#অপেক্ষার_শেষে
#পর্ব_১৯
#লেখিকা_কে_এ_শিমলা
আরিয়া সবার নিকটে এসে আরিয়ান কে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করে কেমন আছো ভাইয়া?
আরিয়ান ওর সালামের জবাব দিয়ে বললো- আলহামদুলিল্লাহ বোন ভালো আছি!” তুমি কেমন আছো?”
আরিয়া: আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া ভালো।
আরিয়ান সবার সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে।তারপর আয়শা সিদ্দিকাকে বললো- আচ্ছা আন্টি আজ তাহলে আসি!” আপনারা কিন্তু যাবেন আমার বাসায়, অপেক্ষায় থাকবো আমি।”
আয়শা সিদ্দিকা: কী বলো বাবা চলে যাবে মানে?” সারে নয়টা বেজে গিয়েছে না খেয়ে কোথায় যাবে? আজ খেয়ে যাবে বসো।” আরিফা রান্না কতদূর?”
আরিয়ান: না আন্টি আজ না অন্য একদিন এসে খাবো ইনশাআল্লাহ।”
আয়শা সিদ্দিকা: সে তো নিশ্চয় খাবে। কিন্তু আজ খেয়ে যাবে।”
তুমি বসে গল্প করো তোমার আঙ্কেলরাও চলে আসবেন আমি দেখছি।”
আয়শা সিদ্দিকা যাওয়ার পর আরাফও বললো- আজ কিন্তু না খেয়ে তোর যাওয়া হবে না তাই বৃথা চেষ্টা করে লাভ নেই।
ওকেই তো’রা কথা বল আমি আসছি।”
বেচারা আরিয়ান আর না করতে পারলো না।”
আরিয়ান একবার বাসার উপর নিচে চোখ বুলায়।” হঠাৎ একদিকে তাকিয়ে আরিয়ানে’র চোখ আটকে যায়।”
আরিয়ানে’র দৃষ্টি অনুসরণ করে আরিয়াও সেই দিকে তাকায়! দেখতে পেলো আরিশা দাঁড়িয়ে আছে।”
আরিয়া বললো- ভাইয়া তুমি এখানে একা বসে কী করবে? চলো আমাদের পড়া’র রুমে ওখানে আমরা কথা বলবো।”
আরিয়ান: আচ্ছা ঠিক আছে চলো।”
আরিয়ান আরিয়া’দে’র পড়া’র রুমে ঢু’কতেই ওর মনে হলো- ছোটখাটো লাইব্রেরিতে প্রবেশ করেছে।”
এতো বই দিয়ে কী করে এরা?” তবে বুঝতে পারলো ওরা কম-বেশ বই পা’গ’লী।”
আরিয়া টেবিলে’র পাশ থেকে একটা চেয়ার টেনে দেয় আরিয়ান কে।” আরিয়ান কে বসতে বলে! ও বললো- আচ্ছা ভাইয়া তুমি বসো আমি আসছি দুই মিনিটে।”
আরিয়ান: ঠিক আছে বলে একটা বই হাতে তুলে নেয়।”
কিছুক্ষণ পর আরিয়া আরিশা’র হাত ধরে রুমে প্রবেশ করে।”
তারপর বললো-সেই সন্ধ্যা থেকে নিজের রুমে বসে আছিস!” পড়ি শেষ করবে কে?” চল পড়তে বসতো।”
আরিশা মাথা নত করে কর্নারে একটা চেয়ারে বসে পড়লো সামনে বই নিয়ে।”
আরিয়া কিছুক্ষণ আরিয়ানে’র সাথে এটা সেটা নিয়ে কথা বলে।”
আরিশা বসে বসে ওদের কথা শুনছে আর আ’ড়-চোখে আরিয়ান কে দেখছে।” যা চোখ এড়া’য়নি আরিয়ানে’র।”.
আরিয়া বললো- তোমরা কথা বলো আমি আইসক্রিম নিয়ে আসি।”
আরিয়ান আরিয়া’র কথা শুনে অবাক হয়ে বললো- এই শীতে’র মধ্যে তুমি আইসক্রিম খাবে আরিয়া?”
আরিয়া: আরে ব্যাপার না ভাইয়া!” বলে রুম থেকে বের হয়ে যায়।”
দুমিনিট কে’টে গেলো আরিশা এখনো নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।” অর্থাৎ সে বুঝাতে চাচ্ছে সে গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়ছে।”
আরিশার এসব কান্ডদেখে নিঃশব্দে হাসলো আরিয়ান। যা দেখে হয়তো নতুন করে প্রেমে পরলো আরিশা। মনে মনে বললো- ব্যাটা তুই এতো সুন্দর হলি কেন?”
আরিয়ান আবার ওর দিকে তাকাতেই আরিশা মাথা নিচু করে নেয় চ’ট করে।”
সবশেষে আরিয়ানই বললো- কেমন আছো আরু?”
আরিয়ানে’র মুখে আরু নাম শুনে আরিশা অবাক চোখে তাকালো।”
এতো বছর পরেও এই নামে ডাকছে আরিয়ান।” অজানা ভালো লাগা দোলা দিয়ে যায় ওর মনে।”
তবে মুখে কা’ট গলায় বললো- জ্বী আলহামদুলিল্লাহ ভালো!” আপনি?”
আরিয়ান জবাবে বললো- ভালোই।”
আবার নিরবে কিছু সময় অতিবাহিত হওয়া’র পর আরিয়ান বললো- তুমি এইবার কোন ক্লাসে?”
আরিয়ান জানে তবুও জিজ্ঞেস করলো।”
আরিশা: অনার্স প্রথম বর্ষ।
আরিয়ান: ওহ আচ্ছা ভালো।”
আবারো নিরবতা।”
আরিয়ানই আবার বললো: আরু ওই দিন এয়ারপোর্টে তোমার সাথে আমার ধা’ক্কা লেগেছিল, স্যরি!”
আরিশা: হু।”
আরিশা’র এমন গা ছাড়া জবাবে আরিয়ানে’র রা’গ উঠে যায়।” মনে মনে বললো- একবার তোকে নিজের করে নেই!” তখন দেখবো কথা না বলে থাকিস কীভাবে?”
আরিয়ান কে এভাবে বিরবির করতে দেখে আরিশা বললো- কিছু বলছেন?’
আরিয়ান স্মিত হেসে বললো- নাহ গো! কিছু বলিনি।”
আচ্ছা তুমি পড় আমি যাই।” বলে আরিয়ান চলে গেল।”
আরিয়ান চলে যেতেই আরিশা টেবিলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে নিল।” বিরবির করে বললো- বাবাগো! কীভাবে এই ছেলে চলে গেল?” আল্লাহ!”
এতো দিন এই ছেলেটাকে দেখতে চেয়েছে। আর এখন কাছে পেয়ে সামান্য কথাটুকু বলতে পারছে না ভালো করে তাকিয়ে দেখা তো অনেক দূর।”
আচ্ছা প্রিয় মানুষে’র সাথে কয়েকদিন পর দেখা হলে কী তার দিকে তাকানো যায় না!” মনে মনে ভাবলো কথাটা আরিশা।”
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সবার সাথেই রাতের খাবার শেষ করলো আরিয়ান আরাফের বাসায়।”
খাওয়ার পরে আরো বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে আশরাফ চৌধুরী এবং আরমান চৌধুরী’র সাথে।” উনাদের বেশ ভালো লাগলো আরিয়ান কে।
সবকিছুর পর আরিয়ান সবাইকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলো তার বাসায়।”
আরিশার মনে কেন যেন একটা প্রশান্তি’র স্পর্শ লেগে আছে। হয়তো একপলক প্রিয় মানুষটাকে দেখায়।”
কে’টে গেলো আরো দুটো দিন।
আরিশা আরিয়া ভার্সিটি থেকে বাসায় এসে দেখে ড্রয়িং রুমে আশরাফ চৌধুরী এবং আরমান চৌধুরী বসে আছেন।” এই সময়ে উনাদের কে দেখে ওরা একটু অবাক হলো।”
সাথে আরাফও আছে, কিছু বুঝতে পারছে না ওরা।”
দুজনে এগিয়ে যায় উনাদের দিকে।” আরিয়া ওর বাবা অর্থাৎ আরমান চৌধুরী কে বললো- আব্বু, বড় আব্বু ভাইয়া তোমরা সবাই এই সময়ে বাসায় কেন?” অফিস যাওনি?”
আরমান চৌধুরী: হ্যাঁ আম্মা গিয়েছিলাম তবে জরুরি কাজে এসেছি বাসায়।”
আরিয়া: কী কাজ আব্বু?”
আরমান চৌধুরী: তোমার বড় আব্বু বলবেন।”
আশরাফ চৌধুরী আরিশা কে ডেকে উনার পাশে বসালেন। তারপর কিছুটা গ’ম্ভী’র কন্ঠেই বললেন- আরিশা আমি তোমার বিয়ে ঠিক করেছি।” আমাদের সবার মতামত আছে। আমার মনে হয় তুমি এই প্রস্তাবে আর অমত করবে না।” ছেলে যথেষ্ট ভালো আর পরিবারও ভালো।”
ছেলে লন্ডনে থাকে, ভালো একটা জব করে সেখানে। বিয়ের পর তোমাকেও সেখানে নিয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা।” দেখো আমার মনে হয় এর থেকে ভালো লাইফ পার্টনার তুমি হয়তো পাবে কিন্তু একবার আমাদের পছন্দটাকেও তোমার দেখা উচিত। এর আগেও তোমার জন্য তিন টা প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছি! এখন যদি এমন চিন্তা তোমার মাথায় থেকে থাকে তাহলে তা ঝেড়ে ফেলো।
এসব দরজা বন্ধ করে থাকলে ভেবো না এই প্রস্তাব টা আমি ফিরিয়ে দেবো।” আর যদি এমনটা ভাবো তাহলে তোমার অমতেই বিয়ে দিতে বাধ্য হবো।”
আমি তোমার বাবা, আর আমরা কেউ তোমার খা’রা’প চাই না। দেখো তুমি এই জায়গায় সুখে থাকবে। তাই খুশি মনে তুমি রাজি হও। আর যদি অন্য কোথাও তোমার পছন্দ থাকে তাহলে বলো আমরা অবশ্যই সেটা দেখবো। আর ভালো মনে হলে সেখানেই কথা বলবো।”
আরিশা তোমার বুঝার জন্য যথেষ্ট বয়স হয়েছে! আমি আশা করি তুমি বুঝতে পেরেছো।”
এখন তুমি চাইলে তোমার মতামত বলতে পারো। আমরা বিয়ের দিন তারিখ পরিবর্তন করতে পারি কিন্তু বিয়ে’র ব্যাপারে কিছু শুনতে চাই না। পছন্দ অন্য জায়গায় থাকলে বলো না হলে বিয়ে ভে’ঙ্গে দেওয়া’র ব্যাপারে আশা করি কিছু বলবে না।” আর শুনতেও চাই না।”
আজ বৃহস্পতিবার,আগামী সোমবার আমরা তোমাদের বিয়ের তারিখ ঠিক করেছি। বলো এই তারিখে হবে নাকি আরো দীর্ঘ সময় প্রয়োজন।”
আর হ্যাঁ ছেলে আমরা দেখেছি অনেক পছন্দ হয়েছে। আশাকরি তোমারও পছন্দ হবে, তাই আর দেখা’র প্রয়োজন নেই তবে তুমি চাইলে দেখতেও পারো।”
তবে ছেলে তোমাকে দেখেছে তাঁর পছন্দ হয়েছে। আরিশা মা আমার তোমার কাছে একটা চাওয়া তুমি এই বিয়েতে খুশি মনে রাজি হও। অমত করো না, আর আমার চাওয়াটা তুমি ফিরিয়ে দিও না।”
এতোক্ষণ আশরাফ চৌধুরী’র কথা গুলো মনোযোগ সহকারে শুনছিল। সবকিছু শুনে যেনো ওর পায়ের নিচের মাটি সরে যায়। কী বলবে বা কী বলা এখন উচিত!” নিচের দিকে মাথা নত করে তাকিয়ে আছে অনুভুতি শুন্য মানুষে’র মতো। শুধু ভাবছে কী হচ্ছে আমার সাথে এসব?”
আশরাফ চৌধুরী আবার বললেন- কী হলো আম্মা কিছু বলো।”
চলবে!#অপেক্ষার_শেষে
#পর্ব_২০
#লেখিকা_কে_এ_শিমলা
আশরাফ চৌধুরী আবার বললেন-কী হলো আম্মা কিছু বলো।”
আরিফা আফরোজ আরিশা’র পাশে বসে ওকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললেন- আম্মা আর কী বলবে ভাইজান। আম্মা রাজি আছে আপনারা বিয়ের আয়োজন শুরু করেন।”
আরিয়া মা আম্মা কে রুমে নিয়ে যাও।” মায়ের কথায় আরিয়া আরিশা কে নিয়ে উপরে চলে যায়।”
আরিশা কিছু বলার সুযোগই পেলো না।”
আরিশা নিজের রুমে ঢু’কে দরজা ল’ক করে দেয়। ব্যাগ টেবিলে রেখে চেয়ারে ধ’প করে বসে পড়ে।”
কী হয়ে গেলো এটা এতো কিছু’র পর আমি আমার প্রিয় মানুষ কে হারিয়ে ফেলবো।” কথাটা ভাবতেই আরিশার ব’ক্ষস্থল কেঁপে উঠলো।”
না না কিছুতেই আরিয়ান ভাই কে ছাড়া আমি অন্য কারো সাথে নিজেকে মানতে পারবো না। অন্য কারো সাথে জীবনে’র পথচলা আমার জন্য অস’ম্ভব।”
কিন্তু আব্বু আম্মু সবাই কেন আমাকে না বলে এমন কিছু করলো?” আল্লাহ!’
বলেই মাথায় থাকা ওড়না খা’ম’চে ধরলো দুই হাত দিয়ে।” বুক ফে’টে কান্না আসছে ওর।”
আব্বু তো কোনোরকম সু্যোগ রাখেনি এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া’র।
তাহলে কী সত্যিই আমি হারিয়ে ফেলবো আরিয়ান ভাই কে!”
অজানা ব্য’থায় চি’ন’চি’ন করে উঠলো আরিশা’র বুকে’র বাম পাশটায়।”
না না আমাকে আম্মু’র সাথে কথা বলতে হবে। আম্মু নিশ্চয় আব্বু কে বুঝিয়ে বলবেন আর আব্বু এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিবেন।”
ফ্রেশ হওয়া’র জন্য উঠে দাঁড়ায় আরিশা।”
ফ্রেশ হয়ে আরিশা মায়ের কক্ষে’র উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।”
রুমে ঢু’কে চোখ বুলিয়ে নেয় আগে পুরো রুমে। নাহ আশরাফ চৌধুরী নেই কোথাও।”
আয়শা সিদ্দিকা নামাজ আদায় করে তাসবিহ পাঠ করছিলেন।” আরিশা মায়ের নিকট এগিয়ে যায়, তারপর আয়শা সিদ্দিকা’র পাশে বসে বললো- আম্মু আব্বু কোথায়?”
আয়শা সিদ্দিকা বললেন: অফিসে চলে গেছেন! কিছু বলবি?” আম্মু কে বল।”
আরিশা নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো- আম্মু তুমি বোঝাও না আব্বু কে আমি এই বিয়েতে রাজি হতে পারবো না।”
আয়শা সিদ্দিকা: কেন মা?” ছেলে খুব ভালো তোকে খুব ভালো রাখবে।”
তোর শশুর বাড়ির লোকজনও খুব ভালো!” দেখবি ভালো থাকবি তুই।”
আরিশা: আম্মু আমার এইসব বিয়ে সংসার ভ’য় পাই। আমি তোমাদের কে ছেড়ে অন্য কোথাও থাকতে পারবো না। আমি অনার্স শেষ করি তারপর আমাকে বিয়ে দিও আমি অমত করবো না কিন্তু এখন প্লিজ আম্মু আব্বু কে বোঝাও না।”
আয়শা সিদ্দিকা: আরিশা আমরা তোমার ভালো’র জন্যই বলছি। এইভাবে আরো তিনটি প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছি এইবারই শেষ।”
তোমার বাবাতো বলেছেন এইটা উনার একটা চাওয়া তাহলে কেন ফিরিয়ে দিচ্ছ?”
আর তোমার কোনো সমস্যা থাকলে তুমি নিজে তোমার বাবা কে বলো। আমি দুঃখিত মা আমি পারবো না এরকম কিছু উনাকে বলতে।” আর তুমি জানো তোমার বাবা’র কথার উপরে কথা বলার সাহস আমার নেই।”
আরিশা মায়ের দিকে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকায়, আয়শা সিদ্দিকা উনার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলেন।”
আরিশা উঠে দাঁড়ায় নিজের কক্ষে ফিরে আসে এক বুক হতাশা নিয়ে।” সে তো জীবনেও এসব বাবাকে বলতে পারবে না।”
কী করবে বুঝতে পারছে না আরিশা। খুব করে চাচ্ছে সময় টা এখানে থেমে যাক, এই বিয়ের সময়টা জীবনে না আসুক।”
এইভাবে ছ’ট’ফ’ট করে কে’টে যায় বিকাল, সন্ধ্যা।”
রাত প্রায় নয়টা বাসায় আসেন আশরাফ চৌধুরী, আরমান চৌধুরী,আরাফ।
আরিশা চেয়েছিল যেকোনো উপায়ে বাবার কাছে বলবে কিন্তু ওর সাহসে কুলোয়নি।”
অল্প একটু খেয়ে রুমে চলে আসে আরিশা।”
চোখে ঘুম নেই ওর। কী করবে এটা ভাবতে ভাবতে চলে যায় অনেকটা সময়।” আরিশা’র খুব কান্না পাচ্ছে! আরিয়ানের সাথে কথা বললে হয়তো ভালো লাগতো। কিন্তু সেটাও হচ্ছে না।”
এসব ভাবতে ভাবতে একসময় ঘুমে’র রাজ্যে হারিয়ে যায় আরিশা।”
অ’ন্ধ’কা’রা’চ্ছ’ন্ন কক্ষে ফোনে’র স্ক্রি’নে জলজল করছে একটা মেয়ের নজরকাড়া হাসিমখা মুখশ্রী’র ফটো।” একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেই ফটোতে একজন যুবক।”
ফটোটা আরিশা’র, সেই যুবক টা বললো- আর কিছুটা দিন পরেই তুমি আমার আরুপাখি। অবশেষে তোমাকে নিজের করতে পারলাম আরুপাখি।” অপেক্ষা’র অবসান অতি শীঘ্রই ঘটবে আমার।”
আচ্ছা আমাকে দেখে কী তুমি রা’গ করবে আরুপাখি।” আচ্ছা রা’গ করলেও সমস্যা নেই, ভালোবাসা দিয়ে রাগ ভা’ঙি’য়ে দেবো।”
এরকম কিছু কথা বলতে বলতে সেই যুবকটাও একসময় পারি জমায় ঘুমের দেশে।”
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
কে’টে গেছে আরো দুটো দিন। কাল বাদ পরশু আরিশার বিয়ে।”
আরিশা এখন এই বিয়ে ভা’ঙ্গা’র চেষ্টা ছেড়ে দিয়েছে। ধরে নিয়েছে এটাই তাহলে ওর ভাগ্যে ছিল।” তবুও বিশ্বাস হারালো না আরিশা আল্লাহ’র উপর থেকে। যদি আরিয়ান ওর ভাগ্যে থাকে আর ওর ভালোবাসা সত্যি হয় তাহলে সবকিছু’র শেষে ঠিক আরিয়ান তার হবে।”
আরিয়ানে’র সাথে আরিশা কথা বলেছিল কিন্তু আরিয়ান ওসব ব্যাপারে কিছুই বলেনি।” বরং আরিশাকে অভিনন্দন জানিয়েছে।”
আজ তিনটা’র দিকে আরিয়ানে’র সাথে কথা বলেছিল আরিশা।
ও যেন লজ্জা ভু’লে ইরিনে’র কাছ থেকে আরিয়ানে’র নাম্বার নিয়েছিল গতকাল রাতে।
কল দিবে কী দিবে না এই দিদ্ধা কাটিয়ে আজই কল করতে সক্ষম হয়েছিল আরিশা।”
কল করার উদ্দেশ্য ছিল যদি আরিয়ানে’র থেকে মন মতো কিছু শুনতে পারে।”
কিন্তু আরিয়ান কে যখন আরিশা বলেছিল আগামী সোমবারে আমার বিয়ে আরিয়ান ভাই।”
সেটা শুনে আরিয়ান জবাবে মলিন গলায় বলেছিল: অভিনন্দন আরু, দোয়া করি তোমার বিবাহিত জীবন সুখের হোক। ভালো থেকো তুমি স্বামী সংসার নিয়ে, দোয়া রইলো তোমার জন্য।”
আরিশা বললো- কিন্তু আমি তো আপনাকে ভ…..
বলতে পারেনি পুরঝ কথাটা তার আগেই আরিয়ান বললো- আচ্ছা আরিশা পরে কথা হবে।”
আরাফও আমাকে বলেছে তোমার বিয়ের ব্যাপারে। তুমি তো রাজি!” ভালোই, দোয়া এবং শুভ কামনা রইলো তোমার জন্য।”
আরিয়ান হাসার চেষ্টা করে বললো- আমি কিন্তু তোমার বিয়েতে আসবো দাওয়াত দাও বা না দাও।”
আরিয়ানের এসব কথা শুনে আরিশা রাগে কল কেটে দেয়।” মনে মনে বললো- যাহ তোর জন্য শুধু শুধু এতো গুলো দিন অপেক্ষা করলাম। তুই আমার অপেক্ষার মূল্য দিলি না আমার ভালোবাসা বুঝলি না। বুঝবি তুই, দেখবি ভালোবাসাকে অন্যের হতে দেখা কতটা যন্ত্রণাদায়ক।” যে ভালবাসা সহজে পেয়ে হারালি সেই ভালোবাসা পাওয়া’র জন্য কী করতে হয়।”
আমি আর এই বিয়েতে অমত করবো না। ভা’ঙ্গা’রও চেষ্টা করবো না হাসতে হাসতে তোকে মুক্ত করবো আমার অপেক্ষার বে’ড়া’জা’ল থেকে।”
আরিশা চোখে’র কোণে’র জল মুছে বললো- তোকে দেখিয়ে দেখিয়ে বরে’র বাড়ি যাবো! কিন্তু বেডা তুই বউ পাবি না দেখবি! হুহ।”
রাত প্রায় আটটা সতরো মিনিট, আরিশাদের বাড়িতে প্রবেশ করে ইরিন,ইরফান, দিশা, দিয়ান, সোহা,মাহিন, মিতু,হৃদি।
ওদের কে দেখে এগিয়ে আসলেন আয়শা সিদ্দিকা,আরিফা আফরোজ, এবং আরিয়া।”
আরিয়া আরিশা কে ডেকে বললো ওরা এসেছে।
আরিশা নিচে এসে ওদের কে দেখে, হাসি মুখে এগিয়ে আসলো ওদের দিকে।”
ইরিন, হৃদি, দিশা সহ বাকিরাও অবাক হলো। মানে! আরিশা হাসছে কীভাবে ওর তো কেঁদে কে’টে একাকার হওয়া’র কথা ছিল।”
ইরিনে’র ভাবনা’র মধ্যে আয়শা সিদ্দিকা বলে উঠেন- ইরিন জামাই বাবা আসেনি?”
ইরিন বললো- আসলে আন্টি মনি আব্বু’র অফিসে জরুরি কাজ আছে আর উনার ও একটা জায়গায় যেতে হবে। যদি শেষ হয়ে যায় তাহলে আগামীকাল আসবেন নয়তো রাতে আসবেন।” তাই উনি বললেন আব্বু আম্মু’র সাথে আসবেন। কিন্তু আমাকে ভাইয়া’র সাথে পাঠিয়ে দিয়েছেন। বলে একটা শুকনো হাসি দিল।”
নতুন বিবাহিত মেয়ে স্বামী ছাড়া কোথাও এসেছে এটা যেন কেমন মানায় না। তাই আয়শা সিদ্দিকা জেনে নিলেন আসবে কী না।” আসলে উনি চাননা এসব নিয়ে ইরিন কোনোকিছু শুনুক কারো কাছ থেকে কিছু।”
তবে ইরিন প্রথমে আসায় কোনো কিছু মনে হয়নি উনার। হয়তো নিহান বান্ধবী’র বিয়ের জন্য আগেই পাঠিয়ে দিয়েছে ওরা কবে আসবে এইটা ভেবে।”
ইরিনদে’র কে রুম দেওয়া হয়, ওরা নিজ নিজ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়।”
হাঁসি আড্ডা গল্পের মধ্যে কে’টে যায় অনেকটা সময়।”
চলবে!