অবৈধ সম্পর্ক পর্ব ১১

#অবৈধ_সম্পর্ক
#লেখাঃ_নুসরাত_জাহান
#সিজনঃ_২
#পর্বঃ_১১

সকালে ঘুম থেকে উঠে বালিশের পাশে হাত দিয়ে ফোনটা হাতে নিলো রিপা। পাওয়ার বাটনটা চাপ দিয়ে ফোনের স্কীনের দিকে তাকিয়ে দেখলো,,,
10 missed called……..
ফোনের লকটা খুলে রাহাতের নাম্বার দেখে চমকে উঠল সে। এতবার কেনো কল করলো,,,,কিছুই তো মাথায় কাজ করছেনা। তাড়াতাড়ি বিছানা দিয়ে নেমে মোবাইলটা হাতে নিয়ে ড্রইং রুমে ঢুকে রাহাতের নাম্বারে কল করলো।
-“হ্যালো রাহাত। তুমি এতবার কেনো কল করেছিলে তোমাকে না মানা করেছিলাম। ইমরান যদি জানতে পারতো তাহলে তো বিশাল ঝামেলা হয়ে যেতো।

-“ওয়েট ওয়েট। ধীরে ধীরে শ্বাস নিয়ে তারপর বলো।
-“তুমি কী সব ব্যাপারে মজা করছো??
-“কী যে বলোনা। আমাকে কী তোমার মজার মানুষ মনে হয়??? তোমাকে যে কারণে কল দিয়েছি সেটা হলো,,মা আমাকে বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। আমি মাকে বলেছি তোমার কথা। যে বিয়ে করতে হলে রিপাকেই করবো। তখন মা বলেছে তোর যখন এতই পছন্দ হয়েছে তাহলে আমার কিছু বলার নেই। একদিন মেয়েটিকে নিয়ে আয়। জানি তোর চয়েজ খারাপ হবেনা তবুও বউ মাকে একটিবার দেখতে চাচ্ছি।

এখন তুমি বলো আমি কী করবো? মা যে তোমাকে দেখতে চাচ্ছেন।
-“কিন্তু কীভাবে যাবো আমি??? তোমার বাড়ী তো গ্রামে। আর সেখানে যদি যাই তাহলে ইমরানকে কী বলবো??
-“তা ও তো ঠিক। তাহলে একটা কাজ করি ইমরান ঢাকায় চলে গেলে মা কে আমার বাসায় নিয়ে আসবো আর তুমি এখানে এসে দেখা করে যাবে। তাহলে তো আর কোন সমস্যা হবেনা।

-“সেটা করা যেতে পারে। কিন্তু মা যদি কিছু জিজ্ঞাস করে তাহলে কী বলবো?

-“তোমার কিছু বলা লাগবেনা। যা বলার আমি বলবো। তুমি শুধু মাত্র ইমরানকে তোমার রুপের জালে বেঁধে রাখো যাতে সে তোমাকে সন্দেহ না করতে পারে। ইমরানকে তোমার ভালোবাসায় পাগল করে দাও। তাহলে আমরা ও ইনজয় করতে পারবো।

-“আচ্ছা রাহাত রাখলাম ইমরানের ওঠার সময় হয়ে গেছে।
ইমরানের গলার আওয়াজ শুনে চমকে উঠলো। তারপর নিজেকে সামলে নিলো যেন সব নরমাল।

.
-“কে ফোন করেছিলো???? ইমরান জিজ্ঞাস করলো।
-“তুমি চিনবেনা। আমার বান্ধবী তানহা। কালকে আমার জন্মদিন। আর আজকে ওরা ঢাকায় চলে যাচ্ছে। তাই আগে উইশ করে গেলো।
-“ইমরান বিস্মিত হয়ে বললো,,কালকে তোমার জন্মদিন! কই আগে তো বলোনি???
-‘কীভাবে বলবো?? তুমি তো কখন ও জিজ্ঞাস করোনি।
তাছাড়া আমরা জন্মদিনটা করিনা।
-“ওহ্। এটা তো ভালো কথা।
-“হুম। ছোটবেলা থেকে মা এই দিনে আমার নামে মসজিদে দোয়া পড়াতেন আর বাসায় ভালো মন্দ মিলিয়ে কিছু খাবার রান্না করতেন।

-“ইমরান আড়চোখে রিপার দিকে তাকিয়ে বললো,,,
-“এর জন্যই তোমাকে আমার এত ভালো লাগে।
-“তাই!
-“হ্যাঁ।
তুমি তো কালকে চলে যাবে তাই না??
-“হুম।
-“তাহলে চলো তোমাকে নিয়ে বিকালে একটু ঘুরতে বের হবো। তুমি চলো গেলে তো আর যেতে পারবো না।
-“রিপা আজকে যে আমি অনেক ব্যস্ত অফিসের সব কাজ গুছাতে হবে।
-“রিপা এসে ইমরানের গলা জড়িয়ে ধরে গালে চুমো দিয়ে বললো,,
-“আমি কোন অজুহাত শুনছিনা। তোমাকে আমার সাথে যেতে হবেই। আর তুমি যদি না যাও তাহলে আমি ঘরের সব কিছু ভেঙে ফেলবো আগেই বলে রাখছি। তুমি কী ভেবেছে আমাকে না করে দিবে আর আমি বাচ্চাদের মতো শুনে নিবো। একদম না। আমি কিছু শুনবোনা।
ইমরান রিপার এমন বাচ্চা বাচ্চা কান্ড দেখে মুখ টিপে হাসতে লাগলো।
তারপরে মুখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে বললো,,,আচ্ছা ঘরের জিনিস কী করে ভাঙে??? আমি তো এর আগে দেখিনি।
বলতে না বলতেই রিপা সোকেজের উপরে রাখা কাঁচের ফুলদানিটা ঠাস করে মেঝের উপরে ফেললো।
ইমরান বুঝতে পেরে ধরতে যাওয়ার আগেই ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো।

ইমরান হতভম্ভ হয়ে বললো,,,এটা কী করলে রিপা??
আমি তো মজা করে বলছি যে আমার জরুরী কাজ আছে। সবার বেলায় যেটা জরুরী সেটা কিন্তু তোমার বেলায় না। তুমি একদিকে আর দুনিয়া আরেকদিকে। আর তুমি কথাটকে সিরিয়াসলি নিলে??

-“রিপা এমন ভঙ্গিতে হেসে উঠলো যেনো কিছুই হয়নি। তার মানে তুমি আমার সাথে যাচ্ছো??
-“হ্যাঁ। না তো বলিনি।
রিপা হাসতে হাসতে রান্না ঘরে ঢুকলো।
কিছুক্ষণ বাদে ট্রেতে করে নাস্তা নিয়ে এসে টেবিলে রাখলো।

রিপা একা একা হাসছে।

-“কী ব্যাপার তুমি একা একা হাসছো যে??
-“কাল রাতে তোমাকে নিয়ে স্বপ্নে দেখলাম জান।
ইমরান কিছুটা উৎসাহিত কন্ঠে জিজ্ঞাস করলো,,,
-“কী স্বপ্ন?? আমাকে বলা যাবে??
-“হেসে উঠে রিপা। বলা যাবেনা কেনো?? স্বপ্নটা তোমাকে নিয়েই। স্বপ্নের মাঝে দেখলাম আমি কয়েকদিন ধরে অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছি। সারাক্ষণ কেমন যেন বমি বমি ভাব। তুমি ডক্টরের কাছে নিয়ে গেলে। ডক্টর আমাকে পরীক্ষা করে বললো….!

-“কী বললো??? ইমরান আরো উৎসাহিত কন্ঠে জিজ্ঞাস করলো।

রিপা আবার ও হেসে ওঠে। হাসতে হাসতে বললো,,,,ডক্টর বললো,,,,আমার পেটে নাকি বাচ্চা। আমি স্বপ্নে মা হতে যাচ্ছি শুনেই ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠি।

ইমরান চমকে উঠে। ইমরানের চোখে মুখে চিন্তার ছাপ ফু্টে উঠেছে।
রিপা হাসি থামিয়ে বললো,,,কী হলো চিন্তায় পড়ে গেলে যে?? ভয় পেয়েছে?? ভয় কীসের??সত্যি তো আর প্রেগন্যান্ট হইনি। আর হলে ও বা কী?? আমাদের তো আর অবৈধ সন্তান না পুরো বৈধ সন্তান। তুমি চিন্তা করোনা। আমি একটু তোমার সাথে ফান করলাম।

-“এটা কী ধরণের ফান রিপা। তুমি জানো তোমার এই কথা শুনে আমার হার্টবিট বেড়ে গিয়েছে। আর একটু হলেই হার্ট এ্যাটাক করতাম।

রিপা মাথা নিচু করে বললো,,,
-“স্যরি। আর কখন ও করবোনা।

-“কিন্তু রিপা সত্যি যদি তোমার পেটে বাচ্চা হয়…..?
-“কী যে বলোনা। তুমি তো প্রোটেকশন ইউজ করেছো তাহলে বাচ্চা কীভাবে হবে??

-“ইমরান আমতা আমতা করে বললো,,,তবুও যদি হয় তখন কী হবে??

রিপা সাধারণ ভঙ্গিতে চটপট জবাব দিলো,,,
-“কী আর হবে বাচ্চাটাকে দুনিয়ার আলো দেখাবো।

-“রিপা তুমি কী বলছো এসব?? আমি তোমাকে কী বলেছিলাম আমি এখন কোন বাচ্চাকাচ্চা নিবোনা। আরো ৫ বছর যাক তারপরে নিবো। তার উপরে তোমার বয়স ও কম। আরো কয়েকবছর যাক তারপরে এ ব্যাপারে ভাববো।

-“রিপা একই ভঙ্গিতে বললো,,আমার বয়স কম কোথায়??? তাছাড়া এসব বয়স টয়স নিয়ে ভাবিনা। মেয়ে মানে কী জানো? মেয়েরা ছোট হলেও যা বড় হলেও তাই।

ইমরানের বিষ্ময়ের বাঁধ ভাঙ্গল। তারপরে বিনয়ের সুরে বললো,, রিপা প্লিজ! এখন এসব বিষয়ে আর কিছু বলোনা।

-“রিপা আর কোন উত্তর দিলোনা।

প্রচন্ড ইচ্ছা থাকা স্বর্তে ও ইমরান আর রিপাকে নিয়ে ঘুরতে গেলোনা।

.
ইমরান বিদায় নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
কিছুক্ষণ পরে রাহাতের কল আসলো,,,

-“হ্যালো,,,,,,রিপা আমি ২ দিন পরে তোমাকে নিতে আসবো মায়ের সাথে দেখা করানোর জন্য তুমি রেডী হয়ে থেকো।

–“আচ্ছা।
.
৩ দিন পরে…….

রাহাতের কথা ভাবতে ভাবতে দরজায় কলিংবেল বেজে উঠলো। রিপা দ্রুত গিয়ে দরজা খুলে দিলো।
রাহাতকে দেখে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো তার।
রিপাকে দেখেই জাপটে ধরলো রাহাত। রিপা তুমি কেমন আছো?? এতদিন তোমাকে না পেয়ে আমি অস্থির হয়ে গেছি। জানোনা তোমাকে কতটা ভালোবাসি আমি।

কান্না বিজড়িত কন্ঠে বললো,,,আমি ও তোমাকে ছাড়া বাঁচবোনা। আমি ও তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি।

ইমরান গাড়ি করে অফিস থেকে বাসার আসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। পথে বাসের সাথে গাড়ির ধাক্কা লাগে। ধাক্কা লাগার সাথে সাথে ইমরানের শরীরটা গাড়ির দরজা ভেঙ্গে ছিটকে রাস্তায় পড়ল। কপাল ফেটে রক্ত বের হতে লাগলো আর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের ফলে ইমরানের শরীরটা রাস্তার উপরে পড়ে ছটফট করতে লাগলো। এম্বুলেন্স খবর দিলে মিনিট দশেকের ভিতরে এসে ইমরানকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। ডক্টররা মিলে ইমরানের অপারেশনের ব্যবস্থা করতে লাগলেন।

এদিকে,,,,,

রিপাকে নিয়ে নিজের ফ্লাটে ঢুকলো রাহাত।
-“রিপা তুমি এখানে বসো আমি আসছি।
-“রাহাত মা কোথায়?
-“তুমি এখানে বসো আমি আসছি। মা চলে আসবে।

রিপা রুমটা ঘুরে ঘুরে দেখছে। রুমের চারপাশে সিগারেটের ফিল্টার ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
কিছুক্ষণ বাদে রাহাত এসে রিপাকে জড়িয়ে ধরে বললো,,,
-“জান মা মাত্র কল দিলো সে বাস মিস করে ফেলেছে তাই আজকে আর আসতে পারবেনা।

-“ওহ্। তাহলে আমি চলে যাচ্ছি।
.
রিপা চলে যেতে নিলে রাহাত রিপার হাতটা টেনে ধরলো।
-“কোথায় যাচ্ছো??

-“বাসায় যাই। কালকে আসবো।

-“কী যে বলোনা জান। তুমি এসেই চলে যাবে এটা কী হয়??
-“মানে??
-“মানে কিছুনা বলেই,,,
রিপাকে কোলে তুলে নিয়ে বেড রুমে ঢুকলো রাহাত।
-“কী করছো রাহাত?? ছাড়ো এখন না।

রাহাত কোন উত্তর দিচ্ছেনা। রিপাকে বিছনার উপরে শুয়ে দিয়ে পড়ণের শাড়িটা এক টানে খুলে নিচে ফেলে দিয়ে রিপার গায়ের উপরে ধাপ করে পড়লো।

রাহাত রিপার চুলগুলো সরিয়ে ঘাড়ে চুমো খাচ্ছে আর ডক্টর ইমরানের কপাল থেকে রক্ত মুছে সেলাই করছে।
রাহাত রিপার ঠোঁট দুটো নিজের ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরছে ওদিকে ডক্টর ইমরানের হাতে ইন্জেকশন পুশ করছে।

ইমরানের সাথের কলিক বারবার কল দিচ্ছে কিন্তু রিপা ফোন তুলছেনা। তুলবে কী করে মোবাইল তো বাসায় রেখে এসেছে।

এবারের ছোঁয়ায় কোন ভালোবাসা ছিলো না রাহাতের ছিলো শুধু চাহিদা মিটানো। রিপার অনেক কষ্ট হচ্ছে কিন্তু রাহাতের সেদিকে কোন খেয়ালই নেই সে তার চাহিদা মিটানোতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে।
মূহুর্তেই রাহাতের প্রতি সব ভালোলাগা,,,ভালোবাসাগুলো শেষ হয়ে গেলো রিপার।

এতদিনের ভালোবাসা তাহলো সবটাই মিথ্যা ছিলো।সেটা রিপা বুঝতো পারলো অবশেষে। কিন্তু নিজের সতীত্ব নষ্ট হওয়ার পরে।

কিছুক্ষণ পরে রাহাতের খোড়াক মিটে গেলে সে রিপাকে ছেড়ে দিয়ে শার্ট পড়ে নিলো।

রিপা কাপড় চোপড় পড়ে রাহাতকে বললো,,,
-“তুমি কী শুধু আমার শরীরকে ভোগ করার জন্য আমার সাথে সম্পর্ক রেখেছো নাকি আমাকে বিয়ে করবে?? সত্যি করে বলো।

-“রাহাত হেসে উঠলো।

-“কী হলো হাসছো কেনো??

-“বিয়ে করবো তাকে তোমাকে??? কী যে বলো না??
আমি তো আগে থেকেই বিবাহিত।

রাহাতের কথা শুনে রিপা তো বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।

কী করলো সে?? ইমরানকে ভুল বুঝে শেষে কিনা একটা প্রতারককে ভালোবেসেছে। ইমরান জানতে পারলে আমাকে কখন ও ক্ষমা করবেনা।

চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here