#অরুণিকা
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-৪৭||
৭৮.
তূর্য চুপচাপ খোলা বারান্দায় বসে আছে। তারা অনেকদিন ধরেই চট্টগ্রামে আছে, তাই একটা বাড়ি ভাড়া নিয়ে ফেলেছে। বাড়িটা ডুপ্লেক্স, আর প্রতিটা রুমই অনেক বড়। সামনে বাগানও আছে। একমাসের জন্য পঁচিশ হাজার টাকা দিতে হবে। যদিও অনেক পুরোনো বাড়ি, কিন্তু হোটেলে তাদের অনেক অসুবিধা হচ্ছিলো, তার চেয়ে তাদের এই বাড়িটাই অনেক ভালো মনে হয়েছে। এদিকে ইভান তূর্যের কাঁধে হাত রাখতেই সে পাশ ফিরে তাকালো। ইভান বলল,
“মনে হচ্ছে, মন খারাপ!”
তূর্য মাথা নেড়ে বলল,
“না, কিন্তু চিন্তায় আছি।”
“কি বিষয় নিয়ে?”
“উপমাকে নিয়ে।”
“ওহ, হ্যাঁ। ওইদিন কি কিছু হয়েছিল? মেয়েটার সাথে তো তোকে আর কথায় বলতে দেখছি না।”
তূর্য মলিন মুখে বললো,
“মেয়েটা আমাকে সত্যি সত্যিই ভালোবাসে।”
ইভান বুকে হাত গুঁজে চেয়ারে আরাম করে বসে বলল,
“তোর কি মনে হয় পৃথিবীর সব বান্দায় তোর মতো ভন্ড?”
“ইভান, তুই আমাকে ভন্ড বলছিস?”
“হ্যাঁ, একমাত্র তুই-ই মিথ্যে ভালোবাসার অভিনয় করিস৷ বাকিরা না। আজ পর্যন্ত কয়টা প্রেম করেছিস, হিসাব আছে?”
“আমি একটাও প্রেম করি নি৷ বলতে পারিস, অনেক মেয়ের সাথেই আমি কথাবার্তা বলেছি। আর কথাবার্তা বলার পর ওরা দুর্বল হয়ে পড়লে, আমার তো কিছু করার নেই।”
“আর ওরা তোর জন্য যা যা করতো, ওগুলো শুধু দুর্বল হওয়া ছিল না। ওটা মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে যাওয়া ছিল। ওটা একটা অসুস্থতা, কোনো দুর্বলতা না। আর তুই-ই তাদের অসুস্থ করে দিয়েছিস।”
এবার তূর্য বলল,
“হ্যাঁ, আর এই অসুস্থতার জন্য তারা বড়জোর আমার পেছনে কয়েকদিন ঘুরঘুর করতো। পরে আবার ঠিক হয়ে যেতো। তুই যা-ই বল, আমি কিন্তু ওদের অনেক সাহায্য করেছিলাম।”
“কোন দিক দিয়ে?”
“আরেহ, আমার প্রেমে পড়েই তো ওরা মানসিক ভাবে শক্ত হয়েছিল। একটা ধাক্কা না খেলে মেয়েরা শক্ত হয় না। দুর্বল মনের মেয়েরা সংসারও করতে পারে না। আর তুই যেভাবে বলছিস মনে হচ্ছে কেউ আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল। আমি তো কাউকে ভালোবাসি বলি নি।”
“তুই নিজেই তোর দেওয়া মেসেজগুলো একবার পড়ে দেখ। সবসময় ভালোবাসি বলতে হয় না। তোর কথাগুলোই একটা মেয়েকে মানসিকভাবে আকর্ষণ করে ফেলে।”
তূর্য কাতর কন্ঠে বলল,
“ভাই, আর কখনো এমন করবো না। এবারের মতো আমাকে বাঁচা।”
“কি হয়েছে আবার!”
“উপমার ভাই আমার সাথে কথা বলেছে।”
ইভান একটু নড়েচড়ে বসলো। তূর্য মলিন মুখে বললো,
“দেখা করতে বলেছে। আমাকে যদি গণপিটুনি দেয়?”
ইভান বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। আর বলল,
“আমাকে কেন বলছিস এসব? আমি কি করবো এখানে?”
“আমার সাথে যাবি। আর বলবি যে আমি রিকি না। বলবি, আমার মাথায় সমস্যা আছে। বলে দিস, আমার ভুলে যাওয়ার রোগ আছে।”
“তুই কি আমাকে তোর মতো গাঁধা মনে করেছিস? আমি বলবো, আর সে বিশ্বাস করবে? বাহ!”
ইভান চলে যেতেই তূর্য উঠে বাইরে চলে গেলো। আর আহনাফকে ফোন করে পরামর্শ চাইলো। আহনাফ পরামর্শ দেওয়ার পরিবর্তে বলল,
“তোকে গণপিটুনি দেওয়ার সময় ইভানকে বলিস ভিডিও করতে। আমরা লাইভ দেখতে চাই।”
পরের দিন ইভানের জোরাজুরিতে তূর্য আদিলের সাথে সেই জায়গায় দেখা করার সিদ্ধান্ত নিলো, যেখানে উপমার সাথে দেখা হয়েছিল। আর দেখা করতে না চাইলে রিকির জন্য এটা অসম্মানজনক হবে। তূর্য যদি কোনো সাধারণ মানুষ হতো, তাহলে এই বিষয়টা এড়িয়ে যেতে পারতো। কিন্তু সমস্যা হলো, সে-ই রিকি, আর এটা এখন উপমা জানে। তাই নিজের সম্মান রক্ষার্থে তূর্য ইভানকে নিয়ে রিকশায় উঠে পড়লো। অর্ধেক রাস্তা যাওয়ার পর হঠাৎ পেছন থেকে একটা বাইকের সাথে ধাক্কা লাগায়, ইভান আর তূর্য দু’জনই ধপ করে রিকশা থেকে নিচে পড়ে গেলো। তূর্য ওরকম ব্যথা না পেলেও, ইভানের অনেকখানি ছিঁড়ে গিয়েছিল। ইভান হাত ধরে বসে রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছিল, তখনই একটা হেলমেট পরা মেয়ে তার দিকে এগিয়ে এসে বলল,
“সরি, সরি, সরি। কিছু বদমাশ লোক আমার পিছু করছিল, ওদের থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য হুড়োহুড়ি করতে গিয়েই আপনার রিক্সা উলটে দিয়েছি।”
ইভান মাথা তুলে মেয়েটার দিকে তাকাতেই মেয়েটা বলল,
“আরেহ, আপনি সেদিনের সেই লোকটা না?”
তূর্য উঠে ইভানকে ধরে বসালো। মেয়েটা তার হেলমেট খুলে বলল,
“আমি আপনাকে রিকশাওয়ালা মামা ভেবেছিলাম।”
এই বলে মেয়েটা রিকশাওয়ালা মামার হাতে কিছু টাকা দিয়ে বলল,
“আমাকে মাফ করবেন, মামা। আমি বুঝতে পারি নি।”
মেয়েটাকে এতো বিনয়ের সাথে অপরাধস্বীকার করতে দেখে রিকশাওয়ালা মামা বললেন,
“সমস্যা নাই আপা, আপনে ঠিক আছেন?”
ইভান দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল,
“জ্বি না, আমি ঠিক নেই।”
ইভান তূর্যের হাতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ালো, আর মেয়েটার দিকে আঙ্গুল তাক করে তূর্যকে বলল,
“এই মহিলাটা যেখানেই যায়, ঝামেলা করে। ওদিনও একটা ঝামেলা বাঁধিয়েছিল।”
মেয়েটা তেড়ে এসে বলল,
“কি বললেন? আমি মহিলা? আপনার কি আমাকে মহিলা মনে হয়?”
ইভান তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,
“তাহলে কি আপনি পুরুষ? ওহ, আচ্ছা। মেয়ে সেজে ঘুরছেন!”
সানায়া রাগী কন্ঠে বললো,
“আই এম সানায়া। আর আমি একজন মেয়ে। মহিলা না।”
তূর্যও সানায়ার কথায় সম্মতি দিয়ে ইভানকে বলল,
“হ্যাঁ, মেয়েই তো। তোর মহিলা বলা উচিত হয় নি। এতো বয়সও তো হয় নি।”
ইভান রাগী দৃষ্টিতে তূর্যের দিকে তাকাতেই তূর্য সানায়াকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“আর আপনি যে আমার বন্ধুকে লোক বললেন!”
রিকশাওয়ালা মামা বললেন,
“ভাইজান, আপনেরা উঠেন। যাবেন না?”
তূর্য ইভানকে রিকশায় উঠিয়ে দিলো। রিকশার পেছনের অংশটা বেঁকে গেলেও রিক্সাটা এখনো চলার মতো উপযুক্ত। তূর্য আর ইভান বসতেই সানায়া বলল,
“আমার বাইকটা কে উঠাবে?”
তূর্য আবার রিকশা থেকে নামতে যাবে, তখন ইভান বলল,
“মামা রিকশা টানেন। এতো ঝামেলা ভালো লাগে না।”
রিক্সা চলা শুরু করতেই সানায়া হাঁ করে রিকশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর নিজেই বাইক উঠাতে যাবে ততোক্ষণে তার বডিগার্ডদের গাড়ি চলে এলো। তারা এসেই বাইকটা উঠিয়ে বলল,
“ম্যাম আপনি ঠিক আছেন?”
সানায়া দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“না, কিভাবে ঠিক থাকবো? তোমরাই যেখানে আমার পিছু ছাড়ছো না।”
“মন্ত্রী সাহেব আপনার সাথে থাকতে বলেছেন।”
সানায়া বিড়বিড় করতে করতে গাড়িতে উঠে বসে তার বাইকের চাবিটা গার্ডকে দিয়ে বলল,
“স্কুটিটা গ্যারেজে নিয়ে যাও। সমস্যা থাকলে ঠিক করিয়ে বাসায় দিয়ে আসবে।”
“ওকে ম্যাম।”
এদিকে আজ দুপুরে মাওশিয়াত ইমনকে তার বাসায় নিয়ে এলো। মাওশিয়াত ইমনকে রুমে বসিয়ে দিয়ে বলল,
“আজকে আমি নিজের হাতে তোমার জন্য রান্না করেছি।”
ইমন মুচকি হেসে মাওশিয়াতের হাতে হাত রাখলো। মাওশিয়াত বলল,
“তুমি বসো, আমি এক্ষুনি আসছি।”
ইমন মাওশিয়াতের রুমে এদিক-ওদিক হাঁটছে। তখনই সে পেছন ফিরে একজন মহিলাকে দেখে থমকে গেলো। ইমন তার দিকে কিছুক্ষণ ভ্রূ কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। মহিলাটি একটা কাপড় দিয়ে মাওশিয়াতের চেয়ার টেবিল মুছছিল। সে মহিলাটির দিকে আগাতেই মাওশিয়াত এসে বলল,
“চলো। ফ্রেশ হয়ে খেতে আসো।”
ইমনও বেশিক্ষণ না ভেবে ফ্রেশ হয়ে খেতে বসলো। খাওয়া-দাওয়ার পর ইমন আর মাওশিয়াত এক রুমে বসে গল্প করছিল। মাওশিয়াত দরজাটা ভেতর থেকেই বন্ধ করে দিয়েছে। ইমন তখন উঠে দরজার কাছে এসে দাঁড়ালো। মাওশিয়াত অবাক হয়ে বলল,
“দরজায় কি দেখছো?”
ইমন মাওশিয়াতের পাশে বসে ধীর কন্ঠে বললো,
“এই মহিলাটা কে?”
মাওশিয়াত ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“কার কথা বলছো?”
“এই যে একটু আগে রুমে এলো।”
“ওহ উনি তো রাহেলা খালা। উনি আমাদের বাসায় কাজ করেন।”
“কখন থেকে?”
“সাড়ে তিন বছর হচ্ছে।”
“ওহ।”
“উনার কথা কেন জিজ্ঞেস করছো?”
“এমনিতেই।”
ইমন অজানা ভাবনাতেই ডুবে গেলো। এদিকে তূর্য আর ইভান আদিলের সামনে বসে আছে। আদিল তূর্যকে ভালোভাবে দেখে বলল,
“উপমা আমার একমাত্র বোন। ছোটবেলা থেকে ওর সব আবদার আমি আর বাবা পূরণ করেছি। ওকে কষ্টে দেখলে, আমার খুব খারাপ লাগে। যা বুঝলাম, তুমি ওকে ইগনোর করছো।”
ইভান তূর্যকে কিছু বলতে না দিয়ে নিজেই বলল,
“এমন কিছুই না। ও একটু অসুস্থ ছিল, তাই হয়তো…”
আদিল ইভানকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“আমি নিজেও একজন পুরুষ। আমি বুঝি পুরুষ মানুষের অবহেলা, আর তাদের অজুহাত। ও যদি সত্যিই অসুস্থ থাকতো, তাহলে অন্তত উপমাকে জানাতে পারতো।”
তূর্য প্রসঙ্গ পালটে বললো,
“আপনি আমার সাথে কেন দেখা করতে চেয়েছিলেন?”
“আমি তোমাকে জোর করতে আসি নি। শুধু বলতে এসেছি, অনেক বছর ধরেই উপমা রিকির পেছনেই সময় নষ্ট করে গেছে। বাসার সবাই এটা জানে। আর সবার কাছে এটা অস্বাভাবিক ছিল না, কারণ তুমি একজন স্টার। স্বাভাবিকভাবেই একজন গায়কের ভক্ত থাকেই। কিন্তু তোমার সাথে কথাবার্তা না হলে জিনিসটা স্বাভাবিকই থাকতো। এখন তুমি উপমার সাথে কথা বলেছো, ও এটাকে ভালোবাসা ভেবে অনেক আশা করেছিল। কিন্তু দিনশেষে ওর আশা, ওর অনুভূতি, সব মিথ্যে হয়ে গেলো। যদিও আমি ওর ফোন নিয়ে ফেলেছি। দেখলাম, তোমাকে অনেক উল্টাপাল্টা মেসেজ দিয়েছে, তোমার কাছে ভিক্ষা চেয়ে বলেছে, ওর কাছে ফিরে আসতে। ও তোমাকে অনেক ভালোবাসবে। ব্লা, ব্লা, ব্লা। শুনো, ও এসব আবেগের বশে লিখে ফেলেছে। হয়তো নিজের আবেগের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে নি। রাখবেই বা কিভাবে, যাকে সে অনেক বছর ধরে দেখার আশায় ছিল, যাকে সে না দেখেই ভালোবাসতো, তাকে দেখে ফেলার পর, পাওয়ার লোভটা তো একদম স্বাভাবিক। আমি তোমাকে শুধু এতোটুকুই বলবো, উপমাকে সুন্দর করে বুঝিয়ে বলো, তুমি কেন অবহেলা করছো? ওকে এটা বুঝতে দিও না যে তুমি একজন স্টার, তাই তুমি ওকে চাও না। তুমিই একমাত্র ওকে স্বাভাবিক করতে পারবে। এভাবে অবহেলা করে, তুমি উপমাকে মানসিকভাবে ভেঙে দিচ্ছো। ওকে শক্ত করার জন্য তোমার ওকে বোঝাতে হবে, তোমার সমস্যাগুলো দেখিয়ে, ওকে তোমার সমস্যা বানিয়ে না।”
আদিলের কথাগুলো শুনে তূর্যের ভেতর অনুশোচনা কাজ করতে লাগলো। সে হুট করেই বলে ফেলল,
“আমি উপমাকে বিয়ে করতে চাই।”
তূর্যের কথা শুনে আদিলের চেয়ে বেশি ইভানই অবাক হলো। তূর্য আবার বলল,
“আমি উপমাকে বিয়ে করবো, যদি আপনাদের আপত্তি না থাকে।”
চলবে-#অরুণিকা
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-৪৮||
৭৯.
“কোনো চিন্তা-ভাবনা ছাড়া তুই এই কথা কিভাবে বললি? তুই কি জানিস তুই কি বলেছিস?”
তূর্য ইভানের প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে সামনে এগুতে লাগলো। ইভান আবার এসে জেরা করতেই তূর্য বলল,
“আমি এখন উপমাকে বিয়ে না করলে সারাজীবন এই অপরাধবোধ নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে। তার চেয়ে ভালো বিয়ে করে সব সমস্যা মিটিয়ে ফেলি।”
“তুই উপমাকে ভালোবাসিস না, তারপরও ওকে বিয়ে করবি?”
“ভালো তো আমি কাউকেই বাসি না। এখন অন্তত যে আমাকে ভালোবাসে, তাকেই তো বিয়ে করা উচিত, তাই না?”
“কি বলছিস এসব? তূর্য দেখ, চিন্তাভাবনা করে কথা বল। তোর ভুলভাল সিদ্ধান্ত, পরবর্তীতে আমাদের সবাইকে সমস্যায় ফেলবে।”
তূর্য কোনো উত্তর না দিয়ে সামনে হাঁটতে লাগলো। সারাদিন শহরের অলিগলি হেঁটে সে উপমাকে নিয়েই ভাবতে লাগলো৷ উপমার সাথে অনলাইনে কাটানো মুহূর্তগুলো মনে করে তাকে ভালোবাসার চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু কিছুতেই সে উপমাকে অনুভব করতে পারছে না। এখন তার মধ্যে অনুভূতির অভাব আছে নাকি উপমাই থাকে সেই ভালোবাসাটা দিতে পারে নি, এটা নিয়েই তূর্য দ্বিধায় আছে। কিন্তু এই মুহূর্তে পিছু হটে যাওয়া মানেই তার সম্মান নষ্ট হওয়া।
এদিকে আদিল বাসায় এসে পুরো দিন উপমাকে পর্যবেক্ষণ করলো আর বুঝলো এই মুহূর্তে তার বোনকে ভালো করার একমাত্র উপায় রিকিকে উপমার সামনে নিয়ে আসা। তাই সে দেরী না করে বাবাকে ফোন করে সব ঘটনায় খুলে বললো। করিম সিদ্দিক ব্যস্ত কন্ঠে বললেন,
“আর আমি উপমাকে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দেবো, এটা তুই কিভাবে ভাবলি?”
“তোমার মেয়েই তো পাগল হয়ে যাচ্ছে। তুমি এসেই বরং সামলাও। কিছু হলে আমাকে আর মাকে দোষারোপ করতে পারবে না কিন্তু।”
“আমি কিসের অভাবে রেখেছি তোদের? বিদেশে বসেও আমাকে শান্তি দিলি না তোরা দুই ভাই-বোন। তোর মা কি করছিল এতোদিন? মেয়েকে তো চোখে চোখেই রাখতে পারলো না।”
“বাবা প্লিজ। এসব বলে তুমি মা আর তোমার মধ্যে ঝামেলা করো না।”
“আচ্ছা, ঠিক আছে। কিন্তু এখন আমার দেশে আসতে সময় লাগবে। আগে ছুটি নিতে হবে অফিস থেকে। এরপর টিকেট করতে হবে। তারপরই আসতে পারবো। এমনি বললেই আসা যায় নাকি?”
করিম সিদ্দিক রাগ করে ফোন রেখে দিলেন। মিসেস জুলেখা সব জানার পর উপমাকে মারতে চাইলেন, কিন্তু আদিলই মাকে আটকিয়েছে। এদিকে উপমা মনে মনে অনেক খুশি। ভাইয়ের মুখ থেকে শুনেছে রিকি তাকে বিয়ে করতে চায়। এতোটুকু শুনেই সে কিছুটা স্বাভাবিক হলো। আর মায়ের বকুনি খেয়েও সে আনমনে হাসছিল। আদিল বোনের চোখ দেখে বুঝলো, উপমার ভালো থাকা রিকির মাঝেই আছে। সে নিজেও একজনকে ভালোবাসে। তাই বুঝে, ভালোবাসা মানুষকে কতোটা উন্মাদ করে দেয়। এখন সে তূর্য ওরফে রিকির সব তথ্য বের করে তবেই আগাবে।
কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আদিল অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করে, শুধু এতোটুকুই জানলো, তূর্যের বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন কেউই নেই। সবাই দুর্ঘটনায় মারা গেছে। কেমন দুর্ঘটনায় মারা গেছে এটা এখনো বের করতে পারে নি। আদিল আরো জেনেছে তূর্যের পরিবার তার বন্ধুদের নিয়েই। আর বিয়ে হলে উপমাকেও তাদের সাথে এক ঘরে থাকতে হবে, যেটা আদিলের পছন্দ হয় নি। তূর্য বর্তমানে কলকাতায় আছে, তাই এখন বিয়ে হলে উপমাকে সে কলকাতায় নিয়ে যাবে, যেটা করিম সিদ্দিক কখনোই মেনে নেবেন না। পড়াশুনার দিক থেকে চিন্তা করলে তূর্যের অনার্স শেষ। সে সবেমাত্র মাস্টার্সে মাত্র ভর্তি হয়েছে। পড়াশুনায় তেমন ভালো নয়। তাই বাংলাদেশে চাকরির প্রতিযোগিতায় তূর্য পাশ করবে কিনা, এটার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এতোটুকুই তূর্যের পরিচয়। তবে রিকি সম্পর্কে তথ্য নিতে গিয়েই আদিল এই পাত্রকে ফেলে দেওয়ার মতো ভাবলো না। কারণ রিকি নিজেকে প্রকাশ না করেই যেভাবে খ্যাতি পেয়েছে, প্রকাশ করলে হয়তো সে আরো উপরে উঠতে পারবে। তার নিজস্ব ব্যান্ড আছে। সে নিজের এলবাম বের করেই লক্ষ টাকা আয় করতে পারছে। মাঝে মাঝে কলকাতার বিভিন্ন সিনেমায় সে গান করে। তবে সেখানে তার বেশি পরিচিতি নেই। তূর্যের সব কিছু জানার পর করিম সিদ্দিক দেশে আসার সিদ্ধান্ত বাদ দিলেন। কারণ তিনি একমাত্র মেয়েকে এভাবে এতো দূরে পাঠাবেন না। কিন্তু উপমা বাবার ‘না’ শুনেই পাগলের মতো কান্নাকাটি করতে লাগলো। মিসেস জুলেখা মেয়ের অবস্থা দেখে পাথরের মতো বসে আছেন। একটামাত্র মেয়েকে কিভাবে কলকাতায় থাকা একটার ছেলের সাথে বিয়ে দেবেন, যেখানে ছেলের কোনো বাবা-মা নেই, কোনো অভিভাবক নেই, থাকে বন্ধুদের সাথে। এভাবে তো মেয়ে দেওয়া সম্ভব না। কিন্তু মিসেস জুলেখা আর আদিল এই কথা কোনোভাবেই উপমাকে বুঝাতে পারলো না।
এদিকে ইভানের ক্লাস শুরু হয়ে যাওয়ায় সে আর বাংলাদেশে থাকতে চাইছে না। আর তূর্যের সিদ্ধান্তেও তার পুরোপুরি বিশ্বাস না থাকায় সে এখনো বাকিদের এই ব্যাপারে কিছুই জানায় নি। অন্যদিকে উপমার জোরাজুরিতে করিম সিদ্দিক তার অফিস থেকে ছুটি নিয়ে টিকেট কাটলেন৷ পরের সপ্তাহে তিনি দেশে আসবেন। বাবার দেশে আসার খবর শুনে আদিল আবার তূর্যের সাথে দেখা করলো। এবারও তূর্য বিয়ের সিদ্ধান্তে অটল থাকায় আদিল এই সম্পর্ক আগানোর জন্য তূর্যকে বাবা-মার সাথে দেখা করার প্রস্তাব দিলো। এদিকে এসব দেখে ইভানও বুঝে গেলো, তূর্য আর বোঝাবুঝির পর্যায়ে নেই। তাই সে তূর্যের সাথে আর কথা না বলে সরাসরি আরাফকে বিষয়টা জানালো। তূর্য বিয়ে করতে চাইছে, এটা আরাফ আর তাহমিদ কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছিল না। কিন্তু ইমন খবরটা শুনে খুবই খুশি হলো আর বলল,
“শেষমেশ তূর্য বিয়ে করে আমাদের উদ্ধার করছে।”
ইমনের কথা শুনে আহনাফ মনে মনে বলল,
“আমাদের না, আমাকেই বিশেষ ভাবে উদ্ধার করছে।”
আহনাফ সাথে সাথেই তূর্যকে ফোন করে বলল,
“তুই বিয়ে করছিস এটা শুনেই আমার অনেক ভালো লাগছে।”
তূর্য চিন্তিত কন্ঠে বললো,
“আমি কি ঠিক করছি, আহনাফ?”
“অবশ্যই। এটাই তো বিয়ে করার বয়স।”
এরপর আহনাফ বসে বসে গুগল ঘেঁটে বিয়ে করার ধর্মীয়, শারীরিক আর মানসিক সুবিধাগুলো বের করে তূর্যকে পাঠাতে লাগলো। এসব দেখে তূর্য কিছুক্ষণের জন্য নিজের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে নিশ্চিত হলেও পরক্ষণেই তাহমিদ আর আরাফ তাকে ফোন করে বলতে লাগল, বিয়ে কোনো ছেলেখেলা না। এই পরিস্থিতি বিয়ে করে সে উপমাকে কোথায় রাখবে? আর যেখানে সে উপমাকে ভালোই বাসে না, সেখানে কোন যুক্তিতে সে উপমাকে বিয়ে করবে? এসব কথায় তূর্য আরো দ্বিধায় পড়ে গেলো।
এদিকে আহনাফ অরুণিকার ঘরে এসে বলল,
“একটা খুশির সংবাদ আছে!”
অরুণিকা ভ্রূ কুঁচকে বললো, “কি সংবাদ?”
“ঘরে ভাবী আসবে।”
অরুণিকা পড়ার টেবিল ছেড়ে উঠে বলল,
“শতু আপুর তো বিয়ে হয়ে গেছে!”
“তাহমিদের না।”
অরুণিকা খুশি হয়ে বলল,
“মাওশিয়াত আপু আর ইমনের বিয়ে?”
“আরেহ না।”
অরুণিকা কিছুক্ষণ ভেবে অবাক হয়ে বলল,
“আরাফ বিয়ে করবে!”
“আরাফ না। ভেবে দেখো।”
অরুণিকা বিছানায় ধপ করে বসে বলল,
“তাহলে তুমিই করবে আর কি!”
আহনাফ ভ্রূ কুঁচকে বলল,
“আমি করবো মানে? আমি ছাড়া কি বাসায় আর কেউ নেই?”
“হ্যাঁ, তুমিই আছো। বাকিরা তো করবে না।”
“আমি বলেছি ঘরে ভাবী আসবে। তোমার বুঝে নেওয়া উচিত ছিল….”
অরুণিকা আহনাফকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“তোমার বউ আমার ভাবীই হবে।”
“আমার বউ তোমার ভাবী হবে, আমার তো ভাবী হবে না!”
“তুমি এতো ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা কেন বলছো? সোজাসুজি বলে দাও কে বিয়ে করছে।”
“তূর্য বিয়ে করছে।”
অরুণিকা অবাক হয়ে বলল, “রকস্টার!”
আহনাফ মুখ বাঁকিয়ে বলল, “হ্যাঁ, রকস্টার।”
অরুণিকা মুখ ফুলিয়ে বলল,
“ও তো আমাকে বলেছে ও বিয়ে করবে না।”
আহনাফ সাথে সাথেই ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“কেন, ও বিয়ে করুক, না করুক তোমার কি!”
“ও আমাকে বলেছে করবে না।”
“এখন তো করছে।”
অরুণিকা আহনাফকে সরিয়ে দিয়ে আরাফকে এসে জিজ্ঞেস করতেই আরাফও হ্যাঁ বললো। তখন অরুণিকা মুখ ফুলিয়ে বললো,
“ও আমাকে বলেছে ও বিয়ে করবে না। ও বিয়ে করলে আমি ওর সাথে কথায় বলবো না।”
আহনাফ রাগী কন্ঠে বললো,
“ও বিয়ে করলে তোমার সমস্যা কি?”
“হ্যাঁ, আমার সমস্যা আছে।”
“কি সমস্যা?”
“তোমাকে কেন বলবো?”
“দেখো অরু, ও বিয়ে করবে মানে করবে।”
“না, ও বিয়ে করবে না। রকস্টার নিজেই আমাকে বলেছে ও বিয়ে করবে না। ও আমাকে মিথ্যে কেন বলবে তাহলে?”
“অদ্ভুত মেয়ে তো! ও বিয়ে করলে তোমার সমস্যাটা কোথায় আমি বুঝতে পারছি না!”
আরাফ এবার জোর গলায় বলল,
“তোদের ঝগড়া করতে ইচ্ছে করলে, ঘর থেকে বের হ। এমনিতেই ওই ছেলে প্রেম করে আমাদের ঝামেলায় ফেলে দিয়েছে, আর এদিকে তোরা দুইজন সকাল সন্ধ্যা কুকুরের মতো চিল্লাফাল্লা করিস। যাবি এখান থেকে তোরা?”
আরাফের ধমক খেয়ে অরুণিকা চুপসে গেলো। যাওয়ার আগে সে আহনাফের হাতে চিমটে দিয়ে রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। আর আহনাফ হাত ধরে সেই বন্ধ দরজার দিকে তাকিয়ে রইলো।
৮০.
তূর্য অনেকক্ষণ ধরে সোফায় বসে আছে। আর তার পাশে তাহমিদ। অন্যদিকে আদিলের পাশে ইভান বসে আছে। আর তাদের মুখোমুখি ইমন বসে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। তূর্যের মুখোমুখি বসে আছেন করিম সিদ্দিক আর তার স্ত্রী মিসেস জুলেখা। তূর্যের জোরাজুরিতে তাহমিদ আর ইমন বাংলাদেশে এসেছে৷
এদিকে করিম সিদ্দিক তূর্য ও তার বন্ধুদের ভালোভাবে দেখে বলল,
“তুমি বিয়ের পর উপমাকে কোথায় রাখবে?”
তূর্য একবার তাহমিদের দিকে তাকালো, আরেকবার ইভানের দিকে। আদিল তূর্যের তাকানো দেখে বুঝলো এই নিয়ে তূর্য হয়তো এখনো দ্বিধায় আছে। সে ইভানকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“তোমরা বাসায় কে কে থাকো?”
ইভান সবার দিকে এক নজর তাকিয়ে বলল,
“আমরা বাসায় ছ’জন থাকি। আর আমাদের একটা বোন আছে।”
মিসেস জুলেখা উৎসাহ নিয়ে বললেন,
“শুনলাম, তোমরা তো বন্ধু। বোনটা কি তোমার নাকি তূর্যের?”
“না, আরাফ আর আহনাফের কাজিন। ওরা তো আসতে পারি নি। নয়তো দেখা হয়ে যেতো।”
“ওহ, আচ্ছা। মেয়েটা তোমাদের সাথে থাকে! তোমরা এতোগুলো ছেলে! ওর বাবা-মা নেই?”
“না আন্টি, আমাদের বাবা-মা, আত্মীয়রা একটা এক্সিডেন্টে মারা গেছে।”
“কেমন এক্সিডেন্ট!”
ইভান এবার সবার দিকে একনজর তাকালো। তারপর বলল,
“আমরা অনেক ছোট ছিলাম। কি হয়েছিল ঠিক মনে নেই। আমরা এক চাচার বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলাম, ওখান থেকে এসেই শুনলাম সবাই মারা গেছে। বাসায় আগুন লেগেছিল।”
করিম সিদ্দিক ভ্রূ কুঁচকে বললেন,
“ইন্না-লিল্লাহ। সবাই মারা গেছে? মানে তোমাদের সবার বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন, সবাই মারা গেছে?”
“হ্যাঁ।”
“এটা কি বাংলাদেশে হয়েছিল?”
“জ্বি।”
“কবে হয়েছিল?”
“আমরা অনেক ছোট ছিলাম, আংকেল। আমাদের সময় তারিখ মনে নেই। আর এরপর চাচার সাথে কলকাতায় চলে গিয়েছিলাম।”
“এখানে তোমাদের বাড়ি কোথায়?”
“চাঁদগাও ছিল।”
করিম সিদ্দিক ভ্রূ কুঁচকে বললেন,
“আহ! আট কি নয় বছর আগে ওদিকে মৈত্রী গ্রুপের বিল্ডার্সরা থাকতো। ওখানেই তো আগুন লেগেছিল শুনেছি। ওই বাড়ির সবাই মারা গিয়েছিল। পত্রিকায় এসেছিল কেউ বেঁচে ফেরে নি। তোমরা ওই বংশের কেউ না তো!”
ইমন ব্যস্ত কন্ঠে বললো,
“না, না, না, আংকেল। ওদিকে না।”
মিসেস জুলেখা স্বামীকে বললেন,
“আরেহ, চাঁদগাও কি একটু খানি জায়গা নাকি? অন্যদিকে কোথাও হবে। কিন্তু আমি এমন খবর পড়ি নি। হয়তো মনে নেই। কতো সংবাদ আসে, আগুন লাগে, বিস্ফোরণ হয়, খুন হয়। এই খবরটা হয়তো চোখে পড়ে নি। নয়তো এক পরিবারের এতোজন মারা গেছে, পত্রিকায় তো আসার কথা।”
তূর্য মনে মনে বলল,
“এরা যেভাবে সি আই ডির মতো তদন্ত করছে, মনে হচ্ছে বিয়ের পর আমাকে প্রশ্ন জগতে প্রবেশ করতে হবে। এখনো সময় আছে, এখান থেকে পালিয়ে যাওয়ায় ভালো। নয়তো আমার সারাজীবন এই প্রশ্ন উত্তরের মধ্যে দিয়েই চলে যাবে। এই প্রশ্নগুলোর চেয়ে তো কোর্স পরীক্ষার প্রশ্নগুলো সহজ ছিল।”
এবার মিসেস জুলেখা তূর্যকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“বাবা, তূর্য। তুমি তো খুব ভালো গান করো। উপমা আমাকে শুনিয়েছিল।”
তূর্য বিনয়ী হেসে বলল, “জ্বি, আন্টি।”
“একটা গান শুনাও তো।”
মিসেস জুলেখার কথায় তূর্য, তাহমিদ আর ইভান অবাক হয়ে তার দিকে তাকালো। ইমন মুখ টিপে হাসলো। ইমনকে হাসতে দেখে আদিল মাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“মা, কি বলছো এসব!”
মিসেস জুলেখা ছেলেকে ধমক দিয়ে বললেন,
“তুই চুপ কর। দেখতে হবে না, আমার মেয়ের পছন্দ কেমন?”
তারপর তিনি তূর্যের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“বাবা, তুমি শুরু করো।”
তূর্য সবার দিকে একনজর তাকালো। তাহমিদ ধীর কন্ঠে বললো,
“বাবা, একটা ভদ্র গান গেও। আর আমাদের মান-সম্মানটাও রক্ষা করো।”
তূর্য গলা খাঁকারি দিয়ে গাইতে লাগলো নচিকেতার বৃদ্ধাশ্রম গানটি। ব্যস, গান শেষ হওয়ার পর পরই মিসেস জুলেখা খুশি হয়ে বলে ফেললেন,
“আমার ছেলে পছন্দ হয়েছে।”
করিম সিদ্দিক হেসে বললেন, “আমারও।”
মিসেস জুলেখা আবার বললেন,
“তো বাবা, তুমি তো বিয়ের পর উপমাকে তোমার সাথে নিয়ে যাবে, তাই না?”
“জ্বি আন্টি। ও যেতে চাইলে যাবে। এমনিতেই আমরা সবাই আগামী বছর বাংলাদেশেই ফিরবো। আমাদের পড়াশুনাও শেষ হয়ে যাবে। আর সময়ও শেষ। আমরা তো ওই দেশে পারমানেন্ট ভিসা পাই নি। আর আমাদের সিটিজেনশিপও নেই। অনেকের সাহায্য ছিল, তাই এতো বছর থাকতে পেরেছি।”
“ওহ আচ্ছা। তাহলে কি করবে?”
তূর্য কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
“উপমা যেতে চাইলে যাবে। আর আমি ভাবছি ওকে নিয়েই যাবো, একমাস থাকার পর দেশে নিয়ে আসবো। তারপর এখানেই বাসা নিয়ে ফেলবো। আর পরীক্ষাটা দেওয়ার জন্য হয়তো আমাকে আবার কলকাতা যেতে হবে। তারপর পরীক্ষা দিয়েই এখানে চলে আসবো।”
“ঠিক আছে। আরেকটা কথা। কেউ তো বড়জন আছেই তোমাদের। তাদের সাথে দেখা হলে ভালো হতো। তোমার ওই চাচা, যার কথা বলেছিলে, তার সাথে আমাদের দেখা করিয়ে দাও।”
“জ্বি, দেখা করাবো। আপনারা বরং কলকাতায় আসলে ভালো হবে। বাসাটাও চিনে নিবেন। সবার সাথে পরিচয়ও করিয়ে দেবো।”
এবার আদিল বলল,
“এটা ভালো বলেছো। আমরা বরং এক সপ্তাহের জন্য কলকাতায় যাই। তারপরই বিয়ের কথাবার্তা আগাবো।”
চলবে-