#অপেক্ষার_শেষে
#পর্ব_১৫
#লেখিকা_কে_এ_শিমলা
সকাল আটটা বেজে পনেরো মিনিট। সবাই নাস্তা’র টেবিলে বসে আছেন শুধু নেই আরিয়ান,দিয়ান। ওরা প্রথমেই নাস্তা সেরে নিয়েছে! এখন বাসার বাহিরে।” ধীরে ধীরে সবার নাস্তা’র পর্ব শেষ হয়। মুরুব্বি’রা এটা সেটা নিয়ে কথা বলছেন ড্রয়িংরুমে।”
ইরিন ঈশিকা খানম কে ডেকে ওর রুমে নিয়ে আসে। তারপর উনাকে বললো- আম্মু আমরা সবাই একটু ঘুরে আসি! বেশি দূরে যাবো না। এই আশ-পাশ থেকে চলে আসবো। আর সাথে তো ভাইয়া’রা’ও আছেন।”
ইরিনে’র কথা শুনে ঈশিকা খানম বললেন- মেয়ে বলে কী!’ নতুন জামাই নিয়ে তুই ঘুরতে যাবি!” আজ না যেতে হলে কাল যাবি।”
ইরিন: ওহ! আম্মু তুমি নতুন জামাই বলছো। তোমার নতুন জামাই-ই তো সবার আগে যাওয়া’র জন্য প্রস্তুত।”
গিয়ে দেখো সবাই হয়তো সব কিছু পাকা করে ফেলছে।”
ইরিনে’র থেকে সব শুনে ঈশিকা খানম আর বারণ করলেন না। অনুমতি দিয়েছেন তবে বেশি সময় যেন না যায় সেটা বলে দিলেন।”
মায়ের অনুমতি পেয়ে ইরিন সবাই কে বলে দেয় কিছুক্ষণে’র মধ্যেই ওরা বের হবে।
ধীরে ধীরে সবাই তৈরি হয়। ঈশিকা খানমে’র থেকে বিদায় নিয়ে ওরা বেরিয়ে পরে।”
_____________
দুটো গাড়ি করে যাচ্ছে ওরা। প্রথমটা তে ইরফান, দিয়ান, আরাফ বসেছে, সাথে হৃদি,দিশা।”
দ্বিতীয় টা তে নিহান, আরিয়ান, ইরিন,আরিশা, আরিয়া।”
ইরফান কে ফলো করে আরিয়ানও গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলো।”
এদিক সেদিক অনেক জায়গায় ওরা ঘুরে। আরিশা’দে’র স্কুলে যায় ওরা। প্রথমে ভেবেছিল হয়তো স্কুলের গেইট ব’ন্ধ পাবে! কিন্তু না।
পিয়ন কাকা’র কাজ ছিলো বিধায়,স্কুলে’র ভিতরেও যাওয়া’র সুযোগ পেল ওরা।”
স্কুলে’র ভেতরে তেমন কিছু না হলেও অনেক কিছুই আছে। ওদের শৈশব, কৈশোর কে’টে’ছে এখানে। কত শত সৃত্মি মিশে আছে প্রত্যেক টা জায়গায়।”
আরিয়ান সবার আড়ালে একবার আরিশা’র দিকে তাকালো। আরিশা একা একাই অনেক জায়গায় ঘুরছে।
আরিশা যেখানে শে’ষ বারে’র মতো দাঁড়িয়ে আরিয়ানে’র সাথে কথা বলেছিল । সেখানে এসে দাঁড়ায়। এর আগেও অনেকবার স্কুলে এসেছিল তবে গেইট খোলা পায়নি ওরা। তাই বাহির থেকে ঘুরে যেতে হয়েছিল।”
আরিশা গিয়ে দাঁড়ায় সেই কদম গাছে’র নিচে। দুটো কদম ফুল পড়ে আছে পাশেই। আরিশা গাছে হাত রেখে সেটা কে পরখ করলো। ওরা যখন স্কুল থেকে চলে গিয়েছিল! তখন সেটা অনেকটা ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। আজ গাছ টার পাতায় ফুলে’র সমাহার। কত সুন্দরই না লাগছে।”
আরিশা একবার আরিয়ান কে বলেছিল এই কদম গাছে’র একগুচ্ছ কদম ফুল দিয়ে তুমি আমাকে প্রেম নিবেদন করবে আরিয়ান ভাই!”
কতই না সুন্দর ছিল সেই কথা টা। যদি সুযোগ থাকতো তাহলে হয়তো তখনই আরিয়ান ওকে প্রেম নিবেদন করতো। তবে তা অজানা থাক আরিশা’র কাছে।”
আরিশা’র চোখে’র কোনো জল চি’ক’চিক’ করে উঠলো। গাছটাকে একটু ছোয়ে সেখান থেকে প্রস্তা’ন নেয় সে।”
সবকিছু দেখে সবাই স্কুল থেকে বেরিয়ে আসে।”
আরাফ বললো- চলো আমাদের বাসার দিকে যাই। হয়তো কাউকে পাবো না তবে বাহির থেকে দেখে আসবো। আরাফে’র কথায় সবাই রাজি হয়ে ওদের বাসার দিকে রওনা দেয়।
প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট পর ওরা আরাফদে’র বাসায় পৌঁছায়। সবাই গাড়ি থেকে নেমে গেইটে’র পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।”
ওরা ভেবেছিল হয়তো গেইট তালাব’দ্ধ দেখবে কিন্তু না!” গেইট এমনিই লাগিয়ে রাখা ছিল। বুঝতে পারলো রমিজ কাকু হয়তো আশে পাশে কোথাও গেছেন তাই এভাবে গেইট লাগিয়ে রাখা।”
ওরা ভেতরে প্রবেশ করে বাড়ি’র। বাড়ি’র সামনে একপাশে বসার জায়গা আছে। ওরা সবাই সেখানে বসলো।”
সবকিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, দেখলে কেউ বলবে বাড়িতে নিশ্চিত মানুষ আছে। সত্যিই রমিজ কাকু ওদের বাড়ি’র যত্ন নেন ভালো ভাবে। অনেক খুশি হলো আরাফ, আরিশা ,আরিয়া।
বিভিন্ন ধরনের ফুলে’র গাছ একপাশে। আরিশা,আরিয়া ফুল গাছ গুলো ছোয়ে দেখলো নিজ হাতে। অনেক গাছেই ফুল ফুটেছে। দের বছর আগে যখন এসেছিল তখন রমিজ কাকু কে দিয়ে ওরা ফুলের চারা আনিয়েছিল নার্সারি থেকে। রমিজ কাকু বলেছিলেন নিজ হাতে গাছ গুলোর পরিচর্যা করবেন। শুনে ওরা খুশি হয়েছিল তাই উনাকে দিয়েই চারা আনিয়ে লাগিয়ে দিয়ে গিয়েছিল।”
আর এখন ফুল গুলো নিজ হাতে ওরা ছোয়ে দেখতে পারছে। খুশিতে আ’ত্ম’হা’রা দু’জন।”
হঠাৎ দিশা’র চোখ যায় বাহিরে রাস্তায়। ফুচকা মামা যাচ্ছেন ফুচকা নিয়ে। দিশা একটু জোরেই বলে উঠলো- ফুচকা নিয়ে যাচ্ছে ফুচকা খাবো।”
দিশার কথা শুনে দিয়ান ওরা মাথায় গা’ট্টা মে’রে বললো- যেখানেই যাবি এই ফুচকা খেতে হবে তোর তাই না।”
দিশা মাথায় হাত ড’লতে ড’লতে বললো- ভাইয়া তুমি আমাকে মা’র’লে কেন?” আর ফুচকা খাবার জিনিস অবশ্যই খাবো।”
দিয়ান বললো- খাওয়া’র জন্য তো আরো অনেক ধরনের খাদ্য আছে ওসব রেখে এই ফুচকা কেন খেতে হবে!”
দিশা: ভাইয়া ভালো হবে না কিন্তু। আমি এক্ষুনি বড় আম্মু’র কাছে কল করে সব বলবো। আর সাথে বলবো তোমার ছেলে আমাকে মে’রে’ছে এবং ব’কে’ছে কোনো কারণ ছাড়াই!” হু।”
দিয়ান মাথা চুল’কে এপাশ ওপাশে তাকাতে লাগলো যেন সে কিছুই জানে না।” দিশা’র সাথে এইভাবে লেগে যেন দিয়ান আলাদা একটা আনন্দ পায়।”
দিশা-দিয়ানে’র কথা’র মধ্যেই ইরফান অনেক গুলো ফুচকা নিয়ে আসে। ওখানে বসেই সবাই ফুচকা খায়।”
ফুচকা খেয়ে কিছুক্ষণ বাড়ি সহ বাড়ির আশপাশ হেঁটে ঘুরে ফিরে সব কিছু দেখে সবাই আবার গাড়িতে উঠে বসে। ”
একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে যায় ইরফান। সবাই নিজেদে’র ইচ্ছামত খাবার অর্ডার দেয়। আজ খাবারে’র বিল নিহান দিবে।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই আবার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।”
ঘন্টা খানেক লেগে যায় বাসায় পৌঁছাতে। তবে অন্যদিনের তুলনায় ইরফান ইরিনে’র মনে হলো দ্রুতই বাসায় ফিরতে পেরেছে।”
ওরা দুজনই প্রায় সপ্তাহে একদিন ঘুরতে যেতো ভাই বোন।”
সবাই নিজেদের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নামাজ আদায় করে নেয়।”
_____________
এভাবেই বিকেল হয়ে যায়। বিকেলে’র দিকে সবাই ইরিন’দে’র বাসার সামনে সবুজ ঘাসে বসে গল্প করছিল। তারপর অনেকেই বাসার চার পাশ ঘুরে ঘুরে দেখে আসে। তবে শুধু আরিশা, আরিয়া,হৃদি, দিশা,দিয়ানই হাঁটছে।
কিছু সময় পর বাসায় ভেতরে এসে ওরা ইরফান ইরিনে’র ছোট্ট বাগান দেখে।”
বাগান দেখার মধ্যেই আরিশা’র চোখ যায় ইরিন’দে’র ছাদে।”
সেখানে আরিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। আরিশা চোখ ফিরিয়ে “ভ্রু” কু’চ’কা’য়! নাহ আজ এই ছেলে কে এটা না জেনে ছাড়বেনা।”
আ’শ্চ’র্য সবাই ওকে কী বলে ডাকে ওর সাথে কীভাবে কথা বলে এটাও তো আরিশা একবার দেখতো পারতো। নাহ ওর যেন খেয়ালই থাকে না! এগুলো আরিশা নিজেই নিজেকে বলছে।”
সন্ধ্যা হয়ে আসে সবাই বাসার ভেতরে চলে যায়। নামাজ আদায় করে সবাই নাস্তা করে। বাসায় হাতে গুনা কয়েকজন আছেন মাত্র মেহমান। হয়তো উনা’রা’ও কাল চলে যাবেন।”
আরিশা আরিয়া কে খুঁজে না পেয়ে ছাদের দিকে আসে। ছাদে উঠতেই চিলে কোঠা’র পাশে আরিয়া কে পায়।
আরিয়া নিচে নামছিল! আরিশা লাইটে’র আলোয় স্পষ্ট দেখলো পেছনে রেলিং ঘে’ষে দাঁড়িয়ে আছে সেই ছেলেটি! অর্থাৎ আরিয়ান।”
আরিশা দ্রুত পায়ে আরিয়া’র নিকটে এসে ওকে জিজ্ঞাসা করলো- আরিয়া এই ছেলেটা কে আর উনার সাথে তুই একা এই ছাদে কী করছিস।?ভাইয়া যদি একবার তোকে দেখে এই ছেলের সাথে তাহলে কী তোকে আ’স্ত রাখবে?”
আরিয়া তুই উনাকে চিনিস? তুই কী উনাকে এই বাড়িতে ডেকেছিস?” তুই কী চিনিস! কই এতোদিন তো তুই বলিসনি?”
আরিয়া আরিশা কে থা’মি’য়ে দিয়ে বললো- এই তাহলে তোর ভালোবাসা আরিশা?”….
চলবে!#অপেক্ষার_শেষে
#পর্ব_১৬
#লেখিকা_কে_এ_শিমলা
আরিয়া ওকে থা’মিয়ে দিয়ে বলল এই তাহলে তোর ভালোবাসা আরিশা।”নিজের ভালোবাসা’র মানুষটা কে ও চিনতে পারলি না এই কয়েকদিনে,আর বলেছিলি তুই নাকি তাকে ভুলবি না!”আর তুই যাকে এই ছেলে ওই ছেলে বলছিস সে আরিয়ান ভাই।” যার জন্য এতদিন অপেক্ষা করলি #অপেক্ষার_শেষে তাকেই চিনলি না!” হাহা.. বলেই হনহন করে আরিয়া নিচে চলে যায়।”
দাঁড়িয়ে রয় আরিশা বি’স্ম’য় ভরা চোখে নিজে তাকায় আরিয়ানে’র দিকে। আরিয়ান ওইদিকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে। আরিয়া’র বলা কথা গুলো এখনো কানে বাজছে আরিশা’র। আরিয়ান ভাই!ওর আরিয়ান আরিশা’র টনক নড়ে!” সে কোনো দিকে না তাকিয়ে ছুটে গিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আরিয়ান কে।”
হঠাৎ কেউ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরায় অপ্রস্তুত হয়ে যায় আরিয়ান।’ সে আরিশা কে ছাদে আসতে দেখে উল্টো ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। আরিয়া যে আরিশা কে ওর বিষয়ে বলে দিয়েছে সেটাও শুনেছে।”
আর কথা না শুনে আরিয়ান ভেবেছিল হয়তো আরিশা,আরিয়া চলে গিয়েছে।” কিন্তু এখন এইভাবে কে ঝাপটে ধরলো তাকে!”
আরিয়ান পেছনে’র মানুষটা’র হাত ছাড়িয়ে তার দিকে তাকায়। আরিশা কে দেখে অবাক চাহনিতে তাকিয়ে বললো- আরিশা…..
আরিয়ানে’র কথায় আরিশা’র বোধগ’ম্য হয় ও কী করেছে!” হায় আল্লাহ এটা কী করলাম!” ল’জ্জায় আরিশা’র গাল দুটো লাল হয়ে যায়।”
তাঁকে আর পায় কে চোখে’র পলকেই চলে আসলো আরিয়ানে’র সামনে থেকে।”
আরিয়ান পেছন থেকে বললো- দাঁড়াও আরিশা!”
কে শুনে কার কথা আরিশা তো ছাদেই নেই। আরিয়ান মাথা চুলকে, অজান্তেই একটা মুচকি হাঁসি জড়ো হয় ওর ঠোঁটের কোণে।” তারপর আরিয়ানও নিচে চলে আসে।”
আরিয়া আরিশা’র বলা কথা, আরিয়ান কে জড়িয়ে ধরা! সবকিছুই নিজের চোখে দেখেছে এবং কানে শুনেছে হৃদি।” হ্যাঁ হৃদিই আরিয়ান কে আড়া’ল থেকে এইভাবে ফলো করে।” গায়ে হলুদের রাতে হৃদিই আরিশা এবং আরিয়ান কে ওপাশ থেকে দেখেছিল।”
হৃদি ভাবে ওরা একে অপরকে ভালোবাসে কই আগে কখনো তো শুনলাম না। আর অপেক্ষা! কিসের অপেক্ষা করছিল দু’জন।”
যদি একে অপরকে ভালোই’বাসে তাহলে আরিশা কেন আরিয়ান কে চিনতে পারলো না?”
অনেক অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খা’চ্ছে হৃদি’র মাথায়। কিন্তু তার নিজেরও ভালো লেগে গেছে আরিয়ান কে। প্রথম যেদিন ইরফানে’র সাথে আরিয়ান বাসায় এসেছিল, সেদিন প্রথম দেখেই তাকে ভালো লেগে গিয়েছিল আরিয়ান কে।”
তারপর তো আর প্রতিদিনই দেখা হতো তাই ভালো লাগাটা গাঢ় হওয়া স্বাভাবিক।”
হৃদি ভাবলো ইরিনে’র থেকে জানতে হবে সব, নিশ্চয়ও জানে সবকিছু।” হৃদি এসব ভাবতে ভাবতে সেও চলে গেলো সিঁড়ি’র পাশ থেকে,যেখানে ও দাঁড়িয়ে ছিল। এখানে দাঁড়ালে কারো’র চোখে সহজে পরে না! তাই তো ওদের তিনজনে’র মধ্যে একজনও ওকে দেখেনি।”
আরিশা ছাদ থেকে এসেই রুমে ঢুকে দরজা ল’ক করে দেয়, বিছানায় বসে অস্বাভাবিক গতিতে হাঁপা’তে থাকে।” কী করলো ও সেটা নিয়েই ভাবছে। এখন আরিয়ানের সামনে যাবে কীভাবে সেটা ভাবতে ভাবতে ওর অ’স্বস্তি আর ল’জ্জা এসে ভ’র করছে।”
আবার ইচ্ছামত ঝার’ছে মনে মনে আরিয়ান কে।” এতো দিন হয়েছে এখানে এসেছে, আবার সেদিন দেখাও হলো। সে বললো না কেন সে-ই আরিয়ান।”
ও না হয় ভালো ভাবে তাকাতে পারেনি তাই তো চিনতে ও পারেনি।”
আবার ভাবলো আচ্ছা মনে হয় আরিয়ান ভাই চিনতে পারেননি আমাকে, যেভাবে আমি চিনতে পারিনি উনাকে।”
আরিশার মনে একদিকে যেমন প্রশান্তি ছেয়ে গেছে তেমনি অন্যদিকে লজ্জা’রা এসে হা’না দিয়েছে।” ও বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশ কুসুম ভাবতে লাগলো।”
কিছু সময় পর আরিয়া আরিশার রুমের সামনে এসে দরজায় কড়া না’ড়ে, এবং বলে উঠে- আরিশা দরজা খোল! তুই একা একা কী করছিস ভেতরে তাও দরজা ল’ক করে।”
আরিয়া’র গলা’র স্বর শুনে আরিশা দরজা খুলে দেয়। আরিয়া রুমে ঢুকতেই আরিশা ওকে জড়িয়ে ধরে। আরিয়া ভ’র’কে যায় এর আবার কী হলো আমাকে জড়িয়ে ধরলো কেন?”
ভাবনার মধ্যে আরিশা কে জিজ্ঞেস করলো এই তোর কী হয়েছে বলবি? তখন থেকে দরজা ল’ক করে বসে আছিস,এখন আবার আমাকে জড়িয়ে ধরছিস! মানে কী আরিশা?” পা’গ’ল হয়ে গেলি নাকি?”
আরিশা মুচকি হেঁসে বললো- তোকে এক বালতি ধনে পাতা বনু তুই আমাকে বলেছিস। না হলে তো আমার হিরো টাকে এক নজর দেখতে পারতাম না রে! ঠোঁট উল্টে কথা গুলো বললো আরিশা।”
আরিশা’র কথা শুনে আরিয়া ওকে হাত দিয়ে সরিয়ে বললো- সর সর তোর এসব আজাইরা কথা কে শুনে।” এমন ভালোবাসে আমার বোন নিজের ভালোবাসা’র মানুষটা কেই চিনে না।” হায় হুতা’শ করে বললো- আরিয়া।
আরিয়ার কথায় আরিশা মুখ ফু’লি’য়ে রাখলো। আরিশার এমন মুখ ফুলানো দেখে আরিয়া ফি’ক করে হেঁসে দেয়।” আরিয়ার হাসি দেখে আরিশাও হেঁসে দেয়।
তারপর আরিশা আরিয়াকে জিজ্ঞেস করে: আচ্ছা আরিয়া তুই কীভাবে আরিয়ান ভাই কে চিনলি?”
আরিয়া বললো- আমি তো প্রথম দিন এসেই ভাইয়া’র সাথে কথা বলেছি,দেখেছি।
আরিয়ার কথা শুনে আরিশার চোখগুলো বড় বড় হয়ে যায়! এবং বলে উঠে- কীহ!”
আরিয়া- কী না হ্যাঁ।”
আরিশা আবারো মুখ ফুলিয়ে বললো- তোর সাথে কথাও বলেছে আর আমার সাথে দেখাটাই করলো না ব্যাটা ব’জ্জা’ত।”
আরিয়া: তুই রুমে সবসময় মশারী টা’ঙি:য়ে মশারী’র নিচে বসে থাকিস তাহলে তোকে কে দেখবে আর তুই কাকে দেখবি?” বে’দ্দ’প।”
তুই জানিস আরিয়ান ভাই তোকে কতবার দেখতে চেয়েছে।” তারপর বললো- সে নিজেই দেখা করবে যখন তুই সামনে পড়বি,আর আমরা যেন না বলি। আমি বলেছিলাম তুই চিনবি না আর তাই হলো। তবুও ভাইয়া বলেছিল দেখা যাক।”
আরিয়া’র কথা শুনে আরিশা বললো- দূর আমি আর উনার সাথে দেখাই করবো না।”
আরিয়া বললো- তোমার উনিও আর দেখা করবেন না। কাল সাতটায় ভাইয়ার ফ্লাইট, ভাইয়া চলে যাবে।”
আরিয়ার কথা শুনে আরিশা বললো- চলে যাবে মানে?”
আরিয়া: চলে যাবে মানে চলে যাবে।”নিজের বাসায় যাবেন না?” ঢাকায় চলে যাবেন।”
আরিশা: ওহ! তাই বলে এতো তাড়াতাড়ি চলে যাবেন?”
আচ্ছা তুই জানলি কীভাবে কাল সাতটায় ফ্লাইট!”
আরিয়া: ওই তো তখন ছাদে গিয়েছিলাম তখন বললো ভাইয়া- আরিয়া দোয়া করো ভাইয়ার জন্য! কাল তো আমি চলে যাবো ঢাকায়। আরাফের সাথে আমাদের বাসায় যেও।”
তখনই আরিয়ান ভাই বলেছিল কাল সাতটায় আমার ফ্লাইট।”
আরিয়ার কথাগুলো শুনে আরিশার কেন যেন মন খা’রা’প হলো।”
তারপর ওরা দু’জন রুম থেকে বের হয়ে ড্রয়িংরুমে আসে। সেখানে বসে সবাই গল্প করছিল ওরা ও যোগ দেয়।”
আরিশা গল্প করছে সাথে আ’ড়-চোখে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে! কিন্তু কোথাও তার কাঙ্ক্ষিত মানুষটা কে দেখতে পেলো না।”
এতো দিন পর ভালোবাসার মানুষটাকে পেয়েও দুরত্ব।” হাজারো অপেক্ষা যেন একপলক দেখা’র জন্য।”
রাত প্রায় আটটা বেজে সাইত্রিশ মিনিট। অনেকেই ড্রয়িংরুমে বসে এখনো এটা সেটা বলছেন,অনেকে শুধু শ্রোতা’র ভূমিকা পালন করছেন।”
মেইন দরজা দিয়ে প্রবেশ করলো আরাফ, ইরফান। ওরা সবার কাছে এগিয়ে এসে আরিশার পাশে বসলো আরাফ। অন্যদিকে ইরফানও বসে পরে।”
আরাফ আরিশা কে বললো- কাল এগারোটায় আমাদের ফ্লাইট তো’রা তৈরি থাকিস।” আর সবকিছু গুছিয়ে রাখিস।”
আরাফের কথা শুনে ঈশিকা খানম বললেন- একি বাবা কাল ফ্লাইট মানে কী বলো?” এতো তাড়াতাড়ি চলে যাবে?” কাল তো ভাই ভাবী কে বলে রাখলাম আর কয়েকটা দিন তোমরা থাকবে! তাহলে আজ এটা কী বলছো।”
আরাফ: আমরা তো থাকতেই চেয়েছিলাম আন্টি কিন্তু আমার অফিসে পরশু একটা ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং আছে! সেই মিটিং এ আমাকে উপস্থিত থাকতেই হবে। তাই আর থাকতে পারলাম না আন্টি! তবে ইনশাআল্লাহ আবার এসে অনেকদিন থেকে যাবো।”
ঈশিকা খানম একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন- আচ্ছা বাবা।”
চলবে!