন নতুন বউ বউ লাগছে।অহিনের পাশে এমনভাবে দাড়িয়েছে মনে হয় এই দুজনের জন্যই দুজনের জন্ম হয়েছে। রাফিন দেয়ালে হাত দিয়ে ঘুষি দেয়।আরিশা অন্য কারো সাথে হানিমুন করে আসছে এটা যেনো রাফিন মানতেই পারছে না।সে যতই বন্ধু হোক।ভালবাসার ভাগ কাউকে দেয়া যায় না।

রাফিন সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসছে, অহিন আরিশার চোখ যায় সিড়ির দিকে। দুজনের বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠে এতোদিন পর বন্ধুকে দেখে দুজনের ভেতর এক অজানা উত্তেজনা কাজ করে।অহিন এগিয়ে গিয়ে রাফিনকে জড়িয়ে ধরে। রাফিন ও শক্ত করে অহিনকে জড়িয়ে ধরে। দুই বন্ধুর চোখে জল।পুরনো অনেক স্মৃতি ভেসে ওঠে দৃশ্যপটে!অহিন রাফিনকে ছেড়ে দিয়ে ইচ্ছে মত কিছুক্ষণ মারে,রাফিন কান্না চোখে হাসতে থাকে।

অহিন বলে শালা তুই এটা কি করে করলি?আমাদের সবাইকে কঠিন মুহুর্তে ফেলে দিয়ে তুই চলে গেলি?কি করে এসব সম্ভব রাফিন বল?

রাফিন বলে সব পরে বলিস।এখন একটু বুকে আয়।আবার দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে।
অনেকদিন পর দুই বন্ধুর খুনসুঁটি দেখে আরিশার মুখে হাসি ফুটে উঠে। আরিশার মুখের দিকে তাকিয়ে রাফিনের মুখ থেকে হাসি চলে যায়।
এদিকে আরিশা বুঝতে পারছে না সে কি করবে!এতোদিন পর ভালবাসার মানুষকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরবে নাকি বিয়ের আসরে ছেড়ে যাওয়ার জন্য অভিমান করবে।
আরিশার একবার মনে হয় সে এতো দিম রাফিনের জন্য যতটা ব্যাকুল ছিলো, আজকে রাফিনকে দেখা মাত্র জড়িয়ে ধরার কথা।কিন্তু তার মনে কোন এক বাধা কাজ করছে জড়তা কাজ করছে,যা তাকে সামনে এগুতে দিচ্ছে না।

রাফিন আরিশার সামনে এসে বলে, কেমন আছিস আরিশা?
আরিশা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ভালো। তুই?
হুম ভালো, রাফিন জবাব দেয়।

অহিন আরিশা আর রাফিনকে বলে তোরা কথা বল আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।রাফিন বলে উঁহু তোর বউ তুই কথা বল।
অহিন কি বলবে ভেবে পায় না।পরে বলে,তোর সাথে আমার অনেক কথা আছে,অনেক প্রশ্নের উত্তর তোকে দিতে হবে।আমাদের এভাবে কঠিন মুহুর্তে ফেলে যাওয়ার জন্য প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিতে তুই বাধ্য।
রাফিন কেমন একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে, সব জানবি আগে তোরা ফ্রেশ হয়ে নেয়।যা আরিশা অহিনের সাথে যা।
এই সামান্য কথাটা আরিশা অহিনকে কেমন বিচলিত করে তুলে।রাজ্যের জড়তা এসে বসে মনের মাঝে।নিজের ভালবাসার মানুষকে অন্যের স্ত্রী হতে দেখলে কারোই ভালো লাগবে না।রাফিনের ও লাগার কথা না।তাই অহিন বলে না পরে ফ্রেশ হবো আগে আমাদের প্রশ্নের উত্তর দেয় তুই?
রাফিন বলে বল কি জানতে চাস?
অহিন বলে,তুই কেনো সেদিন আরিশাকে ফেলে চলে গিয়েছিলি?
রাফিন বলে আমার ভুল হয়ে গেছে দোস্ত। আমি জানিনা আমার কি হিয়েছিলো তবে, তুই চিন্তা করিস না এবার আমি আরিশাকে ধুমধাম করে ঘরে তুলবো।

রাফিনের এই একটি বাক্য উপস্থিত সবার মনে ঝড় তুলে দিলো। আরিশার উচিত এই মুহুর্তটা তার জীবনের সেরা মুহুর্তের তালিকায় ফেলা, কিন্তু তা না হয়ে আরিশার মনে চিনচিন ব্যাথা করছে,যার উত্তর আরিশা জানেনা।
অহিন তো সবসময় এটাই চেয়ে এসেছে তারপর ও কেনো যেনো এই মুহুর্তটা তার কাছে সবচেয়ে যন্ত্রনার মনে হলো। মনে হলো মাটি ফাঁক হয়ে যাক সে মাটির নিচে চলে যাক।তাহলে তো দাড়িয়ে থেকে ভালবাসার মানুষকে অন্যের হতে দেখতে পারবে না।

কিন্তু আরিশা বলে,বিয়ে বললেই হয়ে যায় না রাফিন।তোকে আগে আমার অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।
উপস্থিত সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে আরিশার দিকে। আরিশাকে কেমন একটা দেখাচ্ছ!

চলবে,,,,,
চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here