#অবৈধ_সম্পর্ক
#লেখাঃ_নুসরাত_জাহান
#সিজনঃ_২
#পর্বঃ_১৪
ভোরের আলো ফুটে ওঠার আগেই ঘুম ভাঙল রিপার। চোখে মুখে তার ঘুমের ঘোর স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। ইমরানের আজকে অফিস জয়েন করার কথা। কিন্তু সে তো এখন ও ঘুমুচ্ছে। এমন ভাবে ঘুমুচ্ছে মনে হয় কয়েক মাস ধরে সে ঘুমায়নি। রিপা বিছানা দিয়ে নেমে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকলো। শাওয়ারের নিচে বেশ কিছুটা সময় বসে আছে। টেনশনে তার মুখে লাল হয়ে আছে। মনের ভিতরে হাজারো চিন্তা। রাহাতের কাছে কী সত্যি তার ভিডিওটা আছে?? নাকি সে ছলনা করছে। উফফ! কিচ্ছু ভাবতে পারছেনা সে। ভাবলেই মাথায় চিনচিন করে ব্যাথা করে।
শরীরটা অনেক খারাপ লাগছে। হাত পা থরথর করে কাঁপছে। গায়ে একদম জোর পাচ্ছেনা। চোখদুটো ও জ্বলছে। হয়তো রাতে ভালো ঘুম হয়নি এই জন্য। তবুও সে ঘন্টা খানেক ধরে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসলো। চুল থেকে টাওয়ালটা খুলে নিয়ে ফ্যানের বাতাসে দাঁড়ালো। ইমরানের মুখের দিকে তাকালো। ঘুম জরানো চোখে তাকে একদম বাচ্চাদের মতো লাগছে।
রিপা ভাবছে ইমরান যখন সত্যিটা জানতে পারবে তখন সে তাকে এত বেশী ঘৃণা করবে যেটা তার প্রাপ্যই হবে। কিন্তু সেই ঘৃণাটাকে কী রিপা মেনে নিতে পারবে?? নিজের জীবনের প্রতি ঘৃণা জন্মে গেলো রিপার। আজ সে ভাবছে কেনো সে এত বড় একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিছুতেই নিজের দোষকে নিজেই ক্ষমা করতে পারছেনা। তাহলে ইমরান কীভাবে ক্ষমা করবে??
ভাবতেই চোখ দুটো জ্বলে টলটল করছে। আজ তার শরীরটা অনেক খারাপ লাগছে। এত চিন্তা করলে কোন মানুষ সুস্থে থাকতে পারেনা। মনের ভিতরে খচখচানি শুরু হয়ে গেলো।
চোখ মেলে তাকায় ইমরান। রিপার দিকে তাকিয়ে বললো,,,জান এদিকে আসো। রিপা ইমরানের ডাক শুনে মাথাটা ঘুরিয়ে তাকায়। তারপর ইমরানের কাছে গিয়ে বিছানার উপরে বসলো।
রিপা কাছে আসাতেই ইমরান শোয়া থেকে উঠে বসলো।
-কখন উঠেছো জান??(ইমরান)
-“এই তো কিছুক্ষণ হলো।(রিপা)
-‘তোমার মুখটা এতটা শুকনা দেখাচ্ছে কেনো??? কিছু চিন্তা করছে নাকি??
-“না ইমরান।
-“তাহলে আমার আরো কাছে এসে বসো।
রিপা ইমরানের একেবারে কাছে এগিয়ে বসলো।
রিপা কাছে আসলে ইমরান রিপার গায়ে হাত রাখতেই চমকে উঠলো। রিপার গা অনেক গরম। হাত ছোয়ানো যাচ্ছেনা।
-“রিপা তোমার গা তো জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। কখন উঠলো জ্বর?? কাল রাতে তো সুস্থই ছিলে।
-“আমি ও টের ও পাইনি জ্বর কখন আসলো।
-“ইমরান রিপার হাত ধরে কোলের ভিতরে নিয়ে কপালে,,, বুকে হাত দিয়ে দেখে গায়ে অসম্ভব জ্বর।
রিপা তোমার তো সাহস কম না তুমি এই জ্বর নিয়ে শাওয়ার নিয়েছো।
-” কী করতাম তাহলে বলো???কাল রাতে মিলনের পরে শাওয়ার না নিয়ে এই অপবিত্র শরীর নিয়ে থাকবো।
-‘ওহ্ স্যরি। আমি তো ফজরের আগেই শাওয়ার নিয়ে নামাজ পড়ে ঘুমিয়েছি। তা তোমার যে শরীরটা খারাপ লাগছিলো আমাকে ডাকলে না কেনো???
-“আসলে আমার গায়ে যে জ্বর এসেছে আমি নিজেই তো বুঝতে পারিনি।
-“রিপা তুমি বিছানার উপরে শুয়ে থাকো। একদম উঠার চেষ্টা করবেনা।
তারপর ইমরান রিপাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে এক বালতি পানি নিয়ে আসলো। বালতিটা বিছানার পাশে রেখে রিপার মাথার নিচে বালিশ দিয়ে তারপর মাথায় পানি ঢালছে ইমরান। রিপার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখে ওর চোখ দুটো হলুদ হয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে জন্ডিসের ভাব হয়েছে। কিন্তু শিউর না সে।
ইমরান রিপার মাথায় পানি ঢালছে আর বলছে,,,,
-“রিপা একটা কথা বলতো। কাল রাতে তো কোন জ্বর ছিলো না তাহলে হঠ্যাৎ করে সকালে জ্বর উঠলো কী করে??
তোমার কী আগে থেকেই গায়ে জ্বর ছিলো নাকি?? আর তুমি কী খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করতে পারো??
-“রিপা চোখ বন্ধ করে রেখেছে। তারপর কাঁপা গলায় বললো,,,আমার কয়েকদিন ধরেই জ্বর ওঠে আবার ছেড়ে দেয়। আর খাওয়ার প্রতি কোন রুচি নেই। খাবার দিয়ে গন্ধ পাই।
ইমরান ভাবছে সে যেটা ধারণা করেছে সেটাই সত্যি হলো। রিপার জন্ডিস হয়েছে। এখন রিপাকে খুব কেয়ারফুল ভাবে ট্রিটমেন্ট করতে হবে। জন্ডিসের একমাত্র চিকিৎসা হলো যত্ন।
-“রিপা চোখ খুলে আমার দিকে তাকাও। তোমার কী চোখ জ্বলছে??
-“আধো আধো ভাবে চোখ খুলে তাকায় সে।
-“হুম খুব জ্বলছে।
-“আমি পানি দেই তাহলে জ্বালাটা একটু কমবে।
-“তাহলে জলদী দাও।
-” হুমমমম। আর জান,,,,,তোমাকে না ভিজা চুলে দারুণ লাগছে। তোমাকে একটা চুম্মা দেই তাহলে তোমার জ্বলাটা একেবারে কমে যাবে।
-“রিপা হাসছে।
-“হ্যাঁ হাসো হাসো। যত মনে চায়। তবে আমি ও কিন্তু কম না। সুদে আসলে এর শোধ তুলবো বলে দিলাম।
মাথায় পানি দেওয়া হয়ে গেলে রিপার চুলগুলো তোয়ালে দিয়ে ভালো করে মুছে বালতিটা ওয়াশরুমে রেখে আসলো ইমরান। বিছানার উপরে হাঁটু ভাজ করে রিপার পাশে বসে বললো,,,
-“এখন কেমন লাগছে??
-“হুমমমম। আগের থেকে ভালো।
রিপাকে শোয়া থেকে তুলে নিজের দুইবাহু ডোরে বন্দী করে ফেললো। রিপা তো পুরোই অবাক। সকাল সকাল কী শুরু করেছে সে। ইমরানের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো রিপা। চোখদুটো ভীষণ মায়াবী। রিপা এতদিন পরে আজকে অনুভব করলো। যে ইমরান দেখতে কতটা মায়াবী?? অবশ্য সব সময় তো সে ইমরানকে ঘৃণা করেছে। কিন্তু ইদানিং নিজের ভিতরে পরিবর্তন লক্ষ্য করছে তার। আর সেটা হলো ইমরানের প্রতি তার ভালোবাসা এবং সম্মান দুটোই কাজ করছে।
.
এদিকে রিপার ভিজা চুলের পানিতে ইমরানের গেঞ্জির সামনের দিকটা পুরোই ভিজে গেছে। ভিজবে না কেনো?? রিপাকে তো মাথায় পানি দেওয়ার আগেই সে শাওয়ার নিয়ে পুরো চুলগুলো ভিজিয়ে রেখেছে।
রিপা অপলোক ভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ইমরানকে দেখছে।
ইমরানের ঠোঁট জোড়া যেনো রিপাকে চুম্বুকের মতো টানছে। ইচ্ছে করছে ইমরানের ঠোঁটে চুমো খেতে।
ইমরান রিপাকে বালিশের উপরে শুইয়ে দিয়ে আচমকাই
নিজের ঠোঁটদুটো রিপার ঠোঁটের মধ্যে ডুবিয়ে দিলো।
রিপা তো বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। দম নিতে ও পারছেনা। নাক দিয়ে শ্বাস করছে। ইমরান রিপার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে বললো,,,
-“কী গো এত জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছো কেনো??
-“না মানে এমনি। ইমরান তোমার তো গেঞ্জি ভিজে একাকার হয়ে গেছে। যাও চেইঞ্জ করো। না হলে ঠান্ডা লাগবে।
-“হুম করবো।
-“করবো বললে শুনছি না। আগে করো।
-“ওকে মাই লাভলী ওয়াইফ।
গেঞ্জিটা চেইঞ্জ করে এসে তাকিয়ে আছে রিপার দিকে।
-“রিপা তুমি একটু ঘুমাও তাহলে ভালো লাগবে। রাতে তো ঘুম হয়নি তোমার।
-‘ঘুম তো আসছেনা। তাহলে কীভাবে ঘুমাবো??
-“-“চোখ বন্ধ করে রাখো তাহলে দেখবে ঘুম আসবে।
-“ঠিক আছে ঘুমাতে পারি তবে একটা শর্ত আছে।
-“কী শর্ত?
-“তোমার কোলের ভিতরে ঘুমাবো।
ইমরান মুচকি হাসি দিয়ে বললো,,,এটা তো খুব ভালো কথা। তবে একটু ওয়েট করতে হবে। আমি আগে নাস্তা নিয়ে আসি তারপর আমার কোলে ঘুমাবে।
-“না। আমি নাস্তা পরে খাবো। ক্ষিদে নেই। আগে তোমার কোলে ঘুমাবো।
ইমরান হাসছে রিপার বাচ্চাদের মতো পাগলামো দেখে। আচ্ছা ঠিকাছে। এত করে যখন বলছো।
ইমরান রিপাকে কোলের ভিতরে নিয়ে সে খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে পড়লো। তারপর রিপার মাথার চুলগুলো টেনে দিচ্ছে। কিছুক্ষণ পরে দুজনে ঘুমিয়ে পড়লো।
হঠ্যাৎ ইমরানের ঘুম ভেঙে যায়। কিন্তু বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছেনা। উঠবেই বা কীভাবে?? রিপা যে তার বুকের উপরে ঘুমুচ্ছে। এখন যদি সে উঠতে যায় তাহলে তো রিপার ঘুম ভেঙে যাবে। কিন্তু রিপার শরীরটা তো বেশী ভালো না। কাঁচা ঘুম ভাঙলে সারাদিন মাথা ব্যাথা করবে।
ইমরান রিপার ঘুম জরানো মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
.
ইমরান রিপাকে আর ডাকলো না। চোখ বন্ধ করে রাখলো।
কিছুক্ষণ পরে রিপার ঘুম ভাঙলো। চোখ মেলে ইমরানের বুকে নিজেকে দেখে ভীষণ ভালো লাগলো তার।
.
২ দিন পর……
রিপার জ্বর ভালো হয়ে গেলো। ইমরান ও অফিস জয়েন করলো। বাসায় রিপা একা থাকে। বুয়া এসে কাজ করে আবার চলে যায়। রিপা আসার পরেই কাজের লোক রাখা হয়েছে। যাতে রিপার কষ্ট কম হয়।
রিপা দিনরান সারাক্ষণ শুধু একটাই চিন্তা করে। রাহাত যদি ইমরানের কাছে সব কিছু বলে দেয় তাহলে সব কিছু একেবারে নিঃশেষ হয়ে যাবে। এমনকি মাঝরাতে গভীর ঘুমের মাঝে ও রাহাতকে স্বপ্নে দেখে। স্বপ্ন দেখার পরে সমস্ত শরীর ঘামে ভিজে যেন পানির স্রোত বয়ে যায়। সামান্য একটা ভুলের কারণে এমন দুঃসহ জীবন বয়ে বেড়াতে হবে তা কোনদিন কল্পনাও করেনি সে।
কিন্তু এভাবে আর কতদিন?? কতদিন ইমরানের সাথে অভিনয় করে চলবে?? এদিকে রাহাত দিনদিন ক্রমেই বাড়াবাড়ি শুরু করে দিয়েছে। বারবার ব্লাকমেইল করছে ভিডিও ক্লিপ সবাইকে দেখানোর কথা বলে।
পৃথিবীর জটিল গ্যাড়াকলের মাঝে সে যেনো আটকে গেছে। এখান থেকে বেড়িয়ে আসার উপর নির্ভর করছে তার জীবন,,,তার ভালোবাসা,,,তার ভবিষ্যৎ। নয়তো সব কিছু ছিন্ন বিছিন্ন হয়ে যাবে।
যেভাবেই হোক ইমরানকে সব সত্যিটা বলতে হবে। কারণ রাহাত যদি বলে দেয় তাহলে ইমরান আমাকে কোনদিন ক্ষমা করবেনা।
কী করবে বুঝতে পারছেনা।
কথাগুলো ভাবছে আর রিপার চোখ দুটো ছলছল করছে।
চলবে………….