#অস্তিত্বে_তুমি
#পর্ব_১৮
#সুলতানা_পারভীন
গাড়িতে জিহানের পাশে বসে থেকেও একটা টু শব্দও করে নি নীলা। ওরা কোথায় যাচ্ছে, কেন যাচ্ছে, জিহানই বা কেন এই ভরদুপুরে খাবারের টেবিল ছেড়ে উঠে ওকে নিয়ে নিজের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছে এমন জবাব না জানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে নীলার মাথায়। জিহান ড্রাইভিং করার ফাঁকে নীলার দিকে একবার তাকিয়ে নীলার ভাবুক মুখটা দেখে আলতো করে হাত বাড়িয়ে নীলার গালে হাত ছুঁইয়ে দিলো। ভাবনার দুনিয়ার মাঝে ডুবে ছিল বলে জিহানের হঠাৎ গাড়ি থামানো টেরই পায়নি নীলা। তাই এবারে জিহানের দিকে তাকিয়ে একটু চমকেই উঠেছে মেয়েটা।
-এই যে ম্যাডাম? কোন ভাবনায় হারালেন? সারাদিন যে না খেয়ে আছেন সে খেয়াল আছে? খিদেয় চোখ মুখ কেমন শুকিয়ে গেছে, তবু খিদে লেগেছে কথাটা বলছে না পাগলিটা। তুমি একটু বসো নীল। আমি দু মিনিটের মধ্যেই আসছি কেমন?
-কোথায় যাচ্ছেন? আর আমরাইবা কোথায় যাচ্ছি?
জিহান পাশ ফিরে নামার জন্য পা বাড়ানোর আগেই নীলা চমকে জিহানের হাতটা চেপে ধরলো। জিহান মিষ্টি করে একটা হাসি দিয়ে নীলার কপালে আলতো করে একটা চুমো এঁকে দিলো।
-লাঞ্চ টাইম পার হচ্ছে ম্যাডাম। আজ কি না খেয়ে থাকার প্ল্যান আছে নাকি ম্যাডামের? হুম? আর আমরা কোথায় যাচ্ছি? উমমমম। আমরা আমাদের বাড়িতে যাচ্ছি নীলপাখি।
-আমাদের বাড়ি মানে?
-আমাদের মানে আমাদের। এখন দু মিনিট চুপ করে বসে থাকো। খাবারটা প্যাক করে নিয়েই চলে আসবো। বাড়িতে আপাতত রান্নার ব্যবস্থা নেই। তাই পার্সেলই ভরসা বুঝলে? একটু ওয়েট করো কেমন?
নীলা মাথা নেড়ে সায় দিতেই জিহান গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার অপজিট পাশের রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাবার প্যাক করে নিয়ে এলো। গাড়িতে বসে খাবারের প্যাকেটটা নীলার হাতে ধরিয়ে দিয়ে আবার ড্রাইভিং এ মন দিলো জিহান। আধ ঘন্টার মধ্যেই শহরের খানিকটা দূরে ফার্মহাউজটার সামনে গাড়ি এসে থামতেই অবাক হয়ে বিশাল বড় বাড়িটার দিকে তাকিয়ে রইলো নীলা। চোখের সামনে সেদিনের স্মৃতিগুলো ভেসে উঠতেই চোখ জোড়ায় পানি জমতে শুরু করেছে নীলার। ততক্ষণে জিহান গাড়ি থেকে নেমে নীলার জন্য গাড়ির দরজাটা খুলে দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। নীলা ফার্মহাউজটার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে জিহানের হাতের দিকে একনজর তাকিয়ে চুপচাপ গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে। জিহানের বাড়িয়ে দেয়া হাতটা ধরার কোনো আগ্রহও দেখালো না মেয়েটা। জিহান অবশ্য হাল ছাড়লো না। এক হাতে নীলার হাত থেকে খাবারের প্যাকেটটা নিয়ে অন্য হাতে নীলার একটা হাত চেপে ধরে ফার্মহাউজের মেইন ডোরের দিকেই পা বাড়ালো। নীলা একরকম ঘোরের মধ্যেই জিহানের সাথেই চলছে এক পা দু পা করে।
-সংসার করতে দু পাশের মানুষগুলোকেই সমান ধৈর্য্য নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হয় বুঝলে নীল? পরিবারটা যখন সবার, তখন সংসারটাকে আগলে রাখার, সংসারের ছোটোবড় কাজকর্মগুলোও সবার। এমন না যে বাড়ির বউ বলে সব কাজ তোমাকেই করতে হবে। তুমি নিজের সংসারে একা নয়, বাকিরাও এই সংসারের একটা বড় অংশ এটাও সবাইকে বুঝতে হবে। আর যেদিন মামি আর মুগ্ধাও কথাটা বুঝতে পারবে সেদিন দেখবে আর এমন বাজে বিহেভও করবে না তোমার সাথে।
-আমরা এখানে কেন এসেছি জিহান? আর আবার এই বাড়িটাতেই বা কেন?
ফার্মহাউজের মেইন ডোরের সামনে দাঁড়াতেই নীলার প্রশ্নটা শুনে হেসে বাড়ির দরজাটা খুলে দিল জিহান। জিহানের চোখের ইশারা খেয়াল করে খোলা দরজাটার দিকে তাকালো নীলা।
-এই বাড়িটা আমাদের হলিডে হোম ছিল জানো নীল? ছোটোবেলায় আমি, কায়রাআপু, বাবা, মা সবাই মিলে কত মজা করতাম এখানে। স্কুলের প্রতিবছর ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হওয়ার জন্য ওয়েট করতাম আমরা। বাবাও সেই কয়টা দিন সব অফিসের কাজ থেকে ছুটি নিতো। কি দারুণ কাটতো দিনগুলো! আমাদের সুখের আরেক বাড়ি। তোমার নতুন বাড়িতেই নাহয় নতুন করে শুরু হোক আমাদের নতুন সংসার। এসো?
বাড়ির ভিতরের দৃশ্য দেখে নীলা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দেখে জিহান নীলার হাত ধরে নিজেই বাড়ির ভিতরে পা রাখলো। নীলা অবাক চোখে বাড়িটার অবস্থা দেখছে আর অবাক হচ্ছে। সেদিনের সেই ভাঙা কাঁচের ফ্লাওয়ার ভাসটাও এখনও করিডরে পড়ে আছে। জিহান নিজেও কাঁচের টুকরোগুলো দেখে নীলাকে টেনে দাঁড় করিয়ে দিল।
-আরে আরে আরে নীল! সাবধানে। তাড়াহুড়োয় এসব কিছুই ক্লিন করা হয়নি। শিট! তুমি চুপ করে এখানে দাঁড়িয়ে থাকো। খবরদার এক পা ও নড়বে না বলে দিলাম। কোনদিক থেকে কোনদিকে যাওয়ার সময় আবার হাত পা কেটে বসে থাকবে। সো, চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকবে এখানে। ওকে?
নীলা আবার মাথা নেড়ে সায় দিতেই জিহান ব্যস্ত হাতে করিডোরে পড়ে থাকা ভাঙা কাঁচের টুকরোগুলো পরিষ্কার করে ফেললো। তারপর সেগুলো ডাস্টবিনে ফেলে এসে নীলাকে নিয়ে ডাইনিং রুমে চলে এলো। নীলাকে ডাইনিং রুমে একটা চেয়ার টেনে বসিয়ে নিজেই খাবার সার্ভ করতে লেগে পড়লো জিহান। নীলা আরেকবার অবাক চোখে জিহানের দিকে তাকিয়ে রইলো। সেদিনের সেই দৃশ্যটা এখনও চোখের সামনে যেন জীবন্ত হয়ে উঠছে। অথচ এখন, এই মূহুর্তে দাঁড়িয়ে নিজের চোখের দেখা ঘটনাকেও কেমন মিথ্যে, বানেয়াট গল্প বলে মনে হচ্ছে নীলার। সেদিন কি ঘটেছিল জানার কৌতূহলটা ধীরে ধীরে আরো প্রবল হয়ে মনের দরজায় উঁকি দিতে শুরু করেছে নীলার।
-বুঝলে নীল? সেদিন তুমি যাওয়ার পর আর এই বাড়িটায় আসা হয়নি একবারও। এসেই বা কি করতাম বলো?! আমার সবকটা প্ল্যানই সেদিনটার জন্য নষ্ট হয়ে গেছিল জানো? দুদিন ধরে নিজের টেন্ডারের কাজগুলো রাত জেগে গোছানোর ফাঁকে আমি নিজের হাতে বাড়িটাকে তোমার জন্য সাজিয়েছিলাম। এক সপ্তাহ পর তুমি নতুন বউ হয়ে আমার জীবনে আসলে ওইদিনই তোমাকে আমাদের ছোট্ট হলিডে হোমটায় নিয়ে আসবো, এমনই প্ল্যান ছিল আমার।
-তাহলে ওই মেয়েটা এখানে কি করছিল সেদিন? অফিস থেকে সোজা বাড়িতে এলো কি করে? আর কি করছিল এখানে?
নীলার কৌতূহলী প্রশ্নটা শুনে মিষ্টি করে হেসে জিহান নীলাকে খাইয়ে দিতে শুরু করেছে। নীলাও এতোক্ষণে টের পেলো অনেক খিদে পেয়েছে আসলে ওর। নীলার মুখে আরেক লোকমা ভাত তুলে দিয়ে নিজেও খেতে শুরু করলো জিহান। খাওয়ার ফাঁকেই চললো ওদের মান অভিমানের আলোচনা।
-তোমাকে ওইদিনই জিজ্ঞেস করেছিলাম ফার্মহাউজের এড্রেসটা তুমি কার কাছ থেকে জানলে। তুমি তো বললেও না। বললে এটাও জানতে পারতে তোমাকে এড্রেস যে দিয়েছে সেই ওই মেয়েটাকেও সেই ফার্মহাউজে পাঠিয়েছে। টেন্ডারের ফাইলগুলো ফার্মহাউজ থেকে চুরি করার জন্য। বা ইচ্ছে করেই মেয়েটা ধরা পড়েছে যাতে তুমি আমাকে ক্যারেক্টারলেস মনে করো। এন্ড মজার ব্যাপার হলো ওদের প্ল্যানটা সফলও হয়েছে। কি বলো?
-রূপ। রূপ নাম ছিল মেয়েটার। আর ফার্মহাউজের এড্রেসটা বাবা দিয়েছে। শিহাব আপনার লোকেশন আর ওই মেয়েকে নিয়ে এখানে এসেছেন সেটার খবর দিয়েছিল।
-ওয়েট এ মিনিট ম্যাডাম। রূপ নামটা এমনিই বলেছিলাম। ওর আসল নাম সুনয়না। তখনও ওর নাম জানা ছিল না আমার। আর ঘটনার পিছনের আসল কালপ্রিটটাকে ধরার জন্য একটু কষ্টও দিতে হয়েছে তোমাকে নীল। তার জন্য আমি রিয়েলি সরি। বাট এখন তো আরো এলোমেলো হয়ে গেলো ব্যাপারটা। তোমার ভাইয়ার পি.এ আমার ফার্মহাউজে এসেছে এই খবর শিহাবের কাছে পৌঁছালো কি করে?
-ভাইয়ার পি.এ. মানে? ওই রূপ হোক বা সুনয়না ও আপনার অফিসে জব করে। ভাইয়ার পি. এ কেন হবে?
-মানে? কি বলছ এসব? আমার অফিসে জব করলে আমি চিনতাম না ওকে? কে যে তোমার মাথায় এসব উল্টোপাল্টা গল্প ঢোকায় কে জানে।
-গল্প হতে যাবে কেন? আমি নিজে ওই মেয়েকে আপনার অফিসে দেখেছি। একাউন্টস ডিপার্টমেন্টে। আমি যতবার আপনার সাথে আপনার অফিসে দেখা করতে গেছি ততবারই হয় অফিসে, নয়তো স্টাফ রুমে নয়তো ক্যান্টিনে, কোথাও না কোথাও ওই মেয়েটাকে দেখেছি।
-ওয়েট এ মিনিট। আর ইউ সিরিয়াস? আর ইউ শিওর তুমি সুনয়নাকে দেখেছিলে?
-শিওর মানে? আমি বলছি আমার কথা আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না? আপনি এক কাজ করুন আপনি মামাকে কল করে জিজ্ঞেস করুন।
-দাঁড়াও দাঁড়াও। এখানে কিছু তো একটা গন্ডগোল আছে। অনেক বড় গন্ডগোল। একসাথে দুইটা রিভেল পার্টির অফিসে কি করে জব করে এই মেয়েটা? আবার যে টেন্ডারটা নিয়ে এতো ঝামেলা সেটা তোমাদের বা আমাদের কোনো কোম্পানিই পেল না, টেন্ডার পেল একটা থার্ড পার্টি। কিছু তো একটা কাহিনী আছেই এর পিছনে।
-কিন্তু আপনি কি করে জানলেন যে ওই মেয়েটা ভাইয়ার পি. এ.?
-আমার কথা সত্যি কিনা সেটা তোমার ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবে। নিহার ভাবিও জানে মেয়েটাকে পাঠানোর পিছনে আবরার ভাইয়া কোনো না কোনো ভাবে জড়িত। বাট আমি ভাবছি অন্য কথা। সুনয়না তোমাদের বাড়িতে যায় নি? ফার্মহাউজে কি হয়েছে সেটা বলার জন্য? ওকে আমি ছেড়েছিলাম যাতে ও তোমাদের বাড়িতে গিয়ে বলে সবটা প্ল্যান মতোই হচ্ছে।
-আপনি কি বলছেন আমি কিছু বুঝতে পারছি না। ওই মেয়েটাকে আমি কখনো আমাদের বাড়িতে যেতে দেখি নি। অফিসে তো তেমন একটা যাওয়া হয় না, তাই জানি না ও আসলেই ভাইয়ার পি.এ কিনা।
-কিছু একটা প্রবলেম আছে এখানে। আমাদের দুটো রাইভাল কোম্পানির মধ্যকার তৃতীয় ব্যক্তিটা কে সেটাই বুঝতে পারছি না। ওয়েট, আমি সাদিককে বলছি ব্যাপারটা দেখতে। ওরাই খুঁজে বের করুক আসল রহস্যটা কি। একবার এই মেয়েটাকে পাই, আসল কাহিনী ওর কাছ থেকেই জানা যাবে।
দেখতে দেখতেই একটা সপ্তাহ কেটে গেছে। দিনগুলো অসম্ভব রকমের ভালো কেটেছে নীলা আর জিহানের। জিহান প্রতিদিন নিয়ম করে সকালে অফিসে গিয়ে দুপুরেই বাসায় ফিরে আসছে। আর বাসায় ফিরে সারাদিনই নীলাকে টুকটাক কিছু না কিছু শিখাচ্ছে। আর নীলাও গভীর আগ্রহ আর কৌতূহলে জিহানের কাছ থেকে সব কাজই শিখে নিচ্ছে। আজও অফিসে একটা মিটিং শেষ করেই বাসায় চলে এসেছে জিহান। বাসায় ফিরে রান্নাঘরে খুনশুটির সাথে চলছে রান্না শেখার কোর্স। জিহান কাজের ফাঁকে একেকবার নীলার গালে হলুদের গুঁড়োর রঙ ছড়াচ্ছে, কখনো আলতো হাতে গভীর মনোযোগে কাজ করার চেষ্টা করা নীলাকে ছুঁয়ে দিচ্ছে। নীলা মুখ তুলে তাকালেই জিহানের ঠোঁটের ইশারায় আবার চোখ নামিয়ে নিয়ে লাজুক হেসে কাজে মন দিচ্ছে। এভাবে দুষ্টুমির ফাঁকে কাজটা ভালোই চলছিল। তবে বাগড়া দিলো কলিংবেলের শব্দটা। জিহান ভ্রু কুঁচকে এক সেকেন্ড ভাবার চেষ্টা করলো এই সময় এখানে কে আসতে পারে। এর মধ্যেই আরেকবার কলিংবেলের আওয়াজ হলো দেখে জিহান নিজেই মেইন ডোরের দিকে পা বাড়ালো। মিনিট খানেক অপেক্ষা করে নীলাও হাত ধুয়ে শাড়ির আঁচলে গালের হলুদের দাগটা মুছতে মুছতে সেদিকেই পা বাড়ালো। মেইন ডোরের কাছাকাছি আসতেই জিহানের কথাটা কানে যেতেই আরো কিছুটা এগিয়ে কে এসেছে দেখার চেষ্টা করলো নীলা।
-তুই এখানে কি করে এলি মুগ্ধা?
মুগ্ধাকে দেখে যতটা না অবাক হলো তারচেয়ে কয়েকগুণ বেশি অবাক হলো মুগ্ধার কথাটা শুনে।
-জিশান আজই হল থেকে বাসায় এসে তোমার কাছে আসবে বলে কি যে বায়না শুরু করেছে জানো? আর তোমার এই ছেলের বায়না তো তুমি জানোই। উফ! পাগল বানিয়ে ফেলছিল একদম আমাকে। শেষে আমিও আর কি করবো? বাধ্য হয়েই নিয়ে এলাম।
-আমি এখানে আছি সেটা জানলি কি করে? আর তুই জিশানকে নিয়ে এই বাড়িতে কি করে এলি?
জিহান আরো কত কি জিজ্ঞেস করছে মুগ্ধাকে সেসব নীলার কান পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না। মুগ্ধার দৃষ্টি একটা ঘটনাটাতেই আটকে গেছে। একটা বছর ছয়েকের ছেলে মুগ্ধার পাশ কাটিয়ে ছুটে এসে জিহানকে জড়িয়ে ধরে যেন খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেছে। আর ছেলেটা ছোট্ট একটাই শব্দ বলেছে। যে শব্দটা শুনতেই নীলার সমস্ত দুনিয়াটাই যেন ওলোটপালট হয়ে গেছে একনিমিষেই। ছোট্ট ছেলেটা জিহানকে জড়িয়ে ধরে একটা কথাই বলেছে।
‘পাপা।’
চলবে