#অবৈধ_সম্পর্ক
#লেখাঃ_নুসরাত_জাহান(ফারিয়া_আলম_মিম)
#সিজনঃ_২
#পর্বঃ_৯
গাড়ী চলছে। রিপা গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে আনমনে। ইমরানের মনের ভিতরে খচখচানি শুরু হয়ে গেলো। রিপাকে কেমন জানি লাগছে। বুঝতে পারছেনা যে তার কী হয়েছে?? ইমরান গাড়ি চালানোর ফাঁকে ফাঁকে রিপার দিকে তাকাচ্ছে।
কিছুক্ষণ যাওয়ার পরে ইমরান রিপার দিকে তাকায়।
-“রিপা আমি কী তোমার হাতটা ধরতে পারি??
-“রিপা ইমরানের দিকে তাকিয়ে বললো,,,,না থাক।
ইমরান আর কোন কথা বলেনি সোজা গাড়ী চালাচ্ছে।
.
ইমারানের গাড়ি গিয়ে রেস্টুরেন্টের সামনে থামলো।
দুজনে গাড়ি দিয়ে নেমে সোজা রেস্টুরেন্টের ভিতরে ঢুকলো।
ভিতরে ঢুকে ইমরান চারদিকে চোখ ঘুরায়। প্রতিটা টেবিলে কবুতরের জোরা বসে আছে। দেখলে মনে হয়না তারা কেউ স্বামীস্ত্রী।
ইমরানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওয়েটার এসে বললো,,
-“ক্যান আই হেল্প ইউ??
-“হুম। এখানে তো দেখছি কোন টেবিলে বসার মতো জায়গা নেই। আমরা স্বামী-স্ত্রী তাই যদি পার্সোনাল একটা বসার জায়গা পাওয়া যেতো তাহলে ভলো হতো।
-“স্যার আমার সাথে আসুন।
ইমরান রিপাকে সাথে নিয়ে লোকটির পিছু পিছু গেলো।
এই নিন স্যার বসার জন্য স্পেশাল জায়গা। ঘন্টায় ৩০০ টাকা করে দিতে হবে।
-‘আচ্ছা সমস্যা নাই।
-“স্যার কী খাবেন??
ইমরান মেনু কার্ডটা হাতে নিয়ে আইটেম গুলো দেখছে।
রিপা কী খাবে??
-“রিপার মুখে চিন্তার ভাব। তবুও ইমরান রিপার মুড ঠিক করার জন্য বললো,,,,মুরগীর ঠ্যাং অর্ডার করবো নাকি কী বলো??
ইমরানের এমন বোকা কথাশুনে রিপা হাসতে লাগলো।
-“যাক বাহব্বা অবশেষে মুখের কোণে হাসি ফুটে উঠলো।
-“গ্রিল,,নান রুটি আর ২ কাপ কফি নিয়ে আসেন।
-“জ্বি।
প্রায় ১ ঘন্টা ধরে দুজনে মুখোমুখি বসে আছে। কিন্তু এখন ও খাবার নিয়ে আসছেনা।
আরো মিনিট দশেক পরে ওয়েটার টেবিলে খাবার দিয়ে গেছে। ইমরাব লক্ষ্য করছে রিপা গ্রিলের পিচ কাঁটা চামচ দিয়ে ঠিকভাবে কাটতে পারছেনা।
ইমরানের তখন অর্ধেকটা খাওয়া প্রায় শেষ।
চেয়ার ছেড়ে ওপাশ থেকে এপাশে রিপার পাশে এসে বসলো।
-“রিপা আমি খাইয়ে দিবো??
-“লাগবেনা। আমি খেতে পারবো।
কিন্তু ইমরান আবার ও লক্ষ্য করছে রিপা ভালোভাবে খেতে পারছেনা।
রিপার হাত দিয়ে কাঁটা চামচটা নিয়ে গ্রিলের পিচ কেটে নান রুটি ছিড়ে তারপরে রিপার মুখে তুলে দিলো।
ইমরান অতি যত্নসহকারে রিপাকে খাইয়ে দিচ্ছে। রিপা তো বাকরুদ্ধ হয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
খাওয়া শেষ করে হাত মুছে টেবিলে এসে বসলো।
ওয়েটার এসে কফির মগ দিয়ে গেলো।
ইমরান রিপার দিকে কফির মগটা এগিয়ে দিলে সে হাত দিয়ে মগটা নিয়ে টেবিলের উপরে রাখলো।
-‘ইমরান কফির মগে চুমুক দিচ্ছে আর ফ্যালফ্যাল করে রিপাকে দেখছে।
-“এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?? কিছু বলবে??
-“তোমায় দেখছি। বলার তো কত কিছুই আছে।
-“ওহ্। তাহলে বলে ফেলো।
-“রিপা আমার বদলি হয়েছে ঢাকায়।
তাই মনটা ভীষণ খারাপ। তোমাকে একা একা কিছুদিন এখানে থাকতে হবে। আমি সব ঠিকঠাক করে তারপরে তোমায় আমার কাছে নিয়ে যাবো।
-“আমার চিন্তা তোমাকে না করলে ও চলবে। আগে নিজের চাকরী ঠিক রাখো তারপরে সব।
-“তাই তো বলার মতো কিছু নেই।
খাওয়া শেষ করে রিপাকে নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে রাস্তার সামনে দাঁড়ালে রাহাতের সাথে দেখা হয়।
রাহাতকে দেখে রিপার মনের ভিতরে খুশির জোয়ার বইতে লাগলো।
-“হাই,,,ইমরান কেমন আছিস??
-“এই তো ভালোই তুই???
-“ভালো। ভাবীকে নিয়ে ডিনার করতে আসলি নাকি?
-“আসলে আমি ২ দিন পরে ঢাকায় চলে যাবো আমার বদলী হয়েছে। আমার তো একটু আনইজি লাগছে রিপাকে একা এত বড় বাড়ীতে রেখে যেতে। মাকে আসতে বলছি কিন্তু তিনি গ্রামেই থাকবেন শহরে তার ভালো লাগেনা।
-“রাহাত মিটমিট করে হাসছে। আরে দোস্ত এত চিন্তা করিস না। শহরের বাড়ীতে একা থাকলে কোন সমস্যাই নেই। আর আমি তো আছি হেসে হেসে রাহাত। তোর বউ মানে তো আমার ও বউ……😜😜
ইমরান হাসছে। বদমাইশি আর গেলো না।😁
শোন বাসায় যাই রাত হয়েছে অনেক। তুই কালকে বাসায় আসিস। দুজনে আড্ডা দিবো।
-“আচ্ছা। রাহাত রিপার দিকে তাকিয়ে বললো,,ভাবী আসি কালকে দেখা হবে।
রিপার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।
ইমরান রিপাকে নিয়ে বাসায় আসলো। রিপাকে রেখে ওয়াশরুমে ঢুকলো সে।
রিপা এসেই ড্রেস চেঞ্জ করে বিছনার উপরে অন্যপাশে কাৎ হয়ে শুয়ে পড়লো।
ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসলো ইমরান।
রিপাকে বিছানায় শোয়া দেখে আস্তে আস্তে এগিয়ে গিয়ে রিপার পাশে শুয়ে পড়লো।
কিছুক্ষণ পরে রিপাকে জড়িয়ে ধরলো। ইমরানের হাত রিপার কোমড় থেকে আস্তে আস্তে বুকের উপরে উঠতে লাগলো। পিঠ থেকে চুলগুলো সরিয়ে চুমো খেলো। তারপরে নিজের দিকে ফিরিয়ে রিপার নাক টিপে দিয়ে বললো,,,রিপা তোমাকে যত দেখছি ততোই ভালো লাগছে। রিপা বুঝতে পারলো ইমরানের এখন পুরুষত্ব জেগে উঠেছে। কিন্তু এখন একদম তার ভালো লাগছেনা।
-‘ইমরানকে সরিয়ে দিয়ে বললো,,,এখন না ইমরান। অন্য সময়। আমার এখন মন নেই।
-“ইমরান রিপার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।
রিপা আবার ও ইমরানকে সরিয়ে দিয়ে ক্রোধের স্বরে বললো,,,কী সমস্যা তোমার?? বললাম না এখন এসব করার কোন মুড নেই আমার। তবুও জোর করছো কেনো??
-“রিপা জোর কেনো বলছো?? তুমি আমার বউ আর তোমাকে সাথে এসব করার অধিকার আমার আছে। তাহলে এভাবে কথা বলছো কেনো??
-“আমি তো অস্বীকার করিনি। আমার এখন ভালো লাগছেনা অন্য সময়ে দেখা যাবে। তাছাড়া আমার অনেক ঘুম পেয়েছে। গুড নাইট বলে রিপা শুয়ে পড়লো।
ইমরান রিপার থেকে অনেকখানি সরে গিয়ে শুয়ে পড়লো।
রিপার চোখে ঘুম ভর করলো মনে হচ্ছে সে এত বছরে কখন ও ঘুমায়নি।
মিনিট পাঁচেকের মধ্যে রিপা ঘুমিয়ে গেলো।
বেঘোর ঘুমাচ্ছে রিপা। ডিম লাইটের আলোয় রিপার মুখটা স্পর্ষ্ট বোঝা যাচ্ছে। মুখের দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো ইমরান।
অনেকক্ষণ বিছানার এপাশ ফিরছে তো ওপাশ কিন্তু চোখের পাতা এক করতে পারছেনা সে।
বিছানা দিয়ে নেমে ওয়াডড্রব থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা হাতে নিলো।
প্যাকেট থেকে সিগারেট বের করে মুখে তুলে জ্বালালো। সিগারেটের ধোঁয়ায় পুরো রুমে ভরে গেছে কিন্তু অন্ধকার থাকার কারণে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে না। শুধু সিগারেটের বিশ্রি গন্ধে রুমে ঘুরপাক খাচ্ছে।
ইমরান মাঝেমাঝে সিগারেট খায়। খুব বেশি একটা নেশা নেই। কিন্তু আজকে প্রচন্ড খারাপ লাগছে বলেই সিগারেট খাচ্ছে। পুরো প্যাকেটের ২০ পিচ সিগারেট একেরপর এক ধরিয়ে টেনে শেষ করছে আজ।
ভোরের মিষ্টি আলোয় চোখ মেলে তাকায় রিপা।
বিছানা থেকে নেমে পা বাড়াতেই চমকে উঠলো। ফ্লোরে এতগুলো সিগারেটের ফিল্টার পড়ে থাকতে দেখে যে কেউ আশ্চর্য হয়ে যাবে এটা স্বাভাবিক ব্যাপার।
রিপা ওয়াশরুমে ঢুকে মিনিট দশেক পরে বেড়িয়ে এসে ইমরানকে খুঁজতে লাগলো।
পাশের রুমে খুঁজে না পেয়ে ড্রইং রুমে গিয়ে দেখে সোফার উপরে টানটান হয়ে ঘুমাচ্ছে সে।
রিপা ইমরানকে ডাকছে।
গলার আওয়াজ পেয়ে লাফিয়ে উঠলো ইমরান।
-চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে থেকে বললো,,,রিপা তুমি???
-“হুম আমি। চা না কফি খাবে।
-“কফি।
আচ্ছা তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো ততোক্ষণে আমি কফি বানিয়ে আনছি।
ইমরান ফ্রেশ হয়ে এসে সোফার উপরে বসলো।
রিপা ও দুহাতে কফির মগ নিয়ে ইমরানের পাশে এসে গুটিসুটি মেরে বসলো।
ইমরান কফি খাচ্ছে আর রিপাকে আঁড়চোখে দেখছে।
কফি খাওয়া শেষ করে মগটা ট্টি টেবিলের উপরে রেখে বাসা ছেড়ে উঠলো সে।
-“রিপা তুমি কফি খাও আমি একটু আসছি।
-‘হুম।
ইমরান রুমে ঢুকে আলমারি খুলে একটা প্যাকেট বের করলো। তারপর প্যাকেটটা হাতে করে এনে সোফার পাশে দাঁড়িয়ে থাকলো ইমরান।
রিপা মাথাটা ঘুরিয়ে ইমরানের দিকে তাকিয়ে বললো,,,প্যাকেটে কী??
প্যাকেটটা রিপার হাতে দিয়ে বললো,,,খুলে দেখো কী??
রিপা প্যাকেটটা খুললো। এটা কী ইমরান??
-“নাইটি। আমি তোমার জন্য টু পিচ নাইটি কিনে এনেছি। কিন্তু দিতে মনে ছিলোনা।
আমি তো এইগুলো এর আগে কখন ও পড়িনি??
-“পড়নি তো কী হয়েছে এখন থেকে রোজ রাতে পড়বে।
নাইটিটা হাতে নিয়ে নিজের কাছে কেমন জানি লাগছে রিপার। তবুও হাতে নিয়ে রুমে ঢুকে আলমারিতে রেখে দিলো।
ইমরান রিপার পিছনে গিয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,,,আজ রাতে এটা পড়বে কিন্তু। আমি দেখতে চাই এটা পড়লে তোমাকে কেমন দেখায়??? আমার সাথে যাওয়ার পরে তোমাকে কয়েকটা কিনে দিবো।
-‘রিপা কোন উত্তর দিচ্ছেনা। কী বলবে বুঝতে পারছেনা।
ইমরান রিপার হাত ধরে বিছনার উপরে বসিয়ে দিলো। রিপার ঘাড় থেকে চুল সরিয়ে ঘাড়ে আলতো করে চুমো দেয়,,,রিপা চুমোর স্পর্শে কেঁপে উঠে।
তারপর রিপাকে খাটের উপরে শুইয়ে দেয় ইমরান।
রিপা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ইমরানকে সরিয়ে দিয়ে উঠে বসলো।
-“ইমরান ক্ষিদে পেয়েছে খেতে আসো।
ইমরান হাসতে লাগলো। এখন তো পালিয়ে গেলে কিন্তু রাতে আর ছাড়ছি না বলেই হো হো হো করে হাসতে লাগলো ইমরান।
রিপা ইমরানের দিকে তাকিয়ে মুখটা মলিন করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।
চলবে…………..