#অবৈধ_সম্পর্ক
#লেখাঃ_নুসরাত_জাহান
#সিজনঃ_২
#পর্বঃ_১০
রিপা রান্না ঘরে ঢুকে দুপুরের খাবারের বন্দোবস্ত করতে লেগে গেলো। ভাবছে সংক্ষেপে যা রান্না করা যায় সেটাই ভালো হবে। মাথার ভিতরে ইমরানের কথাগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে। কেনো জানি ইমরানকে ওর সহ্য হচ্ছেনা। ওকে দেখলেই মনের ভিতরে অস্থিরতা কাজ করতে থাকে। নিজের প্রতি নিজেরই ঘৃণা লাগতে থাকে।
কার সাথে তার বিয়ে হয়েছে যে বিয়ের পরে বাচ্চা নেওয়াটাকে একটা ঝামেলা মনে করছে। বাবা মাকে কতদিন হলো দেখেনি। মনের ভিতরটা কেঁদে উঠছে বারেবারে তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত হয়েছে রিপা। এতদিন তার ধারণা ছিলো বিয়ের পরে মেয়েরা স্বামীর সোহাগ ভালোবাসায় তাদের মন পরিপূর্ণ হয়ে যায় কিন্তু এখন তো দেখছে সবটাই উল্টো। তাদের সম্পর্কের ভিতরে বিন্দুমাত্র ভালোবাসা নেই। আছে শুধু শরীর ভোগ।
.
রিপা ডিপ ফ্রিজ খুলে মুরগির মাংস নামিয়ে তারপর পানিতে ভিজিয়ে রাখলো। হঠ্যাৎ দরজায় কলিং বেল বাজালো।
.
রিপা হাতটা ভালো করে ধুয়ে রান্নাঘর থেকে বাহিরে এসে দেখলো ইমরান দরজাটা খুলতে যাচ্ছে। তাই রিপা ব্যাক করে রান্না ঘরে ঢোকার জন্য পা বাড়বে তখুনি রাহাতের কন্ঠস্বরে থ…মেরে থমকে গিয়ে সামনে ফিরলো। রিপাকে দেখেই রাহাত ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বললো,,,,
-“ভাবী কেমন আছে??
রাহাতের কথা শুনে পিছনে ফিরে তাকায় ইমরান। রিপাকে দেখে রাহাতের কাঁধে হাত রেখে বললো,,,
-“শালা হারামী। বন্ধুকে দেখেও কথা না বলে ভাবীকে দেখে কুশুল বিনিময় করতে ভুললি না। লুচ্চা জানি কোথাকার। দাঁড়া তোর বিয়ের ব্যবস্থা করছি খুব শ্রীঘ্রই।
রাহাতের বিয়ের কথাশুনে মূহুর্তেই রিপার মুখটা মলিন হয়ে গেলো।
তাড়াতাড়ি রান্নাঘরে ঢুকে পিয়াজ কাটলে লাগলো।
.
ইমরান রান্নাঘরে এসে বললো,,,
-“রিপা রাহাতের জন্য দুপুরের খাবাবের ব্যবস্থা করো।
রাহাত ফাস্ট ফুড খেতে পছন্দ করে তাই সেভাবেই প্রিপারেশন নাও।
-“রিপা হ্যাঁ সূচক উত্তর দিলে ইমরান চলে গেলো।
রিপার পিয়াজ কাটা হয়ে গেলে কাঁচা মরিচ ফালি করে বাটিতে রাখলো। পানিতে ভিজানো মাংসটা তুললো।তারপর কড়াইয়ে সব মসলা দিয়ে কষিয়ে মুরগির মাংসটা দিয়ে নেড়েচেড়ে অল্প পানি দিয়ে ঢেকে দিলো।
প্রায় ৪৫ মিনিট পরে মাংসের কড়াইটা নামিয়ে পোলাউ বসিয়ে দিলো। কয়েক রকমের সবজি চাক চাক করে লাবরা বানানোর জন্য অপেক্ষা করছিলো সে।
পোলাউ হয়ে গেলে নামিয়ে রেখে পিয়াজ কুচির সাথে তেল দিয়ে নেড়ে সবজিগুলো দিয়ে ঢেকে দিলো কিছুক্ষণ পরপর নাড়াচাড়া দিয়ে নামিয়ে রাখলো।
মুরগি দিয়ে রাহাতের জন্য চিকেন ফ্রাই আর ফ্রান্সিস ফ্রাই করলো।
.
রান্নার কাজ হয়ে গেলে রিপা গিয়ে ইমরানকে জানায়।
-‘ইমরান রান্না হয়ে গেছে।
-“আচ্ছা তুমি টেবিলে খাবার পরিবেশন করো আমরা হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে আসছি।
-“ঠিক আছে। তবে বেশি সময় নিবে না। তাহলে খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে।
.
রিপা টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে। রাহাতকে সাথে নিয়ে ইমরান হাসতে হাসতে টেবিলের কাছে এসে বসলো।
রিপা দুজনকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে।
-‘ওয়াও ঘ্রাণটা তো দারুণ ভাবী। খেতে না জানি কত টেস্টি। (রাহাত)
-“রাহাত এত লাফাস না। রিপার রান্নার শুধু ঘ্রাণ সুন্দর না খেতে ও হেব্বি দোস্ত। (ইমরান)
-“তাই নাকি???
-“হুম। খেলেই বুঝতে পারবি।
রাহাত এক লোকমা মুখে তুলতেই খাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো।
-” কী রে রাহাত খাচ্ছিস না কেন??? ঠান্ডা হয়ে যাবে তো।
-“আরে দোস্ত তুই তো যে প্রশংসা করলি সেটা তো কমই করলি। আমার তো মনে হচ্ছে বড় কোন রেস্টুরেন্ট থেকে অর্ডার করে এনেছিস। তোর বউয়ের হাতের রান্না খেয়ে তো আমার জীবনটা স্বার্থক। আমি তো এটা কখন ও কল্পনাও করতে পারিনি যে তোর বউয়ের হাতের রান্না খেতে পারবো।
-“হয়েছে এবার চেপে যা। সামনাসামনি এত প্রশংসা শুনে তোর ভাবী একেবারে ফেটে যাবে।
-“কী যে বলিস দোস্ত ভাবী কত স্লীম। ফাটবে না। বরং রান্না আরো ভালো হবে।
কারণ প্রশংসা শুনতে সবাই পছন্দ করে। আর যদি ভালো প্রশংসা করা হয় তাহলে সে অনুপ্রেরণা পেয়ে আরো ভালো করার চেষ্টা করে।
-“আরে বস এবার তোর কাছে মাফ চাই। ডক্টর বলে কথা। তোর সাথে তর্কে পারবোনা।
-“বুঝতে পারলি তাহলে।(রাহাত)
-“হুম। আচ্ছা শোন তোর কেমন মেয়ে পছন্দ??( ইমরান)
-‘রিপার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,,,-“তোর বউয়ের মতো হলেই চলবে।
-“তাই…..!
-“হুম।
-‘শোন তোর বাড়িতে একদিন দাওয়াত করিস আমি আর তোর ভাবী গিয়ে খেয়ে আসবো।(ইমরান)
-“হুম। সময় হোক নিয়ে যাবো।(রাহাত)
-“অপেক্ষায় রইলাম।(ইমরান)
.
এবার আপনারা দুজনে খেয়ে নিন তো। শুধু কথা বলতে বলতে খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে।
.
খাওয়া শেষ করে ইমরানের সাথে রুমে ঢুকলো রাহাত।
-“রাহাত বিছানায় শুয়ে পড়। সন্ধ্যার পরে দুজনে আড্ডা দিবো তারপর রাতে ডিনার করে বাসায় যাবি।
-“রাহাত আর কোন কথা বললো না।
.
রাহাত কপালের উপরে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে রাখলো।
প্রায় ৩০ মিনিট পরে চোখ খুলে তাকায়। বিছানার দিকে তাকিয়ে ইমরানকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে তারপরে বিছানা দিয়ে নেমে রুম থেকে বাহিরে বেরিয়ে আসলো রাহাত। রিপাকে হন্য হয়ে খুঁজতে লাগলো। রিপাকে না পেয়ে হতাশ হয়ে রুমে ঢুকতে যাবে তখনি রিপাকে দেখতে পেলো।
রিপা রান্না ঘরে থেকে বেড়িয়ে এসে রাহাতকে দেখে বিস্মিত হয়ে বললো,,,
-“এখানে এসেছো কেনো?? ইমরান দেখতে পেলে সমস্যা হয়ে যাবে।
রাহাত এগিয়ে রিপার হাতটা ধরে বললো,,,
-“কী সমস্যা করবে?? তোমাকে ছেড়ে দিবে?? দিলে তো ভালোই হবে আমি তোমাকে বিয়ে করে আমার বাসায় নিয়ে যাবো বলেই হো হো হো করে হাসলো রাহাত।
-“রাহাত এত হাসা ঠিক না। ইমরান এত সাহসে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র না সে।
রাহাত রিপাকে হেচকা টান দিয়ে জাপটে ধরে বললো,,,,
ইমরান যা হোক না কেনো আমি তো তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা। ঐ দিনের পর থেকে তোমাকে ছাড়া এক মুহুর্ত ভালো লাগছেনা।
-‘রাহাত ছাড়ো কী করছো?? ইমরান উঠে যাবে।
রাহাত রিপাকে ছেড়ে দিলে রিপা গেষ্ট রুমে ঢুকলো।
রাহাত গিয়ে আবার ইমরানের পাশে শুয়ে পড়লো।
বিকালে রাহাতের জরুরী কল আসলে সে ইমরানকে বলে চলে গেলো।
.
সন্ধ্যা ৭ টা……
ইমরান রুমে এসে দেখে রিপা ইজি চেয়ারের উপরে মাথা ঠেকিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। রিপাকে দেখে তার পাশে দাঁড়িয়ে বললো,,,,
-“রিপা আমি একটু বাহিরে যাচ্ছি। রাতের খাবার আমি নিয়ে আসবো তাই তোমার আর রান্না করার প্রয়োজন নেই।
-‘ঠিক আছে।
ইমরান চলে গেলে রিপা দরজাটা লক করে দিয়ে সোফার উপরে গুটিসুটি মেরে বসলো। টিভিটা অন করে মোবাইলটা হাতে নিয়ে রাহাতের নাম্বারের কল দিলো সে। কিন্তু রাহাতের নাম্বারটা ওয়েটিংয়ে আছে।
প্রায় ১০ মিনিট পর আবার ও কল দিলো এবার ও রাহাতের ফোন ওয়েটিং। কিছুটা হতভম্ব হয়ে মুখের ভিতরে চিন্তার ছাপ পড়লো তার। এতক্ষণ ধরে কার সাথে কথা বলছে রাহাত??
রিপা গালে হাত দিয়ে রাহাতের কলের অপেক্ষায় বসে আছে কিন্তু আদৌ তার কাছে রাহাতের নাম্বার দিয়ে কল আসলো না। বিরক্ত হয়ে ১ ঘন্টা পরে আবার কল দিলো। কিন্তু আফসোস এখন ও ওয়েটিং।
মোবাইলটা ধরে দেয়ালের দিকে ছুরে মারলো রিপা। মোবাইল থেকে ব্যাটারি আলাদা হয়ে ফ্লোরে পড়ে গেলো।
কিছুক্ষণ রোবটের ন্যায় থমকে বসে থেকে কী যেনো চিন্তা করে মোবাইলটা তুলে ব্যাটারি লাগিয়ে অন করার সাথে সাথে রাহাতের কল।
রিপার শরীরের রক্ত পুরোই গরম হয়ে আছে।
তবুও কলটা রিসিভ করলো।
.
-“হ্যালো রিপা। আই এ্যাম স্যরি। আমার বাসা দিয়ে কল দিয়েছিলো আমার বাবার অবস্থা তেমন ভালো না হসপিটালে এডমিট করা হয়েছে। আমি কলকেই বাড়িতে চলে যাবো। আমার বাবার জন্য দোয়া করো।
.
রাহাতের মুখে এমন খবরটা শুনে মুহূর্তেই রিপার সমস্ত রাগ শেষ হয়ে রাহাতকে বললো,,,
-‘আচ্ছা সাবধাণে যাও। আর এসে আমার সাথে দেখা করো।
-“ওকে মাই জান।
কলটা রেখে রাহাতের মুখে কুৎসিত হাসি ফুটে উঠলো
বেচারি রিপা। মানুষকে এত সহজে কী করে বিশ্বাস করে মাত্র ২ দিনের পরিচয়। তবে এটা আমার জন্য প্লাস পয়েন্ট যে কয়দিন ইনজয় করতে পারি ফ্রি তে হো হো হো।
.
রিপা ভাবছে রাহাতকে এভাবে ভুল বোঝাটা আমার ঠিক হয়নি। হুটহাট সন্দেহ করা যাবেনা।
.
দরজায় কলিং বেলের শব্দে রিপা গিয়ে দরজাটা খুলে দিলো।
দরজাটা খুলে দিলে ইমরান ভিতরে এসে খাবারের প্যাকেটটা টেবিলের উপরে রাখলো। রিপার পাশে দাঁড়িয়ে কপালে চুমো দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো ইমরান।
.
ইমরান টেবিলে এসে খাবার বাড়ছে প্লেটে। রিপাকে ডাক দিলে রিপা এসে চেয়ারে বসলো।
-“রিপা দেখো সাদা ভাত,,,গরুর কলিজা,,,চিংড়ি মাছ,,আর শুটকি ভর্তা এনেছি। আমি জানি এগুলো সব তোমার পছন্দ।
-“হুম।
ইমরান আর রিপা দুজনে খেয়ে নিলো।
-“রিপা তাড়াতাড়ি রুমে আসো।
-“কেনো??
-“আগে আসো তারপর বলছি।
-“রিপা সব কাজ গুছিয়ে তারপরে ইমরানের রুমে ঢুকলো।
-“ইমরান রুমের ভিতরে পায়চারি করছে। রিপাকে দেখে বললো,,এত দেরী হলো কেনো??
-“কাজ ছিলো। সেটা শেষ করে তারপর এলাম।
-“এখন যাও নাইটি টা পড়ে আসো।
-“আমার কাছে লজ্জা লাগছে পড়তে। আমি কখন ও এসব পড়িনি। এসবে আমাকে ভালো লাগবেনা।
-“এই তুমি না কী যে বলো। লজ্জা কীসের?? আমি তোমার স্বামী তাই আমার সামনে পড়লে কোন সমস্যা নেই। পড়ে এসো।
-“মানে…..
-‘রিপা তুমি নিজে পড়ে আসবে নাকি আমি নিজের হাতে পড়িয়ে দিবো।
-“থাক। আমি পড়ে আসছি। নাইটিটা আলমারি থেকে বের করে হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো। নিজের কাছে জানি কেমন লাগছে। তবুও পড়লো।
ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আসলে ইমরান রিপার দিকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে।
-“রিপা তুমি না বললে তোমায় ভালো লাগবেনা। তোমাকে তো অস্থির লাগছে। আমি তো চোখের পলক ফেলতে পারছিনা।
ইমরান ধীর গতিতে রিপার পাশে গিয়ে হাত ধরে টেনে বিছানার উপরে শুইয়ে দিলো। রিপার চুলগুলো সরিয়ে ঘাড়ে,,গলায়,,কপালে আলতো করে চুমো দিলো।
তারপরে নিজের ঠোঁট দুটো রিপার ঠোঁটের ভিতরে ডুবিয়ে দিলো।
কিছুক্ষণ রিপা নিজেকে ছাড়াতে চাইলে ইমরান আরো জোরে নিজের দুহাত দিয়ে রিপার হাতদুটো চেপে ধরলো।
রিপার ও আর নিজেকে আটকে রাখতে না পরে ইমরানের মাঝে হারিয়ে গেলো আর ইমরান ও রিপার মাঝে হারিয়ে গেলো। রিপার শরীরটা ইমরানকে আজকে এত বেশী আকৃষ্ট করেছে ইমরানের মনে হচ্ছে আজই সে প্রথম ফিজিক্যাল রিলেশন করছে।
কিন্তু ইমরানের স্পর্শগুলো কিছুক্ষণ পরে বিষের মতো লাগছে রিপার। তবুও কিছু বলতে পারছেনা। ইমরানের চাহিদা মিটে গেলে ক্লান্ত হয়েই রিপারকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো।
কিছুক্ষণ পরে নিজের শরীর থেকে ইমরানের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ারের নিচে বসে চোখের জল ছেড়ে দিলো।
চলবে……………….