#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-২১
আরিয়ানের গম্ভীর কন্ঠের ভারি ধমকে মূহুর্তেই কোলাহল থেমে গেল।সাংবাদিকদের সাথে মায়াও খানিকটা চুপসে গেলো।আরিয়ানের ধমকে সে যারপরনাই ভয় পেয়েছে।পিনপতন নিরবতা ভেঙে একজন বলে উঠলো,
—“কিন্তু স্যার,আপনিতো আনম্যারিড।ইনি যে আপনার স্ত্রী প্রমান কি?এমন তো নয় আপনি কোন নারী কেলেঙ্কারি তে জড়াতে চাচ্ছেননা।এজন্য উনাকে স্ত্রী বলছেন।ম্যাম কিছু বলুন।আপনি কি উনার সাথেই থাকেন?আপনাকে কি উনি জোর করে…
মায়া লজ্জায় কুঁকরে যায়।এদের কথাবার্তার ইঙ্গিত বুঝতে পারছে সে।ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকে মাথা নুইয়ে আরিয়ানের গা ঘেঁষে দাড়িয়ে থাকে।
সাংবাদিকটা আরো কিছু বলার আগেই আরিয়ান চোখ গরম করে আবারো ধমকে উঠে,
—“হাউ ডেয়ার ইউ!আপনার সাহস কি করে হয় ওকে কোন প্রশ্ন করার?আর এতোটা বাজে চিন্তাধারা কিভাবে আসে আপনাদের মাথায়।আরিয়ান খানের ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট নিশ্চয় আপনাদের মুখ থেকে শুনতে হবেনা।আমি যখন বলেছি ও আমার স্ত্রী।তখন এই ম্যাটারটা এখানেই ক্লোজ হওয়া উচিত না?এটা নিয়ে আর একটা ওয়ার্ডও শুনতে চাচ্ছিনা আমি।রাস্তা ছাড়ুন।
আরিয়ানের উপর আর কিছু বলার সাহস পেলোনা কেউ।সাইড দিতেই দ্রুত হেটে মায়াকে গাড়িতে বসিয়ে দিল আরিয়ান।দরজা আটকে নিজে গাড়িতে ঢোকার আগে যেই ছেলেটা মায়াকে প্রশ্ন করছিলো তার চেহারাটা একবার দেখে নেয়।অত:পর গাড়িতে বসে জানালার কাঁচ উঠিয়ে দেয় সে।
মায়ার সিটবেল্ট বেঁধে দিয়ে সজোরে গাড়ি টান দেয়।মাথায় আগুন জ্বলছে তার।রাগ নিয়ন্ত্রন সে কোনোকালেই করতে পারে না।
হঠাৎ ডুকড়ে কেঁদে উঠে মায়া।আরিয়ান সেদিকে তাকায় না।সে জানে মায়া কেন কাঁদছে।মায়ার কান্নার শব্দে রাগ আরো বেড়ে যাচ্ছে তার।গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দিয়ে সে রাগী কন্ঠে বলে,
—“মায়া,কাঁদবেনা।রাগ উঠে যাচ্ছে।স্টপ ক্রাইং”
আরিয়ানের ধমকে আরো জোরে কেঁদে দেয় মায়া।ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলে,
—“উনারা তো ঠি কই বলছিলো…আমরাতো…”
হুট করে ব্রেক কষে আরিয়ান।মাথা ঠি ক নাই তার।রাগে শরীর কাঁপছে।উঠে গিয়ে মায়ার দিকে ঝুকে সিটের দু’পাশে সজোরে বাড়ি মেরে বলে,
—“আমরাতো কি?হুম?কি আমরাতো?ওরা ঠি ক বলছিলো?কখনো জোর করেছি আমি তোমাকে?একসাথে থাকার পরও ফিজিক্যালি ইনভলভ্ হয়েছি কখনো?এখন চুপ করে আছো কেন?স্পিক আপ,ড্যাম ইট্।
—“আ..আমি সেটা ব..বলিনি…”
—“তো কি বলছো?বলো?কি বোঝাতে চাচ্ছো?”
মায়া একবার আরিয়ানের চোখের দিকে তাকায়।রাগে যেন চোখ দিয়েই ঝলসে দিবে সে।ভয়ে মাথা নিচু করে সশব্দে ফুঁপিয়ে উঠে সে।
আরিয়ান ঠোঁট কামড়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে।মাথা কাত করে জোড়ে জোড়ে কয়েকটা শ্বাস নেয়।নিজের সিটে বসে স্টেয়ারিং এ হাত রেখে চোখ বন্ধ করে রাখে।মিনিট দুয়েক পর চোখ খুলে সে।এখনো মায়ার ফোঁপানোর শব্দ শোনা যাচ্ছে।শীতল গলায় বলে,
—“আমাদের বিয়ে হয়নি এটাইতো বলতে চাচ্ছো?”
মায়া উওর দেয়না।কেবল মৃদুভাবে উপর নিচে মাথা নাড়ায় ।মুখে কিছু বলতে ভয় লাগছে তার।আরিয়ান যদি আবার ধমকে উঠে।
আরিয়ান ফোনে কাওকে কিছু একটা মেসেজ করে ফোনটা গাড়ির সামনে রেখে বলে,
—“বেশ,আজকেই বিয়ে করবো আমরা”।
মায়া চমকে তাকায়।চোখে মুখে বিস্ময়।এখন বিয়ে করবে মানে?রাত হয়ে গেছে এখন হুট করে কিভাবে?
আরিয়ান তার চোখে চোখ রাখে।মায়ার কান্না তার সহ্য হয়না তবুও মেয়েটা তার সামনেই বারংবার কাঁদে।
সামনের দিকে দৃষ্টি স্হির করে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সে বলে,
—“চোখ মুছো মায়া।অযথা কাঁদবে না।তোমার চোখের পানির প্রতিটা ফোঁটা আমার কাছে খুবই মূল্যবান।সেগুলো ঝরলেও শুধু আমার জন্য ঝরবে।অন্য কোন কারণে নয়।”
————–——
মাত্র প্লাস্টার করা হাত দিয়েই কোনরকম রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করে দেয় মায়া।মায়ার সাইন করার পর আরিয়ানও সাইন করে দেয়।রুমে শুধু পাঁচজন মানুষ।একজন উকিল,তন্ময়,ইতি,মায়া,আরিয়ান।
তন্ময় হাপাচ্ছে।কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে তার।এতক্ষন বেশ দৌড়-ঝাপের মধ্য ছিলো সে।আরিয়ান-মায়া সেখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর সেও ইতিকে নিয়ে অন্য গাড়িতে করে বাসায় ফিরছিল।পথিমধ্য হঠাৎই আরিয়ানের মেসেজ পায়,এখনই রেজিস্ট্রি পেপারের ব্যবস্থা করতে।সে এখনি মায়াকে বিয়ে করবে।
ব্যাস,আরিয়ানতো বলেই ক্ষান্ত।আর এই রাতের বেলা এসব মেনেজ করতে করতে সে ক্লান্ত।
রেজিস্ট্রি অফিস থেকে বেরিয়ে মায়াকে নিয়ে গাড়িতে বসালো আরিয়ান।মায়া একেবারেই চুপচাপ।সে কি রিয়েক্ট করবে তার জানা নেই!তার কি আদৌ রিয়েক্ট করা উচিত?বিয়েটা তার সম্মতিতে হলো নাকি অসম্মতিতে সেটাই তো বুঝতে পারছেনা।তবে এতটুকু জানে,আরিয়ান যা করছে তার ভালোর জন্যই করছে।
______________
বাসায় ফিরে আগেই তাকে এতগুলো খাবার খাইয়েছে আরিয়ান।সে নাকি খুব দূর্বল।এখন নাকি বেশি বেশি খেতে হবে।এত খেয়ে এখন ক্লান্ত লাগছে মায়ার।ঘুম আসছে।বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে সে।আরিয়ান গেছে ওয়াশরুমে।শাওয়ার নিতে।সবকিছুই স্বাভাবিক।রোজকার মতো।শুধু এখন তারা বিবাহিত।আরিয়ানের বিয়ে করা বউ সে।এসব ভাবতে ভাবতেই দরজা খুলে বেরোয় আরিয়ান।শুধু টাওয়াল পরা সে।মায়া একবার তাকিয়ে চোখ নিচে নামিয়ে নেয়।লজ্জা লাগছে তার।লাল হয়ে যাচ্ছে ফর্সা গালদুটো।
আরিয়ানের যে এতো রাগ আজ না দেখলে বুঝতোই
কাবার্ড থেকে জামা নিয়ে আবার ওয়াশরুমে ঢুকে আরিয়ান।টাউজার আর টি-শার্ট পরে বেরিয়ে আসে।
ঘরের লাইট নিভিয়ে মায়াকে সোজা করে শুইয়ে দেয়।কারণ কাত হলে মায়া হাতে ব্যাথা পাবে।তবে কথা বলেনা কোন।মায়াও নিশ্চুপ।
অত:পর মায়ার পাশে তার পেট জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরে।কিছুক্ষন অতিবাহিত হতেই মায়া ধীর কন্ঠে অভিমানের স্বরে বলে,
—“আপনি আজ আমাকে ধমক দিয়েছেন।”
—“বেশ করেছি”।
আরিয়ানের এমন গা ছাড়া ভাবে অভিমানের পাল্লাটা আরো ভারি হলো মায়ার।মুখে কুলুপ এঁটে শুয়ে থাকলো সে।কিছুক্ষন পরই আরিয়ান তার গালে নাক ঘষে বললো,
—“তখন মাথা ঠিক ছিলনা মায়াবতী।রাগ হচ্ছিল খুব।তার উপর তুমি কাঁদছিলে।যেটা আমার সবচেয়ে অপছন্দের।তাই রাগের মাথায়…”
—“রাগের মাথায় আমার উপর চিল্লিয়ে দিলেন”।
আরিয়ান হেসে ফেলে।এই বাচ্চা মেয়েটার মায়াজালে সে কিভাবে যে ফেঁসে গেছে?
—“বাদ দাও সেসব।ঘুমিয়ে পরো।আর ঘুমের মধ্য নড়াচড়া করবেনা।হাতে বা মাথায় ব্যাথা পাবে কিন্তু।…
শরীর খারাপ লাগলে আমাকে ডাকবে।ঠিকাছে?”
—“হু”।
মায়া পরম শান্তিতে আরিয়ানের বাহুডোরে ঘুমিয়ে পরে।সে জানে এই জায়গাটা তার জন্য নিরাপদ।একেবারেই নিরাপদ।কোন খারাপ কিছু তাকে স্পর্শ করতে পারবেনা এখানে।কখনো পারবেনা।
#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-২২
সকালে মেসেজের টুংটাং শব্দে ঘুম ভাঙে আরিয়ানের।শান্তিময় নিদ্রায় হঠাৎ ব্যাঘাতে মেজাজ খারাপ হয়ে আসে।চোখ খুলতেই নজরে আসে মায়ার ঘুমন্ত মায়াবী মুখশ্রী।তার দিকে মাথা খানিকটা কাত্
করে রেখেছে মায়া।ফলস্বরূপ মায়ার ঠোঁটগুলো তার ঠোঁটের সাথে একেবারেই ছুঁই ছুঁই অবস্থায় আছে।পরমূহুর্তেই মুখের বিরক্তিকর আভাস বদলে ঠোঁটের কোঁণে মৃদু হাসি ফুটে উঠলো আরিয়ানের।তার একটা হাত মায়ার গলার নিচ দিয়ে দেয়া।আরেকহাত মায়ার পেটের উপর রাখা যেটা মায়া শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে।
হাত বাকিয়ে আলতো করে মায়ার মুখের উপর আসা এলোমেলো চুলগুলো আঙ্গুলের ছোঁয়ায় সরিয়ে দেয় সে।অত:পর খুব সন্তর্পণে গলার নিচ থেকে হাতটা বের করে নিয়ে আসে।ঘুমের ঘোরে হাল্কা একটু নড়েচড়ে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে আবার ঘুমিয়ে পরে মায়া।আরিয়ান একটা ফাঁকা ঢোক গিলে।মায়ার ঠোঁটের দিকে নেশাক্ত দৃষ্টিতে তাকায়।
হঠাৎ ফোনের রিংটন বেজে উঠে।চোখেমুখে আবারো বিরক্তি খেলা করে।ফোনটা মায়ার পাশে রাখা।আরিয়ান দ্রুত মায়ার উপর দিয়ে ঝুকে গিয়ে ফোনটা হাতে নেয়।ফোনের আওয়াজে পিটপিট করে তাকায় মায়া।আরিয়ানকে তার উপর দিয়ে ঝুকে থাকতে দেখে ঘুমঘুম কন্ঠে বলে,
—“কি করছেন?”
মায়ার কন্ঠে ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে ফোনটা সাইলেন্ট করে আরিয়ান।সে চাচ্ছিল মায়া যেন না উঠে।
সেই ঘুম ভেঙেই গেল তার।উপর থেকে সরে গিয়ে উঠে বসে সে।সেকেন্ডে ফোনের মেসেজগুলোয় একবার চোখ সে বুলিয়ে নেয়।মায়ার ধরে রাখা হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে পরপরই আবার ঝুঁকে গিয়ে মায়ার একগালে হাত রেখে অপর গালে ঠোঁটের ছোয়াঁ দিয়ে বলে,
—“ঘুমাও তুমি।ব্রেকফাস্টের সময় হলে আমি ডেকে দিবোনে”।
বলে গায়ের কম্বল সরিয়ে উঠে পরে আরিয়ান।
—“এই সকালে কোথায় যাচ্ছেন?”
—“একটু কাজ আছে।”
ফোনটা টাউজারের পকেটে ঢুকিয়ে কাবার্ড থেকে কিছু কাগজ বের করে দরজা আটকে বেরিয়ে যায় আরিয়ান।
আরিয়ানের বেরিয়ে যাওয়ার পর অলস ভঙ্গিতে মাথার ব্যান্ডেজটায় হাত বুলায় মায়া।এখন আবার ব্যাথা করছে জায়গাটা।এরপর হাতটা নিজের অজান্তেই গালে চলে যায়।যেখানটায় একটু আগে চুমু খেয়েছে আরিয়ান।মায়া মুচকি হাসে।প্রথমবার তার গালে চুমু দিয়েছে উনি।এর আগে শুধু কপালেই ঠোঁট ছোয়াঁতো।হাহ্।এত তাড়াহুড়ো করে কোথায় গেলো কে জানে?কোন ঝাঁমেলা হয়নি তো?
———–——–
নিচে নামতেই তন্ময় দ্রুত এগিয়ে এসে তার হাতে খবরের কাগজ দিয়ে বললো,
—“ভাই,দেখেন।”
আরিয়ান পেপারটা হাতে নিয়ে দেখল ফ্রন্ট পেইজেই তার আর মায়ার ছবি।একপাশে সে মায়াকে কোলে নিয়ে রেখেছে আর আরেকপাশে রাস্তায় যখন মায়াকে সে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলো তখনের ছবি।
হেডলাইনে বড় বড় করে লেখা,”আরিয়ান খানের গোপন বিয়ে ফাঁস।”তার একটু নিচে তুলনামূলক ছোট্ট অক্ষরে লেখা-“কে এই মেয়ে?যাকে নিজের স্ত্রী বলছে আরিয়ান খান।প্রমান চাওয়ায় সাংবাদিককে প্রকাশ্য হুমকি আরিয়ান খানের”
তারপর বিশাল বিস্তৃতি নিয়ে প্রায় আধা-পেইজ জুড়ে লেখা হয়েছে।তেল-মশলা মিশিয়ে গতরাতের মূল ঘটনার সাথে আরো একটু রঙচঙ মেরে নিউজ ছাপানো হয়েছে।
আরিয়ানের সেগুলো পড়ার রুচি হয়না।তন্ময়ের দিকে পেপারটা এগিয়ে দিয়ে শীতল কন্ঠে বলে,
—“বাইরে কারা এসেছে?”
—“দু’জন জার্নালিস্ট,মনে হচ্ছে নিউজ চ্যানেলের।”
আরিয়ান তাদের কাবিননামাটা তন্ময়কে দিয়ে বলে,
—“এটার ছবি চ্যানেলগুলোতে প্রকাশ করে দে”।আর বাইরে যারা এসেছে তাদের কেও দিয়ে দিস।”
তন্ময় মাথা নাড়িয়ে বেরিয়ে যায়।আরিয়ান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উপরে উঠতে থাকে।ফোন বেজে উঠে আবারো।
না দেখেই বুঝতে পারছে কে ফোন করেছে।মনে মনে কথাগুলো সাজিয়ে ফোনটা রিসিভ করলো।ওপাশ থেকে ভারি গলায় একজনের কন্ঠ শোনা গেলো,
—“এসব কি শুনছি আরিয়ান?তুমি বিয়ে করলে?আমাদেরকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করলে না?আমি,তোমার মামী কতটা কষ্ট পেয়েছি জানো?”
আরিয়ান ঠোঁট কামড়ে বললো,
—“মামা শান্ত হও।আমি বলছি তোমাকে”।
—“কে?ওই মেয়েটা কে?আমাদের বললে কি আমরা অমত করতাম?শত বলেও তো তোমাকে বিয়ে করাতে পারিনি।আর এখন তুমি আমাদের না জানিয়েই,,,,”
আরিয়ান হতাশভাবে বলে,
—“মামা,আমাকে বলার সুযোগটা তো দিবে।”
—“কতদিন হয়েছে বিয়ের?এতদিনেও বলার সুযোগ হয়নি তোমার।আর এখন সবাই জানার পর আমাকে বলার জন্য সুযোগ খুঁজছো তুমি।”
—“বিয়ের একদিনও হয়নি মামা।মাত্র একরাত হয়েছে।”
—“মানে?”
অত:পর সবকিছু খুলে বলে আরিয়ান।নিজের মামার কাছে কোনকিছুই গোপন করার নেই তার।একদম প্রথম থেকে সবটা শোনার পর মাথায় আকাশ ভেঙে পরে সজীব খানের।সব ছেড়ে রাশেদ চৌধুরির মেয়েকেই বিয়ে করতে হলো আরিয়ানের।গম্ভীর গলায় বলে,
—“তাই বলে তুমি রাশেদের মেয়েকে বিয়ে করলে?”
—“মায়া রাশেদ চৌধুরির মেয়ে এই পরিচয়টার থেকে সে আমার স্ত্রী এটাই কি যথেষ্ট নয়?”
—“আরিয়ান তুমি ভুলে যাচ্ছো,রাশেদ চৌধুরি তোমার মা-বাবার সাথে কি করেছিলো।
—“আমি কিছুই ভুলিনি মামা।তবে সেটার সাথে তো মায়ার কোন যোগসূত্র নেই।মায়া তো কিছু করেনি মামা।
বাবার কুকর্মের শাস্তিতো আমি মেয়েটাকে দিতে পারিনা।তাইনা?”
—“আমি কিছু জানিনা আরিয়ান।তুমি আজই মেয়েটাকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসবে।তারপর এ বিষয়ে কথা হবে।”
আরিয়ান শক্ত কন্ঠে বলে,
—“এ বিষয়ে বলার মতো কিছু নেই মামা।আর মায়ার সামনে এ বিষয়ে কোন কথা হবেনা।ও খুবই সহজ সরল একটা মেয়ে।আমি চাইনা ও এসব নিয়ে আপসেট হোক।তোমরা যদি আমার স্ত্রী হিসেবে ওর সাথে দেখা করতে চাও,তবে অবশ্যই আমরা আসবো।”
সজীব খান একটু শিথিল হয়।গলার স্বর নরম করে বলে,
—“তুমি কি বলতে চাচ্ছো আমি বুঝতে পারছি আরিয়ান।তোমার যদি ওকে পছন্দ হয় তবে আমাদের কোন সমস্যা নেই।তোমার পছন্দ নিশ্চয় খারাপ হবেনা।তুমি যা করেছো ভেবে চিন্তেই করেছো আমি জানি।”
আরিয়ান কোন উওর দেয়না।সজীব খান আবার বলে,
—“আজকে কি আসবে এই বাসায়?”
—“মায়াতো একটু অসুস্থ মামা।কাল সিঁড়ি থেকে পরে গিয়েছিলো।তবুও আমি আসার চেষ্টা করবো।”
—“আচ্ছা ঠিকাছে।রাখছি তাহলে?
—“আল্লাহ হাফেজ।”
ফোন রেখে ঘড়ির দিকে তাকায় আরিয়ান।দশটা বেজে গেছে।
রুমে যেতেই দেখে মায়া চোখ খুলেই শুয়ে আছে।আরিয়ান এগিয়ে গিয়ে ফোনটা বিছানায় রাখলো।
মায়া একহাতে ভর দিয়ে উঠে বসলো।
—“ইতিকে একটু ডেকে দিবেন?আমি চেন্জ করবো।একা তো পারবোনা।”
—“চেন্জ করবে?ব্যান্ডেজ তো খুলতে হবে তাহলে।ব্যাথা করছে হাতে এখনো?নয়তো ব্যাগটা খুলে দেই”
—“অতো ব্যাথা নেই।সমস্যা হবেনা।”
আরিয়ান পাশে বসে খুব যত্ন করে হাতের বাঁধা ব্যাগটা খুলে রাখে।যেটা দিয়ে গলার সাথে এটাচ্ করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিলো হাতটা।একটা বালিশ এনে কোলে রেখে তার উপর মায়ার ব্যান্ডেজ করা হাতটা রাখে।
।।
ইতির সাহায্য বহুকষ্টে জামা বদলে নেয় মায়া।
ব্রেক-ফাস্ট শেষে আবারো রুমেই এসে বসেছে মায়া।আরিয়ান অফিসের জন্য রেডি হচ্ছে।মুখ লটকিয়ে বসে আছে সে।
মায়ার এমন চেহারা দেখে আরিয়ান বলে,
—“কি হয়েছে?শরীর খারাপ লাগছে?”
মায়া কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে,
—“আমাকে আপনার সাথে অফিসে নিয়ে যাবেন?”
~চলবে~
~চলবে~